১০:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

স্কলারশিপ: সুইডেনে সরকারি স্কলারশিপে পড়তে চাইলে যা প্রয়োজন

রুপম সাহা
  • প্রকাশ: ১১:৪৩:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ১৭৪০ বার পড়া হয়েছে


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন অন্যতম। শান্তি, প্রযুক্তি এবং উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধার কারনে সকলের কাছেই সুপরিচিত সুইডেন। বিশ্ব বিখ্যাত নোবেল পুরস্কারের দেশ সুইডেন। এছাড়াও গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভলভো, ফ্যাশন রিটেইল স্টোর এইচএন্ডএম, ফার্নিচার স্টোর আইকিয়া কিংবা হালের স্পটিফাই এসবই একটি দেশের কথাই মনে করিয়ে দেয়, আর তা হলো সুইডেন। এছাড়াও প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী সুইডেনে পাড়ি জমায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য। আধুনিক ও বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা, উচ্চতর মাণ, বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা, সুইডিশ ইউনিভার্সিটিগুলোর বিশ্ব র‍্যাংকিং-এ উপরের দিকের স্থান এসবের কারনেই ইউরোপসহ পুরো বিশ্বের শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ সুইডেন। বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী সুইডেনে পাড়ি জমায় স্নাতকোত্তর কিংবা অন্যান্য উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে।

তবে ইউরোপের অন্য অনেক দেশের মত সুইডেনে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি ফ্রি নয়। ফলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অনেক টাকা টিউশন ফি দিয়ে সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে হয়। অথচ প্রতি বছর সুইডিশ সরকার বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪২টি দেশের শিক্ষার্থী যারা স্নাতকোত্তর পড়তে সুইডেন আসে তাদের সুইডিশ ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে বৃত্তি প্রদান করে থাকে। ইউরোপের অন্যতম সম্মানজনক সেই বৃত্তিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে টিউশন ফিস, পড়াকালীন সময়ে সুইডেনে থাকা-খাওয়ার খরচ, পরিবারের সকলের জন্য স্বাস্থ্য বীমা, এককালীন যাতায়াত খরচ এবং ভিসা আবেদন খরচসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা। তাছাড়াও এই বৃত্তি পাওয়া প্রত্যেক শিক্ষার্থী সুইডেনের নেটওয়ার্ক ফর ফিউচার গ্লোবাল লিডারস এর সদস্যপদ পায় যার মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থী পড়ালেখার সময় সুইডেনের অবস্থানকালীন বিভিন্ন শিক্ষাসফরসহ নানবিধ আত্ম-উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। এসআই স্কলারশিপ নামে পরিচিত এই বৃত্তি ছাড়াও বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রয়েছে নিজস্ব কিছু বৃত্তি যাতে সাধারণত শিক্ষার্থীদের কোন টিউশন ফিস দিতে হয় না। তবে আজ আমি এই লেখায় কিভাবে  এসআই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যায় এবং তা পেতে হলে কী কী বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হয় তাতে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।

সুইডেনে স্কলারশিপে আবেদন প্রক্রিয়া

এসআই স্কলারশিপের জন্য আবেদনের প্রথম ধাপ হচ্ছে সুইডেনের ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করা। সুইডেনে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন প্রক্রিয়া একটি সমন্বিত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। সকল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের universityadmission.se এই লিঙ্কে গিয়ে নিজের সকল বিস্তারিত তথ্য দিয়ে একাউন্ট খুলে আবেদন করতে হয়। সুইডেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নুন্যতম ব্যাচেলর এবং আইইএলটিএস-এ ব্যান্ড স্কোর ৬.৫ থাকা বাধ্যতামূলক।

এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিষয়ের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন হতে পারে। যেমন, ব্যবসায় সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আবেদন করার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নিকট জিম্যাট কিংবা জিআরই স্কোর চাওয়া হতে পারে। এজন্য অবশ্যই আবেদন করার পূর্বে প্রতিটি বিষয়ের নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তাসমূহ চেক করে নেওয়া উচিত।

সুইডিশ কাউন্সিল ফর হায়ার এডুকেশন

আবেদন খরচ ৯০০ সুইডিশ ক্রোনার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় নয় হাজার টাকার সমমান। এই টাকায় একজন আবেদনকারী সর্বোচ্চ চারটি বিষয়ে কিংবা চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবে। অনলাইনে আবেদনের পর শিক্ষার্থীকে তার ব্যাচেলরের ডিগ্রীর সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সুইডেনে ডাকযোগে University Admission এর ঠিকানায় পাঠাতে হবে। আগামী অগাস্ট ২০২২ সেশনের জন্য ভর্তির আবেদনের শেষ সময় ১৭ জানুয়ারি।

সুইডেনে স্কলারশিপ সংক্রান্ত বিষয়াদি

এসআই স্কলারশিপটি মূলত দেওয়া হয় আবেদনকারির লিডারশীপ সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে। প্রতিবছর বিশ্বের ৪২টি দেশের ৩৫০ জন শিক্ষার্থীকে এই বৃত্তি প্রদান করা হয় আবেদনকারী সংখ্যার তুলনায় যাতে সফলতার হার মাত্র ৪%-৬%। আর তাই প্রচন্ড প্রতিযোগিতামূলক হয় এই বৃত্তির সিলেকশন পদ্ধতি। এই বৃত্তির জন্য আবেদনের নুন্যতম যোগ্যতা হলো আবেদনকারীর অবশ্যই তিন হাজার ঘন্টার কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে যা সময়কাল হিসাব করলে প্রায় দুই বছরের মত এবং তাতে লিডারশীপ এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হবে। এই অভিজ্ঞতা আবেদনকারী খন্ডকালীন কিংবা পূর্ণকালীন দুই ধরনের অভিজ্ঞতা থেকেই দেখাতে পারবে। একজন আবেদনকারীকে অবশ্যই আবেদন করার সময় নিন্মোক্ত বিষয়াদি খেয়াল রাখা জরুরি।

সামঞ্জস্যতা

আবেদনকারীর অবশ্যই ব্যাচেলরের বিষয়, কাজের অভিজ্ঞতা এবং আবেদনকৃত বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকতে হবে। এজন্য আবেদনের সময় চারটি একই ধরনের বিষয়ে আবেদন করা ভালো। শুধু তাই নয়, আবেদনকারীর কাজের অভিজ্ঞতা এবং আবেদনকৃত বিষয় অবশ্যই জাতিসংঘের তিরিশটির যেকোনো একটি Sustainable Development Goals বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)–এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হয়। এই ক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে তা হলো এসডিজি গোলগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে কোন গোলটির সাথে আবেদনকারীর কাজের অভিজ্ঞতা মিলে তা খুঁজে বের করা।

মোটিভেশনাল লেটার

এটি আবেদন প্রক্রিয়ার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কর্তৃপক্ষের দেওয়া ফরম্যাটে সাধারণত এক হাজার ক্যারেক্টারের মধ্যে তা লিখতে হয়। এই অংশে আবেদনকারীর কাজের অভিজ্ঞতা কিভাবে আবেদনকারীর আবেদনকৃত বিষয়ের সাথে মিলে এবং উক্ত বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন কিভাবে আবেদনকারীকে তার কর্মক্ষেত্রে এসডিজি গোল পূরণে অবদান রাখতে সাহায্য করবে তা ফুটিয়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই স্কলারশিপের আবেদন প্রক্রিয়ায় কোথাও কোন পরীক্ষা কিংবা ইন্টারভিউ হয় না। সুতরাং এই মোটিভেশন লেটারই আবেদনকারির পক্ষে নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ।

সিভি

কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুযায়ী লিখতে হয়। কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ততা তুলে ধরার উপযুক্ত মাধ্যম এই সিভি। উল্লেখ্য যে, এই সকল কাজের সম্পৃক্ততা এই বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সাথে সেসব ক্ষেত্রে লিডারশীপ অভিজ্ঞতা থাকলে তা এই বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই সহায়ক হয়।

রেফারেন্স লেটার এবং ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স লেটার

রেফারেন্স লেটারের ক্ষেত্রে যারা আবেদনকারীকে ব্যাক্তিগতভাবে চিনেন তাদের থেকে রেফারেন্স নেওয়া উত্তম। উদাহরণস্বরূপ, কর্মক্ষেত্রে সরাসরি সুপারভাইজার কিংবা প্রজেক্ট পেপার লিখে থাকলে সেই প্রজেক্ট পেপারের সুপারভাইজার থেকে রেফারেন্স লেটার নেওয়া যেতে পারে। অপরপক্ষে, কর্মক্ষেত্র থেকে ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স লেটার নেওয়ার পাশাপাশি অন্তত একটা এক্সপেরিয়েন্স লেটার সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠন থেকে নেওয়া উত্তম। কর্তৃপক্ষের দেওয়া ফরম্যাটে এসব লেটার নিতে হয় এবং সংগঠনের সীল থাকতে হয়।

নির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যমুখী পরিকল্পনা

সর্বোপরি, আবেদনকারীর আবেদনের প্রতিটা অংশই একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং নির্দিষ্ট হওয়া হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এসআই স্কলারশিপের মূল উদ্দেশ্য সেসব শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা যারা এসডিজি গোল অর্জনে ভূমিকা রেখে চলেছে। সুতরাং আবেদনকারীর পুরো আবেদনটিতে এসডিজি সম্পর্কিত কর্মপ্রক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্দিষ্ট এবং বাস্তববাদী হওয়া উচিত। সেই সাথে এতে আবেদনকারীর যোগ্যতা থাকা যতটা জরুরি সেই যোগ্যতা তার আবেদনের ফুটিয়ে তোলাও ঠিক ততটাই জরুরি।

উপর্যুক্ত বিষয়াদি ছাড়াও এসআই স্কলারশিপ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে si.se ওয়েবসাইটে। এছাড়াও বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে যেমন, Bangladeshi Incoming Students in Sweden (BISS) এসব ব্যপারে যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায়। আমার আবেদনের ক্ষেত্রে উক্ত গ্রুপের ফাইল সেকশন এবং বিভিন্ন পোস্টের তথ্যসমূহ যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। অগাস্ট ২০২২ সেশনের শিক্ষার্থীদের এসআই স্কলারশিপের জন্য আবেদনের সময় ১০-২৮ ফেব্রুয়ারি। তবে একটা মানসম্পন্ন এবং সফল আবেদনের জন্য তার আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

রুপম সাহা

স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত এবং সুইডিশ ইন্সটিটিউট স্কলার, উমিও ইউনিভার্সিটি, উমিও, সুইডেন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

স্কলারশিপ: সুইডেনে সরকারি স্কলারশিপে পড়তে চাইলে যা প্রয়োজন

প্রকাশ: ১১:৪৩:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১

ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন অন্যতম। শান্তি, প্রযুক্তি এবং উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধার কারনে সকলের কাছেই সুপরিচিত সুইডেন। বিশ্ব বিখ্যাত নোবেল পুরস্কারের দেশ সুইডেন। এছাড়াও গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভলভো, ফ্যাশন রিটেইল স্টোর এইচএন্ডএম, ফার্নিচার স্টোর আইকিয়া কিংবা হালের স্পটিফাই এসবই একটি দেশের কথাই মনে করিয়ে দেয়, আর তা হলো সুইডেন। এছাড়াও প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী সুইডেনে পাড়ি জমায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য। আধুনিক ও বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা, উচ্চতর মাণ, বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা, সুইডিশ ইউনিভার্সিটিগুলোর বিশ্ব র‍্যাংকিং-এ উপরের দিকের স্থান এসবের কারনেই ইউরোপসহ পুরো বিশ্বের শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ সুইডেন। বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী সুইডেনে পাড়ি জমায় স্নাতকোত্তর কিংবা অন্যান্য উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে।

তবে ইউরোপের অন্য অনেক দেশের মত সুইডেনে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি ফ্রি নয়। ফলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অনেক টাকা টিউশন ফি দিয়ে সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে হয়। অথচ প্রতি বছর সুইডিশ সরকার বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪২টি দেশের শিক্ষার্থী যারা স্নাতকোত্তর পড়তে সুইডেন আসে তাদের সুইডিশ ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে বৃত্তি প্রদান করে থাকে। ইউরোপের অন্যতম সম্মানজনক সেই বৃত্তিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে টিউশন ফিস, পড়াকালীন সময়ে সুইডেনে থাকা-খাওয়ার খরচ, পরিবারের সকলের জন্য স্বাস্থ্য বীমা, এককালীন যাতায়াত খরচ এবং ভিসা আবেদন খরচসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা। তাছাড়াও এই বৃত্তি পাওয়া প্রত্যেক শিক্ষার্থী সুইডেনের নেটওয়ার্ক ফর ফিউচার গ্লোবাল লিডারস এর সদস্যপদ পায় যার মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থী পড়ালেখার সময় সুইডেনের অবস্থানকালীন বিভিন্ন শিক্ষাসফরসহ নানবিধ আত্ম-উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। এসআই স্কলারশিপ নামে পরিচিত এই বৃত্তি ছাড়াও বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রয়েছে নিজস্ব কিছু বৃত্তি যাতে সাধারণত শিক্ষার্থীদের কোন টিউশন ফিস দিতে হয় না। তবে আজ আমি এই লেখায় কিভাবে  এসআই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যায় এবং তা পেতে হলে কী কী বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হয় তাতে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।

সুইডেনে স্কলারশিপে আবেদন প্রক্রিয়া

এসআই স্কলারশিপের জন্য আবেদনের প্রথম ধাপ হচ্ছে সুইডেনের ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করা। সুইডেনে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন প্রক্রিয়া একটি সমন্বিত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। সকল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের universityadmission.se এই লিঙ্কে গিয়ে নিজের সকল বিস্তারিত তথ্য দিয়ে একাউন্ট খুলে আবেদন করতে হয়। সুইডেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নুন্যতম ব্যাচেলর এবং আইইএলটিএস-এ ব্যান্ড স্কোর ৬.৫ থাকা বাধ্যতামূলক।

এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিষয়ের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন হতে পারে। যেমন, ব্যবসায় সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আবেদন করার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নিকট জিম্যাট কিংবা জিআরই স্কোর চাওয়া হতে পারে। এজন্য অবশ্যই আবেদন করার পূর্বে প্রতিটি বিষয়ের নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তাসমূহ চেক করে নেওয়া উচিত।

সুইডিশ কাউন্সিল ফর হায়ার এডুকেশন

আবেদন খরচ ৯০০ সুইডিশ ক্রোনার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় নয় হাজার টাকার সমমান। এই টাকায় একজন আবেদনকারী সর্বোচ্চ চারটি বিষয়ে কিংবা চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবে। অনলাইনে আবেদনের পর শিক্ষার্থীকে তার ব্যাচেলরের ডিগ্রীর সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সুইডেনে ডাকযোগে University Admission এর ঠিকানায় পাঠাতে হবে। আগামী অগাস্ট ২০২২ সেশনের জন্য ভর্তির আবেদনের শেষ সময় ১৭ জানুয়ারি।

সুইডেনে স্কলারশিপ সংক্রান্ত বিষয়াদি

এসআই স্কলারশিপটি মূলত দেওয়া হয় আবেদনকারির লিডারশীপ সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে। প্রতিবছর বিশ্বের ৪২টি দেশের ৩৫০ জন শিক্ষার্থীকে এই বৃত্তি প্রদান করা হয় আবেদনকারী সংখ্যার তুলনায় যাতে সফলতার হার মাত্র ৪%-৬%। আর তাই প্রচন্ড প্রতিযোগিতামূলক হয় এই বৃত্তির সিলেকশন পদ্ধতি। এই বৃত্তির জন্য আবেদনের নুন্যতম যোগ্যতা হলো আবেদনকারীর অবশ্যই তিন হাজার ঘন্টার কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে যা সময়কাল হিসাব করলে প্রায় দুই বছরের মত এবং তাতে লিডারশীপ এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হবে। এই অভিজ্ঞতা আবেদনকারী খন্ডকালীন কিংবা পূর্ণকালীন দুই ধরনের অভিজ্ঞতা থেকেই দেখাতে পারবে। একজন আবেদনকারীকে অবশ্যই আবেদন করার সময় নিন্মোক্ত বিষয়াদি খেয়াল রাখা জরুরি।

সামঞ্জস্যতা

আবেদনকারীর অবশ্যই ব্যাচেলরের বিষয়, কাজের অভিজ্ঞতা এবং আবেদনকৃত বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকতে হবে। এজন্য আবেদনের সময় চারটি একই ধরনের বিষয়ে আবেদন করা ভালো। শুধু তাই নয়, আবেদনকারীর কাজের অভিজ্ঞতা এবং আবেদনকৃত বিষয় অবশ্যই জাতিসংঘের তিরিশটির যেকোনো একটি Sustainable Development Goals বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)–এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হয়। এই ক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে তা হলো এসডিজি গোলগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে কোন গোলটির সাথে আবেদনকারীর কাজের অভিজ্ঞতা মিলে তা খুঁজে বের করা।

মোটিভেশনাল লেটার

এটি আবেদন প্রক্রিয়ার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কর্তৃপক্ষের দেওয়া ফরম্যাটে সাধারণত এক হাজার ক্যারেক্টারের মধ্যে তা লিখতে হয়। এই অংশে আবেদনকারীর কাজের অভিজ্ঞতা কিভাবে আবেদনকারীর আবেদনকৃত বিষয়ের সাথে মিলে এবং উক্ত বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন কিভাবে আবেদনকারীকে তার কর্মক্ষেত্রে এসডিজি গোল পূরণে অবদান রাখতে সাহায্য করবে তা ফুটিয়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই স্কলারশিপের আবেদন প্রক্রিয়ায় কোথাও কোন পরীক্ষা কিংবা ইন্টারভিউ হয় না। সুতরাং এই মোটিভেশন লেটারই আবেদনকারির পক্ষে নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ।

সিভি

কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুযায়ী লিখতে হয়। কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ততা তুলে ধরার উপযুক্ত মাধ্যম এই সিভি। উল্লেখ্য যে, এই সকল কাজের সম্পৃক্ততা এই বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সাথে সেসব ক্ষেত্রে লিডারশীপ অভিজ্ঞতা থাকলে তা এই বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই সহায়ক হয়।

রেফারেন্স লেটার এবং ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স লেটার

রেফারেন্স লেটারের ক্ষেত্রে যারা আবেদনকারীকে ব্যাক্তিগতভাবে চিনেন তাদের থেকে রেফারেন্স নেওয়া উত্তম। উদাহরণস্বরূপ, কর্মক্ষেত্রে সরাসরি সুপারভাইজার কিংবা প্রজেক্ট পেপার লিখে থাকলে সেই প্রজেক্ট পেপারের সুপারভাইজার থেকে রেফারেন্স লেটার নেওয়া যেতে পারে। অপরপক্ষে, কর্মক্ষেত্র থেকে ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স লেটার নেওয়ার পাশাপাশি অন্তত একটা এক্সপেরিয়েন্স লেটার সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠন থেকে নেওয়া উত্তম। কর্তৃপক্ষের দেওয়া ফরম্যাটে এসব লেটার নিতে হয় এবং সংগঠনের সীল থাকতে হয়।

নির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যমুখী পরিকল্পনা

সর্বোপরি, আবেদনকারীর আবেদনের প্রতিটা অংশই একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং নির্দিষ্ট হওয়া হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এসআই স্কলারশিপের মূল উদ্দেশ্য সেসব শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা যারা এসডিজি গোল অর্জনে ভূমিকা রেখে চলেছে। সুতরাং আবেদনকারীর পুরো আবেদনটিতে এসডিজি সম্পর্কিত কর্মপ্রক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্দিষ্ট এবং বাস্তববাদী হওয়া উচিত। সেই সাথে এতে আবেদনকারীর যোগ্যতা থাকা যতটা জরুরি সেই যোগ্যতা তার আবেদনের ফুটিয়ে তোলাও ঠিক ততটাই জরুরি।

উপর্যুক্ত বিষয়াদি ছাড়াও এসআই স্কলারশিপ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে si.se ওয়েবসাইটে। এছাড়াও বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে যেমন, Bangladeshi Incoming Students in Sweden (BISS) এসব ব্যপারে যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায়। আমার আবেদনের ক্ষেত্রে উক্ত গ্রুপের ফাইল সেকশন এবং বিভিন্ন পোস্টের তথ্যসমূহ যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। অগাস্ট ২০২২ সেশনের শিক্ষার্থীদের এসআই স্কলারশিপের জন্য আবেদনের সময় ১০-২৮ ফেব্রুয়ারি। তবে একটা মানসম্পন্ন এবং সফল আবেদনের জন্য তার আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।