০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

যোগাযোগের পদ্ধতি: লিখিত ও মৌখিক যোগাযোগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা

প্রফেসর এম এ মাননান
  • প্রকাশ: ১২:৩৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ১৮৮০১ বার পড়া হয়েছে

ব্যবসয়ের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পক্ষের ব্যক্তিদের সাথে ভাব, ধারণা ও তথ্যের বিভিন্ন প্রকার আদান-প্রদানকে ব্যবসায় যোগাযোগ বলে।


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

বিশেষ কোন উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একজনের নিকট থেকে অন্য জনের নিকট তথ্য, ভাব, ধারণা, সংবাদ বা মতামত প্রেরণের প্রক্রিয়াই হলো যোগাযোগ। এটি মৌখিক হতে পারে, লিখিত হতে পারে, আকার-ইঙ্গিতে হতে পারে আবার প্রযুক্তির মাধ্যমেও হতে পারে।

যোগাযোগের বিভিন্ন পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. লিখিত যোগাযোগ

যোগাযোগের বার্তা যখন লিখিতভাবে প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে লিখিত যোগাযোগ বলে। লিখিত যোগাযোগ সবচেয়ে ফলদায়ক পদ্ধতি। কারণ এটি বিকৃত হয় না, নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং রেকর্ড থাকে। তাই এটি দীর্ঘস্থায়ী রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়। লিখিত যোগাযোগ আইনগত নিরাপত্তা প্রদান করে। 

লিখিত যোগাযোগের সুবিধা

লিখিত যোগাযোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা রয়েছে। আসুন সেগুলো জেনে নিই:

১. স্থায়ী রেকর্ড: লিখিত যোগাযোগ একটি স্থায়ী রেকর্ড। প্রয়োজন হলে যে কোন সময়ে, যে কোন বিষয়ে অতীতে কি যোগাযোগ হয়েছিল তা রেকর্ড থেকে খুঁজে বের করে দেখা যায়। অন্য কোন মাধ্যমে এটা সম্ভব নয়। 

২. প্রামাণ্য দলিল: মৌখিক যোগাযোগ প্রামাণ্য দলিল হিসেবে অর্থহীন। কোন বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিতে হলে আদালতে প্রামাণ্য দলিলপত্র দাখিল করতে হয়। লিখিত যোগাযোগে এটা খুব সহজে করা সম্ভব হয়। 

৩. সহজবোধ্য ও গ্রহণযোগ্য: লিখিত যোগাযোগ সহজবোধ্য ও গ্রহণযোগ্য মাধ্যম। প্রয়োজনবোধে বারবার পাঠ করে বক্তব্য উদ্ধার করা যায়। 

৪. সহজতরভাবে নির্ভুলতা যাচাই: লিখিত যোগাযোগের নির্ভুলতা নিশ্চিত করার জন্য একে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেতে পারে। 

৫. শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্যতা: গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ লিখিত হওয়াই উচিত। লিখিত যোগাযোগ মৌখিক যোগাযোগের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। 

৬. সহজ উপস্থাপনা: জটিল বিষয়সমূহ লিখিত যোগাযোগের মাধ্যমে সহজেই তুলে ধরা যায়। 

৭. বিকৃতির সম্ভাবনা কম: লিখিত যোগাযোগের মাধ্যমে কোন সংবাদ বা ঘটনা বিকৃত করার সুযোগ থাকে না। 

৮. বাহুল্য বর্জন ও সময়ের অপচয় কম হয়: লিখিত যোগাযোগে বাহুল্য বর্জন হয় এবং সময় কম ব্যয় হয়। এক্ষেত্রে অনাবশ্যক যুক্তিতর্কের অবতারণা বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্তাকারে বক্তব্য পেশ করা যায়। 

৯. কর্তৃত্বার্পণ সহজ: কর্তৃত্বাপর্ণের ক্ষেত্রে লিখিত যোগাযোগ অত্যাবশ্যক। এই প্রকার যোগাযোগে স্পষ্টভাবে কর্মীর কর্মদক্ষতা ও কর্তব্যসমূহের সংজ্ঞা নিরূপণ করা হয়। কর্মীরা স্পষ্টভাবে তাদের কর্মপরিধি ও ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে। 

১০. বক্তব্য পেশের সুবিধা: অনেক ব্যবস্থাপক তার বক্তব্য ভালভাবে বলতে পারেন না। কিন্তু তিনি তা সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখতে পারেন। 

১১. প্রচার মাধ্যম: লিখিত যোগাযোগ কোম্পানির প্রচারণার কাজ করে। অনেক সময় এটা বাজারে প্রতিষ্ঠানের সুনাম প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। 

১২. ব্যক্তিগত সংযোগের বিকল্প: লিখিত যোগাযোগ ব্যক্তিগত সংযোগের প্রয়োজনীয়তাকে পরিহার করতে একটি উপয্ক্তু বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এর ফলে একজন ব্যস্ত নির্বাহী লিখিত যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে অসংখ্য অধীনস্তদের সাথে অতি স্বল্প সময়ে যোগাযোগ স্থাপন কতে পারেন। 

১৩. গুরুত্বপূর্ণ বিষযে অধিক কার্যকর: প্রতিষ্ঠানের নীতি, লক্ষ্য, ক্রয়-বিক্রয় ও উৎপাদন পদ্ধতি বর্ণনা, নির্দেশ প্রদান, প্রণোদনা বা অন্য যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বা দীর্ঘস্থায়ী বিষয়ে লিখিত যোগাযোগ সর্বোত্তম। 

১৪. কার্যকর নিয়ন্ত্রণ: নিম্নস্তরের তত্ত্বাবধায়কদের কাছে লিখিত যোগাযোগ খুবই কার্যকর। এটা তদারক ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করতে সহায়তা করে। 

১৫. কার্যকর উপস্থাপনা: এই পদ্ধতির যোগাযোগে প্রথমেই বক্তব্যটির খসড়া লিখা হয়। ফলে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিষয়বস্তু প্রস্তুত করে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা যায়। 

লিখিত যোগাযোগের অসুবিধা

লিখিত যোগাযোগের কিছু কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো: 

১. ব্যয়বহুল: লিখিত যোগাযোগ ব্যয়বহুল। লিখিত যোগাযোগ প্রস্তুত করতে কাগজ, কালি, কলম, কম্পিউটার, টাইপরাইটার, টাইপলিখক, সাইক্লোস্টাইল মেশিন, প্রিন্টিং মেশিন ইত্যাদি ব্যবহারের দরকার হয়। তাই লিখিত যোগাযোগে ব্যয় অনেক বেশি হয়। 

২. সময়ের অপচয়: লিখিত যোগাযোগ স্থাপনে অধিক সময় ব্যয় হয়। মৌখিক যোগাযোগ সামনা-সামনি বা টেলিফোনে আলাপ-আলোচনা করে অল্পক্ষণেই সম্পন্ন করা যায়। লিখিত যোগাযোগ রচনা ও প্রেরণের ব্যাপারে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়, যার জন্য এতে অধিক সময় ব্যয় হয়।

৩. নির্বাহীর স্বার্থ রক্ষা: ব্যবসায় সংগঠনের সদস্যদের অনেকেই একে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে থাকে। এজন্য অনেকে নিজকে নিরাপদ অবস্থানে রেখে যোগাযোগ লিপি তৈরি করে। ফলে সে অনেক সময় অনেক প্রয়োজনীয় কথা বাদ দিয়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় কথা লিখে নিজের অবস্থান ঠিক রাখার চেষ্টা করে। এরূপ করা হলে যোগাযোগের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। 

৪. পরোক্ষ সম্পর্ক স্থাপন: লিখিত যোগাযোগে বার্তা প্রেরক ও বার্তা প্রাপকের মধ্যে সরাসরি বা প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপিত হয় না। সুতরাং প্রাপকের নিকট হতে অনেক বিলম্বে প্রতি-উত্তর পাওয়া যায। কাজেই যোগাযোগে কোন প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সাথে সাথে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। 

৫. অশিক্ষিত গ্রাহকের নিকট অর্থহীন: বার্তা প্রাপক সর্বদা শিক্ষিত হবে তা বলা যায় না। বার্তা গ্রাহক অশিক্ষিত হলে লিখিত যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে অকেজো হয়ে পড়ে। 

৬. গতিশীলতার অভাব: অনেক সময় লিখিত বক্তব্যের পুনঃব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন হয় এবং সেক্ষেত্রে যোগাযোগ গতিশীলতা ও দ্রুত প্রয়োগের শক্তি হারিয়ে ফেলে। 

৭. গোপনীয়তার অভাব: ব্যবসায়ের গোপনীয়তার ক্ষেত্রে এটা একটি অবাঞ্চিত মাধ্যম। যোগাযোগ লিপি গোপন তথ্য ফাঁস করতে সহায়তা করে। 

৮. সহজে ঐকমত্যে পৌঁছান যায় না: মৌখিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বক্তব্য বিষয়ে বক্তা ও শ্রোতা যত সহজে ঐকমত্যে আসতে পারে, লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে তা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। 

৯. জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা: লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি হ্রাসের জন্য উর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণের দ্বারা যোগাযোগ করেন। এতে যোগাযোগে জটিলতা ও সমস্যা দেখা দেয় এবং যোগাযোগের প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতা দোষে দুষ্ট হয়। 

১০. অপরিবর্তনশীল: লিখিত যোগাযোগের প্রেরিত বার্তার প্রয়োজনীয় সংযোজন, বিয়োজন, সংশোধন বা বিশ্লেষণের কোন অবকাশ থাকে না। ফলে তাৎক্ষণিক কোন ভুল পরিহার বা সংশোধন সম্ভব হয় না। 

মৌখিক যোগাযোগ

এক কথায়, মৌখিক কথা-বার্তা বা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে যোগাযোগ করা হয় তাকে মৌখিক যোগাযোগ বলে। ব্যাপক অর্থে, উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রেরক যখন তার মনের ভাব, ধারণা, বার্তা, অনুভূতি, তথ্য ইত্যাদি কথা-বার্তা বা আলোচনার মাধ্যমে প্রাপককে জানায়, তাকে মৌখিক যোগাযোগ বলে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ যোগাযোগই মৌখিকভাবে হয়ে থাকে। মৌখিক যোগাযোগের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে প্রত্যক্ষ বা সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পারস্পরিক আলোচনার দ্বারা সহজেই প্রতিক্রিয়া বুঝা যায় এবং সমঝোতায় পৌঁছা যায়। কৌশল হিসেবে প্রত্যক্ষ আলোচনা, টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারকম, রেডিও, টেলিভিশন, গণ-সম্বোধন ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই যোগাযোগের সাধারণত কোন রেকর্ড রাখা হয় না। দীর্ঘমেয়াদী যোগাযোগে এই পদ্ধতি উপযুক্ত নয়। তবে অশিক্ষিত শ্রোতার জন্য এই যোগাযোগ মাধ্যম সর্বোত্তম। 

মৌখিক যোগাযোগ কৌশল

মৌখিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক কৌশল ব্যবহার করা হয়; যার মধ্যে রয়েছে – 

১. কথোপকথন: আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই কিছু সংখ্যক লোকের সাথে যে আলাপ-আলোচনা করা হয়, তাকে কথোপকথন বলা হয়। বক্তা ও স্রোতার মধ্যে সুসম্পর্ক ও সমঝোতা আনার জন্য এটাই সর্বোত্তম পন্থা। কথোপকথন সার্থক করার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক, যথা: 

  • ক) কোন আনুষ্ঠানিকতা থাকবে না, আলোচনা আকর্ষণীয় ও আমোদপূর্ণ করে তুলতে হবে; 
  • খ) অন্যান্য বক্তাদের বক্তব্যের প্রতি আগ্রহ দেখাতে হবে, মনোযোগ দিতে হবে, বাধা দেয়া যাবে না; 
  • গ) সৌজন্য, সম্মান (শিষ্টাচার) প্রদর্শনের নিয়ম পালন করতে হবে; এবং 
  • ঘ) সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করতে হবে।

২. টেলিফোন: মৌখিক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো টেলিফোন। কারবারী সম্পর্ক স্থাপন ও সম্প্রসারণের ব্যাপারে এ মাধ্যমটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এ মাধ্যমের ব্যবহার ছাড়া আধুনিক কারবার পরিচালনা চিন্তাই করা যায় না। টেলিফোন দূরত্বের বাধা অতিক্রমে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে লেনদেনের সূত্রপাত ও নিষ্পত্তি করা যায়। 

টেলিফোনিক যোগাযোগ সফল করার জন্য- 

  • ক) ভালোভাবে কথা বলার অভ্যাস থাকতে হবে; 
  • খ) নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচয় দিয়ে কথার সূচনা করতে হবে; 
  • গ) ভদ্রতা ও বিনয়ের সাথে অপর পক্ষের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে; এবং 
  • ঘ) সময়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। 

৩. মোবাইল ফোন: সনাতন টেলিফোনের (বা ল্যান্ড ফোনের) আধুনিক সংস্করণ হলো মোবাইল ফোন। এর দ্বারা যখন খুশি তখনই প্রেরক প্রাপকের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। ভাব, তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। ফলে যোগাযোগ দ্রুততর হয়। সনাতন টেলিফোনের চেয়ে যোগাযোগ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের ব্যবহার অনেক বেশী। 

৪. ইন্টারকম: বৃহদায়তন অফিসে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারকম ব্যবহার করা হয়। ইন্টারকমের মাধ্যমে স্বীয় স্থানে থেকেই দ্রুত আলাপ করা যায়। এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযোজনীয় যন্ত্রপাতির স্থাপন-ব্যয় ছাড়া বিশেষ কোন খরচ নেই। 

৫. সাক্ষাৎকার: পূর্ব ঘোষিত বিষয়/উদ্দেশ্য নিয়ে কথোপকথনই হলো সাক্ষাৎকার। এই প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে বার্তা প্রেরক-প্রাপক একত্র হয়ে আলোচনা করে। কারবারী জগতে এই পদ্ধতি প্রতিনিয়তই ব্যবহৃত হয়। 

সাক্ষাৎকার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:

  • ক. নির্বাচন ও নিয়োগ সাক্ষাৎকার: প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগ, কার্য মূল্যায়ন, স্থায়ীকরণ, পদোন্নতি বা বিশেষ নির্দেশনার জন্য এটা করা হয়। 
  • খ. গবেষণা সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার: গবেষণা কার্যের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহণের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। 
  • গ. অভিযোগ সাক্ষাৎকার: কর্মী ও গ্রাহকদের অভাব-অভিযোগ, চাহিদা, দাবী ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ এবং সমন্বয় সাধনের জন্য অভিযোগ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। 
  • ঘ. শৃঙ্খলাবোধ সাক্ষাৎকার: কর্মীদের সতর্ক করা, নিষ্ঠাবান করা, কাজকর্মে আগ্রহী করা এবং সংশোধন করার জন্য শৃঙ্খলাবোধ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। 

ঙ. বোর্ড সাক্ষাৎকার: প্রার্থী বাছাই বা প্রকৃত তথ্য বের করার জন্য কমিটি গঠন করে এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন প্রশ্ন করে প্রকৃত তথ্য ও প্রকৃত প্রার্থী যাচাই-বাছাই করার জন্য এই পদ্ধতি বেশ উপযোগী। 

চ. দলীয় সাক্ষাৎকার: নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এবং কোন ব্যাপারে কোন দলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দলীয় সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। 

মৌখিক যোগাযোগের সুবিধা

আজকাল অধিকাংশ ম্যানেজার মৌখিক যোগাযোগকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেন। কারণ মৌখিক যোগাযোগের নানাবিধ সুবিধা রয়েছে। এই প্রকার যোগাযোগের সুবিধাগুলো নিচে আলোচনা করা হলো: 

১. সফল যোগাযোগ মাধ্যম: পৃথিবীর সর্বত্র আজ যোগাযোগের ফলপ্রসূ মাধ্যম হিসেবে মৌখিক যোগাযোগকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ অধিকাংশ ম্যানেজারই এরূপ মতামত প্রকাশ করেন যে, মৌখিক যোগাযোগ লিখিত যোগাযোগের তুলনায় উন্নত ও সফল যোগাযোগ মাধ্যম। 

২. সংশোধনের ব্যবস্থা: মৌখিক যোগাযোগে দুটি পক্ষ সরাসরি যোগাযোগ করেন বিধায় তথ্যে কোনো প্রকার ভুল থাকলে বা কোনো কিছু বাদ পড়লে তা তাৎক্ষণিকভাবে শুধরে নেয়া যায়। 

৩. সহজ পরিবর্তনযোগ্যতা: মৌখিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বক্তা পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনবোধে বক্তব্য পরিবর্তন করতে পারেন। এ জন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন পড়ে না।

৪. খরচ হ্রাস: মৌখিক যোগাযোগে আনুসঙ্গিক উপকরণের খরচ না থাকায় এরূপ যোগাযোগে তুলনামূলকভাবে কম খরচ হয়ে থাকে। 

৫. সময়ের অপচয় রোধ: মৌখিক কথাবার্তার মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দূরবর্তী স্থানের লোকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়। ফলে সময়ের অপচয় হয় না। 

৬. সৌহার্দ্য বৃদ্ধি: প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপক যদি ব্যক্তিগতভাবে কর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন, কর্মীদের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক সমস্যাদির খোঁজ-খবর করেন, তাহলে কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং কাজের প্রতি আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সৌহার্দ্যও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। 

৭. আনুষ্ঠানিকতার অনুপস্থিতি: মৌখিক যোগাযোগে কোনো আনুষ্ঠানিকতা পালনের ঝামেলা নাই, যা লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে পালন করতে হয়। 

৮. দীর্ঘসূত্রতা পরিহার: মৌখিক যোগাযোগে শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়। কাজেই এরূপ যোগাযোগে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করা সম্ভব হয় বলে বক্তা সহজে তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। 

৯. সমন্বয়সাধন: বিভিন্ন কর্মী এবং বিভাগের কাজের মধ্যে মৌখিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমন্বয়সাধন করা সহজ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয়। 

১০. শ্রোতার প্রতিক্রিয়া অনুধাবন: মৌখিক যোগাযোগে তাৎক্ষণিকভাবে বক্তা ও শ্রোতা প্রতিক্রিয়া জানতে পারে। ফলে শ্রোতার প্রতিক্রিয়া বা মতামতের উপর ভিত্তিত করে বক্তব্যের প্রয়োজনীয় সংযোজন করা সম্ভব।

মৌখিক যোগাযোগের অসুবিধা

মৌখিক যোগাযোগের নিম্নের অসুবিধাগুলো পরিলক্ষিত হয়: 

১. সংরক্ষণের সমস্যা: মৌখিক যোগাযোগের কোন রেকর্ড থাকে না বিধায় প্রেরক ও প্রাপক কেউই তা সংরক্ষণ করতে পারে না। অবশ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠান মৌখিক যোগাযোগের বিষয়বস্তু পেন ড্রাইভে বা হার্ড ড্রাইভে সংরক্ষণ করে রাখে । ইচ্ছা করলে ইন্টারনেটের ব্যবহার করে ‘ক্লাউড’-এ সংরক্ষণ করে রাখা যায়। 

২. ব্যস্ততা: পূর্বাপর চিন্তা না করে ব্যস্ততার মধ্যে বক্তব্য পেশ করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টও বাদ পড়তে পারে। এরূপ হলে বক্তব্য অস্পষ্ট ও গুরুত্বহীন হয়ে পড়তে পারে। 

৩. পরিকল্পনার অভাব: অনেক সময় যোগাযোগ করার পূর্বে যোগাযোগের বিষয়/বক্তব্য সম্পর্কে অগ্রিম চিন্তাভাবনা করে পরিকল্পিতভাবে বক্তব্য প্রকাশ করা হয় না। দ্রুততা, অবহেলা, বেশি আত্মবিশ্বাস ইত্যাদি কারণে এমনটি হয়ে থাকে। 

৪. স্পষ্ট চিন্তার অভাব: যোগাযোগের পূর্বে স্পষ্ট চিন্তার অভাবে মৌখিক যোগাযোগ ব্যর্থ হতে পারে। অনেক ব্যস্ততার কারণে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উপস্থাপন, কৌশল ও ভাষার ব্যবহার, প্রতিক্রিয়া (অনুকূল বা প্রতিকূল) ইত্যাদি নিয়ে চিন্তার সুযোগ থাকে না। ফলে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। 

৫. অন্যের বক্তব্য না শোনা: অনেক সময় বক্তা শ্রোতাদের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি দেন না। স্বীয় মর্যাদা, যুক্তি, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি প্রদর্শন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে যোগাযোগ ব্যর্থ হয় এবং প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। 

৬. সুষ্ঠু বাচনভঙ্গির অভাব: সুষ্ঠু বাচনভঙ্গির উপর মৌখিক যোগাযোগের ফলপ্রসূতা বহুলাংশে নির্ভর করে। যুক্তিযুক্ত ও সঠিকভাবে উপস্থাপন করা না হলে মৌখিক যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। 

৭. ব্যক্তিত্ব: শ্রোতারা অনেক সময় বক্তার ব্যক্তিত্বকে প্রাধান্য দেয়। এমন ক্ষেত্রে তাদের চোখে বক্তা ব্যক্তিত্বহীন বলে মনে হলে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। 

৮. আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের অভাব: যোগাযোগের ক্ষেত্রে আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে উল্টো-পাল্টা বক্তব্য পেশ বা বেঁফাস কথা বলা হতে পারে। এতে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ ও যুক্তিযুক্ত বক্তব্যে বেশি জোর দিতে হবে এবং আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 

৯. কণ্ঠস্বরের হ্রাস-বৃদ্ধি: অযথা বা প্রয়োজন ছাড়া আকস্মিকভাবে হঠাৎ কণ্ঠস্বরের হ্রাস-বৃদ্ধি করা হলে শ্রোতারা বিরক্তি বোধ করে, তাদের মনোযোগ নষ্ট হয় এবং যোগাযোগ ব্যর্থ হয়।

১০. বক্তব্যের দীর্ঘসূত্রতা: সামান্য বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় বক্তব্য উপস্থাপন বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও প্রয়োজনের বেশি বক্তব্য অর্থহীন। কেননা শ্রোতারা সংক্ষেপে এবং স্বল্প সময়ে বক্তব্য শুনতে চায়। অন্যথায় ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে।

১১. বার্তা গ্রাহকের প্রতিবন্ধকতা: বার্তা-গ্রাহক বক্তার সকল বক্তব্যই নিজের ভাব-আবেগ দ্বারা বুঝার চেষ্টা করে। এতে বক্তব্যের মূল বিষয় অনেক সময় ভিন্নভাবে ধরা পড়ে। 

১২. বক্তব্যের ফলপ্রসূতা পর্যালোচনার অভাব: মৌখিক যোগাযোগ করার পর বক্তা তার বক্তব্য গ্রাহক বুঝেছে কিনা এবং ফলপ্রসূ হচ্ছে কিনা সেদিকে অনেক সময় নজর দেয় না। মূল্যায়ন ও পর্যালোচনার অভাবে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। 

১৩. পদমর্যাদাজনিত অহংবোধ: অনেক সময় বক্তা তার বক্তব্যে স্বীয় পদমর্যাদা ও সম্মানকে বেশি গুরুত্ব দেয়। কিন্তু শ্রোতাদের প্রাপ্য সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে না। ফলে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। 

১৪. বিষয়ের ত্রুটিপূর্ণ উপস্থাপন: যোগাযোগের ক্ষেত্রে উচ্চ নির্বাহীর নির্দেশ, বার্তা, সংবাদ ইত্যাদি অধীনস্তদের নিকট ভুলভাবে উপস্থাপন করা হলে তা অন্যদের নিকট বোধগম্য হয় না। সহজ-সরল ভাষায় এবং প্রয়োজনে উদাহরণসহ বক্তব্য উপস্থাপন করা না হলে যোগাযোগ ব্যর্থ হবে। 

মৌখিক যোগাযোগে সফলতার পূর্বশর্ত

১. সংবাদ গ্রাহকের আস্থা: মৌখিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহকের শিক্ষা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, ইচ্ছা, গ্রহণ ক্ষমতা, উপলব্ধি প্রভৃতির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তবেই যোগাযোগ সফল হবে। 

২. প্রেরিত সংবাদের স্পষ্টতা: সংবাদ/তথ্য সহজ, সরল ভাষায় স্পষ্ট করে উপস্থাপন করতে হবে।

৩. সঠিক তথ্য প্রেরণ: প্রেরিত তথ্য অবশ্যই সঠিক, নির্ভুল, ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। কোন মতেই শ্রোতাকে ভুল তথ্য দেয়া যাবে না। 

৪. আবেগের চেয়ে যুক্তির প্রতি গুরুত্ব: যোগাযোগ ক্ষেত্রে আবেগ-অনুভূতি সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে এবং বিষয়বস্তুর যুক্তিযুক্ত দিকগুলোর প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। বক্তব্য যুক্তিযুক্ত হবার অর্থই হলো, বক্তব্য ধারাবাহিক হবে এবং বিষয়বস্তুর প্রতি শ্রোতা বেশি মনোযোগী হবে। 

৫. নিয়মিত অনুশীলন: বক্তব্য স্পষ্ট ও সুষ্ঠুভাবে তুলে ধরার জন্য বক্তব্যের বিষয় নিয়ে বক্তাকে নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। কেননা নিয়মিত অনুশীলন বক্তব্যের সুষ্ঠু উপস্থাপনার জন্য অতি জরুরি। 

৬. বিষয়বস্তুর প্রতি গুরুত্ব প্রদান: বক্তা ও শ্রোতা উভয়কেই বক্তব্যের বিষয়বস্তুর উপর খেয়াল রাখতে হবে, গুরুত্ব দিতে হবে। বক্তাকে বক্তব্য স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে এবং সাথে সাথে শ্রোতাকেও বক্তব্য স্পষ্ট করে বুঝতে হবে। 

৭. পূর্ব ধারণা না করা: বক্তার বক্তব্য সম্পর্কে শ্রোতা কখনোই পূর্ব ধারণা/অনুমান করা চলবে না। বক্তার দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য বুঝার চেষ্টা করতে হবে। 

৮. অমনোযোগী না হওয়া: মনযোগ সহকারে বক্তব্য শুনতে হবে। শ্রবণকালে অমনোযোগী হওয়া চলবে না। এরূপ হলে বক্তব্য বুঝা যাবে না। যোগাযোগ ব্যর্থ হবে। 

৯. নিরপেক্ষ থাকা: বক্তব্য শ্রবণ ক্ষেত্রে শ্রোতাকে সবসময়ই নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। বক্তার বক্তব্যেকে কখনো অহেতুক ও অপ্রাসঙ্গিক বলা যাবে না এবং নিরপেক্ষতার দৃষ্টিকোণ থেকে বিচারের চেষ্টা করতে হবে। 

১০. পূর্ব সিদ্ধান্ত: বক্তব্য না শুনে বা না বুঝে পূর্ব-সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা চলবে না যা বক্তার বক্তব্যকে প্রভাবিত করতে পারে। এরূপ হলে অন্যান্য শ্রোতাকেও তা প্রভাবিত করবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। 

১১. প্রেরণ কৌশল: বক্তব্য প্রেরণের অনেক কৌশল আছে। তাই প্রয়োজন, পরিস্থিতি ও শ্রোতার প্রয়োজন বিবেচনা করে যুক্তিযুক্ত কৌশল ব্যবহার করতে হবে।

১২. যোগাযোগের উদ্দেশ্য: যোগাযোগের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বক্তার স্পষ্ট ধারণা না থাকলে সে সুষ্ঠুরূপে বক্তব্য উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়। 

১৩. অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ: যোগাযোগ করার পর তা অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এর মাধ্যমে গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া ও গ্রহণযোগ্যতা জানা যাবে। প্রয়োজনে পুনঃবর্ণনা ও বিশ্লেষণ দেয়া যাবে। 

১৪. পূর্ব পরিকল্পনা: বক্তা বা যোগাযোগকারীর বক্তব্যের বিষয়, শ্রোতাদের অবস্থা, উপস্থাপন পদ্ধতি, যোগাযোগ কৌশল সম্পর্কে পূর্ব-পরিকল্পনা অবশ্যই থাকতে হবে। 

১৫. সহনশীলতা: বক্তব্য পেশের সময় সহনশীল হতে হবে এবং শ্রোতাদের বক্তব্যও ধৈর্য্য ও আগ্রহসহকারে শুনতে হবে। মৌখিক যোগাযোগ করার পূর্বেই এসকল বিষয়গুলো চিন্তাভাবনা করতে হবে। তবেই তা সার্থক ও ফলদায়ক হবে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

যোগাযোগের পদ্ধতি: লিখিত ও মৌখিক যোগাযোগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা

প্রকাশ: ১২:৩৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২১

বিশেষ কোন উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একজনের নিকট থেকে অন্য জনের নিকট তথ্য, ভাব, ধারণা, সংবাদ বা মতামত প্রেরণের প্রক্রিয়াই হলো যোগাযোগ। এটি মৌখিক হতে পারে, লিখিত হতে পারে, আকার-ইঙ্গিতে হতে পারে আবার প্রযুক্তির মাধ্যমেও হতে পারে।

যোগাযোগের বিভিন্ন পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. লিখিত যোগাযোগ

যোগাযোগের বার্তা যখন লিখিতভাবে প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে লিখিত যোগাযোগ বলে। লিখিত যোগাযোগ সবচেয়ে ফলদায়ক পদ্ধতি। কারণ এটি বিকৃত হয় না, নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং রেকর্ড থাকে। তাই এটি দীর্ঘস্থায়ী রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়। লিখিত যোগাযোগ আইনগত নিরাপত্তা প্রদান করে। 

লিখিত যোগাযোগের সুবিধা

লিখিত যোগাযোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা রয়েছে। আসুন সেগুলো জেনে নিই:

১. স্থায়ী রেকর্ড: লিখিত যোগাযোগ একটি স্থায়ী রেকর্ড। প্রয়োজন হলে যে কোন সময়ে, যে কোন বিষয়ে অতীতে কি যোগাযোগ হয়েছিল তা রেকর্ড থেকে খুঁজে বের করে দেখা যায়। অন্য কোন মাধ্যমে এটা সম্ভব নয়। 

২. প্রামাণ্য দলিল: মৌখিক যোগাযোগ প্রামাণ্য দলিল হিসেবে অর্থহীন। কোন বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিতে হলে আদালতে প্রামাণ্য দলিলপত্র দাখিল করতে হয়। লিখিত যোগাযোগে এটা খুব সহজে করা সম্ভব হয়। 

৩. সহজবোধ্য ও গ্রহণযোগ্য: লিখিত যোগাযোগ সহজবোধ্য ও গ্রহণযোগ্য মাধ্যম। প্রয়োজনবোধে বারবার পাঠ করে বক্তব্য উদ্ধার করা যায়। 

৪. সহজতরভাবে নির্ভুলতা যাচাই: লিখিত যোগাযোগের নির্ভুলতা নিশ্চিত করার জন্য একে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেতে পারে। 

৫. শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্যতা: গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ লিখিত হওয়াই উচিত। লিখিত যোগাযোগ মৌখিক যোগাযোগের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। 

৬. সহজ উপস্থাপনা: জটিল বিষয়সমূহ লিখিত যোগাযোগের মাধ্যমে সহজেই তুলে ধরা যায়। 

৭. বিকৃতির সম্ভাবনা কম: লিখিত যোগাযোগের মাধ্যমে কোন সংবাদ বা ঘটনা বিকৃত করার সুযোগ থাকে না। 

৮. বাহুল্য বর্জন ও সময়ের অপচয় কম হয়: লিখিত যোগাযোগে বাহুল্য বর্জন হয় এবং সময় কম ব্যয় হয়। এক্ষেত্রে অনাবশ্যক যুক্তিতর্কের অবতারণা বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্তাকারে বক্তব্য পেশ করা যায়। 

৯. কর্তৃত্বার্পণ সহজ: কর্তৃত্বাপর্ণের ক্ষেত্রে লিখিত যোগাযোগ অত্যাবশ্যক। এই প্রকার যোগাযোগে স্পষ্টভাবে কর্মীর কর্মদক্ষতা ও কর্তব্যসমূহের সংজ্ঞা নিরূপণ করা হয়। কর্মীরা স্পষ্টভাবে তাদের কর্মপরিধি ও ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে। 

১০. বক্তব্য পেশের সুবিধা: অনেক ব্যবস্থাপক তার বক্তব্য ভালভাবে বলতে পারেন না। কিন্তু তিনি তা সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখতে পারেন। 

১১. প্রচার মাধ্যম: লিখিত যোগাযোগ কোম্পানির প্রচারণার কাজ করে। অনেক সময় এটা বাজারে প্রতিষ্ঠানের সুনাম প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। 

১২. ব্যক্তিগত সংযোগের বিকল্প: লিখিত যোগাযোগ ব্যক্তিগত সংযোগের প্রয়োজনীয়তাকে পরিহার করতে একটি উপয্ক্তু বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এর ফলে একজন ব্যস্ত নির্বাহী লিখিত যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে অসংখ্য অধীনস্তদের সাথে অতি স্বল্প সময়ে যোগাযোগ স্থাপন কতে পারেন। 

১৩. গুরুত্বপূর্ণ বিষযে অধিক কার্যকর: প্রতিষ্ঠানের নীতি, লক্ষ্য, ক্রয়-বিক্রয় ও উৎপাদন পদ্ধতি বর্ণনা, নির্দেশ প্রদান, প্রণোদনা বা অন্য যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বা দীর্ঘস্থায়ী বিষয়ে লিখিত যোগাযোগ সর্বোত্তম। 

১৪. কার্যকর নিয়ন্ত্রণ: নিম্নস্তরের তত্ত্বাবধায়কদের কাছে লিখিত যোগাযোগ খুবই কার্যকর। এটা তদারক ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করতে সহায়তা করে। 

১৫. কার্যকর উপস্থাপনা: এই পদ্ধতির যোগাযোগে প্রথমেই বক্তব্যটির খসড়া লিখা হয়। ফলে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিষয়বস্তু প্রস্তুত করে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা যায়। 

লিখিত যোগাযোগের অসুবিধা

লিখিত যোগাযোগের কিছু কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো: 

১. ব্যয়বহুল: লিখিত যোগাযোগ ব্যয়বহুল। লিখিত যোগাযোগ প্রস্তুত করতে কাগজ, কালি, কলম, কম্পিউটার, টাইপরাইটার, টাইপলিখক, সাইক্লোস্টাইল মেশিন, প্রিন্টিং মেশিন ইত্যাদি ব্যবহারের দরকার হয়। তাই লিখিত যোগাযোগে ব্যয় অনেক বেশি হয়। 

২. সময়ের অপচয়: লিখিত যোগাযোগ স্থাপনে অধিক সময় ব্যয় হয়। মৌখিক যোগাযোগ সামনা-সামনি বা টেলিফোনে আলাপ-আলোচনা করে অল্পক্ষণেই সম্পন্ন করা যায়। লিখিত যোগাযোগ রচনা ও প্রেরণের ব্যাপারে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়, যার জন্য এতে অধিক সময় ব্যয় হয়।

৩. নির্বাহীর স্বার্থ রক্ষা: ব্যবসায় সংগঠনের সদস্যদের অনেকেই একে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে থাকে। এজন্য অনেকে নিজকে নিরাপদ অবস্থানে রেখে যোগাযোগ লিপি তৈরি করে। ফলে সে অনেক সময় অনেক প্রয়োজনীয় কথা বাদ দিয়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় কথা লিখে নিজের অবস্থান ঠিক রাখার চেষ্টা করে। এরূপ করা হলে যোগাযোগের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। 

৪. পরোক্ষ সম্পর্ক স্থাপন: লিখিত যোগাযোগে বার্তা প্রেরক ও বার্তা প্রাপকের মধ্যে সরাসরি বা প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপিত হয় না। সুতরাং প্রাপকের নিকট হতে অনেক বিলম্বে প্রতি-উত্তর পাওয়া যায। কাজেই যোগাযোগে কোন প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সাথে সাথে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। 

৫. অশিক্ষিত গ্রাহকের নিকট অর্থহীন: বার্তা প্রাপক সর্বদা শিক্ষিত হবে তা বলা যায় না। বার্তা গ্রাহক অশিক্ষিত হলে লিখিত যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে অকেজো হয়ে পড়ে। 

৬. গতিশীলতার অভাব: অনেক সময় লিখিত বক্তব্যের পুনঃব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন হয় এবং সেক্ষেত্রে যোগাযোগ গতিশীলতা ও দ্রুত প্রয়োগের শক্তি হারিয়ে ফেলে। 

৭. গোপনীয়তার অভাব: ব্যবসায়ের গোপনীয়তার ক্ষেত্রে এটা একটি অবাঞ্চিত মাধ্যম। যোগাযোগ লিপি গোপন তথ্য ফাঁস করতে সহায়তা করে। 

৮. সহজে ঐকমত্যে পৌঁছান যায় না: মৌখিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বক্তব্য বিষয়ে বক্তা ও শ্রোতা যত সহজে ঐকমত্যে আসতে পারে, লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে তা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। 

৯. জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা: লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি হ্রাসের জন্য উর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণের দ্বারা যোগাযোগ করেন। এতে যোগাযোগে জটিলতা ও সমস্যা দেখা দেয় এবং যোগাযোগের প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতা দোষে দুষ্ট হয়। 

১০. অপরিবর্তনশীল: লিখিত যোগাযোগের প্রেরিত বার্তার প্রয়োজনীয় সংযোজন, বিয়োজন, সংশোধন বা বিশ্লেষণের কোন অবকাশ থাকে না। ফলে তাৎক্ষণিক কোন ভুল পরিহার বা সংশোধন সম্ভব হয় না। 

মৌখিক যোগাযোগ

এক কথায়, মৌখিক কথা-বার্তা বা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে যোগাযোগ করা হয় তাকে মৌখিক যোগাযোগ বলে। ব্যাপক অর্থে, উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রেরক যখন তার মনের ভাব, ধারণা, বার্তা, অনুভূতি, তথ্য ইত্যাদি কথা-বার্তা বা আলোচনার মাধ্যমে প্রাপককে জানায়, তাকে মৌখিক যোগাযোগ বলে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ যোগাযোগই মৌখিকভাবে হয়ে থাকে। মৌখিক যোগাযোগের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে প্রত্যক্ষ বা সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পারস্পরিক আলোচনার দ্বারা সহজেই প্রতিক্রিয়া বুঝা যায় এবং সমঝোতায় পৌঁছা যায়। কৌশল হিসেবে প্রত্যক্ষ আলোচনা, টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারকম, রেডিও, টেলিভিশন, গণ-সম্বোধন ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই যোগাযোগের সাধারণত কোন রেকর্ড রাখা হয় না। দীর্ঘমেয়াদী যোগাযোগে এই পদ্ধতি উপযুক্ত নয়। তবে অশিক্ষিত শ্রোতার জন্য এই যোগাযোগ মাধ্যম সর্বোত্তম। 

মৌখিক যোগাযোগ কৌশল

মৌখিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক কৌশল ব্যবহার করা হয়; যার মধ্যে রয়েছে – 

১. কথোপকথন: আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই কিছু সংখ্যক লোকের সাথে যে আলাপ-আলোচনা করা হয়, তাকে কথোপকথন বলা হয়। বক্তা ও স্রোতার মধ্যে সুসম্পর্ক ও সমঝোতা আনার জন্য এটাই সর্বোত্তম পন্থা। কথোপকথন সার্থক করার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক, যথা: 

  • ক) কোন আনুষ্ঠানিকতা থাকবে না, আলোচনা আকর্ষণীয় ও আমোদপূর্ণ করে তুলতে হবে; 
  • খ) অন্যান্য বক্তাদের বক্তব্যের প্রতি আগ্রহ দেখাতে হবে, মনোযোগ দিতে হবে, বাধা দেয়া যাবে না; 
  • গ) সৌজন্য, সম্মান (শিষ্টাচার) প্রদর্শনের নিয়ম পালন করতে হবে; এবং 
  • ঘ) সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করতে হবে।

২. টেলিফোন: মৌখিক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো টেলিফোন। কারবারী সম্পর্ক স্থাপন ও সম্প্রসারণের ব্যাপারে এ মাধ্যমটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এ মাধ্যমের ব্যবহার ছাড়া আধুনিক কারবার পরিচালনা চিন্তাই করা যায় না। টেলিফোন দূরত্বের বাধা অতিক্রমে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে লেনদেনের সূত্রপাত ও নিষ্পত্তি করা যায়। 

টেলিফোনিক যোগাযোগ সফল করার জন্য- 

  • ক) ভালোভাবে কথা বলার অভ্যাস থাকতে হবে; 
  • খ) নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচয় দিয়ে কথার সূচনা করতে হবে; 
  • গ) ভদ্রতা ও বিনয়ের সাথে অপর পক্ষের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে; এবং 
  • ঘ) সময়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। 

৩. মোবাইল ফোন: সনাতন টেলিফোনের (বা ল্যান্ড ফোনের) আধুনিক সংস্করণ হলো মোবাইল ফোন। এর দ্বারা যখন খুশি তখনই প্রেরক প্রাপকের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। ভাব, তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। ফলে যোগাযোগ দ্রুততর হয়। সনাতন টেলিফোনের চেয়ে যোগাযোগ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের ব্যবহার অনেক বেশী। 

৪. ইন্টারকম: বৃহদায়তন অফিসে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারকম ব্যবহার করা হয়। ইন্টারকমের মাধ্যমে স্বীয় স্থানে থেকেই দ্রুত আলাপ করা যায়। এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযোজনীয় যন্ত্রপাতির স্থাপন-ব্যয় ছাড়া বিশেষ কোন খরচ নেই। 

৫. সাক্ষাৎকার: পূর্ব ঘোষিত বিষয়/উদ্দেশ্য নিয়ে কথোপকথনই হলো সাক্ষাৎকার। এই প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে বার্তা প্রেরক-প্রাপক একত্র হয়ে আলোচনা করে। কারবারী জগতে এই পদ্ধতি প্রতিনিয়তই ব্যবহৃত হয়। 

সাক্ষাৎকার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:

  • ক. নির্বাচন ও নিয়োগ সাক্ষাৎকার: প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগ, কার্য মূল্যায়ন, স্থায়ীকরণ, পদোন্নতি বা বিশেষ নির্দেশনার জন্য এটা করা হয়। 
  • খ. গবেষণা সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার: গবেষণা কার্যের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহণের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। 
  • গ. অভিযোগ সাক্ষাৎকার: কর্মী ও গ্রাহকদের অভাব-অভিযোগ, চাহিদা, দাবী ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ এবং সমন্বয় সাধনের জন্য অভিযোগ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। 
  • ঘ. শৃঙ্খলাবোধ সাক্ষাৎকার: কর্মীদের সতর্ক করা, নিষ্ঠাবান করা, কাজকর্মে আগ্রহী করা এবং সংশোধন করার জন্য শৃঙ্খলাবোধ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। 

ঙ. বোর্ড সাক্ষাৎকার: প্রার্থী বাছাই বা প্রকৃত তথ্য বের করার জন্য কমিটি গঠন করে এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন প্রশ্ন করে প্রকৃত তথ্য ও প্রকৃত প্রার্থী যাচাই-বাছাই করার জন্য এই পদ্ধতি বেশ উপযোগী। 

চ. দলীয় সাক্ষাৎকার: নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এবং কোন ব্যাপারে কোন দলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দলীয় সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। 

মৌখিক যোগাযোগের সুবিধা

আজকাল অধিকাংশ ম্যানেজার মৌখিক যোগাযোগকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেন। কারণ মৌখিক যোগাযোগের নানাবিধ সুবিধা রয়েছে। এই প্রকার যোগাযোগের সুবিধাগুলো নিচে আলোচনা করা হলো: 

১. সফল যোগাযোগ মাধ্যম: পৃথিবীর সর্বত্র আজ যোগাযোগের ফলপ্রসূ মাধ্যম হিসেবে মৌখিক যোগাযোগকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ অধিকাংশ ম্যানেজারই এরূপ মতামত প্রকাশ করেন যে, মৌখিক যোগাযোগ লিখিত যোগাযোগের তুলনায় উন্নত ও সফল যোগাযোগ মাধ্যম। 

২. সংশোধনের ব্যবস্থা: মৌখিক যোগাযোগে দুটি পক্ষ সরাসরি যোগাযোগ করেন বিধায় তথ্যে কোনো প্রকার ভুল থাকলে বা কোনো কিছু বাদ পড়লে তা তাৎক্ষণিকভাবে শুধরে নেয়া যায়। 

৩. সহজ পরিবর্তনযোগ্যতা: মৌখিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বক্তা পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনবোধে বক্তব্য পরিবর্তন করতে পারেন। এ জন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন পড়ে না।

৪. খরচ হ্রাস: মৌখিক যোগাযোগে আনুসঙ্গিক উপকরণের খরচ না থাকায় এরূপ যোগাযোগে তুলনামূলকভাবে কম খরচ হয়ে থাকে। 

৫. সময়ের অপচয় রোধ: মৌখিক কথাবার্তার মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দূরবর্তী স্থানের লোকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়। ফলে সময়ের অপচয় হয় না। 

৬. সৌহার্দ্য বৃদ্ধি: প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপক যদি ব্যক্তিগতভাবে কর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন, কর্মীদের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক সমস্যাদির খোঁজ-খবর করেন, তাহলে কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং কাজের প্রতি আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সৌহার্দ্যও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। 

৭. আনুষ্ঠানিকতার অনুপস্থিতি: মৌখিক যোগাযোগে কোনো আনুষ্ঠানিকতা পালনের ঝামেলা নাই, যা লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে পালন করতে হয়। 

৮. দীর্ঘসূত্রতা পরিহার: মৌখিক যোগাযোগে শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়। কাজেই এরূপ যোগাযোগে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করা সম্ভব হয় বলে বক্তা সহজে তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। 

৯. সমন্বয়সাধন: বিভিন্ন কর্মী এবং বিভাগের কাজের মধ্যে মৌখিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমন্বয়সাধন করা সহজ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয়। 

১০. শ্রোতার প্রতিক্রিয়া অনুধাবন: মৌখিক যোগাযোগে তাৎক্ষণিকভাবে বক্তা ও শ্রোতা প্রতিক্রিয়া জানতে পারে। ফলে শ্রোতার প্রতিক্রিয়া বা মতামতের উপর ভিত্তিত করে বক্তব্যের প্রয়োজনীয় সংযোজন করা সম্ভব।

মৌখিক যোগাযোগের অসুবিধা

মৌখিক যোগাযোগের নিম্নের অসুবিধাগুলো পরিলক্ষিত হয়: 

১. সংরক্ষণের সমস্যা: মৌখিক যোগাযোগের কোন রেকর্ড থাকে না বিধায় প্রেরক ও প্রাপক কেউই তা সংরক্ষণ করতে পারে না। অবশ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠান মৌখিক যোগাযোগের বিষয়বস্তু পেন ড্রাইভে বা হার্ড ড্রাইভে সংরক্ষণ করে রাখে । ইচ্ছা করলে ইন্টারনেটের ব্যবহার করে ‘ক্লাউড’-এ সংরক্ষণ করে রাখা যায়। 

২. ব্যস্ততা: পূর্বাপর চিন্তা না করে ব্যস্ততার মধ্যে বক্তব্য পেশ করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টও বাদ পড়তে পারে। এরূপ হলে বক্তব্য অস্পষ্ট ও গুরুত্বহীন হয়ে পড়তে পারে। 

৩. পরিকল্পনার অভাব: অনেক সময় যোগাযোগ করার পূর্বে যোগাযোগের বিষয়/বক্তব্য সম্পর্কে অগ্রিম চিন্তাভাবনা করে পরিকল্পিতভাবে বক্তব্য প্রকাশ করা হয় না। দ্রুততা, অবহেলা, বেশি আত্মবিশ্বাস ইত্যাদি কারণে এমনটি হয়ে থাকে। 

৪. স্পষ্ট চিন্তার অভাব: যোগাযোগের পূর্বে স্পষ্ট চিন্তার অভাবে মৌখিক যোগাযোগ ব্যর্থ হতে পারে। অনেক ব্যস্ততার কারণে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উপস্থাপন, কৌশল ও ভাষার ব্যবহার, প্রতিক্রিয়া (অনুকূল বা প্রতিকূল) ইত্যাদি নিয়ে চিন্তার সুযোগ থাকে না। ফলে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। 

৫. অন্যের বক্তব্য না শোনা: অনেক সময় বক্তা শ্রোতাদের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি দেন না। স্বীয় মর্যাদা, যুক্তি, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি প্রদর্শন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে যোগাযোগ ব্যর্থ হয় এবং প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। 

৬. সুষ্ঠু বাচনভঙ্গির অভাব: সুষ্ঠু বাচনভঙ্গির উপর মৌখিক যোগাযোগের ফলপ্রসূতা বহুলাংশে নির্ভর করে। যুক্তিযুক্ত ও সঠিকভাবে উপস্থাপন করা না হলে মৌখিক যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। 

৭. ব্যক্তিত্ব: শ্রোতারা অনেক সময় বক্তার ব্যক্তিত্বকে প্রাধান্য দেয়। এমন ক্ষেত্রে তাদের চোখে বক্তা ব্যক্তিত্বহীন বলে মনে হলে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। 

৮. আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের অভাব: যোগাযোগের ক্ষেত্রে আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে উল্টো-পাল্টা বক্তব্য পেশ বা বেঁফাস কথা বলা হতে পারে। এতে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ ও যুক্তিযুক্ত বক্তব্যে বেশি জোর দিতে হবে এবং আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 

৯. কণ্ঠস্বরের হ্রাস-বৃদ্ধি: অযথা বা প্রয়োজন ছাড়া আকস্মিকভাবে হঠাৎ কণ্ঠস্বরের হ্রাস-বৃদ্ধি করা হলে শ্রোতারা বিরক্তি বোধ করে, তাদের মনোযোগ নষ্ট হয় এবং যোগাযোগ ব্যর্থ হয়।

১০. বক্তব্যের দীর্ঘসূত্রতা: সামান্য বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় বক্তব্য উপস্থাপন বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও প্রয়োজনের বেশি বক্তব্য অর্থহীন। কেননা শ্রোতারা সংক্ষেপে এবং স্বল্প সময়ে বক্তব্য শুনতে চায়। অন্যথায় ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে।

১১. বার্তা গ্রাহকের প্রতিবন্ধকতা: বার্তা-গ্রাহক বক্তার সকল বক্তব্যই নিজের ভাব-আবেগ দ্বারা বুঝার চেষ্টা করে। এতে বক্তব্যের মূল বিষয় অনেক সময় ভিন্নভাবে ধরা পড়ে। 

১২. বক্তব্যের ফলপ্রসূতা পর্যালোচনার অভাব: মৌখিক যোগাযোগ করার পর বক্তা তার বক্তব্য গ্রাহক বুঝেছে কিনা এবং ফলপ্রসূ হচ্ছে কিনা সেদিকে অনেক সময় নজর দেয় না। মূল্যায়ন ও পর্যালোচনার অভাবে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। 

১৩. পদমর্যাদাজনিত অহংবোধ: অনেক সময় বক্তা তার বক্তব্যে স্বীয় পদমর্যাদা ও সম্মানকে বেশি গুরুত্ব দেয়। কিন্তু শ্রোতাদের প্রাপ্য সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে না। ফলে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়। 

১৪. বিষয়ের ত্রুটিপূর্ণ উপস্থাপন: যোগাযোগের ক্ষেত্রে উচ্চ নির্বাহীর নির্দেশ, বার্তা, সংবাদ ইত্যাদি অধীনস্তদের নিকট ভুলভাবে উপস্থাপন করা হলে তা অন্যদের নিকট বোধগম্য হয় না। সহজ-সরল ভাষায় এবং প্রয়োজনে উদাহরণসহ বক্তব্য উপস্থাপন করা না হলে যোগাযোগ ব্যর্থ হবে। 

মৌখিক যোগাযোগে সফলতার পূর্বশর্ত

১. সংবাদ গ্রাহকের আস্থা: মৌখিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহকের শিক্ষা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, ইচ্ছা, গ্রহণ ক্ষমতা, উপলব্ধি প্রভৃতির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তবেই যোগাযোগ সফল হবে। 

২. প্রেরিত সংবাদের স্পষ্টতা: সংবাদ/তথ্য সহজ, সরল ভাষায় স্পষ্ট করে উপস্থাপন করতে হবে।

৩. সঠিক তথ্য প্রেরণ: প্রেরিত তথ্য অবশ্যই সঠিক, নির্ভুল, ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। কোন মতেই শ্রোতাকে ভুল তথ্য দেয়া যাবে না। 

৪. আবেগের চেয়ে যুক্তির প্রতি গুরুত্ব: যোগাযোগ ক্ষেত্রে আবেগ-অনুভূতি সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে এবং বিষয়বস্তুর যুক্তিযুক্ত দিকগুলোর প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। বক্তব্য যুক্তিযুক্ত হবার অর্থই হলো, বক্তব্য ধারাবাহিক হবে এবং বিষয়বস্তুর প্রতি শ্রোতা বেশি মনোযোগী হবে। 

৫. নিয়মিত অনুশীলন: বক্তব্য স্পষ্ট ও সুষ্ঠুভাবে তুলে ধরার জন্য বক্তব্যের বিষয় নিয়ে বক্তাকে নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। কেননা নিয়মিত অনুশীলন বক্তব্যের সুষ্ঠু উপস্থাপনার জন্য অতি জরুরি। 

৬. বিষয়বস্তুর প্রতি গুরুত্ব প্রদান: বক্তা ও শ্রোতা উভয়কেই বক্তব্যের বিষয়বস্তুর উপর খেয়াল রাখতে হবে, গুরুত্ব দিতে হবে। বক্তাকে বক্তব্য স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে এবং সাথে সাথে শ্রোতাকেও বক্তব্য স্পষ্ট করে বুঝতে হবে। 

৭. পূর্ব ধারণা না করা: বক্তার বক্তব্য সম্পর্কে শ্রোতা কখনোই পূর্ব ধারণা/অনুমান করা চলবে না। বক্তার দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য বুঝার চেষ্টা করতে হবে। 

৮. অমনোযোগী না হওয়া: মনযোগ সহকারে বক্তব্য শুনতে হবে। শ্রবণকালে অমনোযোগী হওয়া চলবে না। এরূপ হলে বক্তব্য বুঝা যাবে না। যোগাযোগ ব্যর্থ হবে। 

৯. নিরপেক্ষ থাকা: বক্তব্য শ্রবণ ক্ষেত্রে শ্রোতাকে সবসময়ই নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। বক্তার বক্তব্যেকে কখনো অহেতুক ও অপ্রাসঙ্গিক বলা যাবে না এবং নিরপেক্ষতার দৃষ্টিকোণ থেকে বিচারের চেষ্টা করতে হবে। 

১০. পূর্ব সিদ্ধান্ত: বক্তব্য না শুনে বা না বুঝে পূর্ব-সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা চলবে না যা বক্তার বক্তব্যকে প্রভাবিত করতে পারে। এরূপ হলে অন্যান্য শ্রোতাকেও তা প্রভাবিত করবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। 

১১. প্রেরণ কৌশল: বক্তব্য প্রেরণের অনেক কৌশল আছে। তাই প্রয়োজন, পরিস্থিতি ও শ্রোতার প্রয়োজন বিবেচনা করে যুক্তিযুক্ত কৌশল ব্যবহার করতে হবে।

১২. যোগাযোগের উদ্দেশ্য: যোগাযোগের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বক্তার স্পষ্ট ধারণা না থাকলে সে সুষ্ঠুরূপে বক্তব্য উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়। 

১৩. অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ: যোগাযোগ করার পর তা অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এর মাধ্যমে গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া ও গ্রহণযোগ্যতা জানা যাবে। প্রয়োজনে পুনঃবর্ণনা ও বিশ্লেষণ দেয়া যাবে। 

১৪. পূর্ব পরিকল্পনা: বক্তা বা যোগাযোগকারীর বক্তব্যের বিষয়, শ্রোতাদের অবস্থা, উপস্থাপন পদ্ধতি, যোগাযোগ কৌশল সম্পর্কে পূর্ব-পরিকল্পনা অবশ্যই থাকতে হবে। 

১৫. সহনশীলতা: বক্তব্য পেশের সময় সহনশীল হতে হবে এবং শ্রোতাদের বক্তব্যও ধৈর্য্য ও আগ্রহসহকারে শুনতে হবে। মৌখিক যোগাযোগ করার পূর্বেই এসকল বিষয়গুলো চিন্তাভাবনা করতে হবে। তবেই তা সার্থক ও ফলদায়ক হবে।