বাংলাদেশের সাধারণ বীমা কর্পোরেশন-এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও পরিচিতি
- প্রকাশ: ০৭:৩৩:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ অগাস্ট ২০২২
- / ১৮৪৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে মাত্র দুইটি সরকারি বিমা কোম্পানি রয়েছে, এর মধ্যে একটি হলো সাধারণ বীমা কর্পোরেশন। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সাধারণ বা নন-লাইফ বিমা প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ১৯৭৩ সালের ১৪ মে ‘বীমা কর্পোরেশন আইন, ১৯৭৩‘ এর অধীনে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন গঠিত হয়।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন আইন ও প্রতিষ্ঠা
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন (Sadharan Bima Corporation) একমাত্র রাষ্ট্রীয় সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান যা সরাসরি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের সকল ধরণের সাধারণ বীমা ও পুনঃবীমা ব্যবসা করার জন্য বীমা কর্পোরেশন আইন ১৯৭৩ (অ্যাক্ট নং ৬)-এর অধীনে ১৯৭৩ সালের ১৪ মে এটি গঠিত হয়। বর্তমানে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বীমা কর্পোরেশন আইন, ২০১৯ এর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সাধারণ বিমা ব্যবসায় একমাত্র বিমা প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করতে থাকে। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার ব্যক্তি মালিকানাধীন বীমা কোম্পানির অনুমোদন প্রাদান করে এবং সে লক্ষ্যে ‘বীমা কর্পোরেশন অধ্যাদেশ (সংশোধিত), ১৯৮৪’ প্রচার করে।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের বীমা বাজারের ২০% প্রিমিয়াম শেয়ার এর দখলে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন দেশের সবচেয়ে বড়ো বীমা প্রতিষ্ঠান। এর অনুমোদিত মূলধন ১০০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। সর্বশেষ অর্থবছরে এর মোট ডাইরেক্ট প্রিমিয়াম আয় প্রায় ৩৫১.৯২ কোটি টাকা এবং মোট রিইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম আয় প্রায় ৭৯২.৩০ কোটি টাকা।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের বৈশিষ্ট্য
নিম্নে উল্লেখিত কিছু বৈশিষ্ট্যই সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তির কথা প্রমাণ করে।
যেমন— এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের নিজস্ব সম্পদের কারণে মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি, বাংলাদেশের একমাত্র পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান, অফিসসমূহ বিস্তৃত নেটওর্কের আওতাভূক্ত, প্রচুর প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি, বড়ো আকারের বিনিয়োগযোগ্য অর্থ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী এবং সিলেটে থাকা প্রচুর স্থাবর সম্পত্তি। বহুতল বিশিষ্ট সাধারণ বীমা টাওয়ার রাজধানীর বুকে একমাত্র গাড়ি রাখার টাওয়ার।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন বাংলাদেশ, শিল্প উন্নয়ন সংস্থা এবং লিজিং কোম্পানি, জাতীয় চা কোম্পানি লিমিটেড, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, আরামিট লিমিটেড, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো প্রতিষ্ঠানসমূহের স্পন্সর শেয়ার হোল্ডার।
বিচক্ষণতার সাথে সকল প্রকার কার্যপদ্ধতি গ্রহণ করে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এর বৃহত্তর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে থাকে। শুধুমাত্র এ ক্ষেত্রে নয়, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন দেশের শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে গুটি কয়েক বৃহৎ কর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বীমা কর্পোরেশন আইন, ২০১৯ এর ধারা ১৬(১) অনুযায়ী বাংলাদেশের সরকারি সম্পত্তি বা সরকারি সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট কোন ঝুঁকি বা দায় সম্পর্কিত সকল প্রকার নন-লাইফ বীমা ব্যবসা সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ১০০% (একশত ভাগ) অবলিখন (underwrite) করে এর ৫০% নিজের মধ্যে রেখে অবশিষ্ট ৫০% সকল বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির মধ্যে সমহারে বন্টন করে দেয়। উল্লেখ্য, এই আইনের ধারা ১৬(৩) অনুযায়ী ধারা ১৬(১) এর বিধান লঙ্ঘন করে গৃহীত বা ইস্যুকৃত যে কোন বীমা বাতিল বলে গন্য হবে।
পুনঃবিমা ব্যবসার ক্ষেত্রে, ঐ আইন এই মর্মে নির্দেশনা প্রদান করে যে কোম্পানির ৫০% পুনঃবিমা ব্যবসা বাধ্যতামূলকভাবে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এর সাথে করতে হবে আর বাকি ৫০% পুনঃবিমা ব্যবসা কোম্পানি চাইলে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে অথবা দেশি-বিদেশি যে-কোনো বিমাকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে করতে পারবে।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের মূল স্তম্ভ
বিমা আর পুনঃবিমা ব্যবসায়ই হলো সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের মূল স্তম্ভ। মোট প্রিমিয়াম আয়, বিস্তৃত অফিস নেটওয়ার্ক এবং দক্ষ জনশক্তির কারণে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো নন-লাইফ বীমা দায়গ্রহণকারী প্রাতিষ্ঠান। এছাড়াও সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বাংলাদেশে বিমা ব্যবসা পরিচালনাকারী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানসমূহের ঝুঁকির পুনঃবিমা করে থাকে।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পরিচালনা পর্ষদ
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন পরিচালনার জন্য ৭ সদস্যের একটি পরচালনা পর্ষদ আছে যার মধ্যে এক জন খণ্ড-কালীন চেয়ারম্যান।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সেবা
বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান হিসাবে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বৃহৎ পরিসরে বাংলাদেশের বিমা ব্যবসার উন্নতির জন্য বিমা, পুনঃবিমা ও প্রয়োজনীয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিমা সংশ্লিষ্ট সকল সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটি দেশি বিদেশী অন্যান্য বিমা কোম্পানির সাথে পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির মুল বিমা সেবাসমুহ হচ্ছে—
- অগ্নি বিমা
- নৌ-বিমা
- মোটরযান বিমা
- শস্য বিমা
- অন্যান্য বিমা
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি এ সকল বিমার পুনঃবিমা করে থাকে।
নোট: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান অনুযায়ী ‘বীমা’ বানানটি ভুল; সঠিক বানান হলো ‘বিমা’।