১১:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

যোগাযোগ কাকে বলে? যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদান ও ব্যবসায়ে যোগাযোগের গুরুত্ব কী?

প্রফেসর এম এ মাননান
  • প্রকাশ: ১২:২২:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ৬৭২৫৯ বার পড়া হয়েছে

ব্যবসয়ের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পক্ষের ব্যক্তিদের সাথে ভাব, ধারণা ও তথ্যের বিভিন্ন প্রকার আদান-প্রদানকে ব্যবসায় যোগাযোগ বলে।


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

যোগাযোগ হলো উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পরস্পরের মধ্যে কোন বিষয়ে ভাব, ধারণা, মতামত, তথ্য, নির্দেশনা ইত্যাদির বিনিময়।

যোগাযোগের সংজ্ঞা

নিউম্যান ও সামার-এর মতে ‘যোগাযোগ হচ্ছে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে তথ্য, ভাব, অভিমত বা আবেগ-অনুভুতির বিনিময়’।

কুঞ্জ এবং উইরিখের মতে, যোগাযোগ হলো প্রেরকের নিকট থেকে প্রাপকের নিকট তথ্য স্থানান্তর, যে তথ্য দ্বারা প্রাপক কোন কিছু অবগত হতে পারে। এখানে শুধু তথ্যের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। 

আমেরিকান ব্যবস্থাপনা সমিতি যোগাযোগের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা দিয়েছে: ‘যোগাযোগ বলতে এমন সব আচরণই আমরা বুঝে থাকি যা কোন অর্থ বা ভাবের বিনিময় ঘটায়’। এ সংজ্ঞাটি অনেক ব্যাপক। কেননা এটিতে আচরণের বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। 

উপরের আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে, বিশেষ কোন উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একজনের নিকট থেকে অন্য জনের নিকট তথ্য, ভাব, ধারণা, সংবাদ বা মতামত প্রেরণের প্রক্রিয়াই হলো যোগাযোগ। এটি মৌখিক হতে পারে, লিখিত হতে পারে, আকার-ইঙ্গিতে হতে পারে আবার প্রযুক্তির মাধ্যমেও হতে পারে। এ পাঠে ব্যবসায়ের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে যোগাযোগের প্রক্রিয়া ও গুরুত্বের বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে। 

ব্যবসয়ের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পক্ষের ব্যক্তিদের সাথে ভাব, ধারণা ও তথ্যের বিভিন্ন প্রকার আদান-প্রদানকে ব্যবসায় যোগাযোগ বলে। ব্যবসায়ের সার্বিক সফলতা সুষ্ঠু যোগাযোগের উপরই নির্ভর করে। 

যোগাযোগের প্রক্রিয়া (Communication Process)

যে কোন প্রক্রিয়া ইনপুট দিয়ে শুরু হয় এবং আউটপুট দিয়ে শেষ হয়। যোগাযোগেও একটি নির্ধারিত প্রক্রিয়া রয়েছে। সাধারণভাবে যে পদ্ধতিতে বার্তা পাঠানো হয় তাকে যোগাযোগ প্রক্রিয়া বলে। এ প্রক্রিয়ায় দু’টি পক্ষ থাকে: প্রেরক ও প্রাপক। প্রেরক বার্তা (Message) প্রেরণ করে এবং প্রাপক বার্তা গ্রহণের পর নিজস্ব মতামতের মাধ্যমে প্রতিউত্তর দেয়, যাকে বলা হয় ‘ফিডব্যাক’ (Feedback)।

সহজ কথায় তথ্য, সংবাদ বা ধারণা প্রেরণ থেকে শুরু করে গ্রহণ পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, তাকেই যোগাযোগ প্রক্রিয়া বলা হয়। এ বিষয়ে নানা লেখক নানা ধরনের সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিচে সেগুলো দেওয়া হলো: 

অধ্যাপক Koontz & Weihrich বলেছেন, যে নির্বাচিত চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরক তার বার্তা প্রাপকের কাছে প্রেরণ করে তাকে যোগাযোগ প্রক্রিয়া বলে (Communication Process involves the sender who transmits a massage through a selected channel to the receiver)।

Kreitner-এর মতে, “Communication process is a chain made up of identifiable links. This chain includes sender, encoding, message, receiver, decoding and feedback” অর্থাৎ যোগাযোগ প্রক্রিয়া কতিপয় বিষয়ের সাথে একটি শিকলের মতো সম্পর্কযুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে প্রেরক, প্রেরক কর্তৃক প্রেরিতব্য বিষয় অনুধাবন (এনকোডিং), প্রেরণযোগ্য বার্তা (মেসেজ), বার্তা প্রেরণের জন্য চ্যানেল বা মাধ্যম, প্রাপক, প্রাপক কর্তৃক প্রাপ্ত বার্তা বুঝে নেওয়া (ডিকোডিং) ও প্রাপক কর্তৃক প্রয়োজনবোধে প্রেরকের নিকট পুনরায় বার্তা প্রেরণ (ফিডব্যাক)। যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় কতগুলো পদক্ষেপ রয়েছে। 

যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদান (Elements of Communication Process)

যে কোন প্রক্রিয়ার কতিপয় উপাদান থাকে। যোগাযোগ যেহেতু একটি প্রক্রিয়া, সেহেতু এরও কতিপয় উপাদান রয়েছে। 

নিচে যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদানসমূহের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হলো: 

  1. প্রেরক (Sender): যিনি বার্তা, ধারণা বা তথ্য অন্যের নিকট পাঠান, তাকে প্রেরক বলা হয়। তিনি চিন্তাভাবনা করে প্রাপকের কাছে কী প্রেরণ করবেন তা স্থির করেন। প্রেরকের নিকট থেকেই যোগাযোগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। 
  2. প্রেরণযোগ্য করে সাজানো (Encoding): তথ্যকে প্রেরণযোগ্য করে সাজানোই হলো এনকোডিং (বহপড়ফরহম)। প্রেরণযোগ্য করে সাজানোর পর ভাব, ধারণা বা তথ্য প্রেরকের নিকট প্রেরণ করা হয়। 
  3. বার্তা (Message): বার্তা হলো যোগাযোগের প্রাণ বা মূল বিষয়। বার্তা ছাড়া যোগাযোগ হয় না। যোগাযোগ সার্থক হতে হলে বার্তা বা সংবাদ পরিপূর্ণ হতে হবে এবং উপস্থাপন এমন হবে যেন প্রাপক সহজেই বুঝতে পারেন। আবার বার্তাটি এমন হতে হবে যাতে বিষয়টি প্রাপক ও প্রেরকের নিকট একই অর্থ বহন করে। অন্যথায় যোগাযোগ ব্যর্থ হবে।
  4. মাধ্যম (Channel): তথ্য, সংবাদ বা ধারণা একটি চ্যানেল বা মাধ্যম দিয়ে প্রেরক থেকে প্রাপকের কাছে প্রেরণ করা হয়। এটি লিখিত হতে পারে, মুখে-মুখে হতে পারে অথবা যন্ত্রের মাধ্যমেও হতে পারে। মাধ্যম হলো প্রাপকের কাছে সংবাদ পৌঁছানোর পথ বা উপায়। যেমন সরাসরি মুখোমুখী বার্তা প্রেরণ করা যায় কিংবা টেলিফোন ও মোবাইল দ্বারা বা চিঠি, টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার, ফ্যাক্স দ্বারা লিখিতভাবেও বার্তা প্রেরণ করা যায়। আবার টিভি, রেডিও ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমেও যোগাযোগ করা যায়। প্রেরক স্বীয় সুবিধা মতো ফলপ্রসূ চ্যানেল বা মাধ্যম বেছে নিবে। চ্যানেল যথাপোযুক্ত না হলে বার্তা যতো ভালোই হোক না কেন তা ব্যর্থ হতে পারে। 
  5. প্রাপক (Receiver): যাকে উদ্দেশ করে সংবাদ প্রেরিত হয় তিনি হলেন প্রাপক। সংবাদ পাওয়া মাত্রই তিনি তা নিজের মতো করে সাজিয়ে নেন বা ফবপড়ফব করেন। প্রাপকের নিকটই সংবাদ প্রেরণ করা হয়। তার হাতে সংবাদ পৌঁছানো মাত্রই একমুখীযোগাযোগ প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়। 
  6. ৬. গ্রহণযোগ্য করে সাজানো (Decoding): সংবাদ পাবার পর প্রাপক তা বোঝার চেষ্টা করেন। এজন্য তিনি গ্রহণযোগ্য করে, নিজের করে, স্বীয় ধ্যান-ধারণার আলোকে প্রাপ্ত বার্তা আপন মনে সাজিয়ে নেন। অর্থাৎ পুরো ব্যাপারটি তিনি অনুধাবনের চেষ্টা করেন। এটিকে বলা হয় প্রাপক কর্তৃক ডিকোডিং করা। 
  7. ৭. ফলাবর্তন (Feedback): প্রেরকের বার্তা প্রাপক পেয়েছেন কিনা, অর্থ বুঝেছেন কিনা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জানার জন্য ফলাবর্তন প্রয়োজন। ফলাবর্তনের মাধ্যমে তথ্য অনুধাবন, তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ সম্পর্কে প্রাপকের মনোভাব সম্পর্কে জানা যায়, বোঝা যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায়। এ ছাড়া ফলাবর্তনের মাধ্যমে প্রাপক কি ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে তাও বোঝা যায়।গৃহীত তথ্য পুরোপুরি আত্মস্থ করার পর তিনি চিন্তা করেন, প্রেরককে কি জানাবেন। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বা বার্তা সংশোধন করার অনুরোধ করে প্রেরকের কাছে তিনি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, যাকে বলা হয় ফলাবর্তন। ফলাবর্তন করার পর দ্বিমুখী যোগাযোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। প্রতিক্রিয়া জানানোর মধ্যে দিয়ে যোগাযোগ প্রক্রিয়া বৃত্তাকারে ঘুরে থাকে। ফলাবর্তন ছাড়া প্রেরক বুঝতে পারে না তার সংবাদ প্রাপক পেয়েছে কিনা, পেলেও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা। 

৮. গোলযোগ (Noise): যোগাযোগ প্রক্রিয়ার যে কোন স্তরে বিভিন্ন কারণে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে যাকে যোগাযোগের ভাষায় ‘গোলযোগ’ বলা হয়। শব্দ, অন্যদের কথাবার্তা, আশেপাশের আওয়াজ ইত্যাদি যোগাযোগে‘গোলযোগ’ সৃষ্টি করে। গোলযোগ যোগাযোগ প্রক্রিয়াকে অপ্রত্যাশিতভাবে প্রভাবিত করে। তাই সতর্ক থাকতে হবে যাতে গোলযোগ দ্বারা সংবাদ গ্রহণ বা প্রেরণে সমস্যার সৃষ্টি না হয়। 

যোগাযোগের গুরুত্ব (Importance of Communication)

মানবজীবনের প্রয়োজন পূরণের জন্য যেমন যোগাযোগ আবশ্যক, তেমনি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্যও যোগাযোগ প্রয়োজন। যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত যথাস্থানে পৌঁছে দেয়া হয়। সে কারণে ব্যক্তিজীবন, ব্যবসা ও সমাজ জীবন, ধর্মীয় এবং জাতীয় জীবনে যোগাযোগের গুরুত্ব অপরিসীম। 

নিচে যোগাযোগের গুরুত্বকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:-

  • লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য: যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যের কথা বিভিন্ন পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে সবাই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করে এবং ফলে কাম্য ফলাফল নিশ্চত করা যায়। 
  • পরিকল্পনা বাস্তবায়ন: ব্যবস্থাপনার উপরের স্তুরে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয় তা বাস্তবায়নের জন্য অধস্তন কর্মীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। আর এ বিতরণের কার্যটি যোগাযোগের মাধ্যমে করা হয়। যথাযথ যোগাযোগ ব্যতীত প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে না।
  • সমন্বয়সাধন: প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের নিয়োজিত কর্মী এবং তাদের কার্যের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়সাধনের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা।
  • নির্দেশনা: উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদেরকে নানা প্রকার নির্দেশনা মধ্যস্তর ও নিম্নস্তরের কর্মীদের নিকট প্রেরণ করতে হয়। কারণ যোগাযোগ ছাড়া কোন নির্দেশ বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ সম্ভব নয়।
  • বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা: বর্তমান যুগে প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা কর্মীদের মানবীয় দিকের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যেমন, কর্মীদের প্রেষণা প্রদান, চিত্ত বিনোদন, খেলাধূলা, শিল্প সম্পর্ক উন্নয়ন এবং কারখানার কার্য পরিবেশের উন্নয়নের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায়। যথাযথ যোগাযোগ বিদ্যমান থাকলে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা ফলপ্রসূ হয়।
  • কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি: সুষ্ঠু যোগাযোগের মাধ্যমে কর্মীরা তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও তা সম্পাদনের উত্তম পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে আগে থেকেই অবহিত হতে পারে। ফলে কর্মীদের কার্যদক্ষতা, কার্যের পরিমাণ ও গুণগতমান বৃদ্ধি পায়।
  • মনোবল বৃদ্ধি: নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের সাথে সংগঠনের সম্পর্ক নিবিড় হয়। সংগঠনের উদ্দেশ্য সাধনে তাদের কার্যের গুরুত্ব এবং অবদান সম্পর্কে জানতে পারে। এতে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়।
  • নেতৃত্বদান: প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সবক্ষেত্রেই দক্ষ নেতা থাকা সত্ত্বেও সুষ্ঠু যোগাযোগ ছাড়া নেতৃত্ব ব্যর্থ হতে বাধ্য। তিনি যোগাযোগের মাধ্যমে তার পরামর্শ ও নির্দেশ অধীনস্তদের মধ্যে প্রচার করে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করতে পারেন।
  • কর্মসন্তুষ্টি বিধান: নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে কর্মীদের সর্বোচ্চ কর্মসন্তুষ্টি বিধান করা যায়। কারণ, যোগাযোগের মাধ্যমে মালিক বা ব্যবস্থাপনার ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, কর্মপদ্ধতি ইত্যাদি কর্মীরা জানতে পারে। ফলে কর্মীদের মধ্যে উত্তম মানবিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। উভয়ের সর্বোচ্চ স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব হয়। ফলে কার্যের প্রতি আগ্রহ ও আনুগত্য বৃদ্ধিসহ কর্মীদের কর্মসন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়।
  • পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি: কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগের ফলে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমঝোতা বৃদ্ধি পায়। যোগাযোগের মাধ্যমে কর্মীরা তাদের অভাব-অভিযোগ ব্যবস্থাপকদেরকে জানাতে পারে। ফলে ব্যবস্থাপক ও কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড় হয়।

সারসংক্ষেপ

ব্যবসয়ের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পক্ষের ব্যক্তিদের সাথে ভাব, ধারণা ও তথ্যের বিভিন্ন প্রকার আদান-প্রদানকে ব্যবসায় যোগাযোগ বলে। সহজ কথায়: ভাব, ধারণা ও তথ্য আদান প্রদান বা বিনিময়কে যোগাযোগ বলে। নিউম্যান ও সামার-এর মতে, যোগাযোগ হচ্ছে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে তথ্য, ভাব, অভিমত বা আবেগ-অনুভুতির বিনিময়। আমেরিকান ব্যবস্থাপনা সমিতির মতে, যোগাযোগ বলতে এমন সব আচরণই আমরা বুঝে থাকি যা কোন অর্থ বা ভাবের বিনিময় ঘটায়। কুঞ্জ এবং উয়িরিচের মতে, যোগাযোগ হলো প্রেরকের নিকট থেকে প্রাপকের নিকট তথ্য স্থানান্তর, যে তথ্য দ্বারা প্রাপক কোন বিষয় অবগত হতে পারে।

বিষয়:

শেয়ার করুন

2 thoughts on “যোগাযোগ কাকে বলে? যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদান ও ব্যবসায়ে যোগাযোগের গুরুত্ব কী?

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

যোগাযোগ কাকে বলে? যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদান ও ব্যবসায়ে যোগাযোগের গুরুত্ব কী?

প্রকাশ: ১২:২২:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

যোগাযোগ হলো উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পরস্পরের মধ্যে কোন বিষয়ে ভাব, ধারণা, মতামত, তথ্য, নির্দেশনা ইত্যাদির বিনিময়।

যোগাযোগের সংজ্ঞা

নিউম্যান ও সামার-এর মতে ‘যোগাযোগ হচ্ছে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে তথ্য, ভাব, অভিমত বা আবেগ-অনুভুতির বিনিময়’।

কুঞ্জ এবং উইরিখের মতে, যোগাযোগ হলো প্রেরকের নিকট থেকে প্রাপকের নিকট তথ্য স্থানান্তর, যে তথ্য দ্বারা প্রাপক কোন কিছু অবগত হতে পারে। এখানে শুধু তথ্যের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। 

আমেরিকান ব্যবস্থাপনা সমিতি যোগাযোগের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা দিয়েছে: ‘যোগাযোগ বলতে এমন সব আচরণই আমরা বুঝে থাকি যা কোন অর্থ বা ভাবের বিনিময় ঘটায়’। এ সংজ্ঞাটি অনেক ব্যাপক। কেননা এটিতে আচরণের বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। 

উপরের আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে, বিশেষ কোন উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একজনের নিকট থেকে অন্য জনের নিকট তথ্য, ভাব, ধারণা, সংবাদ বা মতামত প্রেরণের প্রক্রিয়াই হলো যোগাযোগ। এটি মৌখিক হতে পারে, লিখিত হতে পারে, আকার-ইঙ্গিতে হতে পারে আবার প্রযুক্তির মাধ্যমেও হতে পারে। এ পাঠে ব্যবসায়ের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে যোগাযোগের প্রক্রিয়া ও গুরুত্বের বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে। 

ব্যবসয়ের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পক্ষের ব্যক্তিদের সাথে ভাব, ধারণা ও তথ্যের বিভিন্ন প্রকার আদান-প্রদানকে ব্যবসায় যোগাযোগ বলে। ব্যবসায়ের সার্বিক সফলতা সুষ্ঠু যোগাযোগের উপরই নির্ভর করে। 

যোগাযোগের প্রক্রিয়া (Communication Process)

যে কোন প্রক্রিয়া ইনপুট দিয়ে শুরু হয় এবং আউটপুট দিয়ে শেষ হয়। যোগাযোগেও একটি নির্ধারিত প্রক্রিয়া রয়েছে। সাধারণভাবে যে পদ্ধতিতে বার্তা পাঠানো হয় তাকে যোগাযোগ প্রক্রিয়া বলে। এ প্রক্রিয়ায় দু’টি পক্ষ থাকে: প্রেরক ও প্রাপক। প্রেরক বার্তা (Message) প্রেরণ করে এবং প্রাপক বার্তা গ্রহণের পর নিজস্ব মতামতের মাধ্যমে প্রতিউত্তর দেয়, যাকে বলা হয় ‘ফিডব্যাক’ (Feedback)।

সহজ কথায় তথ্য, সংবাদ বা ধারণা প্রেরণ থেকে শুরু করে গ্রহণ পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, তাকেই যোগাযোগ প্রক্রিয়া বলা হয়। এ বিষয়ে নানা লেখক নানা ধরনের সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিচে সেগুলো দেওয়া হলো: 

অধ্যাপক Koontz & Weihrich বলেছেন, যে নির্বাচিত চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরক তার বার্তা প্রাপকের কাছে প্রেরণ করে তাকে যোগাযোগ প্রক্রিয়া বলে (Communication Process involves the sender who transmits a massage through a selected channel to the receiver)।

Kreitner-এর মতে, “Communication process is a chain made up of identifiable links. This chain includes sender, encoding, message, receiver, decoding and feedback” অর্থাৎ যোগাযোগ প্রক্রিয়া কতিপয় বিষয়ের সাথে একটি শিকলের মতো সম্পর্কযুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে প্রেরক, প্রেরক কর্তৃক প্রেরিতব্য বিষয় অনুধাবন (এনকোডিং), প্রেরণযোগ্য বার্তা (মেসেজ), বার্তা প্রেরণের জন্য চ্যানেল বা মাধ্যম, প্রাপক, প্রাপক কর্তৃক প্রাপ্ত বার্তা বুঝে নেওয়া (ডিকোডিং) ও প্রাপক কর্তৃক প্রয়োজনবোধে প্রেরকের নিকট পুনরায় বার্তা প্রেরণ (ফিডব্যাক)। যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় কতগুলো পদক্ষেপ রয়েছে। 

যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদান (Elements of Communication Process)

যে কোন প্রক্রিয়ার কতিপয় উপাদান থাকে। যোগাযোগ যেহেতু একটি প্রক্রিয়া, সেহেতু এরও কতিপয় উপাদান রয়েছে। 

নিচে যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদানসমূহের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হলো: 

  1. প্রেরক (Sender): যিনি বার্তা, ধারণা বা তথ্য অন্যের নিকট পাঠান, তাকে প্রেরক বলা হয়। তিনি চিন্তাভাবনা করে প্রাপকের কাছে কী প্রেরণ করবেন তা স্থির করেন। প্রেরকের নিকট থেকেই যোগাযোগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। 
  2. প্রেরণযোগ্য করে সাজানো (Encoding): তথ্যকে প্রেরণযোগ্য করে সাজানোই হলো এনকোডিং (বহপড়ফরহম)। প্রেরণযোগ্য করে সাজানোর পর ভাব, ধারণা বা তথ্য প্রেরকের নিকট প্রেরণ করা হয়। 
  3. বার্তা (Message): বার্তা হলো যোগাযোগের প্রাণ বা মূল বিষয়। বার্তা ছাড়া যোগাযোগ হয় না। যোগাযোগ সার্থক হতে হলে বার্তা বা সংবাদ পরিপূর্ণ হতে হবে এবং উপস্থাপন এমন হবে যেন প্রাপক সহজেই বুঝতে পারেন। আবার বার্তাটি এমন হতে হবে যাতে বিষয়টি প্রাপক ও প্রেরকের নিকট একই অর্থ বহন করে। অন্যথায় যোগাযোগ ব্যর্থ হবে।
  4. মাধ্যম (Channel): তথ্য, সংবাদ বা ধারণা একটি চ্যানেল বা মাধ্যম দিয়ে প্রেরক থেকে প্রাপকের কাছে প্রেরণ করা হয়। এটি লিখিত হতে পারে, মুখে-মুখে হতে পারে অথবা যন্ত্রের মাধ্যমেও হতে পারে। মাধ্যম হলো প্রাপকের কাছে সংবাদ পৌঁছানোর পথ বা উপায়। যেমন সরাসরি মুখোমুখী বার্তা প্রেরণ করা যায় কিংবা টেলিফোন ও মোবাইল দ্বারা বা চিঠি, টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার, ফ্যাক্স দ্বারা লিখিতভাবেও বার্তা প্রেরণ করা যায়। আবার টিভি, রেডিও ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমেও যোগাযোগ করা যায়। প্রেরক স্বীয় সুবিধা মতো ফলপ্রসূ চ্যানেল বা মাধ্যম বেছে নিবে। চ্যানেল যথাপোযুক্ত না হলে বার্তা যতো ভালোই হোক না কেন তা ব্যর্থ হতে পারে। 
  5. প্রাপক (Receiver): যাকে উদ্দেশ করে সংবাদ প্রেরিত হয় তিনি হলেন প্রাপক। সংবাদ পাওয়া মাত্রই তিনি তা নিজের মতো করে সাজিয়ে নেন বা ফবপড়ফব করেন। প্রাপকের নিকটই সংবাদ প্রেরণ করা হয়। তার হাতে সংবাদ পৌঁছানো মাত্রই একমুখীযোগাযোগ প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়। 
  6. ৬. গ্রহণযোগ্য করে সাজানো (Decoding): সংবাদ পাবার পর প্রাপক তা বোঝার চেষ্টা করেন। এজন্য তিনি গ্রহণযোগ্য করে, নিজের করে, স্বীয় ধ্যান-ধারণার আলোকে প্রাপ্ত বার্তা আপন মনে সাজিয়ে নেন। অর্থাৎ পুরো ব্যাপারটি তিনি অনুধাবনের চেষ্টা করেন। এটিকে বলা হয় প্রাপক কর্তৃক ডিকোডিং করা। 
  7. ৭. ফলাবর্তন (Feedback): প্রেরকের বার্তা প্রাপক পেয়েছেন কিনা, অর্থ বুঝেছেন কিনা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জানার জন্য ফলাবর্তন প্রয়োজন। ফলাবর্তনের মাধ্যমে তথ্য অনুধাবন, তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ সম্পর্কে প্রাপকের মনোভাব সম্পর্কে জানা যায়, বোঝা যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায়। এ ছাড়া ফলাবর্তনের মাধ্যমে প্রাপক কি ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে তাও বোঝা যায়।গৃহীত তথ্য পুরোপুরি আত্মস্থ করার পর তিনি চিন্তা করেন, প্রেরককে কি জানাবেন। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বা বার্তা সংশোধন করার অনুরোধ করে প্রেরকের কাছে তিনি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, যাকে বলা হয় ফলাবর্তন। ফলাবর্তন করার পর দ্বিমুখী যোগাযোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। প্রতিক্রিয়া জানানোর মধ্যে দিয়ে যোগাযোগ প্রক্রিয়া বৃত্তাকারে ঘুরে থাকে। ফলাবর্তন ছাড়া প্রেরক বুঝতে পারে না তার সংবাদ প্রাপক পেয়েছে কিনা, পেলেও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা। 

৮. গোলযোগ (Noise): যোগাযোগ প্রক্রিয়ার যে কোন স্তরে বিভিন্ন কারণে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে যাকে যোগাযোগের ভাষায় ‘গোলযোগ’ বলা হয়। শব্দ, অন্যদের কথাবার্তা, আশেপাশের আওয়াজ ইত্যাদি যোগাযোগে‘গোলযোগ’ সৃষ্টি করে। গোলযোগ যোগাযোগ প্রক্রিয়াকে অপ্রত্যাশিতভাবে প্রভাবিত করে। তাই সতর্ক থাকতে হবে যাতে গোলযোগ দ্বারা সংবাদ গ্রহণ বা প্রেরণে সমস্যার সৃষ্টি না হয়। 

যোগাযোগের গুরুত্ব (Importance of Communication)

মানবজীবনের প্রয়োজন পূরণের জন্য যেমন যোগাযোগ আবশ্যক, তেমনি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্যও যোগাযোগ প্রয়োজন। যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত যথাস্থানে পৌঁছে দেয়া হয়। সে কারণে ব্যক্তিজীবন, ব্যবসা ও সমাজ জীবন, ধর্মীয় এবং জাতীয় জীবনে যোগাযোগের গুরুত্ব অপরিসীম। 

নিচে যোগাযোগের গুরুত্বকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:-

  • লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য: যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যের কথা বিভিন্ন পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে সবাই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করে এবং ফলে কাম্য ফলাফল নিশ্চত করা যায়। 
  • পরিকল্পনা বাস্তবায়ন: ব্যবস্থাপনার উপরের স্তুরে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয় তা বাস্তবায়নের জন্য অধস্তন কর্মীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। আর এ বিতরণের কার্যটি যোগাযোগের মাধ্যমে করা হয়। যথাযথ যোগাযোগ ব্যতীত প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে না।
  • সমন্বয়সাধন: প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের নিয়োজিত কর্মী এবং তাদের কার্যের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়সাধনের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা।
  • নির্দেশনা: উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদেরকে নানা প্রকার নির্দেশনা মধ্যস্তর ও নিম্নস্তরের কর্মীদের নিকট প্রেরণ করতে হয়। কারণ যোগাযোগ ছাড়া কোন নির্দেশ বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ সম্ভব নয়।
  • বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা: বর্তমান যুগে প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা কর্মীদের মানবীয় দিকের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যেমন, কর্মীদের প্রেষণা প্রদান, চিত্ত বিনোদন, খেলাধূলা, শিল্প সম্পর্ক উন্নয়ন এবং কারখানার কার্য পরিবেশের উন্নয়নের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায়। যথাযথ যোগাযোগ বিদ্যমান থাকলে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা ফলপ্রসূ হয়।
  • কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি: সুষ্ঠু যোগাযোগের মাধ্যমে কর্মীরা তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও তা সম্পাদনের উত্তম পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে আগে থেকেই অবহিত হতে পারে। ফলে কর্মীদের কার্যদক্ষতা, কার্যের পরিমাণ ও গুণগতমান বৃদ্ধি পায়।
  • মনোবল বৃদ্ধি: নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের সাথে সংগঠনের সম্পর্ক নিবিড় হয়। সংগঠনের উদ্দেশ্য সাধনে তাদের কার্যের গুরুত্ব এবং অবদান সম্পর্কে জানতে পারে। এতে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়।
  • নেতৃত্বদান: প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সবক্ষেত্রেই দক্ষ নেতা থাকা সত্ত্বেও সুষ্ঠু যোগাযোগ ছাড়া নেতৃত্ব ব্যর্থ হতে বাধ্য। তিনি যোগাযোগের মাধ্যমে তার পরামর্শ ও নির্দেশ অধীনস্তদের মধ্যে প্রচার করে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করতে পারেন।
  • কর্মসন্তুষ্টি বিধান: নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে কর্মীদের সর্বোচ্চ কর্মসন্তুষ্টি বিধান করা যায়। কারণ, যোগাযোগের মাধ্যমে মালিক বা ব্যবস্থাপনার ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, কর্মপদ্ধতি ইত্যাদি কর্মীরা জানতে পারে। ফলে কর্মীদের মধ্যে উত্তম মানবিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। উভয়ের সর্বোচ্চ স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব হয়। ফলে কার্যের প্রতি আগ্রহ ও আনুগত্য বৃদ্ধিসহ কর্মীদের কর্মসন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়।
  • পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি: কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগের ফলে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমঝোতা বৃদ্ধি পায়। যোগাযোগের মাধ্যমে কর্মীরা তাদের অভাব-অভিযোগ ব্যবস্থাপকদেরকে জানাতে পারে। ফলে ব্যবস্থাপক ও কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড় হয়।

সারসংক্ষেপ

ব্যবসয়ের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পক্ষের ব্যক্তিদের সাথে ভাব, ধারণা ও তথ্যের বিভিন্ন প্রকার আদান-প্রদানকে ব্যবসায় যোগাযোগ বলে। সহজ কথায়: ভাব, ধারণা ও তথ্য আদান প্রদান বা বিনিময়কে যোগাযোগ বলে। নিউম্যান ও সামার-এর মতে, যোগাযোগ হচ্ছে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে তথ্য, ভাব, অভিমত বা আবেগ-অনুভুতির বিনিময়। আমেরিকান ব্যবস্থাপনা সমিতির মতে, যোগাযোগ বলতে এমন সব আচরণই আমরা বুঝে থাকি যা কোন অর্থ বা ভাবের বিনিময় ঘটায়। কুঞ্জ এবং উয়িরিচের মতে, যোগাযোগ হলো প্রেরকের নিকট থেকে প্রাপকের নিকট তথ্য স্থানান্তর, যে তথ্য দ্বারা প্রাপক কোন বিষয় অবগত হতে পারে।