দ্রাঘিমাংশ বা দ্রাঘিমারেখা কী? দ্রাঘিমারেখার বৈশিষ্ট্য ও নির্ণয় পদ্ধতি কী?
- প্রকাশ: ০৯:১৫:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর ২০২১
- / ১৬১২১ বার পড়া হয়েছে
অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমার সাহায্যে পৃথিবীর কোনো স্থানের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করা যায়। এই অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ ব্যবহার করে কোনো স্থান যেমন সুনির্দিষ্ট ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব, তেমনই আবহাওয়াগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও জানা সম্ভব হয়। এখানে দ্রাঘিমাংশ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
দ্রাঘিমারেখা (Longitude)
গ্রিনিচের মূল মধ্যরেখা হতে পূর্ব বা পশ্চিমে কোন স্থানের কৌণিক দূরত্বকে সে স্থানের দ্রাঘিমা দ্রাঘিমাংশ বলে।
নিক্ষরেখার উপর এ কৌণিক দূরত্বের মাপ নেয়া হয়। পূর্ব দিকের কৌণিক দূরত্বকে পূর্ব দ্রাঘিমা এবং পশ্চিম দিকের কৌণিক দূরত্বকে পশ্চিম দ্রাঘিমা বলে।
গ্রিনিচের মূল মধ্যরেখার দ্রাঘিমা ০° ধরা হয়। এখান থেকে এক ডিগ্রি অন্তর পশ্চিমে ১৮০টি ও পূর্বে ১৮০টি দ্রাঘিমারেখা কল্পনা করা হয়।
নিরক্ষরেখা ও মূলমধ্যরেখা যেখানে পরস্পরকে লম্বভাবে ছেদ করে সেখানে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা উভয়েই ০°। এ স্থানটি গিনি উপসাগরে অবস্থিত। পৃথিবী সর্বত্র পশ্চিম হতে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে। এ কারণে পূর্বে অবস্থিত স্থানগুলোর সময় বেশি হতে দেখা যায়।
দ্রাঘিমার কারণে সময়ের পার্থক্য হয়ে থাকে।
সমাক্ষরেখা হতে পূর্ব বা পশ্চিমের অবস্থান জানার জন্য ভূপৃষ্ঠে দুই মেরুকে সংযুক্ত করে উত্তর-দক্ষিণে অনেকগুলো রেখা কল্পনা করা হয়; রেখাগুলো বিষুবরেখাকে লম্বভাবে ছেদ করেছে; রেখাগুলোকে ডিগ্রি, মিনিট ও সেকেন্ডে বিভক্ত করা হয়েছে; এ রেখাগুলোকে দ্রাঘিমারেখা বলে।
দ্রাঘিমারেখা পৃথিবীর পরিধির অর্ধেকের সমান এবং একে অর্ধবৃত্ত বলে।
দ্রাঘিমারেখাগুলোর মধ্যে যে রেখাটি লন্ডনের গ্রিনিচ শহরের জ্যোর্তিবিদ্যা সম্পর্কিত মানমন্দিরের ওপর দিয়ে অতিক্রম করেছে তাকে মূলমধ্যরেখা বলে। মূল মধ্যরেখার ইংরেজি হলো Prime Meridian। এ মূল মধ্যরেখা হতে পূর্ব বা পশ্চিমে কোন স্থানের কৌণিক দূরত্বকে সে স্থানের দ্রাঘিমা বলে। গ্রিনিচের দ্রাঘিমা ০° ধরে পৃথিবীর পরিধিকে মূল মধ্যরেখার এক ডিগ্রি অন্তর অন্তর পূর্বে ১৮০টি এবং পশ্চিমে ১৮০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু পৃথিবী গোলাকার হওয়ায় ১৮০° পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা ও ১৮০° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা প্রকৃত পক্ষে একই দ্রাঘিমারেখা হিসেবে বিবেচিত।
অক্ষাংশের মত প্রতি ডিগ্রি দ্রাঘিমাকে মিনিট এবং সেকেন্ডে ভাগ করা হয়। দ্রাঘিমারেখাগুলো পরস্পর সমান, তবে সমান্তরাল নয়। দুই দ্রাঘিমা রেখার মধ্যবর্তী ব্যবধান নিক্ষরেখা হতে উত্তর-দক্ষিণে ক্রমশ কম হতে থাকে এবং ৯০° উত্তর অক্ষাংশে ও ৯০° দক্ষিণ অক্ষাংশে পৌঁছে একেবারে মেরু বিন্দুতে মিশেছে।
নিক্ষরেখার ওপর ১° দ্রাঘিমার রৈখিক দূরত্ব প্রায় ১১১.২৬ কিলোমিটার; ৩০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে ৯৬.৪৪ কিলোমিটার; ৬০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে ৫৬ কিলোমিটার এবং ৮০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে ১৯.৩৮ কিলোমিটার।
দ্রাঘিমারেখার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Longitude)
- দ্রাঘিমারেখাগুলোর পরিধি সর্বত্র সমান।
- দ্রাঘিমারেখাগুলো পরস্পর সমান্তরাল নয়।
- সর্বাধিক দ্রাঘিমারেখার মান ১৮০°।
- দ্রাঘিমারেখাগুলোর মান মূলমধ্যরেখার পূর্ব ও পশ্চিম বাড়ে।
- প্রতিটি দ্রাঘিমারেখা প্রতিটি অক্ষরেখাকে লম্বালম্বিভাবে ছেদ করেছে।
দ্রাঘিমা নির্ণয়
১. সময়ের পার্থক্য অনুসারে
প্রতি ৪ মিনিট সময়ের জন্য দ্রাঘিমার পার্থক্য ১°। কোন একটি স্থানের সময় ও দ্রাঘিমা জানা থাকলে সে স্থানের সাথে অন্য স্থানের সময়ের পার্থক্য নিয়ে স্থানটির দ্রাঘিমা নির্ণয় করা যায়।
২. গ্রিনিচের সময় দ্বারা
গ্রিনিচের দ্রাঘিমা ০° কল্পনা করা হয়েছে। সুতরাং গ্রিনিচের সময় অনুসারে অন্য স্থানটির দ্রাঘিমা নির্ণয় করা হয়। গ্রিনিচের পূর্ব দিকে অবস্থিত দেশগুলোর সময় গ্রিনিচের চেয়ে এগিয়ে থাকে এবং গ্রিনিচের পশ্চিমে অবস্থিত দেশগুলোর সময় গ্রিনিচের সময়ের থেকে কম হয়। গ্রিনিচে যখন বেলা ১২টা তখন অন্য কোন স্থানে যদি সন্ধ্যা ৬টা হয় তবে প্রমাণিত হবে যে, ঐ স্থানটি গ্রিনিচের পূর্বে এবং দ্রাঘিমা হবে (১৫ × ৬ = ৯০°) বা ৯০° পূর্ব। আবার গ্রিনিচে যখন বেলা ১২টা তখন কোন স্থানের সময় যদি সকাল ৫টা হয় তাহলে বোঝা যাবে স্থানটি গ্রিনিচের পশ্চিমে অবস্থিত। স্থানটির সময়ের পার্থক্য ৭ ঘণ্টা হওয়ায় দ্রাঘিমা হবে ১৫ × ৭ = ১০৫° পশ্চিম।
দ্রাঘিমারেখার কাজ
অবস্থান নির্ণয়
দ্রাঘিমার মাধ্যমে (অক্ষাংশের সাহায্যে) ভূপৃষ্ঠের কোন স্থানের অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়। যেমন- কোন স্থানের অক্ষাংশ ২৫° উত্তর ও দ্রাঘিমা ৩৫° পূর্ব বলা হলে বোঝা যাবে যে, ঐ স্থানটি ২৫° উত্তর সমাক্ষরেখা ও ৩৫° পূর্ব দ্রাঘিমার সংযোগস্থলে অবস্থিত।
স্থানীয় সময় নির্ধারণ
একই দ্রাঘিমায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সময় একই। এ ছাড়া দ্রাঘিমান্তর থেকে দুটি দেশের সময়ের পার্থক্য জানা যায়।
বিপদাপন্ন জাহাজকে সাহায্যে প্রদান
অকূল সমুদ্রে বিপদাপন্ন জাহাজ বেতারের সাহয্যে তার অবস্থানগত অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা জানালে সহজেই তার অবস্থান জেনে সাহায্য পাঠানো যায়।
অনেক ভালো লেগেছে
Varry good