ভূগোল ও ইতিহাস: ভারতীয় উপমহাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং ইতিহাসে এর প্রভাব
- প্রকাশ: ০৩:৪১:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১
- / ৯১৪৯ বার পড়া হয়েছে
চন্দ্রশিলা, ভারত | Photo by Aditya Siva on Unsplash
মানুষের সামগ্রিক কর্মকান্ড ও কীর্তিকলাপ এবং তার অবস্থান ও পরিবেশের মধ্যে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। কোনো অঞ্চলের ইতিহাস নিয়ে আলোচনার পূর্বে স্বাভাবিকভাবেই এর ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া উচিত। ভৌগোলিক অবস্থান হলো পৃথিবীতে কোনো জায়গার নির্দিষ্ট অবস্থান। ভৌগোলিক অবস্থানকে অক্ষাংশ (Latitude) ও দ্রাঘিমাংশ (Longitude) দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। যেহেতু মানুষের কর্মকান্ড এক বিশেষ ভৌগোলিক পরিবেশে সংঘটিত হয়, তাই ভূগোল হলো ইতিহাসের ভিত্তি। যে-কোনো দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তন ভৌগোলিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, জলবায়ু সামগ্রিকভাবে সেই দেশের জনগণের জীবনযাত্রা প্রণালী এবং রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রভাবিত করে। এখানে ভারতীয় উপমহাদেশের (Indian Sub-continent) ভৌগোলিক অবস্থান এবং ইতিহাসে (History) ভারতীয় উপমহাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের প্রভাব আলোচনা করা হলো।
ভূগোল ও ইতিহাস: ভারতীয় উপমহাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং ইতিহাসে এর প্রভাব
ভারতীয় উপমহাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য
ভারত (India) হলো এশিয়ার (Asia) দক্ষিণভাগে একটি উপমহাদেশ। নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক সীমারেখা ভারতীয় উপমহাদেশকে এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল থেকে পৃথক করেছে। এই উপমহাদেশের উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা। হিমালয়ের পশ্চিম প্রান্ত থেকে ক্রমশঃ দক্ষিণমুখী কারাকোরাম(Karakoram), হিন্দুকুশ (Hindu Kush) ও ক্ষীরথর পর্বতমালা ভারতের পশ্চিম সীমান্তে সৃষ্টি করেছে এক অলঙ্ঘনীয় প্রাকৃতিক সীমারেখা। আর এই সীমারেখাই ভারতকে বিচ্ছিন্ন করেছে পশ্চিম এশিয়া থেকে। উত্তরের হিমালয় পর্বতশ্রেণি (Himalayas) ভারত ও চীনের মধ্যেও সৃষ্টি করেছে অলঙ্ঘনীয় সীমারেখা। হিমালয়ের পূর্বপ্রান্তে আসাম ও লুসাই পর্বতমালা (Lushai Hills), পার্বত্য চট্টগ্রাম (Chittagong Hill Tracts) ও আরাকানের অনুচ্চ পর্বতশ্রেণি (Arakan Mountains) ভারতকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে মায়ানমার ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে। ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণে আরব সাগর (Arabian Sea), ভারত মহাসাগর (Indian Ocean), আর বঙ্গোপসাগর (Bay of Bengal) সুনিশ্চিত করেছে ভারতের বিচ্ছিন্ন অস্তিত্ব।
উপর্যুক্ত সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ ভারত উপমহাদেশের বিশাল ভূ-ভাগের মধ্যে রয়েছে ভৌগোলিক বৈচিত্র্য। উত্তরের সমভূমি আর দাক্ষিণাত্যের মালভূমির (Deccan Plateau) মধ্যে প্রাকৃতিক দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত বিন্ধ্য পর্বতমালা (Vindhya Range); যার পশ্চিমে আরাবল্লি পর্বত রাজস্থানের মরুময় অঞ্চলের মধ্যে বিস্তার রয়েছে তার কয়েকটি শাখা-প্রশাখা। হিমালয় থেকে বিন্ধ্য পর্যন্ত বিস্তৃত উত্তর ভারতের সমতল ভূমি । যার সর্ব পশ্চিমে সিন্ধু নদ ও তার শাখা প্রশাখা বিধৌত পাঞ্জাব ও সিন্ধুর সমতলভূমি। পাঞ্জাব থেকে পূর্ব দিকে বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত উত্তর ভারতের গঙ্গা-যমুনা বিধৌত বিশাল সমভূমি।
বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে দাক্ষিণাত্যের সামুদ্রিক জলবেষ্ঠিত উপদ্বীপ। দাক্ষিণাত্যের মালভূমির পশ্চিমে রয়েছে পশ্চিমঘাট ও পূর্বে পূর্বঘাট পর্বতশ্রেণি। উপদ্বীপের প্রায় মাঝামাঝি চন্দ্রগিরি পর্বতশ্রেণি। কৃষ্ণা, কাবেরী আর গোদাবরীর জলরাশি এই মালভূমির সমতল ভূ-ভাগকে করেছে উর্বরা।
উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ সমভূমির দক্ষিণ-পশ্চিমে রাজস্থান ও সিন্ধুর মধ্যে রয়েছে থর মরুভূমি (Thar Desert)। আর এই সমভূমির দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে বাংলার ব-দ্বীপ। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ ভারতের পূর্বাংশ আর উত্তর ভারতের পূর্বাংশে লক্ষ করা যায় বৃষ্টিবহুল পরিবেশের। সমগ্র উত্তর ভারতের অবশিষ্ট অংশে শুষ্ক আবহাওয়া, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যাবলি উপমহাদেশের ইতিহাসে যেপ্রভাব ফেলেছে তা আমরা এখন সংক্ষেপে আলোচনা করব।
ইতিহাসে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যাবলির প্রভাব
হিমালয়ের প্রভাব
হিমালয় (The Himalayas) ভারত উপমহাদেশকে উত্তরের হিমপ্রবাহ থেকে রক্ষা করেছে, তাই উত্তর ভারতের বিস্তৃত মালভূমি আবাসোপযোগী হয়েছে। হিমালয় থেকে সৃষ্টি হয়েছে উত্তর ভারতের প্রধান প্রধান নদী প্রবাহের। আর এই নদীর জলরাশিকে ভিত্তি করেই গড়ে ওঠেছে উত্তর ভারতের কৃষি। দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহমান মৌসুমী বায়ু হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েই ভারতীয় উপমহাদেশে দান করেছে বৃষ্টিপাত। উত্তর ভারতের মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণে হিমালয়ের প্রভাবকে স্বীকার করেই হিমালয় প্রাচীন ভারতীয়দের মানসে দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
হিমালয় ও পশ্চিমের পার্বত্য সীমারেখার কারণে ভারতীয়দের মনে সৃষ্টি হয়েছে এক ভ্রান্ত নিরাপত্তার ধারণা। ভারতবাসী এই পার্বত্য সীমারেখাকে মনে করেছে অলঙ্ঘনীয়। আর ভ্রান্ত নিরাপত্তার ধারণার বশবর্তী হয়ে ভারতবাসী বিদেশী আক্রমণের কথা খুব একটা চিন্তা করেনি। তাই যুগে যুগে উত্তর-পশ্চিমের গিরিপথগুলো দিয়ে, বিশেষ করে খাইবার গিরিপথের মধ্যদিয়ে ভারত আক্রান্ত হয়েছে বিদেশীদের আক্রমণে। উত্তর-পশ্চিমের পথ দিয়েই এসেছে আর্য প্রবাহ, এসেছে গ্রিক, কুষাণ, হুণ, আফগান, তুর্কি আর মোঙ্গল আক্রমণ। ভারত ভ্রান্ত নিরাপত্তা বোধ থেকে বারবারই ব্যর্থ হয়েছে বিদেশীদের প্রতিরোধ করতে।
বিন্ধ্য পর্বতের প্রভাব
বিন্ধ্য পর্বতমালার (The Vindhya Range) অবস্থান ভারতকে দুভাগে ভাগ করেছে— উত্তর ভারত ও দাক্ষিণাত্য, উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ, সমভূমি হয়েছে ইতিহাসের লালনক্ষেত্র। মানুষের কর্মকান্ডের প্রধান রঙ্গমঞ্চ। আর্যরা এসে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ধীরে ধীরে সমগ্র উত্তর ভারতকে পরিণত করেছে আর্যাবর্তে। বিন্ধ্যের দক্ষিণে সরে গিয়েছে দ্রাবিড় ভাষা গোষ্ঠীর মানুষ। দ্রাবিড় ভূমিতে পরিণত হয়েছে দাক্ষিণাত্য। ভারতের ইতিহাসে উত্তর আর দক্ষিণের মধ্যে যে বৈরিতা লক্ষ করা যায়, তা মূলত বিন্ধ্যের কারণেই।
উত্তর ভারতীয় সাম্রাজ্য স্থাপনের পর চেষ্টা চলেছে দাক্ষিণাত্য অধিকারের। আবার দাক্ষিণাত্যের শক্তিশালী সাম্রাজ্য ও চেষ্টা চালিয়েছে উত্তর ভারতে আধিপত্য বিস্তারে। উত্তর-দক্ষিণের মধ্যে সংঘর্ষ ভারতীয় ইতিহাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
ভারতের বিশালতার প্রভাব
ভারত একটি বিশাল উপমহাদেশ। এর বিশালতার কারণে ভারতীয় ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছে কিছুটা অন্তর্মুখিতার। ভারত এত বড়ো ও বিশাল যে, ভারতের মধ্যেই সব সাম্রাজ্যবাদী অভিপ্রায় চরিতার্থ করার সুযোগ রয়েছে। তাই ভারতের সাম্রাজ্যবাদীদের ভারতের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করতে হয়নি।
ভারতের বিশালতা আর ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে ভারতের ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্নতার মধ্যে ঐক্য স্থাপনের প্রবণতা। বিশাল ভারতের বিভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক সত্তা। সেই আঞ্চলিক সত্তার উপস্থিতি ভারতের ইতিহাসের সব যুগেই লক্ষ করা যায়। আঞ্চলিক রাজনৈতিক সত্তার মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে আঞ্চলিক ভাষার আঞ্চলিক সংস্কৃতির।
আঞ্চলিক সত্তাসমূহের বিলোপ সাধন করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের অভিলিপ্সা যুগে যুগে ভারতের ইতিহাসের প্রধান লক্ষবস্তু হিসেবে প্রকাশ পেলেও একথা স্বীকার করতেই হয় যে, কখনোই সর্বভারতীয় ঐক্য স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। মৌলিক কিছু সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঐক্য লক্ষ করলেও আঞ্চলিক বিভিন্নতা ভারতীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। বৈচিত্র্যই ভারতীয় সংস্কৃতিতে এনেছে উৎকর্ষ।
নদ-নদীর প্রভাব
সিন্ধু ও পঞ্চনদের জলরাশি সৃষ্টি করেছে উৎপাদনশীল পশ্চিম ভারতের সমভূমি। গঙ্গা-যমুনার সৃষ্ট উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ সমভূমি, গোদাবরী, কৃষ্ণা ও কাবেরী সৃষ্টি করেছে দাক্ষিণাত্যের মানব বসতির অনুকূল পরিবেশ। এছাড়াও আরো অসংখ্য নদীকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি ভিত্তিক মানব সমাজ। কৃষি অর্থনীতিই ছিল ভারতে মানুষের সকল কর্মকান্ডের মূল ভিত্তি। পশ্চিম ভারতে সিন্ধু সভ্যতার বিকাশ, পরবর্তী পর্যায়ে উত্তর ভারতে আর্য-সভ্যতার বিকাশ নদী বিধৌত এলাকাকেই কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল।
দক্ষিণ ভারতের সাম্রাজ্যগুলোও গড়ে উঠেছিল মালভূমির উর্বরা ভূ-খন্ডে। উত্তর ভারতের মৌর্য সাম্রাজ্য, কুষাণ সাম্রাজ্য, গুপ্ত সাম্রাজ্য বা পুষ্যভূতি সাম্রাজ্য সবই গড়ে উঠেছিল নদীবিধৌত সমভূমির ওপর আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে। মধ্যযুগে দিল্লির সুলতানদের সাম্রাজ্যও সিন্ধু, গঙ্গা-যমুনা বিধৌত এলাকার ওপর আধিপত্যকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল। অবশ্য সমুদ্র-বাণিজ্য ভারতের সাম্রাজ্যবাদকে যুগে যুগে দিয়েছিল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। আর সমৃদ্ধির কারণেই উৎকর্ষ অর্জিত হয়েছিল বিভিন্ন শিল্পকলায়।
ভারতের পশ্চিমে, দক্ষিণে ও পূর্বে অবস্থিত সমুদ্রের কারণে যে বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি সহজলভ্য হয়েছিল সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলার ভৌগোলিক পরিচয় ও প্রভাব
বাংলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যাবলি এদেশের ইতিহাসকে যুগযুগ ধরে প্রভাবিত করেছে। প্রথমেই বাংলা বলতে কোন ভূ-খন্ডকে বোঝাতো তা স্পষ্ট করে নেয়া প্রয়োজন। মোটামুটিভাবে ১৯৪৭ সালের পূর্বে ব্রিটিশ ভারতের ‘বেঙ্গল’ প্রদেশের ভূ-খন্ডকেই ‘বাংলা’ অঞ্চল হিসেবে ধরা হয়েছে— বর্তমানে এই ভূখন্ডেই আমাদের বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ। ইতিহাসের দৃষ্টিতে এই ভূ-খন্ডের একটি আঞ্চলিক সত্তা ছিল এবং ভূগোলবিদগণ উপমহাদেশের মধ্যে ‘বাংলা’কে একটি ভৌগোলিক ‘অঞ্চল’ বলে স্বীকার করেছেন।
প্রায় ৮০ হাজার বর্গমাইল বিস্তৃত নদীবাহিত পলি দ্বারা গঠিত এক বিশাল সমভূমি এই বাংলা। এর পূর্বে ত্রিপুরা, গারো ও লুসাই পাহাড়, উত্তরে শিলং মালভূমি ও নেপালের তরাই অঞ্চল, পশ্চিমে রাজমহল ও ছোটোনাগপুর পর্বতরাজির উচ্চ ভূমি এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এই বিস্তৃত সমভূমির দক্ষিণ দিক সাগরাভিমুখে ঢালু এবং গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার জলরাশি দ্বারা বয়ে আনা বিপুল পরিমাণ পলি সাগরে উৎসারিত হচ্ছে।
সমুদ্রোপকূলবর্তী নিম্নভূমি জঙ্গলাকীর্ণ।এর পেছনেই (অর্থাৎ উত্তরে) প্রায় ৫০ হাজার বর্গমাইল সমতল ভূমি, যার গঠনে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা প্রবাহের অবদান রয়েছে। এই বিস্তৃত সমতলভূমির মধ্যে ত্রিপুরা অঞ্চল নিকটবর্তী প্লাবন ভূমির তুলনায় গড়ে ৬ ফুট উঁচু এবং এর মাঝামাঝি রয়েছে লালমাই পাহাড়। সিলেট এলাকাও গড়ে প্রায় ১০ ফুট উঁচু এবং এরই দক্ষিণ সীমায় অবস্থিত প্লাইস্টোসিন যুগের সুগঠিত মধুপুর উচ্চভূমি। এই সুগঠিত উচ্চভূমির উত্তর-পশ্চিমে বিস্তৃতিই হচ্ছে ‘বরেন্দ্র’ বা ‘বারিন্দ্র’ এলাকা। পশ্চিমে রাজমহল ও ছোটোনাগপুর পাহাড় সংলগ্ন উত্তর থেকে দক্ষিণাভিমুখে বিস্তৃত প্লাইস্টোসিন ভূ-ভাগ রয়েছে।
নীহাররঞ্জন রায়ের ভাষায় “একদিকে সুউচ্চ পর্বত, দুই দিকে কঠিন শৈলভূমি, আর একদিকে বিস্তীর্ণ সমুদ্র; মাঝখানে সমভূমির সাম্য— ইহাই বাঙালীর ভৌগোলিক ভাগ্য।”
সামগ্রিকভাবে ভূ-প্রাকৃতিক গঠন বৈশিষ্ট্যের আলোকে বাংলাকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে—
- ১. উত্তর বাংলার পাললিক সমভূমি
- ২. ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অন্তর্বর্তী ভূ-ভাগ
- ৩. ভাগীরথী-মেঘনা অন্তর্বর্তী ব-দ্বীপ
- ৪. চট্টগ্রামাঞ্চলের অনুচ্চ পার্বত্য এলাকা
- ৫. বর্ধমানাঞ্চলের অনুচ্চ পার্বত্য এলাকা।
অবস্থানগত বিবেচনায় বাংলা ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপূর্ব প্রান্তের অঞ্চল। বাংলার উত্তরে প্রকান্ড হিমালয় পর্বত ও নেপাল। পূর্বে মনিপুর, আসাম, ত্রিপুরা ও মায়ানমার। পশ্চিমে ভারতের বিহার এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।
বাংলার ভূ-প্রকৃতিতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নদীমালার। প্রধান নদীগুলোর স্রোতধারাই বাংলাকে মূলত চারটি ভাগে বিভক্ত করেছে— উত্তর, পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব।
প্রত্যেকটি বিভাগেরই যেমন রয়েছে ভৌগোলিক সত্তা তেমনি ঐতিহাসিক সত্তা। যাহোক, বাংলার নদ-নদীর মধ্যে গঙ্গাই প্রধান। রাজমহলকে স্পর্শ করে গঙ্গা বাংলার সমতলভূমিতে প্রবেশ করেছে। সমতলভূমিতে প্রবেশ করেই গঙ্গার দুটি প্রধান প্রবাহ লক্ষ করা যায়— একটি পূর্ব দক্ষিণগামী, নাম পদ্মা, অন্যটি মৌজা দক্ষিণমুখী নাম ভাগীরথী। গঙ্গার আরো অনেক শাখা প্রশাখা বাংলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলার নদীসমূহের মধ্যে দ্বিতীয় প্রধান প্রবাহ ব্রহ্মপুত্র, বাংলার উত্তর-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসামের ভিতর দিয়ে গতিপথ কিছুটা দক্ষিণ-পশ্চিমগামী
এবং রংপুর ও কুচবিহারের সীমান্ত দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছে। বেশ কয়েকবার গতিপথ পরিবর্তন করে ব্রহ্মপুত্র বর্তমান যমুনা-পদ্মার পথে মেঘনার সাথে মিলিত হয়ে সমুদ্রে পড়েছে। বাংলার পুর্বাঞ্চলের প্রধান
নদীপ্রবাহ মেঘনা, এই নদী শিলং মালভূমি ও সিলেটের জলসম্ভার নিয়ে সমুদ্রে পড়েছে। মেঘনার উত্তর প্রবাহের নাম সুরমা।
আঞ্চলিক নদীসমূহের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলে অজয় দামোদর, কাঁসাই, দ্বারকেশ্বর, রূপনারায়ণ, সরস্বতী; আর উত্তরাঞ্চলে করতোয়া, আত্রাই, পূনর্ভবা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলার প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলো কোন না কোন নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল। বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোও ছিল নদীরই তীরে।
বাংলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
বাংলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যাবলি বাংলার ভৌগোলিক পরিচয় থেকে এ অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
- প্রথমত, গাঠনিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় বাংলা ভূ-খন্ডের অস্তিত্ব বা অবস্থান উপমহাদেশের সর্বপূর্বান্তে নির্ধারিত হয়েছে।
- দ্বিতীয়ত, ভূ-তাত্ত্বিকভাবে বাংলা সুগঠিত ভূ-ভাগ এবং অপেক্ষাকৃত নবীন ভূ-ভাগের সমন্বয়ে সৃষ্ট।
- তৃতীয়ত, বাংলা পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বা ‘ডেল্টা’।
- চতুর্থত, বাংলা মৌসুমী জলবায়ুর দেশ, বৃষ্টিবহুল অঞ্চল।
- পঞ্চমত, এর দক্ষিণে উন্মুক্ত সমুদ্রদ্বার এবং অঞ্চলটি নদী বহুল।
এ সকল বৈশিষ্ট্য বাংলার ইতিহাসে বহুমুখী প্রভাব বিস্তার করেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ইতিহাসে যে প্রভাব রাখে
মানুষ প্রকৃতির ওপর শর্তবদ্ধ এবং তাঁর কার্যাবলি কখনোই পরিবেশের প্রভাবকে এড়িয়ে চলতে পারে না। এ মন্তব্যটির যথার্থতা বাংলার ক্ষেত্রেও প্রমাণিত হয়। বাঙালির সমাজ জীবনের বৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য, ধর্মীয় জীবনের স্বকীয়তা, এমনকি রাজনৈতিক জীবনের ওপরও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যাবলি গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। অবস্থানগত কারণে বাংলায় অনার্য প্রভাব প্রাধান্যের বিষয়টি আজ প্রমাণিত সত্য। আর্য প্রবাহ পথ থেকে দূরে থাকায় বাংলার জীবন যাত্রার ওপর অনার্য সংস্কৃতি দৃঢ় হবার সুযোগ পেয়েছে। উত্তর-পশ্চিম ভারত যতটা আর্যায়িত হয়েছে বাংলা ঠিক ততোটা হয়নি। বাংলার ‘ভৌগোলিক ব্যক্তিত্বে’ তাই দেশজ উপাদান উপকরণের প্রভাব অনেক বেশি। প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় সংস্কৃতিতেও ভৌগোলিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এখানকার ধর্মীয় জীবনে “মানবতা” ও “উদারতা” প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। প্রাচীন বাংলায়— বৌদ্ধ ধর্মের আগমন, বিস্তার, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, বৌদ্ধধর্মের বিকৃতিকরণ, হিন্দু ধর্মের সাথে আপোষ, মূর্তি পূজার প্রচলন, কিংবা পরবর্তীকালে ইসলাম ধর্মের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, মাজার সংস্কৃতির প্রাধান্য, পীর, সুফিদের প্রতি ভক্তি ইত্যাদি ঘটনা বাংলার ‘আঞ্চলিক ব্যক্তিত্ব’ কেই তুলে ধরে।
বাংলার শিল্পকলার ক্ষেত্রে স্বকীয়তা ও এ অঞ্চলের ভৌগোলিক উপাদানের মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়েছে। যেমন বাংলার বিশেষ ধরনের মাটি, পোড়ামাটির শিল্প, অলংকৃত ইট তৈরিতে সাহায্য করেছে যা প্রাচীন শিল্পকলায় অনন্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। এছাড়া বাঁশের ব্যবহারও শিল্পকলায় স্বকীয়তা দান করেছে। প্রাচীন যুগ থেকেই বাঙলার অর্থনৈতিক জীবনে ভূগোলের দান অপরিসীম। কৃষি, শিল্প এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সবটুকুই ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিবেশের ওপর ছিল নির্ভরশীল।
বাংলার অবস্থান, মৌসুমী জলবায়ু, অসংখ্য নদ-নদী এ অঞ্চলকে উর্বর কৃষিক্ষেত্রে পরিণত করেছে। ধান, ইক্ষু, আম, ডালিম, কলা, গুবাক, কাঁঠাল ইত্যাদি এখানকার প্রাচীন ভূমিজাত দ্রব্য। নদী, বন্যা ও মৌসুমী জলবায়ু বিপুল ধান উৎপাদনে সহায়ক ছিল। তবে এই তিনটি বৈশিষ্ট্য বাঙালি চরিত্রে ‘আলস্য’ প্রবণতাও যুক্ত করেছে। ধান, কার্পাস, চিনি, লবণ ইত্যাদি শিল্প প্রাচীনকালে বিকশিত হয়। বাংলার বস্ত্র শিল্পের খ্যাতি প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল। এছাড়া নৌ-শিল্পেও বাংলার অগ্রগতি ছিল দৃষ্টান্তমূলক। ব্যবসা-বাণিজ্যে বাঙালি ভৌগোলিক সুবিধার সদ্ব্যবহার করেছে। নদ-নদী এবং উন্মুক্ত সমুদ্র দ্বারের কারণে বাংলা বৃহত্তর বাণিজ্য বলয়ের সঙ্গে সহজেই যুক্ত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে বাংলার ছিল গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এছাড়া আরবের বণিকেরাও এ অঞ্চলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
রাজনৈতিক দিক থেকেও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যাবলি বাংলাকে সুরক্ষিত করেছে। সর্বভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি প্রাকৃতিক বাঁধার কারণে পূর্বাঞ্চলের দিকে অভিযান প্রেরণে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। এ অঞ্চলের জলবায়ু, নদ-নদী, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া ছিল তাদের অনাগ্রহের অন্যতম কারণ।এ সুযোগে বাংলার স্বকীয় রাজনৈতিক সত্তার বিকাশ ঘটতে পেরেছে। অবশ্য সর্বভারতীয় রাজশক্তির আগ্রাসন একেবারে যে হয়নি তা নয়। অল্প সময়ের জন্য হলেও সর্বভারতীয় সাম্রাজ্যের সুফল বাংলা ভোগ করেছে। বাংলার আঞ্চলিক রাজনৈতিক শক্তিগুলো তাঁদের দীর্ঘকালীন শাসনে বাঙালি সংস্কৃতির নির্মাণে প্রত্যক্ষ ও
পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছেন।
বাংলা নামের উৎপত্তি
সুপ্রাচীনকালে বাংলার ছিল কৌমভিত্তিক চেতনা, স্বতন্ত্র্য কিছু জনপদ, ঐক্য তখনও বাংলায় আসেনি; বঙ্গ, পুন্ড্র, রাঢ়, সমতট, হরিকেল, গৌড়সহ বিভিন্ন সময়ের বাংলার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। তবে ‘বঙ্গ’ নামটিই শেষ পর্যন্ত বৃহৎ আকারে ‘বাঙ্গালা’ নামে রূপান্তরিত হয়। অনেকে বঙ্গকে চীন তিব্বতী গোষ্ঠীর শব্দ এবং এ শব্দের ‘অং’ অংশের সঙ্গে গঙ্গা, হোয়াংহো, ইয়াংসিকিয়াং ইত্যাদি নদীর নামের সম্বন্ধ ধরে অনুমান করেন যে, শব্দটির মৌলিক অর্থ ‘জলাভূমি’ এবং ‘বঙ্গ’ নামের উদ্ভব হয়েছে বাংলার অসংখ্য নদ-নদী, বিল-হাওড়ের বাস্তব ভৌগোলিক অবস্থা থেকে। মধ্যযুগের ঐতিহাসিক আবুল ফজল ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে বলেন, ‘বাঙ্গালার আদি নাম ছিল বঙ্গ। এখানকার রাজারা প্রাচীনকালে ১০ গজ উঁচু এবং ২০ গজ প্রশস্ত প্রকান্ড ‘আল’ নির্মাণ করতেন।এ থেকেই ‘বাঙ্গাল’ এবং ‘বাঙ্গালাহ’ নামের উৎপত্তি।” নদীমাতৃক, বারিবহুল এবং বন্যা ও জোয়ারের দেশে ছোটোবড়ো ‘আল’ বা ‘আইল’ বা ‘বাঁধ’ নির্মাণ করার যুক্তি একেবারে অগ্রহণযোগ্য নয়।
প্রাচীন যুগে হিন্দু-বৌদ্ধ শাসনামলে সমগ্র বাংলার ভূভাগ বিভিন্ন জনপদের নামে পরিচিত ছিল। মুসলমানদের আগমনের পর বাংলায় রাজনৈতিক ঐক্য আসে। অবশ্য সেন আমলেই প্রথম সমগ্র বাংলা রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়। ‘বাংলা’ নামের উৎপত্তির ইতিহাস খুঁজতে হলে সুলতান শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহের কথা বলতেই হবে।
বস্তুত ইলিয়াস শাহ (১৩৫২ খ্রি:) সত্যিকার অর্থে ‘বাঙ্গালা’ নাম প্রদানের কৃতিত্বের অধিকারী। একই সাথে একথাও আজ ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, ইলিয়াস শাহই বাংলার তিনটি শাসনকেন্দ্রের (লখনৌতি, সাতগাঁও, সোনারগাঁও) ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেন এবং ‘লখনৌতির মুসলিম রাজ্যকে’ ‘বাঙ্গালার মুসলিম রাজ্য’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। সম্ভবত এরপর থেকেই সমগ্র বাংলাভাষী অঞ্চলের জন্য ‘বাঙ্গালা’ নামটি ব্যবহৃত হতে থাকে। সমকালীন ভারতের ঐতিহাসিক শামস-ই-সিরাজ আফীফ ইলিয়াস শাহকে অভিহিত করেন ‘শাহ-ই-বাঙালাহ্’ বা ‘শাহ-ই-বাঙালীয়ান’ আখ্যায়।
ইলিয়াস শাহের সেনাবাহিনীকে বলা হয়েছে ‘বাঙ্গালার পাইক’। বাংলার শ্রেষ্ঠ সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের আমলে ‘বাঙ্গালা’ এবং এখানকার অধিবাসীদের ‘বাঙ্গালি’ নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে মুঘলদের আমলে বাংলা পরিচিত হয় ‘সুবা বাঙ্গালা’ হিসেবে। আরো পরে পর্তুগিজ, ইংরেজ এবং অন্যান্য ইউরোপীয়রা বাংলাকে ‘বেঙ্গালা’, ‘বেঙ্গল’ (Bengal) নামে অভিহিত করেছে। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলা অঞ্চল সারা পৃথিবীতে ‘বেঙ্গল’ হিসেবেই পরিচিত ছিল।
সারসংক্ষেপ
ভূগোল ইতিহাসের ভিত্তি। একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, জলবায়ু সামগ্রিকভাবে সেই দেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিকও রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রভাব বিস্তার করে। ভারতের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যাবলি খুবই আকর্ষণীয়। পাহাড়, পর্বত, জঙ্গল, নদী, সমুদ্র— সবকিছু মিলে ভারতের নিজস্ব ভৌগোলিক অস্তিত্ব রয়েছে। ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বিবেচনায় এবং বিশালতার কারণে ভারতকে উপমহাদেশ বলা হয়। পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত বিন্ধ্য পর্বতমালা ভারতকে সুস্পষ্ট দুটি ভাগে ভাগ করেছে— উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারত। হিমালয় পর্বত ভারতের ইতিহাসের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে। হিমালয়, বিন্ধ্য পর্বতমালা, ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, নদ-নদী ইত্যাদির প্রভাবে প্রাচীন যুগ থেকেই ভারতের ইতিহাস স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়েছে। বাংলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যাবলিও এদেশের ইতিহাসকে যুগ যুগ ধরে প্রভাবিত করেছে। বাংলারও রয়েছে পৃথক ভৌগোলিক সত্তা এবং ‘ঐতিহাসিক সত্তা’। অবস্থানগত বিবেচনায় বাংলা ভারতের সর্বপূর্বপ্রান্তে অবস্থিত। নদ-নদী, ভূ-গঠন, ব-দ্বীপ, মৌসুমী জলবায়ু, উন্মুক্ত সমুদ্রদ্বার সবকিছুই বাংলার ইতিহাসে স্বকীয় মাত্রাযুক্ত করেছে। বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনের স্বকীয়তার প্রশ্নে ভৌগোলিক প্রভাব গভীরভাবে সম্পর্কিত।
কৃতজ্ঞতা:
- চৌধুরী, আ. ম., রহমান, মো. এবং আলম, আ., (২০০১). ইতিহাস-১: উপমহাদেশ ও বাংলার ইতিহাস (আর্য সভ্যতা থেকে ১৫২৬). বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়. ISBN 984-34-1010-6.
- Wikipedia. Indian subcontinent. https://en.wikipedia.org/wiki/Indian_subcontinent
ধন্যবাদ