সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান বা ভূমিকা
- প্রকাশ: ০৭:৩১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
- / ২০৫৭০ বার পড়া হয়েছে
উনিশ শতকে ভারতে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের সাথে ধর্মসংস্কার ও শিক্ষান্নোয়নের একটি সম্পর্ক ছিল। বাংলার হিন্দু সমাজ সংস্কারে অভিন্ন বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করা যায়। ইংরেজদের আগমন ও ক্ষমতাসীন হওয়া বাংলার সাধারণ হিন্দু ও মুসলমান দুই সমাজেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ও সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে শাসক ইংরেজদের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ অনুমোদন দেয়নি ইংরেজদের সংস্পর্শে আসার। ইংরেজ সান্নিধ্যকে তারা ধর্মীয় অনাচার হিসেবে মনে করতে থাকে। একারণে আধুনিক ইউরোপীয় জ্ঞানের সাথে নিজেদের যুক্ত করতে পারে নি। ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণকে পাপ বিবেচনা করতে থাকে। এই বাস্তবতায় হিন্দু সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত করে আধুনিকতার পথে এগিয়ে এনেছিলেন যেকজন বাঙালি সংস্কারক তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রামমোহন রায় উনিশ শতকের একজন ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত।
হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে এক হিন্দু পরিবারে মে ২২, ১৭৭২ খ্রি. তারিখ রাজা রামমোহন রায় জন্মগ্রহণ করেন। রামমোহন রায়ের পারিবারিক ধর্মীয় ঐতিহ্য সে যুগের বিচারে ব্যাতিক্রমী ছিল। রামমোহন রায়ের পরিবার রাঢ়ী ব্রাহ্মণ এবং পারিবারিক উপাধি বন্দ্যোপাধ্যায়।
রামমোহন রায়ের ঠাকুরদা কৃষ্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ‘রায়’ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। রামমোহনের পিতা রামকান্ত রায় বৈষ্ণব মতবাদ গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে তাঁর মা তারিণী দেবী শৈব পরিবারের মেয়ে ছিলেন। এসব কারণেই সম্ভবত একটি উদার ও মিশ্র ধর্মীয় অবয়বের ভেতর অনেকটা মুক্ত মানসিকতায় বেড়ে উঠেছিলেন রামমোহন রায়। তাই তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা তাঁর ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী দ্বারা প্রভাবিত ছিল।
রাজা রামমোহন রায় একজন ধর্ম সংস্কারক ও শিক্ষা সংস্কারক হিসেবে পরিচিত হলেও সমাজ সংস্কারক হিসেবেই তাঁর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল। তাঁর ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করেছিল।
রামমোহন রায় ১৮১৫ সালে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে কলকাতাতে চলে আসেন। এসময় থেকে তিনি সমাজ সংস্কারে নিবেদিত হন। এখানে তিনি সমমনা বন্ধুদের একত্রিত করে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন, এর নাম হয় ‘আত্মীয়সভা’। নিয়মিত আলোচনা সভার আয়োজন করা হতো এখানে। ধর্মীয় ও সামাজিক নানা সমস্যা নিয়ে এখানে আলোচনা করা হতো। এই সভায় দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুরের মত বরেণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকতেন।
সাধারণ হিন্দুদের ভেতর মুক্তচিন্তা ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে রামমোহন রায় সংবাদপত্র প্রকাশের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এই লক্ষ্যে ১৮২১ সালে প্রকাশ করেন সংবাদ কৌমুদী নামে একটি বাংলা সংবাদপত্র। পরের বছর ফারসি ভাষায় আরেকটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। এর নাম ছিল মিরাত উল আখবার।
রামমোহন রায় মূর্তিপূজা বিরোধী বক্তব্য উপস্থাপনের পক্ষে সমর্থন পেলেন উপনিষদ থেকে। উপনিষদে বহু দেবদেবীর পরিবর্তে নিরাকার ব্রহ্মার উপাসনার কথা রয়েছে। এই সূত্রেই রাজা রামমোহন রায় ১৮২৮ সালে ‘ব্রাহ্মসভা’ নামে একটি সংগঠনের জন্ম দেন। এখানে নিরাকার ব্রহ্মার স্মরণে ধর্মসঙ্গীত গেয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করা হয়। পরবর্তী সময়ে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে ব্রাহ্মসভা ‘ব্রাহ্মসমাজ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে।
বহুকাল আগে থেকেই হিন্দু সমাজে অনেক কুপ্রথা প্রচলিত হয়েছিল। এর অন্যতম হচ্ছে সতী। সতীদাহ প্রথা অনুসারে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে স্বামীর চিতায় জীবন্ত পেড়ানো হতো। গোঁড়া হিন্দুদের প্রবল প্রতিরোধের মধ্যেও রামমোহন রায় সতীদাহের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে থাকেন, তিনি প্রভাবিত করতে থাকেন কোম্পানির শাসকদের। এই সূত্রে ১৮২৯ সালে গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিংকের অনুমোদনে সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করে আইন পাশ হয়।
রামমোহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধি দেন সে সময়ের নামেমাত্র মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর (১৮০৬-১৮৩৭)।
রাজা রামমোহন রায় মৃত্যুবরণ করেন সেপ্টেম্বর ২৭, ১৮৩৩ খ্রি. তারিখ যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলে।
সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায় ,
এর নবম প্যারার
তৃতীয় লাইনে পেড়ানো হবে না, পোড়ানো হবে।
আমার মন্তব্যটি হলো : এখানে লেখা উত্তর গুলো খুবই চমৎকার হয়ছে