০৩:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

শিক্ষাক্রম উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সমন্বয় সাধনের উপায়

ড. আবদুস সাত্তার মোল্লা
  • প্রকাশ: ০৩:১০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ মে ২০২২
  • / ৯৭২ বার পড়া হয়েছে

শিক্ষাক্রম উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সমন্বয় সাধনের উপায়


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

গত ১৭ এপ্রিল যুগান্তরে প্রকাশিত ‘শিক্ষাক্রম রূপরেখার আরও কিছু সমস্যা’ শীর্ষক নিবন্ধে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (জাশিপাবো) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইংয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবজনিত সমস্যা এবং তা দূরীকরণের উপায় নিয়ে লেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।

এখন বুঝতে পারছি শিক্ষাক্রম উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সমন্বয়ের অভাব জাশিপাবোর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মূল সমস্যা খোদ মন্ত্রণালয়ের গঠন এবং জাতীয় শিক্ষাক্রমের নেতৃত্বে একটির পরিবর্তে কয়েকটি সমন্বয় পরিষদের অস্তিত্বের মধ্যে নিহিত।

এ সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায় দুটি : ১. স্কুল শিক্ষা (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয়) স্তরের একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তকরণ; ২. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাধারণ শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা ও অনুমোদনের দায়িত্বে থাকতে হবে একক ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় পরিষদ’।

স্কুল শিক্ষা একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তকরণ

বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকে যেদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বিধাবিভক্ত করে ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষার’ জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা হয়, সেদিন থেকেই এ সমস্যার উদ্ভব। এখানেই শেষ নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভেঙে দুটি করা হলো : একটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অপরটি দায়িত্ব পালন করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার।

কিন্তু দ্বিতীয়টির নাম থেকে গেল পূর্ণ ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়’। এতে নবসৃষ্ট ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ শুরু থেকেই কম গুরুত্ব পেয়ে আসছে। অধিকাংশ সময় এটি চালানো হয়েছে প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী দিয়ে; আর অন্যটি নামে পূর্ণ ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়’, কিন্তু আসলে ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’, যেটি চালান একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, অধিকাংশ সময় তাকে সহযোগিতা করেন আরেকজন প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী।

এমন একটা ভাব যে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এখনো একটি ‘অধিদপ্তর’ই রয়ে গেছে, পূর্ণ মন্ত্রণালয় হয়নি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রীকে ‘শিক্ষামন্ত্রী’র কাছ থেকে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত জেনে স্রেফ একজন সচিবের মতো শুধু বাস্তবায়ন করতে হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার তেমন কোনো ভূমিকা থাকে না।

জাতীয় শিক্ষাক্রম তৈরি ও পরিমার্জনের মাধ্যমে উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত জাশিপাবোকে দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনে দ্বৈতশাসনের আওতায় কাজ করতে হয়। এর যে কী জ্বালা তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন! এই জ্বালা যে শুধু জাশিপাবোর তাও নয়; বহু বিদ্যালয় আছে যেগুলোতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, এমনকি উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষকে কোনো সময় একই দিনে দুই মন্ত্রণালয়ে দৌড়াতে হয়। এভাবে কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানো যায়? জাশিপাবোর ভেতরে ২০০৩ সালে সৃষ্ট প্রাথমিক শিক্ষাক্রম উইং-প্রধান মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইং-প্রধানের সমান গুরুত্ব পান না; কারণ প্রাথমিক শিক্ষাক্রম উইং সৃষ্টির প্রায় বিশ বছর পর এখনো মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইং-প্রধানকেই ‘সদস্য (শিক্ষাক্রম)’ বলা হয়, ‘সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম)’ যেন আসল সদস্যের (শিক্ষাক্রম) ‘সহকারী’ মাত্র!

শিক্ষা জাতি গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশ এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভেঙে দুটো মন্ত্রণালয় বানিয়েছে। কিন্তু যেসব দেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভেঙেছে, সেগুলো স্কুল পর্যায়ের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব এক মন্ত্রণালয়ের অধীনে রেখে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার দায়িত্ব দিয়েছে অপর মন্ত্রণালয়কে।

মন্ত্রণালয়ের এরূপ বিভাজন যে শুধু ফ্রান্স, রাশিয়া, পর্তুগাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিসর, ইরাক, ইরান, ওমান, আরব আমিরাত, সিরিয়া, মাদাগাস্কার, শ্রীলংকার মতো অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশে করা হয়েছে তাই না; আফগানিস্তান, আলজিরিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, তিউনিশিয়া, জিম্বাবুয়ে, আইভরি কোস্ট, লেবানন, পূর্ব তিমুর ও পোল্যান্ডের মতো উন্নয়নশীল, এমনকি অনুন্নত দেশেও করা হয়েছে।

উচ্চশিক্ষা এবং বিশেষত গবেষণাকে এমন গুরুত্ব যদি অন্ধকার মহাদেশ (ডার্ক কন্টিনেন্ট) খ্যাত আফ্রিকার দেশগুলোও দিতে পারে, তাহলে আমরা কেন উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাকে মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে কম গুরুত্বের করে রাখব?

যা হোক, এখানে মূল প্রতিপাদ্য জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে সমন্বিত করা। আর এর জন্য জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, তথা স্কুল শিক্ষাকে একই মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিয়ে আসা; অর্থাৎ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল অংশ প্রাথমিক শিক্ষা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শিক্ষা অংশ পুনরায় একত্র করে একক মন্ত্রণালয় গঠন করা।

এতে শিক্ষার উচ্চ স্তর বা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার দেখভাল করার জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় লাগবে। বাস্তবে কোনো মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করার দরকার হবে না; শুধু দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করলেই চলবে। কীভাবে?

সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য দেশের মতো শুধু ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা’ নামে একটি নতুন অধিদপ্তর সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর শুধু মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব পালন করবে এবং এর নামও হবে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ (Directorate of Secondary Education-DSE)। বর্তমান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নাম হবে: ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়’ (Ministry of Primary and Secondary Education-MPSE) এবং বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও নতুন নামের ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ উভয়ই এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে আসবে।

নবসৃষ্ট ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা’ অধিদপ্তর (Directorate of Higher Education and Research-DHER) বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করবে। এই মন্ত্রণালয়ের নতুন নাম হবে: ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়’ (Ministry of Higher Education and Research-MHER)। ‘গণশিক্ষা’ প্রধানত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা বলে এটি ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে’র অধীনেই থাকতে পারে; এর জন্য একটি ক্ষুদ্র অধিদপ্তর সৃষ্টি করে নিলে ভালো হবে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের জন্য একক ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় পরিষদ’ গঠন

বর্তমানে শুধু প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি এবং মাধ্যমিক স্তরের সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার জন্য মোট তিনটি, একুনে চারটি ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় পরিষদ’ (National Curriculum Co-ordination Committee-NCCC) গঠন করা হয়। মাদ্রাসা শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা পৃথক ধারার শিক্ষা বলে প্রতিটি ধারার জন্য পৃথক শিক্ষাক্রম সমন্বয় পরিষদ অবশ্যই গঠিত হতে পারে। কিন্তু শিক্ষার মূলধারা সাধারণ শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের জন্য একক ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় পরিষদ’ গঠন করা অত্যাবশ্যক।

এবার দেখা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার সাধারণ ধারার জন্য পৃথক ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় পরিষদ’ গঠিত হওয়ায় দুই মন্ত্রণালয়ের দুই সমন্বয় পরিষদ বেশকিছু সময়ের ব্যবধানে দুই ধরনের শিক্ষাক্রম অনুমোদন করে বসে আছে! একই ধারার ধারাবাহিক দুই স্তরের (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) শিক্ষার্থীদের ওপর এমন ভিন্ন প্রকারের শিক্ষাক্রমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করা জরুরি।

জাতীয় শিক্ষাক্রমের উত্তম সমন্বয়ের জন্য আরও অন্তত দুটি কাজ করতে হবে : ১. জাশিপাবোর মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইংকে সুনির্দিষ্টভাবে ‘মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইং’ বলতে হবে এবং এর দায়িত্বে নিয়োজিত বোর্ড সদস্যের পদবিও হবে ‘সদস্য (মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম)’।

এতে প্রাথমিক শিক্ষাক্রম উইং-প্রধান অর্থাৎ ‘সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম)’-এর ওপর মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইং-প্রধানের অযাচিত প্রাধান্য (যাকে সে ফ ‘মাতব্বরি’ বলা চলে) লোপ পাবে এবং দুই স্তরের শিক্ষাক্রমের দায়িত্বশীল দুই বোর্ড সদস্য পরস্পরকে সমান মর্যাদার ভাবতে ও সম্মান করতে বাধ্য হবে।

২. পুনর্গঠিত ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়’কে কেন্দ্রীয় একক জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং বিভাগীয় পরীক্ষা বোর্ডের মধ্যে পার্থক্য ভালোমতো বুঝে কাজ করতে হবে।

স্মর্তব্য, জাশিপাবো দেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম তৈরি এবং উন্নয়নের জন্য পরিমার্জনের মূল দায়িত্ব পালনকারী অ্যাপেক্স প্রতিষ্ঠান। শিক্ষাক্রমে শিক্ষার যে উদ্দেশ্য (বর্তমানে যাকে ‘যোগ্যতা’ বলা হচ্ছে), সে উদ্দেশ্য/যোগ্যতা অর্জনের জন্য কী পড়তে হবে, কীসের অনুশীলন করতে হবে (Contents/Learning Experiences), শিখন-শেখানো কার্যক্রম/প্রক্রিয়া (Teaching-Learning Process) কেমন হবে এবং শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত উদ্দেশ্য/যোগ্যতার কতটা অর্জন করেছে, তা কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে-সবই পরিকল্পনা করা হয়।

এই গুরুদায়িত্ব পালন করে জাশিপাবো। আর দ্বিত্ব ভুল (Doubly Erroneous) নামকরণে ‘শিক্ষা বোর্ড’ সত্যিকার অর্থে ‘পরীক্ষা বোর্ডে’র দায়িত্ব পালন করে-শিক্ষাক্রমে বিধৃত উপায়ে শুধু প্রশ্ন প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ প্রদান করে।

দ্বিত্ব ভুল নামকরণে বিভাগীয় ‘শিক্ষা বোর্ড’ নিয়েও কিছু বলা দরকার। সারা বিশ্বে পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ প্রদানকারী সংস্থার নাম Examination Board, Examination and Assessment Board, Examinations Council বা Educational Testing Service। এই বিষয়টি নিয়ে যুগান্তরে ১৩.০২.২০২০ তারিখে ‘শিক্ষাবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম হোক অর্থপূর্ণ’ শিরোনামে আমার লেখা প্রকাশিত হয়েছিল (https://www.jugantor.com/todays-paper/window/277714/ )।

প্রথম ও ব্যবহারিক ভুলটি হচ্ছে, পরীক্ষা বোর্ডকে ‘শিক্ষা বোর্ড’ নাম দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে ভুল বার্তা দেওয়া যে, শিক্ষা বলতে আমরা প্রধানত পরীক্ষাই বুঝি! আর দ্বিতীয় কম গুরুত্বের ভুলটি হচ্ছে : ৬০ বছর আগে ১৯৬৩ সাল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার মধ্যবর্তী ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষাস্তর উঠে গেছে; একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সেই শিক্ষা ‘উচ্চমাধ্যমিক’ উপস্তর নামে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের অংশ হয়েছে। আমরা কোন আক্কেলে এখনো শিক্ষা (আসলে শুধু পরীক্ষা) বোর্ডের নামের শুরুতেই ইন্টারমিডিয়েট শব্দ বহাল রেখে বলছি : Board of Intermediate and Secondary Education (BISE)?

প্রশ্ন প্রণয়নসহ পরীক্ষা গ্রহণের যে কোনো পরিবর্তনের মূল অধিকার ও দায়িত্ব জাশিপাবোর, কোনো পরীক্ষা বোর্ডের নয়। পরীক্ষা বোর্ড শুধু বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে, পরিকল্পনার নয়। এই প্রসঙ্গটি জোরের সঙ্গে উত্থাপন করছি এ কারণে যে, আমি কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে ২০১৮ সালে তৃতীয় বারের মতো জাশিপাবোতে এসে অল্পদিনের মধ্যেই জানলাম, মাধ্যমিক পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজির প্রতিটিতে ২০০ নম্বরের পরিবর্তে ১৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।

‘সিদ্ধান্তটি’ মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা বোর্ড হয়ে জাশিপাবোতে এসেছে। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা সবাই জাশিপাবোর বিশেষজ্ঞ। তারা এটিকে গ্রহণ করতে দ্বিধা প্রকাশ করছেন। সদস্য (মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম) বললেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে; এখন আপনাদের কাজ শুধু সিলেবাস কমিয়ে কম নম্বরের প্রশ্ন-কাঠামো তৈরি করে দেওয়া।’

কী বুঝলেন পাঠকরা? কার অধিকার, সিদ্ধান্ত নেয় কে, মাধ্যম বানানো হয় কাকে? তাই বলছি : পরীক্ষা পদ্ধতির যে কোনো পরিবর্তন-চিন্তা মন্ত্রণালয় যেন প্রথমেই জাশিপাবোতে পাঠায়। জাশিপাবো যৌক্তিক পরিবর্তন করার জন্য শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা করবে; প্রয়োজনে পরীক্ষা বোর্ডকে এ কাজে যুক্ত করবে। পরীক্ষা বোর্ড যেন পরিবর্তন করে জাশিপাবোকে দিয়ে শুধু স্বাক্ষর করাতে না আসে। এমন কাজ তরুণ ছোকড়ার মা-বাবাকে ধমক দেওয়ার শামিল।

সৌজন্যে: দৈনিক যুগান্তর

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

ড. আবদুস সাত্তার মোল্লা

শিক্ষাক্রম গবেষক এবং অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক (বিসিএস সাধারণ শিক্ষা)। ইমেইল: [email protected]

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

শিক্ষাক্রম উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সমন্বয় সাধনের উপায়

প্রকাশ: ০৩:১০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ মে ২০২২

গত ১৭ এপ্রিল যুগান্তরে প্রকাশিত ‘শিক্ষাক্রম রূপরেখার আরও কিছু সমস্যা’ শীর্ষক নিবন্ধে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (জাশিপাবো) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইংয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবজনিত সমস্যা এবং তা দূরীকরণের উপায় নিয়ে লেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।

এখন বুঝতে পারছি শিক্ষাক্রম উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সমন্বয়ের অভাব জাশিপাবোর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মূল সমস্যা খোদ মন্ত্রণালয়ের গঠন এবং জাতীয় শিক্ষাক্রমের নেতৃত্বে একটির পরিবর্তে কয়েকটি সমন্বয় পরিষদের অস্তিত্বের মধ্যে নিহিত।

এ সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায় দুটি : ১. স্কুল শিক্ষা (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয়) স্তরের একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তকরণ; ২. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাধারণ শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা ও অনুমোদনের দায়িত্বে থাকতে হবে একক ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় পরিষদ’।

স্কুল শিক্ষা একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তকরণ

বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকে যেদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বিধাবিভক্ত করে ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষার’ জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা হয়, সেদিন থেকেই এ সমস্যার উদ্ভব। এখানেই শেষ নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভেঙে দুটি করা হলো : একটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অপরটি দায়িত্ব পালন করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার।

কিন্তু দ্বিতীয়টির নাম থেকে গেল পূর্ণ ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়’। এতে নবসৃষ্ট ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ শুরু থেকেই কম গুরুত্ব পেয়ে আসছে। অধিকাংশ সময় এটি চালানো হয়েছে প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী দিয়ে; আর অন্যটি নামে পূর্ণ ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়’, কিন্তু আসলে ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’, যেটি চালান একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, অধিকাংশ সময় তাকে সহযোগিতা করেন আরেকজন প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী।

এমন একটা ভাব যে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এখনো একটি ‘অধিদপ্তর’ই রয়ে গেছে, পূর্ণ মন্ত্রণালয় হয়নি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রীকে ‘শিক্ষামন্ত্রী’র কাছ থেকে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত জেনে স্রেফ একজন সচিবের মতো শুধু বাস্তবায়ন করতে হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার তেমন কোনো ভূমিকা থাকে না।

জাতীয় শিক্ষাক্রম তৈরি ও পরিমার্জনের মাধ্যমে উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত জাশিপাবোকে দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনে দ্বৈতশাসনের আওতায় কাজ করতে হয়। এর যে কী জ্বালা তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন! এই জ্বালা যে শুধু জাশিপাবোর তাও নয়; বহু বিদ্যালয় আছে যেগুলোতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, এমনকি উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষকে কোনো সময় একই দিনে দুই মন্ত্রণালয়ে দৌড়াতে হয়। এভাবে কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানো যায়? জাশিপাবোর ভেতরে ২০০৩ সালে সৃষ্ট প্রাথমিক শিক্ষাক্রম উইং-প্রধান মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইং-প্রধানের সমান গুরুত্ব পান না; কারণ প্রাথমিক শিক্ষাক্রম উইং সৃষ্টির প্রায় বিশ বছর পর এখনো মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইং-প্রধানকেই ‘সদস্য (শিক্ষাক্রম)’ বলা হয়, ‘সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম)’ যেন আসল সদস্যের (শিক্ষাক্রম) ‘সহকারী’ মাত্র!

শিক্ষা জাতি গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশ এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভেঙে দুটো মন্ত্রণালয় বানিয়েছে। কিন্তু যেসব দেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভেঙেছে, সেগুলো স্কুল পর্যায়ের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব এক মন্ত্রণালয়ের অধীনে রেখে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার দায়িত্ব দিয়েছে অপর মন্ত্রণালয়কে।

মন্ত্রণালয়ের এরূপ বিভাজন যে শুধু ফ্রান্স, রাশিয়া, পর্তুগাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিসর, ইরাক, ইরান, ওমান, আরব আমিরাত, সিরিয়া, মাদাগাস্কার, শ্রীলংকার মতো অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশে করা হয়েছে তাই না; আফগানিস্তান, আলজিরিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, তিউনিশিয়া, জিম্বাবুয়ে, আইভরি কোস্ট, লেবানন, পূর্ব তিমুর ও পোল্যান্ডের মতো উন্নয়নশীল, এমনকি অনুন্নত দেশেও করা হয়েছে।

উচ্চশিক্ষা এবং বিশেষত গবেষণাকে এমন গুরুত্ব যদি অন্ধকার মহাদেশ (ডার্ক কন্টিনেন্ট) খ্যাত আফ্রিকার দেশগুলোও দিতে পারে, তাহলে আমরা কেন উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাকে মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে কম গুরুত্বের করে রাখব?

যা হোক, এখানে মূল প্রতিপাদ্য জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে সমন্বিত করা। আর এর জন্য জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, তথা স্কুল শিক্ষাকে একই মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিয়ে আসা; অর্থাৎ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল অংশ প্রাথমিক শিক্ষা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শিক্ষা অংশ পুনরায় একত্র করে একক মন্ত্রণালয় গঠন করা।

এতে শিক্ষার উচ্চ স্তর বা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার দেখভাল করার জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় লাগবে। বাস্তবে কোনো মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করার দরকার হবে না; শুধু দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করলেই চলবে। কীভাবে?

সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য দেশের মতো শুধু ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা’ নামে একটি নতুন অধিদপ্তর সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর শুধু মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব পালন করবে এবং এর নামও হবে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ (Directorate of Secondary Education-DSE)। বর্তমান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নাম হবে: ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়’ (Ministry of Primary and Secondary Education-MPSE) এবং বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও নতুন নামের ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ উভয়ই এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে আসবে।

নবসৃষ্ট ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা’ অধিদপ্তর (Directorate of Higher Education and Research-DHER) বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করবে। এই মন্ত্রণালয়ের নতুন নাম হবে: ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়’ (Ministry of Higher Education and Research-MHER)। ‘গণশিক্ষা’ প্রধানত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা বলে এটি ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে’র অধীনেই থাকতে পারে; এর জন্য একটি ক্ষুদ্র অধিদপ্তর সৃষ্টি করে নিলে ভালো হবে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের জন্য একক ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় পরিষদ’ গঠন

বর্তমানে শুধু প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি এবং মাধ্যমিক স্তরের সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার জন্য মোট তিনটি, একুনে চারটি ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় পরিষদ’ (National Curriculum Co-ordination Committee-NCCC) গঠন করা হয়। মাদ্রাসা শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা পৃথক ধারার শিক্ষা বলে প্রতিটি ধারার জন্য পৃথক শিক্ষাক্রম সমন্বয় পরিষদ অবশ্যই গঠিত হতে পারে। কিন্তু শিক্ষার মূলধারা সাধারণ শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের জন্য একক ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় পরিষদ’ গঠন করা অত্যাবশ্যক।

এবার দেখা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার সাধারণ ধারার জন্য পৃথক ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় পরিষদ’ গঠিত হওয়ায় দুই মন্ত্রণালয়ের দুই সমন্বয় পরিষদ বেশকিছু সময়ের ব্যবধানে দুই ধরনের শিক্ষাক্রম অনুমোদন করে বসে আছে! একই ধারার ধারাবাহিক দুই স্তরের (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) শিক্ষার্থীদের ওপর এমন ভিন্ন প্রকারের শিক্ষাক্রমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করা জরুরি।

জাতীয় শিক্ষাক্রমের উত্তম সমন্বয়ের জন্য আরও অন্তত দুটি কাজ করতে হবে : ১. জাশিপাবোর মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইংকে সুনির্দিষ্টভাবে ‘মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইং’ বলতে হবে এবং এর দায়িত্বে নিয়োজিত বোর্ড সদস্যের পদবিও হবে ‘সদস্য (মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম)’।

এতে প্রাথমিক শিক্ষাক্রম উইং-প্রধান অর্থাৎ ‘সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম)’-এর ওপর মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম উইং-প্রধানের অযাচিত প্রাধান্য (যাকে সে ফ ‘মাতব্বরি’ বলা চলে) লোপ পাবে এবং দুই স্তরের শিক্ষাক্রমের দায়িত্বশীল দুই বোর্ড সদস্য পরস্পরকে সমান মর্যাদার ভাবতে ও সম্মান করতে বাধ্য হবে।

২. পুনর্গঠিত ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়’কে কেন্দ্রীয় একক জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং বিভাগীয় পরীক্ষা বোর্ডের মধ্যে পার্থক্য ভালোমতো বুঝে কাজ করতে হবে।

স্মর্তব্য, জাশিপাবো দেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম তৈরি এবং উন্নয়নের জন্য পরিমার্জনের মূল দায়িত্ব পালনকারী অ্যাপেক্স প্রতিষ্ঠান। শিক্ষাক্রমে শিক্ষার যে উদ্দেশ্য (বর্তমানে যাকে ‘যোগ্যতা’ বলা হচ্ছে), সে উদ্দেশ্য/যোগ্যতা অর্জনের জন্য কী পড়তে হবে, কীসের অনুশীলন করতে হবে (Contents/Learning Experiences), শিখন-শেখানো কার্যক্রম/প্রক্রিয়া (Teaching-Learning Process) কেমন হবে এবং শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত উদ্দেশ্য/যোগ্যতার কতটা অর্জন করেছে, তা কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে-সবই পরিকল্পনা করা হয়।

এই গুরুদায়িত্ব পালন করে জাশিপাবো। আর দ্বিত্ব ভুল (Doubly Erroneous) নামকরণে ‘শিক্ষা বোর্ড’ সত্যিকার অর্থে ‘পরীক্ষা বোর্ডে’র দায়িত্ব পালন করে-শিক্ষাক্রমে বিধৃত উপায়ে শুধু প্রশ্ন প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ প্রদান করে।

দ্বিত্ব ভুল নামকরণে বিভাগীয় ‘শিক্ষা বোর্ড’ নিয়েও কিছু বলা দরকার। সারা বিশ্বে পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ প্রদানকারী সংস্থার নাম Examination Board, Examination and Assessment Board, Examinations Council বা Educational Testing Service। এই বিষয়টি নিয়ে যুগান্তরে ১৩.০২.২০২০ তারিখে ‘শিক্ষাবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম হোক অর্থপূর্ণ’ শিরোনামে আমার লেখা প্রকাশিত হয়েছিল (https://www.jugantor.com/todays-paper/window/277714/ )।

প্রথম ও ব্যবহারিক ভুলটি হচ্ছে, পরীক্ষা বোর্ডকে ‘শিক্ষা বোর্ড’ নাম দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে ভুল বার্তা দেওয়া যে, শিক্ষা বলতে আমরা প্রধানত পরীক্ষাই বুঝি! আর দ্বিতীয় কম গুরুত্বের ভুলটি হচ্ছে : ৬০ বছর আগে ১৯৬৩ সাল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার মধ্যবর্তী ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষাস্তর উঠে গেছে; একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সেই শিক্ষা ‘উচ্চমাধ্যমিক’ উপস্তর নামে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের অংশ হয়েছে। আমরা কোন আক্কেলে এখনো শিক্ষা (আসলে শুধু পরীক্ষা) বোর্ডের নামের শুরুতেই ইন্টারমিডিয়েট শব্দ বহাল রেখে বলছি : Board of Intermediate and Secondary Education (BISE)?

প্রশ্ন প্রণয়নসহ পরীক্ষা গ্রহণের যে কোনো পরিবর্তনের মূল অধিকার ও দায়িত্ব জাশিপাবোর, কোনো পরীক্ষা বোর্ডের নয়। পরীক্ষা বোর্ড শুধু বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে, পরিকল্পনার নয়। এই প্রসঙ্গটি জোরের সঙ্গে উত্থাপন করছি এ কারণে যে, আমি কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে ২০১৮ সালে তৃতীয় বারের মতো জাশিপাবোতে এসে অল্পদিনের মধ্যেই জানলাম, মাধ্যমিক পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজির প্রতিটিতে ২০০ নম্বরের পরিবর্তে ১৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।

‘সিদ্ধান্তটি’ মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা বোর্ড হয়ে জাশিপাবোতে এসেছে। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা সবাই জাশিপাবোর বিশেষজ্ঞ। তারা এটিকে গ্রহণ করতে দ্বিধা প্রকাশ করছেন। সদস্য (মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম) বললেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে; এখন আপনাদের কাজ শুধু সিলেবাস কমিয়ে কম নম্বরের প্রশ্ন-কাঠামো তৈরি করে দেওয়া।’

কী বুঝলেন পাঠকরা? কার অধিকার, সিদ্ধান্ত নেয় কে, মাধ্যম বানানো হয় কাকে? তাই বলছি : পরীক্ষা পদ্ধতির যে কোনো পরিবর্তন-চিন্তা মন্ত্রণালয় যেন প্রথমেই জাশিপাবোতে পাঠায়। জাশিপাবো যৌক্তিক পরিবর্তন করার জন্য শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা করবে; প্রয়োজনে পরীক্ষা বোর্ডকে এ কাজে যুক্ত করবে। পরীক্ষা বোর্ড যেন পরিবর্তন করে জাশিপাবোকে দিয়ে শুধু স্বাক্ষর করাতে না আসে। এমন কাজ তরুণ ছোকড়ার মা-বাবাকে ধমক দেওয়ার শামিল।

সৌজন্যে: দৈনিক যুগান্তর