১২:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

অপরাধের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ: প্রেক্ষিত তরুণ প্রজন্ম

মো. সাখাওয়াত হোসেন
  • প্রকাশ: ০৩:২২:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ১২১৪ বার পড়া হয়েছে

অপরাধ একটি সামাজিক প্রপঞ্চ। সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন রকমের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটেছে।


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

বাংলাদেশে সমসাময়িক কালে তরুণ প্রজন্মের অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ার একটি প্রবৃত্তি লক্ষ করা যাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুশ্চিন্তার ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পথে হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরির (বিপিও) উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) করা একটি গবেষণায় ‘বাংলাদেশের শান্তি পরিস্থিতি ২০২১’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫ কোটি ৯০ লাখ তরুণ জনগোষ্ঠী আছে। এরা জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ। বর্তমান বিশ্বে তরুণদের সহিংস কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কেননা তরুণ প্রজন্মের সারথিরাই আগামী বিশ্ব বিনির্মাণে নেতৃত্ব দেবে।

বিপিওর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে তরুণদের সহিংস প্রবণতা বেড়েছে। ২০১৯ সালে ২ হাজার ৪১১টি, ২০২০ সালে ২ হাজার ৩৬৩টি ঘটনা এবং ২০২১ সালে তা কিছুটা কমে হয় ১ হাজার ৮৯৬টি যুব সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলো ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কখনো কমেছে, কখনো বেড়েছে। তবে তা কখনোই ১ হাজার ৫০০ ছাড়ায়নি। কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাত্ বেড়ে যায়। তিন বছরে দেশে অন্তত ৩ হাজার ৯২২ কিশোর-কিশোরীকে হিংসাত্মক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাধ্যতামূলকভাবে ছুটি থাকায় তরুণদের মধ্যে নানাবিধ কারণে অপরাধের প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় তরুণদের সম্পৃক্ততা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০২১ সালে তরুণ জনগোষ্ঠী সংশ্লিষ্ট সহিংসতার বেশির ভাগই ছিল লাঞ্ছনা, যা ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং যৌন নিপীড়নের ঘটনা ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া অপহরণ বা জিম্মি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, সংঘর্ষ ২ শতাংশ, মারামারিশূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, দল বেঁধে সহিংসতা (মব ভায়োলেন্স) শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ, সম্পদের ক্ষতিসাধন শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর তরুণ জনগোষ্ঠীর অপরাধচিত্রে দেখা যায়, সেখানে প্রধানত ভাঙচুর বা সম্পত্তির ক্ষতি করার জন্য কিশোর ও তরুণেরা গ্রেফতার হয়ে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে এটা খুব কম। ২০২১ সালে বাংলাদেশে তরুণদের সহিংস ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২ হাজার ১৬৪ জনকে। এছাড়া নিহত ১ হাজার ৯৭, আহত ১ হাজার ৫৯৩, যৌন নিপীড়ন ৭৩০ এবং অপহরণের ১৩৬টি ঘটনা ঘটেছে। তাই তরুণ প্রজন্মের অপরাধপ্রবণতা থেকে উত্তরণে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ গ্রহণ করা উচিত।

তরুণ বলতে সাধারণত ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের বোঝায়। দেশের মোট ভোটার ১১ কোটির ওপরে। এর মধ্যে তরুণ-তরুণী ভোটারসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। দেশের প্রায় অর্ধেক কর্মক্ষম জনশক্তি তারুণ্যে ভরপুর। সে কারণেই তরুণদের অপরাধপ্রবণতা দূর করে তাদের নিয়ে ব্যাপক কর্মযজ্ঞের আয়োজন জরুরি হয়ে পড়েছে, যাতে তাদের উত্পাদনশীল কাজে ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা যায়। অন্যদিকে, ভুটানে ২৪ বছরের নিচে তরুণের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ এবং তরুণদের মধ্যে শিক্ষিতের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ভুটানে সাধারণত তরুণেরা হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদকসংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িত। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার সময় অপরাধীরা জানিয়েছে, সহযোগীদের চাপ ও সাহচর্যে ৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। ১২ শতাংশ জানায়, নিম্ন আর্থসামাজিক অবস্থানের কারণে তারা অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। বেকারত্ব থেকে অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে ৭ শতাংশ তরুণ। ভারতে ১৬-২৫ বছরের ছেলেমেয়েদের তরুণ হিসেবে বলা হয়। তরুণদের অপরাধে সম্পৃক্ত হওয়ার পেছনে পরিবার, বন্ধুদের সাহচর্য ও সংঘ, হতাশা ও বঞ্চনা, গণমাধ্যম, ব্যক্তিত্বের সংকট, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রতি আগ্রহ ইত্যাদি কারণে তরুণরা অপরাধী হয়ে উঠছে। ভারতে অধিকাংশ অপরাধী (৫৫ শতাংশ) নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। এছাড়া শহর এলাকাতে তরুণেরা তুলনামূলকভাবে বেশি অপরাধ করে।

অপরাধ একটি সামাজিক প্রপঞ্চ। সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন রকমের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটেছে। কালের পরিক্রমায়, প্রযুক্তির যোগসাজশে অপরাধের ধরন ও সহিংসতায় বৈচিত্র্য এসেছে, তথাপি অপরাধের ক্রমবর্ধমান হার জাতীয় জীবনে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলাকে বিপর্যস্ত করেছে। বাংলাদেশের দণ্ডবিধি (The Penal Code, 1860) ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে (The Code of Criminal Procedure, 1898) উল্লিখিত সব ধরনের কর্মকাণ্ডই অপরাধ। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অপরাধের সাধারণত দুই ধরনের সংজ্ঞা দেওয়া হয়ে থাকে, একটি হচ্ছে, social definition of law (সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত নিয়ম, রীতিনীতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ই অপরাধ); অন্যটি হচ্ছে, legal definition of law (ইচ্ছাকৃতভাবে ফৌজদারি আইন কিংবা দণ্ডবিধির লঙ্ঘনই অপরাধ)। প্রবাদে বলা হয়, সত্ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসত্ সঙ্গে সর্বনাশ। এজন্য অভিভাবক, শিক্ষক ও সমাজের মুরব্বিদের এই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ছোটোবেলা থেকেই শিশুর মধ্যে যাতে অপরাধপ্রবণতার ধ্যান-ধারণা ও সংস্কৃতি গড়ে না উঠে এজন্য ক্ষতিকর খেলনা, মোবাইল ও ভিডিও গেমস থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে। দূরে রাখতে হবে ভায়োলেন্স নির্ভর সিনেমা-নাটক থেকেও।

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মো. সাখাওয়াত হোসেন

চেয়ারম্যান, ক্রিমিনলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

অপরাধের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ: প্রেক্ষিত তরুণ প্রজন্ম

প্রকাশ: ০৩:২২:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

বাংলাদেশে সমসাময়িক কালে তরুণ প্রজন্মের অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ার একটি প্রবৃত্তি লক্ষ করা যাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুশ্চিন্তার ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পথে হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরির (বিপিও) উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) করা একটি গবেষণায় ‘বাংলাদেশের শান্তি পরিস্থিতি ২০২১’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫ কোটি ৯০ লাখ তরুণ জনগোষ্ঠী আছে। এরা জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ। বর্তমান বিশ্বে তরুণদের সহিংস কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কেননা তরুণ প্রজন্মের সারথিরাই আগামী বিশ্ব বিনির্মাণে নেতৃত্ব দেবে।

বিপিওর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে তরুণদের সহিংস প্রবণতা বেড়েছে। ২০১৯ সালে ২ হাজার ৪১১টি, ২০২০ সালে ২ হাজার ৩৬৩টি ঘটনা এবং ২০২১ সালে তা কিছুটা কমে হয় ১ হাজার ৮৯৬টি যুব সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলো ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কখনো কমেছে, কখনো বেড়েছে। তবে তা কখনোই ১ হাজার ৫০০ ছাড়ায়নি। কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাত্ বেড়ে যায়। তিন বছরে দেশে অন্তত ৩ হাজার ৯২২ কিশোর-কিশোরীকে হিংসাত্মক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাধ্যতামূলকভাবে ছুটি থাকায় তরুণদের মধ্যে নানাবিধ কারণে অপরাধের প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় তরুণদের সম্পৃক্ততা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০২১ সালে তরুণ জনগোষ্ঠী সংশ্লিষ্ট সহিংসতার বেশির ভাগই ছিল লাঞ্ছনা, যা ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং যৌন নিপীড়নের ঘটনা ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া অপহরণ বা জিম্মি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, সংঘর্ষ ২ শতাংশ, মারামারিশূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, দল বেঁধে সহিংসতা (মব ভায়োলেন্স) শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ, সম্পদের ক্ষতিসাধন শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর তরুণ জনগোষ্ঠীর অপরাধচিত্রে দেখা যায়, সেখানে প্রধানত ভাঙচুর বা সম্পত্তির ক্ষতি করার জন্য কিশোর ও তরুণেরা গ্রেফতার হয়ে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে এটা খুব কম। ২০২১ সালে বাংলাদেশে তরুণদের সহিংস ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২ হাজার ১৬৪ জনকে। এছাড়া নিহত ১ হাজার ৯৭, আহত ১ হাজার ৫৯৩, যৌন নিপীড়ন ৭৩০ এবং অপহরণের ১৩৬টি ঘটনা ঘটেছে। তাই তরুণ প্রজন্মের অপরাধপ্রবণতা থেকে উত্তরণে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ গ্রহণ করা উচিত।

তরুণ বলতে সাধারণত ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের বোঝায়। দেশের মোট ভোটার ১১ কোটির ওপরে। এর মধ্যে তরুণ-তরুণী ভোটারসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। দেশের প্রায় অর্ধেক কর্মক্ষম জনশক্তি তারুণ্যে ভরপুর। সে কারণেই তরুণদের অপরাধপ্রবণতা দূর করে তাদের নিয়ে ব্যাপক কর্মযজ্ঞের আয়োজন জরুরি হয়ে পড়েছে, যাতে তাদের উত্পাদনশীল কাজে ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা যায়। অন্যদিকে, ভুটানে ২৪ বছরের নিচে তরুণের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ এবং তরুণদের মধ্যে শিক্ষিতের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ভুটানে সাধারণত তরুণেরা হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদকসংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িত। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার সময় অপরাধীরা জানিয়েছে, সহযোগীদের চাপ ও সাহচর্যে ৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। ১২ শতাংশ জানায়, নিম্ন আর্থসামাজিক অবস্থানের কারণে তারা অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। বেকারত্ব থেকে অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে ৭ শতাংশ তরুণ। ভারতে ১৬-২৫ বছরের ছেলেমেয়েদের তরুণ হিসেবে বলা হয়। তরুণদের অপরাধে সম্পৃক্ত হওয়ার পেছনে পরিবার, বন্ধুদের সাহচর্য ও সংঘ, হতাশা ও বঞ্চনা, গণমাধ্যম, ব্যক্তিত্বের সংকট, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রতি আগ্রহ ইত্যাদি কারণে তরুণরা অপরাধী হয়ে উঠছে। ভারতে অধিকাংশ অপরাধী (৫৫ শতাংশ) নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। এছাড়া শহর এলাকাতে তরুণেরা তুলনামূলকভাবে বেশি অপরাধ করে।

অপরাধ একটি সামাজিক প্রপঞ্চ। সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন রকমের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটেছে। কালের পরিক্রমায়, প্রযুক্তির যোগসাজশে অপরাধের ধরন ও সহিংসতায় বৈচিত্র্য এসেছে, তথাপি অপরাধের ক্রমবর্ধমান হার জাতীয় জীবনে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলাকে বিপর্যস্ত করেছে। বাংলাদেশের দণ্ডবিধি (The Penal Code, 1860) ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে (The Code of Criminal Procedure, 1898) উল্লিখিত সব ধরনের কর্মকাণ্ডই অপরাধ। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অপরাধের সাধারণত দুই ধরনের সংজ্ঞা দেওয়া হয়ে থাকে, একটি হচ্ছে, social definition of law (সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত নিয়ম, রীতিনীতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ই অপরাধ); অন্যটি হচ্ছে, legal definition of law (ইচ্ছাকৃতভাবে ফৌজদারি আইন কিংবা দণ্ডবিধির লঙ্ঘনই অপরাধ)। প্রবাদে বলা হয়, সত্ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসত্ সঙ্গে সর্বনাশ। এজন্য অভিভাবক, শিক্ষক ও সমাজের মুরব্বিদের এই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ছোটোবেলা থেকেই শিশুর মধ্যে যাতে অপরাধপ্রবণতার ধ্যান-ধারণা ও সংস্কৃতি গড়ে না উঠে এজন্য ক্ষতিকর খেলনা, মোবাইল ও ভিডিও গেমস থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে। দূরে রাখতে হবে ভায়োলেন্স নির্ভর সিনেমা-নাটক থেকেও।