আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা কী এবং আন্তর্জাতিক তারিখরেখার প্রয়োজনীয়তা কী?
- প্রকাশ: ০৭:৪২:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১
- / ১৬৫৯৯ বার পড়া হয়েছে
আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা (International Date Line) হলো পৃথিবীর পৃষ্ঠে অঙ্কিত এমন একটি কাল্পনিক রেখা যা উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত এবং একটি পঞ্জিকা দিবস এবং পরের দিনটির মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করে। আন্তর্জাতিক তারিখরেখা কী এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
আন্তর্জাতিক তারিখরেখা কী? (What Is the International Date Line?)
দ্রাঘিমারেখার পরিবর্তনের সাথে স্থানীয় সময়ের পরিবর্তন হয়। এভাবে দ্রাঘিমারেখার কারণে যে পরিবর্তন হয়, তাতে দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করার সময় বা ভূপ্রদক্ষিণ করার সময় স্থানীয় সময়ের পার্থক্য এবং দিনের হিসাবের অসুবিধা হয়। এ সমস্যাটি তখনই প্রকট হয় যখন কোনো নির্দিষ্ট স্থান হতে কোনো বিমান বা সমুদ্রগামী জাহাজ পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ১৮০° দ্রাঘিমারেখা অতিক্রম করে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে অবলম্বন করে জলভাগের ওপর দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত একটি রেখা কল্পনা করা হয়। কাল্পনিক এ রেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখরেখা বলে। তারিখরেখার ইংরেজি হলো International Date লিনে; সংক্ষেপে LDL।
দ্রাঘিমারেখার পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন স্থানে সময়ের পার্থক্য দেখা দেয় যা বিভিন্নভাবে সমস্যার সৃষ্টি করে, এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে অবলম্বন করে উত্তর-দক্ষিণে যে সাধারণ রেখা কল্পনা করা হয় তাকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বলে। আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে বয়ে গেছে।
উল্লেখ্য যে, উত্তর-দক্ষিণ দিকে ভ্রমণ করলে সময় বা দিনের কোনো রকম অসুবিধা হয় না। কিন্তু পূর্ব-পশ্চিম দিকে ভ্রমণ করলে সময় বা দিন গণনায় অসুবিধা হয়।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, গ্রিনিচ হতে কোনো জাহাজ যদি সোমবার সকাল ৯টায় যাত্রা আরম্ভ করে পূর্ব দিকে যেতে থাকে এবং যদি আর একটি জাহাজ একই গতিতে পশ্চিম দিকে যেতে থাকে, তবে পূর্বগামী জাহাজ লক্ষ্য করবে যে প্রতি ১° দ্রাঘিমা অন্তর স্থানীয় সময় ৪ মিনিট করে বেশি হচ্ছে এবং ঐ জাহাজ যখন ১৮০° পূর্ব দ্রাঘিমায় পৌঁছাবে তখন সেই স্থানের সময় হবে ১২ ঘণ্টা বেশি অর্থাৎ সেখানে তখন সময় হবে সোমবার রাত ৯টা। কিন্তু পশ্চিমগামী জাহাজ লক্ষ্য করবে যে, প্রতি ১° দ্রাঘিমান্তর স্থানীয় সময় ৪ মিনিট করে কমে যায় এবং ঐ জাহাজ ১৮০°পশ্চিম দ্রাঘিমায় পৌঁছালে দেখা যাবে স্থানীয় সময় ১২ ঘণ্টা কম অর্থাৎ সেখানে সময় হবে রবিবার রাত ৯টা। প্রকৃতপক্ষে ১৮০° পূর্ব দ্রাঘিমা ও ১৮০° পশ্চিম দ্রাঘিমা মূলত একই দ্রাঘিমারেখা। সুতরাং একই স্থানে একই সময়ে একটি জাহাজের ঘড়িতে স্থানীয় সময় হবে সোমবার রাত ৯টা, অন্যটিতে রবিবার রাত ৯টা অর্থাৎ ১ দিন বা ২৪ ঘণ্টা সময়ের পার্থক্য হবে যা অসম্ভব। এ অসুবিধা দূর করার জন্য ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ধরা হয়েছে এবং জলভাগের ওপর দিয়ে কল্পনা করা হয়েছে। পশ্চিমগামী জাহাজ এ রেখা অতিক্রম করলে তার সময়ের সাথে ১ দিন যোগ করে এবং পূর্বগামী জাহাজ তার সময় হতে ১ দিন বাদ দিয়ে স্থানীয় সময়ের সাথে মিল রাখে।
১৮০° দ্রাঘিমারেখা সাইবেরিয়ার উত্তর-পূর্ব অংশ অ্যালিউসিয়ান, ফিজি, চ্যাথাম দীপপুঞ্জের ওপর দিয়ে গিয়েছে; ফলে এসব স্থানের এক অংশের অধিবাসীদের হিসেবে যখন রবিবার তখন অন্য অংশের লোকদের হিসেবে হবে সোমবার। স্থানীয় অধিবাসীদের বারের এ অসুবিধা দূর করার জন্য আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা অ্যালিউসিয়ান দীপপুঞ্জের কাছে ৭° পশ্চিম এবং ফিজি ও চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জের কাছে ১১° পূর্বে বেঁকে গিয়েছে ।
আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার প্রয়োজনীয়তা (Necessity of International Date Line)
১° দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের ব্যবধান হয় ৪ মিনিট। তাই ১৮০° দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের ব্যবধান হয় ১২ ঘণ্টা। গ্রিনিচে মূল মধ্যরেখায় যখন সোমবার সকাল ১০টা তখন ১৮০° পূর্ব দ্রাঘিমায় সোমবার রাত্রি ১০টা এবং ১৮০° পশ্চিম দ্রাঘিমায় রবিবার রাত্রি ১০টা। কিন্ত ১৮০° পূর্ব ও ১৮০° পশ্চিম দ্রাঘিমা মূলত একই রেখা। একই দ্রাঘিমায় সময়ের পার্থক্য ২৪ ঘণ্টা হয়ে থাকে, তবে যৌক্তিকভাবে তা হতে পারে না। এ অসুবিধা দূর করার জন্য পৃথিবীর সকল জাতি সম্মিলিতভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের জলভাগের উপর মানচিত্রের ১৮০° দ্রাঘিমাকে অবলম্বন করে একটি রেখা কল্পনা করা হয়েছে যা আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা নামে পরিচিত। এ রেখা অতিক্রম করলে দিন ও তারিখের পরিবর্তন হয় বলে এ রেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বলে।
দেশ-বিদেশগামী জাহাজসহ যাত্রীদের জন্য স্থানীয় সময়ের সাথে আন্তর্জাতিক সময়ের মিল রাখার জন্য এ রেখার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। গ্রিনিচ থেকে পূর্ব দিকে গমনকারী কোনো বিমান বা জাহাজের নাবিকেরা এ রেখা অতিক্রম করলে একদিন পিছিয়ে বা বিয়োগ করেন এবং পশ্চিমগামী জাহাজের নাবিকরা একদিন যোগ করেন। ফলে স্থানীয় সময়ের সাথে সামঞ্জস্য থাকে। দ্রাঘিমা ও সময় গাণিতিক পদ্ধতিতে নির্ণয় করা যায়।