গবেষণা নকশার শ্রেণিবিভাগ এবং বিভিন্ন প্রকার গবেষণা নকশার মধ্যে সম্পর্ক
- প্রকাশ: ১২:৩৫:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / ৯৪৬০ বার পড়া হয়েছে
গবেষণা নকশা (Research Design) হলো কোনো গবেষণা কর্ম পরিচালনার পূর্বে ওই গবেষণার একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা। গবেষণা নকশাকে গবেষণার রূপরেখা বা নীল নকশা (Blue Print) বলা হয়। গবেষণা নকশাকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. অনুসন্ধানমূলক গবেষণা নকশা এবং ২. সিদ্ধান্তমূলক গবেষণা নকশা।
১. অনুসন্ধানমূলক গবেষণা নকশা (Exploratory Research Design)
অনুসন্ধানমূলক গবেষণা পদ্ধতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যা সমস্যার প্রকৃতির ওপর গুরুত্ব প্রদান করে। সম্ভাব্য কতিপয় সাধারণ অনুমান বা নতুন ধারণা সম্পর্কিত এই গবেষণাকেই অনুসন্ধানমূলক গবেষণা বলা হয়।
২. সিদ্ধান্তমূলক গবেষণা নকশা (Conclusive Research Design)
কোনো তথ্য বা বিষয়বস্তু বাছাই করার জন্য যে গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়, তাকে সিদ্ধান্তমূলক গবেষণা বলা হয়।
সিদ্ধান্তমূলক গবেষণাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- ক. বর্ণনামূলক গবেষণা নকশা (Descriptive Research Design)
খ. কার্যকারণ সম্বন্ধীয় গবেষণা নকশা (Causal Research Design)
ক. বর্ণনামূলক গবেষণা নকশা (Descriptive Research Design)
যে গবেষণা নির্দিষ্ট বিষয়সম্পর্কিত সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ বা কার্যাবলি তুলে ধরার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়, তাকে বর্ণনামূলক গবেষণা বলা হয়। ধরনের গবেষণার বিষয়বস্তুতে বিস্তারিত বর্ণনা থাকে।
বর্ণনামূলক গবেষণাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
i. মিশ্র-বিভাগীয় গবেষণা নকশা (Cross-sectional Research Design)
সমগ্রকের মধ্য হতে একবার মাত্র উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে তাকে মিশ্র-বিভাগীয় নকশা বলা হয়। মিশ্র- বিভাগীয় নকশাকে দুভাগে ভাগ করা হয়।
যথা-
১। একক মিশ্র-বিভাগীয় নকশা
২। বহুমুখী মিশ্র-বিভাগীয় নকশা।
১। একক মিশ্র-বিভাগীয় গবেষণা নকশা (Cross-sectional Research Design)
নির্বাচিত সমগ্রক হতে উত্তরদাতাদের একটিমাত্র নমুনা গ্রহণ করা এবং নমুনার তথ্য শুধুমাত্র একবার ব্যবহার করা হলে তাকে একক মিশ্র-বিভাগীয় নকশা বলে। এ ধরনের নকশাগুলোকে নমুনা জরিপ গবেষণা নকশাও (sample survey research design) বলা হয়।
২। বহুমুখী মিশ্র-বিভাগীয় গবেষণা নকশা (Multiple Cross-sectional Research Design)
নির্বাচিত সমগ্রক হতে উত্তরদাতাদের দুটি বা এর অধিক নমুনা গ্রহণ করা হলে এবং প্রত্যেকটি নমুনামাত্র একবার ব্যবহার করা হলে তাকে বহুমুখী মিশ্র-বিভাগীয় নকশা বলে বিবেচনা করা হয়।
ii. অনুদৈর্ঘ্য গবেষণা নকশা (Longitudinal Research Design)
যে গবেষণায় সমগ্রকের স্থায়ী নমুনাকে অন্তর্ভুক্ত বা সংশ্লিষ্ট করে এবং যাকে পুনরায় পরিমাপ করা হয়, তাকে অনুদৈর্ঘ্য গবেষণা বলা হয়। যেমন- বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে জনগণের খাদ্যাভাস কীভাবে পরিবর্তিত হয়, সে সংক্রান্ত গবেষণাকে অনুদৈর্ঘ্য গবেষণা নকশা বলে। অনুদৈর্ঘ্য গবেষণা নকশাকে time-series design ও বলা হয়।
খ. কার্যকারণ সম্বন্ধীয় গবেষণা নকশা (Causal Research Design)
কারণ ও ফলাফলের সম্পর্ক কী ধরনের তা যাচাই করার উদ্দেশ্যে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করা হলে, তাকে কার্যকরণ সম্বন্ধীয় গবেষণা বলা হয়। কার্যকারণ সম্বন্ধীয় গবেষণা হচ্ছে এক ধরনের সিদ্ধান্তমূলক গবেষণা, যেখানে মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে কারণ ও ফলাফলের সম্পর্কের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা এবং কারণ ও ফলাফলের সম্পর্কের ব্যাখ্যা প্রদান করা। বর্ণনামূলক গবেষণার ন্যায় কার্যকারণ সম্বন্ধীয় গবেষণার ক্ষেত্রেও পরিকল্পিত কাঠামোর নকশা প্রয়োজন হয় এবং এ ধরনের গবেষণার ক্ষেত্রে স্বাধীন চলক ও নির্ভরশীল চলক নির্দিষ্ট করা জরুরি। সাধারণত, নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে কার্যকারণমূলক গবেষণা পরিচালনা করা হয়। যথা-
(i) স্বাধীন চলকগুলোর মধ্যে কোন চলকের কারণ সম্পর্কিত এবং নির্ভরশীল চলকগুলোর মধ্যে কোনগুলো ইন্দ্রিয়গত বিষয়ের ফলাফল তা অনুধাবন এবং
(ii) কার্যকারণ সম্পর্কিত চলক এবং পূর্বানুমানের ফলাফলের মধ্যে সম্পর্কের প্রকৃতি নির্ধারণ করা। সামগ্রিকভাবে গবেষণা প্রক্রিয়াটি সমস্যা ও গবেষণার উদ্দেশ্যভিত্তিক বিবৃতি দ্বারা নির্দেশিত হয়। তাই গবেষণার উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশিত ফলাফল সম্পর্কে ব্যবস্থাপনা ও গবেষকের ঐক্যমত নিশ্চিত করার জন্য এ সংক্রান্ত লিখিত বিবৃতি থাকা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে গবেষণা নকশা প্রণয়ন করতে হয়।
অনুসন্ধানমূলক, বর্ণনামূলক বা ব্যাখ্যামূলক এবং কার্যকারণ সম্পর্কিত গবেষণার মধ্যে সম্পর্ক
অনুসন্ধানমূলক, বর্ণনামূলক ও কার্যকারণমূলক সম্পর্কিত গবেষণাকে প্রধান প্রধান গবেষণা নকশা ধরা হলেও এগুলো স্বতঃসিদ্ধ নয়। গবেষণা প্রকল্পে একাধিক গবেষণা নকশা সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে। গবেষণা নকশা পছন্দকরণের দিকগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. সামগ্রিক গবেষণা নকশা কাঠামোর মধ্যে অনুসন্ধানমূলক গবেষণা হচ্ছে প্রাথমিক ধাপ। বেশিরভাগ সময় সিদ্ধান্তমূলক গবেষণা এবং কার্যকারণমূলক গবেষণাসমূহ অনুসন্ধানমূলক গবেষণাকে অনুসরণ করে। যেমন- অনুসন্ধানমূলক গবেষণার মাধ্যমে অনুমান করা হলে, তা বর্ণনামূলক বা কার্যকারণমূলক গবেষণায় ব্যবহারের লক্ষ্যে পরিসংখ্যানিক উপায়ে পরীক্ষা করা উচিত।
২. সমস্যা সম্পর্কে ধারণা বা জ্ঞান খুবই কম থাকলে, অনুসন্ধানমূলক গবেষণার মাধ্যমে কাজ শুরু করলে তা সম্পন্ন করা অনেক সহজ হয়ে থাকে। সমস্যা যথাযথভাবে সংজ্ঞায়ন, বিকল্প কর্ম পদ্ধতি নির্ধারণ, গবেষণার প্রশ্ন বা ধারণার উন্নয়ন এবং প্রধান চলক ও স্বাধীন চলককে শ্রেণিকৃত করা অনুসন্ধানমূলক গবেষণাকে সহজ করে।
৩. অনুসন্ধানমূলক গবেষণার প্রথম পদক্ষেপ হলো, গবেষণা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ এবং কার্যকারণের ভূমিকা নির্ণয়। যেমন- বর্ণনামূলক ও কার্যকারণমূলকের ভিত্তিতে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল ব্যাখ্যা করে কিছু সুপারিশ করা হয়। বর্ণনামূলক বা কার্যকারণমূলক গবেষণার ভিত্তিতে অনুসন্ধানমূলক গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন। কারণ এ গবেষণায় অন্তর্নিহিত ফলাফলের বিষয়সমূহ সহজ ও সাবলীল ভাষায় প্রতিবেদনে লিখা থাকে।
৪. সকল গবেষণা অনুসন্ধানমূলক গবেষণায় শুরু করা বাধ্যতামূলক নয়। কী ধরনের গবেষণা পরিচালনা করা হবে, তা সমস্যা সংজ্ঞায়িত করার নির্ভুলতা এবং সমস্যার পদ্ধতি সম্পর্কে গবেষকের সংশয়মুক্ত থাকার মাত্রার ওপর নির্ভর করে। বর্ণনামূলক বা কার্যকারণমূলক গবেষণার মাধ্যমেও একটি গবেষণা নকশা ভালোভাবে শুরু হতে পারে।
(বাউবির ওপেন স্কুল থেকে প্রকাশিত মোঃ মাঈনুদ্দিন এবং ড. বিপ্লব কুমার মজুমদার রচিত ব্যবসায় গবেষণা পাঠ্যবইয়ের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে)