পৃথিবীর গোলকত্ব প্রমাণ করার পদ্ধতি বা কৌশল কী কী?
- প্রকাশ: ১০:২৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর ২০২১
- / ১৫০০৬ বার পড়া হয়েছে
পৃথিবীর আকার কেমন? আপাতদৃষ্টিতে ভূপৃষ্ঠকে সমতল মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর আকার গোলীয়। পৃথিবী গোল হবার পরেই এটি সমতল মনে হওয়ার কারণ হলো- কোনো বৃহৎ বস্তুর অংশ বিশেষ হতে তার আকার সঠিকভাবে বোঝা যায় না। আয়তনের তুলনায় পৃথিবীর অতিক্ষুদ্র অংশকেই আমরা এক সঙ্গে দেখতে পাই এবং তা সরল রেখার মতো সমতল দেখায়; এ কারণে প্রাচীনকালে লোকদের ধারণা ছিল, পৃথিবী সমতল এবং এর প্রান্ত রয়েছে। বর্তমানে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, পৃথিবীর আকার অনেকটা গোল।
‘পৃথিবী গোল’- এটি প্রথম প্রমাণ করেন পিথাগোরাস ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অ্যারিস্টটল স্বীকার করেছেন পৃথিবীর গোলকত্ব।
পৃথিবীর গোলকত্বের প্রমাণ
পৃথিবীর আকার গোলীয় বা গোল, এটি বেশ কিছু উপায়ে প্রমাণ করা সম্ভব। নিচে উল্লেখিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহজেই পৃথিবীর গোলকত্ব প্রমাণ করা যায়। যথা-
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা
শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে আকাশে সকল জ্যোতিষ্ককে গোলীয় দেখায়। পৃথিবী ও একটি জ্যোতিষ্ক। তাই এর আকার গোলীয় হওয়ায় স্বাভাবিক।
একই দিকে যাত্রাকরে
পৃথিবীর যে-কোনো স্থান হতে যে কোনো একটি নির্দিষ্ট দিকে ক্রমাগত জাহাজ বা অ্যারোরোপ্লেনে চড়ে একই দিকে ভ্রমণ করলে পুনরায় যাত্রাস্থানে ফিরে আসতে হয়। কুক, ম্যাগিল্যান, ড্রেক প্রমুখ বহুনাবিক প্রায় একইদিকে ক্রমাগত জাহাজ চালনা করে পুনরায় যাত্রা স্থানে ফিরে এসেছিলেন। পৃথিবী গোলাকার বলে এরূপ হয়েছে। কিন্তু পৃথিবী সমতল হলে দিক পরিবর্তন না করে তারা পুনরায় যাত্রা স্থানে ফিরে আসতে পারতেন না।
চন্দ্র গ্রহণের সাহায্যে
চন্দ্র পৃথিবীর চতুর্দিকে এবং পৃথিবী চন্দ্রকে নিয়ে সূর্যের চারদিক ভ্রমণ করছে। এভাবে ভ্রমণ করতে করতে কখনো কখনো চন্দ্রের উপর পৃথিবীর ছায়া পড়ে এবং চন্দ্রগ্রহণ হয়। চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর ছায়ার সীমারেখা গোলাকার দেখা যায়। পৃথিবী গোল না হলে এর ছায়া কখনও গোলাকার হতো না।
দিগন্ত রেখার সাহায্যে
কোনো বিস্তীর্ণ প্রান্তরে সমুদ্র বক্ষ থেকে চারদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে মনে হবে যে, আকাশ ধীরে ধীরে নীচু হয়ে চক্রাকারে পৃথিবীর সাথে মিলিত হয়েছে। পৃথিবীর আকার গোল হওয়ার কারণে এ রকম মনে হয়। পৃথিবী ও আকাশের এ মিলন স্থলকে দিগন্ত বলে। দিগন্ত হলো ভূপৃষ্ঠে মানুষের দৃষ্টির সীমারেখা।
সামুদ্রিক জাহাজের সাহায্যে
দূর সমুদ্র হতে কোনো জাহাজ তীরের দিকে আসার সময় প্রথমে তার ধোঁয়া, মাস্তুল ইত্যাদি এবং ক্রমান্বয়ে চোঙ্গা, ছাদ প্রভৃতি দেখা যায়। আবার তীর হতে সমুদ্রে যাওয়ার সময়ে প্রথমে জাহাজের নিচের অংশগুলো এবং ক্রমে ক্রমে মাস্তুল অদৃশ্য হয়। পৃথিবী গোলাকার বলে এর বক্র অংশ আমাদের দৃষ্টিকে আড়াল করে রাখে। সেজন্য আমরা বহু দূর থেকে জাহাজের সকল অংশ এক সময় দেখতে পাইনা। পৃথিবী সমতল হলে দূর হতে জাহাজের সকল অংশ একই সঙ্গে দেখা যেত।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সাহায্যে
পূর্বদিকের দেশসমূহে তাদের পশ্চিমে অবস্থিত দেশগুলোর আগে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। পৃথিবী সমতল হলে সর্বত্র একই সময়েসূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হত।
কাষ্ঠখণ্ডের সাহায্যে
১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে অ্যালফ্রেড রাসেল ওয়ালেস ইংল্যান্ডের বেডফোর্ডের খালের স্রোতহীন পানির উপর এক মাইল পর পর একই সরল রেখায় ভাসিয়ে রাখা সমান দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ৩টি কাষ্ঠখণ্ডের সাহায্যে পৃথিবীর গোলত্বের প্রমাণ করেছিলেন। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহয্যে পৃথিবীর গোলকত্বের প্রমাণ করেছিলেন। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহয্যে তিনি ভাসমান কাষ্ঠখণ্ড ৩টিকে লক্ষ্য করে দেখলেন যে, মধ্যবর্তী কাষ্ঠখণ্ডটির মাথা সামান্য উঁচুতে আছে। পৃথিবীর সমতল হলে কাষ্ঠখণ্ডগুলো একই সরলরেখায় দেখা যেত।
চাক্ষুষ প্রমাণ
সম্প্রতি বিভিন্ন মহাকাশচারী চন্দ্রে অবতরণকালে পৃথিবীর যে চিত্র গ্রহণ করেছেন তা হতে স্পষ্টই দেখা যায় যে, পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার। তাঁদের মতে, পৃথিবী হতে চন্দ্রকে যেমন গোলাকার দেখাযায়, চন্দ্র হতে পৃথিবীকেও অবিকল সে রকম গোলাকার দেখায়, তবে কয়েক গুণ বড়। এটি পৃথিবীর গোলকত্ব সম্পর্কিত চাক্ষুষ প্রমাণ।
আর কোন কোন কৌশলে পৃথিবীর গোলকত্ব প্রমাণ করা যায় সে সম্পর্কে আপনিও লিখতে পারেন এখানে।