ইতিহাসে লর্ড কার্জনের শিক্ষা সংস্কার
- প্রকাশ: ০৪:১১:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ অগাস্ট ২০২২
- / ৪১৪৮ বার পড়া হয়েছে
১৮৯৮ সালে লর্ড কার্জন ভাইসরয় হিসেবে নিয়োগ পান আর এতেই তাঁর আশৈশব লালিত স্বপ্নসাধ সফল হয়। তিনি শিশুকাল থেকেই চাইতেন ভাইসরয় হতে। ব্রিটিশ ভারতের বড়োলাট হলেন তিনি। সাধারণ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে লর্ড কার্জনের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ভারতবাসীর সঙ্গে যত সংঘর্ষ আর মতানৈক্যই থাকে না কেন তাঁর শিক্ষানীতি এদেশবাসীর জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। ১৯০১ সালে সিমলা শিক্ষা সম্মেলনে গৃহীত ১৫০টি শিক্ষা সংক্রান্ত প্রস্তাবনার ভিত্তিতেই পরবর্তীকালে লর্ড কার্জন এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারে ব্রতী হন। সিমলা সম্মেলনে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল— বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, কারিগরী শিক্ষা, শিক্ষক শিক্ষণ ব্যবস্থা, নারী শিক্ষা, নীতি শিক্ষা এবং শিক্ষাদপ্তরের উচ্চতর পদ সৃষ্টি ও ডিরেক্টর জেনারেল নিয়োগের প্রস্তাব।
প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার
শিমলা শিক্ষা সম্মেলনে সরকারি শিক্ষা বিভাগের প্রধানে সাথে আলোচনায় দেখা গেল যে, এতদিনের ব্রিটিশ রাজত্ব শিক্ষার তেমন কোন উন্নতি হয়নি।“Four out of five villages are without a school.
Three boys out of four grow up without any education and only one girl out of forty attends any kind of school.” এক পরিসংখ্যানের ফলে জানা গেল যে, দেশে প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতি মোটেই আশাপ্রদ নয়। তাই প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত শিক্ষার সর্বস্তরের জন্যই লর্ড কার্জন একটি বলিষ্ঠ শিক্ষানীতি প্রয়োগে অগ্রসর হলেন এবং এ উদ্দেশ্য বিস্তৃত কর্মসূচি প্রণয়ন করলেন। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে লর্ড কার্জনের সংস্কারগুলো নিম্নে আলোচিত হয়েছে।
অর্থব্যবস্থা
প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে লর্ড কার্জন এক উদারনীতি অবলম্বন করেন। আগে এ পর্যায়ে শিক্ষার গুণগত মানের প্রতি মোটেই লক্ষ্য করা হয়নি। কিন্তু লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যুগপৎ সংখ্যাগত সস্প্রসারণ এবং গুণগত মানের উৎকর্ষ সাধন। এর জন্য প্রয়োজন ছিল প্রচুর অর্থ সাহায্যের। পূর্বে স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন কর্তৃপক্ষের উপর প্রাথমিক শিক্ষার ভার অর্পণ করা হলেও তাদের ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট অর্থের ব্যবস্থা করা হয়নি। সরকার খরচের এক-তৃতীয়াংশের বেশি কখনও দিতে রাজী হয়নি। লর্ড কার্জন এ কারণে প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারের জন্য বিপুল পরিমাণে এককালীন ও পৌণঃপুনিক গ্রান্ট বিতরণের ব্যবস্থা করেন। এই অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে তিনি চুক্তিবদ্ধ অনুদান ব্যবস্থার পরিবর্তে প্রদেশসমূহ কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান ব্যবস্থাকে স্থায়ী করতে উদ্যোগী হলেন। নতুন ব্যবস্থায় সরকারে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অংশের পরিবর্তে অংশ ব্যয় করতে লাগলেন।
ছাত্র সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছিল দ্বিগুণ। লর্ড কার্জন নির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করলেন যে, প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতির জন্য যে অর্থ সাহায্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে দেয়া হবে সেই অর্থ কেবলমাত্র প্রাথমিক শিক্ষা ব্যতীত অন্য কোন শিক্ষাখাতে ব্যয় করা যাবে না। প্রাথমিক শিক্ষাখাতে বরাদ্দকৃত অর্থে নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে আলাদাভাবে শিক্ষা বাজটে তৈরি করতে হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে আলাদাভাবে শিক্ষা বাজেট তৈরি করতে হবে। বিদ্যালয়ের পরিদর্শকগণ শিক্ষা বাজেটটির বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখবেন এবং পরীক্ষা শেষে শিক্ষা বিভাগের প্রধানের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করবেন।
শিক্ষাক্রম
প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষাক্রমের উৎকর্ষ সাধনও লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতির আর একটি বিশেষ অবদান। কার্জন ঘোষণা করলেন যে, মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাদান করা হবে। শিক্ষাক্রমে এমন সব বিষয় স্থান পাবে যেগুলো পাঠ করে শিক্ষার্থীরা তাদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধান করতে পারবে, দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হবে। শহর ও গ্রামাঞ্চলের জন্য আলাদা শিক্ষাক্রম হবে।
গ্রামাঞ্চলে জনশিক্ষায় কাজ দ্রুততর করতে হলে গ্রামীণ জীবনের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার কাজ দ্রুততর করতে হলে গ্রামীণ l জীবনের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষাক্রমে এ ব্যবস্থার প্রতিফলন অবশ্যই মেটাতে হবে। তাই বলে এর মান কোনক্রমেই নিম্ন পর্যায়ের হলে চলবে না। কিন্ডারগার্টেন প্রথা, শরীর চর্চা বিদ্যা এবং বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের জন্য কৃষি প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুদান ব্যবস্থা
কমিশন নির্দেশিত ফলভিত্তিক অনুদান বিতরণের ফলে প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতি বিপন্ন হয়ে পড়ে। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর অভাবে অনেক প্রাথমিক স্কুলের অস্তিত্ব এক প্রকার বিপন্ন হয়ে পড়ে। অনিচ্ছুক শিক্ষক যন্ত্রের মত কাজ করতে থাকেন। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য লর্ড কার্জন ফলভিত্তিক অনুদান ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে সকল বিদ্যালয়কেই একই হারে সাহায্য দানের নীতি ঘোষণা করেন। ফলে বেসরকারি ও সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন অঞ্চল অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার মান রক্ষা করে চলবে।
শিক্ষক শিক্ষণ
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি করতে হলে যোগ্যতার মানও বাড়াতে হবে। এই উদ্দেশ্যে কার্জন ঘোষণা করেন যে, শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং শিক্ষাকাল বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের যোগ্যতা ব্রিদ্ধির সাথে সাথে বেতনও বাড়াতে হবে। লর্ড কার্জনের সংস্কারের ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাগত সম্প্রসারণ গুণগত মানোন্নয়নের সহায়ক হয়েছিল।
মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার
কার্জনের নীতি
মাধ্যমিক শিক্ষা সম্বন্ধে কার্জনের নীতি মাত্র দুটি কথায় প্রকাশ করা যায়। যথা—
- ক) শিক্ষার বিস্তারের নিয়ন্ত্রণ
- খ) শিক্ষার মানের উন্নয়ন
কার্জনের মূল নীতি ছিল নিম্নমানের স্কুল আর স্থাপন না করে প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলোর মানের যথাযথ উন্নতি বিধানকরা। মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের ক্ষেত্রে কার্জন তাঁর এই নীতিই অনুসরণ করেছেন। aকার্জনের সুপারিশ মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে লর্ড কার্জন তাঁর শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে নিম্নরূপ সুপারিশ করেন।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদন প্রথা, গ্রান্ট-ইন-এইড এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বিভাগের মধ্যে যোগাযোগ
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাধ্যবন্ধনহীন প্রসার রোধকল্পে কার্জন বিদ্যালয়গুলোতে অনুমোদন প্রথা প্রবর্তনের কথা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেন। হান্টার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে এর আগে শিক্ষা বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কার্যকরী ছিল কেবলমাত্র সাহায্য প্রাপ্ত (Aided) বিদ্যালয়গুলোর উপরই।
১৯০৪ সালের কার্জন সরকারের নীতি সংক্রান্ত প্রস্তাবে সেই নীতি পরিত্যাগ করে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলো নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো এবং সেই নীতি অনুসারে স্কুল অনুমোদনের শর্তাদি রচনা করা হলো। ঘোষণা করা হল যে, একমাত্র অনুমোদিত স্কুলগুলোই গ্রান্ট-ইন-এইডের জন্য আবেদন করতে পারবে। এছাড়া যে সমস্ত স্কুল ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার ছাত্র পাঠাতে চাইবে তাদের, একদিকে সরকারি শিক্ষা বিভাগের অনুমোদনের আবরণে স্কুলগুলোর উপর দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করে কার্জন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবাঞ্জিত ব্রিদ্ধি রোধ করতে সচেষ্ট হলেন। এই যুক্ত নিয়ন্ত্রণ আরও কিছু সুবিধা বয়ে আনলো। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা বিভাগের মধ্যে কোন যোগাযোগ ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগ এবং স্কুলগুলোর মধ্যে একটা যোগসূত্র স্থাপন করে কার্জন সে অসুবিধা দূর করলেন। কার্জনের স্কুল অনুমোদনের নীতির ফলে অনুমোদিত স্কুলগুলো কতকগুলো সুবিধা পেল।
সুবিধাগুলো হচ্ছেণ্ঢ
- সরকারি গ্রান্ট-ইন-এড লাভ
- সরকারি পরীক্ষাগুলোতে ছাত্র প্রেরণ
- সরকারি বৃত্তিভোগী ছাত্রদের গ্রহণ।
এ ব্যবস্থাকে অধিক পরিমাণে গ্রান্ট-ইন-এড পাবার আশায়, অনুমোদন লাভে উৎসাহিত করলো। স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুমোদনের শর্তাদি সঠিকভাবে পালন করেছেন কিনা সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য স্কুল পরিদর্শকমন্ডলী সুসংগঠিত করা হলো। যে সমস্ত স্কুলঅনুমোদন লাভের জন্য উৎসাহী হবে না সেগুলোকেও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণাধীন করার উদ্দেশ্যেই এই মর্মে ঘোষণা করা হলো যে, অনুমোদিত স্কুলের ট্রান্সফার সার্টিফিকেটের কোন মূল্য স্বীকার করা হবে না এবং ঐ সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে কোন
অনুমোদিত স্কুল ছাত্র ভর্তি করা যাবে না।
এভাবে অনুমোদিত স্কুলগুলোর মর্যাদা ও কর্মক্ষমতা বিশেষভাবে খর্ব করা হলো। অনুমোদিক শর্ত যথাযথভাবে মানতে অসমর্থ হয়ে অনেক স্কুল ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল। কার্জনের এই নীতির ফলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণভার কার্যকরী হলো।
অসংযত বেসরকারি শিক্ষা প্রচেষ্টায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ অবশ্য প্রয়োজন ছিল কিন্তু তাই বলে এত কঠোরতা কেউ মেনে নিতে পারেনি। অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের ফলে পরবর্তীকালে মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাণহীনতা ও যান্ত্রিকতার ছাপ দেখা দিয়েছিল।
শিক্ষার মান উন্নয়নে লর্ড কার্জনের নীতি
লর্ড কার্জন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাগত সম্প্রাসারণের চেয়ে গুণগত মান উন্নয়নের উপরই গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন বেশি। তাঁর এই নীতিকে ফলপ্রসু করতে তিনি নিম্নলিখিত উপায়গুলো অবলম্বন করেন
- মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি প্রত্যাহার কমিশনের সমর্থিত নীতি কার্জন মেনে নিতে পারেননি। তিনি দেখলেন যে, সরকারি উদ্যোগ প্রত্যাহৃত হলে শিক্ষার মান ক্ষুন্ন হবে। তাই কার্জন সিদ্ধান্ত নেলেন যে, শিক্ষার প্রতিটি শাখায় আর্দশ সরকারি উদ্যোগ অক্ষুন্ন রাখতে হবে এবং প্রত্যেক জেলায় অন্তত একটি করে সরকারি আর্দশ বিদ্যালয় দৃষ্টান্ত স্বরূপ স্থাপন করতে হবে।
- বেসরকারি স্কুলগুলো যাতে সরকারি আদর্শ উচ বিদ্যালয়গুলোর দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করতে পারে সে উদ্দেশ্যে কার্জন বিপুল পরিমাণে গ্রান্ট-ইন-এইড (Grant-in-Aid) বিতরণের ব্যবস্থা করলেন। তিনি স্কুলের পরীক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বআরোপ করতে চাননি। ফলে পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সাহায্য দেবার নীতি মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ক্রমশ বিলুপ্ত হলো।
- ১৯০৪ সালের শিক্ষানীতি সংক্রান্ত প্রস্তাবে কার্জন নির্দেশ দিলেন যে, প্রাথমিক শিক্ষকদের মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। আরও উন্নতমানের শিক্ষক-প্রশিক্ষণ কলেজ স্থাপন করতে হবে। শিক্ষণ প্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে এবং এর জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। লর্ড কার্জন শিক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সক্রিয় অংশ গ্রহণ অনুমোদন করেন। ফলে দেশের শিক্ষিত সমাজ ক্ষুব্দ হন। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, কার্জনের সংস্কারের ফলে শিক্ষার প্রকৃত উন্নতি ঘটেছিল।
লর্ড কার্জনের নীতিতে শিক্ষাক্রম ও ভাষা মাধ্যম
হান্টার কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষাক্রম ‘এ’ কোর্স এবং ‘বি’ কোর্স প্রবর্তণ করেন। ‘বি’ কোর্সে বাণিজ্য ও কারিগরী বিষয় সম্বন্ধে শিক্ষাদানের সুপারিশ করেন। ফলে কিছু কিছু সরকারি বিদ্যালয়ে নামে মাএ একটা ‘বি’ কোর্স রাখা হয়েছিল যাতে সামান্য কিছু কঠোর কাজ করার ব্যবস্থা ছিল মাত্র।
কিন্তু সে শিক্ষা পরবর্তী কারিগরী শিক্ষার ক্ষেত্রে মোটেই সহায়ক হয়নি। কার্জন বিষয়টি পর্যালোচনা করে ঘোষণা করলেন যে, মাধ্যমিক শিক্ষাকে জীবনরূপায়িত করতে বিভিন্ন ধরনের পাঠ্যসুচি মাধ্যমিক শিক্ষার শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। তিনি মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমে বৃত্তিমুলক বিষয় প্রবর্তনের উপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন এবং ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার সমমর্যাদা সম্পন্ন একটি বৃত্তিমূলক পরীক্ষারও আয়োজন করার প্রস্তাব করেন। বৃত্তিমূলক বিষয়গুলোর মধ্যে থাকবে কারিগরী শিক্ষা, শিক্ষক-শিক্ষণ, শিল্প শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা, চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষা, সুকুমার শিল্প শিক্ষা ইত্যাদি। ভাষা মাধ্যম সম্পর্কে কার্জনের বক্তব্য ছিল কমিশনের চেয়ে সুষ্পষ্ট। তিনি তাঁর শিক্ষামূলক প্রস্তাবে ঘোষণা করেন যে, শিক্ষার্থীরা ১৩ বছর বয়সের আগে ইংরেজি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করা কোন মতেই যুক্তিযুক্ত হবে মা।
নারী শিক্ষা সংস্কারে লর্ড কার্জন
বালিকাদের শিক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের বিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা সরকারি সিদ্ধাšেত্ম ঘোষণা করা হলো। মহিলা শিক্ষাদানের জন্য পৃথকভাবে শিক্ষিকা শিক্ষণ বিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলা হলো। প্রচুর সংখ্যক বিদ্যালয় পরিদর্শিকার প্রয়োজনও স্বীকৃত হলো।
প্রসঙ্গত উলেস্নখ করা যেতে পারে যে, মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অনেক বড়ো বড়ো কথা বলা হলেও আসলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো কিন্তু প্রচলিত প্রথরেখা ধরেই অগ্রসর হচ্ছিল। ভাষা মাধ্যম ব্যাপারে বিদ্যালয়গুলোতে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের কথা উচ্চ কন্ঠে ঘোষণা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে ইংরেজিকেই শিক্ষার মাধ্যম রাখা হলো। মাতৃভাষা মাধ্যমিক শিক্ষার কিছুটা স্থান পেলেও শিক্ষার মাধ্যম হলো না।