০৮:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

পরিবার ও শিক্ষার সম্পর্ক বা শিক্ষায় পরিবারের গুরুত্ব কী?

বিশ্লেষণ সংকলন টিম
  • প্রকাশ: ০৬:০৪:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১
  • / ১২৫৭০ বার পড়া হয়েছে

পরিবার প্রায়শ সন্তানসহ বা সন্তানবিহীন এক বা একাধিক দম্পতির ছোটো সংসার নিয়ে গঠিত।


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

যে-কোনো শিক্ষিত মানুষের শিক্ষার পটভূমিতে তার পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য পরিবারই শিশুকে প্রস্তুত করে দেয়। এছাড়াও ব্যক্তির সামাজিক শিক্ষা বা সামাজিকীকরণ, সংস্কৃতিকরণ, ধর্মীয় শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিবারই মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

পরিবার

নারী-পুরুষের বিবাহের মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ভিত্তিতে সন্তান প্রজনন ও বংশ রক্ষার আকাঙ্ক্ষা থেকে পরিবার গঠিত হয়; তাই পরিবারকে একটি জৈব একক (Biological Unit) বলেও অভিহিত করা যায়।

  • পরিবার সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক নিমকফ (M. F. Nimcoff) তাঁর রচিত ‘ম্যারিজ অ্যান্ড দ্য ফ্যামিলি (Marriage and the Family) গ্রন্থে বলেন, Family is more or less durable association of husband and wife with or without children or of a man or women alone, with children (পরিবার হলো এমন এক ধরনের স্থায়ী সংঘ, যা স্বামী-স্ত্রী সন্তানসহ কিংবা সন্তান ছাড়া অথবা সন্তান-সন্ততীসহ নারী কিংবা পুরুষের মাধ্যমে গঠিত হয়)।
  • অ্যান্ডারসন ও পার্কার-এর মতে, Family is a socially recognised unit of people related to each other by kinship, marital and legal ties (পরিবার হচ্ছে এমন একটি সমাজিকভাবে স্বীকৃত একক যেখানে সদস্যরা রক্তের বন্ধন, বৈবাহিক ও আইনানুগ সম্পর্কের মাধ্যমে ভূমিকা পালন করে)।

পরিবার সম্পর্কে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন

শিক্ষা

বিভিন্ন মনিষী বিভিন্নভাবে শিক্ষাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন যার মধ্যে কিছুসংজ্ঞা এই পাঠটিতে দেয়া হলো:

  • প্লেটো মনে করেন, শিক্ষা হচ্ছে সঠিক মুহূর্তে আনন্দ ও বেদনা অনুভব করতে পারার ক্ষমতা বা শক্তি (Education is the capacity to feel pleasure and pain in the right moment.)
  • অ্যারিস্টটল-এর মতে, সুস্থ্য দেহে সুস্থ্য মন তৈরি হলো শিক্ষা (Education is the creation of sound mind in a sound body)।
  • জোহান হেনরিক পেস্তানলৎসী বলেন, শিক্ষা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিসমূহের স্বাভাবিক, সুষম ও প্রগতিশীল বিকাশ (Education is natural, harmonious and progressive development of man’s innate power.)
  • হোয়াইটহেড (Whitehead) বলেন, “শিক্ষার একমাত্র বিষয় হলো সর্বতোভাবে বিকশিত বা প্রকাশিত জীবন”।
  • অ্যান্ডারসন ও পার্কার এর মতে, “শিক্ষা হচ্ছে একটি সামাজিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সমাজ জীবনে উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে”। (Education is the social process by which an individual learns the things necessary to fit him to the life of his society.)

শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

পরিবার ও শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক বা শিক্ষায় পরিবারের গুরুত্ব

শিক্ষার সাথে পরিবারের সম্পর্ক কিংবা পরিবারের সাথে শিক্ষার সম্পর্ক অত্যন্ত নিগুঢ় এবং একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। মানব সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে, এমন কি প্রাক-আধুনিক যুগেও মানুষের শিক্ষা গ্রহণের প্রধান ও একমাস মাধ্যম বা প্রতিষ্ঠান ছিল পরিবার। আধুনিক সমাজ ও পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী সমাজে শিক্ষা এক বিশেষ ধরনের সামাজিক কর্মকান্ড হিসেবে বিকাশ লাভ করে। আধুনি সমাজে শিক্ষা বলতে প্রধানত আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকেই (Formal Education) বুঝায়। কিন্তু শিক্ষা বিষয়টি আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত। শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী সামাজিক প্রক্রিয়া। কখনো পরিবারের গন্ডিতে, কখনো পরিবারের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানে, কখনো বা উন্মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের আবহে। তবে শিক্ষার শুরুটা হয় মানুষের জন্মের পর থেকে পরিবারের পরিমন্ডলে। অনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে এ ধরনের জীবনব্যাপী উ›মুক্ত উদার শিক্ষাকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা (Informal Education) বলা হয় যা মানুষ দেখে, ঠেকে কিংবা শুনে বা বুঝে শেখে।

শিক্ষায় পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

মানব সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে সহজ-সরল সমাজে শিক্ষা একটি পৃথক সামাজিক কর্মকান্ড হিসেবে গণ্য হয়নি। কারণ মানুষের কর্মজীবনে তখনো কোনো পৃথকীকরণ ঘটেনি। সমাজের ওই পর্যায়ে তখন পরিবারের ভাই-বোন ও জ্ঞাতিগোষ্ঠীর বয়োজ্যেষ্ঠ কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়া হতো এবং সঞ্চারিত হতো। তখন মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই গোষ্ঠীর লোকরীতিগুলো আয়ত্ত করতো। 

আধুনিক সমাজে এখনো মানুষ পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকেই পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, রীতিনীতি, অনুশাসন, লোক-প্রথা, কাজকর্ম ইত্যাদি শিখে থাকে। তবে মানব সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে যে সব আদিম সমাজ কিছুটা উন্নত পর্যায়ে পৌঁছেছিল সে সব সমাজে যৌবনের প্রারম্ভেই আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদান শুরু হতো। 

লোই (Lowie) তাঁর Social organization (1948) নামক গ্রন্থে ‘ইয়াগানদের’ (Yaghan) সমাজে প্রচলিত এ ধরনের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বর্ণনা দিয়েছেন। উক্ত সমাজে প্রত্যেক ছেলে কিংবা মেয়ে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মাধ্যমেই লেখাপড়া শিখতো। তারা তাদের চরিত্রের দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে দিতেন এবং সে সব সংশোধনের ব্যবস্থাও করতেন এরই ধারাবাহিকতায় মানব সমাজে বৃত্তিমূলক (Vocational) শিক্ষার সুত্রপাত ঘটে। মূলত তখনকার সমাজে পরিবারের গন্ডীতেই ছেলে মেয়েরা বাস্তব জীবনে পর্যবেক্ষণ ও প্রত্যক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের দ্বারা বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় কলাকৌশল আয়ত্ত করতো। যদিও বর্তমান যুগে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য বহুবিধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে মানব সমাজে তবুও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার দায়িত্ব প্রধানত এখনো পরিবারের ওপরই নির্ভরশীল। উন্নয়নশীল দেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই শিশুর শিক্ষার হাতেখড়ি হয় পরিবারেই। 

পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ব্যক্তির আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এমনক উচ্চ শিক্ষাও সম্ভব না। যে কোনো শিক্ষিত মানুষের শিক্ষার পটভূমিতে তার পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য পরিবারই শিশুকে প্রস্তুত করে দেয়। এছাড়াও ব্যক্তির সামাজিক শিক্ষা বা সামাজিকীকরণ, সংস্কৃতিকরণ, ধর্মীয় শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিবারই মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

অতএব বলা যায়, সব ধরনের শিক্ষার সূচনাই হয় পরিবার থেকে এবং প্রতিনিয়ত শিক্ষার সংস্কারও হস্তান্তরও চলে এই পরিবারের মাধ্যমেই।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

পরিবার ও শিক্ষার সম্পর্ক বা শিক্ষায় পরিবারের গুরুত্ব কী?

প্রকাশ: ০৬:০৪:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১

যে-কোনো শিক্ষিত মানুষের শিক্ষার পটভূমিতে তার পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য পরিবারই শিশুকে প্রস্তুত করে দেয়। এছাড়াও ব্যক্তির সামাজিক শিক্ষা বা সামাজিকীকরণ, সংস্কৃতিকরণ, ধর্মীয় শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিবারই মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

পরিবার

নারী-পুরুষের বিবাহের মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ভিত্তিতে সন্তান প্রজনন ও বংশ রক্ষার আকাঙ্ক্ষা থেকে পরিবার গঠিত হয়; তাই পরিবারকে একটি জৈব একক (Biological Unit) বলেও অভিহিত করা যায়।

  • পরিবার সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক নিমকফ (M. F. Nimcoff) তাঁর রচিত ‘ম্যারিজ অ্যান্ড দ্য ফ্যামিলি (Marriage and the Family) গ্রন্থে বলেন, Family is more or less durable association of husband and wife with or without children or of a man or women alone, with children (পরিবার হলো এমন এক ধরনের স্থায়ী সংঘ, যা স্বামী-স্ত্রী সন্তানসহ কিংবা সন্তান ছাড়া অথবা সন্তান-সন্ততীসহ নারী কিংবা পুরুষের মাধ্যমে গঠিত হয়)।
  • অ্যান্ডারসন ও পার্কার-এর মতে, Family is a socially recognised unit of people related to each other by kinship, marital and legal ties (পরিবার হচ্ছে এমন একটি সমাজিকভাবে স্বীকৃত একক যেখানে সদস্যরা রক্তের বন্ধন, বৈবাহিক ও আইনানুগ সম্পর্কের মাধ্যমে ভূমিকা পালন করে)।

পরিবার সম্পর্কে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন

শিক্ষা

বিভিন্ন মনিষী বিভিন্নভাবে শিক্ষাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন যার মধ্যে কিছুসংজ্ঞা এই পাঠটিতে দেয়া হলো:

  • প্লেটো মনে করেন, শিক্ষা হচ্ছে সঠিক মুহূর্তে আনন্দ ও বেদনা অনুভব করতে পারার ক্ষমতা বা শক্তি (Education is the capacity to feel pleasure and pain in the right moment.)
  • অ্যারিস্টটল-এর মতে, সুস্থ্য দেহে সুস্থ্য মন তৈরি হলো শিক্ষা (Education is the creation of sound mind in a sound body)।
  • জোহান হেনরিক পেস্তানলৎসী বলেন, শিক্ষা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিসমূহের স্বাভাবিক, সুষম ও প্রগতিশীল বিকাশ (Education is natural, harmonious and progressive development of man’s innate power.)
  • হোয়াইটহেড (Whitehead) বলেন, “শিক্ষার একমাত্র বিষয় হলো সর্বতোভাবে বিকশিত বা প্রকাশিত জীবন”।
  • অ্যান্ডারসন ও পার্কার এর মতে, “শিক্ষা হচ্ছে একটি সামাজিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সমাজ জীবনে উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে”। (Education is the social process by which an individual learns the things necessary to fit him to the life of his society.)

শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

পরিবার ও শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক বা শিক্ষায় পরিবারের গুরুত্ব

শিক্ষার সাথে পরিবারের সম্পর্ক কিংবা পরিবারের সাথে শিক্ষার সম্পর্ক অত্যন্ত নিগুঢ় এবং একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। মানব সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে, এমন কি প্রাক-আধুনিক যুগেও মানুষের শিক্ষা গ্রহণের প্রধান ও একমাস মাধ্যম বা প্রতিষ্ঠান ছিল পরিবার। আধুনিক সমাজ ও পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী সমাজে শিক্ষা এক বিশেষ ধরনের সামাজিক কর্মকান্ড হিসেবে বিকাশ লাভ করে। আধুনি সমাজে শিক্ষা বলতে প্রধানত আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকেই (Formal Education) বুঝায়। কিন্তু শিক্ষা বিষয়টি আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত। শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী সামাজিক প্রক্রিয়া। কখনো পরিবারের গন্ডিতে, কখনো পরিবারের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানে, কখনো বা উন্মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের আবহে। তবে শিক্ষার শুরুটা হয় মানুষের জন্মের পর থেকে পরিবারের পরিমন্ডলে। অনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে এ ধরনের জীবনব্যাপী উ›মুক্ত উদার শিক্ষাকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা (Informal Education) বলা হয় যা মানুষ দেখে, ঠেকে কিংবা শুনে বা বুঝে শেখে।

শিক্ষায় পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

মানব সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে সহজ-সরল সমাজে শিক্ষা একটি পৃথক সামাজিক কর্মকান্ড হিসেবে গণ্য হয়নি। কারণ মানুষের কর্মজীবনে তখনো কোনো পৃথকীকরণ ঘটেনি। সমাজের ওই পর্যায়ে তখন পরিবারের ভাই-বোন ও জ্ঞাতিগোষ্ঠীর বয়োজ্যেষ্ঠ কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়া হতো এবং সঞ্চারিত হতো। তখন মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই গোষ্ঠীর লোকরীতিগুলো আয়ত্ত করতো। 

আধুনিক সমাজে এখনো মানুষ পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকেই পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, রীতিনীতি, অনুশাসন, লোক-প্রথা, কাজকর্ম ইত্যাদি শিখে থাকে। তবে মানব সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে যে সব আদিম সমাজ কিছুটা উন্নত পর্যায়ে পৌঁছেছিল সে সব সমাজে যৌবনের প্রারম্ভেই আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদান শুরু হতো। 

লোই (Lowie) তাঁর Social organization (1948) নামক গ্রন্থে ‘ইয়াগানদের’ (Yaghan) সমাজে প্রচলিত এ ধরনের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বর্ণনা দিয়েছেন। উক্ত সমাজে প্রত্যেক ছেলে কিংবা মেয়ে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মাধ্যমেই লেখাপড়া শিখতো। তারা তাদের চরিত্রের দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে দিতেন এবং সে সব সংশোধনের ব্যবস্থাও করতেন এরই ধারাবাহিকতায় মানব সমাজে বৃত্তিমূলক (Vocational) শিক্ষার সুত্রপাত ঘটে। মূলত তখনকার সমাজে পরিবারের গন্ডীতেই ছেলে মেয়েরা বাস্তব জীবনে পর্যবেক্ষণ ও প্রত্যক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের দ্বারা বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় কলাকৌশল আয়ত্ত করতো। যদিও বর্তমান যুগে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য বহুবিধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে মানব সমাজে তবুও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার দায়িত্ব প্রধানত এখনো পরিবারের ওপরই নির্ভরশীল। উন্নয়নশীল দেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই শিশুর শিক্ষার হাতেখড়ি হয় পরিবারেই। 

পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ব্যক্তির আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এমনক উচ্চ শিক্ষাও সম্ভব না। যে কোনো শিক্ষিত মানুষের শিক্ষার পটভূমিতে তার পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য পরিবারই শিশুকে প্রস্তুত করে দেয়। এছাড়াও ব্যক্তির সামাজিক শিক্ষা বা সামাজিকীকরণ, সংস্কৃতিকরণ, ধর্মীয় শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিবারই মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

অতএব বলা যায়, সব ধরনের শিক্ষার সূচনাই হয় পরিবার থেকে এবং প্রতিনিয়ত শিক্ষার সংস্কারও হস্তান্তরও চলে এই পরিবারের মাধ্যমেই।