অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়, ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে স্বাগতিকরা
- প্রকাশ: ১১:১১:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অগাস্ট ২০২১
- / ৭৪৭ বার পড়া হয়েছে
পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে টানা তিন ম্যাচ জিতে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টানা তিন ম্যাচ এই জয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ক্রিকেটের কোনো সংস্করণে সিরিজ জেতার গৌরব এটি।
প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচের পর তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে ১০ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো তাদের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ, সেটিও দুই ম্যাচ বাকি রেখেই।
শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে (Sher-E-Bangla National Cricket Stadium) টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে মাত্র ১২৭ রান করে বাংলাদেশ। এই ইনিংসে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে অভিষেক ম্যাচে হ্যাট-ট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার নাথান এলিস (Nathan Ellis)।
বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার এই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে দেড় ঘন্টার বেশি সময় লাগে। টস জিতে নিজেরা ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। শুরুটা মোটেই ভালো ছিল না এ দিন। মোহাম্মদ নাইম ও সৌম্য সরকারকে হারিয়ে কঠিন বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। তবে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ফিফটিতে অস্ট্রেলিয়াকে ১২৮ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। চারে নম্বরে খেলতে এসে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক টিকে ছিলেন ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত। মাহমুদউল্লাহ ৫২ বল খেলে ৫৩ রান করে আউট হন।
শেষ ওভারে অপ্রত্যাশিতভাবে হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার অভিষিক্ত বোলার নাথান এলিস। এটি টি-টোয়েন্টি সংস্করণে অভিষিক্ত (debutant) কোনো বোলারের প্রথম হ্যাটট্রিক।
১২৮ রানের টার্গেটে নির্ধারিত ২০ খেলে ১১৭ রান করতে সক্ষম হয় অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। ফলে বাংলাদেশ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে যায় ১০ রানে। এর মাধ্যমে টানা তিন ম্যাচ জিতে প্রথমবারের মতো যে-কোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।
১২৮ রানের টার্গেটে নেমে শুরু থেকেই ভুগছিল অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে (Matthew Wade) সাজঘরে পাঠান নাসুম আহমেদ। ওয়েডের সংগ্রহ ছিল ৫ বলে মাত্র ১ রান।
ওয়েডের বিদায়ের পর অস্ট্রেলিয়া দলের হাল ধরেন মিচেল মার্শ। প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এই ম্যাচেও ভয়ানক হয়ে উঠেছলেন। তিনি বেন ম্যাকডার্মটকে সঙ্গে নিয়ে খেলতে থাকেন সাবলীলভাবে। ব্যাক্তিগত ৩২ রানে ফিরতে পারতেন ম্যাকডার্মট। মোস্তাফিজের বলে সহজ ক্যাচ ফেলেন শরীফুল। তাতেই জীবন পেয়ে বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন বাংলাদেশের জন্য ‘ভয়ংকর’ হতে থাকা জুটি। সে সময় বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক বোলিংয়ে নিয়ে এলেন সাকিব আল হাসানকে। দলীয় ৭১ রানে ম্যাকডার্মটকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু দেন সাকিব। এই ব্যাটসম্যান বিদায় নিলে ভাঙে মিচেল মার্শের সাথে ৬৩ রানের জুটি। সাকিবের পর উইকেট পেলেন শরীফুলও। তার বলে ২ রানেই শামীমের ক্যাচ হয়ে ফেরেন ময়েজেস হেনরিকস।
৮ রানে প্রথম উইকেট পতন হবার হব অস্ট্রেলিয়ার হাল ধরেছিলেন মিচেল মার্শ। ৪৫ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন। ফিফটির পর মাত্র ১ রান যোগ করেই শরিফুল ইসলামের বলে ক্যাচ আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান।
শেষের দুই ওভারে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ২৩। কিন্তু ১৯তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান মাত্র ১ রান দিয়ে ম্যাচ একবারে নিজেদের মুঠোয় নিয়ে নেন।
শেষ ওভারে অজিদের জেতার জন্য প্রয়োজন ছিল ২২ রান কিন্তু মাহেদি হাসান তাঁদেরকে ১১৭ রানের বেশি করতে দেননি। বাংলাদেশ এই ম্যাচ ১০ রানে জিতে নিয়ে ইতিহাস গড়ে। টানা তিন ম্যাচ জিতে প্রথমবারের মতো যে-কোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।
ইতিহাস গড়া এই জয়ে অনন্য ভূমিকা রাখেন সারা বিশ্বে কাটার মাস্টার নামে খ্যাতি পাওয়া মোস্তাফিজুর রহমান। চার ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়েছেন কাটার মোস্তাফিজ। এতে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়ে দলে স্বস্তি এনে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। আর অজিদের প্রথম উইকেটের পতন প্রথম ঘটিয়ে দিয়েছিলেন নাসুম আহমেদ।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসে শুরুতেই অ্যাশটন টার্নারকে বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। প্রথম ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল মাত্র ২ রান। আগের দুই ম্যাচের মতো এ দিনও ওপেনিংয়ে ব্যর্থ বাংলাদেশ দল। মাত্র ১ রান করে ফেরেন ওপেনার মোহাম্মদ নাইম এবং পরের ওভারে এলবিডব্লিউ হয়ে আউট হন সৌম্য সরকার। বাংলাদেশ ৩ রানে হারায় ২ উইকেট হারিয়ে বিপদেই ছিল।
এরপর সাকিব আল হাসানের সাথে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মিচেল মার্শের করা ৮ম ওভারে সাগ্রহ করেন ১৫ রান যা দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক ছিল। তবে এর ঠিক পরের ওভারের প্রথম বলেই সাকিবকে হারায় বাংলাদেশ দল। জাম্পাকে হাওয়ায় ভাসিয়ে মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েন তিনি। ১৭ বলে ৪টি বাউন্ডারিতে ২৬ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন সাকিব আল হাসান।
সাকিব আল হাসান আউট হওয়ার পর ক্রিজে এসেই মারমুখি ভূমিকায় ব্যাট করেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। রান আউটে কাটা পড়েন তরুণ এই অলরাউন্ডার। ১৩ বলে ১৯ রান করেন আফিফ।
আফিফের বিদায়ের পর রান বাড়ানোর চাপ বাড়ছিল শামীমের ওপর। হ্যাজলউডের বলে তুলে মারতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ক্যাচ দিয়ে ৮ বলে ৩ রানে ফিরে যান শামীম। ধরা পড়েন ম্যাকডার্মটের হাতে।
আফিফের মতোই রান-আউটের শিকার হন নুরুল হাসান সোহান। ড্যান ক্রিস্টিয়ানের বলে ড্রাইভ করেন মাহমুদউল্লাহ। রান নিতে গিয়ে আসার আগেই হ্যানরিকসের থ্রো আঘাত হানে উইকেটে। মাত্র ৫ বলে ১১ রান করেই থেমে যায় সোহানের ইনিংস।
শেষ চার ওভারে ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে ফিফটি করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। এটি ছিল টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহর পঞ্চম ফিফটি ও অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম। ৫৩ বলে ৪ চারে ৫২ রান করে এলিসের বলে বোল্ড হন রিয়াদ। এলিস তার পরের বলে মোস্তাফিজকে মার্শের ক্যাচ বানিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন। পরের বলে মেহেদি উড়িয়ে মারলে বাউন্ডারি লাইনে অ্যাশটন অ্যাগারের তালুবন্দি হন। ফলে অভিষেক ম্যাচেই হ্যাট্রিকের স্বাদ পান নাথান এলিস। ইনিংসে দুইটি করে উইকেট নেন হ্যাজলউড এবং জাম্পা।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর কারণে খুব বড়ো সংগ্রহের দেখা স্বাগতিক বাংলাদেশ না পেলেও টানা তিন নম্বর ম্যাচ জিততে অসুবিধা হয়নি।