০৪:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

এইডস প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
  • প্রকাশ: ০৯:৫৮:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২
  • / ৭০৭ বার পড়া হয়েছে

এইডস প্রতিরোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

Acquired immunodeficiency syndrome বা সংক্ষেপে AIDS (এইডস) হলো যৌনতার কারণে সৃষ্ট এক ধরনের জটিল রোগ। এইডস রোগ সম্পর্কে খুব কম মানুষই সঠিক তথ্য সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। সত্যিকার অর্থে রোগটি ভীতিকর হলেও প্রতিরোধযোগ্য। এইডস একটি সংক্রামক রোগ, যা এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণের মাধ্যমে হয়। এটি মানুষের দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এইচআইভি সংক্রমণের ফলে অন্যান্য রোগ যেমন— নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। এইচআইভি সংক্রমণের পরের ধাপকেই এইডস বলা হয়। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮১ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭ কোটি ৮ লাখ মানুষ মরণব্যাধি এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩ কোটি ৯০ লাখ আক্রান্ত রোগী মারা যায়।

আল্লাহ মানুষকে রোগ-ব্যাধি দিয়ে থাকেন। কোনো কোনো রোগ মানুষের পাপ তথা সীমা লঙ্ঘনের কারণেও হয়ে থাকে, যা মানুষের জন্য অভিশাপ। এইডসের মতো মরণব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে এবং জাতিকে মুক্ত রাখতে ইসলামি নির্দেশনা মেনে চলার বিকল্প নেই। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা

যারা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে, তুলনামূলকভাবে তাদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে ৫০ ভাগ এইডস রোগীর বয়স ১৫-২৪ বছরের মধ্যে। সুতরাং প্রত্যেক বাবা-মার উচিত তার সন্তান কোথায় যায়, কী করছে তা দেখবেন। ১৫ বছর পর্যন্ত সন্তানরা সাধারণত বাবা-মায়ের সঙ্গেই বেশি থাকে। তাই তাদের ধর্মীয় জীবনযাপনের প্রতি জোর দেওয়া বাবা-মায়ের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে মোমিনরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতারা। (সুরা তাহরিম: ৬)। যেহেতু পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে, তরুণ-তরুণীরা এইডস ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত। তাই প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত তাদের সন্তানকে এইডস বিষয়ে সচেতন করে তোলা। তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া এবং তারা যেন কোনো অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখা।

জেনা-ব্যভিচার না করা 

জেনা-ব্যভিচার বা বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক স্থাপন ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা জেনার কাছেও যেও না। কেননা এটি অত্যন্ত অশ্লীল ও মন্দ পথ।’ (সুরা ইসরা : ৩২)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী স্থান (জিহ্বা) আর দুই ঊরুর মধ্যবর্তী স্থানের (যৌনাঙ্গের) দায়িত্ব নেবে, আমি তার জান্নাতের দায়িত্ব নেব। (বোখারি : ৮/১০০)। অবাধ যৌনাচার এইডস রোগ হওয়ার একটি মাধ্যম। তাই আল্লাহর নির্দেশ মেনে অবাধ যৌনাচার থেকে মুক্ত থাকাই কোরআন ও হাদিসের অকাট্য নির্দেশ।

পর্দা মেনে চলা

ইসলামে নারী-পুরুষ সবার জন্য পর্দাকে ফরজ করা হয়েছে। বেপর্দার কারণে অপর নারীর সৌন্দর্য যেন কাউকে জেনার দিকে প্ররোচিত না করে, সে জন্য ইসলাম বেপর্দায় কঠিনভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আল্লাহ বলেন, মোমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারও কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মোমিনরা, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা নুর : ৩০-৩১)।

সমকামিতা বন্ধ করা

ইসলামে সমকামিতা নিষিদ্ধ। কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা কামবশত পুরুষদের কাছে গমন করো স্ত্রীদের ছেড়ে, বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সুরা আরাফ : ৮১)। আল্লাহর এ বিধান লঙ্ঘনের দায়ে পূর্ববর্তী (কাওমে লুত) জাতিকে, তাদের জনপদকে উল্টিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। আজ পর্যন্ত সেই মৃত সাগরে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। সমাজ থেকে নারী-পুরুষের অবাধ যৌনাচার, পতিতালয়, বহুগামিতা ও পরকীয়াসহ সব নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করার তাগিদ দিয়েছে ইসলাম।

এছাড়া এইডসমুক্ত দেশ, জাতি ও সমাজ গঠনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পালন করা একান্ত জরুরি।

  • ধর্মীয় ও আদর্শ অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলা। শিক্ষা ক্ষেত্রে সব স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। ওয়াজ মাহফিলে ইসলামিক স্কলাররাও এ বিষয়ে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেন।
  • এইডসের কুফল গণমাধ্যমে তুলে ধরা। বিশেষ করে সর্বজন গ্রহণযোগ্য গণমাধ্যম হিসেবে খ্যাত মসজিদের ইমামদের এইচআইভি/এইডসের ওপর বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে পরিকল্পনামাফিক কাজে লাগানো। এ ক্ষেত্রে মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার ধর্মীয় যাজকরাকেও এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা।
  • সব ধরনের অনৈতিক, অবৈধ ও অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক বর্জন করা। যৌন কৌতূহল জাগে বা যৌনকর্ম সম্পাদনে উত্তেজিত হয়ে ওঠে, এমন কাজ বন্ধ করা। যেমন যৌন আবেদনময়ী অশ্লীল উপন্যাস, নোংরা যৌন পত্রপত্রিকা, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর নগ্নদেহ প্রদর্শনী প্রভৃতি বন্ধ করা।
  • পতিতাপল্লি তথা দেহব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
  • বিবাহে সক্ষম ব্যক্তিদের বিবাহের প্রতি উৎসাহিত করা। নচেৎ সংযম অবলম্বন করা।
  • উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের প্রতি অভিভাবকদের সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা। বয়ঃসন্ধিকালে তাদের ধর্মীয় অনুরাগ ও ধর্মীয় নীতি-আদর্শ মেনে চলার ব্যবস্থা করা।
  • জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে এইচআইভিমুক্ত রক্ত পরীক্ষা করে নেওয়া।
  • অপারেশনের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের আগে জীবাণুমুক্ত করা।
  • দুগ্ধপোষ্য শিশুদের এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করানো থেকে বিরত রাখা।

শেষকথা

পরিশেষে আল্লাহতায়ালা মানুষ সৃষ্টি করে সুস্থ-সুন্দর-সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের জন্য দিয়েছেন গাইড আল কোরআন। এতে রয়েছে বান্দার কল্যাণের পথনির্দেশ আবার অকল্যাণের কথাও রয়েছে। সুতরাং কোরআন অনুযায়ী ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে দুনিয়ার শান্তি এবং আখেরাতের মুক্তি সুনিশ্চিত। এ বিধান মেনে চলার মাঝেই রয়েছে এইডসের মতো মরণব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার উত্তম উপায়। আল্লাহ সমগ্র মানবজাতিকে এইডসমুক্ত রাখুন। আমিন।

সৌজন্যে— দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

One thought on “এইডস প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

  1. ইসলামের দিক নির্দেশনা অতি চমৎকার মানুষের জীবন সুন্দর করার জন্য

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য এবং প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ রোগী কল্যাণ সোসাইটি

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

এইডস প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

প্রকাশ: ০৯:৫৮:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২

Acquired immunodeficiency syndrome বা সংক্ষেপে AIDS (এইডস) হলো যৌনতার কারণে সৃষ্ট এক ধরনের জটিল রোগ। এইডস রোগ সম্পর্কে খুব কম মানুষই সঠিক তথ্য সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। সত্যিকার অর্থে রোগটি ভীতিকর হলেও প্রতিরোধযোগ্য। এইডস একটি সংক্রামক রোগ, যা এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণের মাধ্যমে হয়। এটি মানুষের দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এইচআইভি সংক্রমণের ফলে অন্যান্য রোগ যেমন— নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। এইচআইভি সংক্রমণের পরের ধাপকেই এইডস বলা হয়। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮১ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭ কোটি ৮ লাখ মানুষ মরণব্যাধি এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩ কোটি ৯০ লাখ আক্রান্ত রোগী মারা যায়।

আল্লাহ মানুষকে রোগ-ব্যাধি দিয়ে থাকেন। কোনো কোনো রোগ মানুষের পাপ তথা সীমা লঙ্ঘনের কারণেও হয়ে থাকে, যা মানুষের জন্য অভিশাপ। এইডসের মতো মরণব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে এবং জাতিকে মুক্ত রাখতে ইসলামি নির্দেশনা মেনে চলার বিকল্প নেই। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা

যারা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে, তুলনামূলকভাবে তাদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে ৫০ ভাগ এইডস রোগীর বয়স ১৫-২৪ বছরের মধ্যে। সুতরাং প্রত্যেক বাবা-মার উচিত তার সন্তান কোথায় যায়, কী করছে তা দেখবেন। ১৫ বছর পর্যন্ত সন্তানরা সাধারণত বাবা-মায়ের সঙ্গেই বেশি থাকে। তাই তাদের ধর্মীয় জীবনযাপনের প্রতি জোর দেওয়া বাবা-মায়ের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে মোমিনরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতারা। (সুরা তাহরিম: ৬)। যেহেতু পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে, তরুণ-তরুণীরা এইডস ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত। তাই প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত তাদের সন্তানকে এইডস বিষয়ে সচেতন করে তোলা। তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া এবং তারা যেন কোনো অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখা।

জেনা-ব্যভিচার না করা 

জেনা-ব্যভিচার বা বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক স্থাপন ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা জেনার কাছেও যেও না। কেননা এটি অত্যন্ত অশ্লীল ও মন্দ পথ।’ (সুরা ইসরা : ৩২)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী স্থান (জিহ্বা) আর দুই ঊরুর মধ্যবর্তী স্থানের (যৌনাঙ্গের) দায়িত্ব নেবে, আমি তার জান্নাতের দায়িত্ব নেব। (বোখারি : ৮/১০০)। অবাধ যৌনাচার এইডস রোগ হওয়ার একটি মাধ্যম। তাই আল্লাহর নির্দেশ মেনে অবাধ যৌনাচার থেকে মুক্ত থাকাই কোরআন ও হাদিসের অকাট্য নির্দেশ।

পর্দা মেনে চলা

ইসলামে নারী-পুরুষ সবার জন্য পর্দাকে ফরজ করা হয়েছে। বেপর্দার কারণে অপর নারীর সৌন্দর্য যেন কাউকে জেনার দিকে প্ররোচিত না করে, সে জন্য ইসলাম বেপর্দায় কঠিনভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আল্লাহ বলেন, মোমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারও কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মোমিনরা, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা নুর : ৩০-৩১)।

সমকামিতা বন্ধ করা

ইসলামে সমকামিতা নিষিদ্ধ। কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা কামবশত পুরুষদের কাছে গমন করো স্ত্রীদের ছেড়ে, বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। (সুরা আরাফ : ৮১)। আল্লাহর এ বিধান লঙ্ঘনের দায়ে পূর্ববর্তী (কাওমে লুত) জাতিকে, তাদের জনপদকে উল্টিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। আজ পর্যন্ত সেই মৃত সাগরে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। সমাজ থেকে নারী-পুরুষের অবাধ যৌনাচার, পতিতালয়, বহুগামিতা ও পরকীয়াসহ সব নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করার তাগিদ দিয়েছে ইসলাম।

এছাড়া এইডসমুক্ত দেশ, জাতি ও সমাজ গঠনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পালন করা একান্ত জরুরি।

  • ধর্মীয় ও আদর্শ অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলা। শিক্ষা ক্ষেত্রে সব স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। ওয়াজ মাহফিলে ইসলামিক স্কলাররাও এ বিষয়ে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেন।
  • এইডসের কুফল গণমাধ্যমে তুলে ধরা। বিশেষ করে সর্বজন গ্রহণযোগ্য গণমাধ্যম হিসেবে খ্যাত মসজিদের ইমামদের এইচআইভি/এইডসের ওপর বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে পরিকল্পনামাফিক কাজে লাগানো। এ ক্ষেত্রে মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার ধর্মীয় যাজকরাকেও এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা।
  • সব ধরনের অনৈতিক, অবৈধ ও অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক বর্জন করা। যৌন কৌতূহল জাগে বা যৌনকর্ম সম্পাদনে উত্তেজিত হয়ে ওঠে, এমন কাজ বন্ধ করা। যেমন যৌন আবেদনময়ী অশ্লীল উপন্যাস, নোংরা যৌন পত্রপত্রিকা, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর নগ্নদেহ প্রদর্শনী প্রভৃতি বন্ধ করা।
  • পতিতাপল্লি তথা দেহব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
  • বিবাহে সক্ষম ব্যক্তিদের বিবাহের প্রতি উৎসাহিত করা। নচেৎ সংযম অবলম্বন করা।
  • উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের প্রতি অভিভাবকদের সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা। বয়ঃসন্ধিকালে তাদের ধর্মীয় অনুরাগ ও ধর্মীয় নীতি-আদর্শ মেনে চলার ব্যবস্থা করা।
  • জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে এইচআইভিমুক্ত রক্ত পরীক্ষা করে নেওয়া।
  • অপারেশনের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের আগে জীবাণুমুক্ত করা।
  • দুগ্ধপোষ্য শিশুদের এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করানো থেকে বিরত রাখা।

শেষকথা

পরিশেষে আল্লাহতায়ালা মানুষ সৃষ্টি করে সুস্থ-সুন্দর-সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের জন্য দিয়েছেন গাইড আল কোরআন। এতে রয়েছে বান্দার কল্যাণের পথনির্দেশ আবার অকল্যাণের কথাও রয়েছে। সুতরাং কোরআন অনুযায়ী ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে দুনিয়ার শান্তি এবং আখেরাতের মুক্তি সুনিশ্চিত। এ বিধান মেনে চলার মাঝেই রয়েছে এইডসের মতো মরণব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার উত্তম উপায়। আল্লাহ সমগ্র মানবজাতিকে এইডসমুক্ত রাখুন। আমিন।

সৌজন্যে— দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ