কিটো ডায়েট নয়, সুষম খাবার উত্তম
- প্রকাশ: ০১:৫৫:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
- / ১১০৩ বার পড়া হয়েছে
আজকাল অনেকেই কিটো ডায়েটে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। একসময় শিশুদের মৃগী রোগ চিকিৎসায় কিটো ডায়েট ব্যবহার করা হতো।
গত কয়েক বছরে কিটো ডায়েট জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও এ পদ্ধতি মেনে চলা ভীষণ কঠিন ও বিপজ্জনক। শরীরের ওজন কমানো ও ডায়াবেটিস চিকিৎসায় কিটো ডায়েটের প্রভাব নিয়ে এখনো পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি।
কিটোসিস হলো শরীরের যকৃতে সংঘটিত এক ধরনের মেটাবলিক বিক্রিয়া। এ মেটাবলিক প্রক্রিয়ায় কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার পরিবর্তে ফ্যাট বা চর্বিকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কিটোন বডিতে রূপান্তর করা হয়।
কিটোসিসের মাধ্যমে ফ্যাট থেকে উৎপন্ন এসব কিটোন বডিকে পরবর্তী সময়ে ভেঙে শরীরের জন্য ক্যালরি বা শক্তি উৎপাদন করা হয়। কিটো ডায়েটের মাধ্যমে শরীরের ৭৫ শতাংশ ক্যালরি আসতে হবে ফ্যাট থেকে, যেখানে স্বাভাবিক খাবার খেলে ফ্যাট থেকে ক্যালরি আসার কথা মাত্র ২০-৩৫ শতাংশ।
এত ক্যালরি ফ্যাট থেকে নেওয়া কষ্টসাধ্য বিধায় শর্করা থেকেও আমাদের ক্যালরি নিতে হয়। একজন স্বাভাবিক-সুস্থ মানুষ তার মোট ক্যালরির ৪৫-৬৫ শতাংশ নিয়ে থাকে শর্করা থেকে। বাকি ২০-৩০ শতাংশ ক্যালরি আসে প্রোটিন থেকে।
কিটো ডায়েট মানে শর্করাবিহীন খাবার নয়। কিটো ডায়েট মানে শর্করাজাতীয় খাবার কম খেয়ে শরীরের বাকি প্রয়োজনীয় ক্যালরি প্রোটিন ও ফ্যাট থেকে গ্রহণ করা। শর্করা না খেয়ে বা একদম কম খেয়ে ৭৫ শতাংশ ক্যালরি ফ্যাট থেকে গ্রহণ করা বিপজ্জনক ও দুঃসাধ্য ব্যাপার।
মনে রাখবেন, সব প্রোটিন যেমন ভালো নয়, তেমনি সব ফ্যাটও শরীরের জন্য উপযোগী নয়। শরীরের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পাওয়াও দুষ্কর। যেমন-সম্পৃক্ত চর্বি বেশি খেলে অনেক প্রাণঘাতী রোগের সৃষ্টি হতে পারে। কিটো ডায়েট গ্রহণের জন্য যারা পরামর্শ দেবেন, তাদের যথেষ্ট জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
আর যারা কিটো ডায়েট খাবেন, তাদেরও খুবই সতর্ক থাকতে হবে। শরীরের ওপর কিটো ডায়েটের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে কিনা তাও মনিটর করতে হবে।
দেখা গেছে, কিটো ডায়েট প্র্যাকটিস করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হঠাৎ করে শর্করার পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমিয়ে শরীরকে ফ্যাটের ওপর নির্ভরশীল করে তুলতে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। যেমন- মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, অবসাদ, ক্লান্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি।
কেউ যদি কিটো ডায়েট প্র্যাকটিস করার ক্ষেত্রে শর্করার অভাব পূরণ করতে গিয়ে বেশি পরিমাণে ডিম, মাংস, পনির, বাটারজাতীয় চর্বি খান, তবে সেক্ষেত্রে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। ক্রোনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য কিটো ডায়েট বিপজ্জনক হতে পারে।
কিটো ডায়েটে ফাইবার বা আঁশ কম থাকে। আঁশশূন্যতা কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিটো ডায়েট ডায়াবেটিসে সুগার লেভেল কমায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে সুগার লেভেল অনেক কমে যেতে পারে।
কিটো ডায়েটের কারণে ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ অ্যাডভেঞ্চারিজমে নেমে পড়বেন না। কিটো ডায়েট ছাড়াও প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরের ওজন ও সুগার লেভেল কমানোর অনেক পন্থা আছে।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং শরীরের ওপর অত্যাচারের কারণে কোনো না কোনো সময় অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি হওয়ার আগেই সাবধান হলে জীবন হবে সুস্থ, সুন্দর ও উপভোগ্য।
অজ্ঞতা, অসচেতনতা, অবহেলা ও ছোটখাটো ভুলের জন্য আমরা অনেক সময় বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হই। যদি আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করেন, সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান, ধূমপান বর্জন করেন, প্রয়োজনীয় ঘুম, পর্যাপ্ত বিশ্রামসহ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করেন এবং বদভ্যাস ত্যাগ করেন, নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে আপনি অনেক সুস্থ থাকবেন। সুস্থ থাকা আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত। সুস্থ মানুষ পরম সুখী।
বেশিরভাগ অসুস্থতার কারণ আমরা নিজেরাই। আপনি যদি কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে এর কারণ খুঁজতে চেষ্টা করুন। দেখবেন শরীরের প্রতি হয়তো আপনি যথাযথ যত্ন নেননি, অথবা শরীরের প্রতি অবহেলা করেছেন বা কোনো না কোনো ছোট বা বড় ভুলভ্রান্তি করে বসেছেন।
তবে জটিলতার কারণে কোনো কোনো রোগের প্রকৃত কারণ হয়তো আপনি খুঁজে পাবেন না। একটু সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করে চিন্তা করলে বেশিরভাগ রোগের ক্ষেত্রে কারণগুলো স্পষ্ট বুঝতে পারবেন। ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসের মতো সাধারণ কিছু রোগের কথা ধরা যাক। এসব রোগ সৃষ্টি হয় দূষিত অস্বাস্থ্যকর পানি ও খাবার থেকে।
ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া হয় বিভিন্ন প্রজাতির জীবাণুবাহিত মশার কামড় থেকে। যদিও ক্যানসারের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে, তারপরও বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, ধূমপান ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান কারণ। জেনেটিক ডায়াবেটিস ছাড়া অন্য ডায়াবেটিসের অনেক কারণের অন্যতম হলো মাত্রাতিরিক্ত শর্করাজাতীয় খাবার খাওয়া এবং ব্যায়াম না করা।
শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ অতিমাত্রায় ভাত, রুটি, চিনি, কোল্ড ড্রিংক, আইসক্রিম খাওয়াসহ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করা। নিয়মিত ব্যায়াম করলে, সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেলে, ধূমপান বর্জন করলে, প্রয়োজনীয় ঘুম, পর্যাপ্ত বিশ্রামসহ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করলে, বদভ্যাস ত্যাগ করলে এবং নিয়ম মেনে চললে মানুষের স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি ৮০ শতাংশ, ডায়াবেটিসের ৯০ শতাংশ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে যায়।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে আমাদের অসংখ্য রোগের শিকার হতে হচ্ছে। আমরা যদি আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারতাম, তাহলে আমাদের এসব অনাকাঙ্ক্ষিত রোগের শিকার হতে হতো না, চিকিৎসকের কাছে দৌড়াতে হতো না এবং ওষুধেরও প্রয়োজন হতো না। তাই আমাদের সুস্থ থাকার সব রকম পথ খুঁজতে হবে এবং সুস্থ থাকতে হবে।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে এ লেখায় কিছু পরামর্শ উপস্থাপন করছি। আশা করি, সেগুলো মেনে চললে সুফল পাবেন। সুস্থ শরীরের জন্য সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও ক্যানসারজাতীয় প্রাণঘাতী রোগের কারণ বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে মাত্রাতিরিক্ত ঘি, বাটার, ডালডা, চর্বি বা প্রচুর সম্পৃক্ত তেলসমৃদ্ধ পোলাও, রোস্ট, বিরিয়ানি, খাসি ও গরুর গোশত খাওয়া। ফ্রায়েডচিকেন, পিৎজা, বার্গার, ফ্রেঞ্চফ্রাইসহ সব রকম জাঙ্কফুড মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব খাবারে রয়েছে প্রচুর লবণ, চিনি, মেয়নেজ, সোডিয়াম গ্লুটামেট ও টাট্রাজিনজাতীয় বিতর্কিত খাদ্যোপকরণ। জাঙ্কফুডে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও আঁশ কম থাকে।
প্রচুর চিনি ও চর্বিসমৃদ্ধ জাঙ্কফুড ওজন বেড়ে যাওয়াসহ উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, ক্যানসারের মতো বহু জটিল রোগের কারণ। কম ক্যালরিযুক্ত এবং বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ পরিমিত খাবার খাবেন। আমাদের প্রতিবেলায় এক বা দুই কাপের বেশি ভাত, দুটি আটার বা পাউরুটির বেশি দরকার হয় না।
আপনি যদি ভাত বেশি খান; বাটার, পনির, ডিম, দুধ কম খান, তাহলে শরীরে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। কারণ শরীরে প্রায় ৯০ শতাংশ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি হয় এসব শর্করাজাতীয় খাবার থেকে।
খাবারে কম করে হলেও অর্ধেক হতে হবে শাকসবজি ও ফলমূল। বাকি খাদ্যের মধ্যে থাকতে হবে ভুসিসমৃদ্ধ শস্য, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের বিচি, তিসি বিচির তেল, অলিভ অয়েল।
সয়াবিন তেলে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে। ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে প্রদাহ সৃষ্টিকারী সাইটোকাইন তৈরি করে, যা স্ট্রোক ও হৃদরোগে ভূমিকা রাখে। পরিশোধিত চিনি, সাদা আটা, রুটি, ময়দা, কেক, কুকিজ, পিৎজা ও পেস্ট্রি বর্জন করে ভুসিসমৃদ্ধ লাল চাল ও আটা খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রোটিন হিসাবে মাছ, মুরগির মাংস খাবেন। খাসি, গরু না খাওয়াই ভালো। ট্রান্সফ্যাটসমৃদ্ধ তেলে ঝলসানো, পোড়ানো খাবার হৃদরোগ সৃষ্টির সহায়ক। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী।
স্যামন, সার্দিন, হেরিং মাছ, আখরোট, অ্যাভোকাডো, অলিভ তেলে পর্যাপ্ত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। কাঁচা লবণ খাবেন না। ডিম, পনির, বাটার, দুধ, দই নিয়মিত খাবেন। কিডনি রোগীদের বেশি প্রোটিন খাওয়ায় বিধিনিষেধ রয়েছে।
ফলমূল, শাকসবজি ও সবুজ চাতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, সব ভিটামিন বি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, সেলেনিয়াম, পলিফেনোল, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজের মতো উৎকৃষ্ট উপকরণ। কোমল পানীয়তে উপস্থিত চিনি ও ক্যাফেইন বহু রোগের কারণ। পেপসি, কোকাকোলা জাতীয় পানীয় প্রচণ্ড অ্যাসিডিক হয় ফসফরিক অ্যাসিডের কারণে। ছোট শিশুদের জন্য এসব পানীয় ভীষণ ক্ষতিকর। তাই কোমল পানীয় না খাওয়াই উত্তম। শিশুদের কোমল পানীয় থেকে দূরে রাখুন।
খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে খুব ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। পচা, বাসি ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জন করুন। বাজারে প্রচলিত ময়লা টাকা-পয়সায় বিভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকে। টাকা-পয়সা লেনদেনের পর হাত ভালো করে না ধুয়ে খাবার মুখে দেবেন না। এ সতর্কতা পালন করলে আপনি বহু মারাত্মক সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা পাবেন।
প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন তিন কিলোমিটার হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রথম দিকে অল্প দূরত্ব টার্গেট করে হাঁটা শুরু করুন। আস্তে আস্তে দূরত্ব ও হাঁটার গতি বাড়ান, যাতে হৃৎস্পন্দন বাড়ে। বাইরে খোলামেলা জায়গায় হাঁটলে সারা দিনের শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি, অবসাদ ও দুশ্চিন্তা দূর হয়।
ব্যায়াম করলে রাতের ঘুম ভালো হয়। হাঁটা ছাড়াও সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা অথবা জিমনেশিয়ামে ব্যায়াম করা যেতে পারে। কোন ব্যায়াম কার জন্য কতটুকু উপযোগী, তা চিকিৎসক পরামর্শ দিতে পারেন। প্রতিদিন ত্রিশ মিনিট দ্রুতবেগে হাঁটলে আপনার শরীরের ওজন ঠিক থাকবে, রক্তচাপ, সুগার লেভেল কমে আসবে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ার কারণে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকবে, মেটাবলিক প্রক্রিয়া ভালো কাজ করবে। প্রতিদিন হাঁটতে না পারলে সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন হাঁটার চেষ্টা করুন।
আমরা বিনা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করে শরীরের ক্ষতি করি। তবে এর অর্থ এই নয় যে, প্রয়োজনে আমরা ওষুধ সেবন করব না। বহু ক্ষেত্রে মানুষের জীবনে এমন সব রোগের উৎপত্তি হয়, যা নিয়ে হেলাফেলা করলে জীবন বিপন্ন হতে পারে। আপনি যদি ইতোমধ্যে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন, তবে দুশ্চিন্তা না করে জীবনকে সহজভাবে গ্রহণ করুন এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হোন। জটিল রোগে আক্রান্ত বহু রোগী নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে সুস্থ থাকেন।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানবদেহে শক্তি উৎপাদন, গ্লুকোজ মেটাবলিজম কমে যায় এবং বয়োবৃদ্ধি বা এইজিং প্রক্রিয়া বেড়ে যায়। শরীরে শক্তি সংরক্ষণ, কোষপুঞ্জ তৈরি ও মেরামত, শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠন, মস্তিষ্ককে কোষের ধ্বংসাবশেষ থেকে পরিষ্কার রাখার জন্য পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুমের একান্ত প্রয়োজন। ভরা পেটে ঘুমাতে গেলে ভালো ঘুম হয় না। আর ঘুমানোর কাছাকাছি সময়ে রাতের খাবার খেলে সর্বোচ্চ পরিমাণে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হয় না, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। রাতের বেলায় বেশি পানি পান করলে বারবার টয়লেটে যেতে হয় বলে ঘুমের বিঘ্ন ঘটে। এটিও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
জীবনের জন্য অক্সিজেনের পরই পানির স্থান। শরীরের ওজনের সঙ্গে পানি পানের পরিমাণের একটি সম্পর্ক রয়েছে। কারও শরীরের ওজন যদি ১২০ পাউন্ড হয়, তার জন্য প্রতিদিন ৬০ আউন্স পানি দরকার হবে, যা সাধারণত আট কাপ পানির সমান। পরীক্ষায় দেখা গেছে, পানিস্বল্পতার কারণে শরীরের শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা বহুলাংশে কমে যায়। বেশি পানি পান করলে শরীর থেকে অতি সহজে বর্জ্য পরিষ্কার হয়ে যায় এবং কোষে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি ঢুকতে পারে।
প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করলে ৮০ শতাংশ ভুক্তভোগীর পিঠ ও গিঁটের ব্যথা সেরে যায়। শরীরে ২ শতাংশ পানিস্বল্পতা দেখা দিলে সাময়িকভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। ফলে সাধারণ অঙ্কসহ কম্পিউটার মনিটরে মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে। প্রতিদিন পাঁচ গ্লাস পানি পান করলে মলাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭৯ শতাংশ এবং ব্লাডার ক্যানসারের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে যায়। সুস্থ থাকার জন্য শরীরের পর্যাপ্ত পানির উপস্থিতি অপরিহার্য। তবে কিডনি রোগীদের বেশি পানি পানে সতর্ক হতে হবে।
রোদ বা সূর্যালোক সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, যা ছাড়া শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয় না। আর ভিটামিন ডি’র ঘাটতি হলে শরীরের ক্যালসিয়াম বিশ্লেষণে বিঘ্ন ঘটে। ক্যালসিয়াম শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সূর্যস্নান করা দরকার। সূর্যালোক উপভোগ করার ভালো সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। ভিটামিন ডি’র অভাবে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
দাম্পত্য জীবনের অশান্তি মানুষের শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্যে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি ও খুঁটিনাটি বিষয়ে অহরহ দাম্পত্য কলহ মানুষের সুখ শান্তি কেড়ে নেয়। মনে রাখবেন-যে সুখী নয়, সে সুস্থও নয়। বস্তুজগতে কামনা, বাসনা, ক্রোধ, লোভ, মোহ, ঈর্ষা ও প্রতিহিংসা প্রতিনিয়তই আমাদের দুঃখ, কষ্ট, অশান্তি, অসুস্থতা ও ধ্বংসের মূল কারণ।
মানুষ তার সততা, সৎকর্ম ও অটল আল্লাহপ্রীতির মাধ্যমে উল্লিখিত বদগুণ থেকে নিজেকে দূরে রেখে এ জীবনেই পরম সুখ ও প্রশান্তি লাভ করতে পারে। আল্লাহ মানুষকে নিয়মতান্ত্রিক, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের আদেশ দিয়েছেন। তাঁর সেই আদেশ-নিষেধ মেনে চললে জীবন অনেক শান্তিময় ও নিরাপদ হবে।