আফগানিস্তান: তালেবান সরকারের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ
- প্রকাশ: ০৩:৫৮:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১
- / ৯৬২ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (North Atlantic Treaty Organisation) বা ন্যাটো (NATO) বাহিনীর ত্বরিত প্রস্থান এবং তালেবানদের (Taliban) ঝড়ের গতিতে আফগানিস্তান (Afghanistan) বিজয় সাম্প্রতিক ইতিহাসের এক মাইল ফলক। ২০২১ সালের পুরো আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই অভূতপূর্ব দৃশ্যপট অর্থাৎ তালেবানদের আফগানিস্তান দখল তাবৎ মিডিয়ার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল। এ অভাবনীয় পটপরিবর্তনে সবাই নড়েচড়ে বসে।
যদিও দেড় বছর আগেই কাতারের রাজধানীতে কাবুলের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, তারপরও বিশ্বের মহাপরাক্রমশালী পরাশক্তির এমন দ্রুত ও গ্লানিময় বিদায় হবে- তা কোনো পক্ষই ভাবেনি।
বিজয়োৎসব করেনি তালেবান
বিনাযুদ্ধে ও বিনা বাধায় তালেবান বাহিনীর এমন বিজয়ে বিশ্ব অবাক। তাৎক্ষণিকভাবে কাবুলে বর্ণিল বিজয় উৎসব করলেও তালেবান শীর্ষ মহল বিজয়োৎসব উদযাপন করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তালেবান বাহিনী মার্কিন বাহিনীর শেষ বিমানটি কাবুল বিমানবন্দর ত্যাগ করা পর্যন্ত ধৈর্য প্রদর্শন করে।
১৫ আগস্ট, ২০২১ তারিখ তালেবান কাবুল দখল করে। তবে বিজয়ের ১৫ দিন পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী তালেবানরা বিমানবন্দরে প্রবেশ করেনি। তালেবানরা বিজয় এবং চুক্তি পালনের জন্য প্রশংসার দাবিদার।
কাবুল বিজয়ের পর ধীরগতিতে তালেবান এবং বিরোধীদের হামলা
যত দ্রুত এবং নির্বিঘ্নে তালেবান কাবুল জয় করে সেই গতিতে তাদের পরবর্তী কার্যক্রম এগোয়নি। তারা যে ২০ বছর আগের তালেবান নয় এবং এই বছরগুলোতে তারা অনেক পরিপক্ব ও কৌশলী কূটনীতিক হয়েছে বলে সবার কাছে প্রতিভাত হয়েছে।
তারপরও সরকার গঠনে তিন সপ্তাহের বেশি সময় নিয়েছে এবং গঠিত সরকার বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। কোনো দেশ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। মূলত তারা বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন দেশের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে। ক্রমাগত চাপের মুখে রয়েছে তালেবান সরকার।
বিজয়ের দুই সপ্তাহের মধ্যেই শান্তিপূর্ণ অবস্থানের মাঝে ২৭ আগস্ট কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে তালেবানেরই এতদিনকার সহযোগী আফগান শাখা আইএসকেপি (Islamic State Khorasan Province)। মার্কিনিদের বিদায়ের অব্যবহিত পরই এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারা ড্রোন হামলা চালায়। উভয় ক্ষেত্রেই প্রচুর হতাহত হয়। ওদিকে পানশির বা পাঞ্জশির আহমেদ মাসুদ বাহিনীর কাছ থেকে দখল করতে তালেবানের তিন সপ্তাহ লেগেছে।
৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ পানশির দখল করার পরই ৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট সরকার ঘোষণা করে তালেবান। এ সরকার গঠনে পৃথিবীর কোনো দেশ সন্তুষ্ট হয়নি। কারণ এই সরকারে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো এবং নারীদের অংশ নেই। আরও কিছুদিন পর কয়েকজন মন্ত্রীকে অন্য দু-একটি গোষ্ঠী থেকে নেওয়া হয়, তাও নামকা ওয়াস্তে।
যে দেশগুলো তালেবান সরকারের খুব ঘনিষ্ট- পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন, রাশিয়া, বাহরাইন, কাতার এবং আরও দু-একটি দেশ তারাও অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার আশা করেছিল তালেবানদের নিকট থেকে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো যে, সরকার গঠনের ১ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও সরকারের শপথ নেওয়া হয়নি (১২ সেপ্টেম্বর, ২১)। এদিকে সরকার গঠনের ১৫ দিন পার হতে না হতেই তালেবানের উপর হামলা হয়। আইএস জঙ্গিদের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত নানগরহার প্রদেশের জালালাবাদ শহরে তালেবানদের গাড়ি লক্ষ্য করে পৃথক তিনটি বোমা হামলা হয়। এরপর আরও কয়েকটি অনুরূপ হামলা হয়। এর আগে প্রেসিডেন্ট ভবনে নতুন সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে ঝগড়া-গোলাগুলি হয়। সরকারের পদ-পদবি নিয়ে হাক্কানী গ্রুপের সঙ্গে তালেবানদের আন্তঃকোন্দল সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে অন্যান্য গ্রুপের সঙ্গেও যে কোন্দল সৃষ্টি হবে না- এমন কথা বলা যায় না।
আফগানিস্তান কখনো একই পতাকাতলে ছিল না
আফগানিস্তান একটি বহু জাতি-গোত্রে বিভক্ত দেশ। তালেবান পশতুন প্রধান সংগঠন যারা সমগ্র আফগানিস্তানের ৪২ শতাংশ। অন্য গোত্রগুলো হচ্ছে তাজিক (২৭ শতাংশ), হাজারা (১০ শতাংশ), উজবেক (৯ শতাংশ), আয়মাক (৪ শতাংশ), তুর্কমেন (৩ শতাংশ), বালুচ (২ শতাংশ), পাশাই, নূরিস্তানি, গুজ্জর, আরব, ব্রাহুই, কিজিবাস, পামিরি, কিরগিজ এবং সাদাত।
এক এক প্রদেশে এক এক গোষ্ঠীর প্রাধান্য এবং প্রতিটি গোত্রই কট্টর এবং আলাদা কৃষ্টিতে বিশ্বাসী। এদের সবাইকে এক পতাকাতলে ও এক সরকারের অধীনে আনা দুরূহ ব্যপার।
তালেবান যেমন দেওবন্দি সুন্নি তেমনি আইএস সুন্নি হলেও সালাফি মতাদর্শে বিশ্বাসী। এভাবে বিভিন্ন বিবদমান গ্রুপ ও গোত্রে বিভক্ত আফগানরা বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে লড়ার পাশাপাশি আন্তঃগোত্র কলহেও ব্যস্ত ছিল।
পুরো আফগানিস্তানকে কখনও এক পতাকাতলে, এক শাসনযন্ত্রের অধীনে আনা যায়নি। ব্রিটিশরাজ, সোভিয়েত রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র কেউই পুরো আফগান মানচিত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তালেবানের কাছেও এটি যে সহজ হবে- এটা আশা করা যায় না। এমনকি সরকার গঠনেও এখন পর্যন্ত সব দল-গোত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি এবং এ নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন বাহিনী ও সশস্ত্র গ্রুপ।
জেগে উঠবে জঙ্গী সংগঠনগুলো?
তালেবান, আইএস, আল কায়েদা ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন মুজাহিদিন গ্রুপ যেমন- জামাতে ইসলামী, হেজবে ইসলামী যারা আবার দুটি জোটে বিভক্ত- ‘পেশোয়ার সেভেন’ (Peshwar Seven) নামে সুন্নি ইসলামী ইউনিয়ন এবং ‘তেহরান এইট’ (Tehran Eight) নামে শিয়া ইসলামি ইউনিয়ন। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন দল-উপদল ও গ্রুপ- হাক্কানী গ্রুপ, লস্করে বেলুচিস্তান, হেজবে ওয়াহাদাত, মকতব আল-খিদমত, মোল্লা আবদুল্লাহ ফ্রন্ট, নর্দান অ্যাালায়েন্স, ন্যাশনাল ইসলামি ফ্রন্ট, বেলুচ লিবারেশন ফ্রন্ট/আর্মি, ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট, কমিউনিস্ট পার্টি অব আফগানিস্তান ইত্যাদি। এসব গ্রুপকে পোষ মানানো কতটুকু সম্ভব হবে তালেবানের পক্ষে তা ভবিষ্যৎই বলবে।
জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে তালেবানের এতদিনকার সম্পৃক্ততা এত সহজে এড়ানো যাবে না, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য পশ্চিমা দেশগুলো সরব। এই সঙ্গে অন্যান্য বিশ্ব সংস্থা বা জোটও আফগানিস্তানে জঙ্গিবাদের কেন্দ্র ভূমি হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। তারা আল কায়েদা এবং আইএস তালেবানের অধীন আফগানিস্তানকে জঙ্গিবান্ধব মনে করতে পারে। এ ব্যাপারে পশ্চিমা সরকারগুলো হুশিয়ারি দিচ্ছে। অন্যদিকে তালেবান সরকার চাচ্ছে বহির্বিশ্বের স্বীকৃতি ও সাহায্য।
আন্তর্জাতিক চাপে তালেবান সরকার
সেপ্টেম্বর ২১-এ অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে তালেবান সরকার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আবেদন করলেও তা গৃহীত হয়নি।
এরই মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য অর্থাৎ পাঁচ বিশ্বশক্তি তালেবান সরকারকে চাপের মুখে রেখেছে। তারা চায় আফগানিস্তানে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠিত হোক, যেখানে নারীদের অধিকার রক্ষিত হবে এবং যেখানে সন্ত্রাসের আখড়া থাকবে না। তারা চায় আফগানিস্তানে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক।
ওদিকে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (Shanghai Co-operation Organisation) বা এসসিও (SCO) এর ২১তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে, যার ফোকাস ছিল আফগানিস্তান পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার উপর এর প্রভাব নিয়ে। এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান। উল্লেখ্য, আফগানিস্তান এসব দেশবেষ্টিত। সম্মেলন শেষে যৌথ ঘোষণায় তারা এমন একটি আফগানিস্তান দেখতে চায় যেখানে সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ ও মাদক থাকবে না।
খাদ্য ও অর্থ সংকটে আফগানিস্তান
তালেবান সরকার এখন চরম অর্থ ও খাদ্য সংকটে। গত ২০ বছর যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের মাধ্যমে আফগান অর্থনীতি সচল ছিল। কিন্তু তাদের বিদায়ের পর পরিস্থিতি ভিন্ন। বিদেশে আফগানিস্তানের অর্থ জব্দ করা হয়েছে এবং সব সাহায্য বন্ধ হওয়ায় আফগানরা দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে যাতে জাতিসংঘ মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা ব্যক্ত করছে। লাখো শিশু অপুষ্টি ও মৃত্যুঝুঁকিতে।
২১ আগস্ট, ২০২১ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে আফগানিস্তানের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন কাতারের আমির। তিনি আফগানিস্তানের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান। আফগানিস্তানে ঔষধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থা প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস ঘোষণা করেছেন, আফগানিস্তানের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়া রোধে সাড়ে ৪ কোটি মার্কিন ডলার জরুরি ভিত্তিতে উন্মুক্ত করা হয়েছে।
জাতিসংঘের অনুরোধে দাতা দেশগুলো ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের জরুরি সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে তারা এই অর্থের সঠিক ও সুষ্ঠু ব্যবহারের শর্ত দিয়েছে। অর্থনীতি সচল করা, খাদ্য সংকট মোকাবিলা করা এবং স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা তালেবান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অথচ আফগানিস্তান মহামূল্যবান খনিজ ও তৈল সম্পদের উপর ভাসছে, যার মূল্য কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার, কিন্তু উত্তোলন করতে পারছে না।
আফগানিস্তানে খনিজ সম্পদ
আফগানিস্তানে ১ হাজার ৪ শতেরও বেশি খনিজক্ষেত্র রয়েছে যাতে মজুদ রয়েছে সোনা, রূপা, প্লাটিনাম, ইউরেনিয়াম, তামা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, ক্রোমাইট, লিথিয়াম, উচ্চমানের রত্নপাথর পান্না, রুবি, নীলকান্তমনি, ফিরোজা ইত্যাদি। স্থিতিশীল সরকার না থাকায় খনিজসম্পদ উত্তোলনের জন্য বিদেশি কোম্পানি বা সংস্থাগুলো বিনিয়োগ করছে না। তবে অবৈধভাবে খনিজ উত্তোলন হচ্ছে যাতে তালেবানসহ বিভিন্ন জঙ্গি গ্রুপ ও মিলিশিয়া সংগঠন অর্থের জোগান পাচ্ছে। অবৈধভাবে ও চোরাচালানের মাধ্যমে পরিশোধনের জন্য সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে যাচ্ছে এবং অবৈধভাবে রপ্তানিও হচ্ছে। মূলত আফিমের পর এই খনিজ উত্তোলনের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ আফগানিস্তানের আয়ের দ্বিতীয় উৎস। কবে যে তালেবান সরকার স্থিতিশীল হবে, কবে খনিজসম্পদ উত্তোলনের ব্যবস্থা হবে- তা ভবিষ্যৎই জানে।
হিমশিম খাচ্ছে তালেবান সরকার
অন্তর্দ্বন্দ্ব, বহিঃশক্তির চাপ, অর্থনীতি ও খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা সমস্যা, গোত্রীয় বিভাজন ইত্যাদি মোকাবিলা নিয়ে তালেবান সরকার হিমশিম খাচ্ছে।
২০ বছর আগের তালেবান থেকে আজকের তালেবান আরও উদারনৈতিক, আধুনিক এবং সহনশীল হবে এটি আশা করেছিল সবাই। কিন্তু তালেবান ঘোষণা করেছে তারা আধুনিক গণতন্ত্রের পথে যাবে না, নারীদের শিক্ষাবিরোধী এবং সীমিত অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারে বিশ্বাসী। নারীরা রাজপথে আন্দোলন করছে এবং তাদের দমনও করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রিধারী উপাচার্যকে বরখাস্ত করে কম ডিগ্রিধারী ব্যক্তিকে নিযুক্ত করায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। এভাবে বিরোধ দানা বাঁধছে। এদিকে ভূরাজনৈতিক খেলায় আফগানিস্তানকে নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। এ নিয়ে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে।
সম্প্রতি গঠিত কোয়াড (যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান) এবং অকাস (অস্ট্রেলিয়া, ইউকে ও ইউএস) এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আফগানিস্তানের পটপরিবর্তন এতে প্রভাব ফেলছে।
ওদিকে আইএসকেপি ও নর্দান অ্যালায়েন্সের বিরোধিতা তালেবানের জন্য দুশ্চিন্তার ব্যাপার। এত সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার পরও পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন, রাশিয়া, আমিরাত, সৌদি আরব কোনো দেশই এখনও তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। ভারতের সঙ্গে চলছে ঠান্ডা লড়াই। এ অঞ্চলে ভারত-পাকিস্তান ফ্যাক্টর এমন অবস্থায় যে, আফগানিস্তান ও এর জঙ্গি গ্রুপগুলোর তৎপরতা নিয়ে পাক-ভারত সংর্ঘষও লেগে যেতে পারে। কেননা কাশ্মীর ইস্যুতে তালেবান ও জঙ্গি গ্রুপগুলোকে পাকিস্তান মদদ দিবে বলে ভারত মন্তব্য করছে।
আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের স্বীকৃতি
বাংলাদেশও আফগানিস্তানের ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে। চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তান তালেবান সরকারকে সরাসরি সহায়তা করবে বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি। তালেবান সরকার মরিয়া হয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির চেষ্টা করছে। কিন্তু নারী শিক্ষা ও নারী অধিকার, মানবাধিকার, অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার ও উদরনীতি অবলম্বন এসব ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে। ওদিকে সহযোগি বাহিনী ও গোষ্ঠীর সঙ্গে টানাপড়েন এবং সর্বোপরি ম্রিয়মান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তালেবানকে স্বস্তি দিচ্ছে না।
হয়তো ভূরাজনৈতিক কারণেও চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও আরাও কিছু রাষ্ট্র তালেবানকে টিকিয়ে রাখবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে দায়িত্ব গ্রহণ করবে। কিন্তু পরাজিত শক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত তালেবানকে ক্রমাগত চাপে রাখবে এতে সন্দেহ নেই। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে, জঙ্গি দমনে প্রয়োজনে আফগানিস্তানে ড্রোন হামলা চালাবে। ওদিকে তালেবানও মৌলবাদ থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ প্রকাশ করছে না।
শেষকথা
সব মিলিয়ে তালেবান সরকার এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এর অবসান হোক এবং আফগান জনগণ স্বস্তি ও শান্তিতে থাকুক- এটাই সবার আশা। তালেবান কিভাবে এর মোকাবিলা করে সেটাই দেখার অপেক্ষায় সবাই।