হোয়াটসঅ্যাপ চলবে স্মার্টফোন ছাড়া, আসছে মাল্টি-ডিভাইস এক্সপেরিয়েন্স
- প্রকাশ: ১২:২৪:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ জুলাই ২০২১
- / ৭৬৬ বার পড়া হয়েছে
হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) নতুন এক ফিচার পরীক্ষা করে দেখছে যার মাধ্যমে মোবাইল ফোন ছাড়াও বার্তা বা ম্যাসেজ (message) পাঠাতে পারবে ব্যবহারকারীরা। হোয়াটসঅ্যাপের প্যারেন্ট অর্গানাইজেশন ফেইসবুক (Facebook) ‘মাল্টি-ডিভাইস এক্সপেরিয়েন্স’ (multi-device experience) খুব দ্রুতই চালু। গত ১৪ জুলাই, ২০২১ একটি ব্লগ পোস্টে নতুন এই খবরটি বিশ্বের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী ও মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেছে ফেইসবুকের প্রকৌশলীরা।
বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার প্রাইমারি ডিভাইস নির্ভর
বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ যে পরিষেবা দিচ্ছে তা একক ফোন নির্ভর। অর্থাৎ একটি প্রাইমারি ডিভাইস ছাড়া এই পরিষেবা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। শুধু একটি স্মার্টফোনভিত্তিক হোয়াটসঅ্যাপ প্রযুক্তিকে বলা হয় সিঙ্গেল ডিভাইস এক্সপেরিয়েন্স (single device experience)। এই প্রযুক্তিতে বার্তা পাঠানোর জন্য এর ব্যবহারকারীদের ফোনের সাথে যুক্ত থাকতেই হয়। ডেস্কটপ বা ওয়েব অ্যাপের মাধ্যমেও একজন ব্যবহারকারী আরেক জনের উদ্দেশে বার্তা বা কোনো ডকুমেন্ট পাঠাতে চাইলে, তাদের উভয়েরই ফোনের সাথে সংযুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক।
হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট যেমন ফোন দিয়ে খুলতে হয়, তেমনই ডেস্কটপ বা ওয়েব অ্যাপ বা অন্য কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণ করতে চাইলে ব্যবহারকারীকে ফোনের সাথে ওই ডিভাইসকে যুক্ত (linked) করে নিয়েই কেবল এই কাজটি করতে হয়। এতে কিউআর কোডের (QR Code) এর মাধ্যমে লিংক করাতে হয়। এভাবে ফোনের সাথে কম্পিউটার বা ট্যাব (non-phone devices) যুক্ত করার পরেও একজন ব্যবহারকারী ততক্ষণ নতুন যুক্ত করা ডিভাইসের মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণ করতে পারবে যতক্ষণ পর্যন্ত নির্দিষ্ট মোবাইল ফোনটি ইন্টারনেটে যুক্ত থাকবে। অর্থাৎ, লিংক করা থাকলে ফোনের ব্যাটারি ডেড হয় বা কোনো কারণে ফোনের ইন্টারনেট কানেকশন বিচ্ছিন্ন হয় তাহলে আর অন্য কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে আর কাজ চালানো যাবে না। কখনো কখনো দেখা যায় ইন্টারনেটে স্মার্টফোন যুক্ত থাকার পরেও ইউআই (UI) বা স্মার্টফোনের ইন্টারনাল বিভিন্ন ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতার কারণে সেকেন্ডারি ডিভাইস বা লিংক করা ডিভাইস দিয়ে আর হোয়াটসঅ্যাপ চালানো যাচ্ছে না। এটি সবার জন্য এক প্রকারের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মাল্টি-ডিভাইস এক্সপেরিয়েন্সে হোয়াটসঅ্যাপ, থাকবে না প্রাইমারি ডিভাইসের আবশ্যকতা
নতুন ফিচারটি অর্থাৎ প্রাইমারি ডিভাইসের বাধ্যবাধকতা কাটিয়ে মাল্টিডিভাইস এক্সপেরিয়েন্স চালু হলে ব্যবহারকারীরা উপর্যুক্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। হোয়াটসঅ্যাপ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, নতুন ফিচার যুক্ত হলে সর্বোচ্চ চারটি ডিভাইস (কম্পিউটার, ট্যাব, বা এরকম অন্য ডিভাইস) লিংক করে রাখা যাবে একসাথে এবং মূল ফোনটি বন্ধ থাকলেও বা কোনো কারণে সংযুক্ত না রাখতে পারলেও বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণ করা যাবে।
ফোন সংযুক্ত না থাকা অবস্থায়ও বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণ করার নতুন ফিচার যোগ করা হলেও, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন (end-to-end encryption) সুবিধা আগের মতোই বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন’ হলো উপাত্ত (data) বা তথ্য (information) এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাঠানোর অধিকতর নিরাপদ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে উপাত্ত ও তথ্যকে বিশেষ কোডে রুপান্তর করে পাঠানো হয় ফলে নির্দিষ্ট প্রান্ত (device) ছাড়া অন্য কোনো প্রান্ত থেকে বার্তা পড়া যায় না।
সিগনাল ও টেলিগ্রামে রয়েছে মাল্টি-ডিভাইস সুবিধা
ইতোমধ্যেই একাধিক ডিভাইস যুক্ত করার সুবিধা অন্যান্য এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড অ্যাপগুলো অনেক আগে থেকে অ্যাভেইলেবল থাকলেও, হোয়াটসঅ্যাপ এখনো পরিষেবাটি চালু করতে পারেনি। হোয়াটসঅ্যাপ চালু করতে না পারলে, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত সিগনাল (Signal) এবং টেলিগ্রাম (Telegram) এর মতো অ্যাপগুলোতে এই সুবিধাটি রয়েছে। আর এ কারণেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা ফিচারটি চালুর অনুরোধ করেছে।
জানা যাচ্ছে, অল্প কিছু দিনের মধ্যে স্বল্প পরিসরে নতুন ফিচারটি পরীক্ষামুলক ভাবে উন্মুক্ত করবে হোয়াটসঅ্যাপ।
হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ে ফেইসবুকের এমন পুনঃপরিকল্পনা কেন?
গত ১৪ জুলাই, ২০২১ তারিখ ফেসবুকের প্রকৌশলীরা তাঁদের একটি ব্লগ পোস্টে জানিয়েছেন যে, হোয়াটসঅ্যাপের ডিজাইনে নতুন পদক্ষেপ তাদের নিতে হয়েছে কারণ বহু ব্যবহারকারী এমনটি চেয়েছে। তাঁদের দাবি, বিগত কয়েক বছর ধরেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা ফেসবুককে মাল্টি-ডিভাইস এক্সপেরিয়েন্স চালুর অনুরোধ করে আসছে, যাতে তারা স্মার্টফোন ইন্টারনেটে সংযুক্ত না রেখেও বার্তা গ্রহণ ও প্রেরণ করতে পারেন। কারণ অনেক সময়েই স্মার্টফোনকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
ব্যবহারকারীদের চাওয়া আমলে নিয়েই, ফেইসবুক বেটা সংস্করণে সীমিত আকারে মাল্টি-ডিভাইস এক্সপেরিয়েন্স পরীক্ষা করে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে। ফিচারটি চালু হলে স্মারটফোন আর প্রাইমারি ডিভাইস হিসেবে থাকছে না, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে।
মাল্টি-ডিভাইস এক্সপেরিয়েন্স কেমন হবে?
ফেইসবুক এটিকে যেভাবে বলেছে তা হলো- “এই নতুন সক্ষমতার মাধ্যমে আপনি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন আপনার ফোন এবং ফোন-ভিন্ন যে-কোনো সর্বোচ্চ চারটি ডিভাইসে, এমন কি আপনার ফোনের ব্যাটারি শেষ হলেও”।
ফেইসবুক বলছে, ব্যবহারকারীর হোয়টসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে যুক্ত থাকা ডিভাইসগুলো স্বতন্ত্রভাবেই কাজ করবে, যেগুলো একই স্তরের গোপনীয়তা নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত পরিচালিত হবে। মানুষ ঠিক এ ধরণের পরিষেবাই আশা করে। ফেইসবুক হোয়াটসঅ্যাপের নতুন এই আপডেট এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের বিষয়টি মাথায় রেখেই সম্পন্ন করেছে (করছে) যাতে অ্যাপে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার ত্রুটি দেখা না দেয়। ব্যবহারকারীর বার্তা, কন্ট্যাক্ট লিস্ট, ডিভাইস সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলো সিংক্রোনাইজেশনের ক্ষেত্রে যেমন পূর্বেও খুব গুরুত্বের সাথে দেখেছে, তেমনই নতুন সংস্করণেও থাকবে। প্রাইমারি ডিভাইস হিসেবে এখন আর স্মার্টফোন বা হ্যান্ডসেটের বিশেষ গুরুত্ব না থাকলে এবং অতিরিক্ত চারটি ডিভাইস স্বাধীনভাবে যুক্ত হলেও ব্যবহারকারীর ডেটা গোপন ও সুরক্ষিত থাকবে। এ সমস্ত বিষগুলো মাথায় রেখেই ফেইসবুক হোয়াটসঅ্যাপের নতুন আর্কিটেকচার ও ডিজাইন করেছে যাতে গোপনীয়তা ও সুরক্ষা এবং এন্ড-টু-এন্ড-এনক্রিপশন ঠিক থাকে।
এক নজরে হোয়াটসঅ্যাপের আপডেটেড সুবিধা
স্মার্টফোনকে প্রাইমারি ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার আবশ্যক থাকছে না যার কারণে ফোনের ব্যাটারি ডেড হলেও বা ফোন বন্ধ থাকলেও পূর্বে সাইন ইন করা ডিভাইসে সতস্ফুর্তভাবে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা যাবে
- মাল্টি-ডিভাইস এক্সপেরিয়েন্স-এর আওয়তায় সর্বোচ্চ চারটি নন-ফোন ডিভাইসে স্বাধীনভাবে হোয়াটসঅ্যাপে সাইন ইন করা যাবে
- নন-ফোন প্রতিটি ডিভাইস স্বাধীনভাবে চলবে
- এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন আরও উন্নত করা হবে
- বার্তা, কন্ট্যাক্ট, ভয়েস ও ভিডিয়ো কল, গ্রুপ কল, চিহ্নিত বার্তা, ডিভাইসের বিভিন্ন ইত্যাদির গোপনীয়তা ও সুরক্ষার সাথে হোয়াটসঅ্যাপর নতুন আর্কিটেকচার ও ডিজাইন নিয়ে ফেইসবুক কোনো আপোষ করবে না
- কবে হোয়াটসঅ্যাপ নতুন সংস্করণের বেটা চালু করবে?
ফেইসবুক জানিয়েছে যে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই স্বল্প পরিসরে নতুন আপডেট নিয়ে বেটা চালু করবে। তবে কবে নাগাদ এটি শুরু হবে তা জানা যায়নি। যখনই এই নতুন ডিজাইনে পরিষেবা প্রদান শুরু করুক না কেন, নিশ্চয়ই তা মন্দ হবে না। কিন্তু গোপনীয়তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা কতটুকু কার্যকর রাখতে পারবে কর্তৃপক্ষ সেটাই এখন ভাবনার বিষয়।
হোয়াটসঅ্যাপ পরিচিতি
হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জার হলো এখন পর্যন্ত বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় তাতক্ষণিক বার্তা চালাচালি, বিভিন্ন ডকুমেন্ট পাঠানো ও গ্রহণ এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভয়েস ও ভিডিয়ো কল করার অ্যাপ্লিকেশন। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারকে সংক্ষেপে শুধু ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ বলে ডাকা হয়। হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) কথাটি পছন্দ করা হয়েছে ইংরেজি হোয়াটস আপ (What’s-up) কে অবলম্বন করে। WhatsApp এর উচ্চারণ অনেকটা এমন- ওয়াটসঅ্যাপ বা ওয়াট-স্যাপ (Wots-app or Wot-sap)।
২০০৯ সালে জ্যান কোয়াম এবং ব্রায়ান অ্যাকটন নামের দুইজন ডেভেলপার হোয়াটসঅ্যাপ ডেভেলপ করেন, যারা ২০ বছর ইয়াহু (Yahoo) তে কাজ করেছেন। ২০১৪ সালে রেকর্ড পরিমাণ অর্থে ফেইসবুক এই অ্যাপটিকে কিনে নেয়। ফেইসবুক কর্তৃক হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেওয়া হলেও, এটি একটি স্বাধীন অ্যাপ হিসেবে চলে আসছে এখন অবধি। ফেইসবুকের দেওয়া তথ্য অনুসারে হোয়াটসঅ্যাপ চলছে ১৮০ টি দেশে এবং এর সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০ কোটিরও ওপরে। হোয়াটসঅ্যাপ যে সকল পরিষেবা দিয়ে আসছে, তার সব কিছুই বিনামূল্যে দিচ্ছে, এমন কি এখন পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপ কোনো রকম বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে না ব্যবহারকারীদের। হোয়াটসঅ্যাপ যথাক্রমে আইওস, অ্যান্ড্রোয়েড, ম্যাক এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করা যায়। হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ে ফেইসবুক বিভিন্ন সময় বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে। শুধু বিতর্কই নয়, কখনো কখনো তাদেরকে মোটা অংকের জরিমানাও করেছে বিভিন্ন দেশ। শত বিতর্ককে পেছনে ফেলে হোয়াটসঅ্যাপ এগিয়ে চলছে এবং একই রকম সেবা দিচ্ছে এমন অ্যাপগুলোর মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ শীর্ষস্থানও ধরে রেখেছে।