গবেষণা নকশার উদ্দেশ্য কী এবং গবেষণা নকশা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- প্রকাশ: ০৮:৩৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / ৭২৬০ বার পড়া হয়েছে
কোনো বিশেষ গবেষণা (Research) কার্য সম্পাদনের পরিকল্পনা কিংবা রূপরেখা (Blue Print) প্রণয়ন করার নামই হলো গবেষণা গবেষণা নকশা বা রিসার্চ ডিজাইন (Research Design)। সমগ্র গবেষণা কর্মটি পরিচালিত হয় গবেষণা নকশা অনুযায়ী। মূল গবেষণায় প্রবেশের পূর্বে নকশা প্রণয়ন এবং প্রণীত নকশা অবলোকন করে গবেষণা সম্পর্কে একটি ধারণা লাভ করা যায়, যা গবেষণাকর্মে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়; একে গবেষণা নকশা প্রণয়নের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য বলা যায়।
গবেষণা নকশার উদ্দেশ্য
বিভিন্ন গবেষক ‘গবেষণা নকশার উদ্দেশ্য’ বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন।
গবেষণা নকশার উদ্দেশ্য হলো- প্রথমত, কোনো প্রপঞ্চ সম্পর্কে পরিচিতি লাভ করা। দ্বিতীয়ত, কোনো কিছুকে বর্ণনা করা এবং তৃতীয়ত, চলকসমূহের মধ্যে সংস্রব নির্ধারণ করা বা অনুকল্প অভীক্ষণ করা (শেলিজ এবং অন্যান্য, ১৯৫৯)।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী পি. ভি. ইয়াং এবং অন্যান্যদের (P. V. Young et al) মতে গবেষণা নকশার উদ্দেশ্যকে যেভাবে দেখছে বর্ণিত হলো:
- গবেষণার ক্ষেত্র (field) নির্ধারণ ও নির্দিষ্টকরণ করা।
- তথ্য ও উপাত্তের উৎস ও প্রকৃতি নির্ধারণ করা।
- প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন কাজের সময় নির্ধারণ করা।
- প্রয়োজনীয় উপকরণ ও উপাদান নিরূপণ করা।
- গবেষণার জন্য লোকবল সংগ্রহ ও এর যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা প্রস্তুত।
- গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশে রয়েছে এমন জায়গার খোঁজ করা প্রাথমিক ধারণা যায়।
- সমগ্রক (population), নমুনা (sample)-এর l স্বরূপ নির্ধারণ করা।
- গবেষণার কৌশল চিহ্নিতকরণ।
- তথ্য ও উপাত্তের প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিশেস্নষণ ও উপস্থাপনের কৌশল নির্ণয়।
- বিস্তারিত আর্থিক বাজেট প্রস্তুত করা।
- প্রতিবেদন তৈরি ও উপস্থাপন কৌশল নির্ণয়।
গবেষণা নকশার নানাবিধ উদ্দেশ্যর মধ্যে প্রধান কয়েকটি উদ্দেশ্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. ধারণা লাভ: গবেষণা কার্যের ধারাবাহিকতা, গতিবিধি ইত্যাদি গবেষণা নকশা দেখে বোঝা যায়। ফলে গবেষণার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা জন্মে। গবেষণা নকশা বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্ব ধারণা প্রদান করে।
২. গবেষণা ত্রুটি ও অস্পষ্টতা চিহ্নিত করা: গবেষণা ক্ষেত্রে অনেক ধরনের ত্রুটি ও অস্পষ্টতা থাকতে পারে। গবেষণা নকশা প্রণয়ন করা হলে এসব অনাকাক্সিড়্গত ত্রুটি ও অস্পষ্টতা চোখে পড়ে। তখন এগুলো যেমন নিরসন করা যায়, তেমনি এসব ত্রুটি থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা যায়। সুতরাং বলা যায়, গবেষণা নকশার অন্যতম উদ্দেশ্য ত্রুটিমুক্ত গবেষণা ফলাফল উপহার দেওয়া।
৩. চলক নিয়ন্ত্রণ: সব ধরনের গবেষণায় সাধারণত চলক (variable) ব্যবহৃত হয়। গবেষণা নকশা বিভিন্ন প্রকার চলকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য প্রণয়ন করা হয়।
৪. তথ্য ও উপাত্তের বিশ্লেষণ: এটি তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহের কৌশল, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিশ্লেষণ ইত্যাদির জন্য সুষ্ঠু প্রয়োগ পদ্ধতি নির্দেশ করে।
৫. ক্ষেত্র নির্বাচন: গবেষক যাতে এলোমেলোভাবে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ না করে, সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রণীত গবেষণা নকশায় গবেষণার ক্ষেত্র নির্দিষ্টকরণ করা হয়।
৬. নির্ভুল ফলাফল লাভ: গবেষণা নকশা অনুসরণে পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল সাধারণত ত্রুটিমুক্ত হয়।
গবেষণা নকশার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা (যে কারণে গবেষণা নকশা গুরুত্বপূর্ণ)
সুষ্ঠুভাবে গবেষণা পরিচালনার জন্য গবেষণা নকশার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গবেষণা নকশার সহায়তায় গবেষণা কার্যক্রম সঠিক ও ধারাবাহিকভাবে সময় অনুযায়ী এগিয়ে যায়। গবেষণা নকশার প্রয়োজনীয়তা নিম্নে বর্ণিত হলো:
১. একটি গবেষণা কর্মকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য গবেষণা নকশা প্রণয়ন করা দরকার।
২. গবেষণা নকশার সহায়তায় নূন্যতম শ্রমসাপেক্ষে সর্বোচ্চ পরিমাণে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা যায়।
৩. গবেষণার জন্য উপাত্ত সংগ্রহের বিভিন্ন কৌশল ও পদ্ধতি গবেষণা নকশা থেকে গবেষক পেয়ে থাকে ও বাস্তবে তা কাজে লাগিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত করে।
৪. সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে গবেষণা নকশা গবেষককে দিক নির্দেশনা প্রদান করে।
৫. গবেষণা নকশায় বর্ণিত প্রধান প্রধান কর্ম অনুযায়ী বণ্টিত সময় ও অর্থ ব্যয়ে গবেষক কাজ করার ফলে ন্যূনতম সময় ও অর্থে সর্বাধিক গবেষণা কর্ম সম্পাদিত হয়।
৬. গবেষণা কর্মের যথাযথ ফলাফল লাভের ভিত্তি হিসেবে গবেষণা নকশা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
৭. গবেষণা নকশার উল্লিখিত ধারাক্রম ব্যবহারের ফলে গবেষণার সময় ও অর্থ যেমন সাশ্রয় হয়, তেমনি সুষ্ঠু ও সঠিক ফলাফলের প্রত্যাশা অনেক গুণে বেড়ে যায়।