লকডাউনে মুভমেন্ট পাস নিয়ে চলাচল করুন জরুরি প্রয়োজনে, আবেদন করবেন কীভাবে
- প্রকাশ: ০৮:৫১:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১
- / ১১০২ বার পড়া হয়েছে
করোনাভাইরাসের দ্বারা সৃষ্ট মহামারী পুনরায় বেড়ে যাওয়ায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। উদ্দেশ্য হলো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে দেশ থেকে কোভিড-১৯ নিয়ে দেশের দুশ্চিন্তা দূর করা বা কমিয়ে আনা। সরকার এপ্রিলের ৫ তারিখ থেকে যে লকডাউন ঘোষণা করেছিল তা অনেকাংশেই মানেনি বা খুব ভালো করে আমলে নেয়নি দেশের বেশিরভাগ মানুষ, এমন কি বিভিন্ন সেবা ও শ্রম খাতের দৈনন্দিন কার্যক্রমও চলমান ছিল। চালু ছিল রাজধানী ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলাও যা বিভিন্ন মহলে ঠাট্টার অন্যতম উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।
২০২০ সালের লকডাউনে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি জরুরি প্রয়োজনে বেশিরভাগ মানুষই বাইরে বের হতে পারেননি কিন্তু পুলিশের মাধ্যমে মানুষ তাঁদের জরুরি সেবার মুহূর্তে ডাক দিয়ে পাশে পেয়েছেন। তবে সবাই যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেবা পেয়েছেন বা সে পর্যন্ত পৌঁছাতে পেতেছেন বিষয়টি তেমনও নয়। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার স্বল্প সময়ের জন্য সরকার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং সে অনুযায়ী মানুষ বাজার-সওদা করেছে। তবে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে খুব একটা দেখা যায়নি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের, পাশাপাশি জনগণের উপস্থিতিও ছিল প্রচুর যা দেশ লকডাউনে থাকার পরেও এসব করোনাভাইরাস সংক্রমণে জন্য সহায়ক ছিল।
১৪ তারিখের লকডাউনকে সরকারের পক্ষথেকে জানানো হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন। কিন্তু কতজন মানবেন এই লকডাউন। অনেকেই আবার জরুরি প্রয়োজনের ছুতোয় অপ্রয়োজনে বাইরে যেতে চাইবেন যা যে কারণে লকডাউন ঘোষণা করা হলো সে উদ্দেশ্য সফল হবার অন্তরায় হিসেবে কাজ করবে। এই সর্বাত্মক লকডাউন ও অন্যান্য বিধিনিষেধ যেন কোনোক্রমেই কেউ অমান্য না করতে পারে সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ এবার দারুণ একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আরোপিত এই লকডাউন চলাকালীন আপনার, আমার বা অন্য যে কাউকে জরুরি কাজে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হতেই পারে, এটা খুবই স্বাভাবিক। আবার এটাও স্বাভাবিক, আমি বা আপনি যে বাইরে বের হব সেটা ‘প্রয়োজনের’ দোহাই দিয়ে অপ্রয়োজনে যে বাইরে বিচরণ করব না তার গ্যারান্টি কী? এই সমস্যার সমাধানের জন্য সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ ‘মুভমেন্ট পাস’ (মুভমেন্ট পাশ) এরর মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করবে এবং অনুমতি প্রদান করবে।
লকডাউনে জরুরি প্রয়োজনে চলাচলের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে বিস্তারিত
চলাচলের জন্য পুলিশের অনুমতি নিতে হবে কেন?
তবে আশার খবর হলো এবারের লকডাউনে যে কেউ চাইলেই ‘জরুরি প্রয়োজন’র দোহাই দিয়ে আর বাইরে বের হতে পারবেন না। আপনাকে যদি বাইরে বের হতেই হয় তাহলে সর্বপ্রথমে যা করতে হবে তা হলো বাংলাদেশ পুলিশের অনুমতি নেওয়া। বাংলাদেশ পুলিশের অনুমতি ছাড়া আপনি বাইরে বের হতে পারবেন না।
মুভমেন্ট পাস কী?
বাংলাদেশ পুলিশের থেকে যদি আপনি অনুমতি নিতে চান নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য তাহলে আপনাকে একটি ইন্টারনেটভিত্তিক অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আর আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে আপনাকে একধরণের ‘পাস’ দেওয়া হবে যার দাপ্তরিক নাম ‘মুভমেন্ট পাস’। এই পাস যার কাছে থাকবে তিনি সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবেন। সোমবার, ১২ এপ্রিল, বিকেলে এই ‘মুভমেন্ট পাস’ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা। বাংলাদেশ পুলিশের এই মুভমেন্ট পাস এপ্রিল ১৩, ২০২১ তারিখে উদ্ভোদন করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ।
মুভমেন্ট পাস সবাই পাবেন?
মুভমেন্ট পাস চাইলেই সবাই নিতে পারবেন না বা এটি সবার জন্য নয়। শুধু জরুরি সেবার প্রয়োজনে এই ‘মুভমেন্ট পাস’ দেওয়া হবে। কোন কোন ক্যাটাগরিতে মুভমেন্ট পাস দেওয়া হবে?
বাংলাদেশ পুলিশের তরফ থেকে গিয়েছে, মুদি দোকানে কেনাকাটা, কাঁচা বাজার, ওষুধপত্র, চিকিৎসা চাকরি, কৃষিকাজ, পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ, ত্রাণ বিতরণ, পাইকারি/খুচরা ক্রয় পর্যটন, মৃতদেহ সৎকার, ব্যবসা ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে দেওয়া হবে এই পাস। এইসব ক্যাটাগরির মধ্যে একটি বিশেষ ক্যাটাগরি হলো ‘অন্যান্য’ ক্যাটাগরি, এই ক্যাটাগরি তাঁদের জন্য যাদের বাইরে চলাফেরা প্রয়োজন কিন্তু কোনো ক্যাটাগরিতেই পড়েন না তাদের জন্য। এ ব্যাপারে পুলিশ বিবেচনা করে দেখবে আবেদনকারীকে চলাচলের অনুমতি দেওয়া যায় কি না।
মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১ তারিখ বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘মুভমেন্ট পাস অ্যাপ’ এর উদ্ভোদন করেন বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ।
‘মুভমেন্ট পাস’ পেতে অনলাইনে আবেদন করতে হবে কীভাবে এবং কী কী প্রয়োজন হবে?
- একটি সক্রিয় মোবাইল নম্বর
- অবস্থান ও গন্তব্য
- আপনার মৌলিক তথ্য
- আপনার একটি পরিচিতি পত্র
- আপনার একটি ছবি
‘মুভমেন্ট পাস’ পেতে আবেদন করবেন কীভাবে?
১। প্রথমে মোবাইল অথবা কম্পিউটার থেকে প্রদর্শিত অ্যাড্রেস- https://movementpass.police.gov.bd/ এ যেতে হবে অথবা অ্যাড্রেস না লিখতে চাইলে সরাসরি এখানে ক্লিক করে মুভমেন্ট পাস আবেদন (police.gov.bd) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন;
২। আপনার সামনে আসা ওয়েবপেইজ থেকে মুভমেন্ট পাসের আবেদন (APPLY FOR MOVEMENT PASS) বাটনে ক্লিক করুন;
২। আপনার একটি সক্রিয় মোবাইল নম্বর ইনপুট দিতে হবে এবং ক্যাপচা ভেরিফিকেশনের জন্য নির্ধারিত বাটনে চেকইন দিয়ে ‘সাবমিট (SUBMIT)’ বাটনে ক্লিক করুন পরের পৃষ্ঠায় যাবার জন্য;
৩। এই পৃষ্ঠায় আপনার জন্মতারিখ দুইবার লিখতে হবে; তবে লেখার নিয়ম হলো- আপনার জন্ম তারিখ যদি 08-02-1984 হয় তাহলে 08021984 লিখুন এবং ‘সাবমিট (SUBMIT)’ বাটনে ক্লিক করুন;
৪। এবার যে পৃষ্ঠায় যা যা দরকার হবে তা হলো-
- সেখানে আপনি যে জায়গায় অবস্থান করছেন সে জায়গার নিকটবর্তি থানার নাম
- আপনার গন্তব্যের নাম অর্থাৎ আপনি কোথায় যেতে চান তা লিখতে হবে
- আপনার নিজের নাম লিখতে হবে, অবশ্যই নাম সেভাবে লিখুন যেভাবে লেখা আছে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা স্টুডেন্ট আইডি কার্ডে
- আপনার জেন্ডারের পাশ চেক মার্ক দিতে হবে
- আপনাকে নির্ধারণ করে দিতে হবে আপনার এই মুভমেন্ট পাস কেন প্রয়োজন, এখানে ড্রপডাউন মেনু থেকে আপনার নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিটি সেলেক্ট করতে হবে
- আপনাকে আপনার চলাচলের তারিখ ও সময় এই ফরমে উল্লেখ করে দিতে হবে
- আপনার মুভমেন্ট পাসের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ও সময় উল্লেখ করে দিতে হবে;
- আপনার পরিচিতি বাংলাদেশ পুলিশের কাছে পরিষ্কার করার জন্য এখানে জাতীয় পরিচয় পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের যে কোনো একটি উল্লেখ করে এর নম্বর প্রদান করতে হবে (জটিলতা এড়ানোর জন্য, এখানে যে ডকুমেন্ট ও এর নম্বর এখানে দিবেন সেটি সম্ভব হলে সঙ্গে রাখার চেষ্টা করুন, না রাখলেও সমস্যা হবে না হয়ত)
- আপনার যে-কোনো একটি ছবি আপলোড করতে হবে, অবশ্যই এমন একটি ছবি ব্যবহার করুন যেখানে আপনার ফেইস বা মুখমণ্ডল সহজেই বোঝা যায়
- পুনরায় ‘সাবমিট (SUBMIT)’ বাটনে ক্লিক করুন
এবার আপনি পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ‘মুভমেন্ট পাস’। এটা আপনার কাছে থাকা মোবাইল ফোনে সংরক্ষণ করুন এবং দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের দেখান। আর অবশ্যই আপনার যতবার বাইরে যেতে হবে ততবারই নতুন করে আবেদন করতে হবে একই নিয়মে। আসা ও যাওয়ার জন্য আলাদা মুভমেন্ট পাস (মুভমেন্ট পাশ লাগবে) আর যদি আপনাদের মুভমেন্ট পাস পাওয়ার আবেদনে কোনো সমস্যা হলে বা বুঝতে না পারলে আমাদের ফেইসবুক পেইজের মেসেঞ্জারে মেসেইজ দিন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আপনার কাছের মানুষটি বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক চালুকৃত ‘মুভমেন্ট পাস’ এর জন্য কীভাবে আবেদন করতে হয় সেটি নাও করতে পারেন; সুতরাং আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে আপনার কাছের সেই মানুষটির সাথে আমাদের এই আর্টিকেলের লিংকটি শেয়ার করুন যাতে করে তিনি নিজে নিজে বুঝে তাঁর কাঙ্ক্ষিত ‘মুভমেন্ট পাস’এর জন্য নিজে নিজেই আবেদন করতে পারেন।