ভ্যাকিউম বোমা কী? ভ্যাকিউম বোমা কীভাবে তৈরি হয়, এর ক্ষমতা কেমন এবং কোথায় কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে?
- প্রকাশ: ০৭:২৩:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ মার্চ ২০২২
- / ১০৪৫ বার পড়া হয়েছে
সিএনএন প্রথম একটি রিপোর্টে জানায়, রাশিয়া ইউক্রেনে ভ্যাকিউম বোমা (Vacuum bomb) ব্যবহার করছে। রাশিয়ার টিওএস-১ ট্যাঙ্ক দেখা গেছে, যে ট্যাঙ্ক এই ভ্যাকিউম বোমা ছুঁড়তে পারে। ইউক্রেনের ওখতিরকা শহরে রাশিয়া এই বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা ফুটেজ দেখেছে। কিন্তু এখনো ওই বোমাই ফাটানো হয়েছিল কি না, তা প্রমাণ হয়নি। তবে এই বোমা ফাটানো যুদ্ধাপরাধের মধ্যে পড়ে বলে তারা জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিস্ফোরণের ইমপ্যাক্ট দেখে মনে হচ্ছে, রাশিয়া ভ্যাকিউম বোমাই ব্যবহার করেছে।
এখানে যা আছে
ভ্যাকিউম বোমা কী?
ভ্যাকিউম বোমা কোনো ধরনের নিউক্লিয়ার বোমা নয়। কিন্তু প্রায় তার কাছাকাছি ক্ষতি করতে পারে ভ্যাকিউম বোমা। একটি গোটা অঞ্চলকে মুহূর্তে তছনছ করে দেওয়ার ক্ষমতা থাকে এই বোমায়। এই ভ্যাকুয়াম বোমার আরেক নাম হলো থার্মোবারিক ওয়েপন। ভ্যাকিউম বোমা হলো এমন এক প্রকার বিস্ফোরক যা উচ্চ-তাপমাত্রার বিস্ফোরণ ঘটাতে পার্শ্ববর্তী বাতাস থেকে অক্সিজেন ব্যবহার করে। ফুয়েল-এয়ার বিস্ফোরক হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় থার্মোবারিক অস্ত্রগুলোর একটি। এই বোমা ফাটলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। এই বোমা বিস্ফোরণ হওয়ার পর আশেপাশে প্রবল তাপ তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, অনেকক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয় এর প্রভাব।
ভ্যাকিউম বোমার কয়েকটি নাম— Thermobaric weapon, Aerosol bomb, Fuel air explosive
ভ্যাকিউম বোমা কীভাবে তৈরি হয়?
ভ্যাকিউম বোমায় ১০০ শতাংশ তেল বা ফুয়েল ব্যবহার করা হয়। সাধারণ বোমায় তেলের সঙ্গে অক্সিডেন্ট পার্টিকেল ব্যবহার করা হয়। ভ্যাকিউম বোমায় তা হয় না। বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নেয় এই বোমা।
ভ্যাকিউম বোমা আবিষ্কার করেন মারিও জিপারমায়ার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান লুফটওয়াফ এবং ওয়েহরমাখ্টের এটি ব্যবহার করেছিল বলে জানা যায়।
যেভাবে কাজ করে ভ্যাকিউম বোমা
ভ্যাকিউম বোমা যা থারমোব্যারিক বোমা, অ্যারোসল বোমা হিসেবেও পরিচিত। এতে থাকে একটি জ্বালানি তেলের কন্টেইনার এবং দুইটি বিস্ফোরক চার্জার।
ভ্যাকিউম বোমা দুই ধাপে কাজ করে—
- প্রথম ধাপের বিস্ফোরণে মেঘের মতো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে জ্বালানি তেল।
- দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে, এই জ্বালানি তেলের মেঘ আবার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের গোলার মতো তৈরি হয়, বড়ো ধরনের শক ওয়েভ বা শব্দ তরঙ্গের ধাক্কা তৈরি করে এবং আশপাশের সব অক্সিজেন শুষে নেয়।
রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের গবেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলছেন, “সাধারণ বিস্ফোরকে ৩০ শতাংশ জ্বালানি তেল থাকে আর ৭০ শতাংশ থাকে অক্সিডাইজার। কিন্তু থারমোব্যারিক বোমায় শুধু জ্বালানি তেল থাকে যা বাতাস থেকে সব অক্সিজেন শুষে নেয়। কিছু ওয়ারহেডের চেয়েও এটি অনেক বেশি শক্তিশালী।”
ভ্যাকিউম বোমা রকেট আকারে নিক্ষেপ করা যায় অথবা বিমান থেকে ফেলা যায়। এটি বিভিন্ন আকারের হতে পারে। যেমন হয়ত একজন সেনার অবস্থান লক্ষ করে ছোঁড়ার মতো হাতে বহনকারী, আবার রকেট লঞ্চার দিয়ে নিক্ষেপ করা যায় এমন।
ভ্যাকিউম বোমার ক্ষমতা?
মার্কিন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির একটি গবেষণা অনুসারে, বদ্ধ স্থানের মধ্যে ভ্যাকিউম বোমার বিস্ফোরণের প্রভাব মারাত্মক, অপরিসীম হয়ে উঠতে পারে। ইগনিশন পয়েন্টের কাছাকাছি কেউ থাকলে শরীরে ভয়ঙ্কর আঘাত আসতে পারে। মৃত্যুও হতে পারে। এই বোমা ছুঁড়লে প্রথমে তা বিরাট মাপের বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর বাতাসে তেলের একটি চাদর তৈরি হয়। সেই চাদর বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নিয়ে ফের বিস্ফোরণ ঘটায়। চারদিক কার্যত জ্বলে যায়।
সাময়িকভাবে অজ্ঞান হলেও শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। কারণ এর প্রভাবে ফুসফুসের কোষ থেকেও অক্সিজেন বেরিয়ে যেতে শুরু করে। মস্তিষ্কের কোষগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যে এলাকায় ভ্যাকিউম বোমা ফাটানো হয়, সেখানে কারও পক্ষে বাঁচা সম্বব নয়। আশপাশের অঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
কোথায় কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে ভ্যাকিউম বোমা?
১৯৬০-এর দশক থেকে রাশিয়া ও পশ্চিমা বাহিনী ভ্যাকিউম বোমা ব্যবহার করেছে। আফগানিস্তানে গুহার মধ্যে অবস্থান নেয়া আল-কায়েদা যোদ্ধাদের আক্রমণে মার্কিন বাহিনী এই বোমা ব্যাবহার করেছে।
২০০০ সালে রাশিয়া চেচনিয়াতে এই বোমা ব্যাবহার করেছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সমালোচনা করেছে।
সর্বশেষ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, সিরিয়াতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপরে হামলায় রুশ এবং সরকারি বাহিনী এই বোমা ব্যবহার করেছে।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়া ভ্যাকিউম বোমা ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ আছে। তবে রাশিয়া সত্যিকার অর্থেই ইউক্রেনে ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করেছে কি না, তার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
Sources: BBC, Deutsche Welle, Business Insider, ABP Anada