মমতাজউদদীন আহমদ: বাংলাদেশী নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক
- প্রকাশ: ০২:৫০:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি ২০২৩
- / ১২৭৭ বার পড়া হয়েছে
মমতাজউদদীন আহমদ (১৮ জানুয়ারি ১৯৩৫ – ২ জুন ২০১৯) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ যিনি এক অঙ্কের নাটক লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য মমতাজউদদীন আহমদ ১৯৭৬ সালে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ ও ১৯৯৭ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন।
এক নজরে মমতাজউদদীন আহমদ
নাম | মমতাজউদদীন আহমদ |
জন্ম | ১৮ জানুয়ারি ১৯৩৫, মালদহ জেলা, ব্রিটিশ, ভারত |
মৃত্যু | ২ জুন ২০১৯ (বয়স ৮৪), অ্যাপোলো হাসপাতাল, ঢাকা |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
পেশা | নাট্যকার ও অভিনেতা |
পিতা-মাতা | কলিমুদ্দিন আহমদ (পিতা) এবং সখিনা বেগম (মাতা) |
পুরস্কার | বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৬) এবং একুশে পদক (১৯৯৭) |
মমতাজউদদীন আহমদের প্রারম্ভিক জীবন
মমতাজউদদীন আহমদ ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পর তার পরিবার তদানিন্তন পূর্ববঙ্গে চলে আসে। তার পিতার নাম কলিমুদ্দিন আহমদ ও মাতার নাম সখিনা বেগম।
মমতাজউদদীন মালদহ আইহো জুনিয়র স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে ১৯৫১ সালে ভোলাহাট রামেশ্বর পাইলট মডেল ইনস্টিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী কালে রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বি. এ. (অনার্স) ও এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন।
মমতাজউদদীন আহমদের কর্মজীবন
মমতাজউদদীন আহমদ ৩২ বছরের বেশি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ইউরোপীয় নাট্যকলায় শিক্ষাদান করেছেন। ১৯৬৪ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের খন্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ১৯৭৬-৭৮ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মমতাজউদদীন আহমদ ভারতের দিল্লী, জয়পুর এবং কলকাতায় নাট্যদলের নেতা হিসাবে ভ্রমণ ও নাট্য মঞ্চায়ন করেন। তার লেখা নাটক কি চাহ শঙ্খ চিল এবং রাজা অনুস্বরের পালা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে নিয়মিত কলামও লিখে থাকেন। এছাড়ও তার বেশ কিছু নাটক, বাংলাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
মমতাজউদদীন আহমদ শিক্ষক ও লেখক হিসেবে পরিচিতি পেলেও থিয়েটারের মাধ্যমে তার কর্মজীবনকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন কর্মী হিসেবে সক্রিয়ভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এছাড়াও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। মমতাজউদদীন ১৯৭৭-৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মমতাজউদদীন আহমদের রাজনৈতিক জীবন
মমতাজউদদীন আহমদ অবিভক্ত বাংলার মালদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় তার শৈশব অতিবাহিত করেন। ছাত্রাবস্থায়ও তিনি তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে অংশ নেন। রাজশাহীর ভাষা আন্দোলন কর্মী গোলাম আরিফ টিপুর সাথে তিনি রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাজশাহী কলেজে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণেও ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ সালে তিনি রাজনীতির কারণে কারাবরণ করেন।
মমতাজউদদীন আহমদের সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান
মমতাজউদদীন আহমদের গবেষণা ও প্রবন্ধ
- বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত
- বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত
- প্রসঙ্গ বাংলাদেশ
- প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু
মমতাজউদদীন আহমদের রচিত নাটক
- নাট্যত্রয়ী
- হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার
- স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা (১৯৭১)
- কি চাহ শঙ্খ চিল (১৯৮৫)
- প্রেম বিবাহ সুটকেশ
- জমিদার দর্পণ
- রাজা অনুস্বরের পালা
- ক্ষত বিক্ষত
- রঙ্গপঞ্চাদশ
- বকুল পুরের স্বাধীনতা
- সাত ঘাটের কানাকড়ি
- রাক্ষসী
মমতাজউদদীন আহমদের রচিত গদ্য রচনাসমগ্র
- চার্লি চ্যাপেলিন-ভাঁড় নয় ভব ঘুরে নয়
- আমার ভিতরে আমি
- জগতের যত মহাকাব্য
- হৃদয় ছু আছে
- লাল সালু ও সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ
- মহানামা কাব্যের গদ্যরূপ
- সাহসী অথচ সাহস্য
- নেকাবী এবং অন্যগণ
- জন্তুর ভিতর মানুষ
- ভালবাসিলেই
- সজল তোমর ঠিকানা (উপন্যাস)
- এক যে জোড়া, এক যে মধুমতি (উপন্যাস)
- অন্ধকার নয় আলোর দিকে
মমতাজউদদীন আহমদের সম্মাননা ও পুরস্কার
শিল্প ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন।
- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৬)
- একুশে পদক (১৯৯৭)
- নাট্যকলায় অবদানের জন্য ২০০৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা।
- বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার
- আলাউল সাহিত্য পুরস্কার