কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল কারেন্সি
- প্রকাশ: ০৮:৪৯:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২
- / ৭৬৯ বার পড়া হয়েছে
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী ডিজিটাল মুদ্রা চালুর বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। বহুপাক্ষিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজটি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে মুদ্রা ডিজিটাল পদ্ধতিতে ইস্যুকৃত, সংরক্ষিত এবং লেনদেনও হয়ে থাকে ডিজিটাল প্লাটফরমে, এমন মুদ্রাই হলো ডিজিটাল মুদ্রা।
ডিজিটাল মুদ্রাকে ক্রিপ্টোকারেন্সি নামে ডাকা হয়; কারণ এই মুদ্রা একজন ব্যবহারকারীর আইডির সঙ্গে এনক্রিপ্টেড অর্থাৎ সংযুক্ত। ব্যবহারকারী নিজের ক্রিপ্টোকারেন্সি আইডিতে লগইন করা মানেই নিজের ক্রিপ্টোকারেন্সির সংরক্ষণ ও লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করা। অর্থাৎ ব্যবহারকারী নিজেই এর নিয়ন্ত্রণকারী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি নিয়ন্ত্রণ করে না, এটাই ক্রিপ্টোকারেন্সির সবচেয়ে ব প্রতিবন্ধকতা। ফলে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এটিকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে আইনগত বৈধতা দেয়নি। এরপরও গোপনে এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক লেনদেনকে ব্যাপকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রা ধারণার উদ্ভব। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রা বা সিবিডিসি নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; ফলে ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো এটি অভিভাবকহীন মুদ্রা হবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটালি এই মুদ্রা ইস্যু করবে এবং নিয়ন্ত্রণ করবে। এখন যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাগজের মুদ্রা ইস্যু করে, ঠিক তেমনই সিবিডিসি ইস্যু করবে—যার শুরুটাই হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে।
বর্তমানে কাগজের মুদ্রাকে আমরা ডিজিটাল প্লাটফরমের মাধ্যমে (ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন) সংরক্ষণ ও লেনদেন করতে পারি, কিন্তু সিবিডিসি নিজেই ডিজিটাল হয়ে অর্থবাজারে প্রবেশ করবে। এতে করে ব্যবহারকারীকে এখনকার মতো এজেন্টের কাছে গিয়ে নগদ টাকা দিয়ে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে ক্যাশ ইন বা কার্ডে লিমিট নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। চাইলেই সিবিডিসিকে ভাঙিয়ে কাগজের মুদ্রা বা কাগজের মুদ্রাকে সিবিডিসিতে রূপান্তর করা যাবে। মূলত ভার্চুয়াল লেনদেন ও ই-কমার্সের প্রসারের লক্ষ্যেই সিবিডিসি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। প্রচলিত ডিজিটাল প্লাটফরম যেমন প্লাস্টিক মানি, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস—এগুলোর মাধ্যমে দেশের মধ্যে লেনদেন করা গেলেও বৃহৎ পরিসরে আন্তর্জাতিক ই-কমার্স লেনদেন করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় যদি প্রতিটি দেশের নিজস্ব সিবিডিসি থাকে এবং তা নিজ নিজ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিংয়ের আওতায় থাকে তবে মুহূর্তেই এক দেশ থেকে আরেক দেশে নিরাপদে ও সহজে পেমেন্ট করা সম্ভব হবে। এবং এই পেমেন্ট করার কাজটি ব্যবহারকারী নিজেই করবেন। ফলে সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মুদ্রা বিনিময়ের পদ্ধতি কীভাবে হবে?
আমরা জানি, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারকেই ভিত্তি মুদ্রা হিসেবে ধরা হয়। সিবিডিসি কাজ করবে ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার সিস্টেমে এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ফলে ব্যবহারকারী সব দেশ একটি কমন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। প্রত্যেক গ্রাহক হবে এই নেটওয়ার্কের সর্বশেষ স্তর। গ্রাহক পর্যায় থেকে তার নিজস্ব লোকাল সিবিডিসির পরিমাণ লেনদেন সম্পন্ন হবে। মুদ্রা বিনিময়ের কাজটি করবে নেটওয়ার্ক হেডকোয়ার্টার।
যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক ই-কমার্স সাইট থেকে ১ ডলার সিবিডিসি মূল্যের কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে চাইলে চলতি বিনিময় মূল্য অনুযায়ী ঐ পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। অনুরূপভাবে কোনো পণ্য বা সেবা বহির্বিশ্বে বিক্রি করলে সিবিডিসিতে মূল্য বুঝে পাবেন আর ক্রেতা সেটা পরিশোধ করবেন। আর দেশে এটি সাধারণ মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মতোই কাজ করবে। সিবিডিসি ব্যবহারকারীকে যথেষ্ট প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। আমাদের দেশে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের ব্যবহার ১২ বছর হতে চলছে, অথচ ব্যবহারকারীরা এখনো তাঁদের আইডি, পাসওয়ার্ড, ওটিপিসহ তথ্য সুরক্ষায় সচেতন নন। শুধু অর্থ স্থানান্তর ছাড়া তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া এখনো সম্ভব হয়নি। ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর নিজের সচেতনতার ঘাটতি একটি বড়ো বাধা। তবে সিস্টেম সুরক্ষা, তথ্য নিরাপত্তা আর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো গেলে সিবিডিসির ব্যবহার হয়ে উঠতে পারে অধিকতর নিরাপদ।
সৌজন্যে— দৈনিক ইত্তেফাক