১০:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি ও সাধারণ অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য এবং ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

আহমেদ মিন্টো
  • প্রকাশ: ১২:৫৪:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অগাস্ট ২০২১
  • / ৯৭৬ বার পড়া হয়েছে

ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির আওতা বা পরিধি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি ও সাধারণ অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য

সাধারণ অর্থনীতির সাথে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির কিছু মৌলিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ:

১. অর্থনীতি শুধু অর্থনৈতিক নীতিমালার কাঠামো নিয়েই আলোচনা করে, কিন্তু ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি উক্ত নীতিমালার বাস্তব প্রায়োগিক রূপরেখা কীরূপ হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করে।

২. ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য এমনই যে এর বিষয়বস্তু কেবল ব্যষ্টিক অর্থনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অপরদিকে অর্থনীতি বলতে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক উভয় প্রকার অর্থনীতিকেই বোঝায়।

৩. সাধারণ ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন উৎপাদন ও উপকরণাদির মধ্যে আয়ের বণ্টন নিয়ে আলোচনা করা হয়। অর্থাৎ ভূমির খাজনা, শ্রমের মজুরি, মূলধনের সুদ, সংগঠনের জন্য মুনাফা ইত্যাদি বিষয়াদিই ব্যষ্টিক অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়। কিন্তু ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি কেবল মুনাফা বণ্টনসংক্রান্ত তত্ত্ব নিয়েই প্রধানত আলোচনা করে থাকে।

৪. ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মুনাফা সর্বাধিককরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু সাধারণ অর্থনীতি বিশেষ কোন উদ্দেশ্য অর্জনের পথ নির্দেশ করে না। এটি কেবলমাত্র অর্থনৈতিক চলকগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।

৫. সাধারণ অর্থনীতি হলো বর্ণনামূলক আর ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি হলো উদ্দেশ্যমূলক।

৬. সাধারণ অর্থনীতিতে অতীত পরিসাংখ্যিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত তত্ত্বসমূহ আলোচিত হয়। কিন্তু ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতিতে অতীত পরিসাংখ্যিক তথ্যের ভিত্তিতে বর্ণিত তত্ত্বসমূহ ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে কীরূপ ধারণ করতে পারে তাও নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালানো হয়।

ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

আধুনিক বৃহদায়তন উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ক্ষুদ্রায়তন প্রতিষ্ঠানসমূহ সাধারণত তাদের অতীত অভিজ্ঞতা এবং সরাসরি অনুমানের উপর ভিত্তি করে কোনোক্রমে তাদের বিভিন্ন প্রকার ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু যেসব প্রতিষ্ঠান উৎপাদন এবং কার্যক্রমের দিক থেকে বৃহৎ আকারের অথবা যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন ধরনের দ্রব্যের উৎপাদন এবং বিক্রয়ের সাথে জড়িত সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এতটা জটিল এবং অনিশ্চিত যে তাদের পক্ষে শুধুমাত্র অনুমানপ্রসূত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।

সফলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব। তাই এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানসমূহকে অর্থনীতির সাধারণ বিধি বা নিয়মাবলিকে নিজস্ব আঙ্গিকে কীভাবে সফলভাবে প্রয়োগ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায় সেই চেষ্টাই করতে হয়। অর্থাৎ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

মিল্টন এইচ স্পেন্সার এবং লুইস সিগেলম্যান-এর মতে, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অর্থনীতির প্রয়োগ বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক তত্ত্বসমূহের সমন্বয় সাধনের বিষয়টি নিম্নোক্ত কারণে গুরুত্বপূর্ণ-

১. সনাতনী তাত্ত্বিক অর্থনৈতিক ধারণাসমূহকে প্রকৃত ব্যবসায়িক পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য করে তোলার জন্য ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির আশ্রয় নিতে হয়। অর্থনৈতিক তত্ত্বসমূহে সাধারণত বিভিন্ন অনুমানের ওপর ভিত্তি করে কিছু মডেল দাঁড় করানো হয় এবং প্রতিষ্ঠানসমুহের জন্য সম্ভাব্য কোনো সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়। কিন্তু এসব অনুমানের কারণে উক্ত মডের বা তত্ত্বসমূহ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট অর্থহীন হয়ে পড়ে। কারণ প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রকৃত কার্যক্রমের ব্যাখ্যা সেসব তত্ত্ব থেকে পাওয়া যায় না। সুতরাং প্রকৃত ব্যবসায়িক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য কোন অর্থনৈতিক তত্ত্বকে অর্থবহ এবং এর অনুমানসমূহকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বাস্তব পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও ব্যাখ্যাযোগ্য করে তুলতেই হয়। তাই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নিকট সাধারণ অর্থনীতির চেয়ে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

২. বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক অনুমান তথা চাহিদার বিভিন্ন প্রকার স্থিতিস্থাপকতা পরিমাপের জন্য ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির আশ্রয় নিতে পারে। যেমন আয় স্থিতিস্থাপকতা, দাম স্থিতিস্থাপকতা, আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা, বিক্রয় প্রসারণ স্থিতিস্থাপকতা, খরচ উৎপাদন সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়াদি পরিমাপের মাধ্যমে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পূর্বানুমান করা হয়।

৩. বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক পরিমাণ নির্ধারণের জন্যও ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির আশ্রয় নিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ মুনাফা, চাহিদা, উৎপাদন, খরচ, দাম, মূলধন ইত্যাদির কথা বলা যেতে পারে। এসব পরিমাণ নির্ধারণ করতে হয় এজন্যই যে, এসব পরিমাণ নির্ধারণের মাধ্যমে অনিশ্চিৎ পরিস্থিতিতে ব্যবস্থাপকগণ মোটামুটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং আগাম পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারেন।

৪. বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক পরিমাণ নির্ধারণের পর সেগুলোর ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়িক নীতি যেমন- দামনীতি, বিক্রয়নীতি, ক্রয়নীতি, কর্মীনীতি ইত্যাদি প্রণয়নের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির প্রয়োগ ঘটানো হয়। অর্থনৈতিক পরিমাণসমূহ নির্ধারণের সময় এমনভাবে কার্যক্রম সম্পাদিত হয় যে কোনো কৌশল অবলম্বন করা হলে কী ধরনের ফলাফল দেখা দিতে পারে এবং সেসবের সম্ভাবনার পরিমাণ কীরূপ তাও নির্ধারিত হয়। ফলে বিভিন্ন বিকল্প কৌশলের মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক কৌশলটি বেছে নেয়া যায়।

৫. কোনো প্রতিষ্ঠান যে অর্থনৈতিক পরিবেশের মধ্যে কাজ করে এবং যেসব অর্থনৈতিক বাহ্যিক শক্তির সাথে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় সাধনের প্রয়োজন হয়; সেসব অর্থনৈতিক পরিবেশ ও প্রভাব বিস্তারকারী শক্তিকে অনুধাবনের জন্য ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির প্রয়োগ ঘটাতে হয়। যেমন জাতীয় আয়ের পরিবর্তন, মুদ্রাস্ফীতি বা মুদ্রাসংকোচন, সরকারি রাজস্ব ও মুদ্রানীতির পরিবর্তন, বাণিজ্যচক্রের প্রভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো একদিকে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করে থাকে, অপরদিকে একক ভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানও এসব বাহ্যিক পরিবেশ ও শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই প্রতিষ্ঠানের উচিত বাহ্যিক অর্থনৈতিক পরিবেশ ও শক্তিকে বিশ্লেষণ, অনুধাবন এবং যথাসম্ভব সেসবের প্রতিকূলতাকে কমানোর প্রচেষ্টা চালানো। আর এই প্রেক্ষিতে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম।

বস্তুত বর্তমানে অর্থনৈতিক জটিলতা ও অস্থিতিশীলতা যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই নতুন নতুন তত্ত্ব ও নীতিমালা নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ হচ্ছে। কিন্তু এসব তত্ত্ব ও নীতিমালা সময়োপযোগী হওয়া সত্ত্বেও এগুলোকে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার জন্য ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যকীয়।

(বাউবি মডিউল অবলম্বনে)

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

আহমেদ মিন্টো

মিন্টো একজন ফ্রিল্যান্স লেখক এবং বিশ্লেষণ'র কন্ট্রিবিউটর।

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি ও সাধারণ অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য এবং ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

প্রকাশ: ১২:৫৪:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অগাস্ট ২০২১

ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি ও সাধারণ অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য

সাধারণ অর্থনীতির সাথে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির কিছু মৌলিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ:

১. অর্থনীতি শুধু অর্থনৈতিক নীতিমালার কাঠামো নিয়েই আলোচনা করে, কিন্তু ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি উক্ত নীতিমালার বাস্তব প্রায়োগিক রূপরেখা কীরূপ হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করে।

২. ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য এমনই যে এর বিষয়বস্তু কেবল ব্যষ্টিক অর্থনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অপরদিকে অর্থনীতি বলতে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক উভয় প্রকার অর্থনীতিকেই বোঝায়।

৩. সাধারণ ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন উৎপাদন ও উপকরণাদির মধ্যে আয়ের বণ্টন নিয়ে আলোচনা করা হয়। অর্থাৎ ভূমির খাজনা, শ্রমের মজুরি, মূলধনের সুদ, সংগঠনের জন্য মুনাফা ইত্যাদি বিষয়াদিই ব্যষ্টিক অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়। কিন্তু ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি কেবল মুনাফা বণ্টনসংক্রান্ত তত্ত্ব নিয়েই প্রধানত আলোচনা করে থাকে।

৪. ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মুনাফা সর্বাধিককরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু সাধারণ অর্থনীতি বিশেষ কোন উদ্দেশ্য অর্জনের পথ নির্দেশ করে না। এটি কেবলমাত্র অর্থনৈতিক চলকগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।

৫. সাধারণ অর্থনীতি হলো বর্ণনামূলক আর ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি হলো উদ্দেশ্যমূলক।

৬. সাধারণ অর্থনীতিতে অতীত পরিসাংখ্যিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত তত্ত্বসমূহ আলোচিত হয়। কিন্তু ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতিতে অতীত পরিসাংখ্যিক তথ্যের ভিত্তিতে বর্ণিত তত্ত্বসমূহ ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে কীরূপ ধারণ করতে পারে তাও নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালানো হয়।

ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

আধুনিক বৃহদায়তন উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ক্ষুদ্রায়তন প্রতিষ্ঠানসমূহ সাধারণত তাদের অতীত অভিজ্ঞতা এবং সরাসরি অনুমানের উপর ভিত্তি করে কোনোক্রমে তাদের বিভিন্ন প্রকার ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু যেসব প্রতিষ্ঠান উৎপাদন এবং কার্যক্রমের দিক থেকে বৃহৎ আকারের অথবা যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন ধরনের দ্রব্যের উৎপাদন এবং বিক্রয়ের সাথে জড়িত সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এতটা জটিল এবং অনিশ্চিত যে তাদের পক্ষে শুধুমাত্র অনুমানপ্রসূত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।

সফলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব। তাই এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানসমূহকে অর্থনীতির সাধারণ বিধি বা নিয়মাবলিকে নিজস্ব আঙ্গিকে কীভাবে সফলভাবে প্রয়োগ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায় সেই চেষ্টাই করতে হয়। অর্থাৎ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

মিল্টন এইচ স্পেন্সার এবং লুইস সিগেলম্যান-এর মতে, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অর্থনীতির প্রয়োগ বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক তত্ত্বসমূহের সমন্বয় সাধনের বিষয়টি নিম্নোক্ত কারণে গুরুত্বপূর্ণ-

১. সনাতনী তাত্ত্বিক অর্থনৈতিক ধারণাসমূহকে প্রকৃত ব্যবসায়িক পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য করে তোলার জন্য ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির আশ্রয় নিতে হয়। অর্থনৈতিক তত্ত্বসমূহে সাধারণত বিভিন্ন অনুমানের ওপর ভিত্তি করে কিছু মডেল দাঁড় করানো হয় এবং প্রতিষ্ঠানসমুহের জন্য সম্ভাব্য কোনো সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়। কিন্তু এসব অনুমানের কারণে উক্ত মডের বা তত্ত্বসমূহ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট অর্থহীন হয়ে পড়ে। কারণ প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রকৃত কার্যক্রমের ব্যাখ্যা সেসব তত্ত্ব থেকে পাওয়া যায় না। সুতরাং প্রকৃত ব্যবসায়িক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য কোন অর্থনৈতিক তত্ত্বকে অর্থবহ এবং এর অনুমানসমূহকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বাস্তব পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও ব্যাখ্যাযোগ্য করে তুলতেই হয়। তাই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নিকট সাধারণ অর্থনীতির চেয়ে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

২. বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক অনুমান তথা চাহিদার বিভিন্ন প্রকার স্থিতিস্থাপকতা পরিমাপের জন্য ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির আশ্রয় নিতে পারে। যেমন আয় স্থিতিস্থাপকতা, দাম স্থিতিস্থাপকতা, আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা, বিক্রয় প্রসারণ স্থিতিস্থাপকতা, খরচ উৎপাদন সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়াদি পরিমাপের মাধ্যমে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পূর্বানুমান করা হয়।

৩. বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক পরিমাণ নির্ধারণের জন্যও ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির আশ্রয় নিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ মুনাফা, চাহিদা, উৎপাদন, খরচ, দাম, মূলধন ইত্যাদির কথা বলা যেতে পারে। এসব পরিমাণ নির্ধারণ করতে হয় এজন্যই যে, এসব পরিমাণ নির্ধারণের মাধ্যমে অনিশ্চিৎ পরিস্থিতিতে ব্যবস্থাপকগণ মোটামুটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং আগাম পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারেন।

৪. বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক পরিমাণ নির্ধারণের পর সেগুলোর ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়িক নীতি যেমন- দামনীতি, বিক্রয়নীতি, ক্রয়নীতি, কর্মীনীতি ইত্যাদি প্রণয়নের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির প্রয়োগ ঘটানো হয়। অর্থনৈতিক পরিমাণসমূহ নির্ধারণের সময় এমনভাবে কার্যক্রম সম্পাদিত হয় যে কোনো কৌশল অবলম্বন করা হলে কী ধরনের ফলাফল দেখা দিতে পারে এবং সেসবের সম্ভাবনার পরিমাণ কীরূপ তাও নির্ধারিত হয়। ফলে বিভিন্ন বিকল্প কৌশলের মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক কৌশলটি বেছে নেয়া যায়।

৫. কোনো প্রতিষ্ঠান যে অর্থনৈতিক পরিবেশের মধ্যে কাজ করে এবং যেসব অর্থনৈতিক বাহ্যিক শক্তির সাথে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় সাধনের প্রয়োজন হয়; সেসব অর্থনৈতিক পরিবেশ ও প্রভাব বিস্তারকারী শক্তিকে অনুধাবনের জন্য ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির প্রয়োগ ঘটাতে হয়। যেমন জাতীয় আয়ের পরিবর্তন, মুদ্রাস্ফীতি বা মুদ্রাসংকোচন, সরকারি রাজস্ব ও মুদ্রানীতির পরিবর্তন, বাণিজ্যচক্রের প্রভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো একদিকে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করে থাকে, অপরদিকে একক ভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানও এসব বাহ্যিক পরিবেশ ও শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই প্রতিষ্ঠানের উচিত বাহ্যিক অর্থনৈতিক পরিবেশ ও শক্তিকে বিশ্লেষণ, অনুধাবন এবং যথাসম্ভব সেসবের প্রতিকূলতাকে কমানোর প্রচেষ্টা চালানো। আর এই প্রেক্ষিতে ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম।

বস্তুত বর্তমানে অর্থনৈতিক জটিলতা ও অস্থিতিশীলতা যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই নতুন নতুন তত্ত্ব ও নীতিমালা নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ হচ্ছে। কিন্তু এসব তত্ত্ব ও নীতিমালা সময়োপযোগী হওয়া সত্ত্বেও এগুলোকে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার জন্য ব্যবস্থাপকীয় অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যকীয়।

(বাউবি মডিউল অবলম্বনে)