০৯:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

সাহিত্য পর্যালোচনা কাকে বলে? সাহিত্য পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা ও উৎস কী?

প্রফেসর মো. তবারক উল ইসলাম
  • প্রকাশ: ০৬:৩০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর ২০২১
  • / ২৯৫৬২ বার পড়া হয়েছে

সাহিত্য পর্যালোচনা বলতে গবেষণা সমস্যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বই, জার্নাল, রিপোর্ট ও রেফারেন্স সামগ্রী সংগ্রহ, নির্বাচন এবং পাঠ ও মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। | ছবি: Unsplash


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

সাধারণত একটি গবেষণা বা থিসিসের তাত্ত্বিক কাঠামো ও যৌক্তিকতা প্রদানের জন্য সাহিত্য পর্যালোচনা (Literature Review) করা হয়ে থাকে। সাহিত্য পর্যালোচনার মাধ্যমে গবেষক যে বিষয়ের উপর গবেষণা করছেন সে সম্পর্কে নবতর ও উৎকৃষ্ট বিষয়বস্তু সংযোজন করা সম্ভব হয়। সাহিত্য পর্যালোচনা কোন বিষয়ের উপর গবেষকের জ্ঞান কতটুকু গভীর তা পাঠকের কাছে তুলে ধরে এবং গবেষণাটি বর্তমান জ্ঞানের ক্ষেত্রে কোথায় কতটুকুঅবদান রাখবে সে ব্যাপারে ইঙ্গিত প্রদান করে। সাহিত্য পর্যালোচনা বলতে পঠিত নিবন্ধসমূহের নিছক সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন বোঝায় না। সার-সংক্ষেপ সাহিত্য পর্যালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, তবে সাহিত্য পর্যালোচনা সার সংক্ষেপকরণের কাজকে ছাড়িয়ে যায়।

সাহিত্য পর্যালোচনা কী? (What Is Literature Review?)

গবেষণায় সাহিত্য বা লিটারেচার (Literature) হলো নির্বাচিত গবেষণা সমস্যা বা বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট পূর্বপ্রকাশিত বিভিন্ন বই, জার্নাল, ম্যাগাজিন, প্রতিবেদন, ভিডিয়ো চিত্র ইত্যাদি।

সাহিত্য পর্যালোচনা বলতে গবেষণা সমস্যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বই, জার্নাল, রিপোর্ট ও রেফারেন্স সামগ্রী সংগ্রহ, নির্বাচন এবং পাঠ ও মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। গবেষকের নির্বাচিত গবেষণা বিষয়ের পরিধি বা আওতার মধ্যে পড়ে এমন সব বিষয়বস্তুর (সাহিত্যের) অনুসন্ধান ও মূল্যায়ন করাকে সাহিত্য পর্যালোচনা বলে। ‘সাহিত্য পর্যালোচনা’ ইংরেজি ‘Literature Review’ (লিটারেচার রিভিউ)।

সাহিত্য পর্যালোচনার মাধ্যমে গবেষক যে বিষয়ের উপর গবেষণা করছেন সে সম্পর্কে নবতর ও উৎকৃষ্ট বিষয়বস্তু সংযোজন করা সম্ভব হয়।

কোনো বিষয়ের উপর গবেষকের জ্ঞান কতটুকু গভীর তা পাঠকের কাছে তুলে ধরে সাহিত্য পর্যালোচনা; এবং গবেষকের গবেষণা বর্তমান জ্ঞানের ক্ষেত্রে কোথায় কতটুকু অবদান রাখবে সে ব্যাপারে ইঙ্গিত দেয়।

সংশ্লিষ্ট সাহিত্য পর্যালোচনা এবং গবেষণা পর্যালোচনা এক কথা নয়। একটি অ্যাকাডেমিক গবেষণা পত্রের প্রধান ফোকাস হলো নতুন কোন যুক্তির বিকাশ সাধন করা, অন্যদিকে সাহিত্য পর্যালোচনার ফোকাস হলো একটি গবেষণা পত্রে নতুন কোন অবদান বা অন্তর্দৃষ্টির স্বপক্ষে ভিত্তি ও সমর্থন গড়ে তোলা। তবে সাহিত্য পর্যালোচনার মূল ফোকাস হলো অন্যদের ধারণা এবং যুক্তির সার-সংক্ষেপ করা।

সংশ্লিষ্ট সাহিত্যের পর্যালোচনা প্রায় সবসময় কোনো থিসিস বা গবেষণা পত্রের একটি প্রামাণ্য (standard) অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। সাহিত্য পর্যালোচনা হলো থিসিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যেখানে গবেষণার পটভূমি এবং গবেষণাটি পরিচালনার পক্ষে যুক্তি প্রদান করা হয়। তাই কোন গবেষণায় এই অধ্যায়টির অনুপস্থিতি একটি প্রধান উপাদানের শূন্যতা বা ভ্রান্তি বলে গণ্য করা হয়। গবেষণা প্রকল্প শুরুর আগে সাহিত্য পর্যালোচনার উপর সময় ও শ্রম ব্যয় করার যথেষ্ট কারণ আছে।

Bourner (১৯৯৬)-এর মতে সংশ্লিষ্ট সাহিত্য পর্যালোচনার মাধ্যমে নিম্নরূপ তথ্যাদি পাওয়া যায়:

  • সমস্যা ও সংশ্লিষ্ট ধারণা সম্পর্কিত তথ্য ও পটভূমি। 
  • সমস্যার অস্তিত্ব এবং সমস্যার সম্ভাব্য কারণসমূহের ব্যাখ্যামূলক তত্ত্ব। 
  • সমস্যার অস্তিত্ব এবং গম্ভীরতা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য। 
  • সমস্যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গবেষণার সাধারণ ও সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ। 
  • অধ্যয়নের জন্য আরও সংশ্লিষ্ট গবেষণাসমূহের সুপারিশ।

সাহিত্য পর্যালোচনা কেন প্রয়োজন?

গবেষণা ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সাহিত্যের পর্যালোচনা একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। নিচে কয়েকটি সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করা হলো। সাহিত্য পর্যালোচনা:

  • নির্বাচিত গবেষণা এলাকার অন্তর্ভুক্ত সাহিত্য জরিপ করে। 
  • বর্তমান জ্ঞানের ফাঁক বা শুন্যতা চিহ্নিত করে।
  • গবেষণা সমস্যা চিহ্নিত এবং সংজ্ঞায়িত করতে সাহায্য করে।
  • কোনো সমস্যার উপর গবেষণা করার যৌক্তিকতা প্রদান করে।
  • পূর্বে পরিচালিত গবেষণাসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করে এবং কোন গবেষণা অযথা পূনর্বার করা রোধ করে। 
  • গবেষণার জন্য একটি তাত্ত্বিক ভিত্তির উৎস হতে পারে, অন্যরা ইতোমধ্যে যেখানে পৌঁছেছেন সেখান থেকে অর্থাৎ সেই প্ল্যাটফর্ম বা ভিত্তির উপর নতুন জ্ঞান ও ধারণা নির্মাণ করতে সহায়তা করে।
  • গবেষণা সমস্যার ধারণা সংগঠনে, গবেষণা সংশ্লিষ্ট চলকগুলো (variables) সঠিকভাবে শনাক্তকরণে ও কার্যকরি সংজ্ঞা প্রদানে গবেষককে সাহায্য করে।
  • গবেষণার প্রাসঙ্গিক হতে পারে এ ধরনের তথ্য এবং ধারণা চিহ্নিত করে।
  • গবেষণার প্রাসঙ্গিক হতে পারে এমন সব পদ্ধতি চিহ্নিত করে।
  • গবেষণা উপকরণ প্রণয়নে ও পরিমার্জনে সাহায্য করে।
  • উপাত্ত বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার পাঠ প্রদান করে।
  • একই ক্ষেত্রে অন্যান্য যারা কাজ করছে তাদের (গবেষকদের) নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করে।  গবেষককে বুদ্ধিদীপ্ত কাজের কনটেক্সট প্রদান করে যাতে সে অন্যদের কাজের মধ্যে নিজের অবস্থান গড়ে তুলতে পারে।
  • গবেষণা বিষয়ের উপর কোন প্রতিবাদী মতামত থাকলে তা চিহ্নিত করে।
সাহিত্য পর্যালোচনা বলতে গবেষণা সমস্যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বই, জার্নাল, রিপোর্ট ও রেফারেন্স সামগ্রী সংগ্রহ, নির্বাচন এবং পাঠ ও মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। | ছবি: Unsplash

সংশ্লিষ্ট সাহিত্য পর্যালোচনা কখন শুরু করা প্রয়োজন?

গবেষণা সমস্যা চিহ্নিত ও সংজ্ঞা প্রদান করার সময় গবেষককে প্রমাণ বা যুক্তি দেখাতে হবে যে সমস্যাটি সত্যিই বিদ্যমান এবং অনুসন্ধানযোগ্য। গবেষণা প্রশ্ন বা উদ্দেশ্য চূড়ান্ত করার আগেই গবেষকের জানা প্রয়োজন সমস্যাটি সম্পর্কে ইতোমধ্যে কী কী জানা গেছে বা আগের গবেষকগণ কী পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া এখনো গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই গবেষণা সমস্যা সম্পর্কে ধারণা গঠনকালীন সময়েই সংশ্লিষ্ট সাহিত্য পর্যালোচনার কাজ শুরু করা উচিত।

গবেষণা সমস্যার অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করার জন্য এবং সমস্যা সংশ্লিষ্ট চলকগুলোর (variables) মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য গবেষকগণ যেসব তত্ত্ব উল্লেখ করেন সেগুলোর উৎস সংশ্লিষ্ট সাহিত্য পর্যালোচনার রেফারেন্স বই থেকে পাওয়া যেতে পারে। তাই, গবেষকগণ গবেষণা কার্যক্রম শুরুর প্রথম পর্যায়ে পর্যাপ্ত সাহিত্য অধ্যয়নের কাজ সমাপ্ত করে থাকেন । 

সাহিত্য পর্যালোচনার উৎস

সাহিত্য পর্যালোচনা শুরু করার আগে গবেষককে জানতে হবে, গবেষক কী খুঁজে বের করতে চান। সাহিত্য পর্যালোচনার পূর্বে প্রথম কাজ হলো গবেষকের বিষয় বা গবেষণা প্রকল্প নির্ধারণ করা; নিশ্চিত হতে হবে যে, গবেষক মূল ধারণাগুলো বুঝতে পেরেছেন এবং গুরুত্বপুর্ণ শব্দ ও প্রতিশব্দগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছেন। এটি গবেষকের গবেষণা কৌশল বিকশিত করতে সাহায্য করবে।

এবার গবেষকের কাজ হবে সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য উৎস শনাক্ত করা, এ কাজে গবেষককে সৃজনশীল হতে হবে। গবেষকের এই অনুসন্ধান কাজে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে লাইব্রেরি ইনডেক্স, ইলেকট্রনিক উপাত্ত এবং ইন্টারনেট। গবেষকের বিষয়ের প্রাসঙ্গিক বইপত্র এবং জার্নাল সংরক্ষিত হয় এমন এক বা একাধিক লাইব্রেরির সাথে সংযোগ রক্ষা করুন। গবেষক আন্তঃগ্রন্থাগার সহায়তার জন্য লাইব্রেরি কর্মীদের পরামর্শ নিতে পারেন।

জার্নাল

সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণাসমূহ অনুসন্ধানের সেরা জায়গা হলো জার্নাল, তবে মনে রাখবেন যে এখন অনেক পত্রিকা/জার্নাল শুধুমাত্র অনলাইন প্রকাশিত হয়।

সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন

বর্তমান বা সাময়িক তথ্য ও নিবন্ধের জন্য একটি ভাল উৎস হলো সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন, উদাহরণস্বরূপ, যদি গবেষক একটি ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে লিখতে চান তাহলে গবেষক ইকোনমিস্ট, ফরচুন এবং হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ-এর মধ্যে দরকারী তথ্য খুঁজে পেতে পারেন।

অতিরিক্ত উৎস

লাইব্রেরি শুধু বই এবং পত্রিকা ধারণ করে না, অনেক অপ্রকাশিত সংকলন এবং এমএও পিএইচডি থিসিস ধারণ করে যা গবেষকের বিষয়ের প্রাসঙ্গিক হতে পারে।

সম্মেলন কাগজপত্র

সম্মেলনে উপস্থাপিত কাগজপত্র অনেক সময় পেপার কাটিং গবেষণাপত্র হিসেবে জার্নালের মত সংগ্রহ করা হয়। এসব কাগজপত্র প্রায়ই পত্রিকায়, সাময়িকীর বিশেষ সংস্করণে এবং ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়।

জাতীয় ও স্থানীয় সরকার প্রকাশনা

বিভিন্ন প্রকাশনা যেমন রিপোর্ট, ইয়ার বুকস, শ্বেতপত্র/সবুজপত্র, নীতিপত্র, ম্যানুয়াল ও পরিসংখ্যানগত সার্ভে এর অন্তর্ভুক্ত।

প্রকাশকের ওয়েবসাইট

এই সাইটগুলো প্রায়ই সাম্প্রতিক প্রকাশনার সারাংশ এবং পুরো ইলেকট্রনিক টেক্সট জার্নাল ধারণ করে।

ডেটাবেস

অনেক বিষয় এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনলাইন ডেটাবেস থাকে যেখানে সাম্প্রতিক নিবন্ধসমূহের তালিকা দেয়া থাকে।

প্রফেসর মো. তবারক উল ইসলাম কর্তৃক সম্পাদিত নিবন্ধকে বিশ্লেষণ সংকলন টিম পূণরায় সম্পাদনা করেছে।

শেয়ার করুন

2 thoughts on “সাহিত্য পর্যালোচনা কাকে বলে? সাহিত্য পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা ও উৎস কী?

  1. ধন্যবাদ এত গুছিয়ে লেখার জন্য সব কিছু। সহজ সাবলিল একটা ধারনা পেলাম।

  2. লেখাটা পরে আমার খুব ভালো লেগেছে। লেখাটা খুব সুন্দর। সহজ সরল ভাষা।

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

প্রফেসর মো. তবারক উল ইসলাম

প্রফেসর মো. তবারক উল ইসলাম সম্পাদিত বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত বই 'শিক্ষা গবেষণা'র লেখকগণ হলেন যথাক্রমে প্রফেসর ড. সেলিনা আক্তার, প্রফেসর মো. তবারক উল ইসলাম, প্রফেসর হোসনে আরা আহমেদ, প্রফেসর এস এম হাফিজুর রহমান এবং এমএস মেরিন সুলতানা

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

সাহিত্য পর্যালোচনা কাকে বলে? সাহিত্য পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা ও উৎস কী?

প্রকাশ: ০৬:৩০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর ২০২১

সাধারণত একটি গবেষণা বা থিসিসের তাত্ত্বিক কাঠামো ও যৌক্তিকতা প্রদানের জন্য সাহিত্য পর্যালোচনা (Literature Review) করা হয়ে থাকে। সাহিত্য পর্যালোচনার মাধ্যমে গবেষক যে বিষয়ের উপর গবেষণা করছেন সে সম্পর্কে নবতর ও উৎকৃষ্ট বিষয়বস্তু সংযোজন করা সম্ভব হয়। সাহিত্য পর্যালোচনা কোন বিষয়ের উপর গবেষকের জ্ঞান কতটুকু গভীর তা পাঠকের কাছে তুলে ধরে এবং গবেষণাটি বর্তমান জ্ঞানের ক্ষেত্রে কোথায় কতটুকুঅবদান রাখবে সে ব্যাপারে ইঙ্গিত প্রদান করে। সাহিত্য পর্যালোচনা বলতে পঠিত নিবন্ধসমূহের নিছক সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন বোঝায় না। সার-সংক্ষেপ সাহিত্য পর্যালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, তবে সাহিত্য পর্যালোচনা সার সংক্ষেপকরণের কাজকে ছাড়িয়ে যায়।

সাহিত্য পর্যালোচনা কী? (What Is Literature Review?)

গবেষণায় সাহিত্য বা লিটারেচার (Literature) হলো নির্বাচিত গবেষণা সমস্যা বা বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট পূর্বপ্রকাশিত বিভিন্ন বই, জার্নাল, ম্যাগাজিন, প্রতিবেদন, ভিডিয়ো চিত্র ইত্যাদি।

সাহিত্য পর্যালোচনা বলতে গবেষণা সমস্যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বই, জার্নাল, রিপোর্ট ও রেফারেন্স সামগ্রী সংগ্রহ, নির্বাচন এবং পাঠ ও মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। গবেষকের নির্বাচিত গবেষণা বিষয়ের পরিধি বা আওতার মধ্যে পড়ে এমন সব বিষয়বস্তুর (সাহিত্যের) অনুসন্ধান ও মূল্যায়ন করাকে সাহিত্য পর্যালোচনা বলে। ‘সাহিত্য পর্যালোচনা’ ইংরেজি ‘Literature Review’ (লিটারেচার রিভিউ)।

সাহিত্য পর্যালোচনার মাধ্যমে গবেষক যে বিষয়ের উপর গবেষণা করছেন সে সম্পর্কে নবতর ও উৎকৃষ্ট বিষয়বস্তু সংযোজন করা সম্ভব হয়।

কোনো বিষয়ের উপর গবেষকের জ্ঞান কতটুকু গভীর তা পাঠকের কাছে তুলে ধরে সাহিত্য পর্যালোচনা; এবং গবেষকের গবেষণা বর্তমান জ্ঞানের ক্ষেত্রে কোথায় কতটুকু অবদান রাখবে সে ব্যাপারে ইঙ্গিত দেয়।

সংশ্লিষ্ট সাহিত্য পর্যালোচনা এবং গবেষণা পর্যালোচনা এক কথা নয়। একটি অ্যাকাডেমিক গবেষণা পত্রের প্রধান ফোকাস হলো নতুন কোন যুক্তির বিকাশ সাধন করা, অন্যদিকে সাহিত্য পর্যালোচনার ফোকাস হলো একটি গবেষণা পত্রে নতুন কোন অবদান বা অন্তর্দৃষ্টির স্বপক্ষে ভিত্তি ও সমর্থন গড়ে তোলা। তবে সাহিত্য পর্যালোচনার মূল ফোকাস হলো অন্যদের ধারণা এবং যুক্তির সার-সংক্ষেপ করা।

সংশ্লিষ্ট সাহিত্যের পর্যালোচনা প্রায় সবসময় কোনো থিসিস বা গবেষণা পত্রের একটি প্রামাণ্য (standard) অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। সাহিত্য পর্যালোচনা হলো থিসিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যেখানে গবেষণার পটভূমি এবং গবেষণাটি পরিচালনার পক্ষে যুক্তি প্রদান করা হয়। তাই কোন গবেষণায় এই অধ্যায়টির অনুপস্থিতি একটি প্রধান উপাদানের শূন্যতা বা ভ্রান্তি বলে গণ্য করা হয়। গবেষণা প্রকল্প শুরুর আগে সাহিত্য পর্যালোচনার উপর সময় ও শ্রম ব্যয় করার যথেষ্ট কারণ আছে।

Bourner (১৯৯৬)-এর মতে সংশ্লিষ্ট সাহিত্য পর্যালোচনার মাধ্যমে নিম্নরূপ তথ্যাদি পাওয়া যায়:

  • সমস্যা ও সংশ্লিষ্ট ধারণা সম্পর্কিত তথ্য ও পটভূমি। 
  • সমস্যার অস্তিত্ব এবং সমস্যার সম্ভাব্য কারণসমূহের ব্যাখ্যামূলক তত্ত্ব। 
  • সমস্যার অস্তিত্ব এবং গম্ভীরতা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য। 
  • সমস্যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গবেষণার সাধারণ ও সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ। 
  • অধ্যয়নের জন্য আরও সংশ্লিষ্ট গবেষণাসমূহের সুপারিশ।

সাহিত্য পর্যালোচনা কেন প্রয়োজন?

গবেষণা ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সাহিত্যের পর্যালোচনা একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। নিচে কয়েকটি সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করা হলো। সাহিত্য পর্যালোচনা:

  • নির্বাচিত গবেষণা এলাকার অন্তর্ভুক্ত সাহিত্য জরিপ করে। 
  • বর্তমান জ্ঞানের ফাঁক বা শুন্যতা চিহ্নিত করে।
  • গবেষণা সমস্যা চিহ্নিত এবং সংজ্ঞায়িত করতে সাহায্য করে।
  • কোনো সমস্যার উপর গবেষণা করার যৌক্তিকতা প্রদান করে।
  • পূর্বে পরিচালিত গবেষণাসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করে এবং কোন গবেষণা অযথা পূনর্বার করা রোধ করে। 
  • গবেষণার জন্য একটি তাত্ত্বিক ভিত্তির উৎস হতে পারে, অন্যরা ইতোমধ্যে যেখানে পৌঁছেছেন সেখান থেকে অর্থাৎ সেই প্ল্যাটফর্ম বা ভিত্তির উপর নতুন জ্ঞান ও ধারণা নির্মাণ করতে সহায়তা করে।
  • গবেষণা সমস্যার ধারণা সংগঠনে, গবেষণা সংশ্লিষ্ট চলকগুলো (variables) সঠিকভাবে শনাক্তকরণে ও কার্যকরি সংজ্ঞা প্রদানে গবেষককে সাহায্য করে।
  • গবেষণার প্রাসঙ্গিক হতে পারে এ ধরনের তথ্য এবং ধারণা চিহ্নিত করে।
  • গবেষণার প্রাসঙ্গিক হতে পারে এমন সব পদ্ধতি চিহ্নিত করে।
  • গবেষণা উপকরণ প্রণয়নে ও পরিমার্জনে সাহায্য করে।
  • উপাত্ত বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার পাঠ প্রদান করে।
  • একই ক্ষেত্রে অন্যান্য যারা কাজ করছে তাদের (গবেষকদের) নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করে।  গবেষককে বুদ্ধিদীপ্ত কাজের কনটেক্সট প্রদান করে যাতে সে অন্যদের কাজের মধ্যে নিজের অবস্থান গড়ে তুলতে পারে।
  • গবেষণা বিষয়ের উপর কোন প্রতিবাদী মতামত থাকলে তা চিহ্নিত করে।
সাহিত্য পর্যালোচনা বলতে গবেষণা সমস্যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বই, জার্নাল, রিপোর্ট ও রেফারেন্স সামগ্রী সংগ্রহ, নির্বাচন এবং পাঠ ও মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। | ছবি: Unsplash

সংশ্লিষ্ট সাহিত্য পর্যালোচনা কখন শুরু করা প্রয়োজন?

গবেষণা সমস্যা চিহ্নিত ও সংজ্ঞা প্রদান করার সময় গবেষককে প্রমাণ বা যুক্তি দেখাতে হবে যে সমস্যাটি সত্যিই বিদ্যমান এবং অনুসন্ধানযোগ্য। গবেষণা প্রশ্ন বা উদ্দেশ্য চূড়ান্ত করার আগেই গবেষকের জানা প্রয়োজন সমস্যাটি সম্পর্কে ইতোমধ্যে কী কী জানা গেছে বা আগের গবেষকগণ কী পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া এখনো গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই গবেষণা সমস্যা সম্পর্কে ধারণা গঠনকালীন সময়েই সংশ্লিষ্ট সাহিত্য পর্যালোচনার কাজ শুরু করা উচিত।

গবেষণা সমস্যার অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করার জন্য এবং সমস্যা সংশ্লিষ্ট চলকগুলোর (variables) মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য গবেষকগণ যেসব তত্ত্ব উল্লেখ করেন সেগুলোর উৎস সংশ্লিষ্ট সাহিত্য পর্যালোচনার রেফারেন্স বই থেকে পাওয়া যেতে পারে। তাই, গবেষকগণ গবেষণা কার্যক্রম শুরুর প্রথম পর্যায়ে পর্যাপ্ত সাহিত্য অধ্যয়নের কাজ সমাপ্ত করে থাকেন । 

সাহিত্য পর্যালোচনার উৎস

সাহিত্য পর্যালোচনা শুরু করার আগে গবেষককে জানতে হবে, গবেষক কী খুঁজে বের করতে চান। সাহিত্য পর্যালোচনার পূর্বে প্রথম কাজ হলো গবেষকের বিষয় বা গবেষণা প্রকল্প নির্ধারণ করা; নিশ্চিত হতে হবে যে, গবেষক মূল ধারণাগুলো বুঝতে পেরেছেন এবং গুরুত্বপুর্ণ শব্দ ও প্রতিশব্দগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছেন। এটি গবেষকের গবেষণা কৌশল বিকশিত করতে সাহায্য করবে।

এবার গবেষকের কাজ হবে সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য উৎস শনাক্ত করা, এ কাজে গবেষককে সৃজনশীল হতে হবে। গবেষকের এই অনুসন্ধান কাজে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে লাইব্রেরি ইনডেক্স, ইলেকট্রনিক উপাত্ত এবং ইন্টারনেট। গবেষকের বিষয়ের প্রাসঙ্গিক বইপত্র এবং জার্নাল সংরক্ষিত হয় এমন এক বা একাধিক লাইব্রেরির সাথে সংযোগ রক্ষা করুন। গবেষক আন্তঃগ্রন্থাগার সহায়তার জন্য লাইব্রেরি কর্মীদের পরামর্শ নিতে পারেন।

জার্নাল

সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণাসমূহ অনুসন্ধানের সেরা জায়গা হলো জার্নাল, তবে মনে রাখবেন যে এখন অনেক পত্রিকা/জার্নাল শুধুমাত্র অনলাইন প্রকাশিত হয়।

সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন

বর্তমান বা সাময়িক তথ্য ও নিবন্ধের জন্য একটি ভাল উৎস হলো সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন, উদাহরণস্বরূপ, যদি গবেষক একটি ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে লিখতে চান তাহলে গবেষক ইকোনমিস্ট, ফরচুন এবং হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ-এর মধ্যে দরকারী তথ্য খুঁজে পেতে পারেন।

অতিরিক্ত উৎস

লাইব্রেরি শুধু বই এবং পত্রিকা ধারণ করে না, অনেক অপ্রকাশিত সংকলন এবং এমএও পিএইচডি থিসিস ধারণ করে যা গবেষকের বিষয়ের প্রাসঙ্গিক হতে পারে।

সম্মেলন কাগজপত্র

সম্মেলনে উপস্থাপিত কাগজপত্র অনেক সময় পেপার কাটিং গবেষণাপত্র হিসেবে জার্নালের মত সংগ্রহ করা হয়। এসব কাগজপত্র প্রায়ই পত্রিকায়, সাময়িকীর বিশেষ সংস্করণে এবং ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়।

জাতীয় ও স্থানীয় সরকার প্রকাশনা

বিভিন্ন প্রকাশনা যেমন রিপোর্ট, ইয়ার বুকস, শ্বেতপত্র/সবুজপত্র, নীতিপত্র, ম্যানুয়াল ও পরিসংখ্যানগত সার্ভে এর অন্তর্ভুক্ত।

প্রকাশকের ওয়েবসাইট

এই সাইটগুলো প্রায়ই সাম্প্রতিক প্রকাশনার সারাংশ এবং পুরো ইলেকট্রনিক টেক্সট জার্নাল ধারণ করে।

ডেটাবেস

অনেক বিষয় এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনলাইন ডেটাবেস থাকে যেখানে সাম্প্রতিক নিবন্ধসমূহের তালিকা দেয়া থাকে।

প্রফেসর মো. তবারক উল ইসলাম কর্তৃক সম্পাদিত নিবন্ধকে বিশ্লেষণ সংকলন টিম পূণরায় সম্পাদনা করেছে।