০১:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

তাওহিদ কী এবং তাওহিদের শ্রেণিবিভাগ

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
  • প্রকাশ: ০৬:০৬:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২
  • / ১৭৫৯ বার পড়া হয়েছে

তাওহিদ শব্দের সোজা অর্থ হলো এক, একক, অদ্বিতীয়, একত্ব


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

আল্লাহ্ জিন এবং ইনসান (মানুষ) সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদতের জন্য। [সুরা জারিয়া’ত ৫১:৫৬] ” ইবাদত করতে হলে অবশ্যই আল্লাহকে চিনতে হবে জানতে হবে। আর ‘তাওহিদ’ হচ্ছে আল্লাহ্‌র একমাত্র পরিচয়। যার তাওহিদ সম্পর্কে ধারণা নেই তার কাছে আল্লাহ্ সম্পর্কে প্রকৃত এবং সঠিক জ্ঞান নেই।

তাওহিদ অর্থ কী?

তাওহিদ শব্দের সোজা অর্থ হলো এক, একক, অদ্বিতীয়, একত্ব। ইসলামি পরিভাষায় তাওহিদ শব্দটি যখন আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত হয় তখন এর অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহ্ এক, একক এবং অদ্বিতীয় তথা তাঁর মতো দ্বিতীয় কোনো ইলাহ বা উপাস্য নেই।

সুতরাং ‘তাওহিদ’ হলো আল্লাহর একত্ব তথা একত্ববাদ। তিনি ছাড়া এই বিশ্ব জগতে অন্য কোনো দ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তা, আইনপ্রণেতা, উপাস্য বা কতৃত্ববাদী কেউ নেই। তিনি ই সর্বেসর্বা একক রব।

অর্থাৎ আল্লাহ্‌র ‘তাওহিদ’ হলো তাঁর বান্দারা এই কথার স্বীকৃতি দিবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো পালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, উদ্ধারকর্তা, আইনপ্রণেতা, সর্বোচ্চ কতৃত্ব, ইলাহ ইত্যাদি নেই।

তাওহিদের শ্রেণিবিভাগ

তাওহিদ তিন প্রকারের। অর্থাৎ তিনটি বিষয়ের সমষ্টি তাওহিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, এই তিনটি বিষয় পুরোপুরি মেনে স্বীকৃতি দেওয়ার নামই হলো ‘তাওহিদ’।

তাওহিদের তিনটি ভাগ হলো—

  1. তাওহিদুল রুবুবিয়্যাহ
  2. তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ
  3. তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত

তাওহিদুল রুবুবিয়্যাহ

তাওহিদুল রুবিবিয়্যাহ হলো, আল্লাহ্ ই আমাদের একমাত্র রব। অর্থাৎ সৃষ্টি, রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও পরিচালনা এবং একমাত্র আইনপ্রণেতা আল্লাহকে এক, একক এবং অদ্বিতীয় হিসাবে বিশ্বাস করার নাম তাওহিদে রুবুবিয়্যাহ।

অতএব তিনি আমাদের পালনকর্তা তথা একমাত্র তাঁর প্রনীত সকল আইনকানুনই পালন করতে হবে মানতে হবে। তিনিই আমাদের সৃষ্টিকর্তা এবং রব। তার একক কতৃত্বকে মানার নামই হচ্ছে তাওহিদে রুবুবিয়্যাহ। এটি তিনটি ভাগে বিভক্ত।

  1. সৃষ্টিতে আল্লাহর একত্ব
  2. রাজত্বে আল্লহর একত্ব
  3. পরিচালনায় আল্লাহর একত্ব

সৃষ্টিতে আল্লাহর একত্ব

আল্লাহ একাই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আল্লাহ ছাড়া কোনো স্রষ্টা আছে কী? যে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন হতে জীবিকা প্রদান করে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা‘বুদ নেই।” [সুরা ফাতির, আয়াত: ৩]

অর্থাৎ জীবন্ত সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা শুধুমাত্র আল্লাহ্। অন্য আয়াতে বলেন,

"আল্লাহ সৃষ্টিকর্তাদের মধ্যে উত্তম সৃষ্টিকর্তা।” [সুরা আল-মুমিনুন আয়াত: ১৪]

অর্থাৎ পৃথিবীর মানুষও কিছু না কিছু সৃষ্টি করেন। তবে তারা যা সৃষ্টি করে তার থেকে সর্বোত্তম সৃষ্টিকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্। সুতরাং আল্লাহ্ যা সৃষ্টি করেছেন তাঁর অনুরূপ সৃষ্টি কখনোই মানুষ বা অন্য কোনো কথিত বাতিল ইলাহ সৃষ্টি করতে পারে না। 

আল্লাহ্ যা যে রূপ সৃষ্টি করেছেন এবং করতে পারেন, ঠিক একইরকম অন্য কেউ সৃষ্টি করে পারে এমন ধারণা কেউ যদি  পোষণ করে তাহলে সে সাথে কাফির  মুশরিকে পরিনত হবে। এটাই হলো আল্লাহর সৃষ্টিতে একত্ব।

রাজত্বে আল্লাহর একত্ব

আল্লাহ্ হচ্ছেন সকল রাজত্বের মালিক। তাঁর হাতেই পুরো সৃষ্টি জগতের রাজত্ব। 

আল্লাহ্ বলেন,

“(আল্লাহ্) সেই  মহান সত্বা অতীব বরকতময়, যার হাতে রয়েছে সকল রাজত্ব। আর তিনি প্রতিটি বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।” [সুরা আল-মুলক, আয়াত: ১]

আল্লাহ আরও বলেন,

“হে নবি! আপনি জিজ্ঞাসা করুন, সব কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে? যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যার ওপর কোনো আশ্রয় দাতা নেই।” [সুরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৮৮]

অর্থাৎ সর্বময় রাজত্ব হচ্ছে আল্লাহর। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন ভাগের বিভিন্ন রাজা বাদশার রাজত্ব রয়েছে। তাও আল্লাহর অধীনস্থ। আল্লাহ্ সমগ্র জগতের সকল রাজা বাদশার রাজত্বের উপর কতৃত্ববাদী।

অন্যের জন্য বরাদ্দকৃত সীমিত রাজত্বের ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন, 

“অথবা তোমরা যার চাবি-কাঠির (নিয়ন্ত্রনের) মালিক হয়েছো।” [সুরা আন-নুর, আয়াত: ৬১

আল্লাহ ছাড়াও পৃথিবীতে অন্যদেরও রাজত্ব রয়েছে। তবে এ রাজত্ব আল্লাহর রাজত্বের মতো নয়। সেটা অসম্পূর্ণ রাজত্ব। তা ব্যাপক রাজত্ব নয়; বরং তা একটা নির্দিষ্ট সীমারেখার ভেতরে।

পরিচালনায় আল্লাহর একত্ব

আল্লাহ্ ব্যতীত সমগ্র জগতের আর কোনো দ্বিতীয় পরিচালক নেই। একমাত্র আল্লাহ্ই পরিচালনা করেন সমগ্র বিশ্ব জগত। তাঁর আদেশ নির্দেশ এবং আইনেই চলছে,  চলবে এবং চলতে হবে পুরো বিশ্ব জাহান।

আল্লাহ্ বলেন, 

"সাবধান! সৃষ্টি তাঁরই, এর উপর প্রভুত্ব চালাবার-একে শাসন করার অধিকারও একমাত্র তাঁরই। " [সুরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]

অর্থাৎ, সমগ্র বিশ্ব জাহানের সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ্। আর এই বিশ্ব চলবেও একমাত্র আল্লাহর বিধানে তথা আইনে। 

বিশ্বে অসংখ্য দেশে তাদের দেশ পরিচালনার জন্য অসংখ্য আইন রয়েছে। আর আল্লাহর তাওহিদ হলো সমগ্র বিশ্ব শুধুমাত্র এবং একমাত্র আল্লাহর কিতাবের আইনে বিচার, ফয়সালা, দেশ পরিচালনা  ইত্যাদি চলবে। 

আল্লাহ্ বলেন, 

"নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না। " (সুরা: আন নিসা, আয়াত: ১০৫)

অতএব, সৃষ্টি যার পরিচালনার আইন, বিচার, বিধি বিধান ও ক্ষমতাও তাঁর। এখন কেউ যদি আল্লাহর আইনের পরিবর্তে নিজেরাই আইন তৈরি করে বা অন্য কোনো উৎস থেকে আইন তালাশ করে তাহলে তা হবে সুস্পষ্ট শিরক । 

তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ

আল্লাহ্ তাঁর বান্দা থেকে ইবাদত পাওয়ার একক এবং একমাত্র মালিক। মানুষ আল্লাহর জন্য যে ইবাদত করে সেই একই ইবাদত যদি অন্য কারো জন্য করা যাবে না। অথবা আল্লাহর ই ইবাদত আল্লাহর ভয় বা আশা নিয়ে না করে অন্য কারো ভয়ে বা লৌকিক ভাবে অন্য কাউকে দেখানোর জন্য করা হয় তাহলে তা তাওহিদুল উলুহিয়্যাহর শর্ত ভঙ্গ করবে।

অর্থাৎ আল্লাহকে বিশ্বাস করে আল্লাহর জন্য ইবাদত না করে অন্য কারো মন জয়ের জন্য করা হলে তা হবে সুস্পষ্ট শিরক। অতএব, তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ হলো শুধুমাত্র এবং একমাত্র আল্লাহ্ ই হলো ইবাদতের যোগ্য। তিনি ছাড়া আর কারো ভয়ে, আর কাউকে দেখানোর জন্য বা আর কারো কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশায় অন্য কারো জন্য ইবাদত করা যাবে না।

আরবের মক্কার মুশরিকরা আল্লাহ্ কে স্বীকার করতো এবং মানতো। কিন্তু তাঁরা আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি অন্যান্য দেব দেবী এবং আল্লাহর পূর্ববর্তী যুগের অলি আউলিয়ার মূর্তিরও ইবাদত করতো। শুধুমা শিরকের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই মক্কার মুশরিকরা রাসুল (সা.)-কে মেনে নিতে পারেনি এবং ইমান আনেনি।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, 

"নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শির্কে লিপ্ত হবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।" [সুরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২] 

যুগে নবি রাসুলগণ এই তাওহিদুল উলুহিয়্যাহর দাওআতই সাধারণ মানুষকে দিয়ে এসেছিলেন। যারা আল্লাহ্ কে স্বীকারের পাশাপাশি অন্যান্য উপাস্যও তৈরি করেছিল। সুতরাং আল্লাহর জন্য নির্ধারিত অনির্ধারিত যেকোনো ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক করা যাবে না।

উদাহরণ—

সালাত, সিয়াম, হজ, যাকাত, কুরবানি ইত্যাদি আনুষ্ঠানিক ইবাদত সমূহ হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর জন্য। অর্থাৎ আল্লাহর ভয় (জাহান্নাম) এবং আশা (জান্নাত) সহকারে তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এইসব ইবাদত করা।

কোনো মানদার এইসব ইবাদত লোক দেখানোর জন্য অর্থাৎ সালাত, সিয়াম  আদায় করছি লোকে পরহেজগার বলবে, হজ করছি লোকে হাজী বলবে, যাকাত, কুরবানি দিচ্ছি লোকে বড়ো দানবীর বলবে এই উদ্দেশ্যে করে ; তাহলে তা হবে ইবাদতের শিরক। 

সেইসাথে কোনো মানদার যদি আল্লাহর কোনো বান্দাকে (জীবিত বা মৃত) খুশি বা সন্তুষ্ট করার জন্য মাজারে দান,সদকা,মানত,কুরবানী ইত্যাদি করবে তবে তা হবে তাওহিদুল উলুহিয়্যাহর বিরোধী তথা শির্ক। 

আল্লাহ্ বলেন,

" (হে রাসুল) আপনি বলুন: আমার নামায, আমার কুরবানি এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। "(সুরা: আল আনআম, আয়াত: ১৬২)

তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত

সিফাত হলো গুণ। আসমা হলো নাম। আসমা ওয়াস সিফাত হলো, আল্লাহর গুণাবলী সম্বলিত নাম। সুতরাং তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাতের অর্থ হলো, আল্লাহ নিজেকে যেসব গুণাবলি সম্বলিত  নামে নামকরণ করেছেন সেইসব নামে এবং গুণে তিনি একক এবং অদ্বিতীয় কতৃত্ববাদী। অর্থাৎ তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই এবং হতে পারে না। 

শুধু তাই নয়, তিনি নিজেকে যেভাবে যে গুণে সাব্যস্ত করেছেন তার পরিবর্তন পরিবর্ধনও করা যাবে না। সেইসাথে তিনি যেসব গুণে গুণান্বিত সেই সব গুণ অন্য কারো আছে এমন ধারণা ও বিশ্বাস করা যাবে না। যদি এরূপ প্রমাণিত হয় তবে, তা হবে সুস্পষ্ট শির্ক।

এছাড়াও আল্লাহ্ নিজের যেসব বাহিয্যক গুণাবলী প্রকাশ করেছেন তাঁর স্বরুপ অনুসন্ধান করা, সাদৃশ্য করা ধারণা করা ইত্যাদি চিন্তা করা যাবে না। যেমন: শরীর সম্পর্কিত কিছু গুণের কথা পবিত্র কুরআনে এসেছে। 

আল্লাহ্ বলেন, 

"ইহুদিরা বলে, আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে, বরং তাদের হাতই বন্ধ। তাদের উক্তির দরুন তারা আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হয়েছে, বরং আল্লাহর উভয় হাত সদা উম্মুক্ত, যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেন।” [সুরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৬৪]

এখানে আল্লাহ তা‘আলা নিজের জন্য দু’টি হাত সাব্যস্ত করেছেন। যা দানের জন্য সদা প্রসারিত। সুতরাং আল্লাহর দু’টি হাত আছে এর ওপর ইমান আনতে হবে।  কিন্তু আমাদের উচিৎ হবেনা তাঁর কী রকম তা অনুসন্ধান করা।

 আল্লাহ্ বলেন, 

“কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সুরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

অর্থাৎ আল্লাহর সাদৃ‌শ্যের মতো কিছুই নেই। 

আল্লাহ আরো বলেন,

“তোমরা আল্লাহর জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করো না”। [সুরা আন-নাহল, আয়াত: ৭৪]-

কেননা আল্লাহ্ বলেন,

“যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না, নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু, অন্তর ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে।” [সুরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৬]

শেষকথা

উপর্যুক্ত বিষয় গুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহর কোনো গুণে কাউকে ধারণা করা যাবে না। যেমন: সন্তান দেওয়ার মালিক (আশ শুরা: ৪৯-৫০)  রিজিক দেওয়ার মালিক (তালাক :২-৩,সাবা: ৩৯), বিপদে উদ্ধারকারী (আন আম :৬৩), কারো ভালো করার মালিক (তাওবা : ৫০-৫১) ইত্যাদি সবই হচ্ছে আল্লাহর একমাত্র একক গুণ।

এখন কেউ যদি এইসব গুণ আল্লাহর কোনো বান্দার আছে বলে বিশ্বাস বা ধারণা করলে তা আল্লাহর তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাতের  বিরোধী হবে। এবং কেউ এমন করলে তা সরাসরি শিরক হবে।

আমাদের উচিত হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাওহিদের নির্ধারিত সীমা মেনে চলা। অধিকাংশ মুসলমানই ইমান আনে কিন্তু শিরক যুক্ত অবস্থায়। তাওহিদ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অধিকাংশ মানুষই জেনে না জেনে শির্কে লিপ্ত হচ্ছে। তাই আমাদের উচিত হবে তাওহিদ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করা। যাতেকরে আল্লাহ্কে সঠিকভাবে চেনা এবং জানা যায়। 

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী জন্ম চট্টগ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখেছেন। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস। বর্তমানে বেসরকারি চাকুরিজীবী। তাঁর ভালোলাগে বই পড়তে এবং পরিবারকে সময় দিতে।

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

তাওহিদ কী এবং তাওহিদের শ্রেণিবিভাগ

প্রকাশ: ০৬:০৬:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২

আল্লাহ্ জিন এবং ইনসান (মানুষ) সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদতের জন্য। [সুরা জারিয়া’ত ৫১:৫৬] ” ইবাদত করতে হলে অবশ্যই আল্লাহকে চিনতে হবে জানতে হবে। আর ‘তাওহিদ’ হচ্ছে আল্লাহ্‌র একমাত্র পরিচয়। যার তাওহিদ সম্পর্কে ধারণা নেই তার কাছে আল্লাহ্ সম্পর্কে প্রকৃত এবং সঠিক জ্ঞান নেই।

তাওহিদ অর্থ কী?

তাওহিদ শব্দের সোজা অর্থ হলো এক, একক, অদ্বিতীয়, একত্ব। ইসলামি পরিভাষায় তাওহিদ শব্দটি যখন আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত হয় তখন এর অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহ্ এক, একক এবং অদ্বিতীয় তথা তাঁর মতো দ্বিতীয় কোনো ইলাহ বা উপাস্য নেই।

সুতরাং ‘তাওহিদ’ হলো আল্লাহর একত্ব তথা একত্ববাদ। তিনি ছাড়া এই বিশ্ব জগতে অন্য কোনো দ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তা, আইনপ্রণেতা, উপাস্য বা কতৃত্ববাদী কেউ নেই। তিনি ই সর্বেসর্বা একক রব।

অর্থাৎ আল্লাহ্‌র ‘তাওহিদ’ হলো তাঁর বান্দারা এই কথার স্বীকৃতি দিবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো পালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, উদ্ধারকর্তা, আইনপ্রণেতা, সর্বোচ্চ কতৃত্ব, ইলাহ ইত্যাদি নেই।

তাওহিদের শ্রেণিবিভাগ

তাওহিদ তিন প্রকারের। অর্থাৎ তিনটি বিষয়ের সমষ্টি তাওহিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, এই তিনটি বিষয় পুরোপুরি মেনে স্বীকৃতি দেওয়ার নামই হলো ‘তাওহিদ’।

তাওহিদের তিনটি ভাগ হলো—

  1. তাওহিদুল রুবুবিয়্যাহ
  2. তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ
  3. তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত

তাওহিদুল রুবুবিয়্যাহ

তাওহিদুল রুবিবিয়্যাহ হলো, আল্লাহ্ ই আমাদের একমাত্র রব। অর্থাৎ সৃষ্টি, রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও পরিচালনা এবং একমাত্র আইনপ্রণেতা আল্লাহকে এক, একক এবং অদ্বিতীয় হিসাবে বিশ্বাস করার নাম তাওহিদে রুবুবিয়্যাহ।

অতএব তিনি আমাদের পালনকর্তা তথা একমাত্র তাঁর প্রনীত সকল আইনকানুনই পালন করতে হবে মানতে হবে। তিনিই আমাদের সৃষ্টিকর্তা এবং রব। তার একক কতৃত্বকে মানার নামই হচ্ছে তাওহিদে রুবুবিয়্যাহ। এটি তিনটি ভাগে বিভক্ত।

  1. সৃষ্টিতে আল্লাহর একত্ব
  2. রাজত্বে আল্লহর একত্ব
  3. পরিচালনায় আল্লাহর একত্ব

সৃষ্টিতে আল্লাহর একত্ব

আল্লাহ একাই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আল্লাহ ছাড়া কোনো স্রষ্টা আছে কী? যে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন হতে জীবিকা প্রদান করে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা‘বুদ নেই।” [সুরা ফাতির, আয়াত: ৩]

অর্থাৎ জীবন্ত সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা শুধুমাত্র আল্লাহ্। অন্য আয়াতে বলেন,

"আল্লাহ সৃষ্টিকর্তাদের মধ্যে উত্তম সৃষ্টিকর্তা।” [সুরা আল-মুমিনুন আয়াত: ১৪]

অর্থাৎ পৃথিবীর মানুষও কিছু না কিছু সৃষ্টি করেন। তবে তারা যা সৃষ্টি করে তার থেকে সর্বোত্তম সৃষ্টিকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্। সুতরাং আল্লাহ্ যা সৃষ্টি করেছেন তাঁর অনুরূপ সৃষ্টি কখনোই মানুষ বা অন্য কোনো কথিত বাতিল ইলাহ সৃষ্টি করতে পারে না। 

আল্লাহ্ যা যে রূপ সৃষ্টি করেছেন এবং করতে পারেন, ঠিক একইরকম অন্য কেউ সৃষ্টি করে পারে এমন ধারণা কেউ যদি  পোষণ করে তাহলে সে সাথে কাফির  মুশরিকে পরিনত হবে। এটাই হলো আল্লাহর সৃষ্টিতে একত্ব।

রাজত্বে আল্লাহর একত্ব

আল্লাহ্ হচ্ছেন সকল রাজত্বের মালিক। তাঁর হাতেই পুরো সৃষ্টি জগতের রাজত্ব। 

আল্লাহ্ বলেন,

“(আল্লাহ্) সেই  মহান সত্বা অতীব বরকতময়, যার হাতে রয়েছে সকল রাজত্ব। আর তিনি প্রতিটি বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।” [সুরা আল-মুলক, আয়াত: ১]

আল্লাহ আরও বলেন,

“হে নবি! আপনি জিজ্ঞাসা করুন, সব কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে? যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যার ওপর কোনো আশ্রয় দাতা নেই।” [সুরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৮৮]

অর্থাৎ সর্বময় রাজত্ব হচ্ছে আল্লাহর। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন ভাগের বিভিন্ন রাজা বাদশার রাজত্ব রয়েছে। তাও আল্লাহর অধীনস্থ। আল্লাহ্ সমগ্র জগতের সকল রাজা বাদশার রাজত্বের উপর কতৃত্ববাদী।

অন্যের জন্য বরাদ্দকৃত সীমিত রাজত্বের ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন, 

“অথবা তোমরা যার চাবি-কাঠির (নিয়ন্ত্রনের) মালিক হয়েছো।” [সুরা আন-নুর, আয়াত: ৬১

আল্লাহ ছাড়াও পৃথিবীতে অন্যদেরও রাজত্ব রয়েছে। তবে এ রাজত্ব আল্লাহর রাজত্বের মতো নয়। সেটা অসম্পূর্ণ রাজত্ব। তা ব্যাপক রাজত্ব নয়; বরং তা একটা নির্দিষ্ট সীমারেখার ভেতরে।

পরিচালনায় আল্লাহর একত্ব

আল্লাহ্ ব্যতীত সমগ্র জগতের আর কোনো দ্বিতীয় পরিচালক নেই। একমাত্র আল্লাহ্ই পরিচালনা করেন সমগ্র বিশ্ব জগত। তাঁর আদেশ নির্দেশ এবং আইনেই চলছে,  চলবে এবং চলতে হবে পুরো বিশ্ব জাহান।

আল্লাহ্ বলেন, 

"সাবধান! সৃষ্টি তাঁরই, এর উপর প্রভুত্ব চালাবার-একে শাসন করার অধিকারও একমাত্র তাঁরই। " [সুরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]

অর্থাৎ, সমগ্র বিশ্ব জাহানের সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ্। আর এই বিশ্ব চলবেও একমাত্র আল্লাহর বিধানে তথা আইনে। 

বিশ্বে অসংখ্য দেশে তাদের দেশ পরিচালনার জন্য অসংখ্য আইন রয়েছে। আর আল্লাহর তাওহিদ হলো সমগ্র বিশ্ব শুধুমাত্র এবং একমাত্র আল্লাহর কিতাবের আইনে বিচার, ফয়সালা, দেশ পরিচালনা  ইত্যাদি চলবে। 

আল্লাহ্ বলেন, 

"নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না। " (সুরা: আন নিসা, আয়াত: ১০৫)

অতএব, সৃষ্টি যার পরিচালনার আইন, বিচার, বিধি বিধান ও ক্ষমতাও তাঁর। এখন কেউ যদি আল্লাহর আইনের পরিবর্তে নিজেরাই আইন তৈরি করে বা অন্য কোনো উৎস থেকে আইন তালাশ করে তাহলে তা হবে সুস্পষ্ট শিরক । 

তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ

আল্লাহ্ তাঁর বান্দা থেকে ইবাদত পাওয়ার একক এবং একমাত্র মালিক। মানুষ আল্লাহর জন্য যে ইবাদত করে সেই একই ইবাদত যদি অন্য কারো জন্য করা যাবে না। অথবা আল্লাহর ই ইবাদত আল্লাহর ভয় বা আশা নিয়ে না করে অন্য কারো ভয়ে বা লৌকিক ভাবে অন্য কাউকে দেখানোর জন্য করা হয় তাহলে তা তাওহিদুল উলুহিয়্যাহর শর্ত ভঙ্গ করবে।

অর্থাৎ আল্লাহকে বিশ্বাস করে আল্লাহর জন্য ইবাদত না করে অন্য কারো মন জয়ের জন্য করা হলে তা হবে সুস্পষ্ট শিরক। অতএব, তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ হলো শুধুমাত্র এবং একমাত্র আল্লাহ্ ই হলো ইবাদতের যোগ্য। তিনি ছাড়া আর কারো ভয়ে, আর কাউকে দেখানোর জন্য বা আর কারো কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশায় অন্য কারো জন্য ইবাদত করা যাবে না।

আরবের মক্কার মুশরিকরা আল্লাহ্ কে স্বীকার করতো এবং মানতো। কিন্তু তাঁরা আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি অন্যান্য দেব দেবী এবং আল্লাহর পূর্ববর্তী যুগের অলি আউলিয়ার মূর্তিরও ইবাদত করতো। শুধুমা শিরকের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই মক্কার মুশরিকরা রাসুল (সা.)-কে মেনে নিতে পারেনি এবং ইমান আনেনি।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, 

"নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শির্কে লিপ্ত হবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।" [সুরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২] 

যুগে নবি রাসুলগণ এই তাওহিদুল উলুহিয়্যাহর দাওআতই সাধারণ মানুষকে দিয়ে এসেছিলেন। যারা আল্লাহ্ কে স্বীকারের পাশাপাশি অন্যান্য উপাস্যও তৈরি করেছিল। সুতরাং আল্লাহর জন্য নির্ধারিত অনির্ধারিত যেকোনো ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক করা যাবে না।

উদাহরণ—

সালাত, সিয়াম, হজ, যাকাত, কুরবানি ইত্যাদি আনুষ্ঠানিক ইবাদত সমূহ হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর জন্য। অর্থাৎ আল্লাহর ভয় (জাহান্নাম) এবং আশা (জান্নাত) সহকারে তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এইসব ইবাদত করা।

কোনো মানদার এইসব ইবাদত লোক দেখানোর জন্য অর্থাৎ সালাত, সিয়াম  আদায় করছি লোকে পরহেজগার বলবে, হজ করছি লোকে হাজী বলবে, যাকাত, কুরবানি দিচ্ছি লোকে বড়ো দানবীর বলবে এই উদ্দেশ্যে করে ; তাহলে তা হবে ইবাদতের শিরক। 

সেইসাথে কোনো মানদার যদি আল্লাহর কোনো বান্দাকে (জীবিত বা মৃত) খুশি বা সন্তুষ্ট করার জন্য মাজারে দান,সদকা,মানত,কুরবানী ইত্যাদি করবে তবে তা হবে তাওহিদুল উলুহিয়্যাহর বিরোধী তথা শির্ক। 

আল্লাহ্ বলেন,

" (হে রাসুল) আপনি বলুন: আমার নামায, আমার কুরবানি এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। "(সুরা: আল আনআম, আয়াত: ১৬২)

তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত

সিফাত হলো গুণ। আসমা হলো নাম। আসমা ওয়াস সিফাত হলো, আল্লাহর গুণাবলী সম্বলিত নাম। সুতরাং তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাতের অর্থ হলো, আল্লাহ নিজেকে যেসব গুণাবলি সম্বলিত  নামে নামকরণ করেছেন সেইসব নামে এবং গুণে তিনি একক এবং অদ্বিতীয় কতৃত্ববাদী। অর্থাৎ তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই এবং হতে পারে না। 

শুধু তাই নয়, তিনি নিজেকে যেভাবে যে গুণে সাব্যস্ত করেছেন তার পরিবর্তন পরিবর্ধনও করা যাবে না। সেইসাথে তিনি যেসব গুণে গুণান্বিত সেই সব গুণ অন্য কারো আছে এমন ধারণা ও বিশ্বাস করা যাবে না। যদি এরূপ প্রমাণিত হয় তবে, তা হবে সুস্পষ্ট শির্ক।

এছাড়াও আল্লাহ্ নিজের যেসব বাহিয্যক গুণাবলী প্রকাশ করেছেন তাঁর স্বরুপ অনুসন্ধান করা, সাদৃশ্য করা ধারণা করা ইত্যাদি চিন্তা করা যাবে না। যেমন: শরীর সম্পর্কিত কিছু গুণের কথা পবিত্র কুরআনে এসেছে। 

আল্লাহ্ বলেন, 

"ইহুদিরা বলে, আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে, বরং তাদের হাতই বন্ধ। তাদের উক্তির দরুন তারা আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হয়েছে, বরং আল্লাহর উভয় হাত সদা উম্মুক্ত, যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেন।” [সুরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৬৪]

এখানে আল্লাহ তা‘আলা নিজের জন্য দু’টি হাত সাব্যস্ত করেছেন। যা দানের জন্য সদা প্রসারিত। সুতরাং আল্লাহর দু’টি হাত আছে এর ওপর ইমান আনতে হবে।  কিন্তু আমাদের উচিৎ হবেনা তাঁর কী রকম তা অনুসন্ধান করা।

 আল্লাহ্ বলেন, 

“কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সুরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

অর্থাৎ আল্লাহর সাদৃ‌শ্যের মতো কিছুই নেই। 

আল্লাহ আরো বলেন,

“তোমরা আল্লাহর জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করো না”। [সুরা আন-নাহল, আয়াত: ৭৪]-

কেননা আল্লাহ্ বলেন,

“যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না, নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু, অন্তর ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে।” [সুরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৬]

শেষকথা

উপর্যুক্ত বিষয় গুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহর কোনো গুণে কাউকে ধারণা করা যাবে না। যেমন: সন্তান দেওয়ার মালিক (আশ শুরা: ৪৯-৫০)  রিজিক দেওয়ার মালিক (তালাক :২-৩,সাবা: ৩৯), বিপদে উদ্ধারকারী (আন আম :৬৩), কারো ভালো করার মালিক (তাওবা : ৫০-৫১) ইত্যাদি সবই হচ্ছে আল্লাহর একমাত্র একক গুণ।

এখন কেউ যদি এইসব গুণ আল্লাহর কোনো বান্দার আছে বলে বিশ্বাস বা ধারণা করলে তা আল্লাহর তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাতের  বিরোধী হবে। এবং কেউ এমন করলে তা সরাসরি শিরক হবে।

আমাদের উচিত হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাওহিদের নির্ধারিত সীমা মেনে চলা। অধিকাংশ মুসলমানই ইমান আনে কিন্তু শিরক যুক্ত অবস্থায়। তাওহিদ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অধিকাংশ মানুষই জেনে না জেনে শির্কে লিপ্ত হচ্ছে। তাই আমাদের উচিত হবে তাওহিদ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করা। যাতেকরে আল্লাহ্কে সঠিকভাবে চেনা এবং জানা যায়।