ব্রেস্ট লাম্প: ব্রেস্ট লাম্প মানে কি ক্যানসার? ব্রেস্ট লাম্পের কারণ এবং চিকিৎসা কী?
- প্রকাশ: ১১:০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ অগাস্ট ২০২১
- / ৪০৬৬ বার পড়া হয়েছে
মেয়েদের বা মহিলাদের ব্রেস্ট লাম্প নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু অবহেলা করাও উচিত নয়। এই নিব ব্রেস্ট লাম্প (breast lumps) নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।
লাম্প কী?
শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক মাংস, চর্বি কিংবা হাড়ের ফুলে ওঠাকে লাম্প (lump) বলা হয়।
ব্রেস্ট লাম্প কী
স্তন বা ব্রেস্ট (breast) এর যে কোনো অংশে অস্বাভাবিক স্ফীত হওয়াকে ব্রেস্ট লাম্প (breast lump) লাম্প বলা হয়। ব্রেস্ট লাম্প হলো ব্রেস্ট বা স্তনের মধ্যে কিছুটা শক্ত মাংসের দলা।
ব্রেস্ট লাম্প কাদের হয় ও কেন হয়?
যে কোনো বয়সের মেয়ে বা নারীদের ব্রেস্ট লাম্প হতে পারে। সাধারণত ১৭ থেকে ৩০ বছরের মেয়েদের স্তনে লাম্প হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এই বয়সটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবেমাত্র বয়ঃসন্ধিকাল পার হয়েছে। শরীরে নানা রকম পরিবর্তন এসেছে, এ কারণে এ ধরণের সমস্যা হতে পারে।
হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ব্রেস্ট লাম্প তৈরি হতে পারে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনিতেই তা অদৃশ্য হয়ে যায়। যে কোন বয়সে এই লাম্প দেখা দিতে পারে।
শিশুদের জন্মের সময় তাদের মায়েদের কাছ থেকে পাওয়া ইস্ট্রোজেনের কারণে স্তনের লাম্পস হতে পারে যা ইস্ট্রোজেনের সাথে শরীর ছেড়ে চলে যায়।
কিছু শিশু জন্মের সময় তাদের মায়েদের কাছ থেকে পাওয়া ইস্ট্রোজেনের কারণে স্তনের স্তূপ বিকশিত হয়। এগুলো সাধারণত পরিষ্কার হয়ে যায় যখন ইস্ট্রোজেন তাদের শরীর ছেড়ে চলে যায়।
ব্রেস্ট লাম্প কতটা ক্ষতিকর?
কেউ যখন তার স্তনে দলা বা মাংসপিণ্ড (ব্রেস্ট লাম্প) খুঁজে পান তখন তিনি খুবই চিন্তায় থাকেন যে, তার স্তন বা স্তনযুগলে স্থায়ী কোনো সমস্যা হলো কি না। এখানে আশার কথা হলো- ব্রেস্ট লাম্প দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগ বা সমস্যা নাও হতে পারে।
১৭ থেকে ৩০ বছর বয়সে যে লাম্প হয় তা বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিংবা বিবাহিত জীবনে প্রবেশের পর সন্তান হওয়ার মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণভাবেই মিলিয়ে যায়। কারণ এই সময় স্ত্রী হরমোন (ইস্ট্রোজেন) ক্ষরণ বেশি মাত্রায় হয়। ফলে স্তনে লাম্প জাতীয় কিছু নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার তৈরি হতে থাকে।
এছাড়া স্তনে আঘাত লেগে ব্যথা হলে (যাকে ট্রমাটিক ফ্যাট নেক্সোসিস বলে) তার থেকে, নানা ধরণের ব্রেস্ট ইনফেকশন থেকেও ব্যথাযুক্ত অ্যাবসেস (ফোঁড়া) তৈরি হয়। তাছাড়া ফাইব্রোএডিনেমা, ফাইব্রোঅ্যাভেনিস জাতীয় কিছু বিনাইন টিউমার ব্রেস্ট-এ দেখা দেয়। যার থেকে ক্যানসার (cancer) হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
ব্রেস্ট লাম্প কখন ঝুঁকিপূর্ণ?
আমাদের অঞ্চলের (বাংলাদেশ ও ভারত) মহিলাদের ৩৫ থেকে ৫৫ বছর সময়টাতেই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাধারণভাবে কমবয়সী মেয়েদের স্তনে যে লাম্প হয়, সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্যানসার নয়। তবে ৩০-৩২ বছরের পর মহিলাদের স্তনে যদি ব্যাথাহীন মাংসপিণ্ড দেখা দেয় সেক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি হয়ে যায়।
ব্রেস্ট লাম্প মানেই কি ক্যানসার?
স্তন বা স্তনযুগলে যদি অস্বাভাবিক দলা বা মাংসপিণ্ড খুঁজে পাওয়া যায় এবং তা পরীক্ষা করে যদি ব্রেস্ট লাম্প হয়েছে বলে নিশ্চিতও হয়, তবুও বলা যাবে না এটা ক্যানসার। ব্রেস্ট লাম্প হওয়া মানেই ক্যানসার নয়।
কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি খুব একটা ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও বয়স্কদের ক্ষেত্রে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
ব্রেস্ট ক্যানসার যে কারণে হতে পারে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো- জিনগত কারণ, সন্তানধারণে অক্ষমতা, মাসিক বা ঋতুকালীন অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি।
যাইহোক, আপনার স্তনে যে-কোনো ধরণের গোটা, ফোলা, দলা বা মাংসপিণ্ড আবিষ্কার করলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। যদি ব্যাথা অনুভূত নাও হয় তবুও ডাক্তারের কাছে যান। ব্রেস্ট ক্যানসারের শুরুতে কোনো ব্যাথা নাও থাকতে পারে।
বুঝবেন কী ভাবে?
পিরিয়ড শুরু হওয়ার পাঁচদিনের মাথায় নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করবেন। যদি কিছু অস্বাভাবিক মনে হয়, যেমন স্তন বৃত্ত বা আকৃতির পরিবর্তন, চাকা চাকা ভাব অনুভূত হওয়া, স্তন বৃত্ত বসে যাওয়া বা সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে তাদের উচিত প্রতি মাসের একটা নির্দিষ্ট তারিখে স্তন পরীক্ষা করা। প্রতিটি মহিলারই উচিত বছরে একবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেক-আপ করানো।
আপনি যদি নারী হন, তাহলে আপনার ঋতুস্রাবের সময় আপনার স্তন আরো কোমল বা কোমলতর হতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তনের টিস্যুর কম ঘন হওয়ার প্রবণতা থাকে।
নিজের স্তন এর স্বাভাবিক অবস্থাকে চিনুন। কোনধরণের অস্বাভাবিকতা চোখে পড়লে অবহেলা করবেন না।
ব্রেস্ট লাম্প কেমন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন?
বেশিরভাগ স্তন লাম্প থেকে স্তন ক্যানসার হয় না। তবুও নিম্নোক্ত অবস্থায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন-
- স্তনে নতুন কোনো মাংসপিণ্ড আবিস্কার করলে
- স্তনের কোনো অংশ লক্ষণীয়ভাবে অন্য অংশের চেয়ে আলাদা হলে
- ঋতুস্রাব ভালো হবার পরও কোন লাম্প অনুভূত হলে
- মাংসপিন্ডের আকার পরিবর্তন হলে
- স্তনে কোনো কারণ ছাড়া ক্ষত দেখা দিলে
- বুকের চামড়া লাল হয়ে গেলে অথবা একটি কমলা খোসা মত অমসৃণ হয়ে ওঠে
- স্তনবৃন্ত স্বাভাবিকের তুলনায় ভিতরে ঢুকে গেলে
- স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত পড়লে
ব্রেস্ট লাম্প হলে চিকিৎসক কী করবেন?
চিকিৎসকের কাছে গেলে নিশ্চয়ই ব্রেস্ট বা স্তন পরীক্ষা করে দেখবেন। চিকিৎসক স্তনের উপসর্গ জানার ও বোঝার চেষ্টা করবেন। এছাড়া যার ব্রেস্ট লাম্প বা স্তনে অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড দেখা যাবে তাঁর পারিবারিক মেডিক্যাল হিস্ট্রির খোঁজও নিতে পারেন। এরপর সেই চিকিৎসক নির্দিষ্ট কোনো হাসপাতাল বা ব্রেস্ট বিশেষজ্ঞ কোনো ক্লিনিকে রেফার করতে পারেন বা নিজেও চূড়ান্ত চিকিৎসা করতে পারেন।
এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক ব্রেস্ট লাম্প সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে ও উপসর্গ থেকে রোগটি যাচাই করার জন্য যা করতে পারেন তা হলো-
- ম্যামোগ্রাম (mammogram), এটি স্তনে এক্সরে করার প্রযুক্তি
- আল্ট্রাসাউন্ড (ultrasound), এর মাধ্যমে স্তনের ভিতরের ছবি পাওা যায়
- বায়োপ্সি (biopsy), স্তন থেকে কোষের নমুনা (sample of cells) নিয়ে লাবরেটরিতে পাঠানো হয় এবং পরীক্ষা করে দেখা হয়
এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে যাচাই করা হয় স্তনে সত্যিকার অর্থে কোনো ধরণের লাম্প বা মাংসের দলা ডেভেলপ করেছে। যদি কোনো ব্রেস্ট লাম্পের রোগীকে এ টেস্টগুলো দেওয়া হয় তাহলে চিকিৎসককে সাহস করে জিজ্ঞেস করুন, কেন দেওয়া হলো এ টেস্টগুলো।
ব্রেস্ট লাম্পের চিকিত্সা
কম বয়সের ব্রেস্ট লাম্পগুলির প্রায়ই চিকিত্সা লাগে না। লাম্প কখনো খুব বড়ো হয়ে গেলে বেশি ব্যথা হলে কেটে বাদ দেওয়া হয়। কখনও চিকিৎসকদের সন্দেহ হলে স্তনের আলট্রাসাইন্ড এবং বায়োপ্সি করা হয়। বায়োপ্সিতে ক্যানসার শনাক্ত হলে ক্যানসারের চিকিত্সা করা হয়। তবে এই ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বয়স্ক অর্থাত্ ৩০ থেকে ৫৫ বছরের মহিলা বা ও বয়সের উপরেই বেশি। তবে সিদ্ধান্তটা কখনও নিজে নেবেন না বা বাড়ির লোককে নিতে দেবেন না। আপনার ব্রেস্ট লাম্প বিনাইন না ম্যালিগন্যান্ট জানতে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিত্সকের সঙ্গেই যোগাযোগ করবেন।
(livehealthy.com এবং ucsfhealth.org ওয়েবসাইট অনুসরণ করে লেখা হয়েছে, লেখক কোনো চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ নন)
ব্রেস্ট লাম্প হলে কি ব্যাথা একজায়গায় থাকবে নাকি সবজায়গায় অনুভব হবে? অন্য কোনো উপসর্গ থাকবে কি না?