অগ্নিবীণা— বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ
- প্রকাশ: ০৮:২০:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ মে ২০২২
- / ৮৩৮৬ বার পড়া হয়েছে
কাজী নজরুল ইসলাম সর্বহারা দুঃখী ও নিপীড়িতদের কণ্ঠস্বর ছিলেন। তাঁর লেখনিতে থাকত স্বাধীনতা, বিপ্লব ও সাম্য। তাই নজরুল সকল শ্রেণির ও সকল মানুষের কবি।
বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিতি এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ হলো অগ্নিবীণা। অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বেশ সাড়া ফেলে। এ কাব্যগ্রন্থের একটি সংস্করণ ‘অগ্নি-বীণা’ বানানেও প্রকাশিত হয়।
অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৩২৯ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে তথা অক্টোবর, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ।
অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা আছে, কবিতাগুলো হলো— ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহী’, ‘রক্তাম্বর-ধারিণী মা’, ‘আগমণী’, ‘ধূমকেতু’, কামাল পাশা’, ‘আনোয়ার ‘রণভেরী’, ‘শাত-ইল-আরব’, খেয়াপারের তরণী’, কোরবানী’ ও মোহররম’।
অনেকেই অনেক সময় জানতে চান যে, অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি কাজী নজরুল ইসলাম কাকে উৎসর্গ করেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের তুমুল জনপ্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা উৎসর্গ করেন বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে। বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে উৎসর্গ করে লেখা একটি উৎসর্গ কবিতাও আছে।
অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা ছিল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং এঁকেছিলেন তরুণ চিত্রশিল্পী বীরেশ্বর সেন।
প্রথম প্রকাশের সময় অগ্নিবীণা বইটির তৎকালীন মূল্য ছিল ৩ টাকা মাত্র।
৭ নং প্রতাপ চ্যাটার্জি লেন থেকে গ্রন্থকার কর্তৃক গ্রন্থটি মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয় অগ্নিবীণা। প্রাপ্তিস্থান হিসেবে গ্রন্থে লেখা ছিল: ‘আর্য পাবলিশিং হাউস, কলেজ স্ট্রিট, মার্কেট (দোতলায়)’।
মাত্র বারোটি কবিতা দিয়ে নজরুল বুঝিয়ে দেন কোয়ান্টিটি নয় কোয়ালিটিই আসল কথা। কবিতা বারো শত কিংবা বারো হাজার লিখতে হয় না। কবিতার মতো কবিতা একটিই যথেষ্ট। বইয়ের দ্বিতীয় কবিতাটি হচ্ছে বিদ্রোহী। যা নজরুলকে খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে গেছে। কবিতাটি ব্যাপকভাবে আলোচিত এবং সমালোচিত। (আলী এরশাদ, ২০১৯)
অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গ: ভাঙা বাংলার রাঙা যুগের আদি পুরোহিত, সাগ্নিক বীর শ্রীবারীন্দ্রকুমার ঘোষ শ্রীশ্রীচরণারবিন্দেষু অগ্নি-ঋষি! অগ্নি-বীণা তোমায় শুধু সাজে। তাই তো তোমার বহ্নি-রাগেও বেদন-বেহাগ বাজে॥ দহন-বনের গহন-চারী– হায় ঋষি– কোন্ বংশীধারী নিঙ্ড়ে আগুন আন্লে বারি অগ্নি-মরুর মাঝে। সর্বনাশা কোন্ বাঁশি সে বুঝ্তে পারি না যে॥ দুর্বাসা হে! রুদ্র তড়িৎ হান্ছিলে বৈশাখে, হঠাৎ সে কার শুন্লে বেণু কদম্বের ঐ শাখে। বজ্রে তোমার বাজ্ল বাঁশি, বহ্নি হলো কান্না হাসি. সুরের ব্যথায় প্রাণ উদাসী– মন সরে না কাজে। তোমার নয়ন-ঝুরা অগ্নি-সুরেও রক্ত-শিখা বাজে॥ |
উৎসর্গের নিচে লেখা আছে “তোমার অগ্নি-পূজারী -হে- মহিমাম্বিত শিষ্য-কাজী নজরুল ইসলাম”।
অরবিন্দ ঘোষের ভ্রাতা বারীন্দ্রকুমার ঘোষ বাংলা তথা ভারতের বিপ্লববাদী আন্দোলনের অন্যতম নায়ক ছিলেন। বিপ্লবে বিশ্বাসী নজরুল তাই নিজেকে বারীন্দ্রকুমারের ‘-হে-মহিমান্বিত শিষ্য’ বলে উল্লেখ করে তাকেই তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেছিলেন।
অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোর তালিকা
অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘প্রলয়োল্লাস’ এবং শেষ কবিতা ‘মোহররম’। কাজী নজরুল ইসলামের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতা ‘বিদ্রোহী’ অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় কবিতা।
নিচে অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের কবিতার তালিকা দেওয়া হলো—
- প্রলয়োল্লাস
- বিদ্রোহী
- রক্তাম্বর-ধারিণী মা
- আগমণী
- ধূমকেতু
- কামাল পাশা
- আনোয়ার
- রণভেরী
- শাত-ইল-আরব
- খেয়াপারের তরণী
- কোরবানি
- মোহররম
কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?: অগ্নিবীনা
‘অগ্নিবীণা’ প্রথম প্রকাশের তারিখ: ১৩২৯ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাস মোতাবেক অক্টোবর, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ
‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের প্রথম প্রকাশক: ‘আর্য পাবলিশিং হাউস, কলেজ স্ট্রিট, কোলকাতা
Thanks for your blog, nice to read. Do not stop.