দ্য হানড্রেড: ক্রিকেটের নতুন সংস্করণের নিয়ম ও পরিচিতি
- প্রকাশ: ০৫:০১:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১
- / ১২৩৯ বার পড়া হয়েছে
ক্রিকেটে দ্য হানড্রেড (The Hundred) নামে যুক্ত হয়েছে নতুন সংস্করণ। এই নিবন্ধে মোটামুটিভাবে ক্রিকেটের নতুন ও সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণ দ্য হাড্রেড নিয়ে লেখা হয়েছে।
ক্রিকেট হলো বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। তবে ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেট খেলা হিসেবে সারাবিশ্বে কতটুকু জনপ্রিয় সেটা ঠিক করে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু খেলাটি ফুটবলের ধারে কাছেও নেই জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতায়।
খেলাধুলা জগতে জনপ্রিয়তা কিংবা গ্রহণযোগ্যতায় কতদূর এগিয়েছে ক্রিকেট সেটি ঠিক করে না বলা গেলেও আরেকটি দিকে ঠিক এগিয়েছে। এই দিকটি হলো বিভিন্ন রকম সংস্করণ যুক্ত করা, নিয়মিত বিভিন্ন নতুন নিয়ম যুক্ত করা ও পুরোনো নিয়ম বাতিল করা, বিভিন্ন টুর্নামেন্ট বিন্যাসের (Tournament format) বারবার অস্বাভাবিক পরিবর্তন ইত্যাদি। ক্রিকেট মৌলিক রীতির খেলা নয়। টেস্ট, ওয়ান ডে, টি টোয়েন্টি, টি টেনের মতো সংস্করণ ইতোমধ্যেই চলমান রয়েছে।
টি টেন আরব আমিরাতের ঘরোয়া পরিবেশে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত এটির কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি।
অনেক দিন ধরেই কানাঘুষা চলছিল যে, ক্রিকেট পেতে চলেছে নতুন একটি সংস্করণ। আর সেটি হবে ১০০ বলের ক্রিকেট। হলোও তাই। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (England and Wales Cricket Board – ECB) নতুন এই ক্রিকেট ফরম্যাটের প্রস্ততি সেরে নিয়েছে।
ক্রিকেটের পাতায় যুক্ত হওয়া নতুন ও সর্বশেষ যুক্ত হওয়া সংস্করণটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য হানড্রেড’। প্রতি দল ১০০ টি বল মোকাবেলার সুযোগ পাবে বলেই এমন নামকরণ করা হয়েছে। দ্য হানড্রেড নামের ক্রিকেটে পুরনো নিয়মের কোনো বালাই থাকছে না। সম্পূর্ণ নতুন নিয়মে চলবে এই খেলা। এই যেমন, দ্য হানড্রেড ফরম্যাটে ৬ বলে ১ ওভার বলে কোনো কিছু রাখা হচ্ছে না। প্রচলিত ৬ বলে ১ ওভার গণনা করার পরিবর্তে ৫ বলে ১ ওভার গণনা করা হবে।
আর অল্প দিনের মধ্যে শুরু হতে চলা দ্য হানড্রেড নিয়ে ইংল্যান্ড অ্যালস ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড খুবই আশাবাদী। এমন কি দ্য হানড্রেড ক্রিকেটের মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড প্রথমবারের মতো ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্টে ডিআরএস (Decission Review Syestem – DRS) ব্যবহার করবে।
দ্য হানড্রেড ক্রিকেটের কী নিয়মাবলি যুক্ত হতে চলছে তা এক নজরে জেনে নেওয়া যাক-
- পূর্বে যেখানে ওভারের (৬ বলে ১ ওভার) খেলার গতিবিধির লক্ষ্য রাখা হতো ও তুলনা করা হতো, সেখা দ্য হানড্রেড ফরম্যাটে ওভারের পরিবর্তে প্রতি বলকেই একক হিসেবে ধরা হবে।
- টেস্ট, ওয়ান ডে, টি টোয়েন্টি ও টি টেন ক্রিকেটে যেখানে একজন বোলার এক সাথে ৬ টি বল ডেলিভারি দিতে পারত, সেখানে দ্য হান্ড্রেডে বোলার চাইলে টানা ১০ বল করতে পারববে।
- ১০ টি আইনসিদ্ধ বল ডেলিভারির পর বোলিং প্রান্ত পরিবর্তন করা হবে।
- ৬ বলে ওভার গণনা না করে ৫ বলে ‘ফাইভ’ এককে গণনা করা হবে। প্রতি ৫ টি আইনসিদ্ধ ডেলিভারি দেওয়ার পর পর আম্পায়ার ‘ফাইভ’ কল করবেন, এতে সাদা রঙের কার্ড ব্যবহৃত হবে।
- টস করতে হবে সকলের সম্মুখে; তবে টস ক্রিকেট পিচে নাও সম্পন্ন হতে পারে।
- দ্য হান্ড্রেডের ১০০ বলের মধ্যে প্রথম ২৫ বলকে পাওয়ার প্লে (Power Play) হিসেবে ধরা হবে।
- পাওয়ার প্লে শেষে, অর্থাৎ ২৫ বল শেষে বোলিং করা দল বাকি সময়ের যে কোনো সময়ে ২ মিনিট পানি পানের বিরতি নিতে পারবে। একে বলা হয় টাইম আউট (Time Out)।
- প্রচলিত নিয়ম অনুসারে ক্যাচ আউটের ক্ষেত্রে যদি রান নেওয়ার প্রচেষ্টার কারণে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যান স্ট্রাইকিং ব্যাটসম্যানকে (আউট হওয়া) অতিক্রম করে গেলে, নতুন যে ব্যাটসম্যান ক্রিজে আসে তাকে স্ট্রাইক নিতে হয় না। কিন্তু নতুন নিয়মে নতুন ব্যাটসম্যানকেই ব্যাট করতে হবে বা স্ট্রাইক নিতে হবে।
- গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো টাই হলে দুই দলই এক পয়েন্ট করে পাবে। কিন্তু নক আউট পর্বে খেলাগুলোতে ফলাফল নির্ধারণের জন্য ‘সুপার ফাইভ’ (Super Five) প্রয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে ‘সুপার ফাইভ’ প্রয়োগের পরেও ম্যাচের ফলাফল অনির্ধারিত থাকলে দ্বিতীয়বার ‘সুপার ফাইভ’ ডাকা হবে। তারপরেও ম্যাচ অমীমাংসিত থাকলে গ্রুপ পর্বের খেলাগুলোতে তালিকায় ওপরে থাকা দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
- বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচের ক্ষেত্রে নির্দিষ্টবসময়ের মধ্যে খেলা সম্পন্ন করার প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন আসতে চলেছে। অর্থাৎ ডাকওয়ার্থ-লুইস (Duckwarth/Lewis) নামে যে বৃষ্টি আইন রয়েছে, তাতেও পরিবর্তন আসবে। তবে বিস্তারিত জানানো হয়নি এখনো।
- দ্য হান্ড্রেডের মধ্য দিয়ে প্রথমবার ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের ঘরোয়া ক্রিকেটে ডিআরএস ব্যবহার করা হবে। এতে নো বল (No Ball) সম্পর্কে সিদ্ধান্ত প্রদানের দায়িত্ব থাকবে একমাত্র তৃতীয় আম্পায়ারের হাতে।
- বাণিজ্যিক দিকটি মাথায় রেখে টুর্নামেন্টের খেলাগুলো প্রতিদিন দুইটি করে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রতিটি ম্যাচের জন্য থাকবে নির্দিষ্ট সময়সীমা।
- যদি এমন হয়, কোনো দল স্লো ওভার রেটে থাকে, তাহলে ওই নির্দিষ্ট দলকে শাস্তির সময় থেকে সার্কেলের বাইরে একজন ফিল্ডার কম রেখে খেলা চালিয়ে যেতে হবে।
- দ্য হান্ড্রেড ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ব্যাটার’ (Batter) শব্দের চালু হবে। যে ব্যাট করে তাকে ক্রিকেটের পুরোনো সংস্করণগুলোতে বলা হয় ব্যাটসম্যান (Batsman)। কিন্তু ক্রিকেট এখন শুধু পুরুষেরা খেলে না, এর সাথে জড়িয়ে গিয়েছে নারীরা। আর এ কারণেই ‘ব্যাটার’ শব্দের চালু করা হয়েছে। যদিও বিগত কয়েক বছর ধরেই এই শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্যণীয় আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক্রিকেট যেমন মৌলিক খেলা থেকে বের হয়ে অদ্ভুত ভাবে বের হয়ে যাচ্ছে, তেমন এর সর্বশেষ ও সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণ ‘দ্য হানড্রেড’র নিয়মকানুনগুলোও যেন অদ্ভুত। অদ্ভুত নিয়মের নতুন ক্রিকেট নিয়ে অনেকেই হা করে তাকিয়ে আছে, কেমন হয় তা দেখার জন্য।
কেন দ্য হানড্রেড ফরম্যাট যুক্ত করা হয়েছে ক্রিকেটে? ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের মস্তিষ্কে কেন এমন একটি ভাবনা আসলো?
কেন ‘দ্য হানড্রেড’?- এই প্রশ্নের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উত্তর হতে পারে যা , তা হলো ‘সময়’। আজ ফুটবল খুবই জনপ্রিয় কারণ ফুটবল ৯০ মিনিটের খেলা। ধীরে ধীরে মানুষ ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দিনভর খেলা চলার কারণে। এছাড়া খেলোয়াড়দের ইনজুরি রোধ ও ক্রিকেটকে বিশ্বের দরবারে আরও পরিচিত করার জন্যেও দ্য হানড্রে ফরম্যাট যুক্ত করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে তা হলো- ক্রিকেটাররা বেশ উৎসাহী দ্য হানড্রেড নিয়ে। যদিও অনেকেই বলছেন, ক্রিকেটের ধ্বংস ডেকে আনবে দ্য হানড্রেড।
নতুন ফরম্যাট, নতুন নিয়ম ও নতুন আশা নিয়ে শুরু হতে চলা দ্য হানড্রেড নিয়ে আপনার মতামত কী?
এক নজরে দ্য হানড্রেড পরিচিতি
দ্য হানড্রেড কী?
দ্য হানড্রেড হলো ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে প্রচলিত ১০০ বলের এক বিশেষ পেশাদার ফ্র্যাঞ্চাইজ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। দ্য হানড্রেড টুর্নামেন্ট পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই ডিজাইন করা হয়েছে।
দ্য হানড্রেড আয়োজক
ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (England and Wales Cricket Board)
দ্য হানড্রেডের প্রথম আয়োজন কবে?
জুলাই ২১, ২০২১ থেকে অগাস্ট ২১, ২০২১ পর্যন্ত; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে।
দ্য হান্ড্রেড টুর্নামেন্টের দল
মোট ৮ টি দল নিয়ে চলবে দ্য হানড্রেড। জাতীয় দলের মতো প্রতি দলেই পুরুষ ও নারী দল থাকবে।
দলগুলোর নাম হলো-
- ম্যানচেস্টার অরিজিনালস (Manchester Originals)
- নর্দার্ন সুপারচার্জার্স (Northern Superchargers)
- বার্মিংহ্যাম ফোনিক্স (Birmingham Phoenix)
- ট্রেন্ট রকেটস (Trent Rockets)
- ওয়েলশ ফায়ার (Welsh Fire)
- লন্ডন স্পিরিট (London Spirit)
- ওভাল ইনভিনিসিবল (Oval Invincibles)
- সাউদার্ন ব্রেইভ (Sothern Brave)
কতগুলো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে?
৮ টি দল নিজেদের মধ্যে একটি করে হোম ও অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলবে। এলিমিনেটর ও ফাইনাল সহ সর্বমোট ম্যাচ ৩২ টি।