০১:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ

ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা
  • প্রকাশ: ০৮:৩১:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ মার্চ ২০২২
  • / ২০৮৯ বার পড়া হয়েছে

নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। মানুষের সৃষ্টিশীল উদ্ভাবন ও কাজের মাধ্যমে এই পৃথিবী সভ্যতার শুরু থেকেই প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে। মানুষ তার কল্পনার শক্তিকে ছাড়িয়েও বিভিন্ন আবিষ্কার করছে। যার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে মানুষ। প্রতিটি সৃষ্টিকর্মের মধ্যে রয়েছে নারী-পুরুষের ভূমিকা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত নারী কবিতা আমাদের বারবার এ কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তবুও হাজার বছর ধরে বিশ্ব সৃষ্টির সব শুভ ও কল্যাণকর কাজে নারীর অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। বিধিনিষেধের বেড়াজালে নারীর অবদানকে সঙ্কুচিত করা হয়েছে। সময়ের পরিবর্তনে সেসব কুসংস্কারকে দূরে সরিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারী-পুরুষের সমান অংশীদারিত্ব। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক সব ক্ষেত্রে আজ পুরুষের পাশাপাশি নারীর সফল পদচারণা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবনই এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদের বাদ দিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীর পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। তাই তিনি নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান মহিলা আওয়ামী লীগ গঠন করেন। এ মহিলা আওয়ামী লীগ এ উপমহাদেশের প্রথম রাজনৈতিক নারী সংগঠন। স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই ১৯৭২ সালে সংবিধানে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করেন। আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ জাতীয় প্রতিষ্ঠান মহান জাতীয় সংসদে নারীদের পক্ষে কথা বলার জন্য নারী আসন সংরক্ষণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। তাদের যুদ্ধ শিশুদের পুনর্বাসন করেছিলেন। নির্যাতিত মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্যাতিত বীরাঙ্গনা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেটে অন্তভু‌র্ক্ত করেন। মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য ভারত, জাপান, জার্মান, ব্রিটেন ও রাশিয়া থেকে ডাক্তার এনে চিকিত্সা করেন। পরিবার তাদের গ্রহণ করতে চাইত না। নির্যাতিত কন্যাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে পরিবার ও সমাজে আলোকিত জীবন দান করেন। এসব কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বিয়েতে বাবার নাম জিজ্ঞাসা করা হলে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বলে দাও বাবার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিকানা ৩২ নাম্বার ধানমন্ডি। ১৯৭৩ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, সমবায়, কৃষি, কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভাবে নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়গুলো অন্তভু‌র্ক্ত করেন। নারীর অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষমতায়নের জন্য চাকরিতে নারীদের জন্য ১০শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করেছিলেন। তারই প্রতিফলন হিসেবে আজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ নারী শিক্ষক।

নারীদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সামাজিক নারী সংগঠন মহিলা সমিতির ভিত্তি রচনা করেন। শিশু ও কিশোরীদের আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও নৈতিকতার শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনকে ঢেলে সাজান এবং পুনর্গঠিত করেন। তিনিই ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের প্রকৃত পথপ্রদর্শক। বঙ্গবন্ধু চাইতেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির চর্চা করুক। সংসদ নির্বাচনে ছাত্রীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। আজ আমার যে রাজনৈতিক পরিচয় ও বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ কর্মী, তার পেছনে জাতির পিতার মহান অবদান। স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭২ সালে ছাত্র রাজনীতির সংকটময় মুহূর্তে ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের দুই-একজন বাদে সব ছাত্র লীগের নেতাকর্মীরা জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগে যোগদান করে। অনেক বাধা অতিক্রম করে কামাল ভাইয়ের (বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল) সহযোগিতায় আমি ছাত্রলীগ পুনর্গঠন করি। বঙ্গবন্ধুর স্নেহ, দোয়া ও মাথায় হাতের স্পর্শ পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এক দিন আমি বঙ্গবন্ধুকে বললাম, লিডার আমি এখন আর ইডেন কলেজে নেই। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। রোকেয়া হলে থাকি। বঙ্গবন্ধু কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে বললেন, ইডেন কলেজে সংসদ নির্বাচন কবে? আমি বললাম খুব শিগগিরই হবে। বঙ্গবন্ধু বললেন, তুমি যদি ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদে নির্বাচন কর তাহলে ফুল প্যানেলে জয়লাভ করা সম্ভব হবে। আমি তখন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি। তার পরদিন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ইডেন কলেজে অনার্সে (অর্থনীতিতে) ভর্তি হই। ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি এবং আমি জিএস নির্বাচিত হই। আমার নেতৃত্বে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ প্রথম ফুল প্যানেলে জয়লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর স্নেহ, আদর্শ ও নির্দেশনায় ইডেন কলেজে সংসদ নির্বাচনে ছাত্র রাজনীতিতে আমার উত্থান এবং বর্তমান অবস্থান। জাতির পিতার অম্লান স্মৃতির প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

জাতির জনকের পথ ধরে জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা নারীর উন্নয়ন, নারীর কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নারীর দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং উৎপাদিত পণ্যের ব্র্যান্ডিংকরণে জয়িতা ফাউন্ডেশন গঠন করেছেন। সামাজিক ও আইনগত প্রেক্ষাপটে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে বিবেচনা করেই তিনি ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়িতা কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করে তার নামফলক উন্মোচন করেন। নারী উদ্যোক্তাদের উত্পাদিত পণ্য এবং সেবা বিপণন ও বাজারজাত করার জন্য দেশব্যাপী নারীবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ ডিসেম্বর ২০২১, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ তলা জয়িতা টাওয়ার নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। আটটি বিভাগীয় জেলা শহরে জয়িতা টাওয়ার নির্মাণে ১ বিঘা বাণিজ্যিক জমি প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা এবং বাস্তবায়ন করছেন। নারী উদ্যোক্তারাও এ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বরাদ্দ পাচ্ছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসনের জন্য ৯টি কর্মজীবী নারী হোস্টেল ও তাদের শিশুদের সুরক্ষার জন্য ১১৯টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র চলমান আছে।

২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ অধিবেশনে ২০৪১ সালের মধ্যে কর্মস্হলে নারীদের ৫০:৫০ উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছেন। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। প্রায় ১ কোটি নারীকে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে দেশের সব মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সারা দেশে একই দিনে, একই সময়ে এবং একই সঙ্গে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এটাই প্রথম সরকারিভাবে মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সারা দেশে ৩৫টি বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে ৬৪টি জেলায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, তৃণমূল পর্যায়ের প্রান্িতক নারীদের প্রশিক্ষণ এবং আইজিএ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের আত্মনির্ভরশীল জনশক্তিতে রূপান্তর করে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা। তথ্য আপা প্রকল্প তথ্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীকে ক্ষমতায়ন করছে। ই-জয়িতা ও লাল সবুজ ডটকম প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের উত্পাদিত পোশাক ও পণ্যসামগ্রী অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে নারীর কর্মসংস্থানের হার ৩৮শতাংশ। আর পাকিস্তানে ২৩শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ১০ লাখ ৪০ হাজার দুস্হ নারীকে ভিজিডি এবং প্রায় ১১ লাখ মা ও শিশুর খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে মাতৃত্ব ও ল্যাক্টেটিং মা ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল সৃষ্টি করেছে। ফলে নারীর ক্ষমতায়নে, নারী উন্নয়নে বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী। সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় একেবারে শীর্ষে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের নারী শিক্ষার হার ছিল ৪৬ শতাংশ যা বর্তমানে ৭১ শতাংশ। আজ দেশের নারীরা সচিব, বিচারক, এসপি, ডিসি, ওসি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীতে উচ্চপদে দক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালন, ব্যবসা, শিল্পোদ্যোগসহ সবক্ষেত্রেই সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবু্যনাল ২০০৭ সালে ছিল ৪৫টি, বর্তমানে ১০৩টি। যার সুফল জনগণ পেতে শুরু করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে রায় দেওয়া হচ্ছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু পুরুষদের চেয়ে বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে নারী নীতি প্রণয়ন করেন। ২০০৭ সালে বাল্যবিবাহের হার ছিল ৬৬ শতাংশ আর বর্তমানে ৪৭ শতাংশ, তার মানে বাল্যবিবাহের হার কমছে কিন্তু আমাদের বাল্যবিবাহের হার রোধ করতে হবে, তার কারণ বাল্যবিবাহের সঙ্গে মা ও শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃমৃতু্য জড়িত। তাছাড়া অল্প বয়সে বিয়ে হলে নারীরা পড়াশোনা করতে পারে না। যার ফলে তারা ইনকাম জেনারেটিং এক্টিভিটিসের সঙ্গেহ জড়িত হতে পারে না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে না। এই বাল্যবিবাহ কিন্তু অনেকগুলো বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। যেমন ইনডিভিজুয়াল পারসেপসান, ভৌগোলিক অবস্থান, বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা, কালচার, সোশ্যাল ভ্যালুজ, বিলিফস এবং নর্মস ও মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। কালচার আমরা ভাঙতে পারি না, কিন্তু আমরা ধীরে ধীরে পরিবর্তন করতে পারি। কালচারেল পরিবর্তন নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ওপর। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন নির্ভর করে বিহেভিয়ারাল পরিবর্তনের ওপর। বিহেভিয়ারাল পরিবর্তন নির্ভর করে নিউ আইডিয়া, নিউ অ্যাস্পাইরেশন, মডার্নাজাইশন ও মাস মিডিয়া এক্সপজার ও সচেতনতার ওপর।

বিশ্ব জুড়ে এদেশের নারীর সাফল্য আজ অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জেন্ডার সমতাভিত্তিক এক উন্নত-সমৃদ্ধ বিশ্বে প্রবেশ করবে। আর্থসামাজিক কার্যক্রমে নারীর পূর্ণ ও সমঅংশগ্রহণ এবং নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

সৌজন্যে দৈনিক ইত্তেফাক

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা

লেখক বাংলাদেশের সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, রাজনীতিবিদ ও গবেষক

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ

প্রকাশ: ০৮:৩১:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ মার্চ ২০২২

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। মানুষের সৃষ্টিশীল উদ্ভাবন ও কাজের মাধ্যমে এই পৃথিবী সভ্যতার শুরু থেকেই প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে। মানুষ তার কল্পনার শক্তিকে ছাড়িয়েও বিভিন্ন আবিষ্কার করছে। যার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে মানুষ। প্রতিটি সৃষ্টিকর্মের মধ্যে রয়েছে নারী-পুরুষের ভূমিকা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত নারী কবিতা আমাদের বারবার এ কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তবুও হাজার বছর ধরে বিশ্ব সৃষ্টির সব শুভ ও কল্যাণকর কাজে নারীর অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। বিধিনিষেধের বেড়াজালে নারীর অবদানকে সঙ্কুচিত করা হয়েছে। সময়ের পরিবর্তনে সেসব কুসংস্কারকে দূরে সরিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারী-পুরুষের সমান অংশীদারিত্ব। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক সব ক্ষেত্রে আজ পুরুষের পাশাপাশি নারীর সফল পদচারণা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবনই এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদের বাদ দিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীর পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। তাই তিনি নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান মহিলা আওয়ামী লীগ গঠন করেন। এ মহিলা আওয়ামী লীগ এ উপমহাদেশের প্রথম রাজনৈতিক নারী সংগঠন। স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই ১৯৭২ সালে সংবিধানে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করেন। আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ জাতীয় প্রতিষ্ঠান মহান জাতীয় সংসদে নারীদের পক্ষে কথা বলার জন্য নারী আসন সংরক্ষণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। তাদের যুদ্ধ শিশুদের পুনর্বাসন করেছিলেন। নির্যাতিত মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্যাতিত বীরাঙ্গনা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেটে অন্তভু‌র্ক্ত করেন। মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য ভারত, জাপান, জার্মান, ব্রিটেন ও রাশিয়া থেকে ডাক্তার এনে চিকিত্সা করেন। পরিবার তাদের গ্রহণ করতে চাইত না। নির্যাতিত কন্যাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে পরিবার ও সমাজে আলোকিত জীবন দান করেন। এসব কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বিয়েতে বাবার নাম জিজ্ঞাসা করা হলে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বলে দাও বাবার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিকানা ৩২ নাম্বার ধানমন্ডি। ১৯৭৩ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, সমবায়, কৃষি, কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভাবে নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়গুলো অন্তভু‌র্ক্ত করেন। নারীর অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষমতায়নের জন্য চাকরিতে নারীদের জন্য ১০শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করেছিলেন। তারই প্রতিফলন হিসেবে আজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ নারী শিক্ষক।

নারীদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সামাজিক নারী সংগঠন মহিলা সমিতির ভিত্তি রচনা করেন। শিশু ও কিশোরীদের আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও নৈতিকতার শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনকে ঢেলে সাজান এবং পুনর্গঠিত করেন। তিনিই ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের প্রকৃত পথপ্রদর্শক। বঙ্গবন্ধু চাইতেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির চর্চা করুক। সংসদ নির্বাচনে ছাত্রীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। আজ আমার যে রাজনৈতিক পরিচয় ও বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ কর্মী, তার পেছনে জাতির পিতার মহান অবদান। স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭২ সালে ছাত্র রাজনীতির সংকটময় মুহূর্তে ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের দুই-একজন বাদে সব ছাত্র লীগের নেতাকর্মীরা জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগে যোগদান করে। অনেক বাধা অতিক্রম করে কামাল ভাইয়ের (বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল) সহযোগিতায় আমি ছাত্রলীগ পুনর্গঠন করি। বঙ্গবন্ধুর স্নেহ, দোয়া ও মাথায় হাতের স্পর্শ পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এক দিন আমি বঙ্গবন্ধুকে বললাম, লিডার আমি এখন আর ইডেন কলেজে নেই। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। রোকেয়া হলে থাকি। বঙ্গবন্ধু কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে বললেন, ইডেন কলেজে সংসদ নির্বাচন কবে? আমি বললাম খুব শিগগিরই হবে। বঙ্গবন্ধু বললেন, তুমি যদি ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদে নির্বাচন কর তাহলে ফুল প্যানেলে জয়লাভ করা সম্ভব হবে। আমি তখন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি। তার পরদিন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ইডেন কলেজে অনার্সে (অর্থনীতিতে) ভর্তি হই। ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি এবং আমি জিএস নির্বাচিত হই। আমার নেতৃত্বে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ প্রথম ফুল প্যানেলে জয়লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর স্নেহ, আদর্শ ও নির্দেশনায় ইডেন কলেজে সংসদ নির্বাচনে ছাত্র রাজনীতিতে আমার উত্থান এবং বর্তমান অবস্থান। জাতির পিতার অম্লান স্মৃতির প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

জাতির জনকের পথ ধরে জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা নারীর উন্নয়ন, নারীর কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নারীর দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং উৎপাদিত পণ্যের ব্র্যান্ডিংকরণে জয়িতা ফাউন্ডেশন গঠন করেছেন। সামাজিক ও আইনগত প্রেক্ষাপটে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে বিবেচনা করেই তিনি ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়িতা কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করে তার নামফলক উন্মোচন করেন। নারী উদ্যোক্তাদের উত্পাদিত পণ্য এবং সেবা বিপণন ও বাজারজাত করার জন্য দেশব্যাপী নারীবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ ডিসেম্বর ২০২১, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ তলা জয়িতা টাওয়ার নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। আটটি বিভাগীয় জেলা শহরে জয়িতা টাওয়ার নির্মাণে ১ বিঘা বাণিজ্যিক জমি প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা এবং বাস্তবায়ন করছেন। নারী উদ্যোক্তারাও এ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বরাদ্দ পাচ্ছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসনের জন্য ৯টি কর্মজীবী নারী হোস্টেল ও তাদের শিশুদের সুরক্ষার জন্য ১১৯টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র চলমান আছে।

২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ অধিবেশনে ২০৪১ সালের মধ্যে কর্মস্হলে নারীদের ৫০:৫০ উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছেন। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। প্রায় ১ কোটি নারীকে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে দেশের সব মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সারা দেশে একই দিনে, একই সময়ে এবং একই সঙ্গে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এটাই প্রথম সরকারিভাবে মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সারা দেশে ৩৫টি বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে ৬৪টি জেলায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, তৃণমূল পর্যায়ের প্রান্িতক নারীদের প্রশিক্ষণ এবং আইজিএ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের আত্মনির্ভরশীল জনশক্তিতে রূপান্তর করে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা। তথ্য আপা প্রকল্প তথ্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীকে ক্ষমতায়ন করছে। ই-জয়িতা ও লাল সবুজ ডটকম প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের উত্পাদিত পোশাক ও পণ্যসামগ্রী অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে নারীর কর্মসংস্থানের হার ৩৮শতাংশ। আর পাকিস্তানে ২৩শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ১০ লাখ ৪০ হাজার দুস্হ নারীকে ভিজিডি এবং প্রায় ১১ লাখ মা ও শিশুর খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে মাতৃত্ব ও ল্যাক্টেটিং মা ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল সৃষ্টি করেছে। ফলে নারীর ক্ষমতায়নে, নারী উন্নয়নে বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী। সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় একেবারে শীর্ষে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের নারী শিক্ষার হার ছিল ৪৬ শতাংশ যা বর্তমানে ৭১ শতাংশ। আজ দেশের নারীরা সচিব, বিচারক, এসপি, ডিসি, ওসি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীতে উচ্চপদে দক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালন, ব্যবসা, শিল্পোদ্যোগসহ সবক্ষেত্রেই সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবু্যনাল ২০০৭ সালে ছিল ৪৫টি, বর্তমানে ১০৩টি। যার সুফল জনগণ পেতে শুরু করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে রায় দেওয়া হচ্ছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু পুরুষদের চেয়ে বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে নারী নীতি প্রণয়ন করেন। ২০০৭ সালে বাল্যবিবাহের হার ছিল ৬৬ শতাংশ আর বর্তমানে ৪৭ শতাংশ, তার মানে বাল্যবিবাহের হার কমছে কিন্তু আমাদের বাল্যবিবাহের হার রোধ করতে হবে, তার কারণ বাল্যবিবাহের সঙ্গে মা ও শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃমৃতু্য জড়িত। তাছাড়া অল্প বয়সে বিয়ে হলে নারীরা পড়াশোনা করতে পারে না। যার ফলে তারা ইনকাম জেনারেটিং এক্টিভিটিসের সঙ্গেহ জড়িত হতে পারে না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে না। এই বাল্যবিবাহ কিন্তু অনেকগুলো বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। যেমন ইনডিভিজুয়াল পারসেপসান, ভৌগোলিক অবস্থান, বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা, কালচার, সোশ্যাল ভ্যালুজ, বিলিফস এবং নর্মস ও মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। কালচার আমরা ভাঙতে পারি না, কিন্তু আমরা ধীরে ধীরে পরিবর্তন করতে পারি। কালচারেল পরিবর্তন নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ওপর। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন নির্ভর করে বিহেভিয়ারাল পরিবর্তনের ওপর। বিহেভিয়ারাল পরিবর্তন নির্ভর করে নিউ আইডিয়া, নিউ অ্যাস্পাইরেশন, মডার্নাজাইশন ও মাস মিডিয়া এক্সপজার ও সচেতনতার ওপর।

বিশ্ব জুড়ে এদেশের নারীর সাফল্য আজ অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জেন্ডার সমতাভিত্তিক এক উন্নত-সমৃদ্ধ বিশ্বে প্রবেশ করবে। আর্থসামাজিক কার্যক্রমে নারীর পূর্ণ ও সমঅংশগ্রহণ এবং নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

সৌজন্যে দৈনিক ইত্তেফাক