১২:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

সাঁতার কাটার উপায় ও উপকারিতা

সাঈমা আক্তার
  • প্রকাশ: ১১:৩৫:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ৬৯৮৭ বার পড়া হয়েছে

সব ব্যায়ামের সেরা হলো সাঁতার | ছবি: Todd Quackenbush


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতিদিন খানিকক্ষণ ব্যায়াম প্রয়োজন আমাদের। দিনের জন্য বরাদ্দ নানা রকম ব্যায়ামের পরিবর্তে সাঁতার কাটলেই কিন্তু সহজ হয়ে যায় এই ব্যায়ামের কাজ। কারণ সাঁতারের মতো ভালো ব্যায়াম খুব কমই আছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মাথা থেকে পায়ের আঙুল’- সাঁতার গোটা শরীরের ব্যায়াম করিয়ে নেয়। এমনকি শুধু পানিতে ভেসে থাকাও শরীরের জন্য ভালো।  সাঁতার কাটলে হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুস সুস্থ থাকে। যারা রোজ সাঁতার কাটেন, তাদের হার্টের সমস্যাও কমে অনেকখানি। অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন করতে চাইলে সাঁতারের বিকল্প নেই।

আর্থ্রাইটিসের সমস্যা কিংবা হাঁটু, পায়ের ব্যথা থাকলেও সাঁতার কাটতে পারেন। অনেক সময়ে এই ধরনের রোগে ব্যায়াম করতে সমস্যা হলেও সাঁতারে সাধারণত তা হয় না। অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের মতো রোগে অস্থিসন্ধির যন্ত্রণা, আড়ষ্ট ভাবও কমাতে সাহায্য করে সাঁতার। হতাশা দূর করতে সাঁতার খুবই কার্যকর। ডিমেনশিয়া জাতীয় নানা মানসিক সমস্যায় মস্তিষ্ক ও মন ভালো রাখার অন্যতম উপায় হিসেবে সাঁতারকে বেছে নেন বিশেষজ্ঞরা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বার্ধক্যজনিত অনিদ্রাও দূর করে সাঁতার। ইনসমনিয়ার মতো সমস্যায় যারা ভোগেন, তারা নিয়মিত সাঁতার কাটলে ভালো থাকবেন। ঘুমও হবে ভালো।

পেশি শক্তিশালী করতে সাঁতার অপরিহার্যহাঁপানির কিংবা সাইনাসের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর সাঁতার  কাটবেন। গর্ভবতী নারীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন অবশ্যই।

সাঁতার কাটতে গিয়ে অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ত্বক। একই সুইমিং পুল একাধিক মানুষ ব্যবহার করার ফলে ত্বকে অ্যালার্জি, র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন অত্যধিক ক্লান্ত থাকলে, ঠাণ্ডা লাগলে কিংবা প্রচণ্ড গরম থেকে এসেই সঙ্গে সঙ্গে পানিতে নামবেন না। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপর নামুন। বিদ্যুৎ চমকালে বা মেঘ ডাকলে পুল থেকে উঠে পড়ুন সঙ্গে সঙ্গে। সাঁতার কাটার সময় মুখে চিউয়িংগাম জাতীয় কিছু রাখবেন না। সাঁতার কাটার সময়ে লাইফগার্ডের নিয়মাবলি মেনে চলবেন অবশ্যই। বলা হয়, সাঁতার হল এমন একটি ব্যায়াম, যার জন্য  শরীরের সবকটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল থাকে।

মনে করা হয়, সব ব্যায়ামের সেরা ব্যায়াম হল সাঁতার। পায়ের বাত থেকে শুরু করে পিঠের ব্যথা, হাজার-একটা সমস্যায় সাঁতারই আমাদের ভরসা। এমনকি মনকে চাঙ্গা রাখতেও সাঁতারের জুড়ি মেলা ভার। আজকের দিনে মেদ বহুলতা বা ওবেসিটির সমস্যা দুনিয়াজুড়ে যখন এক সঙ্কটে পরিণত হয়েছে, তখন  সাঁতারের চেয়ে ভাল ব্যায়াম সত্যিই আর কিছু হয় না। মেদ ঝরাতে সাঁতারের পরামর্শ দেওয়া হয়। ডাকএমনকি বেশ কিছু শ্বাসজনিত সমস্যাও সাঁতার কাটতে বলেন চিকিৎসকরা। তাই গরম পড়ছে, এবার সাঁতারে যান। কাছেপিঠের যে কোনো সুইমিং পুলেই যেতে পারেন। কোনো  সমস্যা নেই। পারলে, ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে সাঁতারে নামুন। দেখবেন, সবকিছু কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। সাঁতার কাটার অনেক গুণ রয়েছে। তা বলে শেষ করা যায় না। তবু দু-একটা বলা যাক এখানে। আগেই বলেছি, অর্থোপেডিকরা সাঁতার কাটার পরামর্শ দেন এখন। হাঁটু ও পায়ের ব্যথা সারাতে সাঁতারের কোনো বিকল্প নেই। তাই  আপনার যদি এই সমস্যা থাকে, তাহলে সাঁতার কাটুন। উপকার পাবেন। সাঁতারে হার্ট ও ফুসফুস খুব ভাল থাকে। তাই আপনার কোনো সমস্যা থাক বা না-থাক, নিয়মিত সাঁতার কাটুন। মনে  রাখবেন, হাঁপানির রোগেও সাঁতার খুব ভাল কাজ করে।যাঁরা সাইনাসের ব্যথায় ভোগেন, তাঁরাও কিন্তু সাঁতার কেটে দেখতে পারেন। খুব উপকার পাবেন। সাঁতার শরীরের বিভিন্ন পেশীকে নমনীয় রাখে।  ফলে ওবেসিটির সমস্যা থাকলে সাঁতার কাটুন। একশো শতাংশ উপকার পাবেন।

সাঁতারে আমাদের শরীরের গুড হরমোন ক্ষরণ হয়। ফলে স্ট্রেস দূর হয়। মন চাঙ্গা থাকে। গা-ঝাড়া দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা কাজ করে সাঁতারে।সাঁতার এক ধরনের জলক্রীড়া প্রতিযোগিতাবিশেষ, যাতে প্রতিযোগীরা নির্দিষ্ট দূরত্বে দ্রুত অতিক্রমণের জন্য সচেষ্ট থাকেন। যিনি সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তিনি সর্বসমক্ষে সাঁতারু নামে অভিহিত হন। বিভিন্ন দূরত্বে ও পর্যায়ের সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তন্মধ্যে ১৮৯৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় সাঁতারের সর্বপ্রথম অন্তর্ভুক্তি ঘটে। বর্তমানে অলিম্পিক ক্রীড়ায় ১০০ মিটার থেকে শুরু করে ১৫০০ মিটার দূরত্বের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য সাঁতারবিষয়ক প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে – ডাইভিং, সিনক্রোনাইজড সাঁতার এবং ওয়াটার পোলো।

সাঁতার হলো স্বস্তির ব্যায়াম। শক্তিশালী কাঁধ, কোমর কিংবা শারীরিক গঠনের জন্য সব সময় আলাদা ব্যায়াম করতে হয়, কিন্তু সাঁতারে পাওয়া যায় একসঙ্গে সবকিছু। চমৎকার শারীরিক গঠনের জন্য শুধু নয়, সুস্থ থাকার জন্যও সাঁতার খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলে থাকেন, যাঁরা নিয়মিত সাঁতার কাটেন, তাঁদের হৃৎস্বাস্থ্য ভালো থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে ফুসফুসের অক্সিজেন ধারণক্ষমতা। নিয়মিত সাঁতারে পেশিগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠে, বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। সপ্তাহে অন্তত চার দিন এক ঘণ্টা করে সাঁতরালে এক মাসেই শরীরের পরিবর্তন নিজেই বুঝতে পারবেন। সাঁতার অনেক প্রকার। এর মধ্যে বাটারফ্লাই, ব্যাকস্ট্রোক, ব্রেস্টস্ট্রোক ও ফ্রিহ্যান্ড উল্লেখযোগ্য। ভিন্ন ধরনের সাঁতার শিখে নিলে শরীরের গঠন যেমন সুন্দর হয়, মেদ ঝরার মাত্রাটাও দ্রুত হয়ে যায়। তবে যাঁরা শুধু ফিটনেস ধরে রাখার জন্য সাঁতার কাটেন, তাঁদের জন্য ফ্রিহ্যান্ডই যথেষ্ট।

সাঁতার শুরু করার আগে প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। হালকা দৌড় কিংবা দাঁড়িয়ে ফ্রিহ্যান্ড ব্যায়াম করে নিলে পানিতে পেশি টান পড়ার আশঙ্কা কমে যায়। পেশির জড়তা না সরিয়ে সাঁতারে নামলে কাঁধে কিংবা পায়ে টান পড়তে পারে। সাঁতার কাটার জন্য হালকা পোশাক পরে নিতে হবে। চোখে পানির ঝাপটা এড়াতে পরতে পারেন সুইমিং গগলস। চুলের সুরক্ষার জন্য সুইমিং ক্যাপ পরে নিন। সাঁতারের সময় যদি কানে পানি যাওয়ার শঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে কানে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করতে পারেন।

সুইমিংপুলের পানি জীবাণুমুক্ত রাখতে ক্লোরিন ব্যবহার হয়। তাই সাঁতার শেষে স্বাভাবিক পানি দিয়ে একবার গোসল করে নিন।  নিয়মিত সাঁতার শরীরের মেটাবলিজম–প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।  ফুসফুসের কার্যক্ষতা বাড়ে, অ্যাজমা প্রতিরোধে সাঁতার সহজ সমাধান হতে পারে।

কোমরব্যথা, অস্থিসন্ধির ব্যথা দূর হবে সাঁতারে। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও সাঁতার ভালো ব্যায়াম।

সাঁতার শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সাঁতারে ঊর্ধ্বাঙ্গ ও নিম্নাঙ্গের সমন্বয় ঘটে বলে অল্প সময়ে পুরো শরীরেরই ব্যায়াম হয়ে যায়। তাই প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত সাঁতার কাটা। বিভিন্ন ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে সবার সাঁতার শিখা প্রয়োজন।

আসুন আমরা সকলে নিয়মিত  সাঁতার কাটি এবং অন্যকে অনুপ্রাণিত করি। নিজে সুস্থ থাকি এবং অপরকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করি।

বিষয়:

শেয়ার করুন

One thought on “সাঁতার কাটার উপায় ও উপকারিতা

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

সাঈমা আক্তার

সাঈমা একজন প্রাবন্ধিক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

সাঁতার কাটার উপায় ও উপকারিতা

প্রকাশ: ১১:৩৫:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতিদিন খানিকক্ষণ ব্যায়াম প্রয়োজন আমাদের। দিনের জন্য বরাদ্দ নানা রকম ব্যায়ামের পরিবর্তে সাঁতার কাটলেই কিন্তু সহজ হয়ে যায় এই ব্যায়ামের কাজ। কারণ সাঁতারের মতো ভালো ব্যায়াম খুব কমই আছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মাথা থেকে পায়ের আঙুল’- সাঁতার গোটা শরীরের ব্যায়াম করিয়ে নেয়। এমনকি শুধু পানিতে ভেসে থাকাও শরীরের জন্য ভালো।  সাঁতার কাটলে হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুস সুস্থ থাকে। যারা রোজ সাঁতার কাটেন, তাদের হার্টের সমস্যাও কমে অনেকখানি। অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন করতে চাইলে সাঁতারের বিকল্প নেই।

আর্থ্রাইটিসের সমস্যা কিংবা হাঁটু, পায়ের ব্যথা থাকলেও সাঁতার কাটতে পারেন। অনেক সময়ে এই ধরনের রোগে ব্যায়াম করতে সমস্যা হলেও সাঁতারে সাধারণত তা হয় না। অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের মতো রোগে অস্থিসন্ধির যন্ত্রণা, আড়ষ্ট ভাবও কমাতে সাহায্য করে সাঁতার। হতাশা দূর করতে সাঁতার খুবই কার্যকর। ডিমেনশিয়া জাতীয় নানা মানসিক সমস্যায় মস্তিষ্ক ও মন ভালো রাখার অন্যতম উপায় হিসেবে সাঁতারকে বেছে নেন বিশেষজ্ঞরা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বার্ধক্যজনিত অনিদ্রাও দূর করে সাঁতার। ইনসমনিয়ার মতো সমস্যায় যারা ভোগেন, তারা নিয়মিত সাঁতার কাটলে ভালো থাকবেন। ঘুমও হবে ভালো।

পেশি শক্তিশালী করতে সাঁতার অপরিহার্যহাঁপানির কিংবা সাইনাসের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর সাঁতার  কাটবেন। গর্ভবতী নারীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন অবশ্যই।

সাঁতার কাটতে গিয়ে অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ত্বক। একই সুইমিং পুল একাধিক মানুষ ব্যবহার করার ফলে ত্বকে অ্যালার্জি, র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন অত্যধিক ক্লান্ত থাকলে, ঠাণ্ডা লাগলে কিংবা প্রচণ্ড গরম থেকে এসেই সঙ্গে সঙ্গে পানিতে নামবেন না। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপর নামুন। বিদ্যুৎ চমকালে বা মেঘ ডাকলে পুল থেকে উঠে পড়ুন সঙ্গে সঙ্গে। সাঁতার কাটার সময় মুখে চিউয়িংগাম জাতীয় কিছু রাখবেন না। সাঁতার কাটার সময়ে লাইফগার্ডের নিয়মাবলি মেনে চলবেন অবশ্যই। বলা হয়, সাঁতার হল এমন একটি ব্যায়াম, যার জন্য  শরীরের সবকটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল থাকে।

মনে করা হয়, সব ব্যায়ামের সেরা ব্যায়াম হল সাঁতার। পায়ের বাত থেকে শুরু করে পিঠের ব্যথা, হাজার-একটা সমস্যায় সাঁতারই আমাদের ভরসা। এমনকি মনকে চাঙ্গা রাখতেও সাঁতারের জুড়ি মেলা ভার। আজকের দিনে মেদ বহুলতা বা ওবেসিটির সমস্যা দুনিয়াজুড়ে যখন এক সঙ্কটে পরিণত হয়েছে, তখন  সাঁতারের চেয়ে ভাল ব্যায়াম সত্যিই আর কিছু হয় না। মেদ ঝরাতে সাঁতারের পরামর্শ দেওয়া হয়। ডাকএমনকি বেশ কিছু শ্বাসজনিত সমস্যাও সাঁতার কাটতে বলেন চিকিৎসকরা। তাই গরম পড়ছে, এবার সাঁতারে যান। কাছেপিঠের যে কোনো সুইমিং পুলেই যেতে পারেন। কোনো  সমস্যা নেই। পারলে, ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে সাঁতারে নামুন। দেখবেন, সবকিছু কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। সাঁতার কাটার অনেক গুণ রয়েছে। তা বলে শেষ করা যায় না। তবু দু-একটা বলা যাক এখানে। আগেই বলেছি, অর্থোপেডিকরা সাঁতার কাটার পরামর্শ দেন এখন। হাঁটু ও পায়ের ব্যথা সারাতে সাঁতারের কোনো বিকল্প নেই। তাই  আপনার যদি এই সমস্যা থাকে, তাহলে সাঁতার কাটুন। উপকার পাবেন। সাঁতারে হার্ট ও ফুসফুস খুব ভাল থাকে। তাই আপনার কোনো সমস্যা থাক বা না-থাক, নিয়মিত সাঁতার কাটুন। মনে  রাখবেন, হাঁপানির রোগেও সাঁতার খুব ভাল কাজ করে।যাঁরা সাইনাসের ব্যথায় ভোগেন, তাঁরাও কিন্তু সাঁতার কেটে দেখতে পারেন। খুব উপকার পাবেন। সাঁতার শরীরের বিভিন্ন পেশীকে নমনীয় রাখে।  ফলে ওবেসিটির সমস্যা থাকলে সাঁতার কাটুন। একশো শতাংশ উপকার পাবেন।

সাঁতারে আমাদের শরীরের গুড হরমোন ক্ষরণ হয়। ফলে স্ট্রেস দূর হয়। মন চাঙ্গা থাকে। গা-ঝাড়া দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা কাজ করে সাঁতারে।সাঁতার এক ধরনের জলক্রীড়া প্রতিযোগিতাবিশেষ, যাতে প্রতিযোগীরা নির্দিষ্ট দূরত্বে দ্রুত অতিক্রমণের জন্য সচেষ্ট থাকেন। যিনি সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তিনি সর্বসমক্ষে সাঁতারু নামে অভিহিত হন। বিভিন্ন দূরত্বে ও পর্যায়ের সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তন্মধ্যে ১৮৯৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় সাঁতারের সর্বপ্রথম অন্তর্ভুক্তি ঘটে। বর্তমানে অলিম্পিক ক্রীড়ায় ১০০ মিটার থেকে শুরু করে ১৫০০ মিটার দূরত্বের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য সাঁতারবিষয়ক প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে – ডাইভিং, সিনক্রোনাইজড সাঁতার এবং ওয়াটার পোলো।

সাঁতার হলো স্বস্তির ব্যায়াম। শক্তিশালী কাঁধ, কোমর কিংবা শারীরিক গঠনের জন্য সব সময় আলাদা ব্যায়াম করতে হয়, কিন্তু সাঁতারে পাওয়া যায় একসঙ্গে সবকিছু। চমৎকার শারীরিক গঠনের জন্য শুধু নয়, সুস্থ থাকার জন্যও সাঁতার খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলে থাকেন, যাঁরা নিয়মিত সাঁতার কাটেন, তাঁদের হৃৎস্বাস্থ্য ভালো থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে ফুসফুসের অক্সিজেন ধারণক্ষমতা। নিয়মিত সাঁতারে পেশিগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠে, বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। সপ্তাহে অন্তত চার দিন এক ঘণ্টা করে সাঁতরালে এক মাসেই শরীরের পরিবর্তন নিজেই বুঝতে পারবেন। সাঁতার অনেক প্রকার। এর মধ্যে বাটারফ্লাই, ব্যাকস্ট্রোক, ব্রেস্টস্ট্রোক ও ফ্রিহ্যান্ড উল্লেখযোগ্য। ভিন্ন ধরনের সাঁতার শিখে নিলে শরীরের গঠন যেমন সুন্দর হয়, মেদ ঝরার মাত্রাটাও দ্রুত হয়ে যায়। তবে যাঁরা শুধু ফিটনেস ধরে রাখার জন্য সাঁতার কাটেন, তাঁদের জন্য ফ্রিহ্যান্ডই যথেষ্ট।

সাঁতার শুরু করার আগে প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। হালকা দৌড় কিংবা দাঁড়িয়ে ফ্রিহ্যান্ড ব্যায়াম করে নিলে পানিতে পেশি টান পড়ার আশঙ্কা কমে যায়। পেশির জড়তা না সরিয়ে সাঁতারে নামলে কাঁধে কিংবা পায়ে টান পড়তে পারে। সাঁতার কাটার জন্য হালকা পোশাক পরে নিতে হবে। চোখে পানির ঝাপটা এড়াতে পরতে পারেন সুইমিং গগলস। চুলের সুরক্ষার জন্য সুইমিং ক্যাপ পরে নিন। সাঁতারের সময় যদি কানে পানি যাওয়ার শঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে কানে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করতে পারেন।

সুইমিংপুলের পানি জীবাণুমুক্ত রাখতে ক্লোরিন ব্যবহার হয়। তাই সাঁতার শেষে স্বাভাবিক পানি দিয়ে একবার গোসল করে নিন।  নিয়মিত সাঁতার শরীরের মেটাবলিজম–প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।  ফুসফুসের কার্যক্ষতা বাড়ে, অ্যাজমা প্রতিরোধে সাঁতার সহজ সমাধান হতে পারে।

কোমরব্যথা, অস্থিসন্ধির ব্যথা দূর হবে সাঁতারে। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও সাঁতার ভালো ব্যায়াম।

সাঁতার শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সাঁতারে ঊর্ধ্বাঙ্গ ও নিম্নাঙ্গের সমন্বয় ঘটে বলে অল্প সময়ে পুরো শরীরেরই ব্যায়াম হয়ে যায়। তাই প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত সাঁতার কাটা। বিভিন্ন ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে সবার সাঁতার শিখা প্রয়োজন।

আসুন আমরা সকলে নিয়মিত  সাঁতার কাটি এবং অন্যকে অনুপ্রাণিত করি। নিজে সুস্থ থাকি এবং অপরকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করি।