শিখনফল: শিখনফল লেখার মূলনীতি, বৈশিষ্ট্য এবং পাঠপরিকল্পনায় শিখনফল নির্বাচন
- প্রকাশ: ০৬:৩১:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / ১৫৭৯২ বার পড়া হয়েছে
জ্ঞানের প্রসার, অনুধাবন ক্ষমতার ব্যাপ্তি, ইতিবাচক মানসিকতার পরিবর্তন এবং শারীরিক দক্ষতার উন্নয়ন সাধনের মাত্রা শিখনফলে বিজ্ঞাপিত হয়। প্রকৃতপক্ষে শিখনফল অর্জনের মাধ্যমে পাঠের উদ্দেশ্য অর্জিত হয়।
শিখন-শেখানো কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা শিখনফল আয়ত্ত করে। এই শিখনফল অর্জনের উদ্দেশ্যকে আচরণিক উদ্দেশ্যেও বলা হয় যপূর্ব থেকেই নির্ধারণ করতে হয়।
শিখনফল কী?
নির্দিষ্ট কোনো সময়ব্যাপী চলা শিখন-শিক্ষণ কার্যক্রম বা কোর্স শেষে নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যে সকল জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা করা হয় তাকে শিখনফল বলে। শিখনফল একটি বাংলা শব্দ, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো লার্নিং আউটকামস (Learning Outcomes)।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (University of Oxford) এর ‘টিচিং অ্যান্ড লার্নিং’ ডিপার্টমেন্টর মতে, “Learning outcomes describe what students should be able to do by the end of a teaching session or course. They are related to, but different from, teaching aims, which instead describe broadly what the session or course is about and its overall purpose.”
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত একটি শিক্ষক মডিউলে শিখনফলের সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া হয়- “কোনো একটি পাঠ শেষে শিক্ষার্থী কী জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট প্রত্যাশা হলো শিখনফল (Learning Outcomes)।” মডিউলটিতে বলা হয়েছে যে, জ্ঞানের প্রসার, অনুধাবন ক্ষমতার ব্যাপ্তি, ইতিবাচক মানসিকতার পরিবর্তন এবং শারীরিক দক্ষতার উন্নয়ন সাধনের মাত্রা শিখনফলে বিজ্ঞাপিত হয়। প্রকৃতপক্ষে শিখনফল অর্জনের মাধ্যমে পাঠের উদ্দেশ্য অর্জিত হয়।
একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাস্তর শেষে শিক্ষার্থী যে শিখনযোগ্যতা অর্জন করবে বলে প্রত্যাশা করা হয় সেটি সেই স্তরের প্রান্তিক শিখনফল।
শিখনফল লেখার মূলনীতি
- শব্দবাজি এড়িয়ে চলতে হবে
- অ্যাকশন ভার্ব (action verb) ব্যবহার করতে হবে
- নির্দিষ্ট সময়ে অর্জনযোগ্য হতে হবে
- সুনির্দিষ্ট হতে হবে
- একসাথে একটি শিখন ফল লিখতে হবে; একসাথে একাধিক শিখনফল বা একাধিক action verb দিয়ে একটি বা একাধিক শিখনফল লেখা যাবে না
শিখনফলের বৈশিষ্ট্য
অনেকে শিখনফলের বৈশিষ্ট্যকে স্মার্ট (SMART) হিসেবে চিহ্নিত করে থেকেন। এখানে SMART শব্দটির প্রতি বর্ণ একেকটি বৈশিষ্ট্য বহন করে।
শিখনফলের ৫ টি বৈশিষ্ট্য হলো
- S = Specific বা সুনির্দিষ্ট
- M = Measurable বা পরিমাপযোগ্য
- A = Attainable বা অর্জনযোগ্য
- R = Relevant বা প্রাসঙ্গিক
- T = Time-bound বা সময়াবদ্ধ
শিখনফলের কয়েকটি উদাহরণ
- শিখনফল কী তা বলতে পারবে
- শিখনফলের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে পারবে
- সকর্মক ক্রিয়ার তালিকা তৈরি করতে পারবে
- শিখনফল লেখার উপকারীতা বলতে পারবে
শিখনফল যেমন হবে তার তালিকা
- বলতে পারবে
- লিখতে পারবে
- গণনা করতে পারবে
- শনাক্ত করতে পারবে
- বর্ণনা করতে পারবে
- ব্যাখ্যা করতে পারবে
- অঙ্কন করতে পারবে
- বিশ্লেষণ করতে পারবে
- পার্থক্য করতে পারবে
- তুলনা করতে পারবে
- সমালোচনা করতে পারবে
- মূল্যায়ন করতে পারবে
- সমাধান করতে পারবে
- তালিকা করতে পারবে
- নবায়ন করতে পারবে
- সাড়া প্রদান করতে
- প্রয়োগ করতে পারবে
- নকশা করতে পারবে
- বিচার করতে পারবে
এ রকম আরও লেখা যায়।
শিখনফল অনুপযোগী বা শিখনফল লেখা যাবে না কিছু ক্রিয়ার তালিকা
মূল্যায়ন করা যায় না বা মূল্যায়ন করা তুলনামূলকভাবে জটিল এমন প্রকৃতির ক্রিয়া বা ভার্ব (verb) শিখনফল লেখার সময় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
নিচে শিখনফল অনুপযোগী কিছু ক্রিয়া উল্লেখ করা হলো-
- জানতে পারবে
- বুঝতে পারবে
- শিখতে পারবে
- সতর্ক হতে পারবে
- সচেতন হতে পারবে
- আগ্রহী হবে
- পরিচিত হবে
- উপলব্ধি করতে পারবে
- কর্মজ্ঞান অর্জন করবে
এরকম আরও ক্রিয়া রয়েছে যেগুলো শিখনফল লেখার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠ পরিকল্পনায় শিখফল নির্বাচন
নির্ধারিত শিক্ষাক্রমে সুনির্দিষ্ট শিখনফলের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিটি শ্রেণিতে পাঠের বিষয়বস্তু নির্বাচন করা হয়ে থাকে। আবার শ্রেণিভিত্তিক পাঠ্যবইয়ে অধ্যায়ভিত্তিক শিখনফল বা উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকে।
শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় একটি পিরিয়ডে বরাদ্দকৃত সময়ে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে যতগুলো শিখনফল অর্জন করানো সম্ভব ততগুলোই নির্বাচন করা উচিত। প্রতি পিরিয়ডে কয়টি শিখনফল অর্জন করাতে হবে তা নির্ভর করবে সময় এবং পাঠের বিষয়বস্তুর উপর। তাই একেকটি পিরিয়ডের শিখনফলের সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় শিক্ষকরা তিনটি বা চারটি শিখনফল নিয়ে শ্রেণিতে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
শিখনফল অর্জন না হওয়ার কিছু সম্ভাব্য কারণ
- শিক্ষার্থী পাঠে অমনোযোগী থাকতে পারে
- শিক্ষার্থীর পাঠে আগ্রহ না থাকতে পার
- শিক্ষার্থীর ভুল প্রত্যক্ষণ
- না বুঝে শিক্ষার্থীর মুখস্ত করার প্রবণতা
- শিক্ষার্থীর পক্ষে বিষয়বস্তুর মধ্যকার সম্পর্ক বুঝতে না পারা
- শিক্ষক কর্তৃক শ্রেণিকক্ষে অসম্পূর্ণ শিখন-শিক্ষণ
- শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক কর্তৃক ভুল তথ্য প্রদান
- শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের ভুল নির্দেশনা
- শিক্ষক কর্তৃক পাঠকে আকর্ষণীয় করতে সক্ষম না হওয়া
- যথাযথ শিখন-শেখানো পদ্ধতি অনুসরণ না করা
- যথাযথ উপকরণ ব্যবহার না করা
এমন আরও কারণ থাকতে পারে।
Thank You Very Much…
This article is really very informative
Absolutely Awesome ♥️🍀🍀☘️🌱♥️♥️
Thanks a lot Sir. May you live long.
ধন্যবাদ স্যার।