শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
- প্রকাশ: ০১:৩০:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২২
- / ১৪৮৪ বার পড়া হয়েছে
শতভাগ শিক্ষিতদের দেশ শ্রীলঙ্কা। একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পর্যটন আয়ের ওপর ভর করে দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা বেশ ভালোই চলছিল। তামিল বিদ্রোহ দমন করা রাজাপাকসে সরকার তুমুল জনপ্রিয়ও ছিল। কিন্তু সম্প্রতি যেন হঠাৎ করেই দেশটিতে অর্থনৈতিক ছন্দপতন ঘটে। হঠাৎ করেই বিপর্যয় নেমে এসেছে বিষয়টা ঠিক এরকম নয়। কোনো কিছুই আসলে হঠাৎ করে হয় না। ছোট্ট একটা কুঁড়েঘরও হঠাৎ করে ধ্বসে পড়ে না। যখন ঘুনেপোকা আস্তে আস্তে তার খুঁটিগুলো নড়বড়োে করে দেয় তখনি কেবল ধ্বস নামে। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক এরকমটাই ঘটেছে।
২০১৯ সালের এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) একটি ওয়ার্কিং পেপারে দেশটির আশু অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সতর্কতা দেওয়া হয়। কিন্তু রাজাপাকসে সরকার এই সতর্কতা কানে তোলেনি। রাজাপাকসে ভাতৃদ্বয় বরং ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কর হ্রাসের ঘোষণা দেয়। করোনা মহামারীর শুরুর প্রাক্কালে এই নীতি কার্যকর হওয়াটা দেশটির অর্থনীতি বড়ো ঘাটতি তৈরী করে। কারণ, করোনার কারণে পর্যটন খাতে বড়ো ধরণের ধ্বস নামে যা দেশটির অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস। এছাড়াও ২০২১ সালে লঙ্কান সরকার সব ধরণের রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ করে। ফলে দেশটিতে কৃষি উৎপাদন কমে যায়।
এরপর রয়েছে রাজাপাকসে পরিবারের দুর্নীতি। সব মিলিয়ে গত দুই বছরে দেশটির রিজার্ভ কমে যায় ৭০ শতাংশ। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক কিছু স্বল্প মেয়াদী ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে চলতি বছরের মে মাসে দেশটির রিজার্ভ দাঁড়ায় মাত্র আড়াই বিলিয়ন ডলারের কাছে। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে মাত্র ২.৩১ বিলিয়ন ডলারে রিজার্ভ নেমে আসা দেশটির দেউলিয়া হওয়ার পরিচয় তুলে ধরে। এভাবেই ক্রমান্বয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যম-উন্নত (উন্নয়নশীল) দেশটিতে চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসে। অথচ ৮১ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ছিল দেশটিতে মাত্র কয়েক বছর আগেও।
সম্প্রতি এমনটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন। গত ৬ জুলাই (বুধবার) সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয় আইএমএফ এর সাথে বৈঠকে যাওয়ার প্রসঙ্গে আগেরদিন মঙ্গলবার পার্লামেন্টে এক ভাষণে রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, দেশের ‘ধ্বংস হওয়া’ অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাথে আলোচনা করা অত্যান্ত কঠিন হবে। কারণ দুই কোটি জনসংখ্যার দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি একটি উন্নয়নশীল দেশ না হয়ে আজ একটি দেউলিয়া দেশ হিসাবে আলোচনায় প্রবেশ করেছে। আমরা এখন একটি দেউলিয়া দেশ হিসেবে আলোচনায় অংশ নিচ্ছি। তাই আমাদের আগের আলোচনার চেয়ে আরও কঠিন ও জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
দেশটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ আর্থিক সংকটে ভুগছে , লক্ষ লক্ষ মানুষ খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানি কিনতে সংগ্রাম করছে। চরম খাদ্য সংকট, জ্বালানি সংকট ও বিদ্যুত সংকটে ভুগছে দেশটি। মে মাসেই দেশটিতে খাদ্যমূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫৭.৪ শতাংশে। বর্তমানে সেটা বেড়েছে বই কমেনি।
শ্রীলঙ্কায় কেন এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়?
মে মাসে প্রকাশিত শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির পর্যালোচনায় আইএমএফ বলেছে, শ্রীলঙ্কায় সরকারি ঋণ ‘অস্থিতিশীলভাবে’ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্বল্প মেয়াদী ঋণ পরিশোধের জন্য অপর্যাপ্ত। যেখানে বছরে শুরুতেই ৪ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধের মুখোমুখি হতে হয় দেশটির আর্থিক খাতকে। রিজার্ভের বিপরীতে অতিরিক্ত ঋণের ভারে ঝর্ঝরিত শ্রীলঙ্কায় শুরু হয় তীব্র বিক্ষোভ। বিক্ষোভের ফলে প্রেসিডেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া মাহিন্দা রাজাপাকসে পালিয়ে রাজধানী ছাড়তে বাধ্য হন। বিক্ষোভ চলাকালে সরকারদলীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতকার্মীদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, ব্যক্তিগত আক্রমণ, এমনকি এক সাংসদকে গুলি করে হত্যাও করেছে উত্তেজিত জনতা। গাড়ি থেকে নেমে পরিত্যক্ত এক ভবনে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি ওই এমপির। যদিও লঙ্কান পুলিশের বরাতে দুইরকমের বক্তব্য পাওয়া যায়। এক বিক্ষোভকারীকে গুলি করে ওই এমপি নিজিই আত্মহত্মা করেন বলেও জানিয়েছিল পুলিশ। একপর্যায়ে পুরো সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
শ্রীলঙ্কায় কেন এই বিপর্যয়। বিশ্লেষণ করলে মোটাদাগে বেশ কয়েকটি কারণ উঠে আসে
অপ্রয়োজনী ও অপরিকল্পিত মেগা প্রকল্প
গত ১৫ বছর ধরে শ্রীলঙ্কা বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, রাস্তা এবং আরও নানা ধরনের প্রকল্প। দেশটির বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বিপুল অর্থ খরচ করা হলেও অনেক প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়নি। বিশেষ করে চীন অর্থায়নে নির্মিত সমুদ্রবন্দর, কলোম্বর কৃত্রিম শহর, বিমানবন্দর সহ অনেক মেগা প্রকল্প নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
হাম্বানটোটা সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পর ১৪০ কোটি ডলারের চীনা ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ৬ বছরে ৩০ কোটি ডলার হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। পরে বাধ্য হয়ে ২০১৭ সালে বন্দরটি একটি চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির কাছে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দেয় রাজাপাকসে সরকার। এর ফলে চীনা অর্থে নির্মিত বন্দর শেষ পর্যন্ত চীনের হাতে চলে যায়।
রাজধানী কলম্বোর কাছে সমুদ্রের মাঝে ৬৬৪ একর জায়গা জুড়ে দুবাইয়ের আদলে ‘কলম্বো পোর্ট সিটি’ নামে বিলাসবহুল কৃত্রিম শহর গড়ে তোলা হচ্ছে। যেখানে বর্তমানে বসবাস করছে রাজাপাকসে পরিবার। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ২৫ বছর এবং বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। এই প্রকল্পের অর্থায়নও চীনের। সমালোচকদের আশঙ্কা, এই প্রকল্পও চীনা ঋণের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে।
শ্রীলঙ্কা সরকারের ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণের ১০ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। এভাবে একের পর এক অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাসবহুল প্রকল্প ধীরে ধীরে দেশটিকে ঋণের ফাঁদে ফেলে দিয়েছে। এসব প্রকল্পে রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠে মেগা দুর্নীতির অভিযোগ। বিশ্লেষকরা বলছেন, মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি করা যায় সেই সুযোগটাই নিয়েছে রাজাপাকসে পরিবার। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া সহ মন্ত্রীসভায় ছিল রাজাপাকসে পরিবারের আরও একাধিক সদস্যা যা এই পরিবারের দুর্নীতির পথ সুগম করেছে বলেই মনে করছেন দেশটির রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
কর হ্রাস নীতি
২০১৯ সালে নির্বাচনের আগে মাহিন্দা রাজাপাকসে কর হ্রাসের ঘোষণা দেন। সংবিধান পরিবর্তন করে ক্ষমতা বাড়িয়ে প্রেসিডেন্ট থেকে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া মাহিন্দা জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে কর হ্রাসের সস্তা কৌশল অবলম্বন করেন। ফলে করোনা মহারীর সময় বৈদেশিক আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি কর হ্রাসের ঘাটতি বড়ো ধরণের ক্ষতির মুখে পড়ে দেশটির অর্থনীতি।
পর্যটন খাতে ধ্বস
দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস ছিল পর্যটন। ১৯ সালে করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে বিদেশী পর্যটক খরায় দেশটির পর্যটন খাতে ব্যপক ধ্বস নামে যা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশটি। মহামারীর আগে দেশটিতে আসা পর্যটকদের সব থেকে বেশি সংখ্যক আসতো চীন থেকে। অন্যদিকে করোনা মহামারী শুরুই হয়েছে চীনে। যার ফলে পর্যটন আয়ে বড়ো ধরণের ধাক্কা খায় শ্রীলঙ্কা।
উৎপাদন আয় কমে যাওয়া
২০১৯ সালে লঙ্কান সরকার দেশটিতে সব ধরণের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার অর্গানিক কৃষি নীতির ফলে কমে যায় ফসল উৎপাদন। কমে যায় প্রধান রপ্তানী পণ্য চাল ও চা উৎপাদন। চালের উৎপাদন কমে প্রায় ২০ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশও শ্রীলঙ্কা থেকে চাল আমদানি করতো সেই স্বয়ং সম্পূর্ণ শ্রীলঙ্কা একসময় ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের চাল আমদানি করতে বাধ্য হয়। আর বর্তমানে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দেশটি বাংলাদেশ থেকে চাল অনুদান চেয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় ৫০০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে চালের দাম। মাত্র এক কাপ চায়ের দাম হয়েছে ১০০ টাকা। যেখানে আগে এই দুইটা পণ্যই রপ্তানি করতো দেশটি।
পূর্ব সতর্কতা
২০১৯ সালে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দেশটিকে আশু সংকটের সতর্কতা দেয়— এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয় ‘শ্রীলঙ্কা ইজ এ ক্লাসিক টুইন ডেফিসিট ইকোনমি’। অর্থাৎ একটি দেশের জাতীয় ব্যয় তার জাতীয় আয়ের চেয়ে বেশি এবং দেশটির বাণিজ্যিক পণ্য ও পরিষেবার উৎপাদন অপর্যাপ্ত। যেটা খুব অল্প সময়ের ব্যবধানেই স্পষ্ট হয়ে ধরা দিলো। মাত্র আড়াই বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ নিয়ে আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ড (আইএসবি) (১ বিলিয়ন ডলার) বাদেই ঋণ রয়েছে ১২.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। যার ৭ বিলিয়ন ডলার চলতি বছরের মধ্যেই পরিশোধের বাধাবাধ্যকতা রয়েছে।
শুধু এডিবি নয় বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়াও সতর্ক করেছিলেন শ্রীলঙ্কাকে। তাও আবার ছয় বছর আগে। সম্প্রতি রেজা কিবরিয়া নিজেই এমন তথ্য জানিয়েছিলেন।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ড. কিবরিয়া বলেন, আমি ছয় বছর আগে কিছু পরিসংখ্যান পড়ে তাদের সরকারকে নোট পাঠিয়েছিলাম। আমার একটা বন্ধু ওখানে ছিল, তারা আমার নোট নিয়ে হাসাহাসি করেছে তারা তখন বলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ শ্রীলঙ্কার শক্তি বোঝে না। এখানে কোনোদিন এটা হবে না। চিকিৎসক যেমন ব্লাড টেস্ট এবং বিভিন্ন রকমের টেস্টের ফলাফল দেখে বলে দিতে পারে আপনার কী সমস্যা আছে, তেমনি আমি ছয় বছর আগে তাদের বলেছিলাম আপনাদের এই পরিসংখ্যান আমার মোটেই ভালো লাগছে না, আমার মনে হচ্ছে একটা বিপদ আসবে।
সেই ভবিষ্যদ্বাণীর সূত্র ধরেই শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট রাজনৈতিক সংকটে রূপ নিয়েছে। যেটি পরবর্তীতে সহিংসতায় রূপ নেয় বলেন ড. রেজা কিবরিয়া। এটা ছিল দেশটির কর্তাব্যক্তিদের উদাসীনতা আর বিদেশী অর্থে বিলাসীতার ফল। বিদেশী অর্থে বিলাসীতা আর দুর্নীতি করে যে দেশ রক্ষা হয় না সেটাই দেখিয়ে দিলো রাজাপাকসে পরিবার।
শ্রীলঙ্কা ইস্যুতে কেন বাংলাদেশ প্রসঙ্গ?
প্রসঙ্গ যখন বাংলাদেশ তখন মেগা প্রকল্প আর চীন অনুমিত ভাবেই সমার্থক শব্দ হয়ে উঠবে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশ কী শ্রীলঙ্কার পথেই হাঁটছে? অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আর অস্থির বাজার ব্যবস্থাপনা দেখলে স্বভাবতই উত্তরটা হ্যাঁ উচ্চারিত হয়। দেশি-বিদেশী খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশকেও সতর্কবার্তা দিয়েছে। প্রশ্ন হলো যে, অর্থনীতি সে পথে হাঁটলেও সরকারও কী সে পথেই হাঁটবে? নাকি সতর্ক হবে? এই প্রশ্রে উত্তর খোঁজার আগে বড়ো প্রশ্ন- শ্রীলঙ্কার নাম আসলেই কেন বাংলাদেশ এখন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে সেটার উত্তর খোঁজা।
বাংলাদেশ কেন প্রাসঙ্গিক ?
এই নিবন্ধ যখন লেখা শুরু করেছিলাম তখনো শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদে বহাল ছিলেন পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ভাই গোতবায়া রাজাপাকসে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পদত্যাগ করে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়াও। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলার বা ৪২০০ কোটি মার্কিন ডলার। ৮/৯ মাস আগেও যা ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই লেখা যখন শেষ করি তখন দেশের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। এই ঘাটতিটা হয়েছে ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ এর তথ্যমতে এই পরিসংখ্যানে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। আইএফএম বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসেব দিয়েছে তাতে ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ তথ্য লুকানো হয়েছে। অর্থাৎ রিজার্ভের আসল পরিমাণ আরও অন্তত ৭ বিলিয়ন ডলার কম তথা ৩২.৭০ বিলিয়ন ডলার।
দেশের অর্থনীতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশ কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ উর্ধ্বমুখি ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে যেটা কমতে শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, একদিকে কমেছে প্রবাসী আয় অন্যদিকে বেড়েছে ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা। সেই সাথে আমদানী খরচ তো আছেই। করোনামহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থাকেও দুষছেন অনেকে। যুদ্ধাবস্থার কারণে অতিরিক্ত আমদানী ব্যায়কে দুষেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব মিলিয়ে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ কমছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি না হলেও প্রাথমিকভাবে উদ্বেগজনক। সার্বিকভাবে রিজার্ভের বর্তমান যে অবস্থা তা সন্তোষজনক নয় বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
কিন্তু কথা হলো এটাই কি মূল কারণ কিনা। এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদরা কী বলছেন সেটাই আসলে দেখতে হবে সুক্ষ্মদৃষ্টিতে।
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি নিয়ে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদি ড. রেজা কিবরিয়া এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিষদ আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতিও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে তবে সেটা এই মুহূর্তে না বরং আরও কয়েক বছর পর। তিনি বলেন, দেশের একজন অর্থনীতিবিদ বলেছে দুই-তিন বছর পর হতে পারে। তবে আমি মনে করি পাঁচ-ছয় বছর পর হতে পারে। আমরা যে পথে আছি সেটা হওয়া সম্ভব। তখন এটা থেকে বের হয়ে আসতে আমাদের অন্তত ১২ থেকে ১৫ বছর সময় লাগতে পারে।
শ্রীলঙ্কায় এমন পরিস্থিতির জন্য তিনি দায়ী করছেন সরকারে অদক্ষতা আর দুর্নীতিকে। তিনি বলেছেন, অপরিকল্পিত বিলাসী উন্নয়ন প্রকল্প আর রাজাপাকসে পরিবারের দুর্নীতিই মূলত দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। এমত অবস্থায় তুলনার নজরে বাংলাদেশেও অনুরূপ কারণগুলো সমানভাবে দৃশ্যমান।
দেশে চলমান এবং সম্ভাব্য অপরিকল্পিত, বিলাসী ও মেগাপ্রকল্পগুলো সেদিকেই আঙুল তুলছে। দফায় দফায় এসব প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি দুর্নীতির স্পষ্ট বার্তা দিলেও সরকার সেসব কর্ণপাত না করে বরং উল্টো দুর্নীতিকে নিরবে সমর্থন করছে। ব্যক্তিগত এক আলাপে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি টেলিভিশনে কর্মরত এক সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করেন ‘ভাই পদ্মাসেতু নির্মাণে কি দুর্নীতি হয়নি’?। আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই তিনি বলেন, অবশ্যই দুর্নীতি হয়েছে। তথ্যও আছে। কিন্তু গণমাধ্যম নিউজ করে না কেন? কারণ কেউ চায় না তার প্রতিষ্ঠানের সম্প্রচার সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাক। কিংবা কেউ জেলে যাক। অর্থাৎ দুর্নীতি, দুঃশাসন ও স্বৈরাচারী মনোভাব আড়াল করতে গণমাধ্যমের ওপর যে অদৃশ্য একটা চাপ রয়েছে সে কথাই ফুটে ওঠে ওই সাংবাদিকের কন্ঠে। সংবাদ মাধ্যমের কন্ঠরোধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কেরামতি তো দেশবাসী দেখছেই নিয়মিত। এসব কিছুর প্রতি ইঙ্গিত করেই ড. রেজা কিবরিয়া শ্রীলঙ্কার স্বৈরাচারী শাসন, দুর্নীতি আর অপরিকল্পিত বিলাসী প্রকল্পের কথা উল্লেখ্য করেন।
ড. রেজা কিবরিয়ার বক্তব্যের নিরব সমর্থ পাওয়া যায় সিপিডির ফেলো প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্জের এক বক্তব্যে। গত ৯ মে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ড. দেবপ্রিয় বলেন, আগামী ৩ বছর পর দেশে একটা অস্বস্তি তৈরী হতে পারে। ওই সময় রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা রেল লিংক ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের রেয়াতকাল শেষ হয়ে ঋণ পরিশোধকাল শুরু হবে। ফলে ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালে গিয়ে বাংলাদেশ বড়ো ধরনের ঋণ পরিশোধের বাস্তবতার মুখোমুখি হবে। ওই সময় কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হতে পারে বলে মত দিয়েছেন ড. দেবপ্রিয়। এর পেছনে তিনি কারণ হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন, বিগত তিন বছর ধরে অতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের প্রবণতাকে। এটাকে তিনি উদ্বেগের কারণ হিসেবেও উল্লেখ্য করেছেন।
অর্থাৎ এই তিন বছরে যদি রিজার্ভের পরিমাণ উন্নিত করা না যায় তাহলে পরবর্তীতে সমূহ বিপদের আশঙ্কা কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এড়িয়ে না গিয়ে বরং সতর্কতা অবলম্বন করাই হবে এখন বুদ্ধিমানের কাজ। এ অবস্থায় শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নিয়ে বৈদেশিক ঋণের চাপ সামলাতে কর আহরণ বাড়ানো, বহির্খাতের বর্তমান চাপ মোকাবিলায় সুরক্ষা দেওয়া এবং দায়দেনা পরিস্থিতির সামগ্রিক, স্বচ্ছ ও নিয়মিত তদারকির জন্য সরকারকে পরামর্শও দেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের অসারতা নিয়ে সতর্কতা দিয়েছেন। তিনি মোট ৮টি সম্ভাব্য প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয়তা উল্লেখ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। প্রকল্পগুলো হলো ১. ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বুলেট ট্রেন, ২. দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, ৩. দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ৪. পূর্বাচলে ১১০ তলাবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু বহুতল ভবন কমপ্লেক্স, ৫. শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ৬. পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, ৭. নোয়াখালী বিমানবন্দর এবং ৮. ঢাকার বাইরে রাজধানী স্থানান্তর। এসব প্রকল্প ভবিষ্যতে শ্রীলংকার মতো বাংলাদেশেরও ‘ঋণের ফাঁদে আটকা পড়ার আশঙ্কার কারণ হতে পারে বলে তিনি সতর্ক বার্তা দিয়েছেন।
ড. মইনুল ইসলাম শুধু আশঙ্কাই ব্যক্ত করেননি। প্রত্যেকটা প্রকল্প বন্ধের দাবিতে যৌক্তিকতাও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। এরমধ্যে দু’য়েকটা প্রকল্পের ব্যাপারে আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্তের কথাও সরকারও জানিয়েছে। যদিও সেগুলোর সমীক্ষা যাচাই চলছে।
তিনি বলেন, শরীয়তপুরের প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়তো ভবিষ্যতে দেশের জন্য প্রয়োজন হবে। কিন্তু এখন যখন শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে, তখন সম্প্রসারিত শাহজালাল বিমানবন্দর আগামী এক দশক দেশের প্রয়োজন ভালোভাবেই মেটাতে সক্ষম হওয়ার কথা। এছাড়া পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের চেয়ে ওখানে একটি টানেল নির্মাণের যুক্তি অনেক বেশি শক্তিশালী এবং নোয়াখালী বিমানবন্দর খুব বেশি ব্যস্ত হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। শ্রীলংকার রাজাপাকসে বিমানবন্দরের মতো এটিও বোঝা হয়ে পড়বে বলেই তিনি মনে করেন।
এছাড়াও যেখানে প্রথম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের এক-তৃতীয়াংশ ক্যাপাসিটিও এখনো আমরা ব্যবহার করতে সক্ষম হইনি সেখানে দ্বিতীয় আরেকটি স্যাটেলাইট প্রকল্প গ্রহণ করা বালখিল্যতা আর বোকামী ছাড়া কিছুই নয়। এভাবে সবগুলো প্রকল্পের ব্যাপারে রয়েছে তার শক্তিশালী যুক্তি। যা এই প্রকল্পগুলোর অপ্রয়োজনীয়তা অকাট্যভাবে প্রতিয়মান হয়। এমনকি রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পকে তিনি শ্বেতহস্তী প্রকল্প আখ্যা দিয়েছেন। সরকারের এহেন অপরিকল্পিত ও অসার প্রকল্প গ্রহণের ফলে বৈদেশিক ঋণের ফাঁদে আটকে যাওয়ার আশঙ্কা দেশকে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, বড়ো অনেক প্রজেক্টের আমরা কোনো বেনিফিট পাবো না অনেক বছর পর্যন্ত। কক্সবাজারে একটা রেলওয়ে ট্রাক হচ্ছে এটাতেও কোনো লাভ নেই, চট্টগ্রামে একটা টানেলের করেছে এটা তো তেমন কোনো অর্থনৈতিক লাভ নেই। পায়রা সফলতার সম্ভাবনা অলমোস্ট জিরো। এতগুলো প্রকল্প তারা কেন নিয়েছে? কারণ মেগাপ্রকল্পগুলো দুর্নীতিবাজ সরকারের খুব পছন্দের হয়। কারণ হলো মেগাপ্রকল্প থেকে মেগা কমিশন পাওয়া যায়। সমস্যা হলো তারা যে টাকা খরচ করে এবং যে টাকা চুরি করে সে টাকা মানুষের ঋণের বোঝা হয়ে ওঠে। দিনশেষে জনগণকে সেই টাকা পরিশোধ করতে হয়।
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সরকার কী বলছে?
বিরোধী রাজনৈতিক মত ও অর্থনীতিবিদরা সরকারকে এখনই সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানালেও সেসব এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেই অনেকে মনে করছেন। বাংলাদেশ সরকারের এমপি, মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা, সরকারদলীয় নেতা এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন। তারা বলছেন, এ ধরণের চিন্তা ভাবনা অমূলক। তারা এটাকে দেশবিরোধী আখ্যা দিচ্ছেন। তারা বরং শ্রীলঙ্কার সাথে তুলনা না করে দেশকে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার সাথে তুলনা করার পরামর্শ দিচ্ছে। তবে নেতা মন্ত্রীরা যাই বলুন, সরকার কিন্তু ভিতরে ভিতরে বেশ কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যে নিয়েছে।
একদিকে সমূহ আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া অন্যদিকে সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ আশঙ্কাকে আমলে নেয়ার দিকেই ইশারা করছে। সম্প্রতি বেশ কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি কিছু কিছু পণ্যের আমদানীতে অনুৎসাহ দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। বিভিন্ন কারণে সরকারী কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ কর্মকর্তাদেরও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন কমিটি বৈঠকে সরকারী কর্মকর্তারা যে সম্মানি ভাতা পেতেন সেটা বন্ধ করা হয়েছে, সবধরণের গাড়ী কেনায় নিষেধাজ্ঞা আরওপ করা হয়েছে, বিদ্যুৎ সংকটে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে বিদ্যুৎ ব্যবহারে দেশবাসীকে মিত্যব্যায়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে জ্বালানি ঘাটতি পূরণে বৃহত আমদানী ও রিজার্ভ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেক বিশ্লেষক। যদি সরকার সম্পূর্ণ দুষছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে। অথচ বিদ্যুৎ খাতের যে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ উৎপাদন না করা, বিনা প্রয়োজনে বসি বসিয়ে বিশেষ কোম্পানিকে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দেওয়াকে সামনে আনছে না সরকারের কোনো দপ্তর। যাইহোক, সব মিলিয়ে নানা খাতে সরকার মিত্যব্যায়ী হওয়ার চেষ্টা করছে এটা স্পষ্ট। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যতোই সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার গল্প শোনান আদতে ভিতরে ভিতরে শ্রীলঙ্কার মতো সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া হতে চাওয়ার খায়েশ দেশের অর্থনীতিকে ক্রমেই ভঙ্গুর করে দিচ্ছে সেটাই প্রতিয়ামান হয়। আর এর পেছনে দুর্নীতিকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান টিকিয়ে রাখতে করণীয়
ইতোমধ্যে সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেসব পূর্ব সতর্কতা হিসেবেই ধরা গেলেও আপাতত এ সিদ্ধান্তগুলোকে সাধুবাদ জানিয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি বন্ধে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। সেই সাথে দুর্নীতির মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের অর্জিত অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার, নতুন করে পাচাররোধ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, খুব বেশি প্রয়োজন নেই এমন সব প্রকল্প সাময়িক স্থগিত করা সহ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ আমলে নিয়ে আরও যা যা প্রয়োজন হয় সে অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তাবায়নে জোর দেওয়ার বিষয়ে সরকারের প্রতি অনুরোধ থাকবে। মন্ত্রী-কর্তাদের উচিত শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নেওয়া। মাত্র কয়েকবছর আগেও শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের চেয়েও ভালো ছিল, তথা ৮১ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ ছিল। ৮১ থেকে ২.৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে তাদের মাত্র ৩ বছর সময় লেগেছে।
শেষকথা
বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে ভেবে শুধু সরকারে সমালোচনা করেই চুপ থাকা বা দেউলিয়া হওয়ার অপেক্ষায় থাকা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। বরং দেশের প্রত্যেক নাগরিককে যার যার জায়গা থেকে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারার সামর্থ্য সেটাই করা উচিত। এক্ষেত্রে বৈদেশিক রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে উৎসাহ দিতে সরকারের এগিয়ে আসা একান্ত জরুরী। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। সমৃদ্ধ থেকে দৃঢ় সমৃদ্ধ হোক। পরিবর্তন হোক দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক চাকা।
তথ্যসূত্র:
- সিএনএনএন
- বিজনেস স্টান্ডার্ড
- প্রথম আলো
- ডেইলি স্টার
- বাংলা ট্রিবিউন
- বিডি নিউজ
- বণিক বার্তা
- বিবিসি ইংলিশ
- বাংলাদেশ ব্যাংক
- আইএমএফ ও
- উইকিপিডিয়া
(মন্তব্য লেখকের নিজস্ব, বিশ্লেষণ কর্তৃপক্ষ এর দায় নেবে না)
নিবন্ধটিতে শেষে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যা আমলে নেয়া যেতে পারে। বিশেষ করে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার, দুর্নীতি বন্ধ, অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প স্থগিত করা। এই মুহূতে আসলেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানো উচিত।