ইসলামের আলোকে আনুগত্য ও অনুসরণ
- প্রকাশ: ১০:৫৮:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩
- / ৯০৭ বার পড়া হয়েছে
ইসলাম হচ্ছে আনুগত্যের ধর্ম। মানুষের জীবনযাপনের যাবতীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন। যা দ্বারা রাসুল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। আর তাই রাসুল পরবর্তী কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য ইসলামই একমাত্র আদর্শিক ধর্ম ও জীবনব্যবস্থা। যা প্রত্যেককেই মেনে চলতে হবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে মুসলমানদের মধ্যে নানান দল উপদলের কারণে, কোন দল সঠিক এবং কার অনুসরণ গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। তাই আজ আমরা জানার চেষ্টা করব কুরআন হাদিসের আলোকে কার অনুসরণ প্রকৃত ইসলামে গ্রহণযোগ্য।
কুরআনের আলোকে আনুগত্য
আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের জীবনযাপনের একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যেখানে তিনি ইসলাম পালনের ক্ষেত্রে কার কার আনুগত্য ও অনুসরণ গ্রহণযোগ্য তা সুস্পষ্ট উল্লেখ করেছেন।
রাসুলের আনুগত্য ও অনুসরণ
আল্লাহ অসংখ্য আয়াতে রাসুল (সা.) এর আনুগত্য এবং অনুসরণ করার জন্য প্রতিটি বান্দাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং তাঁর রাসুলের আনুগত্য কর।” (সুরা তাগাবুন : ১২)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে তারাই কৃতকার্য।” (সুরা: আন-নূর, আয়াত: ৫২)
অর্থাৎ আনুগত্য করতে হবে সবসময়ই আল্লাহ এবং রাসুলের। আল্লাহর আনুগত্য হলো কুরআন, এবং রাসুলের আনুগত্য হলো তাঁর সুন্নাহ ও হাদিস। সুতরাং প্রতিটি মুমিনকে রাসুলের আনুগত্যের অনুসারী হতে হবে। শুধু তাইনয় নয়, আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলেও রাসুলের অনুসরণ বাধ্যতামূলক। আল্লাহ বলেন, “বলুন যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালোবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।” (সুরা: আল ইমরান, আয়াত: ৩১)
অর্থাৎ যারাই রাসুলের জীবনের পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে কেবলমাত্র তারাই আল্লাহর ভালোবাসা পাবেন। আর যারাই আল্লাহর ভালোবাসা পাবে কেবল তারাই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। সুতরাং এই ইহকালের জীবনের যাবতীয় পাপের ক্ষমা পেতে হলেও রাসুলের অনুসরণ জরুরি। তাই তো আল্লাহ বলেন, “রাসুল তোমাদের যা দেন তা গ্রহন কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।” (সুরা হাশর: আয়াত ৭)
অর্থাৎ একজন মুসলিমের কাজই হচ্ছে রাসুল যা (বিধিনিষেধ) দেন তা গ্রহণ করা। যারাই রাসুলের প্রকৃত আনুগত্য ও অনুসরণ করতে পারবে, তারাই আল্লাহর কাছে কৃতকার্য হবে। আল্লাহ বলেন, “আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য।” (সুরা নুর : আয়াত ৫২)
একইসাথে যারাই রাসুলের আনুগত্য করবে তারাই ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভ করবে। আল্লাহ বলেন, “যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।” (সুরা: আল আহযাব, আয়াত: ৭১)
শুধু তাইনয় আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন যে, “নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহর জীবনের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ; যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে।” (সুরা আহযাব : আয়াত ২১)
অর্থাৎ প্রতিটি মুমিনকে ইমান, আমল, আকীদাসহ সম্পূর্ণ জীবনযাপনে পরিপূর্ণভাবে রাসুলকে অনুসরণ করতে হবে। ইবাদতসমূহ যদি রাসুলের (সা.) সহিহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত না হয়, তবে তা কখনোই আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না। রাসুলের সহিহ সুন্নাহ ছাড়া নিজের খেয়াল-খুশি (প্রবৃত্তির অনুসরণ) বা অন্যের অনুসরণ অথবা পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। এমন করলে সেটা হবে প্রবৃত্তির অনুসরণ। যে ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, “অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না।” (সুরা: আল কাসাস, আয়াত: ৫০)
সুতরাং রাসুলের পরিবর্তে কখনোই নিজেদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করা ইসলাম সমর্থিত নয়। অতএব ইসলামে সর্বাবস্থায় রাসুলেরই অনুসরণ ও আনুগত্য করতে হবে।
হাদিসে রাসুলের আনুগত্যের তাগিদ
পবিত্র হাদিসেও রাসুল সা. এর আনুগত্যের জন্য ব্যাপক তাগিদ দেওয়া হয়েছে। “(রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন,) যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলারই নাফরমানী করল।” (সহিহ বুখারি, ২৯৫৭)
সুতরাং দুনিয়া এবং আখিরাতের যে-কোনো বিষয়ে সর্বদা রাসুলের আনুগত্য করতে হবে।
একইভাবে যারা রাসুলের সুন্নাহর প্রতি অবজ্ঞা অবহেলা কিংবা সুন্নাহ থেকে দূরে সরে যাবে তাদেরকে তিনি তাঁর দলভুক্ত নয় বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “অত:পর যারা আমার সুন্নাত থেকে বিরাগভাজন হয়, তারা আমার দলভুক্ত নয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫০৬৩ , সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৪৬৯)
অতএব প্রতিটি মুমিনেরই কর্তব্য হচ্ছে জীবনের যাবতীয় কাজে রাসুলের সুন্নাহর অনুসরণে তাঁর আনুগত্য করা।
কুরআনের আনুগত্য ও অনুসরণ
আল্লাহ বিশ্ববাসীর জন্য কুরআন নাযিল করেছেন। এই কুরআন হচ্ছে মানবজাতির জন্য হেদায়েত, রহমত এবং মাগফেরাত স্বরূপ। আল্লাহ বলেন, “এবং নিশ্চিতই এটা (কুরআন) মুমিনদের জন্যে হেদায়েত ও রহমত।” (সুরা: নমল, আয়াত: ৭৭)
অর্থাৎ কুরআনের মাধ্যমেই একজন মুমিন হেদায়েত তথা সঠিক পথ পেতে পারে। তাই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কুরআনের আনুগত্য ও অনুসরণের জন্য জোর তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না।” (সুরা: আল আ’রাফ, আয়াত: ৩)
অর্থাৎ আল্লাহ যা তাঁর বান্দাদের জন্য কুরআনে আদেশ নির্দেশ দিয়েছেন তারই অনুসরণ করতে হবে। এর ব্যতীত অন্য কারো অনুসরণ এবং আনুগত্য কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি তিনি রাসুলের প্রতিও এমন নির্দেশ দিচ্ছেন যে, “(হে রাসুল) আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়, আপনি তার অনুসরণ করুন।” (সুরা: আল আহযাব, আয়াত: ২)
অথচ কোনো রাসুলই কখনো আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কারো অনুসরণ করেনি। তারপরও কেন এমন নির্দেশ? এর কারণ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কুরআনের অনুসরণ কত জরুরি তা বুঝিয়েছেন। সুতরাং রাসুলের (সা.) পাশাপাশি কুরআনের আনুগত্য ও অনুসরণ করতে হবে।
ব্যাক্তি ও দলের অনুসরণ
আমাদের জাগতিক দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি মানুষই কারো না কারো অনুসারী হয়। এই অনুসরণের মানদন্ডও আল্লাহ নির্ধারন করে দিয়েছেন। একজন মুসলিম কখনোই চাইলেই যে কারো অনুসরণ এবং আনুগত্য করতে পারে না। বিশেষ করে ধর্মীয় আনুগত্য করতে হলে অবশ্যই কুরআনের নির্দেশ অনুসারেই করতে হবে। আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।” (সুরা নিসা ৪:৫৯)
আল্লাহ এবং রাসুলের আনুগত্যের পর নির্দেশ মান্য করা যাবে উলিল আমর তথা বিচারক, নেতৃত্বস্থানীয়, পীর, অলি, আউলিয়া, উস্তাদ, শায়খ, শিক্ষক নেতা ইত্যাদি। অর্থাৎ এই দুনিয়ার জীবনে ধর্মীয় এবং জাগতিক যে-কোনো বিষয়ে আল্লাহ এবং রাসুলের পরে এদেরকে অবশ্যই মান্য করা যাবে। তবে তা শর্তযুক্ত। কী সেই শর্ত? সেটা হলো, যদি এইসব উলিল আমরের অন্তর্ভূক্তদের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তা আল্লাহ এবং রাসুলের দিকে ফিরিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ দুনিয়াবী যত আলেম উলামা পীর মাশায়েক শায়খ উস্তাদ রয়েছে, তাদের সিদ্ধান্তকে কুরআন এবং হাদিস দ্বারা যাচাই করতে হবে।
সুতরাং দুনিয়াবী যে-কোনো কাউকে কিংবা যে-কোনো দলের অনুসরণ ততক্ষণ পর্যন্ত করা যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে কিংবা ঐ দল কুরআন এবং সুন্নাহর মধ্যে থাকবে। কেউ যদি কুরআন এবং সুন্নাহর বিপরীত কোনো সিদ্ধান্ত দেয় বা কুরআন সুন্নাহ বিরোধী ইমান আকিদা পোষণ করে। তাহলে তার এবং তাদের অনুসরণ কখনোই ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবেনা।
হাদিসে এসেছে “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যদি কোনো বিকলাঙ্গ কুৎসিত গোলামকেও তোমাদের শাসক (নেতা) নিযুক্ত করা হয়। আর সে আল্লাহ তা’আলার কিতাব অনুযায়ী তোমাদেরকে পরিচালিত করে, তাহলে অবশ্যই তোমরা তার কথা শুনবে এবং তার আনুগত্য করবে।” (সহিহ : মুসলিম ১২৯৮, সহিহ আল জামি‘ ১৪১১)
একইভাবে তিনি আরও বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: প্রত্যেক মুসলিমের (তার শাসনকর্তার নির্দেশ) শোনা এবং আনুগত্য করা অপরিহার্য; তার মন:পূত হোক বা না হোক, যতক্ষণ না তাকে গুনাহের দিকে নির্দেশ করে। কিন্তু যদি তাকে গুনাহের কাজের নির্দেশ দেয়া হয়, তখন তা শোনা ও আনুগত্য করা কর্তব্য নয়।” (বুখারি ৭১৪৪, মুসলিম ১৮৩৯, আবূ দাঊদ ২৬২৬, তিরমিযি ১৭০৭, সহিহ আল জামি‘ ৩৬৯৩, আহমাদ ৬২৭৮)
উপর্যুক্ত হাদিসের আলোকে রাসুল (সা.) স্পষ্ট করে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যে-কোনো ইসলামি নেতা নেতৃত্ব কিংবা পীর, বুজুর্গ ইত্যাদির আনুগত্য করা যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ তারা কুরআন হাদিসের বিরুদ্ধে না যায়। তারা যদি কুরআন হাদিসের বিরুদ্ধে যায় তাহলে তাদের আনুগত্য ও অনুসরণ করা যাবে না। তাই যাদেরই আনুগত্য আমরা করে থাকি তাদেরকে যাচাই বাছাই করে তবেই আনুগত্য করতে হবে।
যাদের আনুগত্য ও অনুসরণ নিষিদ্ধ
কুরআন কাদের অনুসরণ করতে হবে এবং কীভাবে করতে তার নির্দেশনা যেমন দিয়েছে, ঠিক তেমনি কাদের অনুসরণ এবং আনুগত্য করা যাবে না তারও নির্দেশনা দিয়েছে। এখন আমরা দেখব কুরআন কাদের অনুসরণ করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
কাফের বিধর্মীদের আনুগত্য করা যাবেনা
আল্লাহ পবিত্র অসংখ্য আয়াতে কাফের, মুশরিক, মুনাফিকসহ যাবতীয় বিধর্মীদের আনুগত্য ও অনুসরণ নিষেধ করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “(হে রাসুল) আপনি কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করবেন না।”(সুরা: আল আহযাব, আয়াত: ৪৮)
আল্লাহ তাঁর রাসুল (সা.) এর মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ববাসীকে এই শিক্ষা দিচ্ছেন যে, কখনোই কোনো অবস্থাতেই কাফের মুনাফিক তথা ইসলাম বিরোধীদের অনুসরণ করা যাবে না। শুধু তাদের আনুগত্য অনুসরণই নয় এমনকি তাদের সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনে কাফের মুশরিকদের তথা বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করা নিয়ে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। সুরা মায়েদার ৫১ নং স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “তোমরা ইুহুদী খ্রিস্টানদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করিও না।” একইসাথে সুরা আল ইমরানের ২৮ নং আয়াতে বলা হচ্ছে “মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না।” একই সুরা ১১৮ নং আয়াতেও বলা হচ্ছে “হে ইমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। ” এছাড়াও। সুরা আন-নিসা: ১৪৪ নং আয়াতেও বলা হচ্ছে “হে ইমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে।” সুরা মায়েদা ১৫৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন। “হে মুমিনগণ, তোমরা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যারা তোমাদের দীনকে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছে “
উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ কাফের মুশরিক মুনাফিক ইত্যাদির সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছেন। যেখানে আল্লাহ তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতেই নিষেধ করেছেন সেখানে তাদের অনুসরণ এবং আনুগত্যের প্রশ্নই আসে না। অতএব একজন মুমিন মুসলমান কখনোই বিধর্মীদের (দৈনন্দিন ও জাগতিক প্রয়োজন ব্যতিরেকে) বন্ধুত্ব গ্রহণ, অনুসরণ এবং আনুগত্য ইত্যাদি করতে পারে না।
শয়তানের অনুসরণ নিষিদ্ধ
বিধর্মীদের পাশাপাশি আল্লাহ শয়তানের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। পবিত্র কুরআনে শয়তানের অনুসরণ আনুগত্য নিষিদ্ধ করে অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সুরা: আল বাকারা, আয়াত: ২০৮)
এমন অসংখ্য আয়াত রয়েছে যেখানে শয়তানের অনুসরণ না করতে এবং যাবতীয় শয়তানী কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। অথচ শয়তানকে দেখা যায় না, তাহলে তার অনুসরণ থেকে কীভাবে আমরা বিরত থাকতে পারি?
আসলে শয়তান কে তা তার আচার আচরণেই প্রকাশ পায়। পৃথিবীতে এমন এমন মানুষ রয়েছে যারা বাহ্যিক ভাবে মানুষ হলেও তাদের কর্মকান্ড হচ্ছে শয়তানের অনুরূপ। আল্লাহ এমন সব শয়তানরূপী মানুষ থেকে তাঁর বান্দাদের দূরে থাকতে বলেছে। এবং তাদের আনুগত্য ও অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সুরা: আল বাকারা, আয়াত: ২০৮)
অর্থাৎ প্রতিটি মুমিনকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করতে হবে। এবং কোনভাবেই শয়তানের অনুসরণ তথা যাবতীয় শয়তানী কর্মকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে অনুসরণ ও তাদের আনুগত্য করা যাবে না। কেননা যারাই শয়তানী কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বন্ধু মনে করে তাদেরকে অনুসরণ করবে তারা প্রকাশ্য ক্ষতিতে থাকবে। আল্লাহ বলেন, “যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।” (সুরা: আন নিসা, আয়াত: ১১৯)
আল্লাহ আরো বলেন, “শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে?” (সুরা: আল মায়িদাহ, আয়াত: ৯১)
অতএব যেসব মানুষ আল্লাহ বিরোধী কর্মকাণ্ডের দ্বারা শয়তান বলে বিবেচ্য হবে, সেইসব শয়তানরূপী মানুষ কিংবা গোষ্ঠীর অনুসরণ ও আনুগত্য করা যাবে না। আমাদের সমাজে এমন অনেক গোষ্ঠী রয়েছে যাদের ইমান আকিদা শয়তানের অনুরুপ। যাদের অনুসরণ ও আনুগত্য করলে কখনোই আল্লাহর হেদায়েত পাওয়া যাবে না। তাই তাদের অনুসরণ করা যাবে না। তাই আল্লাহ বলেন, “পক্ষান্তরে যারা শয়তানের ভাই, তাদেরকে সে ক্রমাগত পথভ্রষ্ট তার দিকে নিয়ে যায় অত:পর তাতে কোন কমতি করে না।” (সুরা: আল আ’রাফ, আয়াত: ২০২)
সুতরাং কখনোই শয়তানের অনুসারীদের আনুগত্য ও অনুসরণ করা যাবে না। করলেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আল্লাহ বলেন, “শয়তান সম্পর্কে লিখে দেয়া হয়েছে যে, যে কেউ তার সাথী হবে, সে তাকে বিভ্রান্ত করবে এবং দোযখের আযাবের দিকে পরিচালিত করবে।” (সুরা: হাজ্জ্ব, আয়াত: ৪)
সুতরাং কোনো অবস্থাতেই শয়তানের অনুসারীদের অনুসরণ ও আনুগত্য করা যাবে না।
অন্যান্যদের অনুসারীদের পরিনতি
যারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং কুরআনের আনুগত্য করবে না তাদের স্থান হবে জাহান্নাম। তারা সেখানে আফসোস করতে থাকবে আর বলবে, “যেদিন অগ্নিতে তাদের মুখমন্ডল ওলট পালট করা হবে; সেদিন তারা বলবে, হায়। আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রাসুলের আনুগত্য করতাম।” (সুরা: আল আহযাব, আয়াত: ৬৬)
অর্থাৎ যারাই আল্লাহ তথা কুরআনের এবং রাসুল তথা সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণ করবে তারা জাহান্নামের আগুনে পুড়বে আর আফসোস করতে থাকবে, কেন কুরআন হাদিসের অনুসরণ করলাম না। শুধু তাই নয় তারা কুরআন হাদিসের বিপরতীতে তাদের নেতা ও বুজুর্গের অনুসরণ করার কারণেও আফসোস করতে থাকবে আর বলবে, “তারা আরও বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অত:পর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল।” (সুরা: আল আহযাব, আয়াত: ৬৭)
সুতরাং আল্লাহর নির্দেশিত পথ ও মত ব্যতীত অন্য কারো অনুসরণ মানেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম দিন ও দুনিয়ার যে-কোনো ক্ষেত্রে সর্বদা আল্লাহ এবং রাসুলের (সা.) আনুগত্য ও অনুসরণ করতে হবে। একইসাথে দুনিয়াবী যে-কোনো নেতা, নেতৃত্ব, ধর্মীয় বুজুর্গ এবং দলের আনুগত্য ততক্ষণ পর্যন্ত করা যাবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা কুরআন সুন্নাহর অনুসারী হবে। একইসাথে যারা শয়তানের অনুসারী ও যাদের কর্মকান্ড শয়তানের অনুরূপ তাদেরও অনুসরণ ও আনুগত্য করা যাবে না। আর যারা আল্লাহর এইসব বিধিনিষেধ মেনে চলতে পারবে কেবল তারাই দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করতে পারবে।