০৭:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

বই রিভিউ: দ্য কৃষ্ণ কি

শাহনীন রহমান
  • প্রকাশ: ১২:০৬:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মে ২০২১
  • / ১৩৯৯ বার পড়া হয়েছে

দ্য কৃষ্ণ কি বইটি লিখেছেন আশ্বিন সাংহি, বাংলা অনুবাদ করেছেন তৌফিক সরকার। বাংলা সংস্করণের প্রচ্ছদ করেছেন সজল চৌধুরী।


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

ভারতীয় জনপ্রিয় লেখক অশ্বিন সাংহি রচিত ‘দ্য কৃষ্ণ কি’র রিভিউ করার আগে বা বইটি নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে একটু পেছনে ফিরে যেতে চাই। আমরা যখন ছোটো ছিলাম তখন দুইটি ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল দেখা যেত বাংলাদেশে। এ টেলিভিশন চ্যানেল দুটি ছিল হিন্দি আর বাংলা ভাষার। সেখানে রামায়ণ ও মহাভারত নামে সিরিয়াল দেখানো হতো। মহাভারত সেখানেই প্রথম দেখি। এরপর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কল্যাণে স্কুলে ছোটোদের মহাভারত, গ্রীস ও ট্রয়ের উপাখ্যান ইত্যাদি পড়েই মিথলজির উপর ভীষণ আগ্রহ বাড়ে। পরবর্তীতে মিথলজিক্যাল থ্রিলারও পড়েছি অনেক।

‘দ্য কৃষ্ণ কি’ পরিচিতি

‘দ্য কৃষ্ণ কি’ (The Krishan Key) হলো একটি অ্যান্থ্রোপলিক্যাল থ্রিলার উপন্যাস। এ উপন্যাসটি লিখেছেন ভারতীয় জনপ্রিয় লেখক অশ্বিন সাংহি। ইংরেজি ভাষায় মিথলজির ওপর লিখিত ‘দ্য কৃষ্ণ কি’ বইটি ২০১২ সালে ভারতের ওয়েস্টল্যান্ড পাবলিকেশন লিমিটেড থেকে প্রকাশিত এ হয়। অশ্বিন সাংহি রচিত এ উপন্যাস ২০২১ সালে বাংলাদেশের তৌফিক সরকার বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন এবং বইয়ের শিরোনাম ঠিক রেখে এটি প্রকাশ করে ঢাকার ‘ভূমি প্রকাশ’।

বই রিভিউ: দ্য কৃষ্ণ কি
‘দ্য কৃষ্ণ কি’ বইয়ের প্রচ্ছদ

‘দ্য কৃষ্ণ কি’ কাহিনিসংক্ষেপ

গল্পটি দুটো প্যারালাল ধারায় এগিয়ে চলে। একটিতে বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হিসেবে পৃথিবীতে কৃষ্ণর আগমন ও তার কর্ণসংহার থেকে শুরু করে মহাভারতের যুদ্ধ এবং অষ্টম অবতার হিসেবে তার কর্ম শেষে জীবন সংহার পর্যন্ত। আরেক দিকে গল্প চলে বর্তমান সময়ে এক ধনীর দুলালের নিজেকে কলি যুগের দশম অবতার কল্কি ভেবে দুষ্টুর পতন করতে গিয়ে সিরিয়াল কিলারে পরিণত হওয়া দিয়ে।

ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ভাষাবিদ ও সিম্বলজিস্ট অনিল ভার্শনি, যিনি তার প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে খুঁজে পান সিন্ধু সভ্যতার বিচিত্র চারটি সিল ও সিলগুলি রাখার জন্য সিরামিকের তৈরি একটি ধারক। একটি ষাঁড়, ছাগল ও এক শিং ওয়ালা ঘোড়ার মাথাওয়ালা সিল এবং এগুলোর ধারকসহ আসলে একটি চাবি। সিলগুলো পর্যবেক্ষণ ও তার মর্ম উদ্ধার করে তিনি বুঝতে পারলেন হঠাৎ করেই তার হাতে এসে গেছে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনার নির্দেশন। যার রহস্য উন্মোচিত হলে বদলে যেতে পারে হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস। সিলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভার্শনি নিজের কাছে একটি সিল রেখে এই বাকি সিল গুলো পাঠিয়ে দেন তার তিন বন্ধুর কাছে। এরা আবার বংশ পরম্পরায় যাদব কুল গোত্রীয়। এ তিন বন্ধুর নাম রবি মোহন সাইনি, ড. নিখিল ভোজরাজ এবং দেবেন্দ্র ছেদি। তিনি নির্দেশ দিয়ে যান তার কিছু হয়ে গেলে রবি সাইনি মোহন যেন সিলগুলো একত্রে করে এর মর্ম উদ্ধার করেন। তার জন্য রেখে যান অ্যানাগ্রাম সম্বলিত কিছু নির্দেশনা ও সূত্র বা ক্লু।

এদিকে অনিল ভার্শনি খুন হয়, যে খুনের দায়ে গ্রেফতার হয় ভার্শনির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইতিহাসবিদ রবি মোহন সাইনি। সাইনি তার এক শিক্ষানবিশ ছাত্রী প্রিয়া রত্নানির সহায়তায় পালিয়ে যায়। নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করতে হলে সাইনিকে বাকি সিল গুলোর নাগাল পেতে হবে। কারণ সিলগুলো একসাথে করলেই শুধু তা কোন নির্দেশনা দিবে যা তাকে ভার্সানির রেখে যাওয়া ক্লু এর মর্ম উদ্ধার করতে সাহায্য করবে।

রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে রবি মোহন সাইনি ছুটে চলে কৃষ্ণ’র তলিয়ে যাওয়া শহর দ্বারকা থেকে কৈলাশ পর্বতের সোমনাথ মন্দির তো কখনো কালের অতলে হারিয়ে যাওয়া মুঘল সম্রাট অওরঙ্গজেবের ধ্বংসকৃত কালিবাগানের শিব মন্দির থেকে বৃন্দাবন পর্যন্ত।

একদিকে খুনী আরেক দিকে পুলিশ ইন্সপেক্টর রাধিকা সিং সাইনি কি পারবে এর মাঝে থেকে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে? আর এই সিলগুলো কিসের নির্দেশনা দিচ্ছে? কোন রহস্যের জট খুলবে এ চাবি? সবই যখন ঠিকঠাক তখন কাহিনীতে এন্ট্রি নিল মাফিয়া ডন শের খান। ইতিহাস বদলের কাহিনিতে তার নিজেরও আছে বড়ো এক অবদান।

হিংসা, ক্রোধ, লোভ কামের থেকে মুক্তি দিতে একবার শিব কে পৃথিবীতে আসতে হয়েছিল তার অষ্টম অবতার কৃষ্ণ রূপে, আর কৃষ্ণ’র এই চাবি কি মানব ইতিহাস কে সংগঠিত করবে নাকি নিয়ে যাবে ধ্বংসের কাতারে? প্রশ্নগুলোর উত্তর আছে হিন্দু ধর্মের দেবতা ও বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের কাছে যা লুকিয়ে আছে কৃষ্ণের চাবিতে। আর এ সব নিয়েই অশ্বিন সাংহি লিখেছে রহস্যে ভরা দারুণ এক থ্রিলার- দ্য কৃষ্ণ কি (The Krishan Key)। অশ্বিন সাংহির এই অ্যানথ্রোপলজিক্যাল থ্রিলার আপনাদের নিয়ে যাবে পাঁচ হাজার বছরে আগের এক কিংবদন্তির কাছে এবং নিয়ে আসবে বর্তমানে – ইতিহাস মিশ্রিত এক রুদ্ধশ্বাস অভিযানে।

‘দ্য কৃষ্ণ কি’ বইটির উল্লেখযোগ্য দিক

  • বইতে ইতিহাসের অংশটুকু সত্যি চমকপ্রদ। বৈদিক সংখ্যাত্বত্ত্ব, সাথে দ্বারকা নগরীর ডুবে যাওয়া অংশ পড়তে গিয়ে কৃষ্ণ কে কোন মিথলজিক্যাল চরিত্র মনে হবে না, এক সময় তাকে আপনার রক্ত মাংসের মানুষ মনে হতে বাধ্য।
  • নায়ক হিসেবে আছে চল্লিশ বছর বয়সী হ্যান্ডশাম, ইন্টেলিজেন্ট সাহিত্যের প্রফেসর। আপনাকে হয়ত দ্য ভিঞ্চি কোড’র রবার্ট লাংডনের কথা মনে করিয়ে দিবে।
  • ক্ষুরধার হ্যান্ডসাম কুল কিলার ভিলেন (জাস্ট লাইক মালাখ)
  • শিবের অষ্টম অবতার কৃষ্ণ আর মহাভারতের গল্প।
  • হিস্ট্রির এক বিশাল বর্ণনা রয়েছে যেখানে বেদ, গীতা আর পুরানের দারুণ বর্ণনার সাথে বিভিন্ন ধর্মের মিল অমিল আর তাদের মিথস্ক্রিয়া মাথা ঘুরিয়ে দেয়া তথ্য।
  • অ্যানাগ্রাম আর অ্যাম্বিওগ্রামের সাথে কোড ব্রেকিং ক্লু।
  • গল্পের সাথে জড়িত সাইন্টিস্টদের খুন ও খুনীর রেখে যাওয়া সিম্বল ও ম্যাসেজ।
  • চোর-পুলিশ, কার-বাস-ট্রেন চেজ। কিক এ্যাস পুলিশ, খুনি আর হিরোর সাথে শো ডাউন।
  • সাথে সাইড কিক নায়িকার সাথে রোমান্স সব মিলিয়ে এক টিকিটে মাল্টি মুভি দেখার অভিজ্ঞতা অর্জন।

‘দ্য কৃষ্ণ কি’ বইয়ের অপেক্ষাকৃত দুর্বল অংশ

  • পুরো কাহিনির হোতা যিনি সেই অনিল ভার্শনির কেন মনে হলো যে তার জীবন সংশয়ে আছে? এমন কি ঘটেছিল যে তার মনে হলো যে সে খুন হতে পারে? আর কেনই সে সিলগুলো বন্ধুদের জিম্মায় রাখার তাগিদ অনুভব করে? কিভাবে এমন বিপজ্জনক একটি বস্তু নিজেদের কাছে রাখতে মনস্থ হয় তার বন্ধুরা? এ বিষয়ে কোন বিশ্বাসযোগ্য বিশ্লেষণের বড়োই অভাব বোধ করেছি।
  • একটি গল্পে মিথ আর ইতিহাস মেলালেয় যখন সেটা বিশাল আকার ধারণ করে তখন সেখানে মহাভারতের পুরো গল্পটা না দিয়ে স্থান অনুসারে কৃষ্ণের উক্তি বা শ্লোক আসলেই ভালো লাগতো কিন্তু তা না করে পুরো মহাভারত কে গল্পে তুলে আনায় শুধুমাত্র গল্পের কলেবর বেড়েছে লাভ কিছুই হয়নি।
  • ধর্মীয় সিম্বল গুলো ব্যাখ্যা প্রতিটি বেদিক শব্দের ব্যাখ্যা পড়তে পড়তে এক সময় আপনার মনে হবে লেখক যেন জোর করে সব কিছুকে ইন্ডিয়া, কৃষ্ণ আর বেদের সাথে যোগ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন।
  • ব্রমহাস্ত্র থেকে অ্যাটমিক রেডিয়েশন সেখান থেকে নাৎসিদের সাথে যোগ এর সাথে আবার ১০৮ সংখ্যা ত্বত্ত্ব আর আমেরিকার পেন্টাগন তা থেকে আবার বিগ ব্যাং সূত্র কোথা থেকে যে কোথা গেছে তার কোনো বশেষ নেই।
  • গল্পে অ্যাটমিক রেডিয়েশনের অতিরিক্ত কচকচি। প্রত্যেকে বৈজ্ঞানিকেরই বিপদের মুখে অতিরিক্ত জ্ঞান বিতরণ বিরক্তির উদ্রেক করেছে।

গল্প পড়ে বোঝায় যাচ্ছে লেখক লেখাটা লেখার আগে অনেক রিসার্চ করেছেন আর এ কাজ করতে গিয়ে গল্পের মূল বিষয়বস্তু হারিয়ে গেছে। গল্প যতই এগিয়েছে গল্পে লেখকের কষ্ট করে রিসার্চ করা সব বিষয় একসাথে এনে। সব ভালো খাবার একবারে গেলানোর মতো অবস্থা করেছেন।

‘দ্য কৃষ্ণ কি’র চরিত্রচিত্রণ

ফেলুদা তপশেকে বলেছিল যখন কোন ব্যক্তির কথা বলবি তখন তার বর্ণনা বেশ ভালো করে দিবি যাতে পাঠকের সেই ব্যক্তি সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা আগে থেকেই হয়ে যায়। আফসোস সাংহি ফেলুদা পড়েননি মনে হয়। অতিরিক্ত তথ্যের কারণে তার গল্পের কোন চরিত্রই মনে খুব একটি দাগ কাটতে পারেনি।

ভার্শানি উস্কো খুশকো চুল মুখে না কাটা দাড়ি, হ্যান্ডশাম এবং স্মার্ট রবি মোহন সাইনি, ব্র্যান্ডের ট্যাগ লাগানো আর কুল গ্যাজেট ব্যবহারে অভ্যস্ত ডিলুশনাল সাইকোপ্যাথ কিলার, অতি উৎসাহী ইতিহাসছাত্রীর সাহায্য করার নিমিত্তে আইন ভঙ্গ করার প্রবণতা, স্মার্ট ইন্সপেক্টর রাধিকা সিং ও তার যপমালা কিম্বা অশিক্ষিত মাফিয়া ডন যিনি কিনা স্বশিক্ষিত আর তার জ্ঞান একজন বিশেষজ্ঞর সমপর্যায়ের কেউই মনে তেমন দাগ কাটতে পারেনি। পারেনি তাদের বাঁচা-মরা বিপদে পড়ায় পাঠকের মনকে আন্দোলিত করতে।

গল্পের শুরুতে তারেক ভকিল দ্যা কুল কিলার কে যতটা কুল লেগেছিল শেষ পর্যন্ত তিনি সেই কুল ধরে রাখতে পারেননি পরবর্তীতে শুধুই ছাপোষা ভাড়াটে খুনিই এর বেশি কিছু নয়। প্রিয়া আর রাধিকা চরিত্র দুটো আরও স্ট্রং হবার কথা ছিল যেখানে এ্যানোইনিমাশ মাতাজি যদিও গায়েব থেকেই বেশি মিস্ট্রি সৃষ্টি করতে পারছিলেন পরে নিজেকে রিভিল করে শুধু হতাশ করলেন।

রাধিকার যপ মালাও তেমনি যারপরনাই হতাশ করেছে।এমন যপমালা জপে যাওয়া স্ট্রং পুলিশ অফিসারের বেমক্কা হিউমার মোটেও বিনোদিত করেনি বরং হুট করে জবজবে রসে গড়িয়ে পড়া রোমান্স বলিউড মুভির কথায় মনে করিয়েছে এমন অসময়ে অবাস্তব রোমান্স সেখানেই সম্ভব। তবু্ও কারো যদি চাইনিজ ফ্রাইড রাইসে ঘি লাগিয়ে পোলাও খেতে চাইলে হলিউড ধাঁচের ভিঞ্চি কোডের বলিউড ভার্সন অশ্বিন সাংঘির বই ‘দ্য কৃষ্ণ কি’ পড়ে দেখতে পারেন।

’দ্য কৃষ্ণ কি’র বাংলা সংস্করণের প্রচ্ছদকথা

তৌফিক সরকার অনূদিত অশ্বিন সাংহির ‘দ্য কৃষ্ণ কি’র বাংলা সংস্করণের প্রচ্ছদ নিয়ে না বললেই নয়। চমৎকার কাজ করেছেন সজল চৌধুরী। বইটি পড়লেই শুধু পাঠক এর অর্থবহতা বুঝতে পারবে।

শুরতেই মাথার উপর চাঁদ ও তিনটি তারা। এরপর চার কোণায় চারটি বৃত্তে চারটি প্রতীক। চক্র, পদ্ম, গদা ও শঙ্খ। মধ্যখানে কিহোল – যা বইয়ের নামকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে বোঝা যায়। ভেতরে শিব তিলক আর ময়ূরের পালক দেয়া দারুণ লেটারিং আর কিহোল দিয়ে কৈলাস পর্বত ও সোমনাথ মন্দির দেখা যায়।

ব্যাক কভারে রাবার স্ট্যাম্প, স্কালপেল, ১০৮ পুঁতির মালা, তুলি যা গল্পের সাথে দারুণ ভাবে যুক্তিযুক্ত। মূল বইয়ের ছবির চাইতে এই প্রচ্ছদটায় আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে।

দ্য কৃষ্ণ কি বই রিভিউ
দ্য কৃষ্ণ কি বইটি লিখেছেন আশ্বিন সাংহি, বাংলা অনুবাদ করেছেন তৌফিক সরকার। বাংলা সংস্করণের প্রচ্ছদ করেছেন সজল চৌধুরী। বাংলা সংস্করণের প্রকাশক ভূমি প্রকাশ।

ছাপাখানার ভুত

এত বিশাল কলবরের বইতে অল্প বিস্তর ছাপাখানার ভুতের প্রভাব থাকতেই পারে তাই ভুলভ্রান্তি কিছু আছে তা নিয়ে আর বলছি না।

’দ্য কৃষ্ণ কি’র অনুবাদক নিয়ে কিছু কথা

অনুবাদের কথা বললে এমন বিশাল কলেবরের বই অনুবাদ করার মতো সাহসিকতা দেখানোর জন্য অনুবাদক তৌফিক সরকার এবং ভূমিপ্রকাশ কে সাধুবাদ জানাই। মূল আর অনুবাদ বইটি পাশাপাশি পড়ার কারণে বলতে পারি তৌফিক সরকার দারুণ কাজ করেছেন।

আমি অত্যন্ত ধৈর্যশীল পাঠিকা হয়েও এক সাইনির ইতিহাসের কচকচি শুনতে শুনতে সত্যিই বোর হয়ে গিয়েছিলাম, সেখানে এতসব অনুবাদ করার কঠিন কাজটা বেশ স্বাভাবিকভাবেই সম্পন্ন করেছেন তৌফিক। অনুবাদ যথেষ্ট সাবলীল তাই পাঠকের পড়তে কষ্ট হবার কোন কারণ নেই।

শেষ কথা

পরিশেষে বলি ভালো কাজ সামনে আনার ব্যাপারে আমরা বড়োই বিমুখ। দারুণ এক বইয়ের দারুণ অনুবাদ চোখের সামনে ঘোরাফেরা করছে তবুও দেখছেন না তাই তো এ বিশাল রিভিউ লিখে ফেললাম। এবার তো পড়ে ফেলুন তৌফিক সরকারের অনুবাদে অশ্বিন সাংহির ‘দ্য কৃষ্ণ কি’।

(বিশ্লেষণ টিম কর্তৃক সম্পাদিত)

রিভিউ কীভাবে করতে হয়, পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

শাহনীন রহমান

শাহনীন রহমান সাহিত্য প্রেমী একজন মানুষ। সংসার ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজের বাইরে টুকটাক লেখালেখিই তার নেশা। বিভিন্ন বইয়ের মাঝে ডুবে থাকতেই যার আনন্দ। আর এই আনন্দ তিনি ছড়িয়ে দিতে চান অগনিত পাঠকদের মাঝে। লেখক হবার মকসো করে চলেছেন রিভিউ আর পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে।

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

বই রিভিউ: দ্য কৃষ্ণ কি

প্রকাশ: ১২:০৬:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মে ২০২১

ভারতীয় জনপ্রিয় লেখক অশ্বিন সাংহি রচিত ‘দ্য কৃষ্ণ কি’র রিভিউ করার আগে বা বইটি নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে একটু পেছনে ফিরে যেতে চাই। আমরা যখন ছোটো ছিলাম তখন দুইটি ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল দেখা যেত বাংলাদেশে। এ টেলিভিশন চ্যানেল দুটি ছিল হিন্দি আর বাংলা ভাষার। সেখানে রামায়ণ ও মহাভারত নামে সিরিয়াল দেখানো হতো। মহাভারত সেখানেই প্রথম দেখি। এরপর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কল্যাণে স্কুলে ছোটোদের মহাভারত, গ্রীস ও ট্রয়ের উপাখ্যান ইত্যাদি পড়েই মিথলজির উপর ভীষণ আগ্রহ বাড়ে। পরবর্তীতে মিথলজিক্যাল থ্রিলারও পড়েছি অনেক।

‘দ্য কৃষ্ণ কি’ পরিচিতি

‘দ্য কৃষ্ণ কি’ (The Krishan Key) হলো একটি অ্যান্থ্রোপলিক্যাল থ্রিলার উপন্যাস। এ উপন্যাসটি লিখেছেন ভারতীয় জনপ্রিয় লেখক অশ্বিন সাংহি। ইংরেজি ভাষায় মিথলজির ওপর লিখিত ‘দ্য কৃষ্ণ কি’ বইটি ২০১২ সালে ভারতের ওয়েস্টল্যান্ড পাবলিকেশন লিমিটেড থেকে প্রকাশিত এ হয়। অশ্বিন সাংহি রচিত এ উপন্যাস ২০২১ সালে বাংলাদেশের তৌফিক সরকার বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন এবং বইয়ের শিরোনাম ঠিক রেখে এটি প্রকাশ করে ঢাকার ‘ভূমি প্রকাশ’।

বই রিভিউ: দ্য কৃষ্ণ কি
‘দ্য কৃষ্ণ কি’ বইয়ের প্রচ্ছদ

‘দ্য কৃষ্ণ কি’ কাহিনিসংক্ষেপ

গল্পটি দুটো প্যারালাল ধারায় এগিয়ে চলে। একটিতে বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হিসেবে পৃথিবীতে কৃষ্ণর আগমন ও তার কর্ণসংহার থেকে শুরু করে মহাভারতের যুদ্ধ এবং অষ্টম অবতার হিসেবে তার কর্ম শেষে জীবন সংহার পর্যন্ত। আরেক দিকে গল্প চলে বর্তমান সময়ে এক ধনীর দুলালের নিজেকে কলি যুগের দশম অবতার কল্কি ভেবে দুষ্টুর পতন করতে গিয়ে সিরিয়াল কিলারে পরিণত হওয়া দিয়ে।

ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ভাষাবিদ ও সিম্বলজিস্ট অনিল ভার্শনি, যিনি তার প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে খুঁজে পান সিন্ধু সভ্যতার বিচিত্র চারটি সিল ও সিলগুলি রাখার জন্য সিরামিকের তৈরি একটি ধারক। একটি ষাঁড়, ছাগল ও এক শিং ওয়ালা ঘোড়ার মাথাওয়ালা সিল এবং এগুলোর ধারকসহ আসলে একটি চাবি। সিলগুলো পর্যবেক্ষণ ও তার মর্ম উদ্ধার করে তিনি বুঝতে পারলেন হঠাৎ করেই তার হাতে এসে গেছে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনার নির্দেশন। যার রহস্য উন্মোচিত হলে বদলে যেতে পারে হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস। সিলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভার্শনি নিজের কাছে একটি সিল রেখে এই বাকি সিল গুলো পাঠিয়ে দেন তার তিন বন্ধুর কাছে। এরা আবার বংশ পরম্পরায় যাদব কুল গোত্রীয়। এ তিন বন্ধুর নাম রবি মোহন সাইনি, ড. নিখিল ভোজরাজ এবং দেবেন্দ্র ছেদি। তিনি নির্দেশ দিয়ে যান তার কিছু হয়ে গেলে রবি সাইনি মোহন যেন সিলগুলো একত্রে করে এর মর্ম উদ্ধার করেন। তার জন্য রেখে যান অ্যানাগ্রাম সম্বলিত কিছু নির্দেশনা ও সূত্র বা ক্লু।

এদিকে অনিল ভার্শনি খুন হয়, যে খুনের দায়ে গ্রেফতার হয় ভার্শনির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইতিহাসবিদ রবি মোহন সাইনি। সাইনি তার এক শিক্ষানবিশ ছাত্রী প্রিয়া রত্নানির সহায়তায় পালিয়ে যায়। নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করতে হলে সাইনিকে বাকি সিল গুলোর নাগাল পেতে হবে। কারণ সিলগুলো একসাথে করলেই শুধু তা কোন নির্দেশনা দিবে যা তাকে ভার্সানির রেখে যাওয়া ক্লু এর মর্ম উদ্ধার করতে সাহায্য করবে।

রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে রবি মোহন সাইনি ছুটে চলে কৃষ্ণ’র তলিয়ে যাওয়া শহর দ্বারকা থেকে কৈলাশ পর্বতের সোমনাথ মন্দির তো কখনো কালের অতলে হারিয়ে যাওয়া মুঘল সম্রাট অওরঙ্গজেবের ধ্বংসকৃত কালিবাগানের শিব মন্দির থেকে বৃন্দাবন পর্যন্ত।

একদিকে খুনী আরেক দিকে পুলিশ ইন্সপেক্টর রাধিকা সিং সাইনি কি পারবে এর মাঝে থেকে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে? আর এই সিলগুলো কিসের নির্দেশনা দিচ্ছে? কোন রহস্যের জট খুলবে এ চাবি? সবই যখন ঠিকঠাক তখন কাহিনীতে এন্ট্রি নিল মাফিয়া ডন শের খান। ইতিহাস বদলের কাহিনিতে তার নিজেরও আছে বড়ো এক অবদান।

হিংসা, ক্রোধ, লোভ কামের থেকে মুক্তি দিতে একবার শিব কে পৃথিবীতে আসতে হয়েছিল তার অষ্টম অবতার কৃষ্ণ রূপে, আর কৃষ্ণ’র এই চাবি কি মানব ইতিহাস কে সংগঠিত করবে নাকি নিয়ে যাবে ধ্বংসের কাতারে? প্রশ্নগুলোর উত্তর আছে হিন্দু ধর্মের দেবতা ও বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের কাছে যা লুকিয়ে আছে কৃষ্ণের চাবিতে। আর এ সব নিয়েই অশ্বিন সাংহি লিখেছে রহস্যে ভরা দারুণ এক থ্রিলার- দ্য কৃষ্ণ কি (The Krishan Key)। অশ্বিন সাংহির এই অ্যানথ্রোপলজিক্যাল থ্রিলার আপনাদের নিয়ে যাবে পাঁচ হাজার বছরে আগের এক কিংবদন্তির কাছে এবং নিয়ে আসবে বর্তমানে – ইতিহাস মিশ্রিত এক রুদ্ধশ্বাস অভিযানে।

‘দ্য কৃষ্ণ কি’ বইটির উল্লেখযোগ্য দিক

  • বইতে ইতিহাসের অংশটুকু সত্যি চমকপ্রদ। বৈদিক সংখ্যাত্বত্ত্ব, সাথে দ্বারকা নগরীর ডুবে যাওয়া অংশ পড়তে গিয়ে কৃষ্ণ কে কোন মিথলজিক্যাল চরিত্র মনে হবে না, এক সময় তাকে আপনার রক্ত মাংসের মানুষ মনে হতে বাধ্য।
  • নায়ক হিসেবে আছে চল্লিশ বছর বয়সী হ্যান্ডশাম, ইন্টেলিজেন্ট সাহিত্যের প্রফেসর। আপনাকে হয়ত দ্য ভিঞ্চি কোড’র রবার্ট লাংডনের কথা মনে করিয়ে দিবে।
  • ক্ষুরধার হ্যান্ডসাম কুল কিলার ভিলেন (জাস্ট লাইক মালাখ)
  • শিবের অষ্টম অবতার কৃষ্ণ আর মহাভারতের গল্প।
  • হিস্ট্রির এক বিশাল বর্ণনা রয়েছে যেখানে বেদ, গীতা আর পুরানের দারুণ বর্ণনার সাথে বিভিন্ন ধর্মের মিল অমিল আর তাদের মিথস্ক্রিয়া মাথা ঘুরিয়ে দেয়া তথ্য।
  • অ্যানাগ্রাম আর অ্যাম্বিওগ্রামের সাথে কোড ব্রেকিং ক্লু।
  • গল্পের সাথে জড়িত সাইন্টিস্টদের খুন ও খুনীর রেখে যাওয়া সিম্বল ও ম্যাসেজ।
  • চোর-পুলিশ, কার-বাস-ট্রেন চেজ। কিক এ্যাস পুলিশ, খুনি আর হিরোর সাথে শো ডাউন।
  • সাথে সাইড কিক নায়িকার সাথে রোমান্স সব মিলিয়ে এক টিকিটে মাল্টি মুভি দেখার অভিজ্ঞতা অর্জন।

‘দ্য কৃষ্ণ কি’ বইয়ের অপেক্ষাকৃত দুর্বল অংশ

  • পুরো কাহিনির হোতা যিনি সেই অনিল ভার্শনির কেন মনে হলো যে তার জীবন সংশয়ে আছে? এমন কি ঘটেছিল যে তার মনে হলো যে সে খুন হতে পারে? আর কেনই সে সিলগুলো বন্ধুদের জিম্মায় রাখার তাগিদ অনুভব করে? কিভাবে এমন বিপজ্জনক একটি বস্তু নিজেদের কাছে রাখতে মনস্থ হয় তার বন্ধুরা? এ বিষয়ে কোন বিশ্বাসযোগ্য বিশ্লেষণের বড়োই অভাব বোধ করেছি।
  • একটি গল্পে মিথ আর ইতিহাস মেলালেয় যখন সেটা বিশাল আকার ধারণ করে তখন সেখানে মহাভারতের পুরো গল্পটা না দিয়ে স্থান অনুসারে কৃষ্ণের উক্তি বা শ্লোক আসলেই ভালো লাগতো কিন্তু তা না করে পুরো মহাভারত কে গল্পে তুলে আনায় শুধুমাত্র গল্পের কলেবর বেড়েছে লাভ কিছুই হয়নি।
  • ধর্মীয় সিম্বল গুলো ব্যাখ্যা প্রতিটি বেদিক শব্দের ব্যাখ্যা পড়তে পড়তে এক সময় আপনার মনে হবে লেখক যেন জোর করে সব কিছুকে ইন্ডিয়া, কৃষ্ণ আর বেদের সাথে যোগ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন।
  • ব্রমহাস্ত্র থেকে অ্যাটমিক রেডিয়েশন সেখান থেকে নাৎসিদের সাথে যোগ এর সাথে আবার ১০৮ সংখ্যা ত্বত্ত্ব আর আমেরিকার পেন্টাগন তা থেকে আবার বিগ ব্যাং সূত্র কোথা থেকে যে কোথা গেছে তার কোনো বশেষ নেই।
  • গল্পে অ্যাটমিক রেডিয়েশনের অতিরিক্ত কচকচি। প্রত্যেকে বৈজ্ঞানিকেরই বিপদের মুখে অতিরিক্ত জ্ঞান বিতরণ বিরক্তির উদ্রেক করেছে।

গল্প পড়ে বোঝায় যাচ্ছে লেখক লেখাটা লেখার আগে অনেক রিসার্চ করেছেন আর এ কাজ করতে গিয়ে গল্পের মূল বিষয়বস্তু হারিয়ে গেছে। গল্প যতই এগিয়েছে গল্পে লেখকের কষ্ট করে রিসার্চ করা সব বিষয় একসাথে এনে। সব ভালো খাবার একবারে গেলানোর মতো অবস্থা করেছেন।

‘দ্য কৃষ্ণ কি’র চরিত্রচিত্রণ

ফেলুদা তপশেকে বলেছিল যখন কোন ব্যক্তির কথা বলবি তখন তার বর্ণনা বেশ ভালো করে দিবি যাতে পাঠকের সেই ব্যক্তি সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা আগে থেকেই হয়ে যায়। আফসোস সাংহি ফেলুদা পড়েননি মনে হয়। অতিরিক্ত তথ্যের কারণে তার গল্পের কোন চরিত্রই মনে খুব একটি দাগ কাটতে পারেনি।

ভার্শানি উস্কো খুশকো চুল মুখে না কাটা দাড়ি, হ্যান্ডশাম এবং স্মার্ট রবি মোহন সাইনি, ব্র্যান্ডের ট্যাগ লাগানো আর কুল গ্যাজেট ব্যবহারে অভ্যস্ত ডিলুশনাল সাইকোপ্যাথ কিলার, অতি উৎসাহী ইতিহাসছাত্রীর সাহায্য করার নিমিত্তে আইন ভঙ্গ করার প্রবণতা, স্মার্ট ইন্সপেক্টর রাধিকা সিং ও তার যপমালা কিম্বা অশিক্ষিত মাফিয়া ডন যিনি কিনা স্বশিক্ষিত আর তার জ্ঞান একজন বিশেষজ্ঞর সমপর্যায়ের কেউই মনে তেমন দাগ কাটতে পারেনি। পারেনি তাদের বাঁচা-মরা বিপদে পড়ায় পাঠকের মনকে আন্দোলিত করতে।

গল্পের শুরুতে তারেক ভকিল দ্যা কুল কিলার কে যতটা কুল লেগেছিল শেষ পর্যন্ত তিনি সেই কুল ধরে রাখতে পারেননি পরবর্তীতে শুধুই ছাপোষা ভাড়াটে খুনিই এর বেশি কিছু নয়। প্রিয়া আর রাধিকা চরিত্র দুটো আরও স্ট্রং হবার কথা ছিল যেখানে এ্যানোইনিমাশ মাতাজি যদিও গায়েব থেকেই বেশি মিস্ট্রি সৃষ্টি করতে পারছিলেন পরে নিজেকে রিভিল করে শুধু হতাশ করলেন।

রাধিকার যপ মালাও তেমনি যারপরনাই হতাশ করেছে।এমন যপমালা জপে যাওয়া স্ট্রং পুলিশ অফিসারের বেমক্কা হিউমার মোটেও বিনোদিত করেনি বরং হুট করে জবজবে রসে গড়িয়ে পড়া রোমান্স বলিউড মুভির কথায় মনে করিয়েছে এমন অসময়ে অবাস্তব রোমান্স সেখানেই সম্ভব। তবু্ও কারো যদি চাইনিজ ফ্রাইড রাইসে ঘি লাগিয়ে পোলাও খেতে চাইলে হলিউড ধাঁচের ভিঞ্চি কোডের বলিউড ভার্সন অশ্বিন সাংঘির বই ‘দ্য কৃষ্ণ কি’ পড়ে দেখতে পারেন।

’দ্য কৃষ্ণ কি’র বাংলা সংস্করণের প্রচ্ছদকথা

তৌফিক সরকার অনূদিত অশ্বিন সাংহির ‘দ্য কৃষ্ণ কি’র বাংলা সংস্করণের প্রচ্ছদ নিয়ে না বললেই নয়। চমৎকার কাজ করেছেন সজল চৌধুরী। বইটি পড়লেই শুধু পাঠক এর অর্থবহতা বুঝতে পারবে।

শুরতেই মাথার উপর চাঁদ ও তিনটি তারা। এরপর চার কোণায় চারটি বৃত্তে চারটি প্রতীক। চক্র, পদ্ম, গদা ও শঙ্খ। মধ্যখানে কিহোল – যা বইয়ের নামকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে বোঝা যায়। ভেতরে শিব তিলক আর ময়ূরের পালক দেয়া দারুণ লেটারিং আর কিহোল দিয়ে কৈলাস পর্বত ও সোমনাথ মন্দির দেখা যায়।

ব্যাক কভারে রাবার স্ট্যাম্প, স্কালপেল, ১০৮ পুঁতির মালা, তুলি যা গল্পের সাথে দারুণ ভাবে যুক্তিযুক্ত। মূল বইয়ের ছবির চাইতে এই প্রচ্ছদটায় আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে।

দ্য কৃষ্ণ কি বই রিভিউ
দ্য কৃষ্ণ কি বইটি লিখেছেন আশ্বিন সাংহি, বাংলা অনুবাদ করেছেন তৌফিক সরকার। বাংলা সংস্করণের প্রচ্ছদ করেছেন সজল চৌধুরী। বাংলা সংস্করণের প্রকাশক ভূমি প্রকাশ।

ছাপাখানার ভুত

এত বিশাল কলবরের বইতে অল্প বিস্তর ছাপাখানার ভুতের প্রভাব থাকতেই পারে তাই ভুলভ্রান্তি কিছু আছে তা নিয়ে আর বলছি না।

’দ্য কৃষ্ণ কি’র অনুবাদক নিয়ে কিছু কথা

অনুবাদের কথা বললে এমন বিশাল কলেবরের বই অনুবাদ করার মতো সাহসিকতা দেখানোর জন্য অনুবাদক তৌফিক সরকার এবং ভূমিপ্রকাশ কে সাধুবাদ জানাই। মূল আর অনুবাদ বইটি পাশাপাশি পড়ার কারণে বলতে পারি তৌফিক সরকার দারুণ কাজ করেছেন।

আমি অত্যন্ত ধৈর্যশীল পাঠিকা হয়েও এক সাইনির ইতিহাসের কচকচি শুনতে শুনতে সত্যিই বোর হয়ে গিয়েছিলাম, সেখানে এতসব অনুবাদ করার কঠিন কাজটা বেশ স্বাভাবিকভাবেই সম্পন্ন করেছেন তৌফিক। অনুবাদ যথেষ্ট সাবলীল তাই পাঠকের পড়তে কষ্ট হবার কোন কারণ নেই।

শেষ কথা

পরিশেষে বলি ভালো কাজ সামনে আনার ব্যাপারে আমরা বড়োই বিমুখ। দারুণ এক বইয়ের দারুণ অনুবাদ চোখের সামনে ঘোরাফেরা করছে তবুও দেখছেন না তাই তো এ বিশাল রিভিউ লিখে ফেললাম। এবার তো পড়ে ফেলুন তৌফিক সরকারের অনুবাদে অশ্বিন সাংহির ‘দ্য কৃষ্ণ কি’।

(বিশ্লেষণ টিম কর্তৃক সম্পাদিত)

রিভিউ কীভাবে করতে হয়, পড়তে এখানে ক্লিক করুন।