০৩:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

মুভি রিভিউ: সোনাদা সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্র ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’

মু. মিজানুর রহমান মিজান
  • প্রকাশ: ০৪:৪৭:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মার্চ ২০২১
  • / ১১৪৭ বার পড়া হয়েছে

গুপ্তধনের সন্ধানে হইচই প্রিমিয়ার পাবলিসিটি


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

সিনেমায় আসার আগে ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি বলছিলেন তিনি বাংলা সিনেমার জন্য নতুন কিছু রেখে যেতে চান। অর্থাৎ এমন কিছু নিয়ে আসতে চেয়েছেন বাংলা সিনেমার পর্দায় যা তখনের আগ পর্যন্ত কেউ করে দেখাতে পারেননি। তবে তিনি এমন কি নতুন এনেছেন সেটি আমি ঠিক করে না বলতে পারলেও ব্যোমকেশ বা কাকাবাবুর মতো চরিত্রকে টেক্কা দেয়ার জন্য যে সোনাদা চরিত্রকে আবিষ্কার করেছেন সেটি বলা যায়। পাশাপাশি গুপ্তধন খোঁজার মতো বিশাল দায়িত্ব যিনি ঘাড়ে তুলেছেন তাঁর গুণকির্তন আর বিশেষভাবে করার প্রয়োজন দেখছি না। তিনি গুপ্তধনের সন্ধানে বেশ খেটেছেন।

সোনাদা হলো একজন ইতিহাসের প্রফেসর যে সাত বছর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে দেশে ফিরেছে। খুবই বিচক্ষণ এবং অভিযানপ্রিয় চরিত্র। এই চরিত্রের আসল নাম হলো সুবর্ণ সেন। সোনাদার সহযোগী দুটো চরিত্র হলো আবীর এবং ঝিনুক। আবীর হলো সুবর্ণ সেনের ভাতিজা, আইনের ছাত্র। এই আবীরের কারণেই সুবর্ণ সেনের সোনাদা নামধারণ। সম্পর্কে প্রফেসর সুবর্ণ আবীরের কাকা হলেও সে দাদা বা ভাই বলেই সম্বোধন করতে পছন্দ করে যা দেখানো হয় গল্পের শুরুতেই। আর ঝিনুক হলো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের ছাত্রী, আবীরের বান্ধবী এবং লাভ ইন্টেরেস্ট যাদের বাড়ি হলো আবীরের মামাবাড়ি মণিকান্তপুরে। সোনাদার সাথে সাথে যেন আবীর আর ঝিনুক মাঝেই মাঝেই বিচক্ষণতার পরিচয় রাখছে কিন্তু খাবার পেটুক আবীরের থেকে ঝিনুকই যেন বেশি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়।

ছোট্ট করে বলে নিচ্ছি মিস্টার ধ্রুব এই তিন চরিত্রের প্রথম কিস্তি অর্থাৎ ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ ফিল্মের জন্য কাস্ট করেছেন যথাক্রমে আবীর চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী এবং ইশা সাহাকে। আমার কাছে তিনটি চরিত্র যেমন খুবই পছন্দ হয়েছে তেমনি চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলার জন্য এই তিন অভিনেতা-অভিনেত্রীকেও চরিত্র অনুযায়ী পারফেক্ট মনে হয়েছে।

ধ্রুব ব্যানার্জি এই সিনেমায় দর্শকদের নিয়ে যান ৩৫০ বছর পেছনে। যখন বেশ কিছু ঘটনা ও দুর্ঘটনার জন্ম দিয়ে সম্রাট শাহজাহানকে বন্দী করে আওরঙ্গজেব মসনদে বসেন এবং শাহ সুজা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন আরাকানে। আর এখান থেকেই ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু দাশমুন্সি নিজেদের কল্পনাকে ব্যবহার করেছেন; গুপ্তধনের অভিযানে নামিয়ে দিয়েছেন সোনাদাকে।

আবীর শহুরে ছেলে, গ্রাম খুব একটা পছন্দ না। ওর মামা ওকে বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে ডাকেন কিন্তু সে হেঁয়ালি মনে তা সব সময় প্রত্যাখ্যান করে চলে। কিন্তু এবার সোনাদার আগমনে ভোজনপ্রিয় আবীর মণিকান্তপুর যেতে চাইলো। বাকি ঘটনা মণিকান্তপুরের ৩৫০ বছরের পুরোনো সেই বাড়ি, পুরাকীর্তি এবং জঙ্গলেই সমাপ্ত হয়েছে। মুভির লোকেশন দারুণ ছিল।

আবীরের মামা হরিনারায়ণ সিংহ, চরিত্রটি করেছেন গৌতম ঘোষ, রহস্যময়ী কিছু ধাঁধা রেখে গেছে আর সেই ধাঁধাগুলো সমাধান করে সোনাদা। শুধু ধাঁধার সমাধানই নয় সোনাদাসহ আবীর ঝিনুককে সামলাতে হয়েছে এলাকায় মাথা গজীয়ে ওঠা দশানন্দা। এই দশানন্দার পূর্ব পুরুষ এই সিংহ বাড়ি কর্মচারী বা এমন কিছু ছিল তবে এখন সে এই বাড়িটির দখল নিতে চায়। এ জন্যই বিভিন্ন সময় সে এ বাড়ির মানুষজনকে নানান রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। গল্প থেকে বোঝা যায় হরিনারায়ণকেও ভূতের ভয় দেখিয়ে মারা হয়েছে। তবে তাঁর মৃত্যুর ঠিক পূর্বে একটি চিঠিতে আবীরকে পহেলা ধাঁধা বলে যায় এবং সেই ধাঁধারই সমাধান করতে গিয়ে শুরু হয় প্রফেসর সুবর্ণ সেন ওরফে সোনাদার অভিযান।

গল্পের বাকি অংশে সোনাদার আরো কিছু ধাঁধার সমাধান, আবীর-ঝিনুকের খুনসুটি, খাবারদাবার নিয়ে আবীরের আগ্রহ ও সোনাদার স্যাটায়ার, বাঙ্গালির মেহমানদারিত্ব, অ্যান্টাগনিস্ট দশাননন্দার বুক কাঁপানো উপস্থিতি ইত্যাদি এই সিনেমাকে এমন কিছু মুহুর্ত যোগ করে দিয়েছে যা নিঃসন্দেহে সবার ভালো লাগবে।

গল্পের সোনাদা চরিত্রে বেশ মানাসই অভিনয় করেছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়। অবশ্য এ অভিনেতার অভিনয় গুণ নিয়ে বেশি কিছু বলার দরকার নেই। যখন যেমন চরিত্র তিনি পান তাতে শতভাগ দিয়ে পরিচালকের ভরসার দাম রাখেন এবং দর্শককে করেন মুগ্ধ। গুপ্তধনের সন্ধানে মুভিতেও এর বাইরে কিছু হয়নি। তবে আবীর চরিত্রটি নিয়ে আমার অভিযোগ রয়েছে অর্জুন চক্রবর্তিকে নিয়ে। অর্জুনের চরিত্রটি একটু চঞ্চল ও হেঁয়ালিতে ভরা সে গল্পেই দেখা যায় যার কাস্টিংয়ে অর্জুনকে ঠিকঠাক লেগেছে তবে মাঝেমধ্যেই মনে হয়েছে সে ওভারএক্টিং করে ফেলছে; অবশ্য ছোটোখাটো কয়েকটি জায়গা বাদ দিলে বলা যায় খুব ভালো কাজ করেছেন অর্জুন। কিন্তু ঝিনুক চরিত্রে পরিচালকের ইশা সাহাকে বাছাই করা, চরিত্রের সাথে মিলিয়ে তাকে উপস্থাপন এবং তাঁর অভিনয় নিয়ে আমার কছে কোনো অভাব ধরা পড়েনি বা অতিরিক্ত কিছু চোখে লাগেনি বরং উচ্চস্বরে প্রশংসার যোগ্য। মাঝে মাঝেতো ঝিনুকের পাশে আবীরকে বাদ রেখে আমি নিজেকে কল্পনা করছিলাম!

দশানন্দা চরিত্রে উজ্জ্বল ছিলেন রজতাভ দত্ত। ভিলেন হিসেবে রজতাভ দত্ত যে কত ভয়ংকর অভিনয় করেন তা নিয়ে আর কি লেখার আছে। যদি পর্দায় না দেখিয়ে এই গল্প কাগজের পাতায় পড়ানো হতো তাহলে এই দশানন্দার নেতিবাচক চরিত্রকে কেউ গণনায় আনতেন না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, এরপরও পর্দায় রজতাভ দত্তকে না নিয়ে অন্য কাউকে নিয়ে আসা হলেও দর্শক হিসাবে আমার কতটুকু মনে থাকতো সে জানা নেই। তবে মিস্টার দত্ত অপ্রধান একটি এন্টাগনিস্ট ক্যারেক্টারকে করেছেন উজ্জ্বলতর এবং আলোচনায় আনতে সক্ষম হয়েছেন।

গল্প, চিত্রনাট্য, অভিনয়, চিত্রগ্রহন, চিত্র সম্পাদনা সবই দারুণ ছিল কিন্তু মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছিল ক্যামেরার কোণ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কোনো সংলাপবিশেষ নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা না থাকলেও সুবর্ণ সেনের করা তাঁর ছাত্রীর বানান ভুলের বিষয়টিকে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে, ইতোমধ্যে যারা সিনেমাটি দেখেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই টের পেয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত গান রাঙিয়ে দিয়ে যাও বিক্রম ঘোষের আয়োজনে ইমন চক্রবর্তি তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী গলায় চমৎকারভাবেই গাইলেন যাতে সাবলীলভাবে ঠোঁট মেলাতে ব্যর্থ বলা যায় ইশাকে এ সিনেমার গুপ্তধন হিস্ট্রি র‍্যাপটিও ছিল দারুণ। আমি যখন কোনো সিনেমা দেখি তখন সাধারণত শেষে আসা ক্রেডিট লাইন্স পড়িনা, বিরক্ত লাগে। কিন্তু শুভেন্দু দাশমুন্সির লেখা হিস্ট্রি র‍্যাপটি বিক্রম ঘোষের আয়োজনে বিক্রম ঘোষেরই গলায় এই র‍্যাপের জন্য শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত স্ক্রিন থেকে নিজেকে সরাইনি।

এসভিএফ এর ব্যানের নির্মিত ধুর্ব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নির্মিত ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ সিনেমা আমার ভালো লেগেছি কি মন্দ লেগেছে সেটি কি বলে দেবার প্রয়োজন আছে? ছবিটি না দেখে থাকলে এখনি দেখতে পারেন।

চলচ্চিত্রগুপ্তধনের সন্ধানে
পরিচালনাধ্রুব বন্দোপাধ্যায়
অভিনয়আবীর চট্টোপাধ্যায়, ইশা সাহা, অর্জুন চক্রবর্তী, কমলেস্বর মুখার্জী, রজতাভ দত্ত ও আরও অনেকে
প্রযোজনাএসভিএফ
মুক্তিএপ্রিল ২৭, ২০১৮
সংগীতবিক্রম ঘোষ
চিত্রধারণসৌমিক হালদার
সম্পাদনাসঞ্জীব কুমার দত্ত

সোনাদা সিরিজের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ চলচ্চিত্রের রিভিউ পড়ুন এখানে

অনলাইনে গুপ্তধনের সন্ধানে দেখুন: অ্যামাজন হইচই প্ল্যাটফর্মে

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মু. মিজানুর রহমান মিজান

মু. মিজানুর রহমান মিজান একজন স্বাধীন শিক্ষামূলক লেখক। তিনি শিক্ষা গবেষণায় বেশ আগ্রহী। যৌথভাবে কিছু গবেষণায়ও অংশ নিয়েছেন।

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

মুভি রিভিউ: সোনাদা সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্র ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’

প্রকাশ: ০৪:৪৭:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মার্চ ২০২১

সিনেমায় আসার আগে ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি বলছিলেন তিনি বাংলা সিনেমার জন্য নতুন কিছু রেখে যেতে চান। অর্থাৎ এমন কিছু নিয়ে আসতে চেয়েছেন বাংলা সিনেমার পর্দায় যা তখনের আগ পর্যন্ত কেউ করে দেখাতে পারেননি। তবে তিনি এমন কি নতুন এনেছেন সেটি আমি ঠিক করে না বলতে পারলেও ব্যোমকেশ বা কাকাবাবুর মতো চরিত্রকে টেক্কা দেয়ার জন্য যে সোনাদা চরিত্রকে আবিষ্কার করেছেন সেটি বলা যায়। পাশাপাশি গুপ্তধন খোঁজার মতো বিশাল দায়িত্ব যিনি ঘাড়ে তুলেছেন তাঁর গুণকির্তন আর বিশেষভাবে করার প্রয়োজন দেখছি না। তিনি গুপ্তধনের সন্ধানে বেশ খেটেছেন।

সোনাদা হলো একজন ইতিহাসের প্রফেসর যে সাত বছর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে দেশে ফিরেছে। খুবই বিচক্ষণ এবং অভিযানপ্রিয় চরিত্র। এই চরিত্রের আসল নাম হলো সুবর্ণ সেন। সোনাদার সহযোগী দুটো চরিত্র হলো আবীর এবং ঝিনুক। আবীর হলো সুবর্ণ সেনের ভাতিজা, আইনের ছাত্র। এই আবীরের কারণেই সুবর্ণ সেনের সোনাদা নামধারণ। সম্পর্কে প্রফেসর সুবর্ণ আবীরের কাকা হলেও সে দাদা বা ভাই বলেই সম্বোধন করতে পছন্দ করে যা দেখানো হয় গল্পের শুরুতেই। আর ঝিনুক হলো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের ছাত্রী, আবীরের বান্ধবী এবং লাভ ইন্টেরেস্ট যাদের বাড়ি হলো আবীরের মামাবাড়ি মণিকান্তপুরে। সোনাদার সাথে সাথে যেন আবীর আর ঝিনুক মাঝেই মাঝেই বিচক্ষণতার পরিচয় রাখছে কিন্তু খাবার পেটুক আবীরের থেকে ঝিনুকই যেন বেশি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়।

ছোট্ট করে বলে নিচ্ছি মিস্টার ধ্রুব এই তিন চরিত্রের প্রথম কিস্তি অর্থাৎ ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ ফিল্মের জন্য কাস্ট করেছেন যথাক্রমে আবীর চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী এবং ইশা সাহাকে। আমার কাছে তিনটি চরিত্র যেমন খুবই পছন্দ হয়েছে তেমনি চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলার জন্য এই তিন অভিনেতা-অভিনেত্রীকেও চরিত্র অনুযায়ী পারফেক্ট মনে হয়েছে।

ধ্রুব ব্যানার্জি এই সিনেমায় দর্শকদের নিয়ে যান ৩৫০ বছর পেছনে। যখন বেশ কিছু ঘটনা ও দুর্ঘটনার জন্ম দিয়ে সম্রাট শাহজাহানকে বন্দী করে আওরঙ্গজেব মসনদে বসেন এবং শাহ সুজা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন আরাকানে। আর এখান থেকেই ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু দাশমুন্সি নিজেদের কল্পনাকে ব্যবহার করেছেন; গুপ্তধনের অভিযানে নামিয়ে দিয়েছেন সোনাদাকে।

আবীর শহুরে ছেলে, গ্রাম খুব একটা পছন্দ না। ওর মামা ওকে বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে ডাকেন কিন্তু সে হেঁয়ালি মনে তা সব সময় প্রত্যাখ্যান করে চলে। কিন্তু এবার সোনাদার আগমনে ভোজনপ্রিয় আবীর মণিকান্তপুর যেতে চাইলো। বাকি ঘটনা মণিকান্তপুরের ৩৫০ বছরের পুরোনো সেই বাড়ি, পুরাকীর্তি এবং জঙ্গলেই সমাপ্ত হয়েছে। মুভির লোকেশন দারুণ ছিল।

আবীরের মামা হরিনারায়ণ সিংহ, চরিত্রটি করেছেন গৌতম ঘোষ, রহস্যময়ী কিছু ধাঁধা রেখে গেছে আর সেই ধাঁধাগুলো সমাধান করে সোনাদা। শুধু ধাঁধার সমাধানই নয় সোনাদাসহ আবীর ঝিনুককে সামলাতে হয়েছে এলাকায় মাথা গজীয়ে ওঠা দশানন্দা। এই দশানন্দার পূর্ব পুরুষ এই সিংহ বাড়ি কর্মচারী বা এমন কিছু ছিল তবে এখন সে এই বাড়িটির দখল নিতে চায়। এ জন্যই বিভিন্ন সময় সে এ বাড়ির মানুষজনকে নানান রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। গল্প থেকে বোঝা যায় হরিনারায়ণকেও ভূতের ভয় দেখিয়ে মারা হয়েছে। তবে তাঁর মৃত্যুর ঠিক পূর্বে একটি চিঠিতে আবীরকে পহেলা ধাঁধা বলে যায় এবং সেই ধাঁধারই সমাধান করতে গিয়ে শুরু হয় প্রফেসর সুবর্ণ সেন ওরফে সোনাদার অভিযান।

গল্পের বাকি অংশে সোনাদার আরো কিছু ধাঁধার সমাধান, আবীর-ঝিনুকের খুনসুটি, খাবারদাবার নিয়ে আবীরের আগ্রহ ও সোনাদার স্যাটায়ার, বাঙ্গালির মেহমানদারিত্ব, অ্যান্টাগনিস্ট দশাননন্দার বুক কাঁপানো উপস্থিতি ইত্যাদি এই সিনেমাকে এমন কিছু মুহুর্ত যোগ করে দিয়েছে যা নিঃসন্দেহে সবার ভালো লাগবে।

গল্পের সোনাদা চরিত্রে বেশ মানাসই অভিনয় করেছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়। অবশ্য এ অভিনেতার অভিনয় গুণ নিয়ে বেশি কিছু বলার দরকার নেই। যখন যেমন চরিত্র তিনি পান তাতে শতভাগ দিয়ে পরিচালকের ভরসার দাম রাখেন এবং দর্শককে করেন মুগ্ধ। গুপ্তধনের সন্ধানে মুভিতেও এর বাইরে কিছু হয়নি। তবে আবীর চরিত্রটি নিয়ে আমার অভিযোগ রয়েছে অর্জুন চক্রবর্তিকে নিয়ে। অর্জুনের চরিত্রটি একটু চঞ্চল ও হেঁয়ালিতে ভরা সে গল্পেই দেখা যায় যার কাস্টিংয়ে অর্জুনকে ঠিকঠাক লেগেছে তবে মাঝেমধ্যেই মনে হয়েছে সে ওভারএক্টিং করে ফেলছে; অবশ্য ছোটোখাটো কয়েকটি জায়গা বাদ দিলে বলা যায় খুব ভালো কাজ করেছেন অর্জুন। কিন্তু ঝিনুক চরিত্রে পরিচালকের ইশা সাহাকে বাছাই করা, চরিত্রের সাথে মিলিয়ে তাকে উপস্থাপন এবং তাঁর অভিনয় নিয়ে আমার কছে কোনো অভাব ধরা পড়েনি বা অতিরিক্ত কিছু চোখে লাগেনি বরং উচ্চস্বরে প্রশংসার যোগ্য। মাঝে মাঝেতো ঝিনুকের পাশে আবীরকে বাদ রেখে আমি নিজেকে কল্পনা করছিলাম!

দশানন্দা চরিত্রে উজ্জ্বল ছিলেন রজতাভ দত্ত। ভিলেন হিসেবে রজতাভ দত্ত যে কত ভয়ংকর অভিনয় করেন তা নিয়ে আর কি লেখার আছে। যদি পর্দায় না দেখিয়ে এই গল্প কাগজের পাতায় পড়ানো হতো তাহলে এই দশানন্দার নেতিবাচক চরিত্রকে কেউ গণনায় আনতেন না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, এরপরও পর্দায় রজতাভ দত্তকে না নিয়ে অন্য কাউকে নিয়ে আসা হলেও দর্শক হিসাবে আমার কতটুকু মনে থাকতো সে জানা নেই। তবে মিস্টার দত্ত অপ্রধান একটি এন্টাগনিস্ট ক্যারেক্টারকে করেছেন উজ্জ্বলতর এবং আলোচনায় আনতে সক্ষম হয়েছেন।

গল্প, চিত্রনাট্য, অভিনয়, চিত্রগ্রহন, চিত্র সম্পাদনা সবই দারুণ ছিল কিন্তু মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছিল ক্যামেরার কোণ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কোনো সংলাপবিশেষ নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা না থাকলেও সুবর্ণ সেনের করা তাঁর ছাত্রীর বানান ভুলের বিষয়টিকে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে, ইতোমধ্যে যারা সিনেমাটি দেখেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই টের পেয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত গান রাঙিয়ে দিয়ে যাও বিক্রম ঘোষের আয়োজনে ইমন চক্রবর্তি তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী গলায় চমৎকারভাবেই গাইলেন যাতে সাবলীলভাবে ঠোঁট মেলাতে ব্যর্থ বলা যায় ইশাকে এ সিনেমার গুপ্তধন হিস্ট্রি র‍্যাপটিও ছিল দারুণ। আমি যখন কোনো সিনেমা দেখি তখন সাধারণত শেষে আসা ক্রেডিট লাইন্স পড়িনা, বিরক্ত লাগে। কিন্তু শুভেন্দু দাশমুন্সির লেখা হিস্ট্রি র‍্যাপটি বিক্রম ঘোষের আয়োজনে বিক্রম ঘোষেরই গলায় এই র‍্যাপের জন্য শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত স্ক্রিন থেকে নিজেকে সরাইনি।

এসভিএফ এর ব্যানের নির্মিত ধুর্ব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নির্মিত ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ সিনেমা আমার ভালো লেগেছি কি মন্দ লেগেছে সেটি কি বলে দেবার প্রয়োজন আছে? ছবিটি না দেখে থাকলে এখনি দেখতে পারেন।

চলচ্চিত্রগুপ্তধনের সন্ধানে
পরিচালনাধ্রুব বন্দোপাধ্যায়
অভিনয়আবীর চট্টোপাধ্যায়, ইশা সাহা, অর্জুন চক্রবর্তী, কমলেস্বর মুখার্জী, রজতাভ দত্ত ও আরও অনেকে
প্রযোজনাএসভিএফ
মুক্তিএপ্রিল ২৭, ২০১৮
সংগীতবিক্রম ঘোষ
চিত্রধারণসৌমিক হালদার
সম্পাদনাসঞ্জীব কুমার দত্ত

সোনাদা সিরিজের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ চলচ্চিত্রের রিভিউ পড়ুন এখানে

অনলাইনে গুপ্তধনের সন্ধানে দেখুন: অ্যামাজন হইচই প্ল্যাটফর্মে