শবে বরাত কী? পবিত্র কুরআন ও হাদিস অনুসারে শবে বরাতের গুরুত্ব
- প্রকাশ: ০৯:২৯:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২১
- / ৮৪৭৯ বার পড়া হয়েছে
শবে বরাত ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাত অর্থাৎ শবে বরাত নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানান রকম মত রয়েছে। কেউ শবে বরাতকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে রায় দিয়েছেন বা অ্যাখ্যায়িত করেছেন, আবার কেউ শবে বরাত পালন করা বা শাবান মাসের এই রাতে ইবাদাত করাকে বেদাত বা বিদায়াত বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের সবারই জানা দরকার শবে বরাত কী, কুরআন ও হাদিসে শবে বরাত নিয়ে কী বলা হয়েছে, শবে বরাত বেদাত/বিদায়াত কি না, শবে বরাতের ইবাদাত কী হবে। এই আর্টিকেলে শবে বরাতের গুরুতপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
শবে বরাত নিয়ে আলোচনা
শবে বরাতকী?
সহিহ হাদিসে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বা ‘শব-ই বারাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত, ‘বরাত’ শব্দের অর্থ ভাগ্য; শবে বরাত অর্থ ভাগ্য রজনী বা বরকতময় রজনী অথবা কল্যাণময় রজনী। কুরআনের -‘লাইলাতুল মুবারাকা’র অনুকুলে এটি পালিত হয়ে আসছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানান ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত।
পবিত্র কুরআনে শবে বরাত নিয়ে যা বলা হয়েছে
পবিত্র শবেবরাত, কুরআনে যাকে লাইলাতুল মুবারাকাতিন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের ৪৪ নম্বর সুরা ‘দোখানের’ ৩ নং আয়াতে ‘শবেবরাত বরকতময় রজনী’ উল্লেখ করার পূর্বে হা-মিম দিয়ে সুরাটির শুরু, যার অর্থ: হা- অর্থ হামদ, মিম দ্বারা মুহাম্মদ (সা.) অর্থাৎ ‘হামদে মুহাম্মদ (সা.)’ বা ‘চির প্রশংসিত মুহাম্মদ (সা.)’। যার পুরো অর্থ অনন্ত মুহাম্মদের প্রশংসিত সত্তার আত্মদর্শন। দ্বিতীয় আয়াতে ‘ওয়ালকিতাবিল মুবীন’ অর্থাৎ শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের উল্লেখ করে এর ওপর জোর প্রদান করা হয়েছে। সুরা দোখানের ১ ও ২ নং আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় অর্থাৎ অনন্ত প্রশংসিত মুহাম্মদের আত্মদর্শন করো আর শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের।
তারপর আল্লাহপাক শবেবরাতের কথা বললেন, ইন্না আনযালনাহূ ফী লাইলাতম্ মুবারাকাতিন্।
নিশ্চয়ই আমি এটি বরকতময় রজনীতে অবতীর্ন করেছি। [সুরা- দোখান, আয়াতঃ ৩]
আল্লাহর ঘোষণা হলো, নিশ্চয়ই এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয় আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন ও সব জানেন। তিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এই উভয়ের মাঝে যা আছে সেসবের রব। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস করো, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, তিনিই তোমাদের পরওয়ারদিগার আর তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও। তবু তারা সংশয়ে তামাশা করে। তবে অপেক্ষা করো সেদিনের, যেদিন আকাশ সুস্পষ্টভাবে ধূম্রাচ্ছন্ন হবে।
[সুরা-৪৪ [৬৪] দোখান, রুকু: ১, আয়াত: ১-১০, পারা: ২৫, পৃষ্ঠা ৪৯৬-৪৯৭/১৪-১৫)। মুফাসসিরিনগণ বলেন, এখানে ‘লাইলাতুল মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলে শাবান মাসে পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান)। হজরত ইকরিমা (রা.) প্রমুখ কয়েকজন তফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সুরা দুখানের দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত্রি বলে শবে বরাত বোঝানো হয়েছে। করআনের প্রায় সকল তাফসিরেই এর বর্ণনা রয়েছে।
শবে বরাতের তাফসির
প্রসিদ্ধ সকল তাফসির মতে, ‘শবে বরাতে’ অর্থাৎ ভাগ্য রজনীতে সকল মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, আগামী এক বছরের জন্য।
পবিত্র কুরআনের প্রসিদ্ধ তাফসীর গুলো থেকে রেফারেন্স পৃষ্ঠা নম্বরসহ শববরাতের দলিল উল্লেখ করা হলো:
তাফসীরে কাবীরে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযি (রহ.) সুরা দুখানের তাফসীর করতে গিয়ে ৯ম খন্ডে বিভিন্ন হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বলতে শাবানের ১৫ তারিখ শবেবরাত বলে উল্লেখ করেছেন।
অপর এক তাফসীরে রুহুল মাআনিতে আল্লামা আলূসী (রহ.) ২৫-২৬তম খন্ডে ১৪৮ পৃষ্ঠায় বৈরুত ছাপায় তিনি বিশিষ্ট তাবেয়ী হজরত ইকরামা (রহ.) ও তাবেয়ীনদের এক বিরাট দলের মত উল্লেখ করে হাদিসের বর্ণনায় লাইলাতুন নিসফি মিন শাবানের বর্ণনা দেন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রজনীতে শবেবরাত বলে উল্লেখ করেন।
অপর এক তাফসীর তাফসীরে কাশশাফ চতুর্থ খন্ড ১৫৩ পৃষ্ঠায় একই বর্ণনা পাওয়া যায়।
অপর এক তাফসীর, কুরআনের প্রসিদ্ধ তাফসীর আল জামিউল আহকামে ইমাম কুরতুবী (রহ.) তাঁর তাফসীরের ৮ম খন্ড ৪৩২ পৃষ্ঠায় শবেবরাত সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন সুরা দোখানের লাইলাতুন মোবারাকাত প্রসঙ্গে।
হাদিসে শবে বরাত নিয়ে যা বলা হয়েছে
শাবান মাসের ১৪ তারিখকের দিবাগত রাতকে সহিহ হাদিস অনুসারে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। ‘শবে বরাত’- কুরআনের যে আরবি শব্দটির অনুকূলে পালিত হয়ে আসছে তা হলো-‘লাইলাতুল মুবারাকা’। আমি পূর্বেই যার উল্লেখ করেছি। আবারও উল্লেখ করছি-
إِنَّآ أَنزَلْنَٰهُ فِى” لَيْلَةٍ مُّبَٰرَكَةٍۚ” إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ
অর্থ: নিশ্চয় উহা মোবারকময় একটি রাত্রির মধ্যে অর্থাৎ বরকতময়, কল্যাণময় বা বর্ধিষ্ণুতা দানকারী রাত্রির মধ্যে নাযিল করেছি।
হাদিস শরিফে যাকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী বলা হয়েছে। এই মধ্যদিবস শাবান মাসের ১৫ তারিখ।
সিহা সিত্তার হাদিসে ইবনে মাজাহ ও বায়হাকি শরিফের উদ্ধৃতি থেকে পবিত্র শবেবরাত সম্পর্কে লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান অর্থাৎ শাবান মাসের ১৫ তারিখ শবেবরাত উল্লেখ করে বেলায়েতের সম্রাট মাওলা হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (আ.) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন মধ্য শা’বানের রাত আসে, তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায়, ইবাদত-বন্দেগী করবে আর দিবসে সিয়াম পালন করবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলেন, আছে কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তাকে ক্ষমা করবো। আছে কেউ কোন রিযক প্রার্থনাকারী আমি তাকে রিযক দান করবো। আছে কেউ কোন বিপদে আরোপিত ব্যক্তি আমি তাকে সুস্থতা দান করবো’। এভাবে ফজর পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে। [ইবনে মাজাহ, বায়হাকী শরীফ]
শবে বরাত কি বেদাত (বিদআত)?
খুবই দুঃখের বিষয় হলো একদল তথাকথিত আলেম যারা এই বরকতময় রজনীর বিরোধিতায় লিপ্ত। তারা ফেসবুক, ইউটিউব বা ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে বলছে, ‘শবে বরাত’ পালন করা বেদাত বা বিদায়াত বা বিদআত। আরও নানা কথা বলছে।
তারা কুরআনের যে সুরাটির যে আয়াত দ্বরা উদ্ধৃতি দিচ্ছে। সে সুরাটি কুরআনের ৯৭ নম্বর সুরার প্রথম আয়াত। অর্থাৎ ইন্না আনযালনাহূ ফী লাইলাতুল ক্বাদর অর্থ- আমি মহিমান্বিত রাতে এটি অবতীর্ন করেছি।
এবার আসুন বিশ্লেষণ করে দেখা যাক: সুরা দোখান কুরআনের ৪৪ নং সুরা আর কদর (ক্বাদর) কুরআনের ৯৭ নং সুরা।
অবতীর্ন ও বর্ণনার দিক থেকে সুরা দোখানের মতে পবিত্র কুরআন শবেবরাতের রজনীতে লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ন হয়। এবং সুরা ক্বাদরের বর্ণনা মতে এটি রমজান মাসের শবেক্বদরের (শবেকদর) রজনীতে প্রথম আসমান থেকে পৃথিবীতে জিবরিল মারফত মহানবির ওপর নাযিল হয়। এবং দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে একের পর এক আয়াত নাযিল হতে থাকে। তাহলে দেখা গেল, দুটি সুরার দুটি আয়াতের বর্ণনার মাঝে কোনো প্রকার বিরোধ নেই। এবং একটি আরেকটির পরিপূরক বা সম্পূরক আয়াত। আর হাদিসে ও কুরআনের অসংখ্য তাফসীরে এ বিষয়টির সুস্পষ্ট বিবরণ এভাবেই দেয়া হয়েছে, যেভাবে আমি উল্লেখ করেছি, কিন্তু তারপরও কিছু জ্ঞানপাপী আলেম এই মহা বরকতময় রজনীর বিরোধীতা করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ রজনীর ইবাদত থেকে বঞ্চিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, জানি না তাদের উদ্দেশ্য কি? তবে তাদের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের এই বরকতময় রজনীর ইবাদতে মশগুল হয়ে আল্লাহর অসীম দয়া, রহমত, বরকত ও নাজাতের উসিলা অবলম্বন করতে আহ্বান জানাচ্ছি।
[শবেবরাতকে যারা বেদাত বা নাজায়েজ বলে তারা সুরা দোখানের সুস্পষ্ট আয়াতের অপব্যাখ্যা করে নিজেরাই বেদাত, কাফের, মুরতাদে পরিণত হয়েছেন]
শবেবরাত বরকতময় রজনীর ইবাদত
এই রাতের এশার নামাজের পর থেকে জায়নমাজে বসে-
- ইস্তেগফার যতটা করা সম্ভব করা যাবে।
- কমপক্ষে ৭ বার, সুরা ফাতিহা ৫ বার, সুরা ইখলাছ কমপক্ষে ৭ বার এবং যেকোনো দুরূদ শরীফ কমপক্ষে ১১ বার।
- জায়নামাজে বসে খানিকটা সময় জিকির আযকার। মোরাকাবা মোশাহাদা।
- বেশী সময় ইবাদত করতে চান তারা রাত ১২ বার পর থেকে কমপক্ষে ১২ রাকাআত নফস নামাজ পড়তে পারেন। এই নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহার পর কমপক্ষে তিনবার সুরা ইখলাছ পাঠ করে দুই রাকাত করে পড়তে হবে। ৬ বৈঠকে ১২ রাকাত।
- তাহাজ্জুদ নামাজও আদায় করতে পারেন।
এভাবে যত গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত করা যায় ততই কল্যাণ ও সাওয়ার লাভ হবে ইনশাআল্লাহ। মুনাজাতের মাধ্যমে ইবাদাত শেষ করা ভালো।
শবে বরাত শব্দটি ফার্সি। এর অর্থ ভাগ্য রজনী। এটটুকু ঠিক লিখেছেন। এর কোন আরবি প্রতিশব্দ কোরা হাদিসে নাই। নবি (সঃ) এর যুগ থেকে আজ আবদি এই রাতটি ইবাদতের রাত হিসেবে হারামাইনে পালিত হয় নাই। ইরানের শিয়ারাই এই রাত উদযাপন করে থাকে তাদের ১২ তম ইমামের জন্মদিন হিসেবে। তারা এই রাতকে নিমে শাবান, লাইলাতুল ককদর আস সাক অ বলে থাকে।
#শবেবরাত_ইরানের_শিয়াদের_ইবাদত_সুন্নিদেরও_মাঝে_সংক্রমণ_পর্ব_৯
শবে বরাত পর্ব ৯
==========
ইরানের শিয়াদের ‘নিমে শাবান’ বা শবে বরাত উৎসব ভারতে আমদানি কিভাবে হলো? শিয়াদের এই ইবাদত কিভাবে এই উপমহাদেশের সুন্নিদের মাঝে সংক্রমিত হলো তার সঠিক তথ্য না থকলেও শিয়াদের শবে বরাতের ইতিহাসের কিছু তথ্য এখানে উপস্থাপন করা গেল।
বাংলাদেশে ১৫ শাবানকে কেন্দ্র করে সারা রাত ধরে ইবাদত-বন্দেগি ও হালুয়া-রুটি সহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টিজাত খাবার তৈরি এবং সেগুলো সমগোত্রীয়দের মাঝে বিতরণ করে বেশ ঘটা করে পবিত্র শবে বরাত বা ভাগ্য রজনী পালিত হয়।
ইরানের শিয়ারা আরবি শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাতে ‘নিমে শাবান’ (অর্থাৎ আরবি শাবান মাসের অর্ধেক আরবিতে ‘নিসফে মিন শাবান’) নামে এই রজনীটি পালিত হয়। ইরানে মূলত এই রজনীটি শিয়া মাজহাবের দ্বাদশ ইমাম ‘ইমাম মাহদি’ র জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সাধারণত কয়েক রাত আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের রীতিনীতি ও আদব-কায়দা সহকারে এই রাতটি পালিত হয়। ইরানে এর প্রচলন বা ইতিহাস সম্পর্কে জানতে প্রাচীন ইরানের শবে বরাত সম্পর্কে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতকে লিখিত বেশ কিছু লেখক ও কবির উদ্ধৃতি তুলে ধরা হলো।
অতীতে লিখিত রচনাবলীতে এই রাতটিকে শাবে বারাত, লাইলাতুল বারাত, লাইলাতুল চেক (সেক), শাবে নোসখে, ‘নিমে শাবান’ শাবে ফারক ও শাবে আরজ নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবু রায়হান আল বেরুনি লিখেছেন: ‘১৫তম শাবানের রাত হচ্ছে মহত্তম রাত এবং এটিকে শাবে বারাত বলা হয়। সম্ভবত ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে পুণ্য সংগ্রহ করে নরকের আগুন থেকে বেঁচে থাকার জন্য ও ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন করার প্রক্রিয়াকে শাবে বারাত বলে।’
পঞ্চম হিজরির ফারসি গদ্য লেখক গারদিজি এই রাতের নামকরণ সম্পর্কে কিছুটা ভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন: ‘এই রাতটি শাবে বারাত নামে পরিচিত। ভাগ্যগুলো লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত আছে এবং মহান প্রভু সেখানে অবস্থান করছেন। এই রাতে মহান প্রভু লওহে মাহফুজ থেকে আকাশে নেমে আসেন। সেখান থেকেই দুনিয়াবাসির জন্য মহান প্রভুর নির্দেশ নিয়ে আসা হয়। তাই এই বিশেষ রাতকে লাইলাতুল কদর আস সাকও বলা হয়।’
কিছু কিছু গবেষক শবে বরাতের উৎসবকে ইসলামপূর্ব প্রাচীন ইরানের ফারভারদেগান উৎসবের পরিবর্তিত রূপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ ছাড়া বর্তমান ইরানে সবচেয়ে প্রচলিত মতামত হচ্ছে, এই রাতে ইমাম মাহদি জন্মগ্রহণ করেছেন। এ কারণেই ইরানের সর্বত্র উৎসবটি পালিত হয়। এই রাতে অলি-গলি, রাস্তা-ঘাট সর্বত্র আলোক সাজসজ্জা করা হয় (একটি ছবি দেয়া হলো)। ব্যপক আতশবাজি উৎসব দেখা যায়। ছাত্রাবাসসমূহে আনন্দ উৎসব পালিত হয়। বিজয় তোরণ তৈরি করা হয়। মিষ্টি ও শরবত বিতরণ করা হয়। রাস্তায়-রাস্তায় ইমাম মাহদির আগমন নিয়ে গান গাওয়া ও শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ ছাড়া ১৫ শাবান ইরানি আচার প্রথা অনুযায়ী দিন-রাত মিলাদ ও দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পথ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে কেউ হয়তো আপনাকে বাড়িয়ে দেবে শরবতের পেয়ালা, চা, কেক, ফলমূল ও চকলেটসহ হরেকরকম মিষ্টান্ন দ্রব্য।
কুর্দিস্তান প্রদেশের সাগজ অঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে যে, এই আনন্দের ভাগ্য রজনীতে মহান আল্লাহর দরবারের ঘনিষ্ঠ ও দলিল-দস্তাবেজ সংরক্ষক ফেরেশতা মিকাইল মানবজাতির আয়-রোজগার ও এক বছরের রিজিক লিখে থাকেন। এই বিশ্বাস থেকে লোকজন এই রাতে ভালো ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং পছন্দসই ফল খেতে ভালোবাসেন। এর উদ্দেশ্য হলো আগামী বছরের প্রতিটি দিন যেন একইভাবে ভালো ভালো খাবার ও পছন্দসই ফল খেতে পারেন। এ ছাড়া তারা এই রাতে প্রচুর রুজি রোজগারের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন।
ইরানের বিভিন্ন প্রদেশে এখনো অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ও ব্যাপক উৎসাহ সহকারে পালিত হয় শবে বরাত। বিশেষ করে দান-খয়রাত, বিভিন্ন প্রকারের রুটি তৈরি, সুস্বাদু মিষ্টান্ন সামানু তৈরি, মোরগ বা টার্কি উৎসর্গ করা ও বিভিন্ন ধরনের হালুয়া তৈরি এই রাতের অন্যতম আচার-আচরণ। এই রাতে দলবদ্ধভাবে বিশেষ কবিতা ও গান গাওয়াটাও এখানকার মানুষের অন্যতম বিনোদন হিসেবে চিহ্নিত। এমনি একটি ফারসি কবিতার বাংলা রূপ তুলে ধরছি:
এই রাত উৎসর্গের রাত মৃত ব্যক্তিদের ক্ষমার রাত
এই রাত ভাগ্যের রাত রাঁধো হালুয়া, আর বানাও নাবাত
এমন উৎসর্গের রাতে মাহদি রয়েছে আমাদের মোনাজাতে
এমন জন্মদিনের রাতে যেন সকলের আনন্দ আর উৎফুল্লে কাটে।
ইরানিরা পরিবারের সব সদস্য মিলে এভাবেই ইমাম মেহেদির জন্মোৎসব পালন করে থাকেন।
এই দিনে পারস্য দেশের মানুষের আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবে। কখনো কখনো আপনি ফিরে যাবেন বাংলাদেশের আনাচকানাচে শবে বরাত উৎসবের আড়ম্বরপূর্ণ ও জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে। যেখানে কিছুটা হলেও ইরান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক অভিন্নতার দেখা মিলবে। ভারতীয় উপমহাদেশের শবে বরাত কেন্দ্রিক আচার উৎসব এবং ইবাদত নিঃসন্দেহে এর সবই ইরান থেকে আমদানি করা শিয় শাসকদের কর্ম ।
[তথ্য সূত্র – প্রথম আলো শবে বরাত সংখ্যা
লেখকঃ মুমিত আল রশিদ, তেহরান (ইরান) থেকে
১৪ মে ২০১৭, ১৯:১০]
—————————————–
পরবর্তী পোষ্ট পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন
নবী বনাম মৌলভী, শবে বরাত পর্ব – ১০
https://www.facebook.com/photo?fbid=2611921729051424&set=gm.1243469135858939
মুহতারাম,
আসসালামুয়ালাইকুম,
আপনার বর্ণনা মতে – সুরা দোখানের মতে পবিত্র কুরআন শবেবরাতের রজনীতে লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ন হয়।
অথচ সূরা দুখানে বলা হয়েছে – আমি একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে। অনেক তাফসিরকারকগণ বরকতময় রাত/মুবারাক রাত বলতে শবে কদরকে বুঝিয়েছেন।
আমার প্রশ্ন:
(১) শবেবরাতের রজনীতে “লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ন হয়।” আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও পেলাম না। আপনি কোথায় পেলেন জানালে সত্যটা জানতে পারব?
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আপনার মঙ্গল করুন আমীন।
আপনি নিজেই মুরতাদ। কত সুন্দর ভন্ডামি করলেন।লাইলাতুল মুবারাকাতিন এইটা যে কদর কে বুঝানো হয়েছে সেটা কুরআন থেকেই স্পষ্ট। সূরা দুখান এ বলা হয়েছে”
وَٱلْكِتَٰبِ ٱلْمُبِي
ওয়াল কিতা-বিল মুবীন।
“শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের।”
এবং এর পরের আয়াতঃ-
إِنَّآ أَنزَلْنَٰهُ فِى لَيْلَةٍ مُّبَٰرَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ
ইন্নাআনঝালনা-হূফী লাইলাতিম মুবা-রাকাতিন ইন্না-কুন্না-মুনযিরীন।
(আমি একে নাযিল করেছি। এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।”)
অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে এই আয়াতে আল্লাহ বোঝাচ্ছেন কুরআন কে বরকতময় রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছেন।
অপর দিকে সূরা আল কদর এও একই কথা বলা হয়েছে”
إِنَّآ أَنزَلْنَٰهُ فِى لَيْلَةِ ٱلْقَدْر
ইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর।
“আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে বা মহিমান্বিত রাত্রে”
এই দুই আয়াত ভুল হতে পারেনা।একে অপরের বিরোধী হতে পারেনা।আপনি যে বর্ননা দিলেন যে, কুরআন লাওহে মাজফুজ থেকে শাবানেত ১৫ তারিখে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়েছে”এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা,বানোয়াট।আর এর কোন প্রমান আপনি দেননি।এ থেকে বোঝা যাচ্ছে আল্লাহ লাইলাতিল মুবারাকা বলতে সেই বরকতময় রাত কদকেই বলেছেন।
এবার আসি আপনার মিথ্যাচারে। আপনি যে তাফসীর গুলা উল্লেখ করলেন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, এগুলা।আমি পড়েছি রুহুল মায়ানী।ভুলে ভরা তাফসীর।অসংখ্য জাল,জঈফ, ভিত্তিহীন হাদিস বর্নিত আছে সেই তাফসিরে।অথচ তাফসিরের লেখক হাদিস গুলার একটাও প্রমান দেই নাই যে, হাদিসটি কোন গ্রন্থের।যা হাস্যকর ব্যাপার।প্রমান ছাড়াই বিশ্বাস করে নেব।আর সর্বশ্রেষ্ঠ তাফসীর গ্রন্থ “ইবনে কাসিত রঃ এর” তিনি এসব কিছু বলেন নি।আয়াতের ব্যাখ্যায়।বুখারি,মুসলিম,আবু-দাউদ এসব সহীহ গ্রন্থের একটিতেও শাবানের মধ্য রাতের কথা বর্ননা করল না।যেটা এত বড় ফজিলত পূর্ব রাত।যেই রাতের কথা কিনা কুরআনেও বর্নিত আছে।হাস্যকর।আর নাসাঈ আর বায়হাকির যে প্রমান দিলেন, তার বর্ননা কারী রাবীরা কতটা ঠিক মিলিয়ে দেখেছেন কখনো। দুর্বল বর্ণনা। হাসান হাদিসের কাছেও যায় না।
তাই বলি এতবড় লেখক হয়ে এত কাচা লেখা লেখবেন না।একটু পড়ে,জেনে পরে লিখুন।
আর আপনার যদি ইসলামের মৌলিক বিষয়ের প্রতি সামান্য জ্ঞান থাকত, তবে ভাগ্য পরিবর্তন এর রজনী বলতেন না।ভাগ্য যখন-তখন চেঞ্জ হতে পারে, তার কর্ম দ্বারা।
তাই নিজে মুরতাদ হয়েছেন কিনা দেখুন।