০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বাংলাদেশের অবস্থান: সমস্যা ও সম্ভাবনা

প্রফেসর ড. রাশিদুল হক
  • প্রকাশ: ১১:১০:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১
  • / ৪৩৯৯ বার পড়া হয়েছে

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বাংলাদেশের অবস্থান: সমস্যা ও সম্ভাবনা


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

- রাশিদুল হক, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, শেখ সেমন্তী, তারান্নুম নাজ১,৩
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী; ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (IER), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ।
 

সারসংক্ষেপ (অ্যাবস্ট্রাক্ট):

বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তাদীপ্ত, ও মানবিক বোধসম্পন্ন জাতি গঠনে জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর উচ্চশিক্ষার পরিধি এবং ব্যপ্তি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিদ্যমান অবকাঠামো, জনবল, এবং গবেষণা খাতে ব্যয় দুর্বল ও অপর্যাপ্ত থাকার কারণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা একটি ব চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বমোট ১৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৬টি  পাবলিক এবং ৯৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর রয়েছে।  এ গবেষণাটির মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিদ্যমান গুণগত মান নিরীক্ষণ করা, উচ্চতর শিক্ষাব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কতদূর স্বার্থক হয়েছে তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া। গবেষণা পরিচালনার জন্য মূল তথ্য সংগৃহিত হয়েছে বাংলাদেশ মঞ্জুরী কমিশন (UGC)-এর সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন (২০১৯) থেকে। এ ছাড়াও, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সাম্প্রতিক অনেক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত যে গবেষনালব্ধ জ্ঞান-সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সমাজকে পরিবর্তন করে। দুৰ্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশের সরকার ও দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিনির্ধারণে শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান অন্নেষনে ‘গবেষণা কার্যক্রমকে’ সব থেকে কম প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ মানসিকতার পরিবর্তন অত্যান্ত জরুরি। গত দুই দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবার কারণে শিক্ষা খাত আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে, তবে প্রশাসনিক কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উপর অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি ক’রে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়া অত্যাবশ্যক।

ভূমিকা

    বিশ্বায়ন ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কারণে উচ্চতর শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষানীতিতে বিশ্বব্যাপী ক্রমশ: পরিবর্তন আসছে। অনেক দেশ তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মান অর্জনে নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছে। এ লক্ষ্য নিয়ে, উচ্চতর শিক্ষায়  “National Quality Assurance বা জাতীয় মানের আশ্বাস” আনয়নের জন্য বিভিন্ন দেশ তাদের উপযুক্ত কৌশল নির্ধারণ করেছে। তবে, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ভারতসহ  দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। QS (Quacquarelli Symonds, ইতোপূর্বে ‘Times Higher Education’ নামে পরিচিত)1 বিশ্ববিদ্যালয় কাডেমিক র‌্যাংকিংয়ে একটি অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য উৎস এবং তাদের ২০২১ সালের র‌্যাংকিং অনুযায়ী  বিশ্বের দুইশত শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে ভারতের তিনটি ইনস্টিটিউট (IITB, IITD, এবং  IIS)  ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কোনও অবস্থান অর্জন করতে পারেনি। মূল্যায়নের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষার পরিস্থিতি জাতীয়ভাবে অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। ২০০৩ সালে বসওয়ার্থ এবং কলিনস একটি সমীক্ষায় বিশ্বের ৮৪টি দেশের শিক্ষার মান তদন্ত ক’রে দেখিয়েছিলেন যে, ভারত ও শ্রীলঙ্কার কোয়ালিটি ইনডেক্সে স্কোর ছিল ২০.৮, পাকিস্তানের ১১.৩ এবং বাংলাদেশের স্কোর ছিল মাত্র ২.৮ (Bosworth and Collins, 2003।2 এই তথ্যগুলি থেকে তখন এটাই প্রমাণিত হয়েছিল যে,  বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউটগুলি সমাজের জন্য দক্ষ ও মানসম্পন্ন মানব সম্পদ সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছে না। যেমন, শিল্পজগতে পণ্যের মানের উপর নির্ভর করে একটি ব্যবসা টিকে থাকবে কিনা! একইভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে কার্যকরী স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর মানব সম্পদ তৈরী করতে সক্ষম হচ্ছে কিনা তার উপর নির্ভর করবে বিশ্বের মানদণ্ডে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। বসওয়ার্থ এবং কলিনস-এর সমীক্ষার ১৭ বছর পর আবারো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঠিকভাবে উচ্চশিক্ষা-মূল্যায়ন করার সময় এসেছে, কারণ ২০২১ সালের QS সংস্থার সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে, এশিয়ার ৬৫০টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে বাংলাদেশের মাত্র ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠে এসেছে – যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৩৪তম),  বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট: ১৯৯তম), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (২২৮তম), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় (২৭১-২৮০তম),ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, IUB (৩৫১-৪০০তম), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি (৪০১-৪৫০তম), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (৪৫১-৫০০তম), এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, AIUB (৫৫১-৬০০তম)। এশিয়ার মধ্যে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর ১ম স্থানে রয়েছে (https://www.topuniversities.com/university-rankings/world-university-rankings/2021)।1 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (IER) প্রাক্তন পরিচালক প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমানের মতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে  উদ্ভুদ নতুন জ্ঞান  বিশ্বকে সমৃদ্ধ করতে পারে। তবে এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে দেশের সরকারি ও বেসরকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ফলপ্রসূ গবেষণা করছে না (Jasim MM, 2021)।3  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার যাত্রা    

১৯১২ সালে বঙ্গভঙ্গ বাতিলের প্রতিবাদ হিসেবে ঢাকার তৎকালীন নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুর, সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী এবং শের-ই-বাংলা এ.কে.ফজলুল হক-এর নেতৃত্বে মুসলিম সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিগণ ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে ব্রিটিশ উপরাজ (ভাইসরয়), লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে জোরালো দাবী জানায়। ফলশ্রুতিতে, ১৯২১ সালে ঢাকা শহরে “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” নামে একটি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট ভারত উপমহাদেশ ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করার পর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) দেশের উত্তরাঞ্চলে দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৫৩ সালে রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা রাজশাহী ও খুলনা বিভাগসমূহের উচ্চ শিক্ষাব্যাবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতো। পর্যায়ক্রমে, শরীফ শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুসারে পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ ও ১৯৬২ সালে দুটি প্রযুক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করেছিল – ময়মনসিংহে অবস্থিত একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BAU) এবং ঢাকায় পূর্বেকার আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে উন্নীত ক’রে ‘ইস্ট পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (EPUET)’ যা বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর BUET নামে পরিচিত । এরপরে, আরো দুটি পাবলিক  বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল: একটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৫) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭০)। তাহলে, দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে এ অঞ্চলে সাড়ে ছয় কোটি মানুষের জন্য ছিল মাত্র ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় যার মধ্যে ৪টি হলো সাধারণ (General) বিশ্ববিদ্যালয়, আর দুটি ছিল প্রযুক্তিগত : কৃষি এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। সবগুলি বিশ্ববিদ্যালয় হ’ল পাবলিক যা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। দুৰ্ভাগ্যবশতঃ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক চাপ ও সুষ্ঠূ পরিকল্পনার অভাবে ১৯৭১ সাল হ’তে ১৯৮৬ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যদিও ‘৮৬তে জনসংখ্যা গিয়ে ঠেকেছিল ৯৫.৭৪ মিলিয়ন, অর্থাৎ সাড়ে নয় কোটিতে (উৎস: বিশ্ব ব্যাঙ্ক)। দেশে উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও জনসংখ্যার অনুপাতে রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় এবং আসন সংখ্যা পর্যাপ্ত না থাকায় উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছিল না। তাই, তৎকালীন সরকার ১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারি করে এবং পরবর্তীতে ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রতিষ্ঠা ক’রে উচ্চশিক্ষার জন্য সবার দ্বার উম্মুক্ত করে (Ministry of Education, 2010)।4 বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন (৪৬তম) অনুযায়ী ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকার কর্তৃক অনুমোদিত পাবলিক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট সংখ্যা হচ্ছে ১৫১টি: ৪৬টি পাবলিক এবং ১০৫টি বেসরকারি, যার মধ্যে ঢাকায় অবস্থিত ৬৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিভাগে উত্তরবঙ্গের প্রথম বেসরকা ‘বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’সহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত এক দশক ধরে যেখানে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট উচ্চশিক্ষার ভর্তি-তালিকায় এক মিলিয়ন (দশ লক্ষ) ছাত্র ছাড়িয়ে গেছে (BANBEIS, 2018)5 তাছাড়া, এসএসসি এবং জেএসসি ফলাফল ভিত্তিক ঘোষিত ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) “অটো পাস” এবং সর্বমোট ১,৬১,৮০৭ জন শিক্ষার্থী সর্বাধিক গ্রেড জিপিএ ৫ অর্জন করায় (দ্য ডেইলি ষ্টার, জানুয়ারি ৩০, ২০২১) উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়ায় একটি ব ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। সুতরাং, দেশটির বর্তমান ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে ১৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল দিয়ে উচ্চশিক্ষার সার্বিক ব্যাবস্থাপনা এবং বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা, অনেক বিশ্লেষকের মতে  হয়তো একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

HEQEP প্রকল্পের মাধ্যমে QAU, BAC ও IQAC নামে অঙ্গ-সংস্থার জন্ম

উন্নতবিশ্বে উচ্চশিক্ষার গুণগতমান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স কাউন্সিল বা এজেন্সি রয়েছে, যেমন ব্রিটেনে QAA (Quality Assurance Agency)6, অস্ট্রেলিয়ায় TEQSA (The Tertiary Education Quality and Standards Agency)7, সিঙ্গাপুরে CPE (Council for Private Education)8 এবং ইউরোপের অনেক দেশেই এরকম মানদণ্ড রয়েছে। এমনকি, আসিয়ান (ASEAN) দেশগুলির মধ্যেও আসিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় নেটওয়ার্কের গুণগতমানের (AUNQA)9 কাঠামো তৈরী করে তাদের দেশগুলির মধ্যে উচ্চশিক্ষার একটি  মানদণ্ড স্থাপন করেছে  এবং ২০১৬ সালে SAARC (The South Asian Association for Regional Cooperation)10  -এর একটি সম্মেলনে একইভাবে সার্কভুক্ত দেশগুলিতে উচ্চশিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য সমমানের একটি নেটওয়ার্ক স্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু সম্মেলন না হবার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।

উচ্চশিক্ষার বিশ্বপ্রেক্ষিত বিবেচনায় ইউজিসির কার্যকর মানের কোনও QAU (Quality Assurance Unit) ছিল না যার মাধ্যমে সরকারি এবং বেসরকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির  “কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স”  বা গুণগতমানের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার ব্যাপারে সহায়তা করতে পারে। বিশ্বজুড়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের দীর্ঘ-অনুশীলিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা (TE:Traditional Education) প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে “আউটকাম বেসড এডুকেশন (OBE: Outcome Based Education)” ​​গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার রূপান্তরের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক গ্রুপের সহায়তায় “HEQEP11 (The Higher Education Quality Enhancement Project)”-প্রকল্পের সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বমানে উন্নীতকরণের জন্য QAU তৈরি ক’রে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সংসদ একটি আক্রেডিটেশন (অনুমোদন) কাউন্সিল (BAC: Bangladesh Accreditation Council) গঠনের জন্য আইন পাস করে।  বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার কর্মসূচির স্বীকৃতি অর্জনের জন্য BAC একটি বিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ হিসেবে কাজ করবে এবং দেশের উচ্চশিক্ষার মানকে আন্তর্জাতিকীকরণের মাধ্যমে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাবে। আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য “গুণগত নিশ্চয়তা” (quality assurance) কার্যপ্রণালী প্রয়োগের মাধ্যমে পেশাগত আচরণ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কৌশলগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার ক’রে “BAC” বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। HEQEP প্রকল্পের উদ্দেশ্য হ’ল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং উচ্চতর শিক্ষাখাতে প্রযুক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান এবং গবেষণার পরিবেশের গুণমান এবং প্রাসঙ্গিকতা বৃদ্ধি করা। ইউজিসি হচ্ছে এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা। ইতোমধ্যে, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি স্বীকৃতি বোর্ড রয়েছে (BAETE: Board of Accreditation for Engineering and Technical Education) যা এ ক্ষেত্রগুলির শিক্ষা কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দেয়।  এছাড়া, HEQEP-এর প্রকল্প অনুযায়ী  ইউজিসি পরিচালিত QAU কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালগুলোর প্রশাসনিক অবকাঠামোতে বাধ্যতামূলকভাবে “Institutional Quality Assurance Cell (IQAC)” প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে তাদের যথাযথ নিজস্ব অভ্যন্তরীণ গুণগত মান নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা করবে এবং প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান কাডেমিক প্রোগ্রাম, নীতি বা একাডেমিক মান সংক্রান্ত সমস্ত প্রতিবেদন ইউজিসির QAU-এর নিকট উপস্থাপন করবে।12 “কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স” প্রক্রিয়াগুলি ২০১৪ সালে প্রবর্তন হলেও বাংলাদেশের অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে IQAC প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গুণগত মানের বাস্তবায়ন এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে (Rahnuma, 2020)।13

উচ্চ শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং শিক্ষাখাতে বাংলাদেশ সরকারের বাজেট (২০১৯-২০২০)

    দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষার সামগ্রিক উন্নতি, শিক্ষায় বৈষম্য হ্রাস, মান অর্জন, শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন এবং শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৬১,১১৮ কোটি টাকা করার প্রস্তাব ছিল, যার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দেখানো হয়েছিল  ৩৭,০৭৭ কোটি টাকা (Islam, 2020)14। বিগত দশ বছরে সরকারের বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা খাতে গড়ে সরকারি বরাদ্দ ছিল মোট শিক্ষা বাজেটের এবং জাতীয় বাজেটের  যথাক্রমে ৭.২১% এবং ০.৮৩%। সুনির্দিষ্টভাবে, ২০১৮-১৯ বছরে যা ছিল যথাক্রমে ৮.৭৪% এবং ০.৯২% (ইউজিসি প্রতিবেদন, ২০১৯)। অর্থাৎ, জাতীয় বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তার মাত্র ১% বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ থাকে যা ২০১৯-২০ সালের বাজেটে ‘গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি)’-এর শতাংশ হিসেবে ১.৫%-এ দাঁড়িয়েছিল, এবং ২০২০-২১ সালের আসন্ন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ ২০১৯ সালের বাজেটের তুলনায় জিডিপি-এর আকার এবং শতাংশের দিক দিয়ে প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে (Mohiuddin A, 2020)।15 এমনকি ২০২০-২১ সালের বাজেটে, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের সম্মিলিত প্রস্তাবিত বরাদ্দ গত বছরের বাজেটের তুলনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির অনুপাতে বৃদ্ধি না করে বরং আরও 0.0৫ শতাংশ কমানো হয়েছে (https://bdnews24.com/education/2020/06/11/)।16 ২০১৯ সালের বাজেট তুলনামূলকভাবে আলোচনা করলে দেখা যায় যে শিক্ষাখাতে আমাদের ব্যয় (জিডিপির শতাংশ হিসাবে) দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোর মধ্যে সবথেকে কম (Figure 1)। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শিক্ষা বাজেটের উপর ‘ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিসটিক্স’ একটি তুলনামূলক চিত্র (জিডিপির শতাংশ হিসাবে) তুলে ধরেছে যা একটি গ্রাফের মাধ্যমে দেখানো হলো (Figure 1)।17 : আফগানিস্তান ৩.৯ শতাংশ; বাংলাদেশ ১.৫; ভুটান ৭.১; ভারত ৩.৮; মালদ্বীপ ৪.৩; শ্রীলংকা ২.৮ শতাংশ; এবং পাকিস্তান ২.৮ শতাংশ। আর্থিক ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের শিক্ষার বাজেটের আকার তার আগের বছরের চেয়ে ব, তবে জিডিপির শতাংশ হিসাবে বিবেচনা করলে বরাদ্দটি আগের বছরের মতোই ছিল বলে মনে হয় (Islam, SM, ২০১৯)।14 ইউজিসি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশের ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৮০৮৮.৪৯ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেছিল, তার মধ্যে গবেষণা সহায়তার জন্য কমিশন ৬৪.৪০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিল (http://www.unb.com.bd)।18 অপরপক্ষে, আমরা যদি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার কথা ভাবি তাহলে সেখানে তাদের বাজেটে উচ্চশিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তারা শক্তিশালী অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে (চিত্র নং ১)। করোনার মহাসংকটে দেশের শিক্ষাখাতে ব্যাপক ক্ষতি হলেও সে ক্ষতি পূরণে ২০২১-২২ বাজেটেও তেমন কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। বিদায়ী অর্থবছরের (২০২০-২১) জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৪০১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১১.৬১ শতাংশ এবং জিডিপির ২.১০ শতাংশ। ২০২১ (২০২১-২০২২) সালের প্রস্তাবিত বাজেটে ১১.৯% বর্ধিত করে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭১ হাজার ৯৫২ কোটি।

Figure 1.  Education budget of South Asian* countries in 2019, and compared to that of Singapore and Malaysia**
Figure 1. Education budget of South Asian* countries in 2019, and compared to that of Singapore and Malaysia**

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগতমর্যাদা বা র‍্যাংকিং (Ranking)-এর তাৎপর্য

বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাডেমিক গুণগতমর্যাদা বা র‌্যাংকিং (Ranking) ক্রমশ: গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, কারণ র‌্যাংকিং সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার এবং গবেষণার মান উন্নত করার জন্য সহায়ক হয়ে থাকে। র‌্যাংকিং এর ফলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি, খ্যাতি এবং প্রকৃতপক্ষে একটি দেশেরও খ্যাতি বাড়ায়। সবচেয়ে প্রভাবশালী গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়  র‌্যাংকিং সংস্থাগুলোর  (ARWU, THE, QS, এবং US News & World Report) উল্লিখিত মানদন্ডে বাংলাদেশের পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কোনোটাই এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে স্থান করে নিতে পারেনি। কাজেই, জাতীয় ও বিশ্বমানের কৃতিত্বের জন্য কয়েকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেমন: যোগ্য ও গুণসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া, শিক্ষার মান উন্নত করা, শিক্ষক:শিক্ষার্থীর অনুপাত আন্তর্জাতিক মানদন্ডে সীমিত রাখা, গবেষণা খাতকে অর্থায়ন ও সম্মৃদ্ধ করা, মানসম্পন্ন গবেষণা প্রকাশনা এবং তার সংখ্যা বৃদ্ধি করা, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি বা দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করা। 

   অনেক শিক্ষাবিদদের মতে বাংলাদেশের উচ্চতর শিক্ষাব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছে বটে, তবে তাদের গুণগত নিশ্চয়তা (quality assurance) নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, বিশেষকরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক আনুগত্য ও দায়বদ্ধহীন সংস্কৃতির কারণে জ্ঞান উৎপাদনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্ভাবনাময় অবদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এটা অনস্বীকার্য যে বর্তমান বিশ্বে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার কোনো বিকল্প নেই এবং উচ্চশিক্ষা  ও গবেষণার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকদের ভূমিকাই হচ্ছে প্রধান। সুতরাং, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি ক’রে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে জবাবদিহিতা আরো বাড়াতে হবে। এটা প্রতীয়মান যে পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন কাঠামোতে কার্যকর জবাবদিহিতা ব্যবস্থার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। প্রকৃত মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়াগুলি যেন স্বচ্ছ ও মেধাভিত্তিক হয় সে ব্যাপারেও প্রশাসনকে আরও কঠোর এবং আপোসহীন (Zero-tolerance) নীতি মেনে চলতে হবে। কাডেমিক ও প্রশাসনিক অনুশাসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব হচ্ছে ইউজিসি’র। কিন্তু, উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে ইউজিসির নীতিমালা প্রণয়ন এবং কঠোরভাবে তা বাস্তবায়নের মধ্যে অনেক দুর্বলতা রয়েছে।

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়নের জন্য যে সব সূচক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

QS (Quacquarelli Symonds) র‌্যাংকিং সংস্থা নিম্নলিখিত সূচক এবং তাদের স্কোরের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং নির্ধারণ করে থাকে (চিত্র নং ২), যেমন: প্রতিষ্ঠানের কাডেমিক খ্যাতি – ৪০%; নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি – ১০%; শিক্ষক/শিক্ষার্থীর অনুপাত – ২০%; শিক্ষকদের গবেষণা-প্রকাশনার উদ্ধৃতির (Citations) সংখ্যা -২০%; আন্তর্জাতিক শিক্ষকদেরঅনুপাত- ৫%; আন্তর্জাতিক ছাত্রদের অনুপাত- ৫% (www.topuniversities.com/qs-world-university-rankings/)। একটি ‘প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক খ্যাতি’ বৃদ্ধির জন্য যে বিষয়গুলোর উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন সেগুলো হলো: গবেষণা খাতে ব্যায়, পিএইচডিধারী শিক্ষকের সংখ্যা, গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যা, প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জনকারীর সংখ্যা, ইত্যাদি। এছাড়া, ‘নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি’ বাড়ায় যখন শিক্ষার্থীরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে বা একটি শিক্ষা ‘প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি’ ও  শ্রেষ্ঠতাকে এমন একটি পর্যায়ে দেখতে চায় যার মাধ্যমে তারা খুব সহজেই কর্মসংস্থানের বাজারে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হয়। আন্তর্জাতিক অনুপাতের হারে একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক/শিক্ষার্থীর অনুপাত বজায় আছে কিনা সে ব্যাপারেও নিয়োগকারীর  দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। 

পাঠদান একটি প্রতিষ্ঠানের মূল স্তম্ভ, তাছাড়া আরও একটি মূল বিষয় হলো সেই প্রতিষ্ঠানের মোট গবেষণা আউটপুট বা অর্জন। প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার মান বাড়িয়ে এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণা-প্রকাশনার মাধ্যমে গবেষকদের পরিচিতি ও দৃশ্যমানতা বাড়াতে হবে যাতে ক’রে অন্যান্য বিজ্ঞানীগণ তাদের গবেষণা-প্রবন্ধে সেসব প্রকাশনার উদ্ধৃতি (citations)’ দিতে পারেন। এছাড়া, একটি প্রতিষ্ঠানে ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি’ এটাই প্রদর্শন করে যে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড রয়েছে।

Figure 2. Metrics used to evaluate/rank the world Universities (QS ranking)
Figure 2. Metrics used to evaluate/rank the world Universities (QS ranking)

২০১৯ সালে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণা খাতে ব্যয়: গবেষণা খাত উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়নের অন্যতম সূচক বলে অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন। এটা অনেকটা ইতিবাচক যে পূর্বের তুলনায় গবেষণা খাতে বিশেষ করে কিছু প্রাগ্রসর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার ক্ষেত্রে ঢের মনোযোগী হয়েছে এবং গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। বরাদ্দ বেশি রাখা হচ্ছে বলে ব্যয়ও বাড়ছে। তবে দুঃখজনকভাবে, প্রায় ১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে গবেষণার জন্য একটি পয়সাও ব্যয় করেনি, এবং গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয় স্বল্প অর্থায়নে নামমাত্র গবেষণা চালিয়েছে (MS Salman, Daily Sun, January18, 2020)19, যদিও ‘বেসরকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ অনুসারে উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালনার জন্য তাদের বার্ষিক বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বরাদ্দ করার কথা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান  বলেছেন, “নতুন জ্ঞান অর্জনের জন্য গবেষণা পরিচালনা করা উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যতম মূল কাজ। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যে গবেষণা কাজ চালাচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এক-তৃতীয়াংশ এ ধরনের (গবেষণা) কার্যকলাপে আগ্রহী নয়, কারণ তারা সেগুলি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করতে চায়” (Daily Sun, January 18, 2020)।19

ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে দেশের ১২৫টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সালে গবেষণা কার্যক্রমের জন্য সর্বমোট ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে যা তাদের মোট খরচের  মাত্র ১ শতাংশ (ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯)।গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের শীর্ষে থাকা ৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একত্রে  যা ব্যয় করেছে তার থেকেও বেশি ব্যয় করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় (Jasim, 2021)।3 ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় তার মোট ব্যায়ের (৪০০ কোটি টাকা) মধ্যে ৩৭ কোটি টাকা বা ৯.২৫% ব্যয় করেছে গবেষণার জন্য (চিত্র নং ৩)। দেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৯ সালে গবেষণা খাতে ব্যয় করেছে ৬.৫ কোটি টাকা। পক্ষান্তরে, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং জাহাঙ্গীরনগর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যথাক্রমে ৫.২, ৪.৪, ২.৭৫, এবং ২.২৭  কোটি টাকা ব্যয় করেছে (চিত্র নং ৩)। অপরদিকে, তিনটি পেশাগত বিশ্ববিদ্যালয় – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BAU), এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) গবেষণা খাতে ব্যয় করেছে যথাক্রমে মাত্র ০.৪৩, ৭, এবং ২.৩ কোটি টাকা। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (RUET) গবেষণা খাতে খরচ করেছে মাত্র ৮৩ লক্ষ টাকা (৩ নং চিত্রে দেখানো হয়নি)। এছাড়া, ইউজিসির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সামগ্রিকভাবে ২৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ (০.৫ মিলিয়ন) টাকা ব্যয় করেছে, ১১ টি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যয় করেছে ০.৫ থেকে ১ মিলিয়ন, এবং অন্য ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যয় করেছে ১-২ মিলিয়ন টাকা। ৯২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬১টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার জন্য সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে ২০ লক্ষ বা ২ মিলিয়ন টাকা (ইউজিসি প্রতিবেদন, ২০১৯)।20  তবে, কাডেমিকরা বলছেন যে বছরে ২ মিলিয়ন টাকা ব্যয় করা আসলে গবেষণা নয় । এছাড়া, BSMMU (ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিসিন এন্ড রিসার্চ [IPGMR] থেকে রূপান্তরিত মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাশাস্ত্রে গবেষণার একটি প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হয়, কিন্তু  সেখানে ২০১৯ সালে  ইউজিসি প্রদত্ত মাত্র ৪৩ লক্ষ টাকা গবেষণায় ব্যয় দেখানো হয়েছে।  গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজন। BSMMU তার নিজস্ব কোনো তহবিল বা সরকারি কোনো ভিন্ন তহবিল থেকে গবেষণার জন্য ব্যয় করে কিনা তা BSMMU-এর ওয়েবসাইটে সে ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি (https://old.bsmmu.edu.bd/index.php?page =menu&content=139011805490)। পক্ষান্তরে, BSMRAU (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ২০১৯ সালে গবেষণা খাতে ব্যয় করেছে ৭ কোটি টাকা (৩ নং চিত্রে  দেখানো হয়নি)। ২০১৯ সালের ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে আরও  জানা যায় যে গবেষণা খাতে পাবলিক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ৬৪,৫৮০ এবং ১০,০৮১ লক্ষ টাকা ।20

Figure 3. Total money spent on Research in 2019
Figure 3. Total money spent on Research in 2019

দেশের উত্তরাঞ্চলে রাজশাহী বিভাগে (রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ এবং সিরাজগঞ্জ) ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সর্বমোট ৫টি সরকারি এবং ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইউজিসির ২০১৯ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রাজশাহী সদরে অবস্থিত ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং আহসানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) মধ্যে শেষোক্ত ২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। এছাড়া, আরও ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়, যথা: এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (চাপাই নবাবগঞ্জ), রাজশাহী সায়েন্স এন্ড টেক্নোলজি ইউনিভার্সিটি (নাটোর), বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (নাটোর), এবং পুন্ড্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বগুড়া) এ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । উত্তরাঞ্চলের ৬টি সক্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ গবেষণা খাতে সর্বমোট ব্যয় করেছে মাত্র ২৩,২৫,৭৯২ টাকা (ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯)। পক্ষান্তরে,  উত্তরাঞ্চলের ৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে ব্যয় করেছে ৬ কোটি  টাকা তম্মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এককভাবে সর্বমোট প্রায় 8 কোটি 8০ লক্ষ টাকা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যয় করেছে (ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯)।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মানোন্নয়নে অধ্যাপকের ভূমিকা

জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বা খ্যাতি অর্জন করার ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন গবেষণার কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণার মানোন্নয়নে অধ্যাপকদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব অপরিসীম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত অর্থ-বরাদ্দ না থাকায় গবেষণার  মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদে কর্মরত শিক্ষকদের গবেষণা কর্মকান্ডে অবদান রাখা খুব সীমিত হয়ে যায়। ইউজিসির ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪৩টি সরকারি এবং ৯৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অধ্যাপক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে যথাক্রমে ১৫.৩% এবং ৬১.৯% খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। নীতিগতভাবে দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একজন প্রভাষক, সহকারী বা সহযোগী অধ্যাপকের তুলনায় একজন অধ্যাপকের ক্লাশ নেবার চাপ তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে। কারণ, গবেষণায় পূর্ণাঙ্গ মনোনিবেশ, গবেষণা প্রবন্ধ এবং প্রকল্প লিখা, উচ্চতর ডিগ্রি মাস্টার্স এবং এমফিল/পিএইচডি কোর্সের ছাত্র/স্কলারদের গবেষণা/থিসিস তত্ত্বাবধান, দেশি ও বিদেশী সংস্থাগুলো থেকে গবেষণা প্রকল্প/অনুদান আহরণসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপকের উপর ন্যস্ত থাকে। ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধ্যাপক পদে শিক্ষকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম রয়েছে। এছাড়া, বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্থায়ী অধ্যাপকের তুলনায় অস্থায়ী অধ্যাপকের সংখ্যা অনেক বেশি। যেমন: নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (NSU), ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (IUB), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি (EWU), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (DIU), এবং ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে  সর্বমোট অধ্যাপক পদের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত খন্ডকালীন অধ্যাপক হচ্ছে যথাক্রমে ৮০%, ৭৯%, ৭৪%, ৬২% এবং ৫৪% (চিত্র নং ৪)। এখানে উল্লেখ্য যে সাধারণত: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপকবৃন্দ কোনো গবেষণা কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকেন না; তাদেরকে শুধুমাত্র ক্লাস নেবার দায়িত্ব অর্পন করা হয়। যেহেতু কর্মরত অধ্যাপকদের মধ্যে একটি ব অংশের গবেষণার সাথে সম্পৃত্ত থাকার সুযোগ নেই, কাজেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে গবেষণা কর্মকান্ডে জ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের পক্ষে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখাটাও সীমিত হয়ে যায়। সুতরাং, উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিগত পরিবর্তন এনে সম্ভাব্য সর্বাধিক সংখ্যায় স্থায়ী অধ্যাপকের নিয়োগ বা খণ্ডকালীন অধ্যাপকদের গবেষণায় যুক্ত হবার ব্যাপারটি কর্তৃপক্ষের পুনর্বিবেচনা  প্রয়োজন। 

Figure 4. Full Professors engaged in Permanent (P)  and Temporary (T) positions
Figure 4. Full Professors engaged in Permanent (P) and Temporary (T) positions

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত

কাডেমিক গুণবিচার বা র‌্যাংকিং-এর ক্ষেত্রে অনেকগুলি সূচকের মধ্যে শিক্ষক:শিক্ষার্থীর অনুপাত বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ণয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে ব্যাবহৃত হয়ে থাকে, কারণ একটি আদর্শিক সীমিত অনুপাত প্রতিটি শিক্ষার্থীকে একজন শিক্ষকের কাছ থেকে তার মনোযোগ এবং নির্দেশনা আরো বেশি করে পাবার সহায়ক হয়ে থাকে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন (৪৬তম) অনুযায়ী দেশের ৪৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক:শিক্ষার্থীর অনুপাতের আন্তর্জাতিক মানদন্ডে স্বীকৃত যে অনুপাত (১:২০) তা বজায় রাখা হয়নি (https://www.risingbd.com/education/news/ 389952#, প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২১)।21 যেমন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটিসহ আরো অনেক ইউনিভার্সিটিগুলোতে এই মান বজায় রাখা হয়নি। তবে ব্র্যাক (অনুপাত-১:১৫) বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৪৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই অনুপাত বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া,  দেশের শীর্ষ ৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষক:শিক্ষার্থীর  অনুপাত ১:২০ এর নীচে বজায় রেখেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (অনুপাত-১:১২) বা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষক:শিক্ষার্থীর অনুপাত (১:১৩) অনেক প্রশংসনীয়। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উভয়ই শিক্ষক:শিক্ষার্থীর  অনুপাত (১:১৬) তাদেরকে একটি ভালো অবস্থানে রেখেছে । তুলনামূলকভাবে, US NEWS AND WORD REPORT অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক:শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত হলো ১:১৬, যেখানে হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সে অনুপাত হচ্ছে ১:৬;  প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়- ১:৭, এবং এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় ১:৯, এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ১:১১ (www.businessinsider.com)।

পুরুষঃমহিলা শিক্ষকের অনুপাত, শিক্ষকদের উচ্চতর যোগ্যতা এবং গবেষণা-প্রকাশনা

এটা অনস্বীকার্য যে উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুনগত মানের অগ্রগতিতে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা এবং পুরুষ শিক্ষকদের কাজের গুণগত মানের একটি তুলনামূলক সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে গড়পড়তাভাবে নারীরা পুরুষদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি অবদান রাখছে (Guarino and Borden, 2017)।22 ২০১৯ সালের সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র:ছাত্রীর অনুপাত (৫৪:৪৬) যথেষ্ট সন্তোষজনক হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র:ছাত্রীর অনুপাত (৭১:২৯) কল্পনাতীতভাবে অসম। তবে, অতীতের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্বের জায়গায় অনেক মহিলা শিক্ষক রয়েছেন বটে, কিন্তু দেশের অধিকাংশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুরুষ:মহিলা শিক্ষকের অনুপাত মোটেই সন্তুষ্টিকর নয়। ইউজিসির বার্ষিক (২০১৯) প্রতিবেদনে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত পুরুষ এবং মহিলা শিক্ষকদের সংখ্যাগত যে দৃশ্যমান ব্যবধান রয়েছে তা সর্বমোট ৪৬টি পাবলিক এবং ১০৫টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত মহিলা শিক্ষকদের  গড় সংখ্যা (শতকরা হারে) এবং প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা শিক্ষকদের সংখ্যা (শতকরা হারে) ৫ নং চিত্রে দেখানো হয়েছে। লক্ষণীয় এ ব্যবধান থাকার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মহিলা শিক্ষকের সংখ্যা বাড়াতে চেয়েছে (www.dhakatribune.com. November 16, 2017)। দেশের উচ্চশিক্ষার বৃহত্তর বিকাশের ক্ষেত্রে  মহিলা শিক্ষকদের  প্রতিভা ও পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও গতিশীলতা বাড়ানো প্রয়োজন। 

Figure 5. Female teachers in Public and Private Universities (UGC Annual Report, 2019)
Figure 5. Female teachers in Public and Private Universities (UGC Annual Report, 2019)

পিএইচডি বা ‘ডক্টর অব ফিলোসফি’ অ্যাকাডেমিক স্তরে একটি অর্জিত উচ্চতর গবেষণা ডিগ্রি, যার গবেষণামূলক কাজের মাধ্যমে জ্ঞান সৃষ্টি এবং জ্ঞানের গণ্ডি প্রসারিত করে। ইউজিসি’র ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে সর্বমোট ৫৩৪৭ (সর্বমোট শিক্ষকের মধ্যে: ৩৪.৪%) এবং ৩২০৯ (সর্বমোট শিক্ষকের মধ্যে: ২০%) পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক কর্মে নিয়োজিত আছেন। পৃথকভাবে কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের PhD ডিগ্রিধারী শিক্ষক এবং শিক্ষকদের ২০১৯ সালে প্রকাশিত সর্বমোট গবেষণা-প্রকাশনার সংখ্যা ৬ নং চিত্রে দেখানো হয়েছে।

Figure 6. Total number of teachers (with PhD degree) and publication in public and private Universities as reported  in UGC-2019 (*data not available in the report).
Figure 6. Total number of teachers (with PhD degree) and publication in public and private Universities as reported in UGC-2019 (*data not available in the report).

উপসংহার এবং সুপারিশ

বর্তমান বিশ্বে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য এবং উচ্চতর শিক্ষার আধুনিকীকরণ এবং মানোন্নয়নের জন্য বিশেষত: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকে একটি মূল শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় মান অর্জনের সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রশাসন সম্পর্কিত সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে অনেক প্রতিষ্ঠানে যথাযথ প্রশাসনিক নিয়ম-নীতি থাকা সত্ত্বেও সেখানে কার্যকর নীতি ও পেশাদারিত্বের অভাবে ঐ নীতিগুলির যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না (Rabbani and Chowdhury)।23  শিক্ষক, অনুষদের ডিন, ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর এসব পদগুলির নিয়োগ ও পদোন্নতি যোগ্যতার ভিত্তিতে হওয়া প্রয়োজন, রাজনৈতিক বা দলীয়ভাবে নয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেশিরভাগ দেশে উচ্চশিক্ষার সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেমগুলি একটি ব্যাপক রূপান্তরকরণের মধ্যে রয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের কার্যকারিতা ও কর্মদক্ষতা উন্নত করার জন্য ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক চাপের মধ্যে রয়েছে। সাথে-সাথে,”উচ্চশিক্ষা লাভের ব্যাপকতা ‘সীমাহীন বৃদ্ধি’ (massification) পাবার কারণে উচ্চশিক্ষাকে বেসরকারি খাতে একটি  উদীয়মান ব্যাবসায়ে (marketization) রূপান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং সমাজে জনহিতকর অবদানের চেয়ে ব্যবসায়িক মনোভাব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে (Ahmed, 2016)”।24 উচ্চশিক্ষাকে বাণিজ্যকরণের এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। উপরন্তু, ইউজিসি নীতিমালার কঠোর বাস্তবায়ন এবং নজরদারি বাড়ানো, গবেষণা বৃত্তি ও গবেষণা অনুদানসহ গবেষণা খাতে অধিকতর অর্থায়ন, উদ্ভাবনকে উৎসাহিত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাবস্থাপনা পরিষদের উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলগত পরিকল্পনা, IQAC কার্যক্রমকে গতিশীল করা ও গুণগত মানের নিশ্চয়তা নির্ধারণ এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গবেষণা-সংস্কৃতি প্রবর্তন ব্যতিরেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন সম্ভব নয়।

এছাড়া, মানদন্ডের ভিত্তিতে বিশ্বে, এমনকি এশিয়া মহাদেশের মধ্যেও, বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে বর্তমান অবস্থান তার থেকে উত্তরণের জন্য কমপক্ষে এশিয়া মহাদেশের, যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার শিক্ষা এবং গবেষণা নীতিমালাকে মডেল হিসেবে অনুসরণ করা যেতে পারে। QS র‌্যাংকিংয়ের প্রথম সারিতে ঐ তিনটি দেশের নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের উচ্চতর মান বজায় রেখেছে, যেখানে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর এবং নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি এশিয়ার মধ্যে যথাক্রমে ১ম এবং ২য় স্থানে রয়েছে। যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ৪১তম স্থান অর্জন করতে পেরেছে এবং লন্ডনভিত্তিক  ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক পলিসি ইনস্টিটিউটের’ বিশ্লেষণ অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে পেরেছে (ডেইলি স্টার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৯)25, সেখানে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও অগ্রগামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষার মান প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত ক’রে বাংলাদেশকে একটি মেধাসম্পন্ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে সম্মৃদ্ধ উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে যথাযথ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।  

কৃতজ্ঞতাস্বীকার

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ‘গবেষণা আর্টিকল’ আমাকে পাঠানো এবং পড়বার সুযোগ ক’রে দেবার জন্য নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাবস্থাপনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ-এর ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার নওরীন রেহনুমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

References

  1. https://www.topuniversities.com/university-rankings/world-university-rankings/2021
  2. Bosworth, B and Collins SM. “The Empirics of Growth: An Update.” Brookings Papers on Economic Activity, 2003, no.2, pp. 113–206.
  3. Jasim MM. Universities spend only 1% on research. The Business Standard, January 26, 2021.
  4. Ministry of Education, Government of the People’s Republic of Bangladesh, 2010, National Education Policy. Available at https://reliefweb.int/sites/reliefweb.int/files/resources/02.National- Education-Policy-2010-English.pdf
  5. Bangladesh Bureau of Educational Information and Statistics (BANBEIS), 2018, ‘The educational structure of Bangladesh’. Available at www.moedu.gov.bd.
  6. Quality Assurance Agency for Higher Education (QAA), 2012, UK Quality Code for HigherEducation. Part B: Assuring and enhancing academic quality. Available at https://www.qaa.ac.uk/quality-code.
  7. Tertiary Education Quality and Standards Agency (TEQSA), 2015, Higher Education Standards Framework (Threshold Standards), 2015. Available at https://www.legislation.gov.au/Details/F2015L01639.
  8. http://www.ftmsglobal.edu.sg/cpe-info
  9. ASEAN University Network Quality Assurance (AUNQA), 2011, Guide to AUN Actual Quality Assessment at Programme Level. Available at http://www.aunsec.org/pdf/aunwebsite/03GuidetoAUNActualQualityAssessmentat ProgrammeLevel30March2011PrintVersion.pdf.
  10. https://archive.pakistantoday.com.pk/2015/06/17/saarc-countries-to-enhance-collaboration-in-higher-education-2/.
  11. World Bank, 2017, Bangladesh Higher Education Quality Enhancement Project (HEQEP) 15th Implementation Support Mission, Aide Memoire. Available at. http://pubdocs.worldbank.org/en/721581490608702587/AM-Mar-2017.pdf.
  12. Ministry of Education, University Grants Commission of Bangladesh, 2015, Institutional Quality Assurance Cell Operations Manual, second edition, (Dhaka, Higher Education Quality.
  13. Rahnuma, Naureen. 2020, ‘Evolution of quality culture in an HEI: critical insights from university staff in Bangladesh’, Educational Assessment, Evaluation and Accountability. Open access published on line 3 January 2020. Available at https://doi.org/10.1007/ s11092 -019- 09313- 8.
  14. Islam, SM. Education budget FY2019-20: The missing links. The Daily Star. July 01, 2019. https://www.thedailystar.net/bangladesh-national-budget-2019-20/news/education-budget-fy2019-20-the-missing-links-1764691.
  15. Alamgir M. Budget for coronavirus-battered education sector unchanged. https://www.thedailystar.net/bangladesh-budget-2020-21-for-education-sector-unchanged-1912649
  16. https://bdnews24.com/education/2020/06/11/bangladesh-allocates-tk-664bn-for-education-in-new-budget.
  17. UNESCO. 2019. “Welcome to UIS.Stat.” UNESCO Institute for Statistics website. http://data.uis.unesco.org/
  18. https://unb.com.bd/category/Bangladesh/ugc-approves-tk-808849-cr-budget-for-45-public-universities/17808
  19. Salman MS, Universities lack research culture. Daily Sun, January18, 2020. https://www.daily-sun.com/post/455039/Universities-lack-research-culture.
  20. Bangladesh University Grants Commission: http://www.ugc.gov.bd/site/annual_reports/686dfd6e-1754-4629-b263-b7c875c0317b//বার্ষিক-প্রতিবেদন-২০১৯
  21. https://www.risingbd.com/education/news/ 389952#, January 15, 2020.
  22. Guarino, C.M., Borden, V.M.H. Faculty Service Loads and Gender: Are Women Taking Care of the Academic Family?. Res High Educ 58, 672–694 (2017). https://doi.org/10.1007/s11162-017-9454-2
  23. Rabbani G and Chowdhury S. Quality of Higher Education in Bangladesh: Governance Framework and Quality Issues. Beykent University Journal of Social Sciences, Vol.7 No.1, 2014.
  24. Ahmed, JU 2016, ‘Massification to marketisation of higher education: private university
  25. education in Bangladesh’, Higher Education for the Future, 3(1), pp. 76–92.
  26. Bangladesh 2nd largest economy in South Asia. https://www.thedailystar.net/bangladesh/ bangladesh-ranked-41st-largest-economy-in-2019-all-over-the-world-study-1684078. January 08, 2019.

লেখক পরিচিতি:

  • রাশিদুল হক, পিএইচডি: সাবেক উপ-উপাচার্য, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, এবং সাবেক অধ্যাপক, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র, ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।
  • মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, পিএইচডি: রেজিষ্ট্রার, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী।
  • শেখ সেমন্তী, এমএসএস (সমাজ বিজ্ঞান): প্রভাষক, ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (IER), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক সহকারী অধ্যাপক, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী।
  • তারান্নুম নাজ, পিএইচডি: অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কো-অর্ডিনেটর, ফার্মেসি বিভাগ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী।

শেয়ার করুন

One thought on “উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বাংলাদেশের অবস্থান: সমস্যা ও সম্ভাবনা

  1. দক্ষ প্রজন্ম তৈরির চেয়ে বরাদ্দ নিয়ে বেশি আলোচনা করা হয়েছে। বাস্তব জীবনে অতি প্রয়োজনীয় হোক বা গৌণ প্রয়োজনীয় হোক আমাদেরকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। উচ্চ শিক্ষার জন্য ইউনিভার্সিটি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ইউনির্ভাসিটি কী পড়াচ্ছে? কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে? প্রজন্মের নাকি শিক্ষকদের? চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের “খ ইউনিট” বিলুপ্তি একান্ত প্রয়োজন। উচ্চ শিক্ষিত লক্ষ লক্ষ তরুণ চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছে। নানাবিদ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ব্যক্তিগতভাবে এবং পরিবারে খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। অথচ অনেক কোম্পানি তার ফ্যাক্টরির অনেক ইউনিট বন্ধ রাখছে দক্ষ লোকের অভাবে। আমাদের টেক্সটাইল ইউনির্ভাসিটিগুলোতে মাত্র ১টি সাবজেক্ট চাকরির বাজারে সুবিধা করতে পারছে। ফেব্রিক, সুতা, মেকানিক ইঞ্জিনিয়াররা অত্যন্ত নগন্যই চাকরির বাজারে যেতে পারছে। আমাদের ফুড টেকনোলজি দরকার, ফুড প্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং দরকার, ট্রান্স ইঞ্জিনিয়ার দরকার, সোলার এনার্জি ইঞ্জিনিয়ার দরকার, গার্মেন্ট ফ্যাশন ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার দরকার, এগ্রিকালচারের আসন আরো বাড়ানো দরকার। উপরোক্ত বিষয়সহ আরো গুরুত্বপুর্ণ সাবজেক্ট যুক্ত এবং এগুলোর সাথে সহপাঠ হিসেবে ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ শিখাতে হবে।

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

প্রফেসর ড. রাশিদুল হক

প্রফেসর ড. রাশিদুল হক: সাবেক উপ-উপাচার্য, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, এবং সাবেক অধ্যাপক, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র, ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বাংলাদেশের অবস্থান: সমস্যা ও সম্ভাবনা

প্রকাশ: ১১:১০:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১
- রাশিদুল হক, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, শেখ সেমন্তী, তারান্নুম নাজ১,৩
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী; ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (IER), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ।
 

সারসংক্ষেপ (অ্যাবস্ট্রাক্ট):

বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তাদীপ্ত, ও মানবিক বোধসম্পন্ন জাতি গঠনে জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর উচ্চশিক্ষার পরিধি এবং ব্যপ্তি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিদ্যমান অবকাঠামো, জনবল, এবং গবেষণা খাতে ব্যয় দুর্বল ও অপর্যাপ্ত থাকার কারণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা একটি ব চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বমোট ১৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৬টি  পাবলিক এবং ৯৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর রয়েছে।  এ গবেষণাটির মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিদ্যমান গুণগত মান নিরীক্ষণ করা, উচ্চতর শিক্ষাব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কতদূর স্বার্থক হয়েছে তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া। গবেষণা পরিচালনার জন্য মূল তথ্য সংগৃহিত হয়েছে বাংলাদেশ মঞ্জুরী কমিশন (UGC)-এর সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন (২০১৯) থেকে। এ ছাড়াও, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সাম্প্রতিক অনেক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত যে গবেষনালব্ধ জ্ঞান-সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সমাজকে পরিবর্তন করে। দুৰ্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশের সরকার ও দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিনির্ধারণে শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান অন্নেষনে ‘গবেষণা কার্যক্রমকে’ সব থেকে কম প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ মানসিকতার পরিবর্তন অত্যান্ত জরুরি। গত দুই দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবার কারণে শিক্ষা খাত আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে, তবে প্রশাসনিক কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উপর অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি ক’রে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়া অত্যাবশ্যক।

ভূমিকা

    বিশ্বায়ন ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কারণে উচ্চতর শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষানীতিতে বিশ্বব্যাপী ক্রমশ: পরিবর্তন আসছে। অনেক দেশ তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মান অর্জনে নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছে। এ লক্ষ্য নিয়ে, উচ্চতর শিক্ষায়  “National Quality Assurance বা জাতীয় মানের আশ্বাস” আনয়নের জন্য বিভিন্ন দেশ তাদের উপযুক্ত কৌশল নির্ধারণ করেছে। তবে, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ভারতসহ  দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। QS (Quacquarelli Symonds, ইতোপূর্বে ‘Times Higher Education’ নামে পরিচিত)1 বিশ্ববিদ্যালয় কাডেমিক র‌্যাংকিংয়ে একটি অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য উৎস এবং তাদের ২০২১ সালের র‌্যাংকিং অনুযায়ী  বিশ্বের দুইশত শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে ভারতের তিনটি ইনস্টিটিউট (IITB, IITD, এবং  IIS)  ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কোনও অবস্থান অর্জন করতে পারেনি। মূল্যায়নের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষার পরিস্থিতি জাতীয়ভাবে অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। ২০০৩ সালে বসওয়ার্থ এবং কলিনস একটি সমীক্ষায় বিশ্বের ৮৪টি দেশের শিক্ষার মান তদন্ত ক’রে দেখিয়েছিলেন যে, ভারত ও শ্রীলঙ্কার কোয়ালিটি ইনডেক্সে স্কোর ছিল ২০.৮, পাকিস্তানের ১১.৩ এবং বাংলাদেশের স্কোর ছিল মাত্র ২.৮ (Bosworth and Collins, 2003।2 এই তথ্যগুলি থেকে তখন এটাই প্রমাণিত হয়েছিল যে,  বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউটগুলি সমাজের জন্য দক্ষ ও মানসম্পন্ন মানব সম্পদ সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছে না। যেমন, শিল্পজগতে পণ্যের মানের উপর নির্ভর করে একটি ব্যবসা টিকে থাকবে কিনা! একইভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে কার্যকরী স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর মানব সম্পদ তৈরী করতে সক্ষম হচ্ছে কিনা তার উপর নির্ভর করবে বিশ্বের মানদণ্ডে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। বসওয়ার্থ এবং কলিনস-এর সমীক্ষার ১৭ বছর পর আবারো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঠিকভাবে উচ্চশিক্ষা-মূল্যায়ন করার সময় এসেছে, কারণ ২০২১ সালের QS সংস্থার সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে, এশিয়ার ৬৫০টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে বাংলাদেশের মাত্র ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠে এসেছে – যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৩৪তম),  বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট: ১৯৯তম), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (২২৮তম), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় (২৭১-২৮০তম),ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, IUB (৩৫১-৪০০তম), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি (৪০১-৪৫০তম), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (৪৫১-৫০০তম), এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, AIUB (৫৫১-৬০০তম)। এশিয়ার মধ্যে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর ১ম স্থানে রয়েছে (https://www.topuniversities.com/university-rankings/world-university-rankings/2021)।1 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (IER) প্রাক্তন পরিচালক প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমানের মতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে  উদ্ভুদ নতুন জ্ঞান  বিশ্বকে সমৃদ্ধ করতে পারে। তবে এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে দেশের সরকারি ও বেসরকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ফলপ্রসূ গবেষণা করছে না (Jasim MM, 2021)।3  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার যাত্রা    

১৯১২ সালে বঙ্গভঙ্গ বাতিলের প্রতিবাদ হিসেবে ঢাকার তৎকালীন নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুর, সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী এবং শের-ই-বাংলা এ.কে.ফজলুল হক-এর নেতৃত্বে মুসলিম সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিগণ ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে ব্রিটিশ উপরাজ (ভাইসরয়), লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে জোরালো দাবী জানায়। ফলশ্রুতিতে, ১৯২১ সালে ঢাকা শহরে “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” নামে একটি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট ভারত উপমহাদেশ ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করার পর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) দেশের উত্তরাঞ্চলে দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৫৩ সালে রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা রাজশাহী ও খুলনা বিভাগসমূহের উচ্চ শিক্ষাব্যাবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতো। পর্যায়ক্রমে, শরীফ শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুসারে পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ ও ১৯৬২ সালে দুটি প্রযুক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করেছিল – ময়মনসিংহে অবস্থিত একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BAU) এবং ঢাকায় পূর্বেকার আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে উন্নীত ক’রে ‘ইস্ট পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (EPUET)’ যা বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর BUET নামে পরিচিত । এরপরে, আরো দুটি পাবলিক  বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল: একটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৫) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭০)। তাহলে, দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে এ অঞ্চলে সাড়ে ছয় কোটি মানুষের জন্য ছিল মাত্র ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় যার মধ্যে ৪টি হলো সাধারণ (General) বিশ্ববিদ্যালয়, আর দুটি ছিল প্রযুক্তিগত : কৃষি এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। সবগুলি বিশ্ববিদ্যালয় হ’ল পাবলিক যা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। দুৰ্ভাগ্যবশতঃ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক চাপ ও সুষ্ঠূ পরিকল্পনার অভাবে ১৯৭১ সাল হ’তে ১৯৮৬ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যদিও ‘৮৬তে জনসংখ্যা গিয়ে ঠেকেছিল ৯৫.৭৪ মিলিয়ন, অর্থাৎ সাড়ে নয় কোটিতে (উৎস: বিশ্ব ব্যাঙ্ক)। দেশে উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও জনসংখ্যার অনুপাতে রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় এবং আসন সংখ্যা পর্যাপ্ত না থাকায় উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছিল না। তাই, তৎকালীন সরকার ১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারি করে এবং পরবর্তীতে ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রতিষ্ঠা ক’রে উচ্চশিক্ষার জন্য সবার দ্বার উম্মুক্ত করে (Ministry of Education, 2010)।4 বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন (৪৬তম) অনুযায়ী ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকার কর্তৃক অনুমোদিত পাবলিক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট সংখ্যা হচ্ছে ১৫১টি: ৪৬টি পাবলিক এবং ১০৫টি বেসরকারি, যার মধ্যে ঢাকায় অবস্থিত ৬৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিভাগে উত্তরবঙ্গের প্রথম বেসরকা ‘বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’সহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত এক দশক ধরে যেখানে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট উচ্চশিক্ষার ভর্তি-তালিকায় এক মিলিয়ন (দশ লক্ষ) ছাত্র ছাড়িয়ে গেছে (BANBEIS, 2018)5 তাছাড়া, এসএসসি এবং জেএসসি ফলাফল ভিত্তিক ঘোষিত ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) “অটো পাস” এবং সর্বমোট ১,৬১,৮০৭ জন শিক্ষার্থী সর্বাধিক গ্রেড জিপিএ ৫ অর্জন করায় (দ্য ডেইলি ষ্টার, জানুয়ারি ৩০, ২০২১) উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়ায় একটি ব ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। সুতরাং, দেশটির বর্তমান ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে ১৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল দিয়ে উচ্চশিক্ষার সার্বিক ব্যাবস্থাপনা এবং বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা, অনেক বিশ্লেষকের মতে  হয়তো একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

HEQEP প্রকল্পের মাধ্যমে QAU, BAC ও IQAC নামে অঙ্গ-সংস্থার জন্ম

উন্নতবিশ্বে উচ্চশিক্ষার গুণগতমান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স কাউন্সিল বা এজেন্সি রয়েছে, যেমন ব্রিটেনে QAA (Quality Assurance Agency)6, অস্ট্রেলিয়ায় TEQSA (The Tertiary Education Quality and Standards Agency)7, সিঙ্গাপুরে CPE (Council for Private Education)8 এবং ইউরোপের অনেক দেশেই এরকম মানদণ্ড রয়েছে। এমনকি, আসিয়ান (ASEAN) দেশগুলির মধ্যেও আসিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় নেটওয়ার্কের গুণগতমানের (AUNQA)9 কাঠামো তৈরী করে তাদের দেশগুলির মধ্যে উচ্চশিক্ষার একটি  মানদণ্ড স্থাপন করেছে  এবং ২০১৬ সালে SAARC (The South Asian Association for Regional Cooperation)10  -এর একটি সম্মেলনে একইভাবে সার্কভুক্ত দেশগুলিতে উচ্চশিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য সমমানের একটি নেটওয়ার্ক স্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু সম্মেলন না হবার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।

উচ্চশিক্ষার বিশ্বপ্রেক্ষিত বিবেচনায় ইউজিসির কার্যকর মানের কোনও QAU (Quality Assurance Unit) ছিল না যার মাধ্যমে সরকারি এবং বেসরকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির  “কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স”  বা গুণগতমানের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার ব্যাপারে সহায়তা করতে পারে। বিশ্বজুড়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের দীর্ঘ-অনুশীলিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা (TE:Traditional Education) প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে “আউটকাম বেসড এডুকেশন (OBE: Outcome Based Education)” ​​গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার রূপান্তরের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক গ্রুপের সহায়তায় “HEQEP11 (The Higher Education Quality Enhancement Project)”-প্রকল্পের সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বমানে উন্নীতকরণের জন্য QAU তৈরি ক’রে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সংসদ একটি আক্রেডিটেশন (অনুমোদন) কাউন্সিল (BAC: Bangladesh Accreditation Council) গঠনের জন্য আইন পাস করে।  বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার কর্মসূচির স্বীকৃতি অর্জনের জন্য BAC একটি বিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ হিসেবে কাজ করবে এবং দেশের উচ্চশিক্ষার মানকে আন্তর্জাতিকীকরণের মাধ্যমে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাবে। আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য “গুণগত নিশ্চয়তা” (quality assurance) কার্যপ্রণালী প্রয়োগের মাধ্যমে পেশাগত আচরণ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কৌশলগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার ক’রে “BAC” বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। HEQEP প্রকল্পের উদ্দেশ্য হ’ল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং উচ্চতর শিক্ষাখাতে প্রযুক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান এবং গবেষণার পরিবেশের গুণমান এবং প্রাসঙ্গিকতা বৃদ্ধি করা। ইউজিসি হচ্ছে এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা। ইতোমধ্যে, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি স্বীকৃতি বোর্ড রয়েছে (BAETE: Board of Accreditation for Engineering and Technical Education) যা এ ক্ষেত্রগুলির শিক্ষা কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দেয়।  এছাড়া, HEQEP-এর প্রকল্প অনুযায়ী  ইউজিসি পরিচালিত QAU কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালগুলোর প্রশাসনিক অবকাঠামোতে বাধ্যতামূলকভাবে “Institutional Quality Assurance Cell (IQAC)” প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে তাদের যথাযথ নিজস্ব অভ্যন্তরীণ গুণগত মান নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা করবে এবং প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান কাডেমিক প্রোগ্রাম, নীতি বা একাডেমিক মান সংক্রান্ত সমস্ত প্রতিবেদন ইউজিসির QAU-এর নিকট উপস্থাপন করবে।12 “কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স” প্রক্রিয়াগুলি ২০১৪ সালে প্রবর্তন হলেও বাংলাদেশের অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে IQAC প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গুণগত মানের বাস্তবায়ন এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে (Rahnuma, 2020)।13

উচ্চ শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং শিক্ষাখাতে বাংলাদেশ সরকারের বাজেট (২০১৯-২০২০)

    দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষার সামগ্রিক উন্নতি, শিক্ষায় বৈষম্য হ্রাস, মান অর্জন, শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন এবং শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৬১,১১৮ কোটি টাকা করার প্রস্তাব ছিল, যার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দেখানো হয়েছিল  ৩৭,০৭৭ কোটি টাকা (Islam, 2020)14। বিগত দশ বছরে সরকারের বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা খাতে গড়ে সরকারি বরাদ্দ ছিল মোট শিক্ষা বাজেটের এবং জাতীয় বাজেটের  যথাক্রমে ৭.২১% এবং ০.৮৩%। সুনির্দিষ্টভাবে, ২০১৮-১৯ বছরে যা ছিল যথাক্রমে ৮.৭৪% এবং ০.৯২% (ইউজিসি প্রতিবেদন, ২০১৯)। অর্থাৎ, জাতীয় বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তার মাত্র ১% বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ থাকে যা ২০১৯-২০ সালের বাজেটে ‘গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি)’-এর শতাংশ হিসেবে ১.৫%-এ দাঁড়িয়েছিল, এবং ২০২০-২১ সালের আসন্ন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ ২০১৯ সালের বাজেটের তুলনায় জিডিপি-এর আকার এবং শতাংশের দিক দিয়ে প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে (Mohiuddin A, 2020)।15 এমনকি ২০২০-২১ সালের বাজেটে, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের সম্মিলিত প্রস্তাবিত বরাদ্দ গত বছরের বাজেটের তুলনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির অনুপাতে বৃদ্ধি না করে বরং আরও 0.0৫ শতাংশ কমানো হয়েছে (https://bdnews24.com/education/2020/06/11/)।16 ২০১৯ সালের বাজেট তুলনামূলকভাবে আলোচনা করলে দেখা যায় যে শিক্ষাখাতে আমাদের ব্যয় (জিডিপির শতাংশ হিসাবে) দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোর মধ্যে সবথেকে কম (Figure 1)। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শিক্ষা বাজেটের উপর ‘ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিসটিক্স’ একটি তুলনামূলক চিত্র (জিডিপির শতাংশ হিসাবে) তুলে ধরেছে যা একটি গ্রাফের মাধ্যমে দেখানো হলো (Figure 1)।17 : আফগানিস্তান ৩.৯ শতাংশ; বাংলাদেশ ১.৫; ভুটান ৭.১; ভারত ৩.৮; মালদ্বীপ ৪.৩; শ্রীলংকা ২.৮ শতাংশ; এবং পাকিস্তান ২.৮ শতাংশ। আর্থিক ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের শিক্ষার বাজেটের আকার তার আগের বছরের চেয়ে ব, তবে জিডিপির শতাংশ হিসাবে বিবেচনা করলে বরাদ্দটি আগের বছরের মতোই ছিল বলে মনে হয় (Islam, SM, ২০১৯)।14 ইউজিসি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশের ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৮০৮৮.৪৯ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেছিল, তার মধ্যে গবেষণা সহায়তার জন্য কমিশন ৬৪.৪০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিল (http://www.unb.com.bd)।18 অপরপক্ষে, আমরা যদি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার কথা ভাবি তাহলে সেখানে তাদের বাজেটে উচ্চশিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তারা শক্তিশালী অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে (চিত্র নং ১)। করোনার মহাসংকটে দেশের শিক্ষাখাতে ব্যাপক ক্ষতি হলেও সে ক্ষতি পূরণে ২০২১-২২ বাজেটেও তেমন কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। বিদায়ী অর্থবছরের (২০২০-২১) জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৪০১ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১১.৬১ শতাংশ এবং জিডিপির ২.১০ শতাংশ। ২০২১ (২০২১-২০২২) সালের প্রস্তাবিত বাজেটে ১১.৯% বর্ধিত করে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭১ হাজার ৯৫২ কোটি।

Figure 1.  Education budget of South Asian* countries in 2019, and compared to that of Singapore and Malaysia**
Figure 1. Education budget of South Asian* countries in 2019, and compared to that of Singapore and Malaysia**

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগতমর্যাদা বা র‍্যাংকিং (Ranking)-এর তাৎপর্য

বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাডেমিক গুণগতমর্যাদা বা র‌্যাংকিং (Ranking) ক্রমশ: গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, কারণ র‌্যাংকিং সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার এবং গবেষণার মান উন্নত করার জন্য সহায়ক হয়ে থাকে। র‌্যাংকিং এর ফলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি, খ্যাতি এবং প্রকৃতপক্ষে একটি দেশেরও খ্যাতি বাড়ায়। সবচেয়ে প্রভাবশালী গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়  র‌্যাংকিং সংস্থাগুলোর  (ARWU, THE, QS, এবং US News & World Report) উল্লিখিত মানদন্ডে বাংলাদেশের পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কোনোটাই এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে স্থান করে নিতে পারেনি। কাজেই, জাতীয় ও বিশ্বমানের কৃতিত্বের জন্য কয়েকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেমন: যোগ্য ও গুণসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া, শিক্ষার মান উন্নত করা, শিক্ষক:শিক্ষার্থীর অনুপাত আন্তর্জাতিক মানদন্ডে সীমিত রাখা, গবেষণা খাতকে অর্থায়ন ও সম্মৃদ্ধ করা, মানসম্পন্ন গবেষণা প্রকাশনা এবং তার সংখ্যা বৃদ্ধি করা, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি বা দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করা। 

   অনেক শিক্ষাবিদদের মতে বাংলাদেশের উচ্চতর শিক্ষাব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছে বটে, তবে তাদের গুণগত নিশ্চয়তা (quality assurance) নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, বিশেষকরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক আনুগত্য ও দায়বদ্ধহীন সংস্কৃতির কারণে জ্ঞান উৎপাদনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্ভাবনাময় অবদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এটা অনস্বীকার্য যে বর্তমান বিশ্বে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার কোনো বিকল্প নেই এবং উচ্চশিক্ষা  ও গবেষণার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকদের ভূমিকাই হচ্ছে প্রধান। সুতরাং, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি ক’রে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে জবাবদিহিতা আরো বাড়াতে হবে। এটা প্রতীয়মান যে পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন কাঠামোতে কার্যকর জবাবদিহিতা ব্যবস্থার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। প্রকৃত মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়াগুলি যেন স্বচ্ছ ও মেধাভিত্তিক হয় সে ব্যাপারেও প্রশাসনকে আরও কঠোর এবং আপোসহীন (Zero-tolerance) নীতি মেনে চলতে হবে। কাডেমিক ও প্রশাসনিক অনুশাসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব হচ্ছে ইউজিসি’র। কিন্তু, উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে ইউজিসির নীতিমালা প্রণয়ন এবং কঠোরভাবে তা বাস্তবায়নের মধ্যে অনেক দুর্বলতা রয়েছে।

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়নের জন্য যে সব সূচক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

QS (Quacquarelli Symonds) র‌্যাংকিং সংস্থা নিম্নলিখিত সূচক এবং তাদের স্কোরের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং নির্ধারণ করে থাকে (চিত্র নং ২), যেমন: প্রতিষ্ঠানের কাডেমিক খ্যাতি – ৪০%; নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি – ১০%; শিক্ষক/শিক্ষার্থীর অনুপাত – ২০%; শিক্ষকদের গবেষণা-প্রকাশনার উদ্ধৃতির (Citations) সংখ্যা -২০%; আন্তর্জাতিক শিক্ষকদেরঅনুপাত- ৫%; আন্তর্জাতিক ছাত্রদের অনুপাত- ৫% (www.topuniversities.com/qs-world-university-rankings/)। একটি ‘প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক খ্যাতি’ বৃদ্ধির জন্য যে বিষয়গুলোর উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন সেগুলো হলো: গবেষণা খাতে ব্যায়, পিএইচডিধারী শিক্ষকের সংখ্যা, গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যা, প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জনকারীর সংখ্যা, ইত্যাদি। এছাড়া, ‘নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি’ বাড়ায় যখন শিক্ষার্থীরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে বা একটি শিক্ষা ‘প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি’ ও  শ্রেষ্ঠতাকে এমন একটি পর্যায়ে দেখতে চায় যার মাধ্যমে তারা খুব সহজেই কর্মসংস্থানের বাজারে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হয়। আন্তর্জাতিক অনুপাতের হারে একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক/শিক্ষার্থীর অনুপাত বজায় আছে কিনা সে ব্যাপারেও নিয়োগকারীর  দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। 

পাঠদান একটি প্রতিষ্ঠানের মূল স্তম্ভ, তাছাড়া আরও একটি মূল বিষয় হলো সেই প্রতিষ্ঠানের মোট গবেষণা আউটপুট বা অর্জন। প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার মান বাড়িয়ে এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণা-প্রকাশনার মাধ্যমে গবেষকদের পরিচিতি ও দৃশ্যমানতা বাড়াতে হবে যাতে ক’রে অন্যান্য বিজ্ঞানীগণ তাদের গবেষণা-প্রবন্ধে সেসব প্রকাশনার উদ্ধৃতি (citations)’ দিতে পারেন। এছাড়া, একটি প্রতিষ্ঠানে ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি’ এটাই প্রদর্শন করে যে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড রয়েছে।

Figure 2. Metrics used to evaluate/rank the world Universities (QS ranking)
Figure 2. Metrics used to evaluate/rank the world Universities (QS ranking)

২০১৯ সালে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণা খাতে ব্যয়: গবেষণা খাত উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়নের অন্যতম সূচক বলে অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন। এটা অনেকটা ইতিবাচক যে পূর্বের তুলনায় গবেষণা খাতে বিশেষ করে কিছু প্রাগ্রসর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার ক্ষেত্রে ঢের মনোযোগী হয়েছে এবং গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। বরাদ্দ বেশি রাখা হচ্ছে বলে ব্যয়ও বাড়ছে। তবে দুঃখজনকভাবে, প্রায় ১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে গবেষণার জন্য একটি পয়সাও ব্যয় করেনি, এবং গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয় স্বল্প অর্থায়নে নামমাত্র গবেষণা চালিয়েছে (MS Salman, Daily Sun, January18, 2020)19, যদিও ‘বেসরকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ অনুসারে উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালনার জন্য তাদের বার্ষিক বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বরাদ্দ করার কথা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান  বলেছেন, “নতুন জ্ঞান অর্জনের জন্য গবেষণা পরিচালনা করা উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যতম মূল কাজ। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যে গবেষণা কাজ চালাচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এক-তৃতীয়াংশ এ ধরনের (গবেষণা) কার্যকলাপে আগ্রহী নয়, কারণ তারা সেগুলি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করতে চায়” (Daily Sun, January 18, 2020)।19

ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে দেশের ১২৫টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সালে গবেষণা কার্যক্রমের জন্য সর্বমোট ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে যা তাদের মোট খরচের  মাত্র ১ শতাংশ (ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯)।গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের শীর্ষে থাকা ৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একত্রে  যা ব্যয় করেছে তার থেকেও বেশি ব্যয় করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় (Jasim, 2021)।3 ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় তার মোট ব্যায়ের (৪০০ কোটি টাকা) মধ্যে ৩৭ কোটি টাকা বা ৯.২৫% ব্যয় করেছে গবেষণার জন্য (চিত্র নং ৩)। দেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৯ সালে গবেষণা খাতে ব্যয় করেছে ৬.৫ কোটি টাকা। পক্ষান্তরে, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং জাহাঙ্গীরনগর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যথাক্রমে ৫.২, ৪.৪, ২.৭৫, এবং ২.২৭  কোটি টাকা ব্যয় করেছে (চিত্র নং ৩)। অপরদিকে, তিনটি পেশাগত বিশ্ববিদ্যালয় – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BAU), এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) গবেষণা খাতে ব্যয় করেছে যথাক্রমে মাত্র ০.৪৩, ৭, এবং ২.৩ কোটি টাকা। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (RUET) গবেষণা খাতে খরচ করেছে মাত্র ৮৩ লক্ষ টাকা (৩ নং চিত্রে দেখানো হয়নি)। এছাড়া, ইউজিসির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সামগ্রিকভাবে ২৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ (০.৫ মিলিয়ন) টাকা ব্যয় করেছে, ১১ টি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যয় করেছে ০.৫ থেকে ১ মিলিয়ন, এবং অন্য ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যয় করেছে ১-২ মিলিয়ন টাকা। ৯২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬১টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার জন্য সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে ২০ লক্ষ বা ২ মিলিয়ন টাকা (ইউজিসি প্রতিবেদন, ২০১৯)।20  তবে, কাডেমিকরা বলছেন যে বছরে ২ মিলিয়ন টাকা ব্যয় করা আসলে গবেষণা নয় । এছাড়া, BSMMU (ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিসিন এন্ড রিসার্চ [IPGMR] থেকে রূপান্তরিত মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাশাস্ত্রে গবেষণার একটি প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হয়, কিন্তু  সেখানে ২০১৯ সালে  ইউজিসি প্রদত্ত মাত্র ৪৩ লক্ষ টাকা গবেষণায় ব্যয় দেখানো হয়েছে।  গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজন। BSMMU তার নিজস্ব কোনো তহবিল বা সরকারি কোনো ভিন্ন তহবিল থেকে গবেষণার জন্য ব্যয় করে কিনা তা BSMMU-এর ওয়েবসাইটে সে ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি (https://old.bsmmu.edu.bd/index.php?page =menu&content=139011805490)। পক্ষান্তরে, BSMRAU (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ২০১৯ সালে গবেষণা খাতে ব্যয় করেছে ৭ কোটি টাকা (৩ নং চিত্রে  দেখানো হয়নি)। ২০১৯ সালের ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে আরও  জানা যায় যে গবেষণা খাতে পাবলিক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ৬৪,৫৮০ এবং ১০,০৮১ লক্ষ টাকা ।20

Figure 3. Total money spent on Research in 2019
Figure 3. Total money spent on Research in 2019

দেশের উত্তরাঞ্চলে রাজশাহী বিভাগে (রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ এবং সিরাজগঞ্জ) ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সর্বমোট ৫টি সরকারি এবং ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইউজিসির ২০১৯ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রাজশাহী সদরে অবস্থিত ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং আহসানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) মধ্যে শেষোক্ত ২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। এছাড়া, আরও ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়, যথা: এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (চাপাই নবাবগঞ্জ), রাজশাহী সায়েন্স এন্ড টেক্নোলজি ইউনিভার্সিটি (নাটোর), বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (নাটোর), এবং পুন্ড্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বগুড়া) এ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । উত্তরাঞ্চলের ৬টি সক্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ গবেষণা খাতে সর্বমোট ব্যয় করেছে মাত্র ২৩,২৫,৭৯২ টাকা (ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯)। পক্ষান্তরে,  উত্তরাঞ্চলের ৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে ব্যয় করেছে ৬ কোটি  টাকা তম্মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এককভাবে সর্বমোট প্রায় 8 কোটি 8০ লক্ষ টাকা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যয় করেছে (ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯)।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মানোন্নয়নে অধ্যাপকের ভূমিকা

জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বা খ্যাতি অর্জন করার ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন গবেষণার কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণার মানোন্নয়নে অধ্যাপকদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব অপরিসীম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত অর্থ-বরাদ্দ না থাকায় গবেষণার  মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদে কর্মরত শিক্ষকদের গবেষণা কর্মকান্ডে অবদান রাখা খুব সীমিত হয়ে যায়। ইউজিসির ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪৩টি সরকারি এবং ৯৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অধ্যাপক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে যথাক্রমে ১৫.৩% এবং ৬১.৯% খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। নীতিগতভাবে দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একজন প্রভাষক, সহকারী বা সহযোগী অধ্যাপকের তুলনায় একজন অধ্যাপকের ক্লাশ নেবার চাপ তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে। কারণ, গবেষণায় পূর্ণাঙ্গ মনোনিবেশ, গবেষণা প্রবন্ধ এবং প্রকল্প লিখা, উচ্চতর ডিগ্রি মাস্টার্স এবং এমফিল/পিএইচডি কোর্সের ছাত্র/স্কলারদের গবেষণা/থিসিস তত্ত্বাবধান, দেশি ও বিদেশী সংস্থাগুলো থেকে গবেষণা প্রকল্প/অনুদান আহরণসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপকের উপর ন্যস্ত থাকে। ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধ্যাপক পদে শিক্ষকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম রয়েছে। এছাড়া, বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্থায়ী অধ্যাপকের তুলনায় অস্থায়ী অধ্যাপকের সংখ্যা অনেক বেশি। যেমন: নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (NSU), ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (IUB), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি (EWU), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (DIU), এবং ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে  সর্বমোট অধ্যাপক পদের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত খন্ডকালীন অধ্যাপক হচ্ছে যথাক্রমে ৮০%, ৭৯%, ৭৪%, ৬২% এবং ৫৪% (চিত্র নং ৪)। এখানে উল্লেখ্য যে সাধারণত: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপকবৃন্দ কোনো গবেষণা কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকেন না; তাদেরকে শুধুমাত্র ক্লাস নেবার দায়িত্ব অর্পন করা হয়। যেহেতু কর্মরত অধ্যাপকদের মধ্যে একটি ব অংশের গবেষণার সাথে সম্পৃত্ত থাকার সুযোগ নেই, কাজেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে গবেষণা কর্মকান্ডে জ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের পক্ষে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখাটাও সীমিত হয়ে যায়। সুতরাং, উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিগত পরিবর্তন এনে সম্ভাব্য সর্বাধিক সংখ্যায় স্থায়ী অধ্যাপকের নিয়োগ বা খণ্ডকালীন অধ্যাপকদের গবেষণায় যুক্ত হবার ব্যাপারটি কর্তৃপক্ষের পুনর্বিবেচনা  প্রয়োজন। 

Figure 4. Full Professors engaged in Permanent (P)  and Temporary (T) positions
Figure 4. Full Professors engaged in Permanent (P) and Temporary (T) positions

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত

কাডেমিক গুণবিচার বা র‌্যাংকিং-এর ক্ষেত্রে অনেকগুলি সূচকের মধ্যে শিক্ষক:শিক্ষার্থীর অনুপাত বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ণয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে ব্যাবহৃত হয়ে থাকে, কারণ একটি আদর্শিক সীমিত অনুপাত প্রতিটি শিক্ষার্থীকে একজন শিক্ষকের কাছ থেকে তার মনোযোগ এবং নির্দেশনা আরো বেশি করে পাবার সহায়ক হয়ে থাকে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন (৪৬তম) অনুযায়ী দেশের ৪৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক:শিক্ষার্থীর অনুপাতের আন্তর্জাতিক মানদন্ডে স্বীকৃত যে অনুপাত (১:২০) তা বজায় রাখা হয়নি (https://www.risingbd.com/education/news/ 389952#, প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২১)।21 যেমন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটিসহ আরো অনেক ইউনিভার্সিটিগুলোতে এই মান বজায় রাখা হয়নি। তবে ব্র্যাক (অনুপাত-১:১৫) বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৪৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই অনুপাত বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া,  দেশের শীর্ষ ৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষক:শিক্ষার্থীর  অনুপাত ১:২০ এর নীচে বজায় রেখেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (অনুপাত-১:১২) বা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষক:শিক্ষার্থীর অনুপাত (১:১৩) অনেক প্রশংসনীয়। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উভয়ই শিক্ষক:শিক্ষার্থীর  অনুপাত (১:১৬) তাদেরকে একটি ভালো অবস্থানে রেখেছে । তুলনামূলকভাবে, US NEWS AND WORD REPORT অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক:শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত হলো ১:১৬, যেখানে হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সে অনুপাত হচ্ছে ১:৬;  প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়- ১:৭, এবং এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় ১:৯, এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ১:১১ (www.businessinsider.com)।

পুরুষঃমহিলা শিক্ষকের অনুপাত, শিক্ষকদের উচ্চতর যোগ্যতা এবং গবেষণা-প্রকাশনা

এটা অনস্বীকার্য যে উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুনগত মানের অগ্রগতিতে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা এবং পুরুষ শিক্ষকদের কাজের গুণগত মানের একটি তুলনামূলক সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে গড়পড়তাভাবে নারীরা পুরুষদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি অবদান রাখছে (Guarino and Borden, 2017)।22 ২০১৯ সালের সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র:ছাত্রীর অনুপাত (৫৪:৪৬) যথেষ্ট সন্তোষজনক হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র:ছাত্রীর অনুপাত (৭১:২৯) কল্পনাতীতভাবে অসম। তবে, অতীতের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্বের জায়গায় অনেক মহিলা শিক্ষক রয়েছেন বটে, কিন্তু দেশের অধিকাংশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুরুষ:মহিলা শিক্ষকের অনুপাত মোটেই সন্তুষ্টিকর নয়। ইউজিসির বার্ষিক (২০১৯) প্রতিবেদনে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত পুরুষ এবং মহিলা শিক্ষকদের সংখ্যাগত যে দৃশ্যমান ব্যবধান রয়েছে তা সর্বমোট ৪৬টি পাবলিক এবং ১০৫টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত মহিলা শিক্ষকদের  গড় সংখ্যা (শতকরা হারে) এবং প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা শিক্ষকদের সংখ্যা (শতকরা হারে) ৫ নং চিত্রে দেখানো হয়েছে। লক্ষণীয় এ ব্যবধান থাকার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মহিলা শিক্ষকের সংখ্যা বাড়াতে চেয়েছে (www.dhakatribune.com. November 16, 2017)। দেশের উচ্চশিক্ষার বৃহত্তর বিকাশের ক্ষেত্রে  মহিলা শিক্ষকদের  প্রতিভা ও পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও গতিশীলতা বাড়ানো প্রয়োজন। 

Figure 5. Female teachers in Public and Private Universities (UGC Annual Report, 2019)
Figure 5. Female teachers in Public and Private Universities (UGC Annual Report, 2019)

পিএইচডি বা ‘ডক্টর অব ফিলোসফি’ অ্যাকাডেমিক স্তরে একটি অর্জিত উচ্চতর গবেষণা ডিগ্রি, যার গবেষণামূলক কাজের মাধ্যমে জ্ঞান সৃষ্টি এবং জ্ঞানের গণ্ডি প্রসারিত করে। ইউজিসি’র ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে সর্বমোট ৫৩৪৭ (সর্বমোট শিক্ষকের মধ্যে: ৩৪.৪%) এবং ৩২০৯ (সর্বমোট শিক্ষকের মধ্যে: ২০%) পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক কর্মে নিয়োজিত আছেন। পৃথকভাবে কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের PhD ডিগ্রিধারী শিক্ষক এবং শিক্ষকদের ২০১৯ সালে প্রকাশিত সর্বমোট গবেষণা-প্রকাশনার সংখ্যা ৬ নং চিত্রে দেখানো হয়েছে।

Figure 6. Total number of teachers (with PhD degree) and publication in public and private Universities as reported  in UGC-2019 (*data not available in the report).
Figure 6. Total number of teachers (with PhD degree) and publication in public and private Universities as reported in UGC-2019 (*data not available in the report).

উপসংহার এবং সুপারিশ

বর্তমান বিশ্বে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য এবং উচ্চতর শিক্ষার আধুনিকীকরণ এবং মানোন্নয়নের জন্য বিশেষত: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকে একটি মূল শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় মান অর্জনের সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রশাসন সম্পর্কিত সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে অনেক প্রতিষ্ঠানে যথাযথ প্রশাসনিক নিয়ম-নীতি থাকা সত্ত্বেও সেখানে কার্যকর নীতি ও পেশাদারিত্বের অভাবে ঐ নীতিগুলির যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না (Rabbani and Chowdhury)।23  শিক্ষক, অনুষদের ডিন, ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর এসব পদগুলির নিয়োগ ও পদোন্নতি যোগ্যতার ভিত্তিতে হওয়া প্রয়োজন, রাজনৈতিক বা দলীয়ভাবে নয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেশিরভাগ দেশে উচ্চশিক্ষার সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেমগুলি একটি ব্যাপক রূপান্তরকরণের মধ্যে রয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের কার্যকারিতা ও কর্মদক্ষতা উন্নত করার জন্য ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক চাপের মধ্যে রয়েছে। সাথে-সাথে,”উচ্চশিক্ষা লাভের ব্যাপকতা ‘সীমাহীন বৃদ্ধি’ (massification) পাবার কারণে উচ্চশিক্ষাকে বেসরকারি খাতে একটি  উদীয়মান ব্যাবসায়ে (marketization) রূপান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং সমাজে জনহিতকর অবদানের চেয়ে ব্যবসায়িক মনোভাব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে (Ahmed, 2016)”।24 উচ্চশিক্ষাকে বাণিজ্যকরণের এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। উপরন্তু, ইউজিসি নীতিমালার কঠোর বাস্তবায়ন এবং নজরদারি বাড়ানো, গবেষণা বৃত্তি ও গবেষণা অনুদানসহ গবেষণা খাতে অধিকতর অর্থায়ন, উদ্ভাবনকে উৎসাহিত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাবস্থাপনা পরিষদের উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলগত পরিকল্পনা, IQAC কার্যক্রমকে গতিশীল করা ও গুণগত মানের নিশ্চয়তা নির্ধারণ এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গবেষণা-সংস্কৃতি প্রবর্তন ব্যতিরেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন সম্ভব নয়।

এছাড়া, মানদন্ডের ভিত্তিতে বিশ্বে, এমনকি এশিয়া মহাদেশের মধ্যেও, বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে বর্তমান অবস্থান তার থেকে উত্তরণের জন্য কমপক্ষে এশিয়া মহাদেশের, যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার শিক্ষা এবং গবেষণা নীতিমালাকে মডেল হিসেবে অনুসরণ করা যেতে পারে। QS র‌্যাংকিংয়ের প্রথম সারিতে ঐ তিনটি দেশের নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের উচ্চতর মান বজায় রেখেছে, যেখানে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর এবং নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি এশিয়ার মধ্যে যথাক্রমে ১ম এবং ২য় স্থানে রয়েছে। যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ৪১তম স্থান অর্জন করতে পেরেছে এবং লন্ডনভিত্তিক  ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক পলিসি ইনস্টিটিউটের’ বিশ্লেষণ অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে পেরেছে (ডেইলি স্টার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৯)25, সেখানে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও অগ্রগামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষার মান প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত ক’রে বাংলাদেশকে একটি মেধাসম্পন্ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে সম্মৃদ্ধ উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে যথাযথ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।  

কৃতজ্ঞতাস্বীকার

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ‘গবেষণা আর্টিকল’ আমাকে পাঠানো এবং পড়বার সুযোগ ক’রে দেবার জন্য নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাবস্থাপনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ-এর ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার নওরীন রেহনুমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

References

  1. https://www.topuniversities.com/university-rankings/world-university-rankings/2021
  2. Bosworth, B and Collins SM. “The Empirics of Growth: An Update.” Brookings Papers on Economic Activity, 2003, no.2, pp. 113–206.
  3. Jasim MM. Universities spend only 1% on research. The Business Standard, January 26, 2021.
  4. Ministry of Education, Government of the People’s Republic of Bangladesh, 2010, National Education Policy. Available at https://reliefweb.int/sites/reliefweb.int/files/resources/02.National- Education-Policy-2010-English.pdf
  5. Bangladesh Bureau of Educational Information and Statistics (BANBEIS), 2018, ‘The educational structure of Bangladesh’. Available at www.moedu.gov.bd.
  6. Quality Assurance Agency for Higher Education (QAA), 2012, UK Quality Code for HigherEducation. Part B: Assuring and enhancing academic quality. Available at https://www.qaa.ac.uk/quality-code.
  7. Tertiary Education Quality and Standards Agency (TEQSA), 2015, Higher Education Standards Framework (Threshold Standards), 2015. Available at https://www.legislation.gov.au/Details/F2015L01639.
  8. http://www.ftmsglobal.edu.sg/cpe-info
  9. ASEAN University Network Quality Assurance (AUNQA), 2011, Guide to AUN Actual Quality Assessment at Programme Level. Available at http://www.aunsec.org/pdf/aunwebsite/03GuidetoAUNActualQualityAssessmentat ProgrammeLevel30March2011PrintVersion.pdf.
  10. https://archive.pakistantoday.com.pk/2015/06/17/saarc-countries-to-enhance-collaboration-in-higher-education-2/.
  11. World Bank, 2017, Bangladesh Higher Education Quality Enhancement Project (HEQEP) 15th Implementation Support Mission, Aide Memoire. Available at. http://pubdocs.worldbank.org/en/721581490608702587/AM-Mar-2017.pdf.
  12. Ministry of Education, University Grants Commission of Bangladesh, 2015, Institutional Quality Assurance Cell Operations Manual, second edition, (Dhaka, Higher Education Quality.
  13. Rahnuma, Naureen. 2020, ‘Evolution of quality culture in an HEI: critical insights from university staff in Bangladesh’, Educational Assessment, Evaluation and Accountability. Open access published on line 3 January 2020. Available at https://doi.org/10.1007/ s11092 -019- 09313- 8.
  14. Islam, SM. Education budget FY2019-20: The missing links. The Daily Star. July 01, 2019. https://www.thedailystar.net/bangladesh-national-budget-2019-20/news/education-budget-fy2019-20-the-missing-links-1764691.
  15. Alamgir M. Budget for coronavirus-battered education sector unchanged. https://www.thedailystar.net/bangladesh-budget-2020-21-for-education-sector-unchanged-1912649
  16. https://bdnews24.com/education/2020/06/11/bangladesh-allocates-tk-664bn-for-education-in-new-budget.
  17. UNESCO. 2019. “Welcome to UIS.Stat.” UNESCO Institute for Statistics website. http://data.uis.unesco.org/
  18. https://unb.com.bd/category/Bangladesh/ugc-approves-tk-808849-cr-budget-for-45-public-universities/17808
  19. Salman MS, Universities lack research culture. Daily Sun, January18, 2020. https://www.daily-sun.com/post/455039/Universities-lack-research-culture.
  20. Bangladesh University Grants Commission: http://www.ugc.gov.bd/site/annual_reports/686dfd6e-1754-4629-b263-b7c875c0317b//বার্ষিক-প্রতিবেদন-২০১৯
  21. https://www.risingbd.com/education/news/ 389952#, January 15, 2020.
  22. Guarino, C.M., Borden, V.M.H. Faculty Service Loads and Gender: Are Women Taking Care of the Academic Family?. Res High Educ 58, 672–694 (2017). https://doi.org/10.1007/s11162-017-9454-2
  23. Rabbani G and Chowdhury S. Quality of Higher Education in Bangladesh: Governance Framework and Quality Issues. Beykent University Journal of Social Sciences, Vol.7 No.1, 2014.
  24. Ahmed, JU 2016, ‘Massification to marketisation of higher education: private university
  25. education in Bangladesh’, Higher Education for the Future, 3(1), pp. 76–92.
  26. Bangladesh 2nd largest economy in South Asia. https://www.thedailystar.net/bangladesh/ bangladesh-ranked-41st-largest-economy-in-2019-all-over-the-world-study-1684078. January 08, 2019.

লেখক পরিচিতি:

  • রাশিদুল হক, পিএইচডি: সাবেক উপ-উপাচার্য, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, এবং সাবেক অধ্যাপক, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র, ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।
  • মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, পিএইচডি: রেজিষ্ট্রার, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী।
  • শেখ সেমন্তী, এমএসএস (সমাজ বিজ্ঞান): প্রভাষক, ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (IER), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক সহকারী অধ্যাপক, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী।
  • তারান্নুম নাজ, পিএইচডি: অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কো-অর্ডিনেটর, ফার্মেসি বিভাগ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী।