০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

গবেষণা সমস্যার সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও গুরুত্ব এবং গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ করার উপায়

মু. মিজানুর রহমান মিজান
  • প্রকাশ: ১২:১০:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অগাস্ট ২০২১
  • / ২৩৪৭৫ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যেক গবেষকেরই গবেষণা সমস্যা কী সে সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে এবং গবেষণা সমস্যা শনাক্তকরণ করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে হবে | ছবি: Michal Matlon


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

সমস্যার গবেষণামূলক সমাধান বের করতে হলে প্রথমে সমস্যা চিহ্নিত করতে জানতে হবে। সমস্যা ঠিকঠাক ভাবে চিহ্নিত করতে না পারলে বা শনাক্ত করতে না পারলে গবেষণা সাফল্যের মুখ দেখে না। প্রত্যেক গবেষকেরই গবেষণা সমস্যা কী সে সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে এবং গবেষণা সমস্যা শনাক্তকরণ করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে হবে।

গবেষণা সমস্যা কী?

গবেষণা সমস্যা (Research Problem) হলো নির্দিষ্ট কোনো বিষয়, কাঠিন্য, বাধা, দ্বন্দ্ব, বিতর্ক, অর্জিত জ্ঞানের মধ্যে শূন্যতা ইত্যাদি যা লক্ষ্য করে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। অর্থাৎ যে বিষয়ের ওপর গবেষণা করা হয় তাকে গবেষণা বলা হয়।

একজন গবেষক যখন গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর গবেষণায় ব্যবহারিক সমস্যা নিয়ে কাজ করেন তখন তিনি ওই নির্দিষ্ট সমস্যার যথার্থ পরিবর্তনে অবদান রাখার জন্য পদ্ধতিগত অনুসন্ধান প্রক্রিয়া চালান। আবার যখন তাত্ত্বিক কোনো গবেষণা সমস্যা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হয় তখন লক্ষ্য থাকে নির্দিষ্ট কোনো তত্ত্ব বা বিষয়কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে সত্য উদ্ধার করা।

গবেষণা সমস্যার প্রকারভেদ

১. ব্যবহারিক গবেষণা সমস্যা (Practical Research Problem)

২. তাত্ত্বিক গবেষণা সমস্যা (Theoretical Research Problem)

৩. ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক গবেষণা সমস্যা (Practical & Theoretical Research Problem)

গবেষণা সমস্যা কেন গুরুত্বপূর্ণ

কোনো গবেষক যখন কোনো বিশেষ ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করতে চান, হতে পারে তাঁর সেই বিশেষ ক্ষেত্রটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং চমৎকার একটি ক্ষেত্র গবেষণার জন্য; পাশাপাশি গবেষক ওই ক্ষেত্র সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন যার মাধ্যমে তিনি সত্য তুলে আনার সক্ষমতা রাখেন; কিন্তু ওই গবেষক যদি ওই বিশেষ ক্ষেত্র থেকে নির্দিষ্ট কোনো করে কোনো সমস্যা নিয়ে কাজ না করেন তাহলে ওই গবেষণা সফল হবে না, বরং প্রচেষ্টা আনফোকাসড ও আনম্যানেজড থেকে যাবে।

গবেষণা সমস্যা গবেষককে বিশাল একটি ক্ষেত্র থেকে সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে গবেষণা করে করে সাফল্য পেতে সাহায্য করে।

আবার কোনো একটি ক্ষেত্র সম্পর্কে ঠিকঠাক তথ্য না জেনে বা কোনো পূর্বজ্ঞান ছাড়াই গবেষণায় নামলে সে গবেষণা সফল হয় না।

গবেষণা যাতে রিপিট না হয় সে ব্যপারেও গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণ গবেষণা কিংবা থিসিস নিয়ে কাজ করার প্রথম ধাপ হলো ‘গবেষণা সমস্যা’ নির্বাচন।

গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ বা শনাক্তকরণ

ধাপ ১: একটি বৃহত্তর সমস্যার ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ

গবেষণায় নামার আগেই নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করার জন্য পড়তে হবে এবং ওই বিষয় নিয়ে যত বিতর্ক, উদ্বিগ্নতা, দ্বন্দ্ব রয়েছে সেগুলোর গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে, ওই বিষয় সম্পর্ক জানা ও গভীরে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো বিষয়টিতে জ্ঞানের শূন্যতা কিংবা অপূর্ণতা খুঁজে বের করা।

ব্যবহারিক গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ 

বিভিন্ন রকমের প্রতিবেদন পাঠের মাধ্যমে ব্যবহারিক গবেষণা সমস্যা চিহ্নিত করা যায়। গবেষক পূর্ববর্তী বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা করেও ব্যবহারিক গবেষণা সমস্যা শনাক্ত করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট কাজের ক্ষেত্র বা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে গবেষণা সমস্যা চিহ্নিত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আমলে নেওয়া যেতে পারে-

  • প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বা সামর্থ্যেগত বিভিন্ন সমস্যা
  • বর্তমানে প্রচলিত এমন কোনো কর্মপ্রক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা
  • কর্মে জড়িত রয়েছেন এমন লোকদের উদ্বিগ্নতা
  • সমাজ বা বিভিন্ন জনগোষ্ঠী সম্মুখীন হয়েছে বা হচ্ছে এমন সমস্যা

মনে রাখতে হবে একজন গবেষক যে ক্ষেত্র বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাঁর গবেষণা সমস্যা হতে হবে ওই ক্ষেত্রে বা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত এমন কোনো কিছু। 

তাত্ত্বিক গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ

তাত্ত্বিক গবেষণা কোনো নির্দিষ্ট জ্ঞানকে সম্প্রসারণ এবং তা ব্যাখ্যার মাধ্যমে বোঝার ওপর গুরুত্বারোপ করে। সাধারণত, তাত্ত্বিক গবেষণার উদ্দেশ্য কোনো কিছু পরিবর্তনে সরাসরি অবদান রাখার বিষয়টি হয় না।

তাত্ত্বিক গবেষণা সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে এমন কিছু গবেষণার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা যায়। এছাড়া কোনো বিশেষ জ্ঞান বা জ্ঞানক্ষত্র নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এমন কোনো বিষয়কে গবেষণা সমস্যা হিসেবে ধরে গবেষণা পরিচালনা করা যায়। অনেক তত্ত্বে জ্ঞানগত কিছু শূন্যতা দেখা গেলে তাকেও গবেষণা সমস্যা হিসেবে শনাক্ত করে গবেষণায় নামা যায়।

তাত্বিক গবেষণা সমস্যা শনাক্তকরণে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে-

  • এমন কোনো প্রসঙ্গ আছে যা পূর্বে ঘনিষ্ঠভাবে কিংবা পূর্ণমনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করা হয়নি
  • একাধিক উদ্দেশ্য বা উপযোগিতা নিয়ে দ্বন্দ্ব
  • এমন কোনো অবস্থা বা সম্পর্ক রয়েছে যেগুলো এখন পর্যন্ত ভালো করে বোঝা সম্ভব হয়নি
  • এমন কোনো উদ্বেগজনক তাত্ত্বিক সমস্যা যার সমাধান এখনো হয়নি
  • এমন কোনো তাত্ত্বিক বিষয় যা প্রায়ই ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়ে থাকে কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত ফল অর্জন সম্ভব হয় না

ধাপ ২: সমস্যাটি সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমানে জ্ঞান অর্জন করা

প্রাথমিকভাবে গবেষণা সমস্যা শনাক্ত করার পর জানার চেষ্টা করতে হবে শনাক্তকৃত ওই সমস্যা সম্পর্কে ইতোমধ্যে কী কী জানা আছে এবং গবেষকের এখানে নোট করা উচিৎ যে, সে ঠিক কী জানতে চায় বা তাঁর গবেষণা কোন দিকটি ফুটিয়ে তুলবে।

এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোতে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে

প্রসঙ্গ এবং পটভূমি

  • গবেষণা সমস্যাটির প্রভাব
  • গবেষণা সমস্যার অস্তিত্বের সময়কাল
  • এখন পর্যন্ত শনাক্তকৃত বিষয়ে কোনো গবেষণা পরিচালিত হয়েছে কি না
  • কোনো ধরনের প্রস্তাবিত সমাধান আছে কি না
  • গবেষণা সমস্যাটি নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকলে সে বিতর্কের স্বরুপ

নির্দিষ্টতা এবং প্রাসঙ্গিকতা 

  • গবেষণার জায়গা, সময় ও তথ্যবিশ্ব নির্দিষ্ট করতে হবে
  • কোন দিকগুলো পরিস্থিতি ও সামর্থ্য বিচারে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে বলে মনে হবে, তা ঠিক করতে হবে
  • গবেষণার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হলে তার ফলাফল কী রূপ হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি
  • সমসম্যার সমাধান হলে এর সুফল কারা ভোগ করবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গঠন করতে হবে

গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ করার পরবর্তী ধাপ

উপর্যুক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করে যখন গবেষক বিশাল গবেষণার ক্ষেত্র থেকে সংকোচন করে গবেষণা সমস্যা নির্দিষ্ট করে ফেলেন, তখন ওই গবেষকের পরবর্তী পদক্ষেপ হল গবেষণা সমস্যার একটি বিবরণ, গবেষণা প্রশ্ন এবং অনুমিত সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করা।

শেয়ার করুন

One thought on “গবেষণা সমস্যার সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও গুরুত্ব এবং গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ করার উপায়

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মু. মিজানুর রহমান মিজান

মু. মিজানুর রহমান মিজান একজন স্বাধীন শিক্ষামূলক লেখক। তিনি শিক্ষা গবেষণায় বেশ আগ্রহী। যৌথভাবে কিছু গবেষণায়ও অংশ নিয়েছেন।

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

গবেষণা সমস্যার সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও গুরুত্ব এবং গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ করার উপায়

প্রকাশ: ১২:১০:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অগাস্ট ২০২১

সমস্যার গবেষণামূলক সমাধান বের করতে হলে প্রথমে সমস্যা চিহ্নিত করতে জানতে হবে। সমস্যা ঠিকঠাক ভাবে চিহ্নিত করতে না পারলে বা শনাক্ত করতে না পারলে গবেষণা সাফল্যের মুখ দেখে না। প্রত্যেক গবেষকেরই গবেষণা সমস্যা কী সে সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে এবং গবেষণা সমস্যা শনাক্তকরণ করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে হবে।

গবেষণা সমস্যা কী?

গবেষণা সমস্যা (Research Problem) হলো নির্দিষ্ট কোনো বিষয়, কাঠিন্য, বাধা, দ্বন্দ্ব, বিতর্ক, অর্জিত জ্ঞানের মধ্যে শূন্যতা ইত্যাদি যা লক্ষ্য করে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। অর্থাৎ যে বিষয়ের ওপর গবেষণা করা হয় তাকে গবেষণা বলা হয়।

একজন গবেষক যখন গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর গবেষণায় ব্যবহারিক সমস্যা নিয়ে কাজ করেন তখন তিনি ওই নির্দিষ্ট সমস্যার যথার্থ পরিবর্তনে অবদান রাখার জন্য পদ্ধতিগত অনুসন্ধান প্রক্রিয়া চালান। আবার যখন তাত্ত্বিক কোনো গবেষণা সমস্যা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হয় তখন লক্ষ্য থাকে নির্দিষ্ট কোনো তত্ত্ব বা বিষয়কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে সত্য উদ্ধার করা।

গবেষণা সমস্যার প্রকারভেদ

১. ব্যবহারিক গবেষণা সমস্যা (Practical Research Problem)

২. তাত্ত্বিক গবেষণা সমস্যা (Theoretical Research Problem)

৩. ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক গবেষণা সমস্যা (Practical & Theoretical Research Problem)

গবেষণা সমস্যা কেন গুরুত্বপূর্ণ

কোনো গবেষক যখন কোনো বিশেষ ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করতে চান, হতে পারে তাঁর সেই বিশেষ ক্ষেত্রটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং চমৎকার একটি ক্ষেত্র গবেষণার জন্য; পাশাপাশি গবেষক ওই ক্ষেত্র সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন যার মাধ্যমে তিনি সত্য তুলে আনার সক্ষমতা রাখেন; কিন্তু ওই গবেষক যদি ওই বিশেষ ক্ষেত্র থেকে নির্দিষ্ট কোনো করে কোনো সমস্যা নিয়ে কাজ না করেন তাহলে ওই গবেষণা সফল হবে না, বরং প্রচেষ্টা আনফোকাসড ও আনম্যানেজড থেকে যাবে।

গবেষণা সমস্যা গবেষককে বিশাল একটি ক্ষেত্র থেকে সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে গবেষণা করে করে সাফল্য পেতে সাহায্য করে।

আবার কোনো একটি ক্ষেত্র সম্পর্কে ঠিকঠাক তথ্য না জেনে বা কোনো পূর্বজ্ঞান ছাড়াই গবেষণায় নামলে সে গবেষণা সফল হয় না।

গবেষণা যাতে রিপিট না হয় সে ব্যপারেও গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণ গবেষণা কিংবা থিসিস নিয়ে কাজ করার প্রথম ধাপ হলো ‘গবেষণা সমস্যা’ নির্বাচন।

গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ বা শনাক্তকরণ

ধাপ ১: একটি বৃহত্তর সমস্যার ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ

গবেষণায় নামার আগেই নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করার জন্য পড়তে হবে এবং ওই বিষয় নিয়ে যত বিতর্ক, উদ্বিগ্নতা, দ্বন্দ্ব রয়েছে সেগুলোর গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে, ওই বিষয় সম্পর্ক জানা ও গভীরে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো বিষয়টিতে জ্ঞানের শূন্যতা কিংবা অপূর্ণতা খুঁজে বের করা।

ব্যবহারিক গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ 

বিভিন্ন রকমের প্রতিবেদন পাঠের মাধ্যমে ব্যবহারিক গবেষণা সমস্যা চিহ্নিত করা যায়। গবেষক পূর্ববর্তী বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা করেও ব্যবহারিক গবেষণা সমস্যা শনাক্ত করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট কাজের ক্ষেত্র বা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে গবেষণা সমস্যা চিহ্নিত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আমলে নেওয়া যেতে পারে-

  • প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বা সামর্থ্যেগত বিভিন্ন সমস্যা
  • বর্তমানে প্রচলিত এমন কোনো কর্মপ্রক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা
  • কর্মে জড়িত রয়েছেন এমন লোকদের উদ্বিগ্নতা
  • সমাজ বা বিভিন্ন জনগোষ্ঠী সম্মুখীন হয়েছে বা হচ্ছে এমন সমস্যা

মনে রাখতে হবে একজন গবেষক যে ক্ষেত্র বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাঁর গবেষণা সমস্যা হতে হবে ওই ক্ষেত্রে বা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত এমন কোনো কিছু। 

তাত্ত্বিক গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ

তাত্ত্বিক গবেষণা কোনো নির্দিষ্ট জ্ঞানকে সম্প্রসারণ এবং তা ব্যাখ্যার মাধ্যমে বোঝার ওপর গুরুত্বারোপ করে। সাধারণত, তাত্ত্বিক গবেষণার উদ্দেশ্য কোনো কিছু পরিবর্তনে সরাসরি অবদান রাখার বিষয়টি হয় না।

তাত্ত্বিক গবেষণা সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে এমন কিছু গবেষণার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা যায়। এছাড়া কোনো বিশেষ জ্ঞান বা জ্ঞানক্ষত্র নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এমন কোনো বিষয়কে গবেষণা সমস্যা হিসেবে ধরে গবেষণা পরিচালনা করা যায়। অনেক তত্ত্বে জ্ঞানগত কিছু শূন্যতা দেখা গেলে তাকেও গবেষণা সমস্যা হিসেবে শনাক্ত করে গবেষণায় নামা যায়।

তাত্বিক গবেষণা সমস্যা শনাক্তকরণে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে-

  • এমন কোনো প্রসঙ্গ আছে যা পূর্বে ঘনিষ্ঠভাবে কিংবা পূর্ণমনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করা হয়নি
  • একাধিক উদ্দেশ্য বা উপযোগিতা নিয়ে দ্বন্দ্ব
  • এমন কোনো অবস্থা বা সম্পর্ক রয়েছে যেগুলো এখন পর্যন্ত ভালো করে বোঝা সম্ভব হয়নি
  • এমন কোনো উদ্বেগজনক তাত্ত্বিক সমস্যা যার সমাধান এখনো হয়নি
  • এমন কোনো তাত্ত্বিক বিষয় যা প্রায়ই ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়ে থাকে কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত ফল অর্জন সম্ভব হয় না

ধাপ ২: সমস্যাটি সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমানে জ্ঞান অর্জন করা

প্রাথমিকভাবে গবেষণা সমস্যা শনাক্ত করার পর জানার চেষ্টা করতে হবে শনাক্তকৃত ওই সমস্যা সম্পর্কে ইতোমধ্যে কী কী জানা আছে এবং গবেষকের এখানে নোট করা উচিৎ যে, সে ঠিক কী জানতে চায় বা তাঁর গবেষণা কোন দিকটি ফুটিয়ে তুলবে।

এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোতে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে

প্রসঙ্গ এবং পটভূমি

  • গবেষণা সমস্যাটির প্রভাব
  • গবেষণা সমস্যার অস্তিত্বের সময়কাল
  • এখন পর্যন্ত শনাক্তকৃত বিষয়ে কোনো গবেষণা পরিচালিত হয়েছে কি না
  • কোনো ধরনের প্রস্তাবিত সমাধান আছে কি না
  • গবেষণা সমস্যাটি নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকলে সে বিতর্কের স্বরুপ

নির্দিষ্টতা এবং প্রাসঙ্গিকতা 

  • গবেষণার জায়গা, সময় ও তথ্যবিশ্ব নির্দিষ্ট করতে হবে
  • কোন দিকগুলো পরিস্থিতি ও সামর্থ্য বিচারে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে বলে মনে হবে, তা ঠিক করতে হবে
  • গবেষণার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হলে তার ফলাফল কী রূপ হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি
  • সমসম্যার সমাধান হলে এর সুফল কারা ভোগ করবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গঠন করতে হবে

গবেষণা সমস্যা চিহ্নিতকরণ করার পরবর্তী ধাপ

উপর্যুক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করে যখন গবেষক বিশাল গবেষণার ক্ষেত্র থেকে সংকোচন করে গবেষণা সমস্যা নির্দিষ্ট করে ফেলেন, তখন ওই গবেষকের পরবর্তী পদক্ষেপ হল গবেষণা সমস্যার একটি বিবরণ, গবেষণা প্রশ্ন এবং অনুমিত সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করা।