SA v BAN: দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ জয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের
- প্রকাশ: ১০:৩৩:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ মার্চ ২০২২
- / ১২০৩ বার পড়া হয়েছে
সিরিজ ও ম্যাচজুড়ে দারুণ ফর্মে থাকা তাসকিন সিরিজ সেরা (প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ) ও ম্যাচ (প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ) সেরা হন।
অবশেষে কাঙ্ক্ষিত জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবার কোনো ফরম্যাটে সিরিজ জেতার ইতিহাস গড়েছে টাইগাররা।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে দাপুটে জয়ের পর শেষ ম্যাচে ৯ উইকেটের বড় জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিল তামিম ইকবালের দল।
বুধবার (২৩ মার্চ) তৃতীয় ওয়ানডেতে সেঞ্চুরিয়নে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে বল হাতে বল হাতে আগুন ঝরান তাসকিন আহমেদ। পাশাপাশি উইকেট শিকারের মিছিলে ছিলেন সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ ও শরিফুল ইসলাম। টাইগারদের এমন দাপুটে বোলিংয়ে মাত্র ১৫৪ রানেই গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার দলীয় সর্বনিম্ন। আগের সর্বনিম্ন ১৬২, ২০১৫ সালের ১৭ জুন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। শেষদিকে এসে লিটন দাস উইকেট হারালেও লড়াই চালিয়ে যান বাংলাদেশের দলপতি। তার ৮৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ১৪১ বল হাতে রেখেই জয়ের দেখা পায় টাইগাররা।
এর আগে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার মিলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালো শুরু এনে দেন। দুজনে গড়েছেন ফিফটি ছুঁইছুঁই রানের জুটি। তবে তাদের একজনকে থামিয়ে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ইনিংসের সপ্তম ওভারে এই অফ স্পিনারের বলে লং অফে থাকা মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কুইন্টন ডি কক। আগের ম্যাচেই ব্যাট হাতে ঝড় তোলা প্রোটিয়া ওপেনার আজ থামেন ৮ বলে ১২ রান করে। দলীয় ৪৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
মিরাজের পর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপে আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের ১৩তম ওভারে এই ডানহাতি পেসারের বল তিনে নামা কাইল ভেরেইনার (৯) ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। ভেরাইনের পর থিতু হয়ে বসা ইয়ানেমান মালানকেও বিদায় করেন তাসকিন। ইনিংসের ১৫তম ওভারে টাইগার পেসারের বাউন্সারে পরাস্ত হয়ে প্রোটিয়া ওপেনার এগিয়ে এসে শট খেলতে গিয়ে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। বিদায়ের আগে ৫৬ বলে ৭ চারে ৩৯ রান করেছেন মালান।
মালান বিদায় নেওয়ার পর টেম্বা বাভুমাকে ফেরালেন সাকিব আল হাসান। প্রোটিয়া অধিনায়ককে (২) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেছেন টাইগার অলরাউন্ডার। দুই ওভার পরেই শরিফুল ইসলামের লাফিয়ে ওঠা বলে মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে দেন পাঁচে নামা রাসি ভ্যান ডার ডুসেন (৪)। ৮৩ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে (২০) বিদায় করে স্বাগতিকদের ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটান তাসকিন।
২৯তম ওভারে আক্রমণে এসে আরও দুই উইকেট তুলে নেন তাসকিন। ওভারের তৃতীয় বলে ডেভিড মিলার (১৬) ব্যাট সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও গ্লাভসে লেগে জমা হয় মুশফিকের কাছে। ওভারের শেষ বলে তার অফসাইডের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে সেই মুশির কাছেই ক্যাচ তুলে দেন কাগিসো রাবাদা (৪)। সেই সঙ্গে ইনিংসে নিজের পঞ্চম উইকেটের দেখা পান তাসকিন। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫ উইকেট নিলেন তাসকিন। আগের সেরা এই সিরিজের প্রথম ম্যাচেই মেহেদী হাসান মিরাজের ৬১ রানে ৪ উইকেট। এছাড়া প্রায় ১০ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সফরকারী দলের কোনো পেসার এই প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেট পেলেন। এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে পার্লে ৫৪ রানে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার লাসিথ মালিঙ্গা।
শেষদিকে লুঙ্গি এনগিডিকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন কেশভ মহারাজ। তবে ১৪ বল মোকাবিলায় কোনো রান করার আগেই সাকিবের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এনগিডি। মিড অফ থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে ক্যাচটা লুফে নেন বদলি ফিল্ডার নাজমুল হোসেন শান্ত। আর পথের কাঁটা হয়ে থাকা কেশভ (২৮) ফেরেন রান আউট হয়ে।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ৫টি, সাকিব ২টি, মিরাজ ১টি ও শরিফুল ১টি উইকেট তুলে নিয়েছেন।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পেল বাংলাদেশ। ১৫৫ রানের লক্ষ্যে ২১তম ওভারে এসে বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারায়। কেশভ মারাহাজের বলে ব্যক্তিগত ৪৮ রানের ফেরেন লিটন দাস। ৫৭ বলে ৮টি চারে ইনিংস সাজান লিটন। ওপেনিংয়ে তামিম-লিটন ১২৫ বলে ১২৭ রানের জুটি গড়েন। ব্যাট করতে নেমে ৫২ বলে ৯টি চারে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম ইকবাল। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫২তম ফিফটি।
লিটনের বিদায়ের পর লড়তে থাকা তামিমকে সঙ্গ দেন সাকিব আল হাসান। এ দুই ব্যাটারের ৩৪ বলে ২৯ রানের জুটিতে ভর করে জয়ের বন্দর পৌঁছায় বাংলাদেশ। ৮২ বলে ১৪ চারে ৮৭ রান করে অপরাজিত থাকেন তামিম ইকবাল। অপরপ্রান্তে থাকা সাকিব ২ চারে ২০ বলে ১৮ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন।
সিরিজ ও ম্যাচজুড়ে দারুণ ফর্মে থাকা তাসকিন সিরিজ সেরা (প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ) ও ম্যাচ (প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ) সেরা হন।