০৯:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

কর্মসহায়ক গবেষণা কী এবং শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

মু. মিজানুর রহমান মিজান
  • প্রকাশ: ০৫:৪৭:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মে ২০২১
  • / ১৫৬৬১ বার পড়া হয়েছে

Photo by javier trueba on Unsplash


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

গবেষণা হলো সত্য অনুসন্ধানের জন্য পরিচালিত বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া। গবেষণা পরীক্ষিত বিশেষ যুক্তিপূর্ণ নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত হয় যার মূল লক্ষ্য হলো বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে এর লক্ষ্য। বিভিন্ন প্রকারের গবেষণার মধ্যে কর্মসহায়ক গবেষণা একটি জনপ্রিয় ধরন যার মাধ্যমে মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার পেশাগত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে সেই সমস্যা সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন। এই নিবন্ধে কর্মসহায়ক গবেষণা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

কর্মসহায়ক গবেষণা কী

কর্মসহায়ক গবেষণা বা Action research হলো এমন এক ধরনের গবেষণা যা তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে করা হয়। কারো দক্ষতা বিষয়ক কোনো সমস্যার তুলনামূলকভাবে কার্যকরী সমাধানের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয় তাকে কর্মসহায়ক গবেষণা বলে। কর্মসহায়ক গবেষণর মূল লক্ষ্য হলো ব্যক্তির বিদ্যমান অবস্থার বা কর্মদক্ষতার তুলনামূলক ইতিবাচক ও কার্যকর পরিবর্তন। এ ধরনের গবেষণা হয়ে থাকে পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট নির্ভর। পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বিচারে সমস্যা নির্ধারণের পর তা সমাধানের উদ্দেশ্যে কর্মসহায়ক গবেষণা পরিচালিত হয় যা পর্যবেক্ষণযোগ্য অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কর্মসহায়ক গবেষণা সর্বদা অংশগ্রহণকেন্দ্রিক ও চলমান প্রক্রিয়া।

শিক্ষাবিদদের মতে কর্মসহায়ক গবেষণার সংজ্ঞা

সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মদক্ষতায় ত্রুটি বা সমস্যার দ্রুত ও কার্যকরী সমাধানের উদ্দেশ্যে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে যে গবেষণা পরিচালিত হয় তাকে কর্মসহায়ক গবেষণা বলে।

স্টুয়ার্ট বলেছেন, “কর্মের উপযোগী গবেষণা হলো এমন একটি ধারাবাহিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ কোনো সামাজিক পরিবেশে তাদের নিজের অবস্থা অনুসন্ধান করে তা উন্নয়নের জন্য স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে”।

কেমিস ও ম্যাকট্যাগার্ট (Kemmis and McTaggart) ১৯৮৮ সালে কর্মসহায়ক গবেষণার সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে, “কর্মসহায়ক গবেষণা হলো একটি সমষ্টিগত, আত্মপ্রতিফলনমূলক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যা সমাজের সদস্যদের মাধ্যমে তাদের নিজেদের কার্য প্রক্রিয়া বা সামাজিক আচরণ বা চর্চার উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়”।

ইলিয়ট (১৯৯১) বলেছেন, “কর্মসহায়ক গবেষণা পেশাদারদের নির্দিষ্ট জটিলতর মানব পরিবেশে নিজ কার্যাবলির বিশ্লেষণ ও বিচারপূর্বক উন্নয়নের ক্ষমতা প্রদান করে”।

হার্বার্ট অ্যালরিকটার, পিটার পশ এবং ব্রিজেট সোমেখ তাঁদের লিখিত Teachers Investigate Their Work  (১৯৯৩) বইয়ে লেখেন, “কর্মসহায়ক গবেষণা এমন পদ্ধতি যা শিক্ষককে আত্মপ্রতিফলনের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো বিষয়ক সমস্যা ও বাধাসমূহ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। শিক্ষকগণ কর্মসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষণ-শিখন কার্যের মানোন্নয়নের সম্ভাব্য উপায় নির্ধারণে উদ্যোগী হন এবং বিদ্যালয় পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাতে সচেষ্ট হন”। এই তিন লেখক বইটিতে শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণাকে সবচেয়ে জনপ্রয় পদ্ধতির একটি বলে চিহ্নিত করেন।

নির্বাচিত এই সংজ্ঞাগুলোর প্রতি খেয়াল করলে কর্মসহায়ক বা কার্যোপযোগী গবেষণার ধারণা সম্পর্কে সকলেই বেশ স্পষ্ট হয়ে যাবে।

কর্মসহায়ক গবেষণা কী? কর্মসহায়ক গবেষণার সংজ্ঞা, পটভূমি বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব
কর্মসহায়ক গবেষণা কী? শ্রেণি শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে কর্মসহায়ক গবেষণার কী ভূমিকা রাখে? কর্মসহায়ক গবেষণার বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব কী? | Photo by javier trueba on Unsplash

কর্মসহায়ক গবেষণার পটভূমি

গবেষণা জগতে কর্মসহায়ক গবেষণা একটি নবতর সংযোজন যা সামাজিক গবেষণার অন্তর্ভুক্ত। ধারণা করা হয় বিশ শতকের গোড়ার দিকে কর্মসহায়ক গবেষণার উৎপত্তি। কুর্ট লুইন (Kurt Lewin) কে কর্মসহায়ক গবেষণার জনক বলা হয়।

১৯৪৬ সালে কুর্ট লুইন কর্মসহায়ক গবেষণার তিনটি নীতি; এবং সংজ্ঞা প্রদান করেন যার কারনে তাকে কর্মসহায়ক গবেষণার জনক বলা হয়। তিনি এই ধারণার অবতারণা করেন ১৯২০ সালে।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন রকম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ, সামাজিক মনোবিজ্ঞানের উপস্থিতি, প্রশিক্ষণে দলগত প্রচেষ্টার সাফল্য, শিক্ষাবিদদের পরীক্ষণমূলক ও প্রগতিশীল শিক্ষা চিন্তার বিকাশ ইত্যাদির মধ্য দিয়েই কর্মসহায়ক গবেষণার ভিত প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর উন্মেষ ঘটতে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মসহায়ক গবেষণার সূত্রপাত ঘটে চল্লিশের দশকে। কর্মসহায়ক গবেষণার প্রবর্তক কুর্ট লুইন হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে এর ব্যবহার  প্রথম করেন স্টিফেন এম. কোরি।

চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসহায়ক গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করা হয় তবে শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণার এই নবতর ধারাকে শিক্ষকদের জন্য প্রথম ব্যবহার করে দেখিয়েছেন ড. স্টিফেন ম্যাক্সওয়েল কোরি (Stephen Maxwell Corey) । স্টিফেন ম্যাক্সওয়েল কোরি ১৯৫৩ সালে ‘Action Research to Improve School Practices’ নামে একটি বই লেখেন যার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রথম কর্মসহায়ক গবেষণা প্রয়োগের সূচনা হয়।

১৯৫৩ সালে স্টিফেন ম্যাক্সওয়েল কোরির বিদ্যালয়ে কর্মসহায়ক গবেষণার ওপর লিখিত বইটি প্রকাশিত হওয়ায় পর থেকেই শিক্ষকমহলে কর্মসহায়ক গবেষণা সম্পর্কে আগ্রহ বাড়তে থাকে। শিক্ষাক্রমের নকশা প্রণয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষায় বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমালোচনায় এই গবেষণা পদ্ধতিটি সাধারণ কৌশল হিসেবে ব্যবহারের ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তাই পঞ্চাশের দশককে সহযোগিতাভিত্তিক কর্মসহায়ক গবেষণার যুগ বলা হয়।

পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে এই কর্মসহায়ক গবেষণা নিয়ে অনেক শিক্ষাবিদ সমালোচনার খোলসে নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকেন যার ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগের আগ্রহ অনেকটা লোপ পায়। মাঝখানে একটি দশক ফেলে সত্তরের দশকে পুনরায় কর্মসহায়ক গবেষণার গুরূত্ব লাভ করে। ষাট ও সত্তরের দশকে কর্মসহায়ক গবেষণার ওপর গুরত্বারোপ করে একজন শিক্ষাবিদ লরেন্স স্টেনহাউস (Lawrenence Stenhouse) ‘teacher as researcher’ বা ‘গবেষক হিসেবে শিক্ষক’ এই ধারণার বিকাশে বেশ পরিশ্রম করেছেন। শ্রেণিকক্ষে কর্মসহায়ক গত ৩০-৪০ বছরে যেসব দেশ খুবই গুরুত্বের সাথে দেখেছে সেসবের মধ্যে অন্যতম, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন ইউরোপিয় দেশ।

কর্মসহায়ক গবেষণার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

এখানে কর্মসহায়ক গবেষণার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো

  • কর্মসহায়ক বা কার্যোপযোগী গবেষণার তিনটি প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করার চেষ্টা করে; এগুলো হলো- ‘কী, কেন এবং কীভাবে।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা কোনো না কোনো পরিস্থিতি নির্ভর হয়ে থাকে যা সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত সমস্যা চিহ্নিত করা এবং একই প্রেক্ষাপটেই তা সমাধান করার সাথে এটি জড়িত।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা একটি অংশগ্রহণকেন্দ্রিক গবেষণা যা বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট সকলেই অংশগ্রহণ করেন।
  • শিক্ষক এককভাবে নিজে এবং অন্য কোনো গবেষকের সহায়তা নিয়ে উভয়ভাবে কর্মসহায়ক গবেষণা যায়। যদি অন্য কোনো গবেষকের সহযোগিতা নেওয়া হয় তাহলে সেই গবেষকের ভূমিকা হবে সহায়কের অর্থাৎ শিক্ষক সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে আর গবেষক তাকে বিভিন্ন রকম সহযোগিতা করবে ও দিক নির্দেশনা দিবে।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা সহযোগিতামূলক যেখানে গবেষক ও পেশাদার একত্রে একই সাথে কাজ করেন।
  • কর্মসহায়ক গবেষণার একটি একটি অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া হলো স্ব-মূল্যায়ন যা বিরাজমান পরিস্থিতিতে সমস্ত পরিবর্তন ও পরিমার্জন অব্যাহতভাবে মূল্যায়ন করে।
  • পদ্ধতিগত দিক বিবেচনায় কর্মসহায়ক গবেষণা একাধিক পদ্ধতিভিত্তিক। তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে একাধিক পদ্ধতির সমন্বয় সাধন করা হয় যাতে যথার্থ তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তা সমস্যার সঠিক সমাধান করা যায়।
  • কর্মসহায়ক গবেষনায় সংলাপ ও মত বিনিময়ের মাধ্যমে সমস্যাকে বোঝার চেষ্টা করা হয় এবং সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা একমুখী নয়, বরং একাধিকমুখী; চক্রাকার হতে পারে।
  • কর্মসহায়ক গবেষণার নকশা নমনীয়, প্রয়োজন হলে গবেষণা চলমান অবস্থায়ও পরিবর্তন সম্ভব।
  • ছোটো থেকে বড়ো, অনুসন্ধানের মাধ্যমে যে-কোনো আকারের সমস্যা সমাধানের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা পরিচালনা করা সম্ভব।

কর্মসহায়ক গবেষণার উদ্দেশ্য

সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা শাখার অন্তর্ভুক্ত বিশেষ এই গবেষণা অর্থাৎ কর্মসহায়ক গবেষোণার প্রধান দুই ধরনের উদ্দেশ্য রয়েছে, যথা- ১. কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতিকে বিস্তারিত ও গভীরভাবে জানা ও বুঝা এবং ২. প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নয়ন বা সমস্যার সমাধান করে বিদ্যমান ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন। প্রচলিত অন সকল গবেষণার মতোই কর্মসহায়ক গবেষণার উদ্দেশ্য শুধু নতুন জ্ঞানার্জণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নয়নে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা। এক কথায়, কর্মসহায়ক গবেষণার উদ্দেশ্য হলো তত্ত্ব (theory) ও চর্চার (practice) সমন্বয়সাধন।

শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণার গুরুত্ব

পেশাদার ব্যক্তি এবং শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে হলে এই গবেষণার প্রকৃতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। অল্প কথায় নিচের এর গুরুত্ব সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো:

  • কর্মসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে কোনো সমস্যার স্বরূপ, কারণ ও সমাধান পাওয়া যায়।
  • পেশাগত চর্চার বিদ্যমান অবস্থায় পরিবর্তন এনে এর উন্নয়ন ঘটানো কর্মসহায়ক গবেষণার কাজ।
  • কর্মসহায়ক গবেষণায় নিয়োজিত থাকা প্রত্যেক শিক্ষক বা প্রশাসকের মনে আত্মসমালোচনার মনোভাব গড়ে ওঠে যা পেশাগত উন্নয়ন ঘটাতে সহায়ক।
  • কর্মসহায়ক গবেষণায় জড়িত শিক্ষক পেশাগত দায়িত্ব, শিক্ষার্থীর শিখনমান এবং শ্রেণিকক্ষ কার্যাবলির মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।
  • কর্মসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে একজন শ্রেণি শিক্ষক গবেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে উৎসাহিত হন; ফলে শিক্ষক তাঁর শিখন-শেখানো কার্যাবলির মান যাচাই করতে উদ্যোগী হন।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা শিক্ষক নিজের কর্মস্থলে সম্পন্ন করতে পারেন যে কারণে তিনি নিজস্ব সময় ও পরিকল্পনা অনুযায়ী গবেষণা পরিচালনা করতে পারেন।
  • স্থানীয়ভাবে স্থানীয় ব্যক্তির মাধ্যমে কর্মসহায়ক গবেষণা সম্পন্ন হয় বলে অন্যান্য গবেষণার মতো এই গবেষণার জন্য খুব বাড়তি খরচের প্রয়োজন হয় না।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা ধারাবাহিক এবং বহুমুখী পদ্ধতিতে সম্পাদিত হয় বলে এর ফল দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা এতে অংশগ্রহণকারীদের আত্মপ্রত্যয়ী এবং প্রতিশ্রুতিশীল করে তোলে।
  • এই কর্মসহায়ক গবেষণা শিক্ষার্থীদেরকেও কার্যকর এবং মানসম্মত শিখনে সহযোগিতা করে।
  • গবেষক নিজেই নিজের সমস্যা নিয়ে গবেষণা করেন ফলে গবেষকের পক্ষে ঘটনা বুঝা এবং এর উন্নয়ন বা সমাধান করা সহজ হয়।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা ধারাবাহিক বলে ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে যতক্ষণ না সমস্যার সমাধান অর্জিত হয়।
  • গণতান্ত্রিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে স্থানীয় (বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শ্রেণি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রশাসক, ব্যবস্থাপক ইত্যাদি) সকলের অংশগ্রহণে সহযোগিতার ভিত্তিতে কর্মসহায়ক গবেষণা পরিচালিত হয় বলে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহমর্মিতার ভিত প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সংঘটিত মিথষ্ক্রিয়ার মানোন্নয়নে কর্মসহায়ক গবেষণা কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

কর্মসহায়ক গবেষণার কাজ হলো পেশাগত কর্মদক্ষতার বিদ্যমান অবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনে তা আরও কার্যকরী করা। একজন শ্রেণি শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। যে শিক্ষক কর্মসহায়ক গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত থাকেন তাঁর মনে খুব সহজেই আত্মসমালোচনার মনোভাব গড়ে যা তাঁর নিজ পেশার উন্নয়ন ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কর্মসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে একজন শ্রেণি শিক্ষক বুঝতে পারেন বা সনাক্ত করতে পারেন তাঁর শিখন-শেখানোর দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানোর জন্য কোন কোন প্রতিবন্ধকতা আছ, ফলে তাঁর পক্ষে পেশাগত উন্নয়ন ঘটানো সহজ হয়ে যায়। আর এ ধরনের গবেষণা যেহেতু কর্মস্থলেই সম্পন্ন হয় সেহেতু শিক্ষক তার নিজস্ব সময় ও পরিকল্পনা অনুসরণ করে গবেষণা পরিচালনা করতে পারেন। কর্মস্থলে পরিচালিত হয় বলে এই গবেষণার জন্য অতিরিক্ত খরচ খুব একটা প্রয়োজন হয় না। একটি গণতান্ত্রিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে স্থানীয় ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে ও সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয় বলে পারস্পরিক বোঝাপড়া বা সহমর্মিতার ভিত প্রতিষ্ঠিত হয় যা শিক্ষকের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। প্রশ্ন উঠতে পারে যে, স্থানীয় ব্যক্তি কারা? এখানে বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যক্তিরা হলো – শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রশাসক বা নির্দিষ্ট কর্মের সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলে।

যে-কোনো ভাবেই হোক শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণায় দক্ষতা অর্জন করা এবং এর চর্চা করা খুব জরুরি। যেখানে শ্রেণিশিক্ষণের মান কার্যকর শিখনের জন্য উপযুক্ত নয় সেখানে শিক্ষার্থীর মধ্যে শিখন দক্ষতার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর শ্রেণিকক্ষে শ্রেণি শিক্ষকের ভূমিকাই মূখ্য, সেহেতু শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষা গবেষণা সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

শেয়ার করুন

One thought on “কর্মসহায়ক গবেষণা কী এবং শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মু. মিজানুর রহমান মিজান

মু. মিজানুর রহমান মিজান একজন স্বাধীন শিক্ষামূলক লেখক। তিনি শিক্ষা গবেষণায় বেশ আগ্রহী। যৌথভাবে কিছু গবেষণায়ও অংশ নিয়েছেন।

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

কর্মসহায়ক গবেষণা কী এবং শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

প্রকাশ: ০৫:৪৭:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মে ২০২১

গবেষণা হলো সত্য অনুসন্ধানের জন্য পরিচালিত বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া। গবেষণা পরীক্ষিত বিশেষ যুক্তিপূর্ণ নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত হয় যার মূল লক্ষ্য হলো বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে এর লক্ষ্য। বিভিন্ন প্রকারের গবেষণার মধ্যে কর্মসহায়ক গবেষণা একটি জনপ্রিয় ধরন যার মাধ্যমে মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার পেশাগত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে সেই সমস্যা সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন। এই নিবন্ধে কর্মসহায়ক গবেষণা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

কর্মসহায়ক গবেষণা কী

কর্মসহায়ক গবেষণা বা Action research হলো এমন এক ধরনের গবেষণা যা তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে করা হয়। কারো দক্ষতা বিষয়ক কোনো সমস্যার তুলনামূলকভাবে কার্যকরী সমাধানের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয় তাকে কর্মসহায়ক গবেষণা বলে। কর্মসহায়ক গবেষণর মূল লক্ষ্য হলো ব্যক্তির বিদ্যমান অবস্থার বা কর্মদক্ষতার তুলনামূলক ইতিবাচক ও কার্যকর পরিবর্তন। এ ধরনের গবেষণা হয়ে থাকে পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট নির্ভর। পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বিচারে সমস্যা নির্ধারণের পর তা সমাধানের উদ্দেশ্যে কর্মসহায়ক গবেষণা পরিচালিত হয় যা পর্যবেক্ষণযোগ্য অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কর্মসহায়ক গবেষণা সর্বদা অংশগ্রহণকেন্দ্রিক ও চলমান প্রক্রিয়া।

শিক্ষাবিদদের মতে কর্মসহায়ক গবেষণার সংজ্ঞা

সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মদক্ষতায় ত্রুটি বা সমস্যার দ্রুত ও কার্যকরী সমাধানের উদ্দেশ্যে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে যে গবেষণা পরিচালিত হয় তাকে কর্মসহায়ক গবেষণা বলে।

স্টুয়ার্ট বলেছেন, “কর্মের উপযোগী গবেষণা হলো এমন একটি ধারাবাহিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ কোনো সামাজিক পরিবেশে তাদের নিজের অবস্থা অনুসন্ধান করে তা উন্নয়নের জন্য স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে”।

কেমিস ও ম্যাকট্যাগার্ট (Kemmis and McTaggart) ১৯৮৮ সালে কর্মসহায়ক গবেষণার সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে, “কর্মসহায়ক গবেষণা হলো একটি সমষ্টিগত, আত্মপ্রতিফলনমূলক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যা সমাজের সদস্যদের মাধ্যমে তাদের নিজেদের কার্য প্রক্রিয়া বা সামাজিক আচরণ বা চর্চার উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়”।

ইলিয়ট (১৯৯১) বলেছেন, “কর্মসহায়ক গবেষণা পেশাদারদের নির্দিষ্ট জটিলতর মানব পরিবেশে নিজ কার্যাবলির বিশ্লেষণ ও বিচারপূর্বক উন্নয়নের ক্ষমতা প্রদান করে”।

হার্বার্ট অ্যালরিকটার, পিটার পশ এবং ব্রিজেট সোমেখ তাঁদের লিখিত Teachers Investigate Their Work  (১৯৯৩) বইয়ে লেখেন, “কর্মসহায়ক গবেষণা এমন পদ্ধতি যা শিক্ষককে আত্মপ্রতিফলনের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো বিষয়ক সমস্যা ও বাধাসমূহ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। শিক্ষকগণ কর্মসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষণ-শিখন কার্যের মানোন্নয়নের সম্ভাব্য উপায় নির্ধারণে উদ্যোগী হন এবং বিদ্যালয় পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাতে সচেষ্ট হন”। এই তিন লেখক বইটিতে শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণাকে সবচেয়ে জনপ্রয় পদ্ধতির একটি বলে চিহ্নিত করেন।

নির্বাচিত এই সংজ্ঞাগুলোর প্রতি খেয়াল করলে কর্মসহায়ক বা কার্যোপযোগী গবেষণার ধারণা সম্পর্কে সকলেই বেশ স্পষ্ট হয়ে যাবে।

কর্মসহায়ক গবেষণা কী? কর্মসহায়ক গবেষণার সংজ্ঞা, পটভূমি বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব
কর্মসহায়ক গবেষণা কী? শ্রেণি শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে কর্মসহায়ক গবেষণার কী ভূমিকা রাখে? কর্মসহায়ক গবেষণার বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব কী? | Photo by javier trueba on Unsplash

কর্মসহায়ক গবেষণার পটভূমি

গবেষণা জগতে কর্মসহায়ক গবেষণা একটি নবতর সংযোজন যা সামাজিক গবেষণার অন্তর্ভুক্ত। ধারণা করা হয় বিশ শতকের গোড়ার দিকে কর্মসহায়ক গবেষণার উৎপত্তি। কুর্ট লুইন (Kurt Lewin) কে কর্মসহায়ক গবেষণার জনক বলা হয়।

১৯৪৬ সালে কুর্ট লুইন কর্মসহায়ক গবেষণার তিনটি নীতি; এবং সংজ্ঞা প্রদান করেন যার কারনে তাকে কর্মসহায়ক গবেষণার জনক বলা হয়। তিনি এই ধারণার অবতারণা করেন ১৯২০ সালে।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন রকম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ, সামাজিক মনোবিজ্ঞানের উপস্থিতি, প্রশিক্ষণে দলগত প্রচেষ্টার সাফল্য, শিক্ষাবিদদের পরীক্ষণমূলক ও প্রগতিশীল শিক্ষা চিন্তার বিকাশ ইত্যাদির মধ্য দিয়েই কর্মসহায়ক গবেষণার ভিত প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর উন্মেষ ঘটতে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মসহায়ক গবেষণার সূত্রপাত ঘটে চল্লিশের দশকে। কর্মসহায়ক গবেষণার প্রবর্তক কুর্ট লুইন হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে এর ব্যবহার  প্রথম করেন স্টিফেন এম. কোরি।

চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসহায়ক গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করা হয় তবে শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণার এই নবতর ধারাকে শিক্ষকদের জন্য প্রথম ব্যবহার করে দেখিয়েছেন ড. স্টিফেন ম্যাক্সওয়েল কোরি (Stephen Maxwell Corey) । স্টিফেন ম্যাক্সওয়েল কোরি ১৯৫৩ সালে ‘Action Research to Improve School Practices’ নামে একটি বই লেখেন যার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রথম কর্মসহায়ক গবেষণা প্রয়োগের সূচনা হয়।

১৯৫৩ সালে স্টিফেন ম্যাক্সওয়েল কোরির বিদ্যালয়ে কর্মসহায়ক গবেষণার ওপর লিখিত বইটি প্রকাশিত হওয়ায় পর থেকেই শিক্ষকমহলে কর্মসহায়ক গবেষণা সম্পর্কে আগ্রহ বাড়তে থাকে। শিক্ষাক্রমের নকশা প্রণয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষায় বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমালোচনায় এই গবেষণা পদ্ধতিটি সাধারণ কৌশল হিসেবে ব্যবহারের ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তাই পঞ্চাশের দশককে সহযোগিতাভিত্তিক কর্মসহায়ক গবেষণার যুগ বলা হয়।

পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে এই কর্মসহায়ক গবেষণা নিয়ে অনেক শিক্ষাবিদ সমালোচনার খোলসে নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকেন যার ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগের আগ্রহ অনেকটা লোপ পায়। মাঝখানে একটি দশক ফেলে সত্তরের দশকে পুনরায় কর্মসহায়ক গবেষণার গুরূত্ব লাভ করে। ষাট ও সত্তরের দশকে কর্মসহায়ক গবেষণার ওপর গুরত্বারোপ করে একজন শিক্ষাবিদ লরেন্স স্টেনহাউস (Lawrenence Stenhouse) ‘teacher as researcher’ বা ‘গবেষক হিসেবে শিক্ষক’ এই ধারণার বিকাশে বেশ পরিশ্রম করেছেন। শ্রেণিকক্ষে কর্মসহায়ক গত ৩০-৪০ বছরে যেসব দেশ খুবই গুরুত্বের সাথে দেখেছে সেসবের মধ্যে অন্যতম, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন ইউরোপিয় দেশ।

কর্মসহায়ক গবেষণার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

এখানে কর্মসহায়ক গবেষণার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো

  • কর্মসহায়ক বা কার্যোপযোগী গবেষণার তিনটি প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করার চেষ্টা করে; এগুলো হলো- ‘কী, কেন এবং কীভাবে।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা কোনো না কোনো পরিস্থিতি নির্ভর হয়ে থাকে যা সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত সমস্যা চিহ্নিত করা এবং একই প্রেক্ষাপটেই তা সমাধান করার সাথে এটি জড়িত।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা একটি অংশগ্রহণকেন্দ্রিক গবেষণা যা বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট সকলেই অংশগ্রহণ করেন।
  • শিক্ষক এককভাবে নিজে এবং অন্য কোনো গবেষকের সহায়তা নিয়ে উভয়ভাবে কর্মসহায়ক গবেষণা যায়। যদি অন্য কোনো গবেষকের সহযোগিতা নেওয়া হয় তাহলে সেই গবেষকের ভূমিকা হবে সহায়কের অর্থাৎ শিক্ষক সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে আর গবেষক তাকে বিভিন্ন রকম সহযোগিতা করবে ও দিক নির্দেশনা দিবে।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা সহযোগিতামূলক যেখানে গবেষক ও পেশাদার একত্রে একই সাথে কাজ করেন।
  • কর্মসহায়ক গবেষণার একটি একটি অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া হলো স্ব-মূল্যায়ন যা বিরাজমান পরিস্থিতিতে সমস্ত পরিবর্তন ও পরিমার্জন অব্যাহতভাবে মূল্যায়ন করে।
  • পদ্ধতিগত দিক বিবেচনায় কর্মসহায়ক গবেষণা একাধিক পদ্ধতিভিত্তিক। তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে একাধিক পদ্ধতির সমন্বয় সাধন করা হয় যাতে যথার্থ তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তা সমস্যার সঠিক সমাধান করা যায়।
  • কর্মসহায়ক গবেষনায় সংলাপ ও মত বিনিময়ের মাধ্যমে সমস্যাকে বোঝার চেষ্টা করা হয় এবং সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা একমুখী নয়, বরং একাধিকমুখী; চক্রাকার হতে পারে।
  • কর্মসহায়ক গবেষণার নকশা নমনীয়, প্রয়োজন হলে গবেষণা চলমান অবস্থায়ও পরিবর্তন সম্ভব।
  • ছোটো থেকে বড়ো, অনুসন্ধানের মাধ্যমে যে-কোনো আকারের সমস্যা সমাধানের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা পরিচালনা করা সম্ভব।

কর্মসহায়ক গবেষণার উদ্দেশ্য

সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা শাখার অন্তর্ভুক্ত বিশেষ এই গবেষণা অর্থাৎ কর্মসহায়ক গবেষোণার প্রধান দুই ধরনের উদ্দেশ্য রয়েছে, যথা- ১. কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতিকে বিস্তারিত ও গভীরভাবে জানা ও বুঝা এবং ২. প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নয়ন বা সমস্যার সমাধান করে বিদ্যমান ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন। প্রচলিত অন সকল গবেষণার মতোই কর্মসহায়ক গবেষণার উদ্দেশ্য শুধু নতুন জ্ঞানার্জণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নয়নে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা। এক কথায়, কর্মসহায়ক গবেষণার উদ্দেশ্য হলো তত্ত্ব (theory) ও চর্চার (practice) সমন্বয়সাধন।

শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণার গুরুত্ব

পেশাদার ব্যক্তি এবং শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে হলে এই গবেষণার প্রকৃতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। অল্প কথায় নিচের এর গুরুত্ব সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো:

  • কর্মসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে কোনো সমস্যার স্বরূপ, কারণ ও সমাধান পাওয়া যায়।
  • পেশাগত চর্চার বিদ্যমান অবস্থায় পরিবর্তন এনে এর উন্নয়ন ঘটানো কর্মসহায়ক গবেষণার কাজ।
  • কর্মসহায়ক গবেষণায় নিয়োজিত থাকা প্রত্যেক শিক্ষক বা প্রশাসকের মনে আত্মসমালোচনার মনোভাব গড়ে ওঠে যা পেশাগত উন্নয়ন ঘটাতে সহায়ক।
  • কর্মসহায়ক গবেষণায় জড়িত শিক্ষক পেশাগত দায়িত্ব, শিক্ষার্থীর শিখনমান এবং শ্রেণিকক্ষ কার্যাবলির মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।
  • কর্মসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে একজন শ্রেণি শিক্ষক গবেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে উৎসাহিত হন; ফলে শিক্ষক তাঁর শিখন-শেখানো কার্যাবলির মান যাচাই করতে উদ্যোগী হন।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা শিক্ষক নিজের কর্মস্থলে সম্পন্ন করতে পারেন যে কারণে তিনি নিজস্ব সময় ও পরিকল্পনা অনুযায়ী গবেষণা পরিচালনা করতে পারেন।
  • স্থানীয়ভাবে স্থানীয় ব্যক্তির মাধ্যমে কর্মসহায়ক গবেষণা সম্পন্ন হয় বলে অন্যান্য গবেষণার মতো এই গবেষণার জন্য খুব বাড়তি খরচের প্রয়োজন হয় না।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা ধারাবাহিক এবং বহুমুখী পদ্ধতিতে সম্পাদিত হয় বলে এর ফল দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা এতে অংশগ্রহণকারীদের আত্মপ্রত্যয়ী এবং প্রতিশ্রুতিশীল করে তোলে।
  • এই কর্মসহায়ক গবেষণা শিক্ষার্থীদেরকেও কার্যকর এবং মানসম্মত শিখনে সহযোগিতা করে।
  • গবেষক নিজেই নিজের সমস্যা নিয়ে গবেষণা করেন ফলে গবেষকের পক্ষে ঘটনা বুঝা এবং এর উন্নয়ন বা সমাধান করা সহজ হয়।
  • কর্মসহায়ক গবেষণা ধারাবাহিক বলে ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে যতক্ষণ না সমস্যার সমাধান অর্জিত হয়।
  • গণতান্ত্রিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে স্থানীয় (বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শ্রেণি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রশাসক, ব্যবস্থাপক ইত্যাদি) সকলের অংশগ্রহণে সহযোগিতার ভিত্তিতে কর্মসহায়ক গবেষণা পরিচালিত হয় বলে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহমর্মিতার ভিত প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সংঘটিত মিথষ্ক্রিয়ার মানোন্নয়নে কর্মসহায়ক গবেষণা কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

কর্মসহায়ক গবেষণার কাজ হলো পেশাগত কর্মদক্ষতার বিদ্যমান অবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনে তা আরও কার্যকরী করা। একজন শ্রেণি শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। যে শিক্ষক কর্মসহায়ক গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত থাকেন তাঁর মনে খুব সহজেই আত্মসমালোচনার মনোভাব গড়ে যা তাঁর নিজ পেশার উন্নয়ন ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কর্মসহায়ক গবেষণার মাধ্যমে একজন শ্রেণি শিক্ষক বুঝতে পারেন বা সনাক্ত করতে পারেন তাঁর শিখন-শেখানোর দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানোর জন্য কোন কোন প্রতিবন্ধকতা আছ, ফলে তাঁর পক্ষে পেশাগত উন্নয়ন ঘটানো সহজ হয়ে যায়। আর এ ধরনের গবেষণা যেহেতু কর্মস্থলেই সম্পন্ন হয় সেহেতু শিক্ষক তার নিজস্ব সময় ও পরিকল্পনা অনুসরণ করে গবেষণা পরিচালনা করতে পারেন। কর্মস্থলে পরিচালিত হয় বলে এই গবেষণার জন্য অতিরিক্ত খরচ খুব একটা প্রয়োজন হয় না। একটি গণতান্ত্রিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে স্থানীয় ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে ও সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয় বলে পারস্পরিক বোঝাপড়া বা সহমর্মিতার ভিত প্রতিষ্ঠিত হয় যা শিক্ষকের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। প্রশ্ন উঠতে পারে যে, স্থানীয় ব্যক্তি কারা? এখানে বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যক্তিরা হলো – শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রশাসক বা নির্দিষ্ট কর্মের সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলে।

যে-কোনো ভাবেই হোক শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণায় দক্ষতা অর্জন করা এবং এর চর্চা করা খুব জরুরি। যেখানে শ্রেণিশিক্ষণের মান কার্যকর শিখনের জন্য উপযুক্ত নয় সেখানে শিক্ষার্থীর মধ্যে শিখন দক্ষতার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর শ্রেণিকক্ষে শ্রেণি শিক্ষকের ভূমিকাই মূখ্য, সেহেতু শ্রেণি শিক্ষকের জন্য কর্মসহায়ক গবেষণা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষা গবেষণা সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন