০৫:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

পরামর্শমূলক নির্দেশনা কাকে বলে? পরামর্শমূলক নির্দেশনার সুবিধা ও অসুবিধা কী?

প্রফেসর এম এ মাননান
  • প্রকাশ: ০৮:৪৯:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২১
  • / ৭১৭৭ বার পড়া হয়েছে


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

পরার্শমূলক নির্দেশনা (Consultative Direction)

যখন কর্মীদের সাথে পরামর্শ করে নির্দেশনা দেওয়া হয়, তখন তাকে পরামর্শমূলক নির্দেশনা বলে। আলোচনা করে সবার গ্রহণযোগ্য নির্দেশনাসমূহ ঠিক করা হয়। পরে এ নির্দেশনা লিখিত আকারে প্রেরণ করা হয়। পরামর্শমূলক নির্দেশনা সম্পর্কে Keith Davis বলেন, “সকল প্রকার আনুষ্ঠানিকতা পরিহার করে নির্বাহী কর্তৃপক্ষ কার্যের সর্বোত্তম ফলাফল অর্জনের প্রত্যাশায় অধস্তন কর্মীদেরকে সিদ্ধান্তগ্রহণে আমন্ত্রণ ও উৎসাহিত করে যে নির্দেশ প্রদান করেন, তাকে পরামর্শমূলক নির্দেশনা বলে।” এ ছাড়া স্বনামধন্য ব্যবস্থাপনা লেখক দুর্গাদাস ভট্টাচার্য্য-এর মতানুসারে, “ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তরে নিয়োজিত কর্মীবৃন্দের পরামর্শক্রমে যে নির্দেশ প্রদান করা হয় তাকে পরামর্শমূলক নির্দেশনা বলে।”

পরিশেষে বলা যায়, ব্যবস্থাপকগণ কর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতামত গ্রহণপূর্বক যে নির্দেশনা প্রদান করেন তাকে পরামর্শমূলক নির্দেশনা বলে।

পরামর্শমূলক নির্দেশনার সুবিধাসমূহ (Advantages of Consultative Direction) 

পরামর্শমূলক নির্দেশনা বিভিন্নভাবে ব্যবস্থাপকদের কর্ম-প্রচেষ্টাকে সমৃদ্ধশালী করে। এরূপ নির্দেশনার ফলে ব্যবস্থাপকদের মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতার মনোভাব হ্রাস পায়, সংগঠনে গণতন্ত্রের বিকাশ সাধিত হয়, কর্মীদের মধ্যে মালিকানাবোধের সৃষ্টি হয়, নির্দেশ বাস্তবায়নে কর্মীদের আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। নিম্নে পরামর্শমূলক নির্দেশনার সুবিধাসমূহ আলোচিত হল:

  • স্বেচ্ছাচারিতা হ্রাস (Reducing autocracy): যেসব ব্যবস্থাপক পরামর্শমূলক নির্দেশনার রীতি অনুসরণ করেন,তাদের মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতামূলক মনোভাব কমে যায়। তারা কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি আন্তরিক হয়ে ওঠে। 
  • গণতন্ত্রের চর্চা (Nurturing democracy): পরামর্শমূলক নির্দেশনা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করে। ফলে সাংগঠনিক গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। 
  • যোগাযোগে সাবলীলতা আনায়ন (Infusing smoothness in communication): পরামর্শমূলক নির্দেশনার কারণে ব্যবস্থাপক ও অধীনস্ত কর্মীরা এক টেবিলে বসে আলাপ-আলোচনা করার সুযোগ পায় বিধায় উভয় পক্ষের মধ্যে বাধাহীন যোগাযোগ সংঘটিত হয়। ফলে যোগাযোগে কার্যকর ফলাবর্তন ঘটে। 
  • মালিকানাবোধ সৃষ্টি (Creating sense of ownership): পরামর্শমূলক নির্দেশনাসমূহ তৈরির সময় কর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে বলে তাদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনার ব্যপারে এক প্রকার মালিকনাবোধ সৃষ্টি হয়। ফলে তাদের কর্ম-সম্পাদনের উন্নয়ন ঘটে। 
  • কর্মীদের মধ্যে আন্তরিকতা বৃদ্ধি (Increasing cordiality among employees): কর্মীদের পরামর্শক্রমে এ নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে। তাই কর্মীরা নির্দেশ বাস্তবায়ন করার জন্য আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসে। 
  • কার্যসন্তুষ্টি বৃদ্ধি (Increasing job satisfaction): পরামর্শমূলক নির্দেশনায় সিদ্ধান্তগ্রহণ ও অন্যান্য ব্যাপারে কর্মীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে। এর ফলে তাদের কার্যসন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়। 
  • নির্দেশনার মান উন্নয়ন ((Improving quality of direction): সকল কর্মীর সাথে আলোচনার ভিত্তিতে নির্দেশনা নির্ধারণ করা হয় বিধায় বাস্তব অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ কর্মীদের পরামর্শ নির্দেশনার মানকে উন্নত করে।
  • কর্মীদের জ্ঞানের বিকাশ সাধন (Enhancing knowledge of the employees): আলোচনা টেবিলে বিভিন্ন বিজ্ঞ কর্মী ও ব্যবস্থাপকের সাথে পারস্পরিক যোগাযোগ ঘটে। ফলে কর্মীদের পক্ষে নতুন নতুন জ্ঞান লাভের সুযোগ ঘটে; সমৃদ্ধ হয় তাদের জ্ঞানের ভান্ডার। 
  • আত্ম-প্রশিক্ষণে সহায়তাকরণ (Facilitating self-training): পরামর্শমূলক নির্দেশনায় ঊর্ধ্বতন ও অধস্তনদের মধ্যে পাস্পরিক মতবিনিময়ের সুযোগ থাকে। এর ফলে কর্মীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারে। 
  • সহযোগিতা বৃদ্ধিকরণ (Increasing cooperation): পরস্পরের সাথে মুক্ত মনে আলাপ-আলোচনার সুযোগ থাকায় ব্যবস্থাপক ও কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরূপ পরিবেশ কাজের মান উন্নয়নের সহায়ক। 
  • ব্যবস্থাপকের সময় সাশ্রয়করণ (Saving time of managers): কর্মীদের সাথে একত্রে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণে ব্যবস্থাপককে আর আলাদাভাবে তাদের নিকট নির্দেশনার ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে হয় না। ফলে একদিকে ব্যবস্থাপকের শ্রম লাঘব হয়, অন্যদিকে সময়েরও সাশ্রয় হয়। 
  • নিয়ন্ত্রণ সহজকরণ (Facilitating easy control): এক্ষেত্রে নির্দেশ প্রাপ্তির পূর্বেই কর্মীরা নির্দেশনার যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে অবহিত থাকে। ফলে কর্মীরা দক্ষতার সাথে কার্য সম্পাদন করতে পারে এবং এতে নিয়ন্ত্রণ কাজ অনেকাংশে সহজতর হয়। 

পরামর্শমূলক নির্দেশনার অসুবিধাসমূহ (Disadvantages of Consultative Direction) 

পরামর্শমূলক নির্দেশনায় কর্মীদের সাথে ব্যবস্থাপকগণ খোলামেলা আলোচনা ও পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে নির্দেশ দেন বিধায়এটি কর্মীদের পক্ষ থেকে একটি উত্তম নির্দেশনা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু এ নির্দেশনার কতিপয় অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এগুলো নিম্নে আলোচিত হলো:

  • অধীনস্ত কর্মীদের সীমিত দক্ষতা (Limited capacity of subordinates): অধীনস্ত কর্মীরা নিজ নিজ কাজে পরিপূর্ণ দক্ষ না হলে কিংবা সিদ্ধান্তগ্রহণে অংশগ্রহণ করার মত পরিপক্কতা না থাকলে পরামর্শমূলক নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। 
  • সময়-সাপেক্ষ (Time-consuming): ব্যবস্থাপককে সকল কর্মীর সাথে আলোচনা করতে হয় বলে এ নির্দেশনার পুরো প্রক্রিয়াটিই সময় সাপেক্ষ। আলোচনা একবার ফলপ্রসু না হলে একাধিকবার বসতে হয়। এতে সময়ের অপচয় ঘটে। 
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব (Delay in decision making): সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় বলে অনেক সময় সিদ্ধান্তগ্রহণে বিলম্ব ঘটে, অর্থাৎ যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। 
  • অবাধ্যতা (Disloyalty): কর্মীরা সব সময় পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার কারণে নিজেদেরকে ব্যবস্থাপকের সমতুল্য মনে করে। এরূপ মনস্তাত্ত্বিক বোধের ফলশ্রুতিতে তাদের মধ্যে অবাধ্যতা সৃষ্টি হতে পারে।
  • কর্তৃত্ব হ্রাস (Reduction of authority): কর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্দেশ প্রদান একটি রীতি হয়ে দাঁড়ালে সকল নির্দেশ আলোচনার ভিত্তিতেই জারি করতে হবে, কর্মীদের মধ্যে এমন ধারণার সৃষ্টি হয়। তাতে করে বস্তুতপক্ষে নির্বাহীর কর্তৃত্ব হ্রাসের আশংকা দেখা দেয়। 
  • ব্যয় বৃদ্ধি (Increase of cost): পরামর্শমূলক নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে হয় এবং বিভিন্ন সভা আহবান করার প্রয়োজন হয়। এতে করে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সত্যিকার অর্থেই বৃদ্ধি পায়। 
  • গোপনীয়তা প্রকাশ (Disclosure of secrecy): পরামর্শমূলক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্তগ্রহণের সময় কর্মীদের সাথে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করার প্রয়োজন হয় বলে প্রতিষ্ঠানে গোপনীয়তা বজায় রাখা সম্ভব হয় না। 
  • ভুল ধারণা (Misunderstanding): পরামর্শমূলক নির্দেশনায় অনেক সময় ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে কর্মীরা মনে করে নির্বাহী বিপদে পড়ে তাদের নিকট থেকে পরামর্শ গ্রহণ করছে। এরূপ মনোভাব তাদেরকে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

পরামর্শমূলক নির্দেশনা কাকে বলে? পরামর্শমূলক নির্দেশনার সুবিধা ও অসুবিধা কী?

প্রকাশ: ০৮:৪৯:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২১

পরার্শমূলক নির্দেশনা (Consultative Direction)

যখন কর্মীদের সাথে পরামর্শ করে নির্দেশনা দেওয়া হয়, তখন তাকে পরামর্শমূলক নির্দেশনা বলে। আলোচনা করে সবার গ্রহণযোগ্য নির্দেশনাসমূহ ঠিক করা হয়। পরে এ নির্দেশনা লিখিত আকারে প্রেরণ করা হয়। পরামর্শমূলক নির্দেশনা সম্পর্কে Keith Davis বলেন, “সকল প্রকার আনুষ্ঠানিকতা পরিহার করে নির্বাহী কর্তৃপক্ষ কার্যের সর্বোত্তম ফলাফল অর্জনের প্রত্যাশায় অধস্তন কর্মীদেরকে সিদ্ধান্তগ্রহণে আমন্ত্রণ ও উৎসাহিত করে যে নির্দেশ প্রদান করেন, তাকে পরামর্শমূলক নির্দেশনা বলে।” এ ছাড়া স্বনামধন্য ব্যবস্থাপনা লেখক দুর্গাদাস ভট্টাচার্য্য-এর মতানুসারে, “ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তরে নিয়োজিত কর্মীবৃন্দের পরামর্শক্রমে যে নির্দেশ প্রদান করা হয় তাকে পরামর্শমূলক নির্দেশনা বলে।”

পরিশেষে বলা যায়, ব্যবস্থাপকগণ কর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতামত গ্রহণপূর্বক যে নির্দেশনা প্রদান করেন তাকে পরামর্শমূলক নির্দেশনা বলে।

পরামর্শমূলক নির্দেশনার সুবিধাসমূহ (Advantages of Consultative Direction) 

পরামর্শমূলক নির্দেশনা বিভিন্নভাবে ব্যবস্থাপকদের কর্ম-প্রচেষ্টাকে সমৃদ্ধশালী করে। এরূপ নির্দেশনার ফলে ব্যবস্থাপকদের মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতার মনোভাব হ্রাস পায়, সংগঠনে গণতন্ত্রের বিকাশ সাধিত হয়, কর্মীদের মধ্যে মালিকানাবোধের সৃষ্টি হয়, নির্দেশ বাস্তবায়নে কর্মীদের আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। নিম্নে পরামর্শমূলক নির্দেশনার সুবিধাসমূহ আলোচিত হল:

  • স্বেচ্ছাচারিতা হ্রাস (Reducing autocracy): যেসব ব্যবস্থাপক পরামর্শমূলক নির্দেশনার রীতি অনুসরণ করেন,তাদের মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতামূলক মনোভাব কমে যায়। তারা কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি আন্তরিক হয়ে ওঠে। 
  • গণতন্ত্রের চর্চা (Nurturing democracy): পরামর্শমূলক নির্দেশনা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করে। ফলে সাংগঠনিক গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। 
  • যোগাযোগে সাবলীলতা আনায়ন (Infusing smoothness in communication): পরামর্শমূলক নির্দেশনার কারণে ব্যবস্থাপক ও অধীনস্ত কর্মীরা এক টেবিলে বসে আলাপ-আলোচনা করার সুযোগ পায় বিধায় উভয় পক্ষের মধ্যে বাধাহীন যোগাযোগ সংঘটিত হয়। ফলে যোগাযোগে কার্যকর ফলাবর্তন ঘটে। 
  • মালিকানাবোধ সৃষ্টি (Creating sense of ownership): পরামর্শমূলক নির্দেশনাসমূহ তৈরির সময় কর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে বলে তাদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনার ব্যপারে এক প্রকার মালিকনাবোধ সৃষ্টি হয়। ফলে তাদের কর্ম-সম্পাদনের উন্নয়ন ঘটে। 
  • কর্মীদের মধ্যে আন্তরিকতা বৃদ্ধি (Increasing cordiality among employees): কর্মীদের পরামর্শক্রমে এ নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে। তাই কর্মীরা নির্দেশ বাস্তবায়ন করার জন্য আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসে। 
  • কার্যসন্তুষ্টি বৃদ্ধি (Increasing job satisfaction): পরামর্শমূলক নির্দেশনায় সিদ্ধান্তগ্রহণ ও অন্যান্য ব্যাপারে কর্মীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে। এর ফলে তাদের কার্যসন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়। 
  • নির্দেশনার মান উন্নয়ন ((Improving quality of direction): সকল কর্মীর সাথে আলোচনার ভিত্তিতে নির্দেশনা নির্ধারণ করা হয় বিধায় বাস্তব অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ কর্মীদের পরামর্শ নির্দেশনার মানকে উন্নত করে।
  • কর্মীদের জ্ঞানের বিকাশ সাধন (Enhancing knowledge of the employees): আলোচনা টেবিলে বিভিন্ন বিজ্ঞ কর্মী ও ব্যবস্থাপকের সাথে পারস্পরিক যোগাযোগ ঘটে। ফলে কর্মীদের পক্ষে নতুন নতুন জ্ঞান লাভের সুযোগ ঘটে; সমৃদ্ধ হয় তাদের জ্ঞানের ভান্ডার। 
  • আত্ম-প্রশিক্ষণে সহায়তাকরণ (Facilitating self-training): পরামর্শমূলক নির্দেশনায় ঊর্ধ্বতন ও অধস্তনদের মধ্যে পাস্পরিক মতবিনিময়ের সুযোগ থাকে। এর ফলে কর্মীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারে। 
  • সহযোগিতা বৃদ্ধিকরণ (Increasing cooperation): পরস্পরের সাথে মুক্ত মনে আলাপ-আলোচনার সুযোগ থাকায় ব্যবস্থাপক ও কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরূপ পরিবেশ কাজের মান উন্নয়নের সহায়ক। 
  • ব্যবস্থাপকের সময় সাশ্রয়করণ (Saving time of managers): কর্মীদের সাথে একত্রে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণে ব্যবস্থাপককে আর আলাদাভাবে তাদের নিকট নির্দেশনার ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে হয় না। ফলে একদিকে ব্যবস্থাপকের শ্রম লাঘব হয়, অন্যদিকে সময়েরও সাশ্রয় হয়। 
  • নিয়ন্ত্রণ সহজকরণ (Facilitating easy control): এক্ষেত্রে নির্দেশ প্রাপ্তির পূর্বেই কর্মীরা নির্দেশনার যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে অবহিত থাকে। ফলে কর্মীরা দক্ষতার সাথে কার্য সম্পাদন করতে পারে এবং এতে নিয়ন্ত্রণ কাজ অনেকাংশে সহজতর হয়। 

পরামর্শমূলক নির্দেশনার অসুবিধাসমূহ (Disadvantages of Consultative Direction) 

পরামর্শমূলক নির্দেশনায় কর্মীদের সাথে ব্যবস্থাপকগণ খোলামেলা আলোচনা ও পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে নির্দেশ দেন বিধায়এটি কর্মীদের পক্ষ থেকে একটি উত্তম নির্দেশনা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু এ নির্দেশনার কতিপয় অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এগুলো নিম্নে আলোচিত হলো:

  • অধীনস্ত কর্মীদের সীমিত দক্ষতা (Limited capacity of subordinates): অধীনস্ত কর্মীরা নিজ নিজ কাজে পরিপূর্ণ দক্ষ না হলে কিংবা সিদ্ধান্তগ্রহণে অংশগ্রহণ করার মত পরিপক্কতা না থাকলে পরামর্শমূলক নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। 
  • সময়-সাপেক্ষ (Time-consuming): ব্যবস্থাপককে সকল কর্মীর সাথে আলোচনা করতে হয় বলে এ নির্দেশনার পুরো প্রক্রিয়াটিই সময় সাপেক্ষ। আলোচনা একবার ফলপ্রসু না হলে একাধিকবার বসতে হয়। এতে সময়ের অপচয় ঘটে। 
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব (Delay in decision making): সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় বলে অনেক সময় সিদ্ধান্তগ্রহণে বিলম্ব ঘটে, অর্থাৎ যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। 
  • অবাধ্যতা (Disloyalty): কর্মীরা সব সময় পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার কারণে নিজেদেরকে ব্যবস্থাপকের সমতুল্য মনে করে। এরূপ মনস্তাত্ত্বিক বোধের ফলশ্রুতিতে তাদের মধ্যে অবাধ্যতা সৃষ্টি হতে পারে।
  • কর্তৃত্ব হ্রাস (Reduction of authority): কর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্দেশ প্রদান একটি রীতি হয়ে দাঁড়ালে সকল নির্দেশ আলোচনার ভিত্তিতেই জারি করতে হবে, কর্মীদের মধ্যে এমন ধারণার সৃষ্টি হয়। তাতে করে বস্তুতপক্ষে নির্বাহীর কর্তৃত্ব হ্রাসের আশংকা দেখা দেয়। 
  • ব্যয় বৃদ্ধি (Increase of cost): পরামর্শমূলক নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে হয় এবং বিভিন্ন সভা আহবান করার প্রয়োজন হয়। এতে করে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সত্যিকার অর্থেই বৃদ্ধি পায়। 
  • গোপনীয়তা প্রকাশ (Disclosure of secrecy): পরামর্শমূলক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্তগ্রহণের সময় কর্মীদের সাথে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করার প্রয়োজন হয় বলে প্রতিষ্ঠানে গোপনীয়তা বজায় রাখা সম্ভব হয় না। 
  • ভুল ধারণা (Misunderstanding): পরামর্শমূলক নির্দেশনায় অনেক সময় ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে কর্মীরা মনে করে নির্বাহী বিপদে পড়ে তাদের নিকট থেকে পরামর্শ গ্রহণ করছে। এরূপ মনোভাব তাদেরকে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে।