বাঁধন-হারা— কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম উপন্যাস
- প্রকাশ: ০৯:০৪:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুন ২০২২
- / ৬৯৯৫ বার পড়া হয়েছে
কাজী নজরুল ইসলাম সর্বহারা দুঃখী ও নিপীড়িতদের কণ্ঠস্বর ছিলেন। তাঁর লেখনিতে থাকত স্বাধীনতা, বিপ্লব ও সাম্য। তাই নজরুল সকল শ্রেণির ও সকল মানুষের কবি।
বাঁধন-হারা কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি পত্রোপন্যাস। এই বাঁধন হারা হলো কাজী নজরুল ইসলামের রচিত প্রথম উপন্যাস।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যখন করাচিতে ছিলেন তখন তিনি বাঁধন-হারা উপন্যাস রচনা শুরু করেন।
বাঁধন হারা উপন্যাসের প্রথম কিস্তি মোসলেম ভারত পত্রিকায় ১৯২১ সালে (১৩২৭ বঙ্গাব্দ) ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় এবং ১৯২৭ সালে জুন মাসে (শ্রাবণ, ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ) প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
উল্লেখ্য, বাঁধন-হারা বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রোপন্যাস।
‘ বাধন-হারা’ উপন্যাসের কাহিনিসংক্ষেপ
নুরুল হুদা ও মাহবুবা একে অন্যকে পছন্দ করে এবং তাদের বিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। এই সময়ে নুরুল হুদা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। নুরুল হুদাকে ডাকা হয় নুরু নামে। নুরুর সেনাবাহিনীতে যোগদানের পিছনে দেশ ও জাতিকে রক্ষার কোন তাগিদ ছিল না।
মাহবুবা, রাবেয়া ও সাহসিকা বাল্যসখী ও তাদের মধ্যে পত্র যোগাযোগ হয়। সাহসিকা তার নামের মতই সাহসী ও প্রতিবাদী। চিরকুমারী সাহসিকা নারীদের উপর অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। মাহবুবা নুরুল হুদাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। কিন্তু নুরুল হুদা কোনো বাঁধনে জড়াতে চায় না।
অবশেষে মাহবুবার বিয়ে হয়ে যায় চল্লিশোর্ধ্ব এক জমিদারের সঙ্গে। কিছুদিন বাদেই মাহবুবা বিধবা হয়ে যায়। নুরুল হুদাকে সে লেখে যে, সে মক্কা ও মদিনায় তীর্থ ভ্রমণে যাবে এবং নুরুল হুদার কর্মস্থল বাগদাদেও যেতে পারে। নুরুল হুদা মাহবুবাকে নিষেধ করে না। তাদের দুজনের দেখা হওয়ার সম্ভাবনার মাধ্যমে শেষ হয় উপন্যাসটি।
‘বাঁধন-হারা’ উপন্যাসের চরিত্র
‘বাঁধন-হারা’ উপন্যাসে মোট চরিত্রের সংখ্যা দশটি—
- নুরুল হুদা/নুরু
- মাহবুবা
- রাবেয়া
- সাহসিকা
- আয়েশা
- খুকি/ আনারকলি
- মা/রোকেয়া
- মনুয়ার
- রবিউল
- সোফিয়া
রাবেয়া ও রবিউল দম্পতির শিশুকন্যা খুকি বা আনারকলি ছাড়া প্রত্যেকেই চিঠিতে নিজেদের চরিত্র ও ভাবনা ধরে।
‘বাধন-হারা’ উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য
- বাঁধন-হারা হলো বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রোপন্যাস।
- কাজী নজরুল ইসলাম বাঁধন হারা’র মাধ্যমে বাঙালিদের প্রথম আধুনিক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জ্ঞাত করেছেন।
- বাঁধন হারা উপন্যাসে কাজী নজরুল ইসলামের সামরিক জীবনের অভিজ্ঞতার ছাপ রয়েছে।
- বাঁধন হারা যুদ্ধের অভিজ্ঞতায় একটি প্রেমের আখ্যান।
‘বাঁধন হারা’ উপন্যাসের অনুবাদ
২০১৩ সালের ঢাকা রিডিং সার্কেল-এর একদল অনুবাদক— তানভিরুল হক, আসফা খাতুন, শিরীন হাসানাত ইসলাম, আয়েশা কবীর, জ্যাকি কবির, সায়েদা করিম খান, শাহরুখ রহমান ও নিয়াজ জামান, বাঁধন হারা উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ করেন।
বাঁধন-হারা উপন্যাসের এই ইংরেজি অনুবাদের নাম Unfettered (আনফেটার্ড)।
বাঁধন-হারা উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ আনফেটার্ড‘র জন্য প্রচ্ছদ আঁকেন শহীদ কাজী এবং এটি ২০১৩ ঢাকার নিমফিয়া পাবলিকেশন হতে প্রকাশিত হয়।