অপরাধ এবং অপরাধের উৎপত্তি, কারণ ও প্রতিকার
- প্রকাশ: ০৭:২৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ অগাস্ট ২০২২
- / ৬৪৫৫ বার পড়া হয়েছে
অপরাধ হচ্ছে এমন আচরণ বা কৃতকর্ম যা সমাজে আপত্তিকর এবং আইন ও রাষ্ট্র কর্তৃক নিষিদ্ধ। অপরাধ সমাজে নিন্দনীয় এবং আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত। এখানে অপরাধ, অপরাধের কারণ প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
অপরাধ কী?
অপরাধ হলো কোনো ব্যক্তি কর্তৃক আইনবিরুদ্ধ কাজ। দেশ বা অঞ্চলের শান্তিণ্ড শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রণীত আইনের পরিপন্থী কার্যকলাপই অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। ‘অপরাধ’ শব্দের প্রতিশব্দ হলো ‘কসুর’। ‘অপরাধ’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ— Crime, Misdemeanor, Felony।
সাধারণ ধারণা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি, অন্য কোনো ব্যক্তি বা সমাজের সমস্যা সৃষ্টিকল্পে যে সকল কাজ করেন তাই অপরাধ। অপরাধ হিসেবে কোন ব্যক্তিকে খুন, জখম, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড , ধর্ষণ, জালিয়াতি, অর্থপাচার ইত্যাদি রয়েছে যা পৃথিবীর সকল সভ্য দেশেই স্বীকৃত থাকায় দণ্ড নীয়। এছাড়াও, মদ্যপান, কোকেন, হেরোইন, গাজা সেবন, নিষিদ্ধ প্রাণীর মাংস খাওয়াসহ সমাজের বিরুদ্ধ কার্যাবলী সম্পাদন করা অপরাধের আওতাভূক্ত।
অপরাধের উৎপত্তি
অপরাধের ইংরেজি প্রতিশব্দ Crime (ক্রাইম) যা ল্যাটিন ভাষায় উদ্ভূত সার্নো থেকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে “আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি দণ্ড াজ্ঞা দেবো”।
কিছু ধর্মে পাপ কার্য্যে অংশগ্রহণকে অপরাধরূপে দেখা হয়। আদম এবং ইভের শয়তানের প্ররোচনায় গন্ধর্বজাতীয় নিষিদ্ধ ফল গ্রহণকে প্রকৃত পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। দল বা রাষ্ট্রীয় অপরাধ হিসেবে যুদ্ধ অথবা সংঘর্ষ হয়ে থাকে। আধুনিক সভ্যতার ঊষালগ্নে আইনের কতকগুলো ধারা প্রণীত হয়েছে।
বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী রিচার্ড কুইনি সমাজ এবং অপরাধের মধ্যে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অপরাধ হচ্ছে সামাজিকতার দৃশ্যমান প্রতিফলন’। এ কথার মাধ্যমে তিনি মূলত ব্যক্তির অপরাধে সম্পৃক্ততার প্রেক্ষাপট এবং সামাজিক আদর্শ, ন্যায়ণ্ড নিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের উপলদ্ধিবোধ জাগ্রতকরণ— উভয় দিকই বিবেচনা করতে বলেছেন।
অপরাধের কারণসমূহ
আমরা জানি, কেউ অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। সমাজই তাকে অপরাধী করে গড়ে তোলে। তবে কোনো
মানুষ কেনো অপরাধী হয়ে উঠে সে সম্পর্কে মনীষীরা নানা ব্যাখ্যা, মতামত এবং তত্ত্ব প্রদান করেছেন।
অপরাধের কারণ সম্পর্কে রয়েছে বিভিন্ন তাত্ত্বিক মতবাদ। এছাড়া রয়েছে কিছু সাধারণ কারণ যা আমরা সকলেই বুঝতে পারি।
অপরাধের কারণ মতবাদ
লমব্রোসো’র জৈবিক মতবাদ
অপরাধ বিজ্ঞানী লমব্রোসো মনে করেন ত্রুটিপূর্ণ বা অস্বাভাবিক শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষ অপরাধ প্রবণ হয়। তাঁর মতে, শারীরিক গড়নে ত্রুটি বা অস্বাভাবিকতা অপরাধের অন্যতম কারণ। অপরাধীদের শারীরিক গঠন পর্যালোচনা করে লমব্রোসো বলেছেন, মুখমণ্ড ল, চোয়াল, চোখ, কান, নাক, ঠোঁট, বাহু, থুতনি কিংবা দাঁতের গড়নসহ পাঁচ বা ততোধিক দৈহিক ত্রুটি থাকলে মানুষ অপরাধী হয়ে উঠে। তবে সমাজবিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীদের অনেকে লমব্রোসোর এ মতবাদের সমালোচনা করেছেন।
ফ্রয়েডের মনস্তাত্ত্বিক মতবাদ
প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড (Sigmund Freud) অপরাধের কারণ বিশেস্নষণে মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, মানুষ বাঁচার তাগিদে অপরাধে লিপ্ত হয়। অনিবার্য জীবন প্রবৃত্তি (Life instinct) মানুষকে প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে দেয়। আবার মানুষের মরণ প্রবৃত্তি (Death instinct) তাকে ধ্বংসাত্মক ও হিংসাত্মক কাজে উৎসাহ যোগায়। ফ্রয়েডের মতে মানুষ মূলত অদস বা আদি প্রবৃত্তি (Id) অহম (Ego) এবং বিবেক বা অধিসত্তা (Super Ego) দ্বারা পরিচালিত হয়। এ তিনটির মধ্যে আদি প্রবৃত্তি বেশি শক্তিশালী হলে মানুষ ভালোণ্ড মন্দের বিচার না করে নিজের ইচ্ছা ও চাহিদা চরিতার্থ করতে অপরাধ করতে দ্বিধা করে না। অন্যদিকে বিবেক বা অধিসত্তা বেশি শক্তিশালী হলে মানুষ যৌক্তিকতা ও নৈতিকতার চর্চা করে।
মার্কসের অর্থনৈতিক মতবাদ
কার্ল মার্কসের (Karl Marx) মতে, পুঁজিবাদী সমাজে অর্থনৈতিক শোষণের ফলে অপরাধ সংঘটিত হয়। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা, শোষণ, বঞ্চনা মানুষকে অপরাধী হতে বাধ্য করে। আবার অধিক মুনাফার লোভে পুঁজিপতিরা করফাঁকি, প্রতারণা, বঞ্চনার মত অপরাধ করে থাকে। ফলে পুঁজিবাদী সমাজে মালিকণ্ড শ্রমিক উভয় শ্রেণি অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠে।
অপরাধের সমাজতাত্ত্বিক মতবাদ
সমাজবিজ্ঞানী টার্ডের (Tarde) মতে, অনুকরণ প্রবণতাই অপরাধের মূল কারণ। পূর্বসূরি, খেলার সাথী অর্থাৎ গোষ্ঠী সদস্যদের আচরণ থেকেই অপরাধ অন্যদের মধ্যে সংক্রমিত হয়। গিলিন ও গিলিন বলেছেন, পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া ব্যতীত কারো পড়্গে অপরাধী হয়ে উঠা খুব সহজ নয়। সমাজবিজ্ঞানী মার্টন এর মতে, প্রতিটি সমাজে কিছু স্বীকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এগুলো অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা না থাকলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
অপরাধের অন্যান্য কারণ
উপর্যুক্ত তাত্ত্বিক কারণগুলো ছাড়াও আরো অনেক কারণে মানুষ অপরাধমূলক কাজ বা আচরণ করতে পারে।
ভৌগোলিক পরিবেশ
সমাজ জীবনে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মরু এবং গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের মানুষ বদমেজাজি এবং নিষ্ঠুর হয়ে থাকে। গহীন অরণ্য, পাহাড়ণ্ড পর্বত ইত্যাদি দুর্গম এলাকা অপরাধের স্বর্গরাজ্য। কেননাএখানে কার্যকরভাবে প্রশাসনিক তৎপরতা চালানো সম্ভব নয়। আবার চরাঞ্চলে দস্যুতা, দাঙ্গা, রক্তপাত নিত্যদিনের ঘটনা। সুতরাং ভৌগোলিক প্রভাবে অপরাধপ্রবণতার হ্রাসণ্ড বৃদ্ধি ঘটে।
পারিবারিক কারণ
পিতাণ্ড মাতার মধ্যে কলহ, অশান্তি, দূরত্ব, পৃথক আবাসন, তালাক ইত্যাদি সংশিস্নষ্ট পরিবারের ছেলেণ্ড মেয়েদেরকে অপরাধী করে তুলতে পারে। ¯্নহেণ্ড ভালোবাসার অভাব, নিরাপত্তাহীনতা, নিঃসঙ্গতা, হতাশা কিংবা পিতাণ্ড মাতার উগ্রতাণ্ড উশৃঙ্খলতা সন্তানদেরকে অপরাধ জগতে ঠেলে দেয়। পিতাণ্ড মাতা, বড়ভাই বা নিকটাত¥ীয়দের কেউ অপরাধ জগতের সাথে যুক্ত থাকলে তাদের প্রভাবে অনেকে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে।
ত্রুটিপূর্ণ সামাজিকীকরণ
পরিবার ছাড়াও স্কুলণ্ড কলেজ, খেলার মাঠ তথা বন্ধুবান্ধবের প্রভাবে অনেক সময় মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ে। অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে অপরাধে লিপ্ত হয়। কোনো শান্ত প্রকৃতির ছেলে যদি উচ্ছৃঙ্খল বন্ধুণ্ড বান্ধবের সাথে মেলাণ্ড মেশা করে তবে তার নৈতিকতায় পরিবর্তন আসতে বাধ্য। অপরাধপ্রবণ পরিবেশ এবং ত্রুটিপূর্ণ সামাজিকীকরণের ফলেই অনেকে অপরাধী হয়ে উঠে।
সুস্থ বিনোদনের অভাব
মানুষ খেলাধুলা এবং হাসিণ্ড আনন্দে থাকলে তাদের মন¯ত্মাত্ত্বিক বিকাশ সুন্দর ও স্বাভাবিক গতিতে সম্পন্ন হয়। নানা কারণে খেলার মাঠসহ সুস্থ বিনোদন ক্ষেত্রকে ক্রমশ দুর্লভ করে তুলছে। অন্যদিকে টেলিভিশন, সিনেমা, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ফেসবুক, গেমস ছেলেণ্ড মেয়েদেরকে খেলার মাঠ বিমুখ করে তুলছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের অশস্নীল, সহিংস ও কুরুচিপূর্ণ বিনোদন তরুণদেরকে যৌনতা, ভায়োলেন্স, হিংস্রতাসহ নানা অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
গণমাধ্যমের প্রভাব
পাশ্চাত্য সমাজে কিশোর অপরাধীদের একটি বড়ো অংশ টিভি-সিনেমার ভায়োলেন্স দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অপরাধে লিপ্ত হয়। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজী, মাস্তানি ইত্যাদি খবর গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করার ফলে অন্যরা এর থেকে উৎসাহিত হয়। সিনেমায় অশস্নীল দৃশ্য দেখে অনেকে যৌন অপরাধ, খুন-খারাবি দেখে সন্ত্রাস করতে উদ্বুদ্ধ হয়।
খারাবি দেখে সন্ত্রাস করতে উদ্বুদ্ধ হয়।
বিচারালয় ও জেলখানার ত্রুটি
অপরাধীদের শাস্তিবিধান ও অবস্থানের বাহন হচ্ছে বিচারালয় ও জেলখানা। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ বিচার ব্যবস্থা, আইনের মারপ্যাচ, দুর্নীতি ইত্যাদি কারণে অনেক সময় অপরাধী যেমন শাস্তি থেকে রেহাই পায়, আবার নিরপরাধ ব্যক্তির শাস্তি প্রাপ্তির মত ঘটনাও ঘটে। প্রমাণ ও যথাযথ কার্যক্রমের অভাবে কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা জামিনে মুক্তি পায় এবং অপরাধ কার্যক্রমে দ্বিগুণ উৎসাহে সম্পৃক্ত হয়। জেলখানায় আত্মশুদ্ধির পরিবর্তে
রাজনৈতিক ও সরকারি প্রশ্রয়
চাঁদাবাজী, মাস্তানি, ছিনতাইসহ যে কোনা অপরাধের সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রণ্ড ছায়ায় তাদের কুণ্ড কর্ম সম্পন্ন করে। চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, অপহরণ, মুক্তিপণ ইত্যাদি বিষয়ের সাথে যুক্ত প্রায় সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও এর অঙ্গসংগঠনের সদস্য। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজ বা অন্য কোনো অপরাধীদের উত্থানে রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা এক অনিবার্য বাস্তবতা।
অপরাধ প্রতিকারের উপায়সমূহ
অপরাধ প্রবণতা প্রতিকারের ক্ষেত্র প্রধান কয়েকটি উপায় হচ্ছে:
- প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
- সংশোধনমূলক ব্যবস্থা
- শাস্তিমূলক ব্যবস্থা:
- সচেতনতামূলক ব্যবস্থা।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রধানত কিশোর অপরাধের ক্ষেত্রে অধিকতর কার্যকর। এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্তকার্যক্রমগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।
- পরিকল্পিত সুখী পরিবার গঠন। পরিবারকেই বিনোদন, আস্থা ও নিরাপত্তার মূল কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
- পারিবারিক অশান্তি, দ্বন্দ্বণ্ড কলহ পরিহার করা, একসাথে আনন্দণ্ড বেদনা ভাগাভাগি করা, বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে সন্তানাদিসহ পরিবারকে সময় দেয়া।
- শিশুণ্ড কিশোরদের লালনণ্ড পালন এবং মননশীলতা বিকাশে সমাজে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা।
- সুস্থ ও গঠনমূলক চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আনন্দময় পরিবেশে উৎপাদনমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করা।
- আইনণ্ড শৃঙ্খলা ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা।
- সবাইকে মানবিক ও জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা।
- আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
সংশোধনমূলক ব্যবস্থা
অপরাধ প্রতিকারের উপায় হিসেবে কিশোর অপরাধীদের সংশোধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিশোর অপরাধ সংশোধনে নি¤্নােক্ত ব্যবস্থাসমূহ অধিকতর কার্যকর বলে মনীষীরা মনে করেন।
- কিশোর আদালত: কিশোর অপরাধীর প্রতি আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিশোর আদালত পরিচালিত হয়। প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে কিশোর অপরাধীকে সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে সাহায্য করা হয়।
- কিশোর হাজত: দাগী অপরাধীদের সংস্পর্শ থেকে মুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে ধৃত কিশোর অপরাধীদেরকে কিশোর হাজতে রাখা হয়। কিশোর হাজতও সংশোধনমুখী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গড়ে তোলা হয়।
- সংশোধনী প্রতিষ্ঠান: কিশোর অপরাধীদের উপার্জনক্ষম ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে সংশোধনী প্রতিষ্ঠান। সংশোধনী বা উন্নয়ন কেন্দ্রে অপরাধী কিশোরদের নিয়মিত শিক্ষা, সামাজিক ও ধর্মীয় শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে সুশৃঙ্খল জীবন যাপনে সক্ষম করে তোলা হয়।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা মূলত বয়স্ক অপরাধীদের জন্য প্রযোজ্য। প্রমাণিত হলে অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে পেনাল কোডের ধারা মোতাবেক শাস্তি নিশ্চিত করাই আইনের শাসন। এতে অপরাধী নিজে যেমন নিয়ন্ত্রিত হয়, তেমনি সমাজের সাধারণ মানুষও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে। আমাদের দেশ বা সমাজে নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দেখা যায়। যেমন—
- সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাবাস
- নির্দিষ্ট মেয়াদে কারাদণ্ড,
- জরিমানা বা অর্থদণ্ড,
- পেশাগত শাস্তি
- সামাজিক শাস্তি
সচেতনতামূলক ব্যবস্থা
অপরাধ প্রতিকারের জন্য সচেতনতামূলক ব্যবস্থা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। যেমন: সামাজিক আন্দোলন, অপরাধীদের আশ্রয়ণ্ড প্রশ্রয়দান থেকে বিরত থাকা, দুর্নীতি রোধ এবং আইনের শাসন নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে অপরাধের বিরুদ্ধে সচেনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
শেষকথা
সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, অপরাধমুক্ত কোনো সমাজ নেই। সব সময় সব সমাজে কম-বেশি অপরাধ ছিল, থাকবে। যে সমাজ যতখানি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে সমাজ ততখানি শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।