পানির নিচে অষ্টম মহাদেশ জিল্যান্ডিয়া সম্পর্কে কী জানা যায়? জিল্যান্ডিয়া মহাদেশের ইতিহাস কী?
- প্রকাশ: ০৩:৫৭:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০২২
- / ১৪৬৯ বার পড়া হয়েছে
জিল্যান্ডিয়া (Zealandia) হলো একটি প্রায় নিমজ্জিত মহাদেশীয় ভূখণ্ডাংশ (continental fragment)। অনেকেই বলে থাকেন যে, জিল্যান্ডিয়া হলো পৃথবীর অষ্টম মহাদেশ, যেটি কিনা নিউজিল্যান্ড মহাদেশ বা তাসমান্টিস (Tasmantis) নামেও পরিচিত। ১৬৪২ সালে আবেল টাসমান আবিষ্কার করেন জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ।
৬-৮.৫ কোটি বছর আগে এটি অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পর ক্রমশ নিমজ্জিত হয়, ইতোপূর্বে ৮.৫-১৩ কোটি বছর আগে জিল্যান্ডিয়া ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। ২.৩ কোটি বছর আগে সম্ভবত মহাদেশটি সম্পূর্ণ নিমজ্জিত ছিল, এবং বর্তমানে মহাদেশটির সিংহভাগই (৯৪%) প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে নিমজ্জিত। জিল্যান্ডিয়ার সাথে চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে অবস্থিত বোলোন্স ডুবো আগ্নেয়গিরি কতটা ভালোভাবে সংযুক্ত তা এখনও অজ্ঞাত।
বর্তমান সংজ্ঞা অনুযায়ী জিল্যান্ডিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় ভূখণ্ডাংশ বা অণুমহাদেশ বা মাইক্রোকন্টিনেন্ট (microcontinent), যার আয়তন প্রায় ৪৯,২০,০০০ কি.মি.। এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম অণুমহাদেশের আয়তনের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অর্ধেকের বেশি। ভূতাত্ত্বিক কারণে, যেমন: ভূপৃষ্ঠের পুরুত্ব ও ঘনত্ব বিচার করে, জিল্যান্ডিয়াকে অনেক সময় একটি পূর্ণ মহাদেশ হিসেবেও গণ্য করা হয়।
জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ সম্পর্কে কী জানা যায়? কীভাবে আবিষ্কৃত হলো জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ? এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, এমন কি তারা এর উত্তর খুঁজে বের করারও চেষ্টা করছেন।
জুলাই ২৬, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে সাংবাদিক জারিয়া গোরভেট বিবিসিতে একটি প্রতিবেদন লেখেন সেখানে জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ সম্পর্কে খুবই মজার ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ পায়। এখানে দেই প্রতিবেদনের বাংলা সংস্করণ এখানে তুলে ধরা হলো—
জিল্যান্ডিয়া: হারিয়ে যাওয়া যে মহাদেশ খুঁজে পেতে পৌনে চারশ বছর লেগেছে
প্রতিবেদক জারিয়া গোরভেট
সেটা ১৬৪২ সালের কথা। গোঁফ-দাড়িওয়ালা অভিজ্ঞ ডাচ নাবিক আবেল টাসমান বের হয়েছেন এক অভিযাত্রায়। আবেল টাসমান তাঁর অধীনস্থ নাবিকরা কেউ এদিক-ওদিক করলে কঠোর শাস্তি দিতেন। একবার তিনি তাদের কয়েকজনকে ফাঁসিতে ঝোলাবারও চেষ্টা করেছিলেন— প্রচুর মদ্যপানের পর মাতাল অবস্থায়।
সেই সময়টা ইউরোপিয়ান নাবিক অভিযাত্রীদের সাগর পাড়ি দিয়ে নতুন নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কারের যুগ। আর পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ তখনো ইউরোপিয়ানদের কাছে এক রহস্যময় জায়গা।

প্রাচীন রোমান যুগ থেকেই ইউরোপের লোকেরা বিশ্বাস করতো, পৃথিবীর দক্ষিণদিকে কোথাও এক বিশাল ভূখণ্ড আছে, এবং তা আবিষ্কৃত হবার আগেই তার নামও দেয়া হয়ে গিয়েছিল ‘টেরা অস্ট্রালিস’। টাসমানও নিশ্চিত ছিলেন যে, দক্ষিণ গোলার্ধে এক অনাবিষ্কৃত বিশাল মহাদেশ আছে এবং তার রোখ চেপেছিল যে সেটা খুঁজে বের করতেই হবে।
সেই ইচ্ছা নিয়েই ১৬৪২ সালের ১৪ই আগস্ট যাত্রা শুরু করলেন টাসমান। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় ছিল তার কোম্পানির ঘাঁটি, সেখান থেকেই দুটি ছোট জাহাজ নিয়ে রওনা দিলেন তিনি। প্রথম গেলেন পশ্চিম দিকে, তারপর দক্ষিণে এবং শেষ পর্যন্ত এখন যেটা নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ড বলা হয়— সেখানে পৌঁছালেন।
সেখানে আরো কয়েকশ বছর আগে থেকেই বসতি স্থাপনকারী মাওরি জনগোষ্ঠীর মানুষদের সাথে টাসমানের প্রথম সাক্ষাৎ খুব প্রীতিকর হয়নি।
মাওরিরা ক্যানু জাতীয় ছোট নৌকা দিয়ে আঘাত করে ইউরোপিয়ানদের একটি ছোট নৌকা ডুবিয়ে দিল— যেটি ডাচ জাহাজগুলোর মধ্যে বার্তা বিনিময় করছিল।
এতে চার জন ইউরোপিয়ান মারা যায়। পরে ইউরোপিয়ানরা ১১ টি ক্যানু লক্ষ্য করে কামানের গোলা ছোঁড়ে। তবে এতে কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা জানা যায় না। টাসমানের অভিযান সেখানেই শেষ হয়। তিনি ওই জায়গাটার নাম দেন “মুরডেনের্স বে” যার অর্থ খুনীদের উপসাগর— এবং তারপর তাঁর নতুন পাওয়া ভূখণ্ডের ওপর পা না ফেলেই তিনি কয়েক সপ্তাহ পরে দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে, তিনি আসলেই সেই বিরাট দক্ষিণাঞ্চলীয় মহাদেশটি আবিষ্কার করেছেন, কিন্তু একে কেন্দ্র করে যে বাণিজ্যিক লাভ হবে বলে তিনি কল্পনা করেছিলেন— তার সাথে এর কোন মিল পাননি তিনি। আর কখনো এখানে ফিরেও আসেননি টাসমান।
এখন যা অস্ট্রেলিয়া— তার কথা সে সময় অনেকেই জানতো, কিন্তু ইউরোপিয়ানরা মনে করেছিল এটি তাদের কল্পিত সেই বিশাল দক্ষিণাঞ্চলীয় মহাদেশ নয়। পরে অবশ্য তারা মত পরিবর্তন করে এবং টেরা অস্ট্রালিসের নাম থেকেই অস্ট্রেলিয়া নামটি দেয়া হয়।
কিন্তু তাসমান কখনো বুঝতে পারেননি যে তাঁর ধারণা সঠিক এবং নিখোঁজ একটি মহাদেশ সত্যিই আছে।
পানির নিচের মহাদেশ ‘জিল্যান্ডিয়া’
২০১৭ সালে সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হন এক দল ভূতত্ববিজ্ঞানী। তারা ঘোষণা করেন যে তারা জিল্যান্ডিয়া নামে এক মহাদেশ আবিষ্কার করেছেন যার আয়তন ১৮ লক্ষ ৯০ হাজার বর্গমাইল। মাওরি ভাষায় এর নাম তে-রিউ-আ-মাওয়ি, এবং এটা মাদাগাস্কারের চেয়ে ৬ গুণ বড়ো।
এতদিন পর্যন্ত পৃথিবীর যত বিশ্বকোষ, মানচিত্র, সার্চ ইঞ্জিন— সবারই ছিল এক কথা যে— মহাদেশের সংখ্যা সাতটি।
কিন্তু সেই গবেষক দল আত্মবিশ্বাসের সাথেই বললেন, এটা ঠিক নয়। মহাদেশ আটটি, এবং এই নতুনটি হচ্ছে সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে সরু, এবং নবীনতম মহাদেশ।
সমস্যা হলো, এর ৯৪ শতাংশই পানির নিচে ডুবে আছে। শুধু মাত্র কিছু দ্বীপ— যেমন: নিউজিল্যান্ড— পানির ওপরে মাথা বের করে রেখেছে। কিন্তু বাকিটুকু আমাদের সবার চোখের সামনে এতদিন লুকিয়ে ছিল।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাউন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জিএনএস সায়েন্সের ভূতত্ত্ববিদ অ্যান্ডি টালশ হচ্ছেন ‘জিল্যান্ডিয়া’ আবিষ্কারক দলটির একজন। তিনি বলছেন “কোন কিছু চোখের সামনে থাকলেও যে তা উদ্ঘাটন করতে এতদিন লাগতে পারে— তারই এক দৃষ্টান্ত এটি।” কিন্তু এ তো শুরু মাত্র। চার বছর পরও এই জিল্যান্ডিয়া এখনো একটি ধাঁধাঁ হয়েই আছে। এই মহাদেশ এখনো লুকিয়ে আছে ২ কিলোমিটার সাগরের পানির নিচে।
কীভাবে এ মহাদেশের জন্ম হয়েছিল? এখানে বাস করতো কারা? কতদিন ধরেই বা এটি পানির নিচে ডুবে রয়েছে?
জিল্যান্ডিয়া অনেক পরিশ্রমের পর আবিষ্কার
সত্যি কথা বলতে কী, জিল্যান্ডিয়া সম্পর্কে জানার চেষ্টা সবসময়ই ছিল কঠিন। আবেল টাসমানের নিউজিল্যান্ড আবিষ্কারের আরো একশ বছর পর ব্রিটিশ মানচিত্র-প্রস্তুতকারক জেমস কুককে পাঠানো হয়েছিল দক্ষিণ গোলার্ধে। তাঁর আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব ছিল পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখান দিয়ে শুক্রগ্রহের অতিক্রম করাকে পর্যবেক্ষণ করা— যাতে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব হিসেব করা যায়।
কিন্তু তাঁর সাথে ছিল আরেকটি বন্ধ খাম। তাকে বলে দেয়া হয়েছিল প্রথম কাজটা শেষ করার পরেই যেন তিনি তা খোলেন।
এতে ছিল অতি-গোপনীয় এক মিশনের নির্দেশিকা— সেটা হলো দক্ষিণের সেই অজানা মহাদেশ আবিষ্কার— যার ওপর দিয়েই তিনি খুব সম্ভবত নিউজিল্যান্ডে পৌঁছেছিলেন।
জিল্যান্ডিয়ার অস্তিত্বের সন্ধান প্রথম কে পেয়েছিলেন? কে আবিষ্কার করেন জিল্যান্ডিয়া?
স্কটিশ প্রকৃতিবিদ স্যার জেমস হেক্টর ১৮৯৫ সালে নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ উপকুলবর্তী অনেক দ্বীপ জরিপ করতে এক সফরে গিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম জিল্যান্ডিয়ার অস্তিত্বের প্রমাণ চিহ্নিত করেছিলেন।
ওই দ্বীপগুলোর ভূতাত্ত্বিক গঠন পরীক্ষা করে তিনি বলেছিলেন, “নিউজিল্যান্ড হচ্ছে একটি পর্বতমালার অবশিষ্টাংশ— যা হচ্ছে বর্তমানে পানিতে-ডুবে-থাকা একটি মহাদেশীয় এলাকার চূড়া, এবং এটি দক্ষিণ ও পূর্বদিকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত।” কিন্তু এর পরও জিল্যান্ডিয়ার বিষয়টি অনেকটাই অস্পষ্ট রয়ে যায়, এবং ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত এ বিষয়ে আর কিছুই ঘটেনি।
১৯৬০-এর দশকে ভূতত্ত্ববিদরা একটা মহাদেশের সংজ্ঞার ব্যাপারে একমত হন যে এটা হতে হবে এমন এক ভূতাত্ত্বিক অঞ্চল যা বিশাল এবং উঁচু, যাতে নানারকম শিলার উপস্থিতি থাকবে, যার উপরের স্তর হবে পুরু। এর পর ১৯৯৫ সালে আমেরিকান ভূ-পদার্থবিদ ব্রুস লুইয়েনডাইক এই এলাকাটিকে আবার মহাদেশ হিসেবে বর্ণনা করে প্রস্তাব দেন— একে জিল্যান্ডিয়া নামে ডাকা হোক।
প্রায় একই সময় জাতিসংঘের সমুদ্র আইন সংক্রান্ত কনভেনশন কার্যকর হয়— যার ফলে বিভিন্ন দেশের পক্ষে তাদের উপকুল থেকে ২০০ মাইল পর্যন্ত এলাকাকে তাদের ‘কন্টিনেন্টাল শেলফ’- বা মহীসোপানের অংশ হিসেবে দাবি করতে পারে- এবং সেখানকার খনিজ সম্পদও আহরণ করতে পারে।
এখন নিউজিল্যান্ড যদি প্রমাণ করতে পারে যে, দেশটি একটি বৃহত্তর মহাদেশের অংশ— তাহলে তাদের ভূখণ্ডের পরিমাণ অন্তত ৬ গুণ বেড়ে যাবে।
এই কনভেনশনের পর থেকেই সহসা ওই এলাকা নিয়ে গবেষণায় উৎসাহ তৈরি হলো। জরিপ থেকে যেসব শিলা পাওয়া গেল— তাতে জিল্যান্ডিয়ার অস্তিত্বের পক্ষে আরও স্পষ্ট প্রমাণ মিলতে লাগলো।
এর পর এলো উপগ্রহ প্রযুক্তি থেকে পাওয়া উপাত্ত। উপগ্রহ থেকে সমুদ্রের তলার ভূপ্রকৃতির যে বিশদ মানচিত্র তৈরি হলো তাতে স্পষ্ট ফুটে উঠলো জিল্যান্ডিয়ার ছবি— দেখা গেল তা আকারে প্রায় অস্ট্রেলিয়ার সমান বড়ো।
২০১৭ সালের জরিপের প্রধান ভূতত্ত্ববিদ নিক মর্টিমার বলছেন, “ব্যাপারটা সত্যি অন্যরকম। পৃথিবীর অন্য সব মহাদেশেই অনেকগুলো দেশ আছে। কিন্তু জিল্যান্ডিয়ায় আছে মাত্র তিনটি।”
এগুলো হচ্ছে নিউজিল্যান্ড, ফরাসী উপনিবেশ নিউ ক্যালেডোনিয়া, আর অস্ট্রেলিয়ার ক্ষুদ্র লর্ড হাউ দ্বীপ ও বল’স পিরামিড।
রহস্যময় ভূখণ্ড জিল্যান্ডিয়া
জিল্যান্ডিয়া ছিল প্রায় ৫৫ কোটি বছর আগে তৈরি হওয়া প্রাচীন সুপার-কন্টিনেন্ট গোন্ডওয়ানা-র অংশ। তবে সাড়ে দশ কোটি বছর আগে জিল্যান্ডিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে থাকে— যার কারণ এখনো অজানা বলছিলেন টালশ। পরে এই সরু আকারের মহাদেশটি সাগরে ডুবে গিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়।
কিন্তু ভূতত্ত্ববিদরা জানেন যে সরু এবং নিমজ্জিত হলেও এটি আসলে একটি মহাদেশ— যার প্রমাণ এখানে প্রাপ্ত শিলার প্রকৃতি। কারণ কন্টিনেন্টাল ভূ-স্তর প্রায় ৪০ কিলোমিটার গভীর হয়, এবং এতে গ্রানাইট, শিস্ট, এবং চুনাপাথর জাতীয় শিলা থাকে।
কিন্তু তবু জিল্যান্ডিয়ার অনেক কিছুই এখনো অজানা। এটা আকৃতিতে এত সরু কেন, কেনই বা এটা সাগরে তলিয়ে গিয়েছিল, আসলে কখনো এটা পানির ওপরে ছিল কিনা— এগুলো এখনও ভূতত্ত্ববিদদের কাছে রহস্য হয়েই রয়েছে।
টালশ বলছেন, জিল্যান্ডিয়া কখনো শুকনো স্থলভূমি ছিল কিনা, নাকি চিরকালই কিছু দ্বীপ ছাড়া পানির নিচে ডুবে ছিল— এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে।
যদি বলা যায় যে এটা স্থলভূমি ছিল— তাহলে এখানে কি প্রাণী বাস করতো, সেটাও একটা প্রশ্ন।
মনে করা হয় নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এবং বিরাট আয়তনের কারণে গোন্ডওয়ানাতে প্রচুর উদ্ভিদ ও চারপেয়ে জন্তুসহ বহু প্রাণী ছিল। তার একটি ছিল অতিকায় টিটানোসর।
জিল্যান্ডিয়ার মাটিতে এখনো তাদের দেহাবশেষ পাওয়া যাবে?
নিউজিল্যান্ডে ১৯৯০ এর দশকে এবং ২০০৬ সালে অতিকায় তৃণভোজী ও মাংসাশী ডাইনোসরের দেহাবশেষ বা ফসিল পাওয়া গেছে।
এগুলোর জীবনকাল গোন্ডওয়ানা থেকে জিল্যান্ডিয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার পরবর্তী সময়ের সাথে মিলে যায়। কিন্তু তা হলেও, জিল্যান্ডিয়ায় ডাইনোসর ঘুরে বেড়াতো কিনা— এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক আছে।
কিউই’র আত্মীয় কেন ৭ হাজার মাইল দূরের মাদাগাস্কারে?
সবচেয়ে রহস্যময় হলো নিউজিল্যান্ডের অদ্ভূত পাখি কিউইর প্রশ্নটি। এর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ জীববৈজ্ঞানিক আত্মীয় হলো এপিওমিস বা জায়ান্ট এলিফ্যান্ট বার্ড— যা ৮০০ বছর আগেও ৭ হাজার মাইলেরও বেশি দূরের মাদাগাস্কারের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো।
একারণে বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই দুই পাখিরই একটি অভিন্ন পূর্বপুরুষ ছিল যা একসময় গোন্ডওয়ানায় বাস করতো— যে ভূখণ্ড পরে ১৩ কোটি বছর ধরে টুকরো টুকরো হয়ে এখনকার দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, অ্যান্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া, আরব উপদ্বীপ, ভারত উপমহাদেশ ও জিল্যান্ডিয়ার অংশ হয়ে গিয়েছে।
তাই হয়তো এমন হতে পারে যে জিল্যান্ডিয়া হয়তো একসময় সমুদ্রস্তরের ওপরেই ছিল, এবং আড়াই কোটি বছর আগে নিউজিল্যান্ডের বর্তমান ভূখণ্ড ছাড়া বাকি সবটাই সাগরের পানিতে তলিয়ে গেছে।
২০১৭ সালের এক ব্যাপক ভূতাত্ত্বিক জরিপে ড্রিলিংএর মাধ্যমে জিল্যান্ডিয়ার শিলার অভ্যন্তরীণ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাতে মাটির ওপরের গাছের ফুলের রেণু থেকে শুরু করে উষ্ণ-অগভীর জলে বাস করে এমন প্রাণীর দেহকোষের নানা অংশ পাওয়া যায়।
ওয়েলিংটনের ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক রুপার্ট সাদারল্যান্ড বলছেন, মাটির ওপরের গাছের রেণু পাওয়া যাওয়াতে মনে হয় জিল্যান্ডিয়া হয়তো চিরকাল পানিতে ডুবে ছিল না।
তিনি বলছেন, নিউজিল্যান্ডের ভূতাত্ত্বিক গঠন ও মানচিত্র দেখলে বোঝা যায় এখানে কিছু অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য আছে। মেডিয়ান বাথোলিথ নামে একটি শিলার স্তর— যা লম্বালম্বি ছিল, তা হঠাৎ ভেঙে আড়াআড়ি হয়ে গেছে। সম্ভবত টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়ার কারণে এটা হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু কীভাবে এবং কখন তা হয়েছিল তা অজ্ঞাত।
টালশ বলছেন— অনেকভাবে এগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কিন্তু বহু বিষয়ই এখনো অজানা।
বলা যায়, আবেল টাসমানের অভিযানের প্রায় ৪০০ বছর পরও এখনো বহু কিছুরই রহস্যেদ্ঘাটন বাকি রয়ে গেছে।
অষ্টম মহাদেশ জিল্যান্ডিয়া প্রসঙ্গে জারিয়া গোরভেট’এর প্রতিবেদনটি শেষ হলো।