০১:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

অটিজম কী, অটিজম কেন হয় এবং অটিজমের লক্ষণ ও চিকিৎসা কী?

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
  • প্রকাশ: ১২:১৬:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ মার্চ ২০২২
  • / ৮৬৮৪ বার পড়া হয়েছে

২০২২ সালের অটিজম দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, "অটিজম: কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি"


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

২ এপ্রিল, বিশ্ব অটিজম দিবস। অটিজম হচ্ছে স্নায়ুর বিকাশজনিত মানসিক ও শারিরীক একটি রোগ। যা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশকে বাঁধাগ্রস্থ করে। এই রোগ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অসচেতন। তাই এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করা হয়।

এই নিবন্ধে অটিজম কী, কেন এবং কখন এই রোগ হয়। এই রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা কী,  এবং বাংলাদেশে এই রোগের পরিস্থিতি ও সচেতনতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। 

অটিজম কী?

অটিজম হচ্ছে  শিশুদের স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা সম্পর্কিত একটি রোগ। যে রোগে একটি শিশুর  সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে অসুবিধা হয়। চারপাশের পরিবেশ ও ব্যক্তির সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা ইশারা ইংগিত ইত্যাদির মাধ্যমেও যোগাযোগের সমস্যা হয় এবং আচরণেরও পরিবর্তন হয়। মোটকথা যে সমস্যা একটি শিশুকে শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে অপূর্ণতায় পর্যবসিত করে তাকে অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বলে। 

অটিজমকে অনেকে মানসিক রোগ মনে করলেও এটি প্রধানত স্নায়ুবিক বিকাশ-জনিত সমস্যা। যে সমস্যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি আর দশজন মানুষের সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ ও সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়।

অটিজম হওয়ার কারণ

অটিজম স্নায়ুবিকাশ জনিত রোগ হলেও এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু বিষয়কে অটিজমের কারণ হিসেবে দেখা হয়। বিশেষ করে, বংশে কারও অটিজমের সমস্যা থাকা, গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা করা, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, অতিমাত্রায় ঔষধ সেবন, মায়ের ধুমপান ও মদ্যপানসহ গর্ভকালীন সংক্রমণ যেমন: মাম্পস, রুবেলা, মিসেলস ইত্যাদি হওয়া। 

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় মায়ের  সাথে পরিবারের সম্পর্কের ঘাটতি থাকা, বেশি বয়সে বাচ্চা নেওয়া, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল  সমস্যা দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, মৃগীরোগ, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (Obsessive Compulsive Disorder – OCD),  মনোযোগ-ঘাটতি, বাইপোলার ডিসঅর্ডার সিজোফ্রেনিয়া,  হাইপারঅ্যাক্টিভিটি  ডিসঅর্ডার (ADHD)। 

সেইসাথে কম ওজনে শিশুর জন্ম হওয়া,  গর্ভাবস্থায় বিষাক্ত সিসাযুক্ত বাতাসে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া, প্রসবকালীন সময়ে  কোনো জটিলতা, মা ও শিশুর অপুষ্টিজনিত সমস্যা ইত্যাদি কারণেও অটিজম হতে পারে। 

অটিজমের লক্ষণ কী কী?

  • অটিজম আক্রান্ত শিশুর প্রধান সমস্যা হলো ভাষা। তাই এই রোগে আক্রান্তদের শুরুতেই ভাষা আয়ত্ত করতে সমস্যা হয়। যেমনঃ একবছর বয়সের মধ্যে ‘মা–মা’, ‘বা—বা’, ‘বু–বু’ চা–চা ‘ কা–কা ‘ ‘দা–দা ইত্যাদি উচ্চারণ করতে না পারা। 
  • অনেক শিশুর অল্প মাত্রায় হলেও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেওয়া, সেইসাথে কারো মাঝে শারীরিক বৃদ্ধির ঘাটতি দেখা দেওয়া। 
  • শিশুর দুই বছরের  মধ্যে অর্থপূর্ণ দুটি শব্দ দিয়ে কথা বলতে না পারা। কিছু কিছু  শিশুর ক্ষেত্রে কথা বলতে জড়তা সৃষ্টি হওয়া। কোনো কোনো শিশু কথা বলা শুরু করলেও পরে আস্তে আস্তে ভুলে যাওয়া। 
  • শিশু চোখে চোখ রাখতে না পারা। নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া। হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে উঠা। শিশুর মানসিক অস্থিরতা বেশি থাকা। সেইসাথে  বিষন্নতা, উদ্বিগ্নতা ও মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেওয়া। 
  • অটিজমে রোগে আক্রান্ত শিশুরা দেখা, শোনা, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, , আলো বা স্পর্শের প্রতি অনেক সংবেদনশীল বা প্রতিক্রিয়াহীন হয়।
  • অন্যান্য সমবয়সী শিশুর  সাথে মিশতে সমস্যা হওয়া এবং বড়দের সাথেও মিশতে না পারা কারো আদর নিতে বা দিতে না পারা। এমনকি কারো প্রতি আগ্রহও না থাকা এবং পরিবেশ অনুযায়ী মুখ ভঙ্গি পরিবর্তন করতে না পারা। 
  • সব সময় একা একা থাকার চেষ্টা করা। ঘরের একটা নির্দিষ্ট স্থানে নিজের মত থাকার চেষ্টা করা। 
  • আক্রান্ত শিশু পছন্দের বা আনন্দের কোনো কিছুকে অন্যান্যদের সাথে ভাগাভাগি করতে না পারা।
  • অন্যের থেকে শোনা কথা বার বার বলতে থাকা এবং  বার বার একই আচরণ করা। 
  • একটি নিজস্ব রুটিন মেনে চলতে পছন্দ করা, রুটিনের কোন পরিবর্তন সহ্য করতে না পারা। নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা এবং পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে না পারা। 

অটিজম কখন প্রকাশ পায়?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের সাথে সাথে যেমন: শিশুর দেড় থেকে তিন বছর বয়সের সাথে সাথেই অটিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ পায়।

যেসব সমস্যা আরও থাকতে পারে—

অটিজম আক্রান্ত  শিশুদের মধ্যে এই রোগ ছাড়াও  খিঁচুনি (মৃগী), বুদ্ধির ঘাটতি অতিচঞ্চলতা বা হাইপার অ্যাক্টিভিটি, , হাতের কাজ করতে না পারার জটিলতা, দাঁতের সমস্যা, হজমের সমস্যা, খাবার চিবিয়ে খেতে না পারা ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে।

শিশুর দেড় থেকে তিন বছর বয়সের সাথে সাথেই অটিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ পায়

অটিজমের চিকিৎসা কী?

বাংলাদেশে অটিজম সম্পর্কে ধারণা খুবই কম। যারফলে অনেকেই শুরুতে এই রোগ  নির্ণয় করতে পারে না। যারফলে  চিকিৎসা করতে বিলম্বিত হয় । বিশেষজ্ঞরা বলেন, অটিজম কোনো রোগ নয়। এটি একটি মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ জনিত সমস্যা।  যা একটি শিশুকে সামাজিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি করতে বাঁধা সৃষ্টি করে।  

কিন্তু দ্রুত শনাক্ত করে  শিশুর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে পারলে এই শিশুরাও অন্যান্য শিশুদের মত উন্নতি করতে পারে। সবার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ এবং উপদেশ নিয়ে শিশুর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এরপর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পরিচর্যা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ আর প্রয়োজনে বিশেষ কিছু সমস্যার ওষুধ সেবন করতে হবে।

অটিজম আছে এমন শিশুদের আচরণজনিত সমস্যা, অতিচঞ্চলতা, অস্থিরতা, নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা, খিঁচুনি বা খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদির জন্য পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই সীমিত আকারে ওষুধের প্রয়োগ রয়েছে। এই ওষুধ তাকে প্রশিক্ষণের উপযোগী করে তুলবে এবং সহযোগী সমস্যাকে কমাতে সাহায্য করবে। 

পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন

অটিজম সম্পর্কে আমাদের দেশে আলোচনা হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ সামাজিক সচেতনতা এখনো সৃষ্টি হয়নি। বিশেষ করে আক্রান্ত শিশুর পরিবার পরিজনেরাই কখ‌নো এই জাতীয় শিশুকে মেনে নেয় না। ফলে শিশুটি জন্মের পর থেকেই অবহেলিত হয়। যদিও বিগত কয়েক বছরে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে বাংলাদেশে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বহুগুণ বেড়েছে। 

সচেতনতার কারণে  অনেক বেশি অটিজম শিশুরা শনাক্ত হচ্ছে এবং সঠিক পরিচর্যা ও সেবা পাচ্ছে। কিন্তু তারপরও অটিজম নিয়ে সমাজে ব্যাপক ভুল ভ্রান্তি রয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, অটিজম সম্পন্ন শিশুর মা–বাবারা সহজে মেনে নিতে চায় তার সন্তানের অটিজম আছে। এরা এই শিশুকে পাপের ফসল বলে মনে করে। ফলে দীর্ঘসময় একটা বিভ্রান্তিতে থাকতে থাকতে উপযুক্ত পরিচর্যা আর প্রশিক্ষণের সময় নষ্ট হয়ে যায়। 

এতোকিছুর পরও পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে যতটুকু সচেতনতার প্রয়োজন তা পরিপূর্ণভাবে হচ্ছে না। তাই সরাসরি ও বেসরকারি উদ্যোগে আরও বেশী বেশী সচেতনতামূলক কর্মপরিকল্পনা নেয়া উচিত। কেননা এই রোগে আক্রান্তদের এখনো লোকে পাগল মনে করে। বা মানসিক প্রতিবন্ধীদের সাথে অটিজমকে এক করে ফেলে।

তাই অটিজমকে পাঠ্যপুস্তকের আওতাভুক্ত করে এর ব্যাপক প্রচারণা করা উচিত। সেইসাথে গ্রাম পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে এই শিশুদের ভার সরকারের নেওয়া উচিত। কেননা আমাদের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা না থাকায় তারা এই জাতীয় রোগের চিকিৎসা করাতে আগ্রহী হয় না। ফলে এই রোগে আক্রান্তরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবহেলিতই থেকে যায়। তাই অটিজম সম্পর্কে পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে ব্যাপক সচেতনতা ও সহায়তা বৃদ্ধি হওয়া খুবই প্রয়োজন। 

২০২২ সালের অটিজম দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, “অটিজম: কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি”

অটিজমে আক্রান্তদের কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন

২০২২ সালের অটিজম দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, “অটিজম: কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি”। অর্থাৎ অটিজম আক্রান্তরা যাতে ধীরে ধীরে কর্মক্ষেত্রেও প্রবেশ করতে পারে সেই ধারা শুরু করার জন্য এই পদক্ষেপ হাতে নেওয়া। অটিস্টিকরা সমাজ এবং পরিবারের বোঝা নয়। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের  সহযোগিতায় পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ পেলে একজন অটিস্টিকও হয়ে উঠতে পারে সমাজ এবং দেশের সম্পদ। অটিস্টিকরা প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি করে চাইলে কর্মক্ষেত্রেও যোগদান করতে পারে।

তাদের কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়াই হচ্ছে এই বছরের মূল প্রতিপাদ্য। একজন অটিস্টিক যাতে সমাজের মূল ধারার সাথে মিশে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য এখন থেকেই চেষ্টা শুরু করতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে অটিস্টিকরা সুস্থ হয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারলে, তা পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্য হবে বড় পাওয়া।

তাই আমাদের উচিত অটিস্টিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা। যদিও এই কাজে প্রচুর বাঁধা এবং প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবুও সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকলে এক সময় না একসময় অবশ্যই সফলতা আসবে। সকলের সহযোগিতা আছে বলেই এখন অটিস্টিকরা পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। যদি এই সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখা যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই অটিস্টিকরাই হয়ে উঠবে দেশের সম্পদ।

আসুন আমরা সবাই অটিজম সম্পর্কে সচেতন হই। বিশেষকরে গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রতি যত্নবান হই। যেসব সমস্যার কারণে শিশুর অটিজমসহ অন্যান্য রোগের সৃষ্টি হতে পারে, সেইসব কারণ সম্পর্কে সচেতন হই। সেইসাথে পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের সর্বস্তরে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা সৃষ্টি করি।  তাদের সুস্থ করে তোলার মাধ্যমে দেশের সম্পদে পরিনত করি। যাতে তারাও সুস্থ হয়ে তাদের উপযোগী বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারে। তাহলেই একজন অটিস্টিক শিশু বা ব্যক্তি এই সুন্দর পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার উপলক্ষ্য পাবে। 

শেয়ার করুন

2 thoughts on “অটিজম কী, অটিজম কেন হয় এবং অটিজমের লক্ষণ ও চিকিৎসা কী?

  1. 1796 সালের দিকে ডা: হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথী নাম দিয়ে একটি চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন । তিনি দাবী করেন হোমিওপ্যাথী হচ্ছে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি । এই চিকিৎসা পদ্ধতির মূল সূত্র হচ্ছে সদৃশবিধান । অর্থাৎ একটা রোগ শক্তিকে একই রকম ভেষজ শক্তি সম্পন্ন ভেষজ দিয়ে মানব শরীরকে রোগ মুক্ত করা । মানে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা । কিছুটা টিকার সূত্রের মত । হোমিওপ্যাথীতে রোগের সদৃশ সম্পন্ন ভেষজ বা ঔষধের পরিমান খুবই কম থাকার কারনে ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই রোগ ভাল হয় ।
    পরবর্তী কালে হ্যানিম্যান ঔষধ গুলিকে লঘুকরন ( পটেন্সী) করে মানব শরীরে প্রয়োগ করে দেখলেন এতেও রোগ ভাল হচ্ছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই । আর এতে করে হ্যানিম্যানের বিরুদ্ধ বাদীরা হৈচৈ করা শুরু করলো হোমিওপ্যাথী ঔষধ হচ্ছে সব পানি ঔষধ বলে কিছু নেই সব ভূয়া । হোমিওপ্যাথী নিয়ে এই সব হৈচৈ আজ পর্যুন্ত চলে আসছে থেমে নেই । আমি এই বিষয়ে হয়তো ভবিষ্যতে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো ।
    সেই সময় হ্যানিম্যান ও তাঁর দলবল নিজেরাই সুস্থ শরীরে বিভিন্ন ঔষধের মূল আরক খেয়ে পরীক্ষা ( প্রুভিং ) করে দেখলেন ভেষজ গুলো কিভাবে কৃত্রিম রোগ সৃষ্টি করে এবং হ্যানিম্যান তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘ পিউরা ‘ তে এইসব ভেষজের লক্ষন গুলো লিপিবদ্ধ করেন যা হোমিওপ্যাথী চিকিৎসার মূলভিত্তি । মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে , হ্যানিম্যানের প্রুভিংকৃত এইসব ঔষধের লক্ষনাবলী সঠিক বিজ্ঞান সম্মত ভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় নাই তাঁরই অনুসৃত নীতি অনুযায়ী । যার ফলে হ্যানিম্যানের রচিত অরগাননের সূত্রানুযায়ী পিউরায় লিপিবদ্ধকৃত ভেষজ লক্ষনগুলি অসম্পূর্ণ , পরস্পর বিরোধী ও সাংঘর্ষিক ।আরো সমস্যা হচ্ছে হ্যানিম্যান পরবর্তী হোমিওপ্যাথদের দ্বারা রচিত হাজারে হাজারে মেটেরিয়া মেডিকা রচিত হয়েছে যা আজো হচ্ছে সেসবের সাথে হ্যানিম্যান রচিত পিউরার’ শতকরা নব্বই ভাগও মিল নাই – এগুলো সবই ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতার ফসল যা বিজ্ঞান নয় । নানান কারনে হোমিওপ্যাথ নামধারী ঔষধ বেচার দল হোমিওপ্যাথীকে একটা অপবিজ্ঞান হিসেবে চিহ্নিত করেছে – অথচ এরকম হওয়ার কথা ছিল না । দু:খজনক ব্যাপার হচ্ছে হোমিওপ্যাথীর আধুনিক গবেষনার জন্য তেমন একটা কেউ এগিয়ে আসেনি । বর্তমান কালের হোমিওপ্যাথরা হ্যানিম্যানের কিছু ভুল , পরস্পর বিরোধী দর্শন ও অসম্পুর্ন গবেষনাকে কেন্দ্র করে তারা নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে মনে করে মিথ্যে আত্মপ্রসাদ লাভ করে । আপনি একটা অসুখের জন্য পাঁচ জন ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিবেন তারা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন ঔষধ দিবেন কারো সাথে মিল নেই – এমনকি তারা ঔষধের নামটাও বলে না ( কি, ভাত মারা যাবে? ) । ইদানীং তারা তাদের সার্টিফিকেটের নীচে লিখে ‘ সার্জারী ‘ ! এটা তো স্পষ্ট হ্যানিম্যানের দর্শন বিরোধী । অপবিজ্ঞান কি গাছে ফলে ? এ দোষ কার হোমিওপ্যাথীর নাকি হোমিও নামধারী হাতুড়েদের ?
    হ্যানিম্যানের ক্রনিক মায়াজম’ থিওরী একটা কাল্পনিক ও অনৈতিহাসিক ধারনা । ক্রনিক বংশগতির রোগ অবশ্যই আছে , কিন্তু তা অনন্তকাল বা দীর্ঘকাল জারী থাকবে তা বিজ্ঞান বলে না । কতক গুলো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার ( সোরা সিফিলিস সাইকোটিক ) কারনে গোটা মানব জাতির জিন পরিবর্তন হবে এটা বিজ্ঞান বলে না । তাছাড়া কোন সময়ে গোটা মানব জাতি সিফিলিস গনেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল তার কোন ঐতিহাসিক প্রমান হ্যানিম্যান দিতে পারেন নাই ।কাজেই হ্যানিম্যানের মায়াজম ‘ মতবাদ কাল্পনিক ও ভুল থিওরির উপর প্রতিষ্ঠিত । তাহলে কি হোমিওপ্যাথী কাজ করে না ? কাজ অবশ্যই করে , কিন্তু কিভাবে কাজ করে তা এখনো জানা যায় নাই । এর জন্য আরো গবেষনার প্রয়োজন রয়েছে । তবে যারা বাজারে প্রচলিত পরস্পর বিরোধী হাজারে হাজারে মেটেরিয়া মেডিকা পড়ে চিকিৎসা করছেন তারা অবশ্যই হাঁতুড়ে ও অপবিজ্ঞানেরই চর্চা করছেন ।

    1. মাশা আল্লাহ্ অনেক কিছুই জানতে পারলাম। এইসব বিষয় কখনোই খোলাখুলিভাবে আলোচনায় আসে না। যারফলে সিংহভাগ মানুষ এব্যাপারে কিছুই জানতে পারে না। আপনি যদি এইসব বিষয়ে লিখেন, তাহলে অনেকেই উপকৃত হবে আশাকরি।

      জাযাকাল্লাহু খাইরান।

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী জন্ম চট্টগ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখেছেন। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস। বর্তমানে বেসরকারি চাকুরিজীবী। তাঁর ভালোলাগে বই পড়তে এবং পরিবারকে সময় দিতে।

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

অটিজম কী, অটিজম কেন হয় এবং অটিজমের লক্ষণ ও চিকিৎসা কী?

প্রকাশ: ১২:১৬:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ মার্চ ২০২২

২ এপ্রিল, বিশ্ব অটিজম দিবস। অটিজম হচ্ছে স্নায়ুর বিকাশজনিত মানসিক ও শারিরীক একটি রোগ। যা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশকে বাঁধাগ্রস্থ করে। এই রোগ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অসচেতন। তাই এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করা হয়।

এই নিবন্ধে অটিজম কী, কেন এবং কখন এই রোগ হয়। এই রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা কী,  এবং বাংলাদেশে এই রোগের পরিস্থিতি ও সচেতনতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। 

অটিজম কী?

অটিজম হচ্ছে  শিশুদের স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা সম্পর্কিত একটি রোগ। যে রোগে একটি শিশুর  সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে অসুবিধা হয়। চারপাশের পরিবেশ ও ব্যক্তির সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা ইশারা ইংগিত ইত্যাদির মাধ্যমেও যোগাযোগের সমস্যা হয় এবং আচরণেরও পরিবর্তন হয়। মোটকথা যে সমস্যা একটি শিশুকে শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে অপূর্ণতায় পর্যবসিত করে তাকে অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বলে। 

অটিজমকে অনেকে মানসিক রোগ মনে করলেও এটি প্রধানত স্নায়ুবিক বিকাশ-জনিত সমস্যা। যে সমস্যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি আর দশজন মানুষের সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ ও সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়।

অটিজম হওয়ার কারণ

অটিজম স্নায়ুবিকাশ জনিত রোগ হলেও এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু বিষয়কে অটিজমের কারণ হিসেবে দেখা হয়। বিশেষ করে, বংশে কারও অটিজমের সমস্যা থাকা, গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা করা, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, অতিমাত্রায় ঔষধ সেবন, মায়ের ধুমপান ও মদ্যপানসহ গর্ভকালীন সংক্রমণ যেমন: মাম্পস, রুবেলা, মিসেলস ইত্যাদি হওয়া। 

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় মায়ের  সাথে পরিবারের সম্পর্কের ঘাটতি থাকা, বেশি বয়সে বাচ্চা নেওয়া, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল  সমস্যা দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, মৃগীরোগ, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (Obsessive Compulsive Disorder – OCD),  মনোযোগ-ঘাটতি, বাইপোলার ডিসঅর্ডার সিজোফ্রেনিয়া,  হাইপারঅ্যাক্টিভিটি  ডিসঅর্ডার (ADHD)। 

সেইসাথে কম ওজনে শিশুর জন্ম হওয়া,  গর্ভাবস্থায় বিষাক্ত সিসাযুক্ত বাতাসে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া, প্রসবকালীন সময়ে  কোনো জটিলতা, মা ও শিশুর অপুষ্টিজনিত সমস্যা ইত্যাদি কারণেও অটিজম হতে পারে। 

অটিজমের লক্ষণ কী কী?

  • অটিজম আক্রান্ত শিশুর প্রধান সমস্যা হলো ভাষা। তাই এই রোগে আক্রান্তদের শুরুতেই ভাষা আয়ত্ত করতে সমস্যা হয়। যেমনঃ একবছর বয়সের মধ্যে ‘মা–মা’, ‘বা—বা’, ‘বু–বু’ চা–চা ‘ কা–কা ‘ ‘দা–দা ইত্যাদি উচ্চারণ করতে না পারা। 
  • অনেক শিশুর অল্প মাত্রায় হলেও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেওয়া, সেইসাথে কারো মাঝে শারীরিক বৃদ্ধির ঘাটতি দেখা দেওয়া। 
  • শিশুর দুই বছরের  মধ্যে অর্থপূর্ণ দুটি শব্দ দিয়ে কথা বলতে না পারা। কিছু কিছু  শিশুর ক্ষেত্রে কথা বলতে জড়তা সৃষ্টি হওয়া। কোনো কোনো শিশু কথা বলা শুরু করলেও পরে আস্তে আস্তে ভুলে যাওয়া। 
  • শিশু চোখে চোখ রাখতে না পারা। নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া। হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে উঠা। শিশুর মানসিক অস্থিরতা বেশি থাকা। সেইসাথে  বিষন্নতা, উদ্বিগ্নতা ও মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেওয়া। 
  • অটিজমে রোগে আক্রান্ত শিশুরা দেখা, শোনা, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, , আলো বা স্পর্শের প্রতি অনেক সংবেদনশীল বা প্রতিক্রিয়াহীন হয়।
  • অন্যান্য সমবয়সী শিশুর  সাথে মিশতে সমস্যা হওয়া এবং বড়দের সাথেও মিশতে না পারা কারো আদর নিতে বা দিতে না পারা। এমনকি কারো প্রতি আগ্রহও না থাকা এবং পরিবেশ অনুযায়ী মুখ ভঙ্গি পরিবর্তন করতে না পারা। 
  • সব সময় একা একা থাকার চেষ্টা করা। ঘরের একটা নির্দিষ্ট স্থানে নিজের মত থাকার চেষ্টা করা। 
  • আক্রান্ত শিশু পছন্দের বা আনন্দের কোনো কিছুকে অন্যান্যদের সাথে ভাগাভাগি করতে না পারা।
  • অন্যের থেকে শোনা কথা বার বার বলতে থাকা এবং  বার বার একই আচরণ করা। 
  • একটি নিজস্ব রুটিন মেনে চলতে পছন্দ করা, রুটিনের কোন পরিবর্তন সহ্য করতে না পারা। নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা এবং পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে না পারা। 

অটিজম কখন প্রকাশ পায়?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের সাথে সাথে যেমন: শিশুর দেড় থেকে তিন বছর বয়সের সাথে সাথেই অটিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ পায়।

যেসব সমস্যা আরও থাকতে পারে—

অটিজম আক্রান্ত  শিশুদের মধ্যে এই রোগ ছাড়াও  খিঁচুনি (মৃগী), বুদ্ধির ঘাটতি অতিচঞ্চলতা বা হাইপার অ্যাক্টিভিটি, , হাতের কাজ করতে না পারার জটিলতা, দাঁতের সমস্যা, হজমের সমস্যা, খাবার চিবিয়ে খেতে না পারা ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে।

শিশুর দেড় থেকে তিন বছর বয়সের সাথে সাথেই অটিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ পায়

অটিজমের চিকিৎসা কী?

বাংলাদেশে অটিজম সম্পর্কে ধারণা খুবই কম। যারফলে অনেকেই শুরুতে এই রোগ  নির্ণয় করতে পারে না। যারফলে  চিকিৎসা করতে বিলম্বিত হয় । বিশেষজ্ঞরা বলেন, অটিজম কোনো রোগ নয়। এটি একটি মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ জনিত সমস্যা।  যা একটি শিশুকে সামাজিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি করতে বাঁধা সৃষ্টি করে।  

কিন্তু দ্রুত শনাক্ত করে  শিশুর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে পারলে এই শিশুরাও অন্যান্য শিশুদের মত উন্নতি করতে পারে। সবার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ এবং উপদেশ নিয়ে শিশুর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এরপর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পরিচর্যা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ আর প্রয়োজনে বিশেষ কিছু সমস্যার ওষুধ সেবন করতে হবে।

অটিজম আছে এমন শিশুদের আচরণজনিত সমস্যা, অতিচঞ্চলতা, অস্থিরতা, নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা, খিঁচুনি বা খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদির জন্য পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই সীমিত আকারে ওষুধের প্রয়োগ রয়েছে। এই ওষুধ তাকে প্রশিক্ষণের উপযোগী করে তুলবে এবং সহযোগী সমস্যাকে কমাতে সাহায্য করবে। 

পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন

অটিজম সম্পর্কে আমাদের দেশে আলোচনা হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ সামাজিক সচেতনতা এখনো সৃষ্টি হয়নি। বিশেষ করে আক্রান্ত শিশুর পরিবার পরিজনেরাই কখ‌নো এই জাতীয় শিশুকে মেনে নেয় না। ফলে শিশুটি জন্মের পর থেকেই অবহেলিত হয়। যদিও বিগত কয়েক বছরে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে বাংলাদেশে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বহুগুণ বেড়েছে। 

সচেতনতার কারণে  অনেক বেশি অটিজম শিশুরা শনাক্ত হচ্ছে এবং সঠিক পরিচর্যা ও সেবা পাচ্ছে। কিন্তু তারপরও অটিজম নিয়ে সমাজে ব্যাপক ভুল ভ্রান্তি রয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, অটিজম সম্পন্ন শিশুর মা–বাবারা সহজে মেনে নিতে চায় তার সন্তানের অটিজম আছে। এরা এই শিশুকে পাপের ফসল বলে মনে করে। ফলে দীর্ঘসময় একটা বিভ্রান্তিতে থাকতে থাকতে উপযুক্ত পরিচর্যা আর প্রশিক্ষণের সময় নষ্ট হয়ে যায়। 

এতোকিছুর পরও পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে যতটুকু সচেতনতার প্রয়োজন তা পরিপূর্ণভাবে হচ্ছে না। তাই সরাসরি ও বেসরকারি উদ্যোগে আরও বেশী বেশী সচেতনতামূলক কর্মপরিকল্পনা নেয়া উচিত। কেননা এই রোগে আক্রান্তদের এখনো লোকে পাগল মনে করে। বা মানসিক প্রতিবন্ধীদের সাথে অটিজমকে এক করে ফেলে।

তাই অটিজমকে পাঠ্যপুস্তকের আওতাভুক্ত করে এর ব্যাপক প্রচারণা করা উচিত। সেইসাথে গ্রাম পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে এই শিশুদের ভার সরকারের নেওয়া উচিত। কেননা আমাদের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা না থাকায় তারা এই জাতীয় রোগের চিকিৎসা করাতে আগ্রহী হয় না। ফলে এই রোগে আক্রান্তরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবহেলিতই থেকে যায়। তাই অটিজম সম্পর্কে পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে ব্যাপক সচেতনতা ও সহায়তা বৃদ্ধি হওয়া খুবই প্রয়োজন। 

২০২২ সালের অটিজম দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, “অটিজম: কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি”

অটিজমে আক্রান্তদের কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন

২০২২ সালের অটিজম দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, “অটিজম: কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি”। অর্থাৎ অটিজম আক্রান্তরা যাতে ধীরে ধীরে কর্মক্ষেত্রেও প্রবেশ করতে পারে সেই ধারা শুরু করার জন্য এই পদক্ষেপ হাতে নেওয়া। অটিস্টিকরা সমাজ এবং পরিবারের বোঝা নয়। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের  সহযোগিতায় পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ পেলে একজন অটিস্টিকও হয়ে উঠতে পারে সমাজ এবং দেশের সম্পদ। অটিস্টিকরা প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি করে চাইলে কর্মক্ষেত্রেও যোগদান করতে পারে।

তাদের কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়াই হচ্ছে এই বছরের মূল প্রতিপাদ্য। একজন অটিস্টিক যাতে সমাজের মূল ধারার সাথে মিশে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য এখন থেকেই চেষ্টা শুরু করতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে অটিস্টিকরা সুস্থ হয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারলে, তা পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্য হবে বড় পাওয়া।

তাই আমাদের উচিত অটিস্টিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা। যদিও এই কাজে প্রচুর বাঁধা এবং প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবুও সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকলে এক সময় না একসময় অবশ্যই সফলতা আসবে। সকলের সহযোগিতা আছে বলেই এখন অটিস্টিকরা পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। যদি এই সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখা যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই অটিস্টিকরাই হয়ে উঠবে দেশের সম্পদ।

আসুন আমরা সবাই অটিজম সম্পর্কে সচেতন হই। বিশেষকরে গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রতি যত্নবান হই। যেসব সমস্যার কারণে শিশুর অটিজমসহ অন্যান্য রোগের সৃষ্টি হতে পারে, সেইসব কারণ সম্পর্কে সচেতন হই। সেইসাথে পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের সর্বস্তরে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা সৃষ্টি করি।  তাদের সুস্থ করে তোলার মাধ্যমে দেশের সম্পদে পরিনত করি। যাতে তারাও সুস্থ হয়ে তাদের উপযোগী বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারে। তাহলেই একজন অটিস্টিক শিশু বা ব্যক্তি এই সুন্দর পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার উপলক্ষ্য পাবে।