০৫:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

ধর্মীয় শিক্ষাকে কর্মমুখী করতে হবে

ড. হাসনান আহমেদ
  • প্রকাশ: ০৬:৪২:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২
  • / ৯৮৪ বার পড়া হয়েছে


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

 এ দেশে মাদ্রাসা-শিক্ষাব্যবস্থা বেশ প্রসার লাভ করছে। দেশের সর্বত্র প্রা গ্রামেগঞ্জে মসজিদভিত্তিক মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। সেখানে দিনি-ইলম (ধর্মীয় শিক্ষা) চালু হয়েছে। কওমি শিক্ষায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে না। এলাকার প্রতিটি বাড়ি থেকে চাল-ধান কিংবা চাঁদা উঠিয়ে কখনোবা স্বাবলম্বী পরিবারের আল্লাহর ওয়াস্তে দান-খয়রাত ইত্যাদির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ও মৌলভী-মাওলানাদের খাবারের ব্যবস্থা এবং পারিশ্রমিকের সংস্থান হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকায়, গ্রামেগঞ্জে এভাবে অবহেলিত অনানুষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে কওমি মাদ্রাসা টিকে আছে।

উল্লেখ্য, এসব প্রতিষ্ঠানের লিল্লাহ-বোর্ডিংয় এদেশের গরিব, অসহায়, এতিম শিশুদের বিনা-খরচে থাকা-খাওয়া ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এ ধরনের ব্যবস্থা অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই। নিঃসন্দেহে এটি একটি সমাজসেবা ও সমাজকর্ম। এ ছাড়া সামাজিক সমস্যার সুন্দর একটি সমাধানও বটে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নেওয়া ছাত্রছাত্রীদের সবাই খোদাভীরু, সচ্চরিত্রবান এবং অল্পে তুষ্ট। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী অল্প বয়সে বখে যায় না। কোনো সমাজ-বিগর্হিত কাজে তাদের সম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে।

তবে অনেক ভালো দিকের মধ্যেও বেশকিছু বিষয় আছে, যে কারণে পরিবর্তিত সমাজ ও বিশ্বব্যবস্থায় তাদের উন্নতির জন্য চিন্তাভাবনা আবশ্যক বলে মনে করি। এই নিবেদিতপ্রাণ ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এবং তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ মনের অজান্তেই কিংবা অজ্ঞতাবশত তাদের চিন্তা-চেতনা-শিক্ষা ও জীবন-ধারণা দিয়ে মুসলমান জাতিকে পিছিয়ে দিচ্ছে; যদিও ধর্মগ্রন্থ তাদের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে মানবজাতির কল্যাণে তাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। তাদের মধ্যে জীবনমুখী ও কর্মমুখী শিক্ষা নেই, উচ্চশিক্ষা নেই, জ্ঞান-বিজ্ঞান নেই, প্রযুক্তিগত শিক্ষা নেই, উন্নত শিল্প-ব্যবসা শিক্ষাও নেই-ফলে উদ্দেশ্যহীন দুনিয়াদারি করে চলেছে তারা। তাদের অনেকে কোনো গঠনমূলক পরামর্শও নিতে চায় না। তাদের চিন্তাধারা ও বিশ্বাস এমনই বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, সে অবস্থা থেকে তাদের সরিয়ে আনতে গেলে কখনো কখনো তাদের কর্মকাণ্ড উগ্রতায় রূপ নেয়।

শত শত বছর আগে ঘোড়ার পিঠে চড়ে তলোয়ার নিয়ে মানুষ যুদ্ধের শক্তিমত্তা দেখাত। বর্তমানে মানুষ সুপারসনিক রকেটে চড়ে এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে যাচ্ছে। নিজ দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের শত্রুঘাঁটিতে রকেট-মারণাস্ত্র ছুড়ে অন্যকে ঘায়েল করছে। চোখের পলকে তথ্য বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাঠাচ্ছে। কোনো তারের সংযোগ ছাড়াই ভূপৃষ্ঠের এক প্রান্তের ঘটনা অন্য প্রান্তে বসে সরাসরি দেখছে। প্রায় সব কাজই মানবজাতি ও সৃষ্টির কল্যাণে হচ্ছে। অথচ বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক কোনো কাজে ধর্ম-শিক্ষকরা নিজে ও তাদের ছাত্রছাত্রীদের নিযুক্ত করতে রাজি নন। তারা বোঝেন না, অতীতের ঘটনা ও কর্ম থেকে আমরা শিক্ষা ও আদর্শ নিতে পারি; কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক কাজেকর্মে নিজেদের সম্পৃক্ত করাটাই বুদ্ধিমানের ও জ্ঞানের কাজ। এজন্য তাদের বিজ্ঞান-ব্যবসাভিত্তিক শিক্ষা নেওয়া দরকার, মনমানসিকতার গঠনমূলক পরিবর্তন দরকার-তাদের নিজেদের উন্নতির জন্যই তা দরকার, হক্কুল ইবাদের জন্য দরকার, অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই দরকার। অপরিণামদর্শী কোনো ভাবাবেগ দিয়ে কোনো প্রাগ্রসর জাতি গড়া যায় না। ইহলৌকিক জীবনযাপন, সৃষ্টিকল্যাণ, মানবসমাজ ও সৃষ্টিসেবা ছাড়া পরলৌকিক কল্যাণ যে অসম্ভব-তা তাদের বুঝতে হবে। কতভাবে যে মানবকল্যাণ ও মানবসেবা করা যায়, তা তাদের ভাবতে হবে। দুনিয়ার মানবকল্যাণ কীসে ও কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে তাদের গবেষণা করতে হবে। জীবনের সব কাজকর্মে, পেশায়, চিন্তা-চেতনায় আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলার নামই যে ইবাদত-এটা তাদের বুঝতে হবে।

এদেশের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা জীবনমুখী ও কর্মমুখী শিক্ষা থেকে অনেক পেছনে পড়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা (বিজ্ঞানময় কুরআন) ছাড়া জীবন চলে না। অথচ এরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এদেশে ইংরেজদের পক্ষপাতদুষ্ট শাসনের আগেও মাদ্রাসাগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচলন ছিল। বিশ্বের অনেক মুসলিম সভ্যতায়ও জ্ঞান-বিজ্ঞানকে জীবনোন্নয়নের ও সৃষ্টিসেবার পাথেয় হিসাবে নেওয়া হয়েছিল। এ উপমহাদেশে মাদ্রাসা নামের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর সাধারণ শিক্ষা, প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও বিজ্ঞান-ব্যবসায় শিক্ষা বাদ দেওয়ায় মুসলিম জনগোষ্ঠী একটা অনুন্নত, অবহেলিত, পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীতে ক্রমেই পর্যবসিত হচ্ছে। তারা সুশিক্ষিত ও মর্যাদাবান জাতি গঠনে ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়গুলো আমাদের ইসলামি চিন্তাবিদ, মৌলভী-মাওলানাদের বিবেচনায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে বিচারপতি হজরত শাইখুল ইসলাম মুফতি মুহাম্মাদ তাকী উসমানী (হজরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শফী উসমানীর সন্তান) মুসলিম উম্মহর চিন্তাগত ও আদর্শগত পতন ও বিভাজন থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বলেন, ‘‘পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বে ভারতবর্ষে (মুসলমানদের জন্য) বিশেষ তিনটি শিক্ষাধারা প্রচলিত ছিল, যথা—

  • দারুল উলুম দেওবন্দভিত্তিক শিক্ষাধারা
  • আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিকেন্দ্রিক পড়াশোনা;
  • দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার সিলেবাসকেন্দ্রিক শিক্ষাধারা।

যথাসম্ভব ১৯৫০ সালে আব্বাজান (রহ.) কোনো সাধারণ এক সমাবেশে বক্তৃতা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর আমাদের আলীগড়ের শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজন নেই, নদওয়ারও প্রয়োজন নেই; এমনকি প্রয়োজন নেই দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাব্যবস্থারও; বরং আমাদের প্রয়োজন একটি তৃতীয় শিক্ষাব্যবস্থা, যা আসলাফ ও পূর্বসূরিদের ইতিহাসের ধারায় আমাদের সম্পৃক্ত করবে।’ এমন কথা শুনে অনেকেই হয়তো ভ্রূ কুঁচকে ফেলবেন। দারুল উলুম দেওবন্দের নুন খাওয়া এক সুবোধ সন্তান, দারুল উলুম দেওবন্দের আস্থাভাজন প্রধান মুফতি কীভাবে এমন কথা বলতে পারেন যে, পাকিস্তানে আমাদের জন্য দেওবন্দের শিক্ষাব্যবস্থারও প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রয়োজন একটি নতুন শিক্ষাব্যবস্থার! আব্বাজান (রহ)-এর এ বক্তব্যটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও দূরদর্শিতাপূর্ণ।.. ভারতবর্ষে যে তিনটি ধারা প্রচলিত ছিল তা স্বাভাবিক কোনো ধারা ছিল না; বরং তা ছিল ব্রিটিশ প্রবর্তিত ধারার প্রতিফল এবং তাদের চক্রান্তের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বিকল্প মাধ্যম অবলম্বন মাত্র। নতুবা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের প্রবেশের পূর্বে মাদ্রাসা এবং স্কুল নামের দুটি বিজাতীয় ধারার অস্তিত্ব আপনি খুঁজে পাবেন না। এতদঞ্চলে ইসলামের সূচনা থেকে ব্রিটিশ পিরিয়ডের আগ পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলোতে একসঙ্গে দ্বীনি এবং জাগতিক দু’ধারার শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল।’’ (মুফতি তাকী উসমানী, বর্তমান সময়ে প্রয়োজন নতুন এক শিক্ষাব্যবস্থা, ourislam24.com; মে ২৯, ২০২১)।

মধ্যপ্রাচ্যের সব মুসলিম দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ঘেঁটে দেখলে দেখা যাবে— প্রতিটি দেশেরই একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার ভিত্তিমূলে আছে অন্যান্য শিক্ষার সঙ্গে কুরআন ও হাদিস শিক্ষা। এরপর শিক্ষার্থী তার জীবনের প্রয়োজনে অথবা মেধা অনুযায়ী চিকিৎসাবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসায়-বিজ্ঞানসহ শতেক যে কোনো বিষয় নির্বাচন করে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। অথবা টেকনিক্যাল শিক্ষা শিখছে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের মাদ্রাসাপড়ুয়াদের এ দুর্দশা কেন? তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক ও ব্যবসামুখী উচ্চশিক্ষা বা টেকনিক্যাল শিক্ষার সুযোগ কোথায়? শিক্ষার্থীরা অকালেই জীবন ও কর্ম থেকে ঝরে পড়ছে। অথচ অসংখ্য কওমি শিক্ষার্থীর মধ্যে অবিশ্বাস্য প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে। পরিবেশের কারণে প্রতিভার বিকাশ হয়নি। কওমি মাদ্রাসার পরিচালকরা বা সেখানে কর্মরত শিক্ষকরা একটু মনোযোগ দিয়ে ভাবলেই বুঝবেন তাদের ভুলটা কোথায় হচ্ছে। তারা দুনিয়াদারি থেকে (হক্কুল ইবাদ থেকে) অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টিজগতের জীবন, জীবিকা ও কর্ম থেকে, এমনকি এদেশের অফিস-আদালতের প্রতিটি পর্যায় থেকে শিক্ষার্থী ও নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে একঘরে হয়ে বসে আছেন। সে সুযোগে অসংখ্য নীতিহীন, অসৎ, দুর্নীতিবাজ, ইহবাদী, ভোগবাদী লোকজন অফিস-আদালতের নানা পদ ও সমাজ দখল করে নিয়েছে। তাই জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে। সরকারি সম্পদ নয়ছয় হচ্ছে।

ধর্মীয় শিক্ষাকে কর্মমুখী করতে হবে
ধর্মীয় শিক্ষাকে কর্মমুখী করতে হবে।

আসলে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা একটা আত্মবিস্মৃত ও আত্মবিনাশী জাতি হয়ে পড়ে পড়ে ধুঁকছে। তাদের চৈতন্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত; বিজ্ঞান, ব্যবসা ও প্রযুক্তিগত মানসম্মত শিক্ষায় জ্ঞানার্জন না করা পর্যন্ত; শিক্ষার মাধ্যমে মানবিক বৈশিষ্ট্য অন্তরে না আসা পর্যন্ত সারা বিশ্বে, এমনকি বাংলাদেশেও মুসলমানরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। এদেশের মানুষকে যদি পরতন্ত্র ও কতিপয়তন্ত্রের শৃঙ্খল থেকে স্বাধীন রাখতে হয়, দেশের স্বাধীনতাকে যদি অক্ষুণ্ন রাখতে হয়, তাহলে সামাজিক ও রাজনৈতিক দুরাচারবৃত্তি ছেড়ে মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে জাতীয় চেতনায় অখণ্ডতা, সংহতি ও উৎকর্ষ বাড়ানো আশু প্রয়োজন। এ উপলব্ধি এদেশের প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের থাকতে হবে। এ উপলব্ধি থেকে একটু পিছপা হলেই এ জাতির ভবিষ্যৎ গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে যাবে, কালের পরিক্রমায় টিকতে পারবে না। পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা না থাকলে যে পরিণামে এ জনগোষ্ঠী অন্য কোনো সম্প্রসারণবাদী গোষ্ঠীর হুকুমবরদারে পরিণত হবে-এ বোধশক্তি মগজে জোরালোভাবে ঠাঁই দিতে হবে এবং নিজেদের মুক্তি কীসে সে পথে হাঁটতে হবে।

এদেশে একটা শিক্ষাসমাজ তৈরি হওয়া দরকার, যে সমাজ ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে ব্যবসা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক ইন্টিগ্রেটেড ও ইউনিফায়েড শিক্ষাব্যবস্থা চালু করবে। ইহকালের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অর্থের সদ্ব্যবহার, সুশিক্ষা, কর্ম, পেশাগত দায়িত্ব পালনও ধর্ম ও ইবাদতের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ, তা বোঝাবে। প্রত্যেক মানুষেরই ধর্ম ছাড়াও সমাজে আলাদা একটা মর্যাদাশীল পেশা থাকতে হবে, তা বোঝাবে। শিক্ষা-প্রশিক্ষণ দিয়ে সুশিক্ষিত, সুপ্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করবে। তাহলে এ অমানিশার ঘোর আঁধার কেটে গিয়ে মৃতপ্রায় এ সমাজবৃক্ষ সূর্য-সারথি অরুণিম আলোর বর্ণচ্ছটায় আবার কচি-কিশলয়ে ভরে যাবে।

ড. হাসনান আহমেদ: অধ্যাপক, ইউআইইউ; প্রাবন্ধিক ও গবেষক

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

ড. হাসনান আহমেদ

অধ্যাপক, ইউআইইউ; প্রাবন্ধিক ও গবেষক

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

ধর্মীয় শিক্ষাকে কর্মমুখী করতে হবে

প্রকাশ: ০৬:৪২:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২

 এ দেশে মাদ্রাসা-শিক্ষাব্যবস্থা বেশ প্রসার লাভ করছে। দেশের সর্বত্র প্রা গ্রামেগঞ্জে মসজিদভিত্তিক মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। সেখানে দিনি-ইলম (ধর্মীয় শিক্ষা) চালু হয়েছে। কওমি শিক্ষায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে না। এলাকার প্রতিটি বাড়ি থেকে চাল-ধান কিংবা চাঁদা উঠিয়ে কখনোবা স্বাবলম্বী পরিবারের আল্লাহর ওয়াস্তে দান-খয়রাত ইত্যাদির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ও মৌলভী-মাওলানাদের খাবারের ব্যবস্থা এবং পারিশ্রমিকের সংস্থান হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকায়, গ্রামেগঞ্জে এভাবে অবহেলিত অনানুষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে কওমি মাদ্রাসা টিকে আছে।

উল্লেখ্য, এসব প্রতিষ্ঠানের লিল্লাহ-বোর্ডিংয় এদেশের গরিব, অসহায়, এতিম শিশুদের বিনা-খরচে থাকা-খাওয়া ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এ ধরনের ব্যবস্থা অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই। নিঃসন্দেহে এটি একটি সমাজসেবা ও সমাজকর্ম। এ ছাড়া সামাজিক সমস্যার সুন্দর একটি সমাধানও বটে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নেওয়া ছাত্রছাত্রীদের সবাই খোদাভীরু, সচ্চরিত্রবান এবং অল্পে তুষ্ট। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী অল্প বয়সে বখে যায় না। কোনো সমাজ-বিগর্হিত কাজে তাদের সম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে।

তবে অনেক ভালো দিকের মধ্যেও বেশকিছু বিষয় আছে, যে কারণে পরিবর্তিত সমাজ ও বিশ্বব্যবস্থায় তাদের উন্নতির জন্য চিন্তাভাবনা আবশ্যক বলে মনে করি। এই নিবেদিতপ্রাণ ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এবং তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ মনের অজান্তেই কিংবা অজ্ঞতাবশত তাদের চিন্তা-চেতনা-শিক্ষা ও জীবন-ধারণা দিয়ে মুসলমান জাতিকে পিছিয়ে দিচ্ছে; যদিও ধর্মগ্রন্থ তাদের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে মানবজাতির কল্যাণে তাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। তাদের মধ্যে জীবনমুখী ও কর্মমুখী শিক্ষা নেই, উচ্চশিক্ষা নেই, জ্ঞান-বিজ্ঞান নেই, প্রযুক্তিগত শিক্ষা নেই, উন্নত শিল্প-ব্যবসা শিক্ষাও নেই-ফলে উদ্দেশ্যহীন দুনিয়াদারি করে চলেছে তারা। তাদের অনেকে কোনো গঠনমূলক পরামর্শও নিতে চায় না। তাদের চিন্তাধারা ও বিশ্বাস এমনই বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, সে অবস্থা থেকে তাদের সরিয়ে আনতে গেলে কখনো কখনো তাদের কর্মকাণ্ড উগ্রতায় রূপ নেয়।

শত শত বছর আগে ঘোড়ার পিঠে চড়ে তলোয়ার নিয়ে মানুষ যুদ্ধের শক্তিমত্তা দেখাত। বর্তমানে মানুষ সুপারসনিক রকেটে চড়ে এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে যাচ্ছে। নিজ দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের শত্রুঘাঁটিতে রকেট-মারণাস্ত্র ছুড়ে অন্যকে ঘায়েল করছে। চোখের পলকে তথ্য বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাঠাচ্ছে। কোনো তারের সংযোগ ছাড়াই ভূপৃষ্ঠের এক প্রান্তের ঘটনা অন্য প্রান্তে বসে সরাসরি দেখছে। প্রায় সব কাজই মানবজাতি ও সৃষ্টির কল্যাণে হচ্ছে। অথচ বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক কোনো কাজে ধর্ম-শিক্ষকরা নিজে ও তাদের ছাত্রছাত্রীদের নিযুক্ত করতে রাজি নন। তারা বোঝেন না, অতীতের ঘটনা ও কর্ম থেকে আমরা শিক্ষা ও আদর্শ নিতে পারি; কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক কাজেকর্মে নিজেদের সম্পৃক্ত করাটাই বুদ্ধিমানের ও জ্ঞানের কাজ। এজন্য তাদের বিজ্ঞান-ব্যবসাভিত্তিক শিক্ষা নেওয়া দরকার, মনমানসিকতার গঠনমূলক পরিবর্তন দরকার-তাদের নিজেদের উন্নতির জন্যই তা দরকার, হক্কুল ইবাদের জন্য দরকার, অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই দরকার। অপরিণামদর্শী কোনো ভাবাবেগ দিয়ে কোনো প্রাগ্রসর জাতি গড়া যায় না। ইহলৌকিক জীবনযাপন, সৃষ্টিকল্যাণ, মানবসমাজ ও সৃষ্টিসেবা ছাড়া পরলৌকিক কল্যাণ যে অসম্ভব-তা তাদের বুঝতে হবে। কতভাবে যে মানবকল্যাণ ও মানবসেবা করা যায়, তা তাদের ভাবতে হবে। দুনিয়ার মানবকল্যাণ কীসে ও কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে তাদের গবেষণা করতে হবে। জীবনের সব কাজকর্মে, পেশায়, চিন্তা-চেতনায় আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলার নামই যে ইবাদত-এটা তাদের বুঝতে হবে।

এদেশের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা জীবনমুখী ও কর্মমুখী শিক্ষা থেকে অনেক পেছনে পড়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা (বিজ্ঞানময় কুরআন) ছাড়া জীবন চলে না। অথচ এরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এদেশে ইংরেজদের পক্ষপাতদুষ্ট শাসনের আগেও মাদ্রাসাগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচলন ছিল। বিশ্বের অনেক মুসলিম সভ্যতায়ও জ্ঞান-বিজ্ঞানকে জীবনোন্নয়নের ও সৃষ্টিসেবার পাথেয় হিসাবে নেওয়া হয়েছিল। এ উপমহাদেশে মাদ্রাসা নামের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর সাধারণ শিক্ষা, প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও বিজ্ঞান-ব্যবসায় শিক্ষা বাদ দেওয়ায় মুসলিম জনগোষ্ঠী একটা অনুন্নত, অবহেলিত, পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীতে ক্রমেই পর্যবসিত হচ্ছে। তারা সুশিক্ষিত ও মর্যাদাবান জাতি গঠনে ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়গুলো আমাদের ইসলামি চিন্তাবিদ, মৌলভী-মাওলানাদের বিবেচনায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে বিচারপতি হজরত শাইখুল ইসলাম মুফতি মুহাম্মাদ তাকী উসমানী (হজরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শফী উসমানীর সন্তান) মুসলিম উম্মহর চিন্তাগত ও আদর্শগত পতন ও বিভাজন থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বলেন, ‘‘পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বে ভারতবর্ষে (মুসলমানদের জন্য) বিশেষ তিনটি শিক্ষাধারা প্রচলিত ছিল, যথা—

  • দারুল উলুম দেওবন্দভিত্তিক শিক্ষাধারা
  • আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিকেন্দ্রিক পড়াশোনা;
  • দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার সিলেবাসকেন্দ্রিক শিক্ষাধারা।

যথাসম্ভব ১৯৫০ সালে আব্বাজান (রহ.) কোনো সাধারণ এক সমাবেশে বক্তৃতা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর আমাদের আলীগড়ের শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজন নেই, নদওয়ারও প্রয়োজন নেই; এমনকি প্রয়োজন নেই দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাব্যবস্থারও; বরং আমাদের প্রয়োজন একটি তৃতীয় শিক্ষাব্যবস্থা, যা আসলাফ ও পূর্বসূরিদের ইতিহাসের ধারায় আমাদের সম্পৃক্ত করবে।’ এমন কথা শুনে অনেকেই হয়তো ভ্রূ কুঁচকে ফেলবেন। দারুল উলুম দেওবন্দের নুন খাওয়া এক সুবোধ সন্তান, দারুল উলুম দেওবন্দের আস্থাভাজন প্রধান মুফতি কীভাবে এমন কথা বলতে পারেন যে, পাকিস্তানে আমাদের জন্য দেওবন্দের শিক্ষাব্যবস্থারও প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রয়োজন একটি নতুন শিক্ষাব্যবস্থার! আব্বাজান (রহ)-এর এ বক্তব্যটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও দূরদর্শিতাপূর্ণ।.. ভারতবর্ষে যে তিনটি ধারা প্রচলিত ছিল তা স্বাভাবিক কোনো ধারা ছিল না; বরং তা ছিল ব্রিটিশ প্রবর্তিত ধারার প্রতিফল এবং তাদের চক্রান্তের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বিকল্প মাধ্যম অবলম্বন মাত্র। নতুবা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের প্রবেশের পূর্বে মাদ্রাসা এবং স্কুল নামের দুটি বিজাতীয় ধারার অস্তিত্ব আপনি খুঁজে পাবেন না। এতদঞ্চলে ইসলামের সূচনা থেকে ব্রিটিশ পিরিয়ডের আগ পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলোতে একসঙ্গে দ্বীনি এবং জাগতিক দু’ধারার শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল।’’ (মুফতি তাকী উসমানী, বর্তমান সময়ে প্রয়োজন নতুন এক শিক্ষাব্যবস্থা, ourislam24.com; মে ২৯, ২০২১)।

মধ্যপ্রাচ্যের সব মুসলিম দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ঘেঁটে দেখলে দেখা যাবে— প্রতিটি দেশেরই একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার ভিত্তিমূলে আছে অন্যান্য শিক্ষার সঙ্গে কুরআন ও হাদিস শিক্ষা। এরপর শিক্ষার্থী তার জীবনের প্রয়োজনে অথবা মেধা অনুযায়ী চিকিৎসাবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসায়-বিজ্ঞানসহ শতেক যে কোনো বিষয় নির্বাচন করে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। অথবা টেকনিক্যাল শিক্ষা শিখছে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের মাদ্রাসাপড়ুয়াদের এ দুর্দশা কেন? তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক ও ব্যবসামুখী উচ্চশিক্ষা বা টেকনিক্যাল শিক্ষার সুযোগ কোথায়? শিক্ষার্থীরা অকালেই জীবন ও কর্ম থেকে ঝরে পড়ছে। অথচ অসংখ্য কওমি শিক্ষার্থীর মধ্যে অবিশ্বাস্য প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে। পরিবেশের কারণে প্রতিভার বিকাশ হয়নি। কওমি মাদ্রাসার পরিচালকরা বা সেখানে কর্মরত শিক্ষকরা একটু মনোযোগ দিয়ে ভাবলেই বুঝবেন তাদের ভুলটা কোথায় হচ্ছে। তারা দুনিয়াদারি থেকে (হক্কুল ইবাদ থেকে) অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টিজগতের জীবন, জীবিকা ও কর্ম থেকে, এমনকি এদেশের অফিস-আদালতের প্রতিটি পর্যায় থেকে শিক্ষার্থী ও নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে একঘরে হয়ে বসে আছেন। সে সুযোগে অসংখ্য নীতিহীন, অসৎ, দুর্নীতিবাজ, ইহবাদী, ভোগবাদী লোকজন অফিস-আদালতের নানা পদ ও সমাজ দখল করে নিয়েছে। তাই জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে। সরকারি সম্পদ নয়ছয় হচ্ছে।

ধর্মীয় শিক্ষাকে কর্মমুখী করতে হবে
ধর্মীয় শিক্ষাকে কর্মমুখী করতে হবে।

আসলে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা একটা আত্মবিস্মৃত ও আত্মবিনাশী জাতি হয়ে পড়ে পড়ে ধুঁকছে। তাদের চৈতন্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত; বিজ্ঞান, ব্যবসা ও প্রযুক্তিগত মানসম্মত শিক্ষায় জ্ঞানার্জন না করা পর্যন্ত; শিক্ষার মাধ্যমে মানবিক বৈশিষ্ট্য অন্তরে না আসা পর্যন্ত সারা বিশ্বে, এমনকি বাংলাদেশেও মুসলমানরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। এদেশের মানুষকে যদি পরতন্ত্র ও কতিপয়তন্ত্রের শৃঙ্খল থেকে স্বাধীন রাখতে হয়, দেশের স্বাধীনতাকে যদি অক্ষুণ্ন রাখতে হয়, তাহলে সামাজিক ও রাজনৈতিক দুরাচারবৃত্তি ছেড়ে মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে জাতীয় চেতনায় অখণ্ডতা, সংহতি ও উৎকর্ষ বাড়ানো আশু প্রয়োজন। এ উপলব্ধি এদেশের প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের থাকতে হবে। এ উপলব্ধি থেকে একটু পিছপা হলেই এ জাতির ভবিষ্যৎ গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে যাবে, কালের পরিক্রমায় টিকতে পারবে না। পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা না থাকলে যে পরিণামে এ জনগোষ্ঠী অন্য কোনো সম্প্রসারণবাদী গোষ্ঠীর হুকুমবরদারে পরিণত হবে-এ বোধশক্তি মগজে জোরালোভাবে ঠাঁই দিতে হবে এবং নিজেদের মুক্তি কীসে সে পথে হাঁটতে হবে।

এদেশে একটা শিক্ষাসমাজ তৈরি হওয়া দরকার, যে সমাজ ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে ব্যবসা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক ইন্টিগ্রেটেড ও ইউনিফায়েড শিক্ষাব্যবস্থা চালু করবে। ইহকালের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অর্থের সদ্ব্যবহার, সুশিক্ষা, কর্ম, পেশাগত দায়িত্ব পালনও ধর্ম ও ইবাদতের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ, তা বোঝাবে। প্রত্যেক মানুষেরই ধর্ম ছাড়াও সমাজে আলাদা একটা মর্যাদাশীল পেশা থাকতে হবে, তা বোঝাবে। শিক্ষা-প্রশিক্ষণ দিয়ে সুশিক্ষিত, সুপ্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করবে। তাহলে এ অমানিশার ঘোর আঁধার কেটে গিয়ে মৃতপ্রায় এ সমাজবৃক্ষ সূর্য-সারথি অরুণিম আলোর বর্ণচ্ছটায় আবার কচি-কিশলয়ে ভরে যাবে।

ড. হাসনান আহমেদ: অধ্যাপক, ইউআইইউ; প্রাবন্ধিক ও গবেষক