০৯:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

সামাজিক অসমতা: সামাজিক অসমতার ধারণা ও সংজ্ঞা এবং বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অসমতা

ড. ইকবাল হুসাইন
  • প্রকাশ: ০৯:২৯:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২২
  • / ২২৪১২ বার পড়া হয়েছে

সামাজিক অসমতা উত্তরাধিকার ব্যবস্থার মতো আমাদের সমাজ কাঠামোর সাথে জড়িত হয়ে আছে।


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হলো সামাজিক অসমতা ও সামাজিক স্তরবিন্যাস। পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল মানুষ সমান বলা হলেও বাস্তবে সকল ক্ষেত্রে অসমতা লক্ষ্য করা যায়। সমাজে বসবাসকারী মানুষের প্রাত্যহিক জীবন, রাষ্ট্রীয় সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে যদি নজর দেয়া যায় তাহলে দেখা যাবে যে সবখানে সামাজিক অসমতা বিরাজমান। 

সামাজিক অসমতার মৌলিক ধারণা

সমাজবিজ্ঞানে সামাজিক অসমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল মানুষ সমান বলা হলেও বাস্তবে সকল ক্ষেত্রে অসমতা লক্ষ কার যায়। মানুষের প্রাত্যহিক জীবন, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে যদি নজর দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে যে, সর্বত্র সামাজিক অসমতা বিরাজমান। উদাহরণ হিসেবে বর্তমান সমাজের বিভিন্ন পদ, সেবার দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, সর্বত্র অসমতা। সমাজে যারা ভালো অবস্থান ও সেবা ভোগ করে তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। যারা কম সুযোগ সুবিধা ভোগ করে বিভিন্ন কাজে, অধিকারের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয় তারা হলো সমাজের সাধারণ শ্রেণি। আবার পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষেরা নারীর উপর কর্তৃত্ব আরোপ করে। সুতরাং সবদিক থেকেই সামাজিক অসমতা বিদ্যমান। সামাজিক অসমতা উত্তরাধিকার ব্যবস্থার মতো আমাদের সমাজ কাঠামোর সাথে জড়িত হয়ে আছে। এটি অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে ও ভবিষ্যতে থাকবে।

সামাজিক অসমতার সংজ্ঞা

সাধারণভাবে যদি সামাজিক অসমতাকে বোঝাতে চাই তাহলে সমাজে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা, সম্পদ, সামাজিক অবস্থান ও পরিচিতি এবং পদমর্যাদাকে কেন্দ্র করে যে অসম অংশীদারিত্ব সৃষ্টি হয়ে থাকে সেটাই হলো সামাজিক অসমতা। সামাজিক অসমতা হলো সামাজিক ভিন্নতা তৈরির এমন এক প্রক্রিয়া, যার দ্বারা সামাজিক মান-মর্যাদা, যশ, খ্যাতি, বিত্ত বৈভব ইত্যাদি বিকশিত হয় ও ব্যক্তি সমাজে পরিচিত লাভ করে।

অক্সফোর্ড অ্যাডভ্যান্সড ডিকশনারি (Oxford Advanced Learner’s Dictionary)-এর মতে, “সামাজিক অসমতা বলতে বোঝায় এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সমাজের সদস্যবৃন্দ অসম পরিমাণ বা মাত্রায় সম্পদ, যশ, খ্যাতি ও ক্ষমতার অধিকারী”।

রবার্টসন বলেছেন, “যখন সমাজের কতিপয় লোক অন্যান্যদের তুলনায় বেশি ক্ষমতা, সম্পদ অথবা খ্যাতির অধিকারী হয় তখন সেখানে সামাজিক অসমতা বিরাজ করে”।

এম. গিন্সবার্গ-এর মতে, “সামাজিক অসমতা এমন একটি ক্রমোচ্চমানকে নির্দেশ করে যেখানে অন্যান্য ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা পদের তুলনায় কতিপয় ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা পদের কাঙ্খিত জিনিস বা বিষয়বস্তু রয়েছে”।

সামাজিক অসমতার উৎপত্তি

ক্ষুদ্র সমাজ কাঠামোর দিকে তাকালেও আমরা সামাজিক অসমতার উপস্থিতি লক্ষ করি। প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট সমাজেও অসমতা ছিল। সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা ও সামাজিক শ্রেণি ব্যবস্থার মধ্যে পরিবর্তনের মাধ্যমে সব সমাজেই অসমতা টিকে আছে।

এখানে সামাজিক অসমতা সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীর ধারণা

সামাজিক অসমতা নিয়ে অ্যারিস্টটল কী বলেছেন?

অসম সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল বলেছেন-“প্রাকৃতিকভাবেই কিছু মানুষ স্বাধীন ও কিছু মানুষ দাস”। তিনি বিভিন্ন কারণে দাস প্রথাকে সমর্থন করেছেন। 

অ্যারিস্টটল মূলত দাসত্ব প্রথার সমর্থনে বক্তব্য দিতে গিয়ে সামাজিক অসমতা বিষয়ে ব্যাখা করেন। তিনি বলেন, কিছু মানুষ প্রাকৃতিকভাবে মেধাবী, বিচক্ষণ ও ক্ষমতাধর আর কিছু মানুষ প্রজ্ঞাহীন। প্রজ্ঞাহীনরা সমাজে দাসত্ব করবে আর জ্ঞানীরা সমাজের নিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এটাই স্বাভাবিক। এদের অধীনে থাকবে দেশের সাধারণ মানুষ।

সামাজিক অসমতা সম্পর্কে কার্ল মার্কস কী বলেছেন?

কার্ল মার্কস ও তাঁর সহযোগীরা মনে করেন যে, সমাজজীবনের সূচনাকাল থেকে সামাজিক অসমতা ছিল না। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মুনাফা হলো মুখ্য বিষয় আর এক্ষেত্রে মালিক শ্রেণি সবসময় শ্রমিক শ্রেণিকে শোষণ করে। মালিক শ্রেণি শোষণমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে অসমতা টিকিয়ে রাখে।

সামাজিক অসমতা সম্পর্কে এমিল ডুর্খেইম কী বলেছেন?

এমিল ডুর্খেইমের বক্তব্য এর সাথে এরিস্টটলের বক্তব্যের মিল রয়েছে। ডুর্খেইম বলেন যে, প্রাকৃতিকভাবে কিছু মানুষ মেধাবী যারা অন্যদের থেকে আলাদা। সমাজের পরিচালনা ও বড় কাজগুলো মেধাবীরা পরিচালনা করে। পক্ষান্তরে, অন্যন্য কাজগুলো সাধারণ মানুষেরা করে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ কাজকরার ফলে মেধাবীরা সমাজের মর্যাদায় আসনে আসীন হয়। এভাবে সামাজিক অসমতার সৃষ্টি হয়। 

বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অসমতা

সামাজিক অসমতা সমাজের সবক্ষেত্রে বিদ্যমান। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অসমতার বর্ণনা দেওয়া হলো:

রাজনৈতিক অসমতা

রাজনৈতিক অসমতা বর্তমান সমাজে লক্ষণীয়। রাজনৈতিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ক্ষমতাশালীরা ভোগ করে। এছাড়াও আইনের সুযোগ লাভের অধিকার এর উপর রাজনৈতিক অসমতা নির্ভর করে।

আয় ও সম্পদের অসমতা

সম্পদের মালিকানা ও আয়ের বৈষম্য বিভিন্ন সমাজে লক্ষ করা যায়। সম্পদ মূলত সমান সুযোগ মুষ্টিমেয় শ্রেণির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আয়ের ক্ষেত্রেও সম্পদের মতো বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

নাগরিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে অসমতা:

মানুষের জীবনকে অর্থবহ করার জন্য সমাজে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু সুযোগ সুবিধা গ্রহণের মতো ক্ষমতা সবার থাকে না। ফলে অসমতার সৃষ্টি হয়।

জেন্ডার ও জাতিগত অসমতা

সমাজে জেন্ডারের তারতাম্যের বিচারে অসমতা লক্ষ করা যায়। অনেক সমাজেই নারী ও পুরুষের মধ্যে অসমতা বিরাজ করে। একজন পুরুষ তুলনায় একজন নারী সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করে না। জাতিগত অসমতা সকল সমাজে কম বেশি বিদ্যমান। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে অসমতার মূল কারণ জাতিগত ভিন্নতা।

শ্রমের বিভাজন ও সামাজিক অসমতা

শ্রমের বিভাজনেও অসমতা লক্ষণীয়। একটি সমাজে বিভিন্ন পেশা বিদ্যমান আর এক্ষেত্রে পেশাগত ও কর্মদক্ষতার ভিন্নতা সামাজিক অসমতা তৈরি করে।

সমাজের সদস্য হিসেবে অসমতা

সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেক ব্যক্তির যে সমতার রয়েছে সেটা নানা কারণে বাস্তবে রূপায়িত করা সম্ভব হয় না। সমাজের সদস্য হিসেবে অধিকার ভোগ করা সম্ভব হয় না। সম্পদশালী ব্যক্তিরা সমাজে অসমতার অন্যতম কারণ।

(সংকলিত)

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

সামাজিক অসমতা: সামাজিক অসমতার ধারণা ও সংজ্ঞা এবং বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অসমতা

প্রকাশ: ০৯:২৯:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২২

সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হলো সামাজিক অসমতা ও সামাজিক স্তরবিন্যাস। পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল মানুষ সমান বলা হলেও বাস্তবে সকল ক্ষেত্রে অসমতা লক্ষ্য করা যায়। সমাজে বসবাসকারী মানুষের প্রাত্যহিক জীবন, রাষ্ট্রীয় সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে যদি নজর দেয়া যায় তাহলে দেখা যাবে যে সবখানে সামাজিক অসমতা বিরাজমান। 

সামাজিক অসমতার মৌলিক ধারণা

সমাজবিজ্ঞানে সামাজিক অসমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল মানুষ সমান বলা হলেও বাস্তবে সকল ক্ষেত্রে অসমতা লক্ষ কার যায়। মানুষের প্রাত্যহিক জীবন, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে যদি নজর দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে যে, সর্বত্র সামাজিক অসমতা বিরাজমান। উদাহরণ হিসেবে বর্তমান সমাজের বিভিন্ন পদ, সেবার দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, সর্বত্র অসমতা। সমাজে যারা ভালো অবস্থান ও সেবা ভোগ করে তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। যারা কম সুযোগ সুবিধা ভোগ করে বিভিন্ন কাজে, অধিকারের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয় তারা হলো সমাজের সাধারণ শ্রেণি। আবার পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষেরা নারীর উপর কর্তৃত্ব আরোপ করে। সুতরাং সবদিক থেকেই সামাজিক অসমতা বিদ্যমান। সামাজিক অসমতা উত্তরাধিকার ব্যবস্থার মতো আমাদের সমাজ কাঠামোর সাথে জড়িত হয়ে আছে। এটি অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে ও ভবিষ্যতে থাকবে।

সামাজিক অসমতার সংজ্ঞা

সাধারণভাবে যদি সামাজিক অসমতাকে বোঝাতে চাই তাহলে সমাজে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা, সম্পদ, সামাজিক অবস্থান ও পরিচিতি এবং পদমর্যাদাকে কেন্দ্র করে যে অসম অংশীদারিত্ব সৃষ্টি হয়ে থাকে সেটাই হলো সামাজিক অসমতা। সামাজিক অসমতা হলো সামাজিক ভিন্নতা তৈরির এমন এক প্রক্রিয়া, যার দ্বারা সামাজিক মান-মর্যাদা, যশ, খ্যাতি, বিত্ত বৈভব ইত্যাদি বিকশিত হয় ও ব্যক্তি সমাজে পরিচিত লাভ করে।

অক্সফোর্ড অ্যাডভ্যান্সড ডিকশনারি (Oxford Advanced Learner’s Dictionary)-এর মতে, “সামাজিক অসমতা বলতে বোঝায় এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সমাজের সদস্যবৃন্দ অসম পরিমাণ বা মাত্রায় সম্পদ, যশ, খ্যাতি ও ক্ষমতার অধিকারী”।

রবার্টসন বলেছেন, “যখন সমাজের কতিপয় লোক অন্যান্যদের তুলনায় বেশি ক্ষমতা, সম্পদ অথবা খ্যাতির অধিকারী হয় তখন সেখানে সামাজিক অসমতা বিরাজ করে”।

এম. গিন্সবার্গ-এর মতে, “সামাজিক অসমতা এমন একটি ক্রমোচ্চমানকে নির্দেশ করে যেখানে অন্যান্য ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা পদের তুলনায় কতিপয় ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা পদের কাঙ্খিত জিনিস বা বিষয়বস্তু রয়েছে”।

সামাজিক অসমতার উৎপত্তি

ক্ষুদ্র সমাজ কাঠামোর দিকে তাকালেও আমরা সামাজিক অসমতার উপস্থিতি লক্ষ করি। প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট সমাজেও অসমতা ছিল। সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা ও সামাজিক শ্রেণি ব্যবস্থার মধ্যে পরিবর্তনের মাধ্যমে সব সমাজেই অসমতা টিকে আছে।

এখানে সামাজিক অসমতা সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীর ধারণা

সামাজিক অসমতা নিয়ে অ্যারিস্টটল কী বলেছেন?

অসম সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল বলেছেন-“প্রাকৃতিকভাবেই কিছু মানুষ স্বাধীন ও কিছু মানুষ দাস”। তিনি বিভিন্ন কারণে দাস প্রথাকে সমর্থন করেছেন। 

অ্যারিস্টটল মূলত দাসত্ব প্রথার সমর্থনে বক্তব্য দিতে গিয়ে সামাজিক অসমতা বিষয়ে ব্যাখা করেন। তিনি বলেন, কিছু মানুষ প্রাকৃতিকভাবে মেধাবী, বিচক্ষণ ও ক্ষমতাধর আর কিছু মানুষ প্রজ্ঞাহীন। প্রজ্ঞাহীনরা সমাজে দাসত্ব করবে আর জ্ঞানীরা সমাজের নিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এটাই স্বাভাবিক। এদের অধীনে থাকবে দেশের সাধারণ মানুষ।

সামাজিক অসমতা সম্পর্কে কার্ল মার্কস কী বলেছেন?

কার্ল মার্কস ও তাঁর সহযোগীরা মনে করেন যে, সমাজজীবনের সূচনাকাল থেকে সামাজিক অসমতা ছিল না। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মুনাফা হলো মুখ্য বিষয় আর এক্ষেত্রে মালিক শ্রেণি সবসময় শ্রমিক শ্রেণিকে শোষণ করে। মালিক শ্রেণি শোষণমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে অসমতা টিকিয়ে রাখে।

সামাজিক অসমতা সম্পর্কে এমিল ডুর্খেইম কী বলেছেন?

এমিল ডুর্খেইমের বক্তব্য এর সাথে এরিস্টটলের বক্তব্যের মিল রয়েছে। ডুর্খেইম বলেন যে, প্রাকৃতিকভাবে কিছু মানুষ মেধাবী যারা অন্যদের থেকে আলাদা। সমাজের পরিচালনা ও বড় কাজগুলো মেধাবীরা পরিচালনা করে। পক্ষান্তরে, অন্যন্য কাজগুলো সাধারণ মানুষেরা করে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ কাজকরার ফলে মেধাবীরা সমাজের মর্যাদায় আসনে আসীন হয়। এভাবে সামাজিক অসমতার সৃষ্টি হয়। 

বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অসমতা

সামাজিক অসমতা সমাজের সবক্ষেত্রে বিদ্যমান। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অসমতার বর্ণনা দেওয়া হলো:

রাজনৈতিক অসমতা

রাজনৈতিক অসমতা বর্তমান সমাজে লক্ষণীয়। রাজনৈতিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ক্ষমতাশালীরা ভোগ করে। এছাড়াও আইনের সুযোগ লাভের অধিকার এর উপর রাজনৈতিক অসমতা নির্ভর করে।

আয় ও সম্পদের অসমতা

সম্পদের মালিকানা ও আয়ের বৈষম্য বিভিন্ন সমাজে লক্ষ করা যায়। সম্পদ মূলত সমান সুযোগ মুষ্টিমেয় শ্রেণির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আয়ের ক্ষেত্রেও সম্পদের মতো বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

নাগরিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে অসমতা:

মানুষের জীবনকে অর্থবহ করার জন্য সমাজে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু সুযোগ সুবিধা গ্রহণের মতো ক্ষমতা সবার থাকে না। ফলে অসমতার সৃষ্টি হয়।

জেন্ডার ও জাতিগত অসমতা

সমাজে জেন্ডারের তারতাম্যের বিচারে অসমতা লক্ষ করা যায়। অনেক সমাজেই নারী ও পুরুষের মধ্যে অসমতা বিরাজ করে। একজন পুরুষ তুলনায় একজন নারী সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করে না। জাতিগত অসমতা সকল সমাজে কম বেশি বিদ্যমান। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে অসমতার মূল কারণ জাতিগত ভিন্নতা।

শ্রমের বিভাজন ও সামাজিক অসমতা

শ্রমের বিভাজনেও অসমতা লক্ষণীয়। একটি সমাজে বিভিন্ন পেশা বিদ্যমান আর এক্ষেত্রে পেশাগত ও কর্মদক্ষতার ভিন্নতা সামাজিক অসমতা তৈরি করে।

সমাজের সদস্য হিসেবে অসমতা

সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেক ব্যক্তির যে সমতার রয়েছে সেটা নানা কারণে বাস্তবে রূপায়িত করা সম্ভব হয় না। সমাজের সদস্য হিসেবে অধিকার ভোগ করা সম্ভব হয় না। সম্পদশালী ব্যক্তিরা সমাজে অসমতার অন্যতম কারণ।

(সংকলিত)