০১:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

সিকল সেল রক্তাল্পতা এবং এক যুগান্তকারী চিকিৎসার সূচনা

প্রফেসর ড. রাশিদুল হক
  • প্রকাশ: ০১:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জানুয়ারি ২০২৪
  • / ৭৫৯ বার পড়া হয়েছে


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হিমোগ্লোবিন-ব্যাধি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের ওপর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রায় তিন লাখ শিশু প্রতি বছর হিমোগ্লোবিনজনিত রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যার প্রায় ৮০% জন্মগ্রহণ করে উন্নয়নশীল দেশে। সিকল সেল অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা এরকম একটি হিমোগ্লোবিনজনিত রক্তের ব্যাধি। ২০১৫ সালের হিসাবে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের সিকল সেল রোগ রয়েছে, যখন অতিরিক্ত সাড়ে চার কোটি মানুষের সিকল সেল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং তারা এই রোগের বাহক হিসেবে চিহ্নিত। এই রোগটির প্রায় ৪০ শতাংশ দেখা যায় সাব-সাহারান আফ্রিকায়। এছাড়া, এটি ভারত, দক্ষিণ ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার কিছু অংশেও কম মাত্রায় দেখা যায়। তবে, আন্তর্জাতিক অভিবাসনের উচ্চহারের কারণে, হিমোগ্লোবিনজনিত রোগ (থ্যালাসেমিয়া ও সিকল সেল অ্যানিমিয়া) বিশ্বের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সিকল সেল অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি (ডিসেম্বর ৮, ২০২৩) ক্রিসপার (CRISPR)/ক্যাস৯ (Cas9) জিন-সম্পাদনা প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে সিকল সেল রোগ নিরাময়ে “ক্যাসজেভি” (Casgevy) এবং “লিফজেনিয়া” (Lyfgenia)নামক দুই ধরনের ভিন্ন কৌশলগত থেরাপির এই প্রথম অনুমোদন দিলো যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA)। এই অনুমোদন চিকিৎসা ব্যবস্থায় অগ্রগতির প্রতিফলন।

সিকল সেল অ্যানিমিয়া কী?

মানব দেহে, লোহিত রক্তকণিকা (আর.বি.সি.) সাধারণত গোলাকার এবং নমনীয় হয়, তাই তারা রক্তনালিগুলোর মধ্য দিয়ে সহজেই চলাচল করে। সিকল সেল অ্যানিমিয়ায়, কিছু লাল রক্তকণিকা কাস্তে (sickle/সিকল) বা অর্ধচন্দ্রের মতো আকৃতি ধারণ করে, যেগুলো অনমনীয় এবং চটচটে হয়ে যায়, যা রক্ত প্রবাহকে বাধা দিতে পারে। যখন কাস্তে আকৃতির লাল রক্ত কণিকা বুক, পেট এবং দেহের জয়েন্টগুলোতে ক্ষুদ্র রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহকে বাধা দেয়, তখন চরম ব্যথা অনুভূত হয় (অনেকের বর্ণনায় যা প্রসব ব্যথা থেকেও বেশি), যা সিকল সেল অ্যানিমিয়ার একটি প্রধান লক্ষণ। এছাড়া, রক্ত ​​প্রবাহ ধীর বা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় হাত ও পা ফুলে যেতে পারে, স্ট্রোক হতে পারে এবং কাস্তে-কোষগুলো প্লীহাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। সিকল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত নিউমোনিয়ার মতো সম্ভাব্য প্রাণঘাতী সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে টিকা এবং অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া, সিকল সেল কোষগুলো চোখে সরবরাহকারী রক্তনালিগুলোতে আটকে যেতে পারে, তাই দৃষ্টির ঘাটতিও দেখা দিতে পারে। এই রোগটি অন্যান্য নামেও পরিচিত-যেমন হিমোগ্লোবিন এস ডিজিজ (Hemoglobin S disease) বা  সিকল সেল ডিজঅর্ডার (sickle cell disorders)।

সিকল সেল অ্যানিমিয়া হলো একটি জিনগত রোগ, এটি হিমোগ্লোবিনের একটি রোগ। হিমোগ্লোবিন (Hb) হলো লৌহ (Fe2+)-ধারণকারী অক্সিজেন-পরিবাহী একটি মেটালোপ্রোটিন, যা প্রায় সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীর এরিথ্রোসাইট বা লোহিত রক্তকণিকায় উপস্থিত থাকে। একজন সুস্থ মানুষের প্রতি ১০০ মিলি (mL) রক্তে ১২ থেকে ১৮ গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকে। প্রতি গ্রাম হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন-বহনের ক্ষমতা রয়েছে ১.৩৪ মিলি অক্সিজেন। অক্সিজেন ছাড়া, হিমোগ্লোবিন অন্যান্য গ্যাসও পরিবহন করে, যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, সালফার মনোক্সাইড এবং সালফাইড। একটি হিমোগ্লোবিন অণু চারটি গ্লোবিন-পলিপেপ্টাইড চেইন নিয়ে গঠিত, প্রতিটিতে ১৪১টি অ্যামিনো অ্যাসিড নিয়ে গঠিত দুটি আলফা (α) এবং ১৪৬টি অ্যামিনো অ্যাসিডের দুটি বিটা (β) চেইন রয়েছে। সম্পূর্ণ হিমোগ্লোবিন অণুতে, চারটি সাবইউনিট ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে একটি টেট্রামার (চার পেপ্টাইড-চেইনের সমাহার) গঠন করে। প্রতিটি গ্লোবিন চেইন “হিম (heme/haem)” উপাদানের সাথে যুক্ত। হিম তৈরি হয় অস্থিমজ্জায় ও যকৃতে, এর প্রধান কাজ অক্সিজেন পরিবহন করা। ১৬নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত দুইটি জিন-Hba১ ও Hba২ দ্বারা তৈরি হয় আলফা চেইন এবং ১১নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত Hbb জিন দ্বারা কোডপ্রাপ্ত হয় বিটা-চেইন।

সিকল সেল রোগ দেখা দেয় যখন একটি শিশু বিটা-গ্লোবিন জিনের (Hbb) দুটি অস্বাভাবিক/ত্রুটিপূর্ণ কপি (প্রতিটি পিতামাতার থেকে একটি করে) উত্তরাধিকার সূত্রে ধারণ করে। এটি একটি অটোজোমাল রিসিসিভ ডিজিজ (autosomal recessive disease)। দুটি ত্রুটিপূর্ণ কপির পরিবর্তে, একটি অস্বাভাবিক অনুলিপি নিয়ে একজন ব্যক্তির সাধারণত উপসর্গ থাকে না, তবে তার মধ্যে সিকল সেল বৈশিষ্ট্য রয়ে যায় এবং সে একজন ত্রুটিপূর্ণ-জিনের বাহক (carrier) হিসেবে চিহ্নিত (যাদের জিনতত্ত্বের পরিভাষায় বলা হয় “হেটেরোজাইগোট”)। বাহকদের মৃদু রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে; তবে এদের মধ্যে ম্যালেরিয়াসহ কিছু রোগের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা জন্মায়। তাই পৃথিবীর বেশ কয়েকটি ম্যালেরিয়া অধ্যুষিত অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে এই ব্যাধির প্রাদুর্ভাব বেশি (যেমন আফ্রিকা)। 

কীভাবে সিকল সেল বৈশিষ্ট্য ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ্যতা গড়ে তুলে

আমরা জানি, ম্যালেরিয়া পরজীবী (Plasmodium falciparum) তার জীবনচক্রের ক্রমবিকাশে মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষণকালীন/মধ্যবর্তী পোষক হিসেবে বেছে নেয়। (মশার কামড়ে) এই পরজীবীর স্পোরোজোইট (sporozoites) দশা মশার লালাগ্রন্থি থেকে মানুষের রক্তস্রোতে প্রবেশ করে এবং লোহিত রক্তকণিকাগুলোকে সংক্রমিত করার আগে স্পোরোজোইটগুলো যকৃতে বিকাশলাভ করে। পরবর্তীতে আরও বিকাশমান দশা (মেরোজোইট ও ট্রপোজোইট) মানুষের লোহিত রক্তকণিকাগুলোকে সংক্রমিত করে এবং হিমোগ্লোবিন (HbA)বিপাকসহ সুস্থ আরবিসি-গুলোকে ধ্বংস করে। ফলে সৃষ্টি হয় ম্যালেরিয়া রোগ। ম্যালেরিয়া জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট উচ্চ মৃত্যুহার এবং অসুস্থতা মানুষের জিনোমের উপর যুগ যুগ ধরে একটি নির্বাচনী চাপ সৃষ্টি করেছে। দেখা গেছে, সিকল সেল বৈশিষ্ট্য, থ্যালাসেমিয়া বৈশিষ্ট্য এবং গ্লুকোজ-৬-ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেজ (G6PD) এনজাইমের ঘাটতিসহ বেশ কিছু জেনেটিক কারণ প্লাজমোডিয়ামের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ্যতা গড়ে তুলেছে। ম্যালেরিয়া জীবাণু বহনকারী মশা যদি সিকেল সেল বৈশিষ্ট্যযুক্ত কাউকে কামড়ায়, তবে সেই ব্যক্তির অন্য মানুষের মতো অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ সিকেল সেল বৈশিষ্ট্যযুক্ত (বাহক/AS) লোকেদের লাল রক্তকণিকায় একটি ত্রুটিপূর্ণ বিটা-গ্লোবিন অ্যালিল রয়েছে এবং এদের আরবিসি কাঠামোগতভাবে কিছুটা ভিন্ন হওয়ায় ম্যালেরিয়া জীবাণুর বৃদ্ধি কঠিন হয়ে যায়।

হিমোগ্লোবিনের প্রকারভেদ

হিমোগ্লোবিন অনেক প্রকার হতে পারে। সাধারণত, মানুষের তিন ধরনের হিমোগ্লোবিন থাকে: হিমোগ্লোবিন এ (HbA), যা গ্লোবিন প্রোটিনের দুটি আলফা- এবং দুটি বিটা-চেইন (α2β2) নিয়ে গঠিত; হিমোগ্লোবিন এ২ (HbA2), যা দুটি আলফা- এবং দুটি ডেল্টা-চেইন (α2δ2) নিয়ে গঠিত; এবং হিমোগ্লোবিন এফ (HbF), যা দুটি আলফা- এবং দুটি গামা-শৃঙ্খল (α2γ2) নিয়ে গঠিত। এই তিন প্রকারের মধ্যে, HbF (ভ্রূণীয় হিমোগ্লোবিন) প্রায় ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে প্রাধান্য পায়, যা BCLIIA রিপ্রেসর প্রোটিন দ্বারা পরবর্তীতে HbF (γ-গ্লোবিন) থেকে প্রাপ্তবয়স্ক HbA (β-গ্লোবিন) প্রাপ্তবয়স্ক ফর্মে রূপান্তরিত হয়। হিমোগ্লোবিনের আরো একটি রূপ HbE দেখা যায় ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে। HbE হলো বিটা-গ্লোবিন জিনের ২৬নং কোডনে একক মিউটেশনের কারণে সৃষ্ট একটি বৈকল্পিক। জিন মিউটেশনের ফলে, গ্লুটামিক অ্যাসিড কোডন (GAG)টি রূপান্তরিত হয় লাইসিন (AAG) কোডনে। সিকল সেল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে, হিমোগ্লোবিন এ-তে থাকা বিটা-গ্লোবিনের উভয় চেইন প্রতিস্থাপিত হয় ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন-এস (HbS) ইউনিট দ্বারা। বিটা-গ্লোবিন জিনের একটি একক নিউক্লিওটাইড মিউটেশন  (GAG কোডন থেকে  GTG-তে পরিবর্তন)-এর কারণে সৃষ্টি হয় HbS, যা সিকল সেল রোগটির জন্য দায়ী। মিউটেশনের ফলে বিটা-গ্লোবিন প্রোটিনের ষষ্ঠ অ্যামিনো অ্যাসিড, অর্থাৎ গ্লুটামেট/গ্লুটামিক অ্যাসিড প্রতিস্থাপিত হয় ভ্যালিন দ্বারা। এই মিউটেশন ধারণকারী হিমোগ্লোবিনকে বলা হয় HbS। ভ্যালিন হাইড্রোফোবিক তাই HbS-এর একটি অংশ হয়ে যায় আঠালো। প্রসঙ্গতঃ গ্লুটামিক অ্যাসিড, লাইসিন এবং ভ্যালিন এসবই হচ্ছে অ্যামিনো অ্যাসিড, যা তাদের নিজস্ব জেনেটিক কোড দ্বারা সঙ্কেতপ্রাপ্ত। পূর্বেই বলেছি, একটি শিশুর সিকল সেল রোগে প্রভাবিত হওয়ার জন্য, মা এবং বাবা উভয়কেই ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন (HbS) জিনের একটি কপি বহন করতে হয় (প্রথম ছবিটি দেখুন)। 

স্বাভাবিকভাবে, লোহিত রক্ত কণিকা প্রায় ১২০ দিন বেঁচে থাকে এবং সেগুলো প্রাকৃতিকভাবেই অস্থিমজ্জায় আবারো তৈরি হয়। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন (HbS)সহ কাস্তে-কোষগুলো সাধারণত ১০ থেকে ২০ দিনের মধ্যে মারা যায়, যার ফলে রক্তে লোহিত রক্তকণিকার অভাব (অ্যানিমিয়া) দেখা দেয়। পর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা ছাড়া, শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না এবং দেহ ভীষণ ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে, ঘন ঘন রক্ত বা আরবিসি ট্রান্সফিউজন-ই হচ্ছে প্রতিরোধমূলক একটি থেরাপি যা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

থ্যালাসেমিয়া এবং সিকল সেল রোগের পার্থক্য কী?

থ্যালাসেমিয়া এবং সিকল সেল অ্যানিমিয়া উভয়ই একটি বংশগত লোহিত রক্তকণিকার ব্যাধি, তারা উভয়ই লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন অণুকে প্রভাবিত করে। কিন্তু রোগ দুটি এক নয়। ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি, হিমোগ্লোবিন (HbA)-র দুটি আলফা এবং দুটি বিটা-গ্লোবিন পলিপেপ্টাইড চেইন রয়েছে, যেগুলো সংশ্লেষিত হয় তাদের নিজস্ব জিন (ভিন্ন ক্রোমোজোমে অবস্থিত) থেকে। এই জিনগুলোতে মিউটেশনজনিত ত্রুটির কারণে সৃষ্টি হয় থ্যালাসেমিয়া এবং সিকল সেল অ্যানিমিয়া। যেমন, থ্যালাসেমিয়া-রোগীদের আলফা- বা বিটা-গ্লোবিন শৃঙ্খলে ত্রুটি থাকে, যেখানে সিকল সেল-আক্রান্ত ব্যক্তিদের ত্রুটি থাকে শুধুমাত্র বিটা-গ্লোবিন শৃঙ্খলে, যা হিমোগ্লোবিন অণুর কাঠামোকে পরিবর্তিন করে। ত্রুটির কারণে উভয় ক্ষেত্রেই তৈরি হয় অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন ও লোহিত রক্তকণিকা, দেখা দেয় রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা। ১৬ নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত দুইটি জিন-Hba১ ও Hba২-দ্বারা নির্দেশিত হয়ে তৈরি হয় আলফা চেইন, এদের ত্রুটির কারণে দেখা দেয় আলফা-থ্যালাসেমিয়া। পক্ষান্তরে, ১১নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত Hbb-জিনের মিউটেশনজনিত ত্রুটির কারণে সৃষ্টি হয় বিটা-থ্যালাসেমিয়া। থ্যালাসেমিয়া রোগে আল্ফ়া- অথবা বিটা-গ্লোবিন চেইনের সংশ্লেষণ কমে যায় বা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকে। ফলে হিমোগ্লোবিনের কাঠামোয় দেখা দেয় ভারসাম্যহীনতা। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সিকেল সেল রোগের আরেকটি রূপ হচ্ছে সিকল সেল/বিটা-থ্যালাসেমিয়া (HbS/beta-Th), অর্থাৎ উভয় রোগের সমন্বিত একটি রূপ, যেখানে অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের পাশাপাশি বিটা গ্লোবিন চেইনের সংশ্লেষণ হ্রাস পায়। এক্ষেত্রে, সিকল সেল/বিটা-থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা ধারণ করে একটি অস্বাভাবিক বিটা চেইন এবং একটি ত্রুটিপূর্ণ বিটা-গ্লোবিন জিন। 

বিশ্বের অনেক অঞ্চলে (যেমন দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, ভূমধ্যমহাসাগরীয় দেশ এবং আফ্রিকা) আল্ফ়া-থ্যালাসেমিয়ার থেকে বিটা-থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ বেশি। ভারতে প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ হাজার শিশু বিটা-থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্ম নেয় এবং সেখানে প্রায় চার কোটি মানুষ বিটা-থ্যালাসেমিয়ার বাহক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে (জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন রিপোর্ট, ভারত, ২০১৬)। বাংলাদেশে এ দুটি রোগের প্রকোপ নিয়ে সম্ভবত কোনো জাতীয় রিপোর্ট নেই। তবে সীমিত কিছু গবেষণা সমীক্ষা থেকে বাংলাদেশেও বিটা-থ্যালাসেমিয়ার উপস্থিতির কথা জানা গিয়েছে। 

জিন-প্রযুক্তিতে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা

১৯৭৪ সালে, প্রফেসর হার্বার্ড বয়ার (ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র) ও স্ট্যানলি কোহেন (স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র) যৌথভাবে এক যুগান্তকারী জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা প্রথম মানব-ইন্সুলিন উৎপাদন করে জৈবপ্রযুক্তিতে একটি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। সে সময় থেকে আজ অবধি, জিন সম্পাদনা বা সর্বোপরি জিন-প্রযুক্তির অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে কোষের ভেতরে থেকে জিনোমের মধ্যেই জিনের কাংক্ষিত পরিবর্তন (যেমন জিন বা কাঙ্খিত নিউক্লিওটাইড সংযুক্ত করা অথবা কেটে বাদ দেয়া) ঘটানো সম্ভব। অধুনা, জিন বা জিনোম সম্পাদনায় যেকটি পদ্ধতি রয়েছে, তার মধ্যে ক্রিসপার/ক্যাস৯ অত্যন্ত জনপ্রিয়, যা প্রয়োগ করে রোগীর (অস্থিমজ্জার) হেমাটোপয়েটিক স্টেম কোষগুলোতে সিকেল সেল মিউটেশন (অর্থাৎ গ্লোবিন জিনের ত্রুটি) মেরামত করা কার্যকর এবং নিরাপদ হয়েছে। ক্রিসপার জিন প্রযুক্তি বিকাশের জন্য ২০২০ সালে রসায়নে নোবেল বিজয়ী হয়েছেন দুই নারী গবেষক: ফরাসী বিজ্ঞানী এমান‍্যুয়েল শারপঁসিয়ে এবং মার্কিন বিজ্ঞানী জেনিফার এ. দৌডনা। 

প্রকৃতিতে, ব্যাক্টেরিয়া কীভাবে ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে, সেটা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই তাঁরা মূলত ক্রিস্পার-ক্যাস ব্যবস্থার সন্ধান পান। বিজ্ঞানীরা দেখেন, বেশিরভাগ ব্যাক্টেরিয়ার একধরনের অভিযোজনযোগ্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, যার মাধ্যমে ব্যাক্টেরিয়া ভাইরাসের (ব্যাক্টেরিওফাজ) ডিএনএ শনাক্ত করে ও কেটে ফেলে। এই সিস্টেমের নামই হলো CRISPR (Clustered regularly interspaced short palindromic repeat- এটি ডিএনএ-তেই ছড়িয়ে থাকা ছোট-ছোট পুনরাবৃত্তিমূলক ক্রম), এবং ক্যাস৯ জিনটি থাকে ডিএনএ-তে ক্রিসপার অংশের পাশেই। ক্যাস৯ হচ্ছে একটি এনজাইম (এন্ডোনিউক্লিয়েজ), যা ভাইরাসের ডিএনএ-কে কেটে ফেলে। এমনকি, কেটে ফেলা ডিএনএ-র একটি অংশ ব্যাক্টেরিয়া সংরক্ষিত রাখে নিজের জিনোমের ক্রিসপার অংশে, দুটি পুনরাবৃত্তিমূলক ক্রমের মাঝে। প্রয়োজনবোধে কেটে-ফেলা-সংরক্ষিত (ভাইরাসের) ডিএনএ থেকে তৈরি হয় একটি “ক্রিসপার আরএনএ” (crRNA), যা ক্যাস৯-এর সাথে যুক্ত হয়ে পাহারাদার বা গাইড-আরএনএ (guide-RNA) হিসেবে পরবর্তী আক্রমণকারীর (ভাইরাসের) অপেক্ষায় থাকে। crRNA তার অনুক্রমের পরিপূরক হিসেবে DNA টার্গেটকে চিনতে পারে; শনাক্তকারী এই  অংশটি স্পেসার নামে পরিচিত (ছবি দেখুন)। Cas9-এর সফলতার জন্য আরও একটি  নির্দিষ্ট “প্রোটোস্পেসার সংলগ্ন মোটিফ (PAM)” প্রয়োজন, যা সাধারণত -NGG হিসেবে স্বীকৃত এবং সেটি জিনোমিক ডিএনএ-তে টার্গেট সিকোয়েন্সের পাশে অবস্থিত। প্যাম সিকোয়েন্সের অনুপস্থিতে ক্যাস৯ তার লক্ষ্যবস্তুকে কাটতে পারে না।

ক্রিসপার/ক্যাস৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা কোষের মধ্যকার ডিএনএ-র কিছু অংশ মুছে ফেলতে বা কিছু বাড়তি অংশ যোগ করতে পারেন। কাটাকাটি প্রক্রিয়ায় ডিএনএ অণুর যেস্থানে ব্রেকগুলো হয়, সেগুলো পূরণ করতে হয় একটি হোমোলোগাস রিকম্বিনেশন (HR) অথবা নন-হোমোলোগাস এন্ড-জইনিং (NHEJ) মেরামত-পদ্ধতির মাধ্যমে মেরামত করা যেতে পারে, যা যথাক্রমে সুনির্দিষ্ট বা অসম্পূর্ণ জিনোম সম্পাদনার দিকে পরিচালিত করে। বেশিরভাগ কোষে, উভয় মেরামতের পথই সক্রিয় থাকে, তবে HR পাথওয়ে সাধারণত একটি সমজাতীয় টেমপ্লেটের অনুপস্থিতিতে NHEJ পদ্ধতির তুলনায় কম দক্ষ (ছবি দেখুন)। ক্রিসপার/ক্যাস৯ প্রযুক্তির সাহায্যে নিখুঁতভাবে ত্রুটিপূর্ণ বিটা-গ্লোবিন জিনসহ যেকোনো জিনের প্রয়োজন অনুযায়ী এক বা একাধিক নিউক্লিওটাইড/নাইট্রোজেন বেইস (যেমন GTG থেকে GAG) পরিবর্তন করা যেতে পারে। ফলস্বরূপ, হিমোগ্লোবিনের আদিরূপ-সহ লোহিত রক্ত কণিকার স্বাভাবিক আকার ফিরে আসে, হিমোগ্লোবিন হয়ে ওঠে ভারসাম্যপূর্ণ । 

যুক্তরাষ্ট্র্রের এফডিএ কর্তৃক ক্রিসপার/ক্যাস৯ প্রয়োগে যে দুটি থেরাপি অনুমোদন পেলো, তারা কৌশলগত ভাবে ভিন্ন: ১. ভারটেক্স (Vertex)/ক্রিসপার থেরাপিউটিক্স (কোম্পানি) নির্মিত “ক্যাসজেভি”-নামক এক যুগান্তকারী চিকিৎসার মাধ্যমে সিকল সেল রোগীদের নিজস্ব রক্তের স্টেম-কোষগুলোতে ভ্রূণীয় হিমোগ্লোবিন (HbF)-এর বিকাশকে প্রাধান্য দেয়া হয়। জিনগত এই কারিগরিতে, ক্রিসপার/ক্যাস৯ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে BCLIIA জিনকে ভেঙে ফেলা বা বাধাগ্রস্ত করা হয় এবং HbA হিমোগ্লোবিনের পরিবর্তে HbF প্রোটিনকেই স্থায়ীভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হিমোগ্লোবিন হিসেবে প্রতিস্থাপিত করা হয়। বলা বাহুল্য, সম্পাদিত স্টেমকোষগুলো প্রতিস্থাপনের আগে রোগীর অস্থিমজ্জায় HbA-ধারণকারী আদি কোষগুলোকে উচ্চ-মাত্রায় কেমোথেরাপি দিয়ে চিরতরে বিনষ্ট করা হয় (myeloablative conditioning)। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, স্বাভাবিকভাবে ভ্রূণীয় হিমোগ্লোবিন (HbF) BCLIIA রিপ্রেসর প্রোটিন দ্বারা রূপান্তরিত হয় HbA-রূপে, যা পূর্ণবয়স্কদের একটি সাধারণ হিমোগ্লোবিন। ২. ব্লুবার্ড বায়ো (bluebird bio) কোম্পানি পরিচালিত “লিফজেনিয়া” (Lyfgenia)নামক ভিন্ন একটি জিন থেরাপি লেন্টিভাইরাস ভেক্টর (Lentiviral vector) ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীর হিমাটোপোয়েটিক (hematopoietic) স্টেমকোষগুলোতে প্রতিস্থাপিত করা হয় HbAT87Q জিন, যা একটি প্রাপ্তবয়স্ক স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন (HbA)-এর সমরূপ। এই কৃত্রিম জিনটিতে, বিটা-গ্লোবিন পেপ্টাইডের ৮৭নং অবস্থানে থ্রিওনিন (T) অপসারিত হয়েছে গ্লুটামিন (Q) অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারা, সেই অর্থে এটি T87Q। এছাড়া, বিটা-গ্লোবিন জিনটির প্রকাশ নিয়ন্ত্রিত হয় মানব বিটা-গ্লোবিন জিন প্রোমোটর (promoter) এবং β-গ্লোবিন লোকাস নিয়ন্ত্রণ অঞ্চল (LCR) দ্বারা। এই জিনটি (β-globinT87Q) স্থায়ীভাবে একজন ব্যক্তির জিনোমে প্রতিস্থাপিত হয়। এক্ষেত্রেও, মিউট্যান্ট-β-গ্লোবিন জিনধারী HbS-সহ আদি স্টেমকোষগুলোকে কেমোথেরাপি দিয়ে ধ্বংস করা হয়, রোগী ফিরে পায় স্বাভাবিক ধরনের হিমোগ্লোবিন (HbA)। 

উপরিল্লিখিত যেকোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে একবার জিন বা জিনোমিক ডিএনএ সম্পাদিত হলে, সেটি হয় অপরিবর্তনশীল। এই অভিনব চিকিৎসা রোগীদের জীবনে শুধুমাত্র একবারই নিতে হয়। ইতোমধ্যে, বাণিজ্যিকভাবে এই ক্রিসপার/ক্যাস৯ পদ্ধতির অনেক প্রসারণ ঘটেছে। সিকল সেল রোগের বাইরেও এই নিখুঁত প্রযুক্তির ব্যবহার ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, টাইপ ১ ডায়াবেটিস এবং স্নায়ুঅবক্ষয়জনিত অনেক রোগের চিকিৎসার দ্বার অচিরেই খুলে দিবে।

শেষকথা

ভারত, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে, HbE হলো সর্বাধিক প্রচলিত হিমোগ্লোবিন রূপ। যেহেতু এদের জনসংখ্যার মধ্যে বিটা-থ্যালাসেমিয়া অ্যালিলের আধিক্য রয়েছে, তাই এসব অঞ্চলে HbE এবং বিটা-থ্যালাসেমিয়া (HbE/বিটা-থ্যালাসেমিয়া)-র একটি সমন্বয় প্রায়শই দেখা যায়। একটি পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিটা-থ্যালাসেমিয়া ও সিকল সেল অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উদ্বেগজনক ভৌগোলিক অবস্থায় রয়েছে।

আরও একটি বিষয় এখানে লক্ষণীয় যে, আফ্রিকা, সমস্ত ভূমধ্যসাগরীয় দেশ, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের যেসব দেশ ম্যালেরিয়া-প্রবণ, সেসব অঞ্চলে হিমোগ্লোবিন-সম্পর্কিত রোগের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ম্যালেরিয়া-প্রবণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত, যদিও এই দেশ থেকে উল্লেখযোগ্যহারে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। দেশব্যাপী রক্তাল্পতার প্রমাণ থাকলেও হিমোগ্লোবিনজনিত-ব্যাধি সে তুলনায় নগন্য। হয়তো পুষ্টিগত (যেমন ডায়েটারি আয়রন, ভিটামিন এ, ফোলেট এবং জিঙ্ক) ঘাটতির কারণেই রক্তাল্পতার উচ্চ প্রবণতা রয়েছে। তবে, ২০১২ সালের  একটি সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, প্রায় ২৮% গ্রামীণ মহিলাদের বিটা-থ্যালাসেমিয়া বা HbE-হিমোগ্লোবিন রয়েছে (Merrill RD et al. Asia Pac J Clin Nutr; 2012)। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলেও দেখা গেছে বিটা-থ্যালাসেমিয়ার প্রাদুর্ভাব (Wendt AS et al., Orphanet J Rare Dis; 2023)। যাইহোক, এই ৰিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা ও সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।  

একটি ধারণা এখন প্রতিষ্ঠিত যে, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে হিমোগ্লোবিন-এস (HbS)-এর ভূমিকার কারণে, নেতিবাচক স্বাস্থ্যের প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, আফ্রিকা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে HbS এবং হিমোগ্লোবিন-সি (HbC)-এর পক্ষে ইতিবাচক প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ কিরেছে। তাহলে একটি প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কী ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে HbE-এর প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন সমর্থন করে? এটি নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ দরকার। আশাকরি এই অঞ্চলের গবেষকগণ এ নিয়ে ভাববেন এবং আরও গবেষণালব্ধ তথ্য উপস্থাপন করবেন।

_____________________________

সাবেক উপ-উপাচার্য, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, এবং সাবেক অধ্যাপক, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র, ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।

বিষয়:

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

প্রফেসর ড. রাশিদুল হক

প্রফেসর ড. রাশিদুল হক: সাবেক উপ-উপাচার্য, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, এবং সাবেক অধ্যাপক, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র, ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

সিকল সেল রক্তাল্পতা এবং এক যুগান্তকারী চিকিৎসার সূচনা

প্রকাশ: ০১:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জানুয়ারি ২০২৪

উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হিমোগ্লোবিন-ব্যাধি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের ওপর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রায় তিন লাখ শিশু প্রতি বছর হিমোগ্লোবিনজনিত রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যার প্রায় ৮০% জন্মগ্রহণ করে উন্নয়নশীল দেশে। সিকল সেল অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা এরকম একটি হিমোগ্লোবিনজনিত রক্তের ব্যাধি। ২০১৫ সালের হিসাবে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের সিকল সেল রোগ রয়েছে, যখন অতিরিক্ত সাড়ে চার কোটি মানুষের সিকল সেল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং তারা এই রোগের বাহক হিসেবে চিহ্নিত। এই রোগটির প্রায় ৪০ শতাংশ দেখা যায় সাব-সাহারান আফ্রিকায়। এছাড়া, এটি ভারত, দক্ষিণ ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার কিছু অংশেও কম মাত্রায় দেখা যায়। তবে, আন্তর্জাতিক অভিবাসনের উচ্চহারের কারণে, হিমোগ্লোবিনজনিত রোগ (থ্যালাসেমিয়া ও সিকল সেল অ্যানিমিয়া) বিশ্বের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সিকল সেল অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি (ডিসেম্বর ৮, ২০২৩) ক্রিসপার (CRISPR)/ক্যাস৯ (Cas9) জিন-সম্পাদনা প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে সিকল সেল রোগ নিরাময়ে “ক্যাসজেভি” (Casgevy) এবং “লিফজেনিয়া” (Lyfgenia)নামক দুই ধরনের ভিন্ন কৌশলগত থেরাপির এই প্রথম অনুমোদন দিলো যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA)। এই অনুমোদন চিকিৎসা ব্যবস্থায় অগ্রগতির প্রতিফলন।

সিকল সেল অ্যানিমিয়া কী?

মানব দেহে, লোহিত রক্তকণিকা (আর.বি.সি.) সাধারণত গোলাকার এবং নমনীয় হয়, তাই তারা রক্তনালিগুলোর মধ্য দিয়ে সহজেই চলাচল করে। সিকল সেল অ্যানিমিয়ায়, কিছু লাল রক্তকণিকা কাস্তে (sickle/সিকল) বা অর্ধচন্দ্রের মতো আকৃতি ধারণ করে, যেগুলো অনমনীয় এবং চটচটে হয়ে যায়, যা রক্ত প্রবাহকে বাধা দিতে পারে। যখন কাস্তে আকৃতির লাল রক্ত কণিকা বুক, পেট এবং দেহের জয়েন্টগুলোতে ক্ষুদ্র রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহকে বাধা দেয়, তখন চরম ব্যথা অনুভূত হয় (অনেকের বর্ণনায় যা প্রসব ব্যথা থেকেও বেশি), যা সিকল সেল অ্যানিমিয়ার একটি প্রধান লক্ষণ। এছাড়া, রক্ত ​​প্রবাহ ধীর বা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় হাত ও পা ফুলে যেতে পারে, স্ট্রোক হতে পারে এবং কাস্তে-কোষগুলো প্লীহাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। সিকল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত নিউমোনিয়ার মতো সম্ভাব্য প্রাণঘাতী সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে টিকা এবং অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া, সিকল সেল কোষগুলো চোখে সরবরাহকারী রক্তনালিগুলোতে আটকে যেতে পারে, তাই দৃষ্টির ঘাটতিও দেখা দিতে পারে। এই রোগটি অন্যান্য নামেও পরিচিত-যেমন হিমোগ্লোবিন এস ডিজিজ (Hemoglobin S disease) বা  সিকল সেল ডিজঅর্ডার (sickle cell disorders)।

সিকল সেল অ্যানিমিয়া হলো একটি জিনগত রোগ, এটি হিমোগ্লোবিনের একটি রোগ। হিমোগ্লোবিন (Hb) হলো লৌহ (Fe2+)-ধারণকারী অক্সিজেন-পরিবাহী একটি মেটালোপ্রোটিন, যা প্রায় সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীর এরিথ্রোসাইট বা লোহিত রক্তকণিকায় উপস্থিত থাকে। একজন সুস্থ মানুষের প্রতি ১০০ মিলি (mL) রক্তে ১২ থেকে ১৮ গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকে। প্রতি গ্রাম হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন-বহনের ক্ষমতা রয়েছে ১.৩৪ মিলি অক্সিজেন। অক্সিজেন ছাড়া, হিমোগ্লোবিন অন্যান্য গ্যাসও পরিবহন করে, যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, সালফার মনোক্সাইড এবং সালফাইড। একটি হিমোগ্লোবিন অণু চারটি গ্লোবিন-পলিপেপ্টাইড চেইন নিয়ে গঠিত, প্রতিটিতে ১৪১টি অ্যামিনো অ্যাসিড নিয়ে গঠিত দুটি আলফা (α) এবং ১৪৬টি অ্যামিনো অ্যাসিডের দুটি বিটা (β) চেইন রয়েছে। সম্পূর্ণ হিমোগ্লোবিন অণুতে, চারটি সাবইউনিট ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে একটি টেট্রামার (চার পেপ্টাইড-চেইনের সমাহার) গঠন করে। প্রতিটি গ্লোবিন চেইন “হিম (heme/haem)” উপাদানের সাথে যুক্ত। হিম তৈরি হয় অস্থিমজ্জায় ও যকৃতে, এর প্রধান কাজ অক্সিজেন পরিবহন করা। ১৬নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত দুইটি জিন-Hba১ ও Hba২ দ্বারা তৈরি হয় আলফা চেইন এবং ১১নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত Hbb জিন দ্বারা কোডপ্রাপ্ত হয় বিটা-চেইন।

সিকল সেল রোগ দেখা দেয় যখন একটি শিশু বিটা-গ্লোবিন জিনের (Hbb) দুটি অস্বাভাবিক/ত্রুটিপূর্ণ কপি (প্রতিটি পিতামাতার থেকে একটি করে) উত্তরাধিকার সূত্রে ধারণ করে। এটি একটি অটোজোমাল রিসিসিভ ডিজিজ (autosomal recessive disease)। দুটি ত্রুটিপূর্ণ কপির পরিবর্তে, একটি অস্বাভাবিক অনুলিপি নিয়ে একজন ব্যক্তির সাধারণত উপসর্গ থাকে না, তবে তার মধ্যে সিকল সেল বৈশিষ্ট্য রয়ে যায় এবং সে একজন ত্রুটিপূর্ণ-জিনের বাহক (carrier) হিসেবে চিহ্নিত (যাদের জিনতত্ত্বের পরিভাষায় বলা হয় “হেটেরোজাইগোট”)। বাহকদের মৃদু রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে; তবে এদের মধ্যে ম্যালেরিয়াসহ কিছু রোগের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা জন্মায়। তাই পৃথিবীর বেশ কয়েকটি ম্যালেরিয়া অধ্যুষিত অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে এই ব্যাধির প্রাদুর্ভাব বেশি (যেমন আফ্রিকা)। 

কীভাবে সিকল সেল বৈশিষ্ট্য ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ্যতা গড়ে তুলে

আমরা জানি, ম্যালেরিয়া পরজীবী (Plasmodium falciparum) তার জীবনচক্রের ক্রমবিকাশে মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষণকালীন/মধ্যবর্তী পোষক হিসেবে বেছে নেয়। (মশার কামড়ে) এই পরজীবীর স্পোরোজোইট (sporozoites) দশা মশার লালাগ্রন্থি থেকে মানুষের রক্তস্রোতে প্রবেশ করে এবং লোহিত রক্তকণিকাগুলোকে সংক্রমিত করার আগে স্পোরোজোইটগুলো যকৃতে বিকাশলাভ করে। পরবর্তীতে আরও বিকাশমান দশা (মেরোজোইট ও ট্রপোজোইট) মানুষের লোহিত রক্তকণিকাগুলোকে সংক্রমিত করে এবং হিমোগ্লোবিন (HbA)বিপাকসহ সুস্থ আরবিসি-গুলোকে ধ্বংস করে। ফলে সৃষ্টি হয় ম্যালেরিয়া রোগ। ম্যালেরিয়া জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট উচ্চ মৃত্যুহার এবং অসুস্থতা মানুষের জিনোমের উপর যুগ যুগ ধরে একটি নির্বাচনী চাপ সৃষ্টি করেছে। দেখা গেছে, সিকল সেল বৈশিষ্ট্য, থ্যালাসেমিয়া বৈশিষ্ট্য এবং গ্লুকোজ-৬-ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেজ (G6PD) এনজাইমের ঘাটতিসহ বেশ কিছু জেনেটিক কারণ প্লাজমোডিয়ামের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ্যতা গড়ে তুলেছে। ম্যালেরিয়া জীবাণু বহনকারী মশা যদি সিকেল সেল বৈশিষ্ট্যযুক্ত কাউকে কামড়ায়, তবে সেই ব্যক্তির অন্য মানুষের মতো অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ সিকেল সেল বৈশিষ্ট্যযুক্ত (বাহক/AS) লোকেদের লাল রক্তকণিকায় একটি ত্রুটিপূর্ণ বিটা-গ্লোবিন অ্যালিল রয়েছে এবং এদের আরবিসি কাঠামোগতভাবে কিছুটা ভিন্ন হওয়ায় ম্যালেরিয়া জীবাণুর বৃদ্ধি কঠিন হয়ে যায়।

হিমোগ্লোবিনের প্রকারভেদ

হিমোগ্লোবিন অনেক প্রকার হতে পারে। সাধারণত, মানুষের তিন ধরনের হিমোগ্লোবিন থাকে: হিমোগ্লোবিন এ (HbA), যা গ্লোবিন প্রোটিনের দুটি আলফা- এবং দুটি বিটা-চেইন (α2β2) নিয়ে গঠিত; হিমোগ্লোবিন এ২ (HbA2), যা দুটি আলফা- এবং দুটি ডেল্টা-চেইন (α2δ2) নিয়ে গঠিত; এবং হিমোগ্লোবিন এফ (HbF), যা দুটি আলফা- এবং দুটি গামা-শৃঙ্খল (α2γ2) নিয়ে গঠিত। এই তিন প্রকারের মধ্যে, HbF (ভ্রূণীয় হিমোগ্লোবিন) প্রায় ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে প্রাধান্য পায়, যা BCLIIA রিপ্রেসর প্রোটিন দ্বারা পরবর্তীতে HbF (γ-গ্লোবিন) থেকে প্রাপ্তবয়স্ক HbA (β-গ্লোবিন) প্রাপ্তবয়স্ক ফর্মে রূপান্তরিত হয়। হিমোগ্লোবিনের আরো একটি রূপ HbE দেখা যায় ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে। HbE হলো বিটা-গ্লোবিন জিনের ২৬নং কোডনে একক মিউটেশনের কারণে সৃষ্ট একটি বৈকল্পিক। জিন মিউটেশনের ফলে, গ্লুটামিক অ্যাসিড কোডন (GAG)টি রূপান্তরিত হয় লাইসিন (AAG) কোডনে। সিকল সেল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে, হিমোগ্লোবিন এ-তে থাকা বিটা-গ্লোবিনের উভয় চেইন প্রতিস্থাপিত হয় ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন-এস (HbS) ইউনিট দ্বারা। বিটা-গ্লোবিন জিনের একটি একক নিউক্লিওটাইড মিউটেশন  (GAG কোডন থেকে  GTG-তে পরিবর্তন)-এর কারণে সৃষ্টি হয় HbS, যা সিকল সেল রোগটির জন্য দায়ী। মিউটেশনের ফলে বিটা-গ্লোবিন প্রোটিনের ষষ্ঠ অ্যামিনো অ্যাসিড, অর্থাৎ গ্লুটামেট/গ্লুটামিক অ্যাসিড প্রতিস্থাপিত হয় ভ্যালিন দ্বারা। এই মিউটেশন ধারণকারী হিমোগ্লোবিনকে বলা হয় HbS। ভ্যালিন হাইড্রোফোবিক তাই HbS-এর একটি অংশ হয়ে যায় আঠালো। প্রসঙ্গতঃ গ্লুটামিক অ্যাসিড, লাইসিন এবং ভ্যালিন এসবই হচ্ছে অ্যামিনো অ্যাসিড, যা তাদের নিজস্ব জেনেটিক কোড দ্বারা সঙ্কেতপ্রাপ্ত। পূর্বেই বলেছি, একটি শিশুর সিকল সেল রোগে প্রভাবিত হওয়ার জন্য, মা এবং বাবা উভয়কেই ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন (HbS) জিনের একটি কপি বহন করতে হয় (প্রথম ছবিটি দেখুন)। 

স্বাভাবিকভাবে, লোহিত রক্ত কণিকা প্রায় ১২০ দিন বেঁচে থাকে এবং সেগুলো প্রাকৃতিকভাবেই অস্থিমজ্জায় আবারো তৈরি হয়। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন (HbS)সহ কাস্তে-কোষগুলো সাধারণত ১০ থেকে ২০ দিনের মধ্যে মারা যায়, যার ফলে রক্তে লোহিত রক্তকণিকার অভাব (অ্যানিমিয়া) দেখা দেয়। পর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা ছাড়া, শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না এবং দেহ ভীষণ ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে, ঘন ঘন রক্ত বা আরবিসি ট্রান্সফিউজন-ই হচ্ছে প্রতিরোধমূলক একটি থেরাপি যা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

থ্যালাসেমিয়া এবং সিকল সেল রোগের পার্থক্য কী?

থ্যালাসেমিয়া এবং সিকল সেল অ্যানিমিয়া উভয়ই একটি বংশগত লোহিত রক্তকণিকার ব্যাধি, তারা উভয়ই লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন অণুকে প্রভাবিত করে। কিন্তু রোগ দুটি এক নয়। ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি, হিমোগ্লোবিন (HbA)-র দুটি আলফা এবং দুটি বিটা-গ্লোবিন পলিপেপ্টাইড চেইন রয়েছে, যেগুলো সংশ্লেষিত হয় তাদের নিজস্ব জিন (ভিন্ন ক্রোমোজোমে অবস্থিত) থেকে। এই জিনগুলোতে মিউটেশনজনিত ত্রুটির কারণে সৃষ্টি হয় থ্যালাসেমিয়া এবং সিকল সেল অ্যানিমিয়া। যেমন, থ্যালাসেমিয়া-রোগীদের আলফা- বা বিটা-গ্লোবিন শৃঙ্খলে ত্রুটি থাকে, যেখানে সিকল সেল-আক্রান্ত ব্যক্তিদের ত্রুটি থাকে শুধুমাত্র বিটা-গ্লোবিন শৃঙ্খলে, যা হিমোগ্লোবিন অণুর কাঠামোকে পরিবর্তিন করে। ত্রুটির কারণে উভয় ক্ষেত্রেই তৈরি হয় অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন ও লোহিত রক্তকণিকা, দেখা দেয় রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা। ১৬ নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত দুইটি জিন-Hba১ ও Hba২-দ্বারা নির্দেশিত হয়ে তৈরি হয় আলফা চেইন, এদের ত্রুটির কারণে দেখা দেয় আলফা-থ্যালাসেমিয়া। পক্ষান্তরে, ১১নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত Hbb-জিনের মিউটেশনজনিত ত্রুটির কারণে সৃষ্টি হয় বিটা-থ্যালাসেমিয়া। থ্যালাসেমিয়া রোগে আল্ফ়া- অথবা বিটা-গ্লোবিন চেইনের সংশ্লেষণ কমে যায় বা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকে। ফলে হিমোগ্লোবিনের কাঠামোয় দেখা দেয় ভারসাম্যহীনতা। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সিকেল সেল রোগের আরেকটি রূপ হচ্ছে সিকল সেল/বিটা-থ্যালাসেমিয়া (HbS/beta-Th), অর্থাৎ উভয় রোগের সমন্বিত একটি রূপ, যেখানে অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের পাশাপাশি বিটা গ্লোবিন চেইনের সংশ্লেষণ হ্রাস পায়। এক্ষেত্রে, সিকল সেল/বিটা-থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা ধারণ করে একটি অস্বাভাবিক বিটা চেইন এবং একটি ত্রুটিপূর্ণ বিটা-গ্লোবিন জিন। 

বিশ্বের অনেক অঞ্চলে (যেমন দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, ভূমধ্যমহাসাগরীয় দেশ এবং আফ্রিকা) আল্ফ়া-থ্যালাসেমিয়ার থেকে বিটা-থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ বেশি। ভারতে প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ হাজার শিশু বিটা-থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্ম নেয় এবং সেখানে প্রায় চার কোটি মানুষ বিটা-থ্যালাসেমিয়ার বাহক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে (জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন রিপোর্ট, ভারত, ২০১৬)। বাংলাদেশে এ দুটি রোগের প্রকোপ নিয়ে সম্ভবত কোনো জাতীয় রিপোর্ট নেই। তবে সীমিত কিছু গবেষণা সমীক্ষা থেকে বাংলাদেশেও বিটা-থ্যালাসেমিয়ার উপস্থিতির কথা জানা গিয়েছে। 

জিন-প্রযুক্তিতে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা

১৯৭৪ সালে, প্রফেসর হার্বার্ড বয়ার (ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র) ও স্ট্যানলি কোহেন (স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র) যৌথভাবে এক যুগান্তকারী জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা প্রথম মানব-ইন্সুলিন উৎপাদন করে জৈবপ্রযুক্তিতে একটি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। সে সময় থেকে আজ অবধি, জিন সম্পাদনা বা সর্বোপরি জিন-প্রযুক্তির অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে কোষের ভেতরে থেকে জিনোমের মধ্যেই জিনের কাংক্ষিত পরিবর্তন (যেমন জিন বা কাঙ্খিত নিউক্লিওটাইড সংযুক্ত করা অথবা কেটে বাদ দেয়া) ঘটানো সম্ভব। অধুনা, জিন বা জিনোম সম্পাদনায় যেকটি পদ্ধতি রয়েছে, তার মধ্যে ক্রিসপার/ক্যাস৯ অত্যন্ত জনপ্রিয়, যা প্রয়োগ করে রোগীর (অস্থিমজ্জার) হেমাটোপয়েটিক স্টেম কোষগুলোতে সিকেল সেল মিউটেশন (অর্থাৎ গ্লোবিন জিনের ত্রুটি) মেরামত করা কার্যকর এবং নিরাপদ হয়েছে। ক্রিসপার জিন প্রযুক্তি বিকাশের জন্য ২০২০ সালে রসায়নে নোবেল বিজয়ী হয়েছেন দুই নারী গবেষক: ফরাসী বিজ্ঞানী এমান‍্যুয়েল শারপঁসিয়ে এবং মার্কিন বিজ্ঞানী জেনিফার এ. দৌডনা। 

প্রকৃতিতে, ব্যাক্টেরিয়া কীভাবে ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে, সেটা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই তাঁরা মূলত ক্রিস্পার-ক্যাস ব্যবস্থার সন্ধান পান। বিজ্ঞানীরা দেখেন, বেশিরভাগ ব্যাক্টেরিয়ার একধরনের অভিযোজনযোগ্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, যার মাধ্যমে ব্যাক্টেরিয়া ভাইরাসের (ব্যাক্টেরিওফাজ) ডিএনএ শনাক্ত করে ও কেটে ফেলে। এই সিস্টেমের নামই হলো CRISPR (Clustered regularly interspaced short palindromic repeat- এটি ডিএনএ-তেই ছড়িয়ে থাকা ছোট-ছোট পুনরাবৃত্তিমূলক ক্রম), এবং ক্যাস৯ জিনটি থাকে ডিএনএ-তে ক্রিসপার অংশের পাশেই। ক্যাস৯ হচ্ছে একটি এনজাইম (এন্ডোনিউক্লিয়েজ), যা ভাইরাসের ডিএনএ-কে কেটে ফেলে। এমনকি, কেটে ফেলা ডিএনএ-র একটি অংশ ব্যাক্টেরিয়া সংরক্ষিত রাখে নিজের জিনোমের ক্রিসপার অংশে, দুটি পুনরাবৃত্তিমূলক ক্রমের মাঝে। প্রয়োজনবোধে কেটে-ফেলা-সংরক্ষিত (ভাইরাসের) ডিএনএ থেকে তৈরি হয় একটি “ক্রিসপার আরএনএ” (crRNA), যা ক্যাস৯-এর সাথে যুক্ত হয়ে পাহারাদার বা গাইড-আরএনএ (guide-RNA) হিসেবে পরবর্তী আক্রমণকারীর (ভাইরাসের) অপেক্ষায় থাকে। crRNA তার অনুক্রমের পরিপূরক হিসেবে DNA টার্গেটকে চিনতে পারে; শনাক্তকারী এই  অংশটি স্পেসার নামে পরিচিত (ছবি দেখুন)। Cas9-এর সফলতার জন্য আরও একটি  নির্দিষ্ট “প্রোটোস্পেসার সংলগ্ন মোটিফ (PAM)” প্রয়োজন, যা সাধারণত -NGG হিসেবে স্বীকৃত এবং সেটি জিনোমিক ডিএনএ-তে টার্গেট সিকোয়েন্সের পাশে অবস্থিত। প্যাম সিকোয়েন্সের অনুপস্থিতে ক্যাস৯ তার লক্ষ্যবস্তুকে কাটতে পারে না।

ক্রিসপার/ক্যাস৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা কোষের মধ্যকার ডিএনএ-র কিছু অংশ মুছে ফেলতে বা কিছু বাড়তি অংশ যোগ করতে পারেন। কাটাকাটি প্রক্রিয়ায় ডিএনএ অণুর যেস্থানে ব্রেকগুলো হয়, সেগুলো পূরণ করতে হয় একটি হোমোলোগাস রিকম্বিনেশন (HR) অথবা নন-হোমোলোগাস এন্ড-জইনিং (NHEJ) মেরামত-পদ্ধতির মাধ্যমে মেরামত করা যেতে পারে, যা যথাক্রমে সুনির্দিষ্ট বা অসম্পূর্ণ জিনোম সম্পাদনার দিকে পরিচালিত করে। বেশিরভাগ কোষে, উভয় মেরামতের পথই সক্রিয় থাকে, তবে HR পাথওয়ে সাধারণত একটি সমজাতীয় টেমপ্লেটের অনুপস্থিতিতে NHEJ পদ্ধতির তুলনায় কম দক্ষ (ছবি দেখুন)। ক্রিসপার/ক্যাস৯ প্রযুক্তির সাহায্যে নিখুঁতভাবে ত্রুটিপূর্ণ বিটা-গ্লোবিন জিনসহ যেকোনো জিনের প্রয়োজন অনুযায়ী এক বা একাধিক নিউক্লিওটাইড/নাইট্রোজেন বেইস (যেমন GTG থেকে GAG) পরিবর্তন করা যেতে পারে। ফলস্বরূপ, হিমোগ্লোবিনের আদিরূপ-সহ লোহিত রক্ত কণিকার স্বাভাবিক আকার ফিরে আসে, হিমোগ্লোবিন হয়ে ওঠে ভারসাম্যপূর্ণ । 

যুক্তরাষ্ট্র্রের এফডিএ কর্তৃক ক্রিসপার/ক্যাস৯ প্রয়োগে যে দুটি থেরাপি অনুমোদন পেলো, তারা কৌশলগত ভাবে ভিন্ন: ১. ভারটেক্স (Vertex)/ক্রিসপার থেরাপিউটিক্স (কোম্পানি) নির্মিত “ক্যাসজেভি”-নামক এক যুগান্তকারী চিকিৎসার মাধ্যমে সিকল সেল রোগীদের নিজস্ব রক্তের স্টেম-কোষগুলোতে ভ্রূণীয় হিমোগ্লোবিন (HbF)-এর বিকাশকে প্রাধান্য দেয়া হয়। জিনগত এই কারিগরিতে, ক্রিসপার/ক্যাস৯ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে BCLIIA জিনকে ভেঙে ফেলা বা বাধাগ্রস্ত করা হয় এবং HbA হিমোগ্লোবিনের পরিবর্তে HbF প্রোটিনকেই স্থায়ীভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হিমোগ্লোবিন হিসেবে প্রতিস্থাপিত করা হয়। বলা বাহুল্য, সম্পাদিত স্টেমকোষগুলো প্রতিস্থাপনের আগে রোগীর অস্থিমজ্জায় HbA-ধারণকারী আদি কোষগুলোকে উচ্চ-মাত্রায় কেমোথেরাপি দিয়ে চিরতরে বিনষ্ট করা হয় (myeloablative conditioning)। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, স্বাভাবিকভাবে ভ্রূণীয় হিমোগ্লোবিন (HbF) BCLIIA রিপ্রেসর প্রোটিন দ্বারা রূপান্তরিত হয় HbA-রূপে, যা পূর্ণবয়স্কদের একটি সাধারণ হিমোগ্লোবিন। ২. ব্লুবার্ড বায়ো (bluebird bio) কোম্পানি পরিচালিত “লিফজেনিয়া” (Lyfgenia)নামক ভিন্ন একটি জিন থেরাপি লেন্টিভাইরাস ভেক্টর (Lentiviral vector) ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীর হিমাটোপোয়েটিক (hematopoietic) স্টেমকোষগুলোতে প্রতিস্থাপিত করা হয় HbAT87Q জিন, যা একটি প্রাপ্তবয়স্ক স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন (HbA)-এর সমরূপ। এই কৃত্রিম জিনটিতে, বিটা-গ্লোবিন পেপ্টাইডের ৮৭নং অবস্থানে থ্রিওনিন (T) অপসারিত হয়েছে গ্লুটামিন (Q) অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারা, সেই অর্থে এটি T87Q। এছাড়া, বিটা-গ্লোবিন জিনটির প্রকাশ নিয়ন্ত্রিত হয় মানব বিটা-গ্লোবিন জিন প্রোমোটর (promoter) এবং β-গ্লোবিন লোকাস নিয়ন্ত্রণ অঞ্চল (LCR) দ্বারা। এই জিনটি (β-globinT87Q) স্থায়ীভাবে একজন ব্যক্তির জিনোমে প্রতিস্থাপিত হয়। এক্ষেত্রেও, মিউট্যান্ট-β-গ্লোবিন জিনধারী HbS-সহ আদি স্টেমকোষগুলোকে কেমোথেরাপি দিয়ে ধ্বংস করা হয়, রোগী ফিরে পায় স্বাভাবিক ধরনের হিমোগ্লোবিন (HbA)। 

উপরিল্লিখিত যেকোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে একবার জিন বা জিনোমিক ডিএনএ সম্পাদিত হলে, সেটি হয় অপরিবর্তনশীল। এই অভিনব চিকিৎসা রোগীদের জীবনে শুধুমাত্র একবারই নিতে হয়। ইতোমধ্যে, বাণিজ্যিকভাবে এই ক্রিসপার/ক্যাস৯ পদ্ধতির অনেক প্রসারণ ঘটেছে। সিকল সেল রোগের বাইরেও এই নিখুঁত প্রযুক্তির ব্যবহার ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, টাইপ ১ ডায়াবেটিস এবং স্নায়ুঅবক্ষয়জনিত অনেক রোগের চিকিৎসার দ্বার অচিরেই খুলে দিবে।

শেষকথা

ভারত, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে, HbE হলো সর্বাধিক প্রচলিত হিমোগ্লোবিন রূপ। যেহেতু এদের জনসংখ্যার মধ্যে বিটা-থ্যালাসেমিয়া অ্যালিলের আধিক্য রয়েছে, তাই এসব অঞ্চলে HbE এবং বিটা-থ্যালাসেমিয়া (HbE/বিটা-থ্যালাসেমিয়া)-র একটি সমন্বয় প্রায়শই দেখা যায়। একটি পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিটা-থ্যালাসেমিয়া ও সিকল সেল অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উদ্বেগজনক ভৌগোলিক অবস্থায় রয়েছে।

আরও একটি বিষয় এখানে লক্ষণীয় যে, আফ্রিকা, সমস্ত ভূমধ্যসাগরীয় দেশ, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের যেসব দেশ ম্যালেরিয়া-প্রবণ, সেসব অঞ্চলে হিমোগ্লোবিন-সম্পর্কিত রোগের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ম্যালেরিয়া-প্রবণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত, যদিও এই দেশ থেকে উল্লেখযোগ্যহারে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। দেশব্যাপী রক্তাল্পতার প্রমাণ থাকলেও হিমোগ্লোবিনজনিত-ব্যাধি সে তুলনায় নগন্য। হয়তো পুষ্টিগত (যেমন ডায়েটারি আয়রন, ভিটামিন এ, ফোলেট এবং জিঙ্ক) ঘাটতির কারণেই রক্তাল্পতার উচ্চ প্রবণতা রয়েছে। তবে, ২০১২ সালের  একটি সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, প্রায় ২৮% গ্রামীণ মহিলাদের বিটা-থ্যালাসেমিয়া বা HbE-হিমোগ্লোবিন রয়েছে (Merrill RD et al. Asia Pac J Clin Nutr; 2012)। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলেও দেখা গেছে বিটা-থ্যালাসেমিয়ার প্রাদুর্ভাব (Wendt AS et al., Orphanet J Rare Dis; 2023)। যাইহোক, এই ৰিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা ও সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।  

একটি ধারণা এখন প্রতিষ্ঠিত যে, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে হিমোগ্লোবিন-এস (HbS)-এর ভূমিকার কারণে, নেতিবাচক স্বাস্থ্যের প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, আফ্রিকা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে HbS এবং হিমোগ্লোবিন-সি (HbC)-এর পক্ষে ইতিবাচক প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ কিরেছে। তাহলে একটি প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কী ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে HbE-এর প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন সমর্থন করে? এটি নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ দরকার। আশাকরি এই অঞ্চলের গবেষকগণ এ নিয়ে ভাববেন এবং আরও গবেষণালব্ধ তথ্য উপস্থাপন করবেন।

_____________________________

সাবেক উপ-উপাচার্য, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, এবং সাবেক অধ্যাপক, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র, ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।